বিজ্ঞানীদের উপর কুরআনের প্রভাব

বিজ্ঞানীদের উপর কুরআনের প্রভাব বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রথমে বিজ্ঞান, বিজ্ঞানী, ধর্ম ও এদের মধ্যেকার সম্পর্ক সম্বন্ধে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন। বিজ্ঞানের লক্ষ্য হ’ল প্রাকৃতিক জগতকে অনুসন্ধান করা এবং বোঝা। প্রাকৃতিক জগতের ঘটনা ব্যাখ্যা করা এবং সেই ব্যাখ্যাগুলি ব্যবহার করে দরকারী ভবিষ্যদ্বাণী করা, যার সাহায্যে মানুষের দুনিয়াবী জীবনমান উন্নত করা যায়। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রশ্ন এবং সংশোধনের জন্য উন্মুক্ত। কারণ এতে নতুন ধারণার সৃষ্টি হয় এবং নতুন প্রমাণ আবিষ্কৃত হয়। ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নির্ভরযোগ্য। কারণ এটি পরীক্ষা করা হয়। মিশর, মেসোপটেমিয়া, ভারত, চীন, মেসোআমেরিকা এবং মায়ার মতো প্রাচীন সভ্যতায় প্রাথমিক বিজ্ঞানের ঐতিহ্য বিকশিত হয়েছিল। গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা এবং মেডিসিনের উপর তাঁদের কাজগুলি পরবর্তীকালে গ্রীক প্রাকৃতিক দর্শনকে প্রভাবিত করেছিল (৮০০ বিসিই-৬০০ খৃ.)। পশ্চিমা রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সাথে সাথে ইউরোপে জ্ঞানের বিকাশ বন্ধ হয়ে যায়। ইসলামী স্বর্ণযুগে (৮০০-১৩০০ খৃ.) মুসলিম বিশেবর বিজ্ঞানীরা কেবল গ্রীক জ্ঞানকে আরবী ভাষায় অনুবাদ করে সংরক্ষণ করেনি বরং তাঁদের নিজস্ব গবেষণার মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

পরবর্তীকালে পশ্চিমা বিশ্ব গ্রীক ও ইসলামিক কাজ পুনরুদ্ধার ও আত্মীকরণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দর্শনের শিক্ষাকে পুনরুজ্জীবিত করে। ১৬-১৭ শতকে ইউরোপে বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সময় প্রাকৃতিক দর্শনকে নতুন বিজ্ঞানে রূপান্তরিত করা হয়েছিল, অভিজ্ঞতাবাদ এবং যুক্তিবাদের নতুন সংজ্ঞায়িত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বিভিন্ন প্রযুক্তির জন্ম দিয়েছে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একসাথে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যক্তিগত যত্ন, বিনোদন, নগরায়ন সহ মানব জীবনের সমস্ত বস্ত্তগত ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি এনেছে। আধুনিক মানুষ অত্যন্ত আশাবাদী হয়ে ওঠে এবং বিশ্বাস করে যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে পারবে এবং সৃষ্টির সমস্ত ধাঁধা উন্মোচন করতে পারবে। যাকে বলা হয় আধুনিকতাবাদী চিন্তা। যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষতিকর প্রভাব বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে শুরু করে, যেমন পরিবেশগত বিপর্যয়, মানব স্বাস্থ্যের অবনতি বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য, অপূরণীয় প্রাকৃতিক সম্পদের অবক্ষয়, নৃশংস যুদ্ধ/সংঘাত, ব্যাপক দারিদ্র্য ও রোগব্যাধি, ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, সামাজিক কাঠামোর বিচ্ছিন্নতা, ব্যাপক বৈষম্য ইত্যাদি, তখন মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভাব ও সম্ভাবনা সম্পর্কে চরম হতাশ হয়ে পড়ে, যা উত্তর আধুনিকতাবাদী চিন্তা হিসাবে পরিচিত।

পরবর্তীতে মেটা আধুনিকতাবাদী বা উত্তর আধুনিকতাবাদী চিন্তাধারায় চরম আশাবাদ ও চরম হতাশাবাদের সমন্বয় ঘটে চলেছে। ফলস্বরূপ, কেবল টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা, সংরক্ষণ, নবায়নযোগ্যতা, প্রাকৃতিক সমাধান ইত্যাদির উপর ক্রমবর্ধমানভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে না, সাথে সাথে আধ্যাত্মিকতা এবং ধর্মের উপরও নব উদ্যমে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।

অর্থাৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকরা ক্রমবর্ধমানভাবে উপলব্ধি করছেন যে, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মানুষের মনে অবধারিতভাবে উদভূত কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। যেমন কে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে? তিনি আমাদের কাছে কি চান? জীবনের উদ্দেশ্য কি? মৃত্যুর পর কি হবে? অথচ মানুষ এই প্রশ্নগুলি নিয়ে চিন্তা না করে থাকতে পারে না। এগুলোর সঠিক উত্তর না জানা পর্যন্ত মানুষ প্রকৃত শান্তি অর্জন এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবন লাভ করতে পারে না। স্পষ্টতই এই বিষয়গুলো অতিপ্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কিত, যা আমাদের বোধের সীমানার বাইরে অবস্থিত। ধর্মের কর্ম বলয় মূলতঃ অতিপ্রকৃত জগৎ সংক্রান্ত। প্রতিটি ধর্ম অতিপ্রকৃত জগৎ হ’তে এর প্রতিষ্ঠাতা গুরু কর্তৃক প্রাপ্ত অন্তর্দৃষ্টি বা আপ্তবাক্য অনুযায়ী উপরিউক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে থাকে এবং তদনুযায়ী প্রাকৃতিক জগৎ পরিচালনার শিক্ষা প্রদান করে। ফলে অতিপ্রকৃত জগৎ সম্পর্কিত তাঁর মনে উত্থিত প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী মানুষ সবসময় ধর্মের দিকে ধাবিত হয়েছে। আর বিজ্ঞানের এখতিয়ার মূলতঃ আমাদের ইন্দ্রিয়ের কাছে অভিগম্য এই প্রাকৃতিক জগতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। 

মানব ইতিহাসে বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে সম্পর্ককে মূলতঃ ‘দ্বন্দ্ব’, ‘সম্প্রীতি’, ‘জটিলতা’ এবং ‘পারস্পরিক স্বাধীনতা’ রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। সক্রেটিসকে ৩৯৯ বিসিই-তে অধার্মিকতার অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেওয়া ও ১৭শ শতাব্দী সিই-তে গ্যালিলিওর সূর্যকেন্দ্রিকতাকে রোমান ক্যাথলিক চার্চ দ্বারা ধর্মবিরোধী বলে ঘোষণা করা বিরোধপূর্ণ সম্পর্ককে নির্দেশ করে। আলবার্ট আইনস্টাইন (মৃত্যু ১৯৫৫ খৃ.) যুক্তি দিয়েছেন যে অতিপ্রকৃত বস্ত্ত এবং লক্ষ্যগুলিতে একজন ধর্মীয় ব্যক্তির সন্দেহাতীত এবং দৃঢ় বিশ্বাসের জন্য যুক্তিবাদী বা অভিজ্ঞতামূলক ভিত্তির প্রয়োজন হয় না এবং সেজন্য বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকা উচিত। এছাড়াও বিজ্ঞান ও ধর্ম উভয়ই জটিল সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রচেষ্টা যা বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এবং সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হ’তে পারে। এই জটিল সম্পর্কটি সেই সমস্ত ধর্মতত্ত্ববিদদের দ্বারা উদ্ভাসিত হয় যারা বৈজ্ঞানিক গবেষণায়ও নিযুক্ত থাকেন। যেমন রজার বেকন, ফ্রাঞ্চিস কলিন্স প্রমুখ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস এই মতকে সমর্থন করে যে বিজ্ঞান এবং ধর্ম পারস্পরিকভাবে স্বাধীন। কেননা তাঁরা মানুষের অভিজ্ঞতার মৌলিকভাবে পৃথক দিকগুলো নিয়ে কাজ করে।

ধর্ম সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের বিস্তৃত মতামত রয়েছে। আমেরিকার পিউ গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণা অনুযায়ী বিজ্ঞানীদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নিজেদের নাস্তিক বা অজ্ঞেয়বাদী বা কোন কিছুই নয় বলে দাবী করেছেন। এক-তৃতীয়াংশ কোন একটি ধর্মীয় ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত। সাধারণভাবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞান এবং ধর্মকে দ্বন্দ্বের পরিবর্তে পৃথক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিচালিত হিসাবে দেখেন। কিছু বিজ্ঞানী সায়েন্টিজমে বিশ্বাসী অর্থাৎ তারা মনে করেন যে বিজ্ঞানই মহাবিশ্বের সবকিছু আবিষ্কারের জন্য যথেষ্ট। অন্যরা ডিয়িজমকে মেনে চলে অর্থাৎ তাঁরা বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন কিন্তু সক্রিয়ভাবে এটি পরিচালনা করেন না। আস্তিক বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, ঈশ্বর সক্রিয়ভাবে জগতে হস্তক্ষেপ করেন।

কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে, তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং তাদের বিজ্ঞানের কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিছু বিজ্ঞানী গভীরভাবে ধার্মিক এবং তাঁরা তাঁদের বৈজ্ঞানিক কাজকে স্রষ্টার সৃষ্টিকে আলোকিত করার উপায় হিসাবে দেখেছেন।

ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআনকে মুসলমানরা জ্ঞান এবং গাইডেন্সের চূড়ান্ত উৎস হিসাবে বিবেচনা করে। কুরআনে অনেক আয়াত আছে যেগুলো বুদ্ধিবৃত্তিক অন্বেষণ এবং জ্ঞান অনুসন্ধানকে অর্থাৎ বিজ্ঞান চর্চাকে উৎসাহিত করে। যেমন ‘এবং আকাশের প্রতি, কিভাবে তাকে উচ্চ করা হয়েছে’? ‘(তারা কি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে না) পাহাড় সমূহের প্রতি, কিভাবে তা স্থাপন করা হয়েছে’? ‘এবং পৃথিবীর প্রতি, কিভাবে তাকে বিছানো হয়েছে’? ‘অতএব তুমি উপদেশ দাও। তুমি তো একজন উপদেশদাতা মাত্র’ ‘তুমি তাদের উপরে দারোগা নও’ (গাশিয়া ৮৮/১৮-২২)

ইসলামী সভ্যতায় বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও অর্জনের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। ইসলামের স্বর্ণযুগে মুসলিম পন্ডিতরা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বিষয়ে যেমন জ্যোতির্বিদ্যা, মেডিসিন, গণিত এবং পদার্থবিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। কুরআন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক মুসলিম বৈজ্ঞানিক/ দার্শনিক যেমন আল-খায়ারিজমী, ইবনে সিনা এবং আল-হায়ছাম বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছেন যা পরবর্তীকালে ১৬-১৭ শতকের ইউরোপে বৈজ্ঞানিক বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও কুরআনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হ’ল আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক দিকনির্দেশনা, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নয়, কুরআনের বেশ কিছু আয়াতকে বৈজ্ঞানিক ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেমন ‘আমরা স্বীয় ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি। আর আমরা অবশ্যই এর সম্প্রসারণকারী’ (যারিয়াত ৫১/৪৭)। এটি ১৯২৯ সালে এডউইন হাবলের আবিষ্কৃত সম্প্রসারণকারী মহাবিশ্ব তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ‘নিশ্চয়ই আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির নির্যাস থেকে। অতঃপর আমরা তাকে (পিতা-মাতার মিশ্রিত) জনন কোষরূপে (মায়ের গর্ভে) নিরাপদ আধারে সংরক্ষণ করি। অতঃপর উক্ত জননকোষকে আমরা পরিণত করি জমাট রক্তে। তারপর জমাট রক্তকে গোশতপিন্ডে। অতঃপর গোশতপিন্ডকে অস্থিতে। অতঃপর অস্থিসমূহকে ঢেকে দেই গোশত দিয়ে। অতঃপর আমরা ওকে একটি নতুন সৃষ্টিরূপে পয়দা করি। অতএব বরকতময় আল্লাহ কতই না সুন্দর সৃষ্টিকারী!’ (মুমিনূন ২৩/১২-১৪)। এই ভ্রূণের পর্যায়গুলি ১৮২৭ সালে ভন বেয়ারের আবিষ্কৃত আধুনিক ভ্রূণবিদ্যার অনুরূপ। ‘অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল উভয়ে যুক্ত ছিল। অতঃপর আমরা উভয়কে পৃথক করে দিলাম’ (আম্বিয়া ২১/৩০)। এই আয়াতটি ১৯৭৭ সালে রবার্ট ব্যালার্ড ও তার বৈজ্ঞানিক টিম প্রতিষ্ঠিত ডীপ সী ভেন্ট থিওরীর সাথে মিলে যায়।

‘আমরা পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি, যাতে তা তার বাসিন্দাদের নিয়ে টলতে না পারে। আর আমরা তার মধ্যে প্রশস্ত পথ সমূহ সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা গন্তব্যে পৌঁছতে পারে’ (আম্বিয়া ২১/৩১)। এই আয়াতটি প্লেট টেকটোনিক্স এবং পর্বতের (পৃথিবীকে) স্থিতিশীল (রাখার) ভূমিকা প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ১৯১২ সালে আবহাওয়াবিদ আলফ্রেড ওয়েজেনার মহাদেশীয় ড্রিফট তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন যা পরবর্তীতে প্লেট টেকটোনিক্সের আধুনিক তত্ত্বে পরিণত হয়। পৃথিবীর স্থিতিশীলতা হিসাবে পাহাড়ের ভূমিকা ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৭০ এর দশকের শুরুতে প্লেট টেকটোনিক্স তত্ত্বের ভিত্তিতে আবিষ্কৃত হয়েছিল। ‘আর আমরা আকাশকে সুরক্ষিত ছাদে পরিণত করেছি। অথচ তারা সেখানকার নিদর্শন সমূহ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে’ (আম্বিয়া ২১/৩২)। এটি বায়ুমন্ডলের প্রতিরক্ষা-মূলক ভূমিকার নির্দেশক। ক্ষতিকারক বিকিরণ এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পৃথিবীতে জীবন রক্ষায় বায়ুমন্ডলের ভূমিকা আবিষ্কার করেন ১৯০২ সালে টিসেরেঙ্ক ডি বরট এবং ১৯১৩ সালে চার্লস ফ্যাব্রি। আধুনিক বিজ্ঞানের আরও কিছু বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে প্রতিভাত হয়েছে এরকম আরও আয়াত আছে। যেমন বিগ ক্রাঞ্চ (আম্বিয়া ২১/১০৪), উল্কাপিন্ডের সাথে লোহা (হাদীদ ৫/২৫), দুই সমুদ্রের মিলন (রহমান ৫৫/১৯-২০), সূর্যের কক্ষপথে চলা (আম্বিয়া ২১/৩৩), ব্যথা রিসেপ্টর (নিসা ৪/৫৬), সমুদ্রের অভ্যন্তরীণ তরঙ্গ (নূর ২৪/৪০) এবং ফ্রন্টাল লোব (‘আলাক্ব ৯৬/১৫-১৬) সম্পর্কিত আয়াতগুলো।

আধুনিক কালের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাথে ১৪০০ বছর আগে অবতীর্ণ কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের আশ্চর্যজনক মিল লক্ষ্য করে একালের অনেক স্বনামধন্য অমুসলিম বিজ্ঞানী কুরআনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। তারা কুরআনকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করে কুরআনের বার্তা যেমন তাওহীদ, আল্লাহর পরিচয়, জীবনের অর্থ, মৃত্যু পরবর্তী জীবন ইত্যাদির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন। কুরআন যে আল্লাহর বাণী এবং পরম সত্য সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে অনেকে ইসলাম কবুল করেছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন কিথ এল. মুর, কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভ্রূণ বিশেষজ্ঞ; ই. মার্শাল জনসন, আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার টমাস জেফারসন ইউনিভার্সিটির একজন ভ্রূণ বিশেষজ্ঞ; জো লেই সিম্পসন, আমেরিকার ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জেনেটিক স্কলার; গার্ড সি গোরিঞ্জার, আমেরিকার জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভ্রূণ বিশেষজ্ঞ; আলফ্রেড ক্রোনার, জার্মানির গুটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ; ইউশিদি কুসান, জাপানের টোকিও অবজারভেটরির জ্যোতির্বিজ্ঞানী; প্রফেসর আর্মস্ট্রং, আমেরিকার নাসা এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যানসাসের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী; উইলিয়াম হে, আমেরিকার কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমুদ্রবিজ্ঞানী; দুর্গা রাও, সঊদী আরবের রাজা আব্দুল আযীয বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সামুদ্রিক ভূতত্ত্ববিদ; অধ্যাপক সিয়াভেদা, জাপানের একজন বিশ্ববিখ্যাত সামুদ্রিক ভূতত্ত্ববিদ; তেজতত তেজাসের, থাইল্যান্ডের একজন প্রখ্যাত অ্যানাটমি অধ্যাপক; মরিস বুকাইলি, একজন ফরাসী ডাক্তার; প্রফেসর জ্যাকি ই রু ইং, সিঙ্গাপুরে কর্মরত তাইওয়ানে জন্মগ্রহণকারী আমেরিকান ন্যানোটেকনোলজি বিজ্ঞানী; স্যার টমাস ব্রান্টন, একজন ব্রিটিশ চিকিৎসক; আর্থার ইলিসন, ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এবং আতশুল কামাল ওকুদা, একজন জাপানি বিজ্ঞানী প্রমুখ।

পবিত্র কুরআনই একমাত্র ধর্মগ্রন্থ, যা অধ্যয়ন করে অনেক বিজ্ঞানী এর সত্যতা এবং ঐশ্বরিক উৎস সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপন করেছেন এবং ফলশ্রুতিতে ইসলাম কবুল করেছেন। তবে এটাও সত্য যে, এমন বিজ্ঞানীও আছেন যেমন জন এসপোসিটো এবং কেরেন আর্মস্ট্রং যারা কুরআন গভীরভাবে অধ্যয়ন/গবেষণা করেও এবং কুরআনে বিশ্বাস স্থাপন করেও ইসলাম কবুল করেনি। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউ ইসলাম গ্রহণ করতে পারে না। যেমনটা আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি হেদায়াত করতে পারো না যাকে তুমি ভালবাস। বরং আল্লাহই যাকে চান তাকে হেদায়াত করে থাকেন। আর তিনিই হেদায়াত প্রাপ্তদের সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত’ (ক্বাছাছ ২৮/৫৬)

পরিশেষে বলব, কুরআনই পৃথিবীর বুকে বিদ্যমান একমাত্র সত্য ধর্মগ্রন্থ এবং এটি পৃথিবীর শেষ অবধি বিদ্যমান থাকবে। কুরআনকে বিজ্ঞানীদের কাছে দক্ষতার সাথে এবং কার্যকরভাবে উপস্থাপন করতে পারলে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রদায় ক্রমবর্ধমানভাবে বুঝতে সক্ষম হবে যে, কুরআন সম্পূর্ণ সত্য এবং এটিকে মেনে চলাই চূড়ান্ত সাফল্য অর্জনের একমাত্র উপায়। বিজ্ঞানীদের উপর আধুনিক মানুষের অগাধ বিশ্বাস। বিজ্ঞানীরা যত বেশী কুরআনকে উপলব্ধি করবে, কুরআনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ও কুরআন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বিজ্ঞান চর্চা করবে, বিজ্ঞান তত বেশী মানুষকে আধুনিকতাবাদী সাংস্কৃতিক প্রবণতার চরম হতাশা থেকে মুক্ত করতে পারবে এবং প্রকৃত জনকল্যাণমুখী হ’তে পারবে।

প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া

প্রফেসর (অবঃ), লুইজিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা;
কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম এ্যান্ড মিনারেলস্,
সঊদীআরব; সুলতান ক্বাবূস ইউনিভার্সিটি, ওমান।






কথাবার্তা বলার আদব বা শিষ্টাচার - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
কবিগুরুর অর্থকষ্টে জর্জরিত দিনগুলো - ড. গুলশান আরা
যাকাত সম্পর্কিত বিবিধ মাসায়েল (৪র্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
পলাশীর ষড়যন্ত্রকারীদের পরিণাম - আত-তাহরীক ডেস্ক
কুরবানী : ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
জান্নাত লাভের কতিপয় উপায় (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
বিশ্ব ভালবাসা দিবস - আত-তাহরীক ডেস্ক
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত (৭ম কিস্তি) - মুযাফফর বিন মুহসিন
ইয়াতীম প্রতিপালন (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
ক্ষমা ও সহিষ্ণুতা : মুমিনের দুই অনন্য বৈশিষ্ট্য - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
বিদ‘আত ও তার পরিণতি (৫ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
বিদায়ের আগে রেখে যাও কিছু পদচিহ্ন (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আরও
আরও
.