‘ইজতেমা’ অর্থ সম্মেলন। আরবীতে বলার মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, এটি ইসলামী সম্মেলন। অতঃপর ‘আহলেহাদীছ’ বলার মাধ্যমে এর অর্থ হবে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ সংগঠন কর্তৃক প্রচারিত পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ-এর আলোকে জীবন গড়ায় বিশ্বাসী ঈমানদার মুসলমানদের সম্মেলন। যা প্রতি বছর একবার তার সাথী ও অনুসারীদের একত্রিত করে। যার মাধ্যমে তারা উদ্বুদ্ধ হয় এবং নতুনভাবে এগিয়ে যাবার প্রেরণা লাভ করে। দেহ-মন ঈমানী জ্যোতিতে আলোকিত হয় ও সেই আলোকে জীবন পথে পদচারণা করে। ‘তাবলীগ’ অর্থ পৌঁছে দেওয়া, প্রচার করা। ইসলামকে তার যথার্থ ও পূর্ণাঙ্গরূপে জাতির সম্মুখে পেশ করাই হ’ল ‘আহলেহাদীছ তাবলীগী ইজতেমা’র মৌলিক উদ্দেশ্য।

জাতির নিকটে এ সংগঠনের পরিষ্কার বক্তব্য হ’ল, ‘আমরা চাই এমন একটি ইসলামী সমাজ, যেখানে থাকবেনা প্রগতির নামে কোন বিজাতীয় মতবাদ। থাকবেনা ইসলামের নামে কোনরূপ মাযহাবী সংকীর্ণতাবাদ’। নেতৃবৃন্দের প্রতি এ সংগঠনের আকুল আবেদন, ‘সকল বিধান বাতিল কর, অহি-র বিধান কায়েম কর’। জনগণের প্রতি দরদভরা আহবান, ‘আসুন! পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ি’। এ সংগঠনের তাবলীগী ইজতেমায় মানুষকে ‘তাওহীদে ইবাদাত’-এর প্রতি আহবান জানানো হয়। যাতে মানুষ শয়তানের দাসত্ব ছেড়ে আল্লাহর দাসত্ব করে। যাতে মানুষ রাজনীতির নামে আল্লাহর দাসত্ব বাদ দিয়ে মানুষের দাসত্ব না করে। আল্লাহর বিধান ছেড়ে মানুষের মনগড়া বিধানের মাধ্যমে নির্যাতিত ও অধিকার বঞ্চিত না হয়। যাতে মানুষ ইসলামের শোষণমুক্ত ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক অর্থনীতি ছেড়ে রক্তচোষা পুঁজিবাদী ও সমাজবাদী অর্থনীতির যাঁতাকলে পিষ্ট না হয়। যাতে মানুষ ধর্মের নামে ভিত্তিহীন ব্যাখ্যা ও অলৌকিক কিচ্ছা-কাহিনীর ফাঁদে ফেলে মৃত মানুষের দাসত্ব না করে এবং আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে নিজেদের মনগড়া অন্ধ বিশ্বাস ও সামাজিক কুসংস্কারের গোলামী না করে। এক কথায়, মানুষ যেন তার জীবনের সকল ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসারী হয় এবং ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের বুঝকে অগ্রাধিকার দেয়।

আহলেহাদীছ ইজতেমার উপরোক্ত দাওয়াত দৃঢ়চিত্ত প্রকৃত ঈমানদারগণের হৃদয়তন্ত্রীতে আঘাত হানে। হোনায়েন যুদ্ধে বিপদগ্রস্ত রাসূল (ছাঃ)-এর ডাকে যেমন ভক্ত ছাহাবীগণ এমনকি বাহন ছেড়ে পায়ে হেঁটে দৌড়ে চলে এসেছিলেন, স্বচ্ছ ঈমানের বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী ষড়যন্ত্রে বিপদগ্রস্ত মুমিন নর-নারীগণ তেমনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অমিয়বাণী শুনে পথ পাওয়ার জন্য আহলেহাদীছ ইজতেমায় ছুটে আসে। বহু মানুষ তাদের লালিত বিশ্বাস ও গোঁড়ামি ছেড়ে তওবা করে ফিরে আসে আল্লাহর পথে। এভাবে জান্নাত থেকে নেমে আসা আদম সন্তান যখন জান্নাতী রাস্তার সন্ধান পায়, তখন সবকিছু ছেড়ে সে এপথেই চলে আসে। আহলেহাদীছ তাবলীগী ইজতেমার সফলতা এখানেই।

এই ইজতেমায় শ্রোতা হিসাবে সকল মানুষের প্রবেশাধিকার রয়েছে, যদি তিনি আল্লাহর পথের হেদায়াত কামনা করেন। দেশে প্রচলিত অগণিত ইজতেমা ও সম্মেলনের মধ্যে এই ইজতেমার পৃথক বৈশিষ্ট্য সমূহ রয়েছে। এই ইজতেমা মানুষকে ফিরক্বা নাজিয়াহর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহবান জানায়। যারা শুরুতেই জান্নাতী হবে। শিরক ও বিদ‘আতে নিমজ্জিত মুসলমানরা জাহান্নামের শাস্তিভোগ শেষে কালেমার বরকতে আল্লাহর বিশেষ রহমতে জান্নাতী হবেন। কিন্তু আহলেহাদীছগণ শিরক ও বিদ‘আত মুক্ত জীবন-যাপনের মাধ্যমে শুরুতেই জান্নাতী হওয়ার দৃঢ় আশা পোষণ করেন। সেই সাথে তারা অন্য ভাইদেরকেও স্বচ্ছ জীবনের প্রতি আহবান জানান। বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা উক্ত আহবান জানানোর একটি মহতী সুযোগ।

আহলেহাদীছগণ ক্বিয়ামত অবধি হক-এর উপরে বিজয়ী থাকবে এবং মানুষকে হক-এর পথে আহবান জানাবে। স্বার্থান্ধ মানুষ সর্বদা বাধা সৃষ্টি করলেও আল্লাহর রহমতে এ দলই চির বিজয়ী থাকবে। আর প্রকৃত বিজয় হ’ল আখেরাতের বিজয়। দুনিয়ার বিজয় নয়। সংখ্যা ও শক্তি কখনোই সত্যের মাপকাঠি নয়। সত্য সেটাই যা আমাদের রবের কাছ থেকে আসে। আর তা হ’ল পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ। যার অনুসারী প্রথম দল হলেন ছাহাবায়ে কেরাম। অতঃপর তাঁদের শিষ্য তাবেঈনে এযাম। অতঃপর তাঁদের শিষ্য তাবে তাবেঈগণ এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাঁদের অনুসারী আহলেহাদীছগণ। এ নাম আমাদের বৈশিষ্ট্যগত নাম। যা অন্য মুসলমান থেকে আমাদের স্বতন্ত্র করে দেয়। যেমন সর্বত্র বাতিলপন্থী থেকে হকপন্থীরা স্বতন্ত্র থাকে।

আহলেহাদীছগণ কখনোই চরমপন্থী বা শৈথিল্যবাদী হন না। তারা সর্বদা মধ্যপন্থী হন ও সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপরে ভরসা করেন। পরিবর্তিত যেকোন পরিস্থিতিতে তারা দৃঢ়চিত্ত থাকেন। পরিস্থিতি তাদেরকে পরিবর্তন করতে পারে না। বরং তারাই পরিস্থিতিকে পরিবর্তন করেন। তারা কখনোই পরাজিত হন না। বরং সর্বদা বিজয়ী থাকেন। হক-এর দাওয়াত দিতে গিয়ে যেকোন নির্যাতনকে তারা হাসিমুখে বরণ করেন এবং তাকে আল্লাহর পরীক্ষা হিসাবে গ্রহণ করেন। তারা স্রোতে ভেসে যান না, বরং স্রোতকে পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। তাই তাদেরকে সর্বদা সংগ্রামী জীবন যাপন করতে হয়। আর সেজন্যই তারা আল্লাহর হুকুমে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ইমারতের অধীনে সংঘবদ্ধ থাকেন। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ এ দেশে ফিরক্বা নাজিয়াহর সাংগঠনিক রূপ মাত্র। আহলেহাদীছ তাবলীগী ইজতেমা তাদেরই বার্ষিক কেন্দ্রীয় মিলন মেলা। জান্নাত পাগল সকল মানুষকে অত্র ইজতেমায় স্বাগত জানানো হয়।

বর্তমানে রাজশাহী কেন্দ্র থেকেই এ দাওয়াত বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হচ্ছে। দেশে ও প্রবাসে জানা ও অজানা সকল মানুষের নিকট এ ইজতেমার উদাত্ত আহবান, আসুন! পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ি’। আসুন! জান্নাতের পথে ফিরে চলি। আল্লাহ তুমি আমাদের কবুল কর- আমীন! (স.স.)


 

 







বিষয়সমূহ: সংগঠন
২. পৃথিবী নামক গ্রহটিকে প্রাকৃতিকভাবে চলতে দিন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আমি চাই - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পর্ণোগ্রাফী নিষিদ্ধ করুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
প্রশ্ন ফাঁস - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নিউজিল্যান্ড ট্রাজেডী : চরমপন্থার পরাজয় ও মানবতার বিজয় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ক্বিয়ামতের গুজব ও বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ড - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উৎস হৌক যাকাত ও ছাদাক্বা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সামাজিক অস্থিরতা ও তা দূরীকরণের উপায় সমূহ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বাংলাদেশের সংবিধান হৌক ইসলাম - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
হিংসা ও অহংকার সকল পতনের মূল - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
111
হানাহানি কাম্য নয় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.