ক্যাপসিকাম বা
মিষ্টি মরিচ একটি জনপ্রিয় সবজি। ক্যাপসিকামে ভিটামিন এ এবং সি প্রচুর
পরিমাণে থাকে। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এতে
ফাইবার, আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ উচ্চ পরিমাণে রয়েছে। এতে ক্যালরির পরিমাণ
সামান্য। ক্যাপসিকামের আকার-আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে সাধারণত ফল
গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়। এটি আমাদের দেশের প্রচলিত সবজি না হ’লেও সম্প্রতি
এর চাষ প্রসারিত হচ্ছে। সারা বিশ্বে টমেটোর পরই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি
হচ্ছে মিষ্টি মরিচ বা ক্যাপসিকাম। এটি অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন বড় বড়
মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া ক্যাপসিকাম বিদেশে রফতানীর সম্ভাবনাও
রয়েছে প্রচুর।
প্রতি বিঘায় ক্যাপসিকামের ফলন প্রায় সাড়ে ৩ হাযার কেজি পর্যন্ত হ’তে পারে। সবুজ ক্যাপসিকাম প্রতি কেজির বাজার মূল্য ১৫০ টাকা। আর লাল ও হলুদ রঙের ক্যাপসিকাম কেজি ৩৫০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ক্যাপসিকাম চাষীদের প্রতি বিঘায় খরচ হয় প্রায় ৫৫ হাযার টাকা। আর প্রতি বিঘার ফলন বিক্রি হয় প্রায় দেড় লাখ টাকায়। ক্যাপসিকাম চাষে কৃষকের লাভ দ্বিগুণের চেয়েও বেশী থাকে।
ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি :
বীজ বপণের উপযুক্ত সময় অক্টোবর-নভেম্বর মাস। তবে বর্তমানে ঘরোয়া কৃষকরা ১২ মাসই এটি চাষের চেষ্টা করছেন। ক্যাপসিকাম চাষ করার জন্য বাজার থেকে কেনা ক্যাপসিকাম থেকেই বীজ সংগ্রহ করা যায়। আবার বাজারে বীজ কিনতেও পাওয়া যায়। ক্যাপসিকাম থেকে বীজ সংগ্রহ করতে চাইলে পরিপক্ক ক্যাপসিকাম থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর মাটি দিয়ে একটি পাত্র পূর্ণ করে বীজগুলি বপন করতে হবে। যে কোন পাত্রে এই উদ্ভিদ লাগানো যায়, তবে গভীরতা কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি হ’তে হবে। উদ্ভিদ লাগানোর পরে, আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত পানি দিন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এর থেকে বীজ অঙ্কুরিত হবে।
আর বীজ দিয়ে চাষ করতে চাইলে বীজ থেকে প্রথমে চারা তৈরি করে নিতে হয়। প্রতি শতকের জন্য ১ গ্রাম বীজ দরকার হয়। বীজগুলোকে ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে আগে থেকে তৈরি করে রাখা বীজতলায় ১০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে লাইন করে বীজ বুনতে হবে। বীজতলায় প্রয়োজনানুসারে ঝাঝরি দিয়ে হালকাভাবে সেচ দিতে হবে। বীজ গজাতে ৩-৪ দিন সময় লাগে। বীজ বপনের ৭-১০ দিন পর চারা ৩-৪ পাতা বিশিষ্ট হ’লে ৯-১২ সে.মি. আকারের পলি ব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে। পটিং মিডিয়াতে ৩:১:১ অনুপাতে যথাক্রমে মাটি, কম্পোস্ট এবং বালি মিশাতে হবে। পরে পলিব্যাগ ছায়াযুক্ত স্থানে স্থানান্তর করতে হবে।
গাছের পরিচর্যা :
অঙ্কুরোদগমের আগে গাছটিকে কম সূর্যালোকে রাখতে হবে। এই সময়ে সেটিকে বাড়ির ভিতরে রাখা যায়। অঙ্কুরোদগম হওয়ার পরে টবটিকে বারান্দায় সূর্যালোকে রাখা যায়।
তবে এই গাছটি যেন প্রখর সূর্যের আলো না পায়, সেদিকে নযর রাখতে হবে। যে টবে বা পাত্রে এই গাছটি রোপণ করা হবে, তার মাটিতে যেন ভাল পরিমাণে আর্দ্রতা বজায় থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চারা পড়ন্ত বিকেলে রোপণ করা উত্তম। চারা রোপণের পর গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। ক্যাপসিকামের গাছ বৃদ্ধি পেতে প্রায় ৪৫ থেকে ৬০ দিন সময় লাগে।
আর জমিতে চাষ করলে মনে রাখতে হবে মিষ্টি মরিচ খরা ও জলাবদ্ধতা কোনটিই সহ্য করতে পারে না। মাঠে চারা লাগানোর জন্য বেড তৈরি করতে হবে। প্রতিটি বেড প্রস্থে ৭৫ সে.মি. হ’তে হবে এবং লম্বায় দু’টি সারিতে ২০টি চারা সংকোলনের জন্য ৯ মিটার বেড হবে। দু’টি সারির মাঝখানে ৩০ সে.মি. ড্রেন করতে হবে। জমিতে প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হবে। আবার অতিরিক্ত সেচ দিলে ঢলে পড়া রোগ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য সুষ্ঠু নিকাশ ব্যবস্থা করতে হবে। কোন কোন জাতে ফল ধরা অবস্থায় খুঁটি দিতে হয় যাতে গাছ ফলের ভারে হেলে না পড়ে। আগাছানাশক বা হাত দিয়ে অথবা নিড়ানি দিয়ে প্রয়োজনীয় আগাছা দমন করতে হবে।
কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ :
ক্যাপসিকামে কোনও রোগ বা পোকার আক্রমণ হ’লে টক্সিন মুক্ত দ্রবণ ব্যবহার করাই শ্রেয়। এক চামচ সাবান গুঁড়া এবং নিম তেল এক টেবিল চামচ নিন, উভয় এক লিটার পানিতে মিশ্রিত করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে এই দ্রবণ একবার স্প্রে করতে হবে।
সার ব্যবহার :
সারের জন্য শাক-সবজি এবং ফলের খোসা পচা পানি, পাতা পচা ইত্যাদি মাটিতে প্রয়োগ করা যায়। এগুলি মাটির গুণমানকে উন্নত করে এবং উদ্ভিদকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
আর যদি জমিতে চাষ করা হয় তাহ’লে মিষ্টি মরিচ চাষে প্রতি শতাংশে গোবর ৪০ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ১.৪ কেজি, এমপি ১ কেজি, জিপসাম ৪৫০ গ্রাম এবং জিংক অক্সাইড ২০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকী অর্ধেক গোবর, টিএসপি, জিংক অক্সাইড, জিপসাম, ১/৩ ভাগ এমপি এবং ১/৩ ভাগ ইউরিয়া চারা রোপণের গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। বাকী ২/৩ ভাগ ইউরিয়া এবং এমপি পরবর্তীতে দুই ভাগ করে চারা লাগানোর যথাক্রমে ২৫ এবং ৫০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।
ফল সংগ্রহ :
মিষ্টি মরিচ সাধারণত পরিপক্ক সবুজ অবস্থায় লালচে হওয়ার আগেই মাঠ থেকে উঠানো যায়। সাধারণত সপ্তাহে একবার গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। অধিকাংশ গাছে একবারে প্রায় ৪ থেকে ৫টি ক্যাপসিকাম আসে। একবার গাছ ভালো করে বিকশিত হয়ে গেলে প্রথম যখন ফল আসবে তখন তা সংগ্রহ না করাই ভালো। এতে গাছ দৃঢ় হয়। দ্বিতীয়বার থেকে ফল সংগ্রহ করবে। ফল সংগ্রহের সময় প্রতিটি ফলে সামান্য পরিমাণে বোটা রেখে দিবে। ফল সংগ্রহের পর ঠান্ডা অথচ ছায়াযুক্ত স্থানে বাজারজাতকরণের পূর্ব পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হয়।
\ সংকলিত \