আরবের এক গ্রামে ছিলেন একজন
হজ্জের মুনাযযিম বা ব্যবস্থাপক। তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরহেযগার। যিনি
গ্রামবাসীকে হজ্জ ও ওমরাহর ব্যাপারে সহযোগিতা করতেন। তার একজন প্রতিবেশী
ছিল। সে ছিল দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীন। ছালাত-ছিয়াম কিছুই সে আদায় করত না।
এক রাতে হজ্জের ঐ মুনায্যিম স্বপ্নে দেখলেন, কে যেন তাকে বলছে, ‘তোমার ঐ
প্রতিবেশীকে তুমি ওমরাহ করাও’। ঘুম ভাঙ্গার পর এই আশ্চর্যজনক স্বপ্নের
কারণে তিনি একটু বিচলিত হ’লেন বটে। তবে পরক্ষণেই বিষয়টি তার কাছে
গুরুত্বহীন মনে হ’ল।
দ্বিতীয় রাতে লোকটি একই স্বপ্ন পুনরায় দেখলেন। এতে তিনি আরো বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়লেন। তিনি স্বপ্নের মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারছিলেন না। তাই তিনি একজন বিজ্ঞ আলেমের নিকটে গেলেন, যিনি স্বপ্নের তা‘বীর করার ব্যাপারে পারদর্শী ছিলেন। আলেম তাকে বললেন, ‘আপনি যদি আজ রাতেও একই স্বপ্ন দেখেন, তাহ’লে তাকে নিয়ে ওমরাহ সম্পাদন করবেন’।
অতঃপর তৃতীয় রাতেও তিনি একই স্বপ্ন দেখলেন। ফলে পরদিন সকালে তিনি সেই প্রতিবেশীকে খুঁজতে বের হ’লেন এবং অবশেষে তার সন্ধান পেলেন। পরিচয় পর্ব সেরে তিনি তাকে ওমরাহ করতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলেন। এতে প্রতিবেশী লোকটি বিস্মিত হয়ে বললেন, আমি কিভাবে ওমরাহ করতে যাব? আমি তো ছালাতই আদায় করতে জানি না। তখন মুনাযযিম বললেন, ‘সমস্যা নেই, আপনি যদি চান আমি আপনাকে ছালাত তাহ’লে শিখিয়ে দিব’। প্রতিবেশী রাযী হয়ে গেলেন। তারপর তিনি তাকে কিভাবে ওযূ করতে হয়, কিভাবে ছালাত আদায় করতে হয়, সব হাতে-কলমে শিখিয়ে দিলেন। লোকটি নিয়মিতভাবে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় শুরু করলেন। এবার মুনাযযিম বললেন, ‘চলুন! এখন আমরা ওমরাহ করতে যাই!’
দু’জনে ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। প্রতিবেশী লোকটি খুব ভালভাবেই ওমরাহ সম্পাদন করলেন। বাড়িতে ফেরার পূর্বে হজ্জের মুনাযযিম তার প্রতিবেশীকে বললেন, ‘আপনি কি আর কিছু করতে চান?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ! আমি মাক্বামে মাহমূদের পাশে দাঁড়িয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে চাই। অতঃপর তিনি মাক্বামে মাহমূদের নিকটে গেলেন। কিন্তু ছালাত আদায়কালে সিজদারত অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। এতে মুনাযযিম ভীষণভাবে বিস্মিত হ’লেন। তার ভিতরে যেন দারুন ভাবাবেগ সৃষ্টি হ’ল। তিনি মনে মনে ভাবলেন, ‘এটা কিভাবে সম্ভব? আমি তাকে স্বপ্নে দেখে সাথে নিয়ে ওমরাহ করতে আসলাম। আর সে কিনা মাক্বামে মাহমূদের মত সম্মানিত স্থানে সিজদারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল? অথচ সে এর আগে ছালাতও আদায় করত না, ছিয়ামও পালন করত না? নিশ্চয়ই এর পিছনে কোন রহস্য আছে অথবা এই লোকের অন্য কোন গোপন আমল আছে’।
অতঃপর তিনি গ্রামে ফিরে সরাসরি তার মৃত প্রতিবেশীর বাড়িতে গেলেন এবং তার পরিবারের নিকটে তার বিশেষ কোন আমল ছিল কি-না জানতে চাইলেন। তখন তার স্ত্রী বলল, ‘আমার স্বামী ছালাত-ছিয়ামে অভ্যস্ত ছিল না, এ কথা সত্য, তবে একটা কাজ তিনি নিয়মিত করতেন। আর তা হ’ল, আমাদের একজন গরীব বৃদ্ধা প্রতিবেশী ছিল। তার কোন আত্মীয়-স্বজন ছিল না। আমার স্বামী তার দেখাশুনা করতেন এবং প্রতিদিন সকাল-দুপুর-রাতে নিজে গিয়ে সেই বৃদ্ধাকে খাবার দিয়ে আসতেন। আর সেই বৃদ্ধাটি আমার স্বামীর জন্য সবসময় উত্তম মৃত্যুর দো‘আ করতেন। হয়ত এই অসহায় মহিলার দো‘আই আল্লাহ কবুল করেছেন। আল্লাহ বলেন,إِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ إِنَّهُ كَانَ بِعِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا ‘নিশ্চয়ই তোমার রব যাকে ইচ্ছা তার জন্য রিযিক প্রশস্ত করে দেন এবং সীমিত করে দেন। অবশ্যই তিনি বান্দাদের সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত, পূর্ণ দ্রষ্টা’ (ইসরা ১৭/৩০)। তিনি আরো বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, অতঃপর যা ব্যয় করেছে, তার পিছনে খোঁটা দেয় না এবং কোন কষ্টও দেয় না, তাদের জন্য তাদের রবের নিকটে প্রতিদান রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৬২)।
শিক্ষা :
(১) সৎ আমলের সামান্যতম সুযোগও হাতছাড়া করা উচিৎ নয়।
(২) সর্বদা মানুষের দো‘আ পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
(৩) অসহায়কে সাহায্য করলে আল্লাহ অত্যন্ত খুশী হন, তাই মানবসেবায় সাধ্যমত এগিয়ে আসতে হবে।
(৪) দো‘আ কবুলের স্থানে খালেছ অন্তরে দো‘আ করতে হবে।
(৫) কোন মানুষের বাহ্যিক আমলের কারণে তাকে জাহান্নামী ভেবে দূরে ঠেলে দেওয়া যাবে না, বরং তাকে দাওয়াত দিতে হবে এবং তার হেদায়েতের জন্য দো‘আ করতে হবে।