ইঙ্গ-মার্কিন চক্রের সহায়তায় ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে তেলআবিবে বিকেল ৪-টায় বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম ‘ইস্রাঈল’ নামক একটি রাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া হয় এবং তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমেরিকা ইসরাঈলকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৪৯ সালে বৃহৎ শক্তিবর্গ তাকে জাতিসংঘের সদস্য করে নেয়। এরপর থেকে শুরু হয় ইসরাঈলের বৈধ (?) অগ্রযাত্রা ও মুসলমানদের নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়া! যা বর্তমানে একটি ক্রান্তিকালে পেঁŠছে গেছে। ১৯১৭ সালের ২রা নভেম্বর ‘বেলফোর চুক্তি’ থেকেই মূলতঃ মুসলিম ফিলিস্তীনকে ইহূদী করণের সূচনা হয়। প্রায় শতবর্ষের মাথায় এসে তা এখন পূর্ণতার শিখরে পেঁŠছে যেতে বসেছে। ইহূদী-খ্রিষ্টান চক্র বিগত একশত বছর যাবত আলোচনার নামে কেবল কালক্ষেপণ করেছে। কিন্তু তাদের লক্ষ্যে তারা অবিচল থেকেছে। নরমে হৌক গরমে হৌক বা প্রতারণার মাধ্যমে হৌক তারা তাদের লক্ষ্য হাছিলে অনড় রয়েছে। তবুও পরের মাটিতে জবরদখল বসিয়ে তারা কখনোই শান্তিতে ছিল না, আজও নেই। তাদের ভাগ্যে রয়েছে আল্লাহর চিরস্থায়ী গযব। সূরায়ে ফাতিহায় ইহূদীদেরকে ‘মাগযূব’ বা অভিশপ্ত ও খ্রিষ্টানদেরকে ‘যা-ল্লীন’ বা পথভ্রষ্ট বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ যেন মুসলমানদেরকে তাদের পথে পরিচালিত না করেন, সেজন্য ছালাতে প্রতি রাক‘আতে সূরায়ে ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করা হয়। ইহূদী-নাছারাগণ ইসলামের স্থায়ী দুশমন। তাদেরকে ও কাফিরদেরকে বৈষয়িক স্বার্থ ব্যতীত আন্তরিক বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে আল্লাহ পাক নিষেধ করেছেন (মায়েদাহ ৫/৫১, আলে-ইমরান ৩/২৮)। মুসলমানেরা ইসলাম ত্যাগ করে তাদের দলভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা কখনোই মুসলমানদের উপরে সন্তুষ্ট হবে না (বাক্বারাহ ২/১২০)

মিথ্যা ও প্রতারণা তাদের মজ্জাগত। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সাথে তাদের প্রতারণা ছিল ইতিহাস প্রসিদ্ধ। যার জন্য আল্লাহর হুকুমে তিনি তাদেরকে মদীনা থেকে উৎখাত করেন। কুরআনে এটাকে ‘আউয়ালুল হাশর’ বা প্রথম উৎখাত বলা হয়েছে। অতঃপর তাদের শেষ হাশর হবে ক্বিয়ামতের দিন। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, ইহূদীরা বিশ্বের কোথাও শান্তির সাথে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে না। আজও তারা খ্রিষ্টান নেতাদের সহায়তায় মুসলিম বিশ্বের সাথে প্রতারণা করেই চলেছে। কখনো মিত্রবাহিনী সেজে, কখনো জাতিপুঞ্জ, কখনো জাতিসংঘের সাইনবোর্ড নিয়ে, কখনো গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে তারা বিভিন্ন মুখোশে বিশ্বব্যাপী শোষণ-নিপীড়ন ও সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে তারা উসামা বিন লাদেনকে খোঁজার নামে আস্ত একটি স্বাধীন দেশ আফগানিস্তানকে নাস্তানাবুদ করল। হাযার হাযার আফগান মুসলমান নর-নারী ও শিশু নিহত হ’ল। বিধ্বস্ত হ’ল সেদেশের গৌরবমন্ডিত স্থাপনা সমূহ। এমনকি সেখানে কয়েকদিন পূর্বে যে ভূমিকম্প হয়ে গেল, সেটাও অবিশ্রান্ত মার্কিন বোমা হামলার ফলশ্রুতি বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মত প্রকাশ করেছেন । ওসামা বা মোল্লা ওমরের কোন খবর নেই। অথচ আফগানিস্তানের নিরীহ জনগণকে তারা শেষ করল। বিতাড়িত করল একটি প্রতিষ্ঠিত সরকারকে ও উদ্বাস্ত্ত বানালো সেদেশের স্থায়ী অধিবাসী জনগণকে। যারা এখন পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে।

বর্তমানে ফিলিস্তীনে তারা যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে আধুনিক বিশ্বে তার তুলনা কেবল তারাই। জেনিন শহরটিকে নিশ্চিহ্ন করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, নিহত লাশগুলিকে বুলডোজারের নীচে পিষে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতেও তাদের বিবেকে ধাক্কা লাগেনি। কিন্তু গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের এই ধ্বজাধারীরা সেগুলি বেমালুম চেপে যাচ্ছে। বিধ্বস্ত জেনিন উদ্বাস্ত্ত শিবির ঘুরে এসে জাতিসংঘ প্রতিনিধি রয়েড লারসেন ১৯শে এপ্রিল তারিখে বললেন, ‘সেখানে ইসরাঈলী সৈন্যদের বর্বরতা অচিন্তনীয়’। অথচ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী কলিন পাওয়েল মধ্যপ্রাচ্য শান্তিমিশনে সপ্তাহব্যাপী বিলাসভ্রমণ শেষে ২৫শে এপ্রিল সেদেশের সিনেটে রিপোর্ট দিলেন, ‘জেনিনে ইসরাঈলী গণহত্যার কোন প্রমাণ মেলেনি’। দুঃখ হয় মুসলিম দেশগুলির নেতাদের জন্য। এতকিছুর পরেও তারা দ্বিচারিণী বুশ প্রশাসনকেই ফিলিস্তীনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার জন্য কাতর আহবান জানাচ্ছেন। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি যদি একযোগে মাত্র একমাস আমেরিকা ও তার সহযোগী দেশগুলিতে তৈল রফতানী বন্ধ রাখে, তাহ’লে এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের যুদ্ধের চাকা বন্ধ হ’তে বাধ্য। নির্যাতিত ইরাক যদি একমাস তৈল রফতানী বন্ধের ঘোষণা দিতে পারে, তাহ’লে সঊদী আরব, কুয়েত, ইরান ও অন্যান্য দেশগুলি কেন পারে না?

অতএব আমরা মনে করি যে, মুসলিম বিশ্বকে নিজেদের শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে হবে এবং তাদেরকে আল্লাহ পাক তৈল ও গ্যাস সহ যেসব অমূল্য সম্পদ দান করেছেন, সেগুলির পরিকল্পিত ব্যবহারে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে হবে। জনৈক মার্কিন বিশেষজ্ঞের মতে ‘আমেরিকার সম্পদ ফুরিয়ে আসছে। বর্তমান শতাব্দীতেই তাদের চূড়ান্ত ধস প্রত্যক্ষ করা যাবে’। বরং এটাই বাস্তব যে, ফিলিস্তীন সহ বিভিন্ন দেশে আমেরিকার দ্বৈতনীতি তার নৈতিক ভিত্তি ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন তার অর্থনৈতিক ভিত্তি ধ্বংস হওয়ার অপেক্ষা মাত্র। আর সেটা খুব সহজেই সম্ভব মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির তৈলাস্ত্র প্রয়োগের মাধ্যমে এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের স্ব স্ব সম্পদ সমূহকে মার্কিন ও তার দোসরদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করার মাধ্যমে। সর্বোপরি প্রয়োজন মুসলিম সরকারগুলিকে মার্কিন তোষণনীতি পরিহার করে পবিত্র কুরআনে ঘোষিত স্থায়ী ও স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতির অনুসরণ করা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য সাধ্যমত শক্তি সঞ্চয় কর পালিত ঘোড়া ইত্যাদির মাধ্যমে। যার দ্বারা তোমরা ভীত করবে আল্লাহর শত্রুদের ও তোমাদের শত্রুদের এবং তারা ব্যতীত অন্যদের, যাদেরকে তোমরা জানোনা। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে জানেন। জেনে রেখ, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় যা কিছু ব্যয় কর, সবটাই তোমরা পূর্ণভাবে ফেরৎ পাবে এবং তোমাদের উপরে এতটুকুও যুলুম করা হবে না’ (আনফাল ৮/৬০)। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন।[1]


[1]. ৫ম বর্ষ, ৭ম-৮ম সংখ্যা, এপ্রিল-মে ২০০২।






হে মানুষ আল্লাহকে ভয় কর! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নিহত আবরার নিহত দেশপ্রেম - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মূল্যস্ফীতি : কারণ ও প্রতিকার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নষ্ট সংস্কৃতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মূল্যবোধের অবক্ষয় ও আসন্ন রামাযান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নারী শিক্ষা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মুসলিম ও আহলেহাদীছ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মে‘রাজুন্নবী (ছাঃ) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আফগানিস্তানে মার্কিন হামলা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আহলেহাদীছ তাবলীগী ইজতেমা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ইসলামী শিক্ষার বিকাশ চাই - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.