একবার এক মহিলা
কলেজ থেকে আকর্ষণীয় এক স্থানে শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়। বাস যোগে
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের স্পটে পৌঁছে যায়।
ছাত্রীরা স্পটের আশপাশেই ঘোরাফেরা করছিল। কিন্তু একজন ছাত্রী সকলের কাছ
থেকে আলাদা হয়ে ভিন্ন দিকে চলে গেল। এদিকে দিন শেষে বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেল
এবং ড্রাইভার যথারীতি গাড়ী স্টার্ট করে দিল। মেয়েটি যখন বাসের আওয়াজ শুনতে
পেল তখন হাতের ইশারায় তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করল এবং বাসের দিকে
দৌড়াতে আরম্ভ করল। কিন্তু না। কেউ তার দিকে খেয়াল করল না। বাসটিও চলতে চলতে
অনেক দূর চলে গেল।
মেয়েটি ভয় পেয়ে গেল এবং একাকী হাঁটা শুরু করে দিল। এদিকে সন্ধ্যা নেমে আসলো। যখন সে একপাশ থেকে শিয়ালের ডাক শুনতে পেল, তখন তার উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে গেল। চলতে চলতে সে ছোট্ট একটি কুটিরের সন্ধান পেল। কুটিরটিতে থাকত এক দরিদ্র যুবক। মেয়েটি সেই যুবকের কাছে তার কাহিনী খুলে বলল। যুবকটি বলল, ঠিক আছে। আপনি আমার এখানে নিরাপদে থাকতে পারেন। সকাল বেলা আমি আপনাকে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে দিয়ে আসব। আপনি আমার খাটে ঘুমান। আর আমি মেঝেতে ঘুমাব। মেয়েটি ছিল পরমা সুন্দরী এবং সম্ভ্রান্ত বংশের। আচরণেও সে অন্যান্য মেয়েদের থেকে আলাদা ছিল। বাহ্যিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি চারিত্রিক সৌন্দর্য তাকে মর্যাদার এক ঈর্ষণীয় চূড়ায় উপনীত করেছিল। কিন্তু রাতের বেলা ভয় ও উৎকণ্ঠার কারণে তার চোখে আর ঘুম এলো না। তবে সে একাধিকবার খেয়াল করল, যুবকটি একবার কুরআন তেলাওয়াত করছে, আরেকবার তার পাশে জ্বালিয়ে রাখা প্রদীপের আগুনে তার আঙুলগুলো ছেঁকা দিচ্ছে। ফলে তার পাঁচটি আঙুলই দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি মনে মনে ভাবল, হয়ত লোকটি পাগল না হয় জিন হবে। যাইহোক রাত পেরিয়ে সকাল হলে যুবকটি তাকে বাসে তুলে দিয়ে আসল। মেয়েটি বাড়ি ফিরে পিতাকে সব কাহিনী খুলে বলল। মেয়ের অনুরোধে পিতা সেই যুবকের কুটিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন এটা জানার জন্য যে, সে কেন তার আঙুলগুলো আগুনে পুড়িয়েছিল।
অতঃপর তিনি সেই যুবকের কাছে আসলেন। দেখলেন তার হাতে ব্যান্ডেজ লাগানো। জিজ্ঞেস করলেন, তোমার আঙুলে কী হয়েছে? যুবক বলল, গতরাতে আমার কাছে এক অপরিচিত বিপদগ্রস্থ মেয়ে এসেছিল এবং আমার গৃহেই আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু শয়তান আমাকে বার বার কুমন্ত্রণা দিতে লাগলো। তাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আমি কুরআন তেলাওয়াত করতে থাকি। তাতেও আমার অন্তর থেকে কুমন্ত্রণা দূর হচ্ছিল না। ফলে জাহান্নামের আগুনকে স্মরণ করার জন্য প্রদীপের আগুনে আমার আঙুল দগ্ধ করি। তারপর যখন ঘুমাতে গেলাম শয়তান আবার আমাকে কুমন্ত্রণা দিতে লাগল। ফলে আবার আমি প্রদীপের আগুনে আঙুল ছেঁকা দেই। এভাবে আমার পাঁচটি আঙুলই পুড়ে যায়।
ঘটনা শ্রবণে মেয়ের বাবা অভিভুত হলেন। বললেন, তুমি কি দয়া করে আমার বাড়িতে আসবে? যুবক রাযী হ’ল। যখন সে লোকটির বাড়িতে গেল, তখন মেয়েটি তাদের সামনে হাযির হ’ল। মেয়ের পিতা যুবককে বললেন, এই মেয়েকে চেন? যুবক বলল, অবশ্যই চিনি। এইতো সেই রমণী, যে গতরাতে আমার কুটিরে রাত্রি যাপন করেছিল। মেয়ের পিতা বললেন, আমি একে তোমার সাথে বিবাহ দিলাম, তুমি আমার মেয়েকে তোমার স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করে নাও।
যুবকটি সাথে সাথে সিজদায় লুটিয়ে পড়ল। কেননা যে হারামকে বর্জন করার জন্য সে এত কষ্ট স্বীকার করেছে, আল্লাহ সেই জিনিসটাই হালাল করে তার কাছে পেশ করেছেন। সুবহা-নাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহা-নাল্লাহিল আযীম।
মহান আল্লাহ বলেন,وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللهِ وَاللهُ رَءُوْفٌ بِالْعِبَادِ، ‘আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে বিকিয়ে দেয়। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি স্নেহশীল’ (বাক্বারাহ ২/২০৭)। তিনি বলেন,مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ، ‘যে পুরুষ বা নারী ঈমানদার অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে, নিশ্চয়ই আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব। অবশ্যই তাদেরকে তাদের কর্ম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব’ (নাহল ১৬/৯৭)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّكَ لَنْ تَدَعَ شَيْئاً لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ إِلاَّ بَدَّلَكَ اللهُ بِهِ مَا هُوَ خَيْرٌ لَكَ مِنْهُ، ‘যদি তুমি আল্লাহর ভয়ে কোন কিছু পরিত্যাগ কর, তাহ’লে মহান আল্লাহ বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম বস্ত্ত তোমাকে প্রদান করবেন’ (মুসনাদে আহমাদ হা/২৩০৭৪)।
শিক্ষা :
(১) গোনাহ বর্জনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে
(২) আল্লাহভীরুতা মানুষকে এমনভাবে পুরস্কৃত করে, যা কখনো সে কল্পনাও করেনি।
(৩) তাক্বওয়ার পুরস্কার আল্লাহ এভাবেই দিয়ে থাকেন।