বর্ষ পরিক্রমায় অন্যান্য বারের ন্যায় এবারও আমাদের দুয়ারে নেকী ও ছওয়াবের ডালি নিয়ে মাহে রামাযানের আগমন ঘটেছে। আল্লাহভীতির বিশেষ গুণ অর্জনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন ও সংযমশীলতার প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলে যে আত্মশক্তির উন্মেষ ঘটে, সেই আত্মশুদ্ধি ও আত্মশক্তির উন্মেষ সাধনের জন্যই বছরে একবার রামাযানের আগমন ঘটে। ঈমান ও তাক্বওয়া অর্জনের মাধ্যমে মানবতার পূর্ণ বিকাশ সাধন রামাযানের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।...
মানুষের জীবনের দু’টি ভাগ আছে। একটি আধ্যাত্মিক ও অন্যটি বৈষয়িক। বৈষয়িক জীবন পরিচালিত হয় আধ্যাত্মিক বিশ্বাস ও মূল্যবোধের উপরে ভিত্তি করে। যখন কোন জাতির আধ্যাত্মিক মূল্যবোধে ধস নামে, তখন সে জাতির বৈষয়িক উন্নতি হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে। বিধ্বস্ত বিগত সভ্যতাগুলি তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। ইসলামের সকল ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য থাকে তাযকিয়ায়ে নফ্স বা আত্মশুদ্ধি অর্জন করা। ছিয়ামে রামাযান একই উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি ফরয ইবাদত। অতএব ছিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য যদি ব্যর্থ হয়, তাহ’লে ছিয়াম কেবল উপবাসের নাম হবে, অন্য কিছু হবে না।
এখানে আরেকটি বিষয় স্মর্তব্য যে, রামাযান মাসেই আল্লাহপাক তাঁর সেরা আসমানী গ্রন্থসমূহ নাযিল করেছেন। বিশ্ববাসীর হেদায়াতের জন্য পবিত্র কুরআনও এমাসের ক্বদর রজনীতে নাযিল হয়েছে। যার ফলে ক্বদর রজনীর ইবাদত হাযার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। কুরআন নাযিল হওয়ার সম্মানে এবং আল্লাহর বিশেষ রহমতে রামাযানে সকল নেকীর কাজের ছওয়াব আল্লাহ নিজে দিবেন। আল্লাহর ঐ মহা নে‘মত আল-কুরআন ও আল-হাদীছ মুসলমানদের কাছে আমানত রয়েছে। জীবন পরিচালনার জন্য অন্য কারু হেদায়াত প্রয়োজন নেই। নুযূলে কুরআনের মাস হিসাবে রামাযানের যে সম্মান, কুরআন তথা আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ অহি-র ধারক ও বাহক হিসাবে মুসলমানেরও সেই সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে সকল উম্মতের উপর। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা কি কুরআন-হাদীছকে সেই মর্যাদা ও সম্মান দিতে পেরেছি?
অতএব আসুন! রামাযানকে স্বাগত জানানোর সাথে সাথে প্রতিজ্ঞা গ্রহন করি যেন একে সত্যিকারভাবে সম্মান দিতে পারি। যাবতীয় পাপ ও অন্যায় থেকে তওবা করে আত্মশুদ্ধি অর্জনে সক্ষম হই...।