জনগণের বেতনভুক আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা মিলে প্রতিদিন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করছে। আর তাকে ‘ক্রসফায়ারে সন্ত্রাসী নিহত’ বলে তারা হরহামেশা মিথ্যাচার করছে। গভীর রাত্রিতে গাড়িবহর নিয়ে আসামী ধরার নামে ঘুমন্ত গ্রামবাসীর উপর শত শত রাউণ্ড গুলি বর্ষণ করে মারধর, লুটপাট ও বাড়ি ভাঙ্গার মত ন্যাক্কারজনক কাজ করে বলা হচ্ছে ‘আত্মরক্ষার স্বার্থে করা হয়েছে’। অতঃপর ত্রিশ/চল্লিশটা মিথ্যা মামলা দিয়ে বিশ/পঞ্চাশ হাযার মানুষকে অজ্ঞাত আসামী করে চালানো হচ্ছে গ্রেফতার বাণিজ্য। ওদিকে বিরোধী দলের সন্ত্রাসীরা পাল্টা হামলা চালিয়ে নিরপরাধ জনগণকে হত্যা করছে। আর প্রত্যেকে দোষ চাপাচ্ছে অন্যের উপরে। গাছ কেটে রাস্তা বন্ধ করা, পেট্রোলবোমা ছুঁড়ে গাড়ী ও ট্রেন পোড়ানো ও মানুষ হত্যার এক নতুন শয়তানী রীতি চালু হয়েছে। বন বিভাগের হিসাব মতে গত ১০ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৫০ হাযার বৃক্ষ নিধন করা হয়েছে। যার গড় মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। মানুষ এখন সরকারী ও বিরোধী দলের হাতে যিম্মী। যাকে যে বিরোধী ভাবছে, তাকেই সে গুম, খুন, অপহরণ, মিথ্যা মামলা ইত্যাদিতে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। মানুষ সত্য বলতে ভয় পাচ্ছে। না জানি কখন কার স্বার্থে ঘা লাগে। বিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করা ও বিরোধী মত-পথের নাগরিকদের নির্মূল করাই যদি কারু লক্ষ্য হয়, তবে তাদের জেনে রাখা ভাল যে, আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনভাবে সৃষ্টি করেছেন। সে স্বাধীনভাবে কথা বলবে, হাসবে, কাঁদবে। এতে কারু বাধ সাধার অধিকার নেই। আর আল্লাহ কখনো কোন যালেমকে বরদাশত করেন না। কেবল তওবা করার জন্য কিছুটা অবকাশ দেন মাত্র। অতএব সরকার হৌক আর বিরোধী দল হৌক, সীমা লংঘন করলে আল্লাহর গযব থেকে কেউ রেহাই পাবে না। আর আল্লাহর শাস্তি অতীব কঠোর, যা কেউ কল্পনাও করতে পারে না।

(১) বৃদ্ধ পিতা সারা জীবন সরকারী দলের সমর্থক ও স্থানীয় দায়িত্বশীল। যুবক ছেলে স্রেফ একজন ঘের ব্যবসায়ী। কোন দল করে না। ঘের শুকানোর মওসুম এসে গেছে। তাই সে দিন-রাত সেখানে পাহারা দেয়। বুকভরা আশা কয়েকদিন পরেই মাছ ধরবে। মাছ বেচে সংসারে হাসি ফুটাবে। হঠাৎ যৌথবাহিনী নামক ‘যম বাহিনী’-র গাড়ী। সেখান থেকে নামল কয়েকটি যমদূত। চিনিয়ে দিল একজন। অতঃপর সেখানেই গুলি করে শেষ। দেখলো সবাই প্রকাশ্য দিনমানে। রাতেই টিভিতে ও পরদিন পেপারে এল, বড় মাপের এক সন্ত্রাসী ও আইনশৃংখলা বাহিনীর উপর হামলাকারী দশ-বারোটি মামলার কুখ্যাত আসামী ক্রসফয়ারে নিহত। অথচ আসল ঘটনা হয়ত এটাই যে, সে কিছুই নয়। বরং কারু হিংসার শিকার হয়েছে।

(২) এক উপযেলা থেকে ১৩/১৪ বছর বয়সের একটা বাচ্চাকে ধরে এনে যেলা শহরের কাছাকাছি এক ফিলিং স্টেশনে দাঁড়িয়ে সকলের সামনে পায়ে গুলি করে ছেলেটিকে রক্তাক্ত করে ফেলে রাখল মাটিতে। উপস্থিত লোকজন ছুটে এলে ওসি বাহাদুর অট্টহাসি হেসে বললেন, আরে অমুক দলের কর্মীকে মেরেছি। ভাবখানা এই যে, সরকারী দলের বাইরের কারু এমনকি কচি বাচ্চাদেরও এদেশে বেঁচে থাকার অধিকার নেই।

(৩) মাথায় টুপী দেওয়া নবম শ্রেণী পড়–য়া তরুণ ছাত্রটি মাদরাসা থেকে পায়ে হেটে বাড়ী যাচ্ছে। মা উন্মুখ হয়ে চেয়ে আছেন কখন বাচ্চা এসে মা বলে ডাকবে। আর তিনি তার ক্ষুধার্ত সন্তানকে প্রাণভরা স্নেহ দিয়ে ভাত খাওয়াবেন। কয়েক কদম গেলেই বাড়ী। হঠাৎ একটা মাইক্রো এসে হাযির। মাথায় কালো টুপী পরিয়ে চোখমুখ ঢেকে বেঁধে নিয়ে গেল তাকে গাড়ীতে করে। সবাই দেখল এ দৃশ্য। কিন্তু আর খুঁজে পাওয়া গেলনা ছেলেটিকে। সারারাত নির্যাতন করে ভোর রাত সাড়ে চারটার দিকে প্রকাশ্য রাজপথে ৮/১০টা গুলি করে তার কচি দেহটা ঝাঝরা করে দিল যৌথবাহিনী। ইলেকশনের আগে তার পিতাকে না পেয়ে তাদের বাড়ী গুঁড়িয়ে দিয়েছিল সরকারী বুলডোজার দিয়ে। ইলেকশনে ফাঁকা মাঠে জিতে এবার তার নিরীহ-নিরপরাধ একমাত্র সন্তানকে হত্যা করল তারা। পত্রিকা ও টিভিতে যথানিয়মে মিথ্যাচার করা হ’ল যে, বড় এক সন্ত্রাসী ক্রসফায়ারে নিহত। বৃটিশ-পরবর্তী বাংলাদেশে এরূপ অমানবিক ও নিষ্ঠুরতম বর্বরতার কোন নযীর আছে বলে আমাদের জানা নেই।

(৪) হিন্দু-মুসলমান যুগ যুগ ধরে এদেশে বসবাস করছে একত্রে ভাই-ভাইয়ের মত। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের আগে ও পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও তাদের বাড়ী-জমি দখল করে সর্বদা ক্ষমতাসীনরা ও তাদের পেটুয়ারা। আর ঐসব জবরদখলকারীরাই তাদের উপর সুযোগ মত হামলা করে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে। তারা কেউ কেউ হুমকি দিয়ে বলে, ‘থাকলে ভোট, গেলে জমি’। অথচ দোষ চাপানো হয় দ্বীনদার মুসলমানদের উপরে। যারা ইসলামের বিধান মতে সংখ্যালঘুদের জান-মাল ও ইযযতকে পবিত্র আমানত মনে করে। এদিকে সরকার তারস্বরে চিৎকার দিয়ে সর্বদা জঙ্গীমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিচ্ছেন। অর্থাৎ তারা অনৈসলামিক বাংলাদেশ চান। অতএব তাদের কাছে ইসলামপন্থীদের রক্ত হালাল ও ইসলাম বিরোধীদের রক্ত হারাম। এগুলি কি জঙ্গীপনা নয়? এটাই কি সরকারের নিরপেক্ষতার নিদর্শন? জানা উচিৎ যে, এদেশ সবার। আর এটি পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। তাই ইসলামকে সাম্প্রদায়িকতা বলে বিদ্রুপ করার আগে আয়নায় একবার নিজেদের চেহারা দেখুন। পার্শ্ববর্তী ধর্মনিরপেক্ষ ভারত, মিয়ানমার ও চীনের দিকে একবার তাকান। সেখানকার সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতনকারীদের কেউ সাম্প্রদায়িক বলে কেন নিন্দা করেন না? তাই কানাচক্ষু বকধার্মিক না হয়ে চোখ-মুখ খোলা রাখুন। আর ইসলামকে ভালভাবে জানুন। ইসলামে সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সকলের অধিকার সমান। আর এদেশ কোন একটি দলের বা ব্যক্তির মৌরুসী সম্পত্তি নয়। জনগণের দেওয়া ট্যাক্সের পয়সায় সরকার চলে। নিহত ব্যক্তির রাজস্ব দিয়েই হত্যাকারী সরকারী বাহিনীর বন্দুক কেনা হয় ও তাকে বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়। অতএব সাবধান হৌন! আল্লাহকে ভয় করুন।

(৫) ক্ষমতাতন্ত্রীদের বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন তিনবছরের বাচ্চাটি মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে বলে যাচ্ছে, ‘আমি গিয়ে আল্লাহকে সব বলে দেব’। সিরিয়ার ঐ কচি মেয়েটির কাতর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলছি- হে সরকার ও বিরোধী দলীয় ক্ষমতাতন্ত্রীরা! তোমাদের সীমাহীন অত্যাচারের কথা আমরাও আল্লাহকে বলে দেব। হে আল্লাহ! তুমি যালেমদের রুখে দাও ও নিরীহ মানুষকে রক্ষা কর! আমীন!! (স. স.)।






বিষয়সমূহ: বিবিধ
বিদায় হজ্জের ভাষণ : গুরুত্ব ও তাৎপর্য - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নিহত আবরার নিহত দেশপ্রেম - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অ্যানেসথেসিয়া দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মূল্যস্ফীতি : কারণ ও প্রতিকার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নৃশংসতার প্রাদুর্ভাব : কারণ ও প্রতিকার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নাস্তিক্যবাদ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
স্বাধীনতার মাসে অধীনতার কসরৎ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
হে প্রভু! একটা শ্বাস দাও - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
দল ও প্রার্থী বিহীন নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের উপায় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
থার্টি-ফার্স্ট নাইট - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মানবাধিকার দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.