পাঁচ বছর আগে শখের বশে এলাচ চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন ওমর শরীফ। গুয়েতেমালা, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভারত, ইরান ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ২০০টি চারা সংগ্রহ করে আনেন। এরপর সেই চারা দিয়ে এলাচের এক মিশ্র বাগান করেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপযেলার পাহাড়ী অঞ্চলে। মিরসরাই উপযেলায় প্রথমবারের মতো এলাচের চাষ করেছেন তিনি।
ওমর শরীফ একজন তরুণ কৃষি উদ্যেক্তা ও বৃক্ষপ্রেমী যুবক। তার সংগ্রহে রয়েছে দেশী-বিদেশী অনেক ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের চারা। চারা সংগ্রহ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও ছুটে গেছেন চলেছেন থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত সহ বিভিন্ন দেশে। স্বপ্ন একসময় দেশে গড়ে তুলবেন সবধরনের দুর্লভ গাছের চারা। গড়ে তুলেছেন জোহরা এগ্রো ফার্মস অ্যান্ড নার্সারী। তার দেখাদেখি অনেক বেকার যুবক বাগান করার দিকে ঝুঁকছেন।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, পাহাড়ে আমার মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে। পাঁচ বছর আগে মনস্থির করি এই এলাকায় এলাচের চাষ করব। পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভারত, ইরান ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ২০০টি চারা সংগ্রহ করি। তবে পথটা অত সহজ ছিল না। চারা এনে লাগিয়ে দিলেই হয়ে যায় না। এর চাষের রীতিপদ্ধতিও রয়েছে। তা বুঝতে অনেক সময় লেগেছে। এর বাইরে আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিন্তু হাল ছাড়িনি। বিভিন্ন দেশের এলাচ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে পড়াশোনা করেছি। সেই জ্ঞান প্রয়োগ করে এলাচ চাষে সফলতা পেয়েছি।
ওমর শরীফ জানান, আষাঢ় মাসে এলাচ গাছে ফুল আসে। আর ভাদ্র ও আশ্বিন মাসের শেষদিকে এলাচ পরিপক্ক হয়। তখন বাগান থেকে কাঁচা এলাচ সংগ্রহ করে রোদে শুকাতে হয়। অধিক উৎপাদন হ’লে ড্রায়ার মেশিনে শুকাতে হয়। না শুকিয়ে ঘরে রাখলে পচন ধরবে। ফল পরিপক্ক হ’লে দেখতে কিছুটা সবুজের ওপর লালচে হবে। চারা লাগানো থেকে ফল পেতে তিন বছর অপেক্ষা করতে হয়।
বিভিন্ন জাতের এলাচের মধ্যে সবুজ-কালো, নীল-সাদা ও বেগুনিসহ ১৩ জাতের এলাচ আমদানি করা হয় বাংলাদেশে। তবে দেশে এলাচ চাষ নতুন নয়। সিলেট, বগুড়া, সাতক্ষীরা, তিন পার্বত্য যেলাসহ বেশ কয়েক অঞ্চলে যে এলাচ জন্মে সেগুলো ‘মোরঙ্গ এলাচ’ নামে পরিচিত।
কিন্তু সবুজ দানার এলাচ চাষ এটাই প্রথম। নিজের সাফল্যের পর কৃষকদের মাঝে এলাচের চাষ ছড়িয়ে দিতে জোহরা এগ্রো ফার্ম ও নার্সারিতে এখন চারা উৎপাদনেও মন দিয়েছেন তিনি।
বাণিজ্যিকভাবে এলাচ চাষে আগ্রহীরা এই বছর আমার কাছ থেকে চারা কিনতে পারবেন। চারা বড় হ’লে আগ্রহী চাষীদের কাছে বিক্রি করতে পারব। তাতে অদূর ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে আর এলাচ আমদানি করতে হবে না বলে জানান এই কৃষি উদ্যোক্তা। ভারত, চীন ও মিয়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের উর্বর জমি এলাচ চাষের উপযোগী। এলাচ চাষে আলাদা কোন জমি প্রয়োজন হয় না।
ওমর শরীফ বলেন, পাঁচ বছরের পরিশ্রমে আমি দেখেছি, অন্য গাছের ছায়া তলে এলাচের ভালো ফলন হয়। তাই আমি মিশ্রফলের বাগানে এলাচ চাষ শুরু করেছি। যে কেউ বাড়ির আঙিনা অথবা ফলদ বৃক্ষের বাগানে এ জাতের সবুজ মসলা এলাচের চাষ করতে পারবেন।
এদিকে যশোরের চৌগাছায় বাণিজ্যিকভাবে এলাচ চাষ করেছেন নযরুল ইসলাম। বসত বাড়ির পাশে মেহগনি বাগানের পতিত জমিতে এলাচ চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন তিনি।
জানা যায়, শখের বসে বেনাপোলে শাহজাহান আলীর এলাচ বাগান দেখতে গিয়ে এই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন তিনি। তারপর ভারতে গিয়ে চারা সংগ্রহ করেন এবং সেখান থেকেই চাষ পদ্ধতি শিখে বসত ভিটার আঙিনায় এক বিঘা মেহগনি বাগানে চারাগুলো রোপণ করেন। বর্তমানে তার এলাচ বাগানের বয়স প্রায় তিন বছর। এখন পর্যন্ত তার বাগানে মোট খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ হাযার টাকা। বর্তমানে বাগান ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে যেলার বিভিন্ন এলাকায় এলাচ চাষে আগ্রহীরা আমার কাছ থেকে চারা কিনেতে আগ্রহী হয়েছেন। তারাও বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করতে চান। চলতি বছরে চারা বিক্রি করে পাঁচ লাখেরও অধিক আয় হবে বলে আশাবাদী তিনি।
তিনি বলেন, এলাচ গাছে ফল আসতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে। এক একর জমিতে এক হাযার ২০০টি এলাচ চারা রোপণ করা যায়। পাঁচ বছর পর থেকে এক একর জমির এলাচ গাছ থেকে বছরে প্রায় দেড় হাযার কেজি ফল পাওয়া যাবে। এর বাজারমূল্য ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এছাড়া একটি এলাচ গাছ ৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে ও ফল দেয়।
এছাড়া এলাচ চাষে রাসায়নিক সার খুবই কম লাগে। জৈব সারই যথেষ্ট। তাই অন্য মসলা চাষের তুলনায় এলাচ অনেক লাভজনক।