‘আহলেহাদীছ
আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় উদ্যোগে আয়োজিত শিক্ষাসফরে মনপুরা থেকে
ঢাকা ফেরার পথে ০৯.০৩.২০১৯ শনিবার বাদ মাগরিব অভিজ্ঞতা বর্ণনা অনুষ্ঠানে
অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য থেকে -
১. মাওলানা আব্দুল্লাহ (সভাপতি, আহলেহাদীছ আন্দোলন, চাপাই নবাবগঞ্জ-উত্তর সাংগঠনিক যেলা) : মনপুরা ফাযিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও অন্যান্য শিক্ষকগণ খুশী হয়ে বই চেয়েছেন। ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ফুরিয়ে যাওয়ায় দিতে পারিনি। অন্য কর্মীরা পরে গিয়ে বই দিয়ে এসেছেন।
২. ডাঃ মুস্তাফীযুর রহমান (সভাপতি, নীলফামারী-পশ্চিম) : এ অঞ্চলের মানুষের ঈমান আমাদের এলাকার চাইতে বেশী। এখানের মেয়েদের পর্দা বেশী। এখানকার মানুষেরা আহলেহাদীছের নাম শুনে খুশী মনে বই নিয়েছে।
৩. ফায়ছাল কবীর (সভাপতি, আহলেহাদীছ যুবসংঘ, ঝিনাইদহ যেলা) : দ্বীপবাসীদের অহংকার নেই। দ্বিতীয়তঃ তারা আমাদের ঐক্যবদ্ধ সফর দেখে খুব খুশী হয়েছে।
৪. মুজাহিদুর রহমান (সভাপতি, আহলেহাদীছ যুবসংঘ, সাতক্ষীরা যেলা) : এ রকম সফর প্রত্যেক যেলার পক্ষ হতে এলাকা ও শাখায় করা উচিত।
৫. মাওলানা বেলালুদ্দীন (সভাপতি, পাবনা যেলা) : নিঝুম দ্বীপের সাগরে কর্মীরা গোসল করতে গেলে আমি পাশের একটি ছোট দোকানে যাই। সেখানে দোকানদারের হাতে মাদুলী দেখতে পেয়ে তাকে এর বিরুদ্ধে হাদীছ শুনাই। লোকটি সঙ্গে সঙ্গে মাদুলীটি খুলে ফেলে দিল এবং আমাদের পরিচয় পেয়ে খুবই খুশী হ’ল। মনপুরা মাছের আড়তের পাশে একজন বললেন, এরূপ ছহীহ দল দেশে আছে? তিনি একজনকে পাঠালেন লঞ্চে বই নেওয়ার জন্য। পরে তাকে ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ও অন্যান্য বই দেওয়া হয়েছে।
৬. মুহাম্মাদ মুয্যাম্মিল হক (সাধারণ সম্পাদক, খুলনা যেলা) : মনপুরায় একজনকে জিজ্ঞেস করলাম আহলেহাদীছ সংগঠন সম্পর্কে। কিন্তু তিনি জানেন না। অথচ স্যারের নাম জানেন। পরে সেখানে বই দেওয়া হয়েছে।
৭. আফযাল হোসেন (সহ-সভাপতি, নওগাঁ যেলা) : এটা আমার প্রথম সফর। এখন আমি মনে করছি যে, আমি কেবল নওগাঁর নই, গোটা বাংলাদেশের। লোকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বই নিয়েছে। তারা বলেছে যে, এ ধরনের কোন সংগঠন বাংলাদেশে আছে, আমাদের জানা ছিল না।
৮. ডাঃ ফযলুল হক (সহ-সভাপতি, গাযীপুর যেলা) : আগামীতে আমরা প্রত্যেকে নিজ খরচে একাধিক কপি ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ ও মাসিক ‘আত-তাহরীক’ নিয়ে আসব ও বিতরণ করব।
৯. এ্যাডভোকেট জারজিস আহমাদ (উপদেষ্টা, রাজশাহী-সদর যেলা) : মনপুরায় লেগুনা চালকের হাতে দু’টি মাদুলী ছিল। তাকে বুঝালে সে মাদুলীটি আমাদের দেয়। পরে খুলে দেখি তার মধ্যে লেখা আছে ‘নূর আলম, মনপুরা’। লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম, এটি কি জিনের আছর ও বান মারা বা অকল্যাণ থেকে তোমাকে বাঁচাবে? লোকটি বলল, না। তারপর সে নিজ হাতে সেটি পানিতে ফেলে দিল। সে বলল, এটি আমি ৮০০/= দিয়ে কিনেছি। (এসময় একজন কর্মী বললেন, ঐ তাবীযের মেয়াদ ৬ মাস। পরে তাকে আবার তাবীয নিতে হবে)।
১০. মাষ্টার সিরাজুল ইসলাম (সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী-পূর্ব যেলা) : দ্বীপের মানুষেরা আমাদের দাওয়াত স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করেছে।
১১. অধ্যাপক তোফাযযল হোসাইন (সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী-পশ্চিম যেলা) : কলেজের শিক্ষা সফরগুলিতে কেবল নোংরামি হয়। আমরা এখন আর তাতে যাইনা। কিন্তু এই শিক্ষা সফরে হাতে-কলমে দ্বীনের প্রশিক্ষণ হচ্ছে। দ্বীপের লোকেরা বিদ‘আতী দর্শনের দাওয়াত পেয়েছে। আমাদের এই সফর ও বই বিতরণ আশা করি তাদের চোখ খুলে দেবে।
১২. মুহাম্মাদ নাযিমুদ্দীন (সভাপতি, রাজশাহী-সদর যেলা) : এখানকার মহিলারা কড়া পর্দার মধ্যে থাকেন। বাড়ী থেকে পুকুরের মধ্যে পর্যন্ত ডানে-বামে ও উপরে তিন দিকে ঘেরা। যাতে ঘর থেকে বের হয়ে পুকুরে যেতে কেউ দেখতে না পায়। আমাদের হোন্ডাওয়ালা খুশী হয়ে নিজে পুনরায় এসে বই চেয়ে নিয়েছে।
১৩. অধ্যাপক এস.এম. নূরুল ইসলাম সরকার (আহবায়ক, কিশোরগঞ্জ যেলা) : আমরা কিশোরগঞ্জ যেলায় জন্মগত আহলেহাদীছ বাসিন্দা ছিলাম মাত্র ৪ জন। আমাদের দাওয়াতের মেহনতের ফলে এখন সেখানে পাঁচ হাযার আহলেহাদীছ বাসিন্দা। আমার ৩৬ বছরের শিক্ষকতা জীবনে বহু ‘শিক্ষা সফর’ করেছি। কিন্তু অন্য সফরের সাথে এ সফরের তুলনা রাত ও দিনের সমান। আমার দাবী এরূপ সফর প্রতি বছর যেন হয়।
১৪. মুহাম্মাদ মুজীবুর রহমান (সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার যেলা) : মনপুরায় একজন হোন্ডাচালক আমীরে জামা‘আতের নাম জানেন বলে জানান। এসব এলাকায় ‘সংক্ষিপ্ত ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ ছেপে ব্যাপক হারে বিতরণ করা প্রয়োজন।
১৫. মুহাম্মাদ শেখ সাদী (সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম যেলা) : মনপুরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যিনি স্যারকে প্রথমে জঙ্গী বলেছিলেন, পরে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ৫% জ্ঞানী ব্যক্তিদের মধ্যে উনি হ’লেন অন্যতম। আমার প্রস্তাব, আমরা প্রত্যেকে বই বিতরণ প্রকল্পে কমপক্ষে ১০০/= টাকা করে দেব (তাঁর প্রস্তাবমতে তাৎক্ষণিকভাবে নগদ ১৩,২৮০/= জমা হয়ে যায়। অনেকে বাকী লিখিয়ে দেন)।
১৬. অধ্যাপক মুবীনুল ইসলাম (সহ-সভাপতি, রাজশাহী-সদর যেলা) : এ সফরে আমাদের চার দফা কর্মসূচীর দু’টি একসঙ্গে পাচ্ছি, তাবলীগ ও তারবিয়াত তথা প্রচার ও প্রশিক্ষণ। স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী এবার আমরা বই বিতরণ করেছি। আমাদের সাথে আল্লাহর মদদ রয়েছে। আসুন! আজকে আমরা শপথ গ্রহণ করি যেন আমরা আমাদের স্ব স্ব কর্মস্থলের সাথীদের কাছে দাওয়াত পৌঁছে দেই। আমাদেরকে ছয় মাস পরপর এসব এলাকায় দাওয়াতে আসা প্রয়োজন।
১৭. ছফিউল্লাহ খান (সাধারণ সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ যেলা) : মনপুরা ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছাহেব বললেন, আমরা আগে জানলে স্যারকে নিয়ে মাদ্রাসায় একটা প্রোগ্রাম করতাম। আমরা আমাদের যেলার পক্ষ হ’তে ৪টি বইয়ের প্রত্যেকটি ২৫০ কপি বই বিতরণের দায়িত্ব নিচ্ছি।
১৮. মুজাহিদুল ইসলাম, কুষ্টিয়া : এসব অঞ্চলে পীর ছাহেবদের দাওয়াত পৌঁছেছে। কিন্তু আমাদের দাওয়াত পৌঁছেনি। যেভাবেই হৌক ঘন ঘন দাওয়াত পৌঁছানো দরকার।
১৯. তরীকুযযামান (সাধারণ সম্পাদক, মেহেরপুর যেলা) : এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা কত কঠিন। তার তুলনায় আমাদের জীবনযাত্রা কত সহজ। তাই এই সফর আমার মধ্যে নতুনভাবে দাওয়াতের মানসিকতা সৃষ্টি করেছে।
২০. মুহাম্মাদ তাসলীম সরকার (সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা যেলা) : কর্মীদের বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে এই সফর সংগঠনকে আরও বেগবান করবে। আমরা আমাদের যেলার পক্ষ থেকে বই বিতরণ প্রকল্পে ৫০,০০০/= টাকা দেব।
২১. ড. নূরুল ইসলাম (ভাইস প্রিন্সিপাল, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী) : প্রায় তেরশ’ বছর পূর্বে আরব বণিকদের মাধ্যমে ইসলামের যে বিশুদ্ধ দাওয়াত বাংলাদেশে সর্বপ্রথম হাতিয়া দ্বীপে ও এসব দ্বীপাঞ্চলে প্রচারিত হয়েছিল, সে দাওয়াতই যেন আমরা এত বছর পর সেখানে পুনরায় নিয়ে গেলাম। ইনশাআল্লাহ আমরা সত্বর এখানে বড় ধরনের সম্মেলন করতে পারব।
আমি সবচেয়ে বড় শিক্ষা অর্জন করেছি যে, নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজন দূরদর্শিতা এবং স্থান-কাল-পাত্রভেদে কথা বলার যোগ্যতা। ‘নিঝুম দ্বীপ’ জামে মসজিদে বিরোধী পরিবেশে বাদ জুম‘আ মসজিদ ভরা মুছল্লীদের সামনে স্যারের দূরদর্শিতাপূর্ণ সংক্ষিপ্ত ভাষণ ছিল এর একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। মূলতঃ এই সফরে আমীরে জামা‘আতের দরস ও ভাষণগুলিই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া।
২২. মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (খতীব, মাদারটেক আহলেহাদীছ জামে মসজিদ, ঢাকা) : হাতিয়া তমরুদ্দি বাজারের পুকুরে গোসল করার সময় স্যারের নাম শুনে ভাই নূরুল আবছার (নীরব) বললেন, ‘আমরা এখানে আপনাদের নিয়ে আহলেহাদীছের একটি প্রোগ্রাম করতে চাই’। প্রিয় সাথীগণ! আমার তিনটি হুঁশিয়ারী : (১) দ্বিমুখী বান্দা থেকে সাবধান! (২) বিভক্ত কর ও শাসন কর এই পলিসি থেকে সাবধান! যারা আমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চায়। (৩) আহলেহাদীছ বলা যাবে না এই ধোঁকা থেকে সাবধান!
২৩. ডাঃ আব্দুল মতীন (সভাপতি, আল-‘আওন, স্বেচ্ছাসেবী নিরাপদ রক্তদান সংস্থা) : আপনাদের নিকট আমাদের রক্তদান সংস্থার দাওয়াত পৌঁছানোর উদ্দেশ্যেই এই সফরে আমার আসা। আমাদের শ্লোগান : ‘মাদকমুক্ত রক্তদান, সুস্থ থাকবে জাতির প্রাণ’। আমরা বিড়ি-তামাক যারা খায়, তাদের রক্ত নেই না। আমরা ব্লাড ব্যাংকে রক্ত জমা নেই না। কারণ তাতে রক্তের তেজ কমে যায় এবং কার্যকরিতা হ্রাস পায়। আমাদের প্রত্যেক ডোনারই এক একজন জীবন্ত ব্লাড ব্যাংক। যারা স্রেফ আল্লাহকে খুশী করার জন্য ডাকা মাত্রই ছুটে গিয়ে মুমূর্ষু ব্যক্তিকে তাজা রক্ত দিয়ে আসেন। এমন এমন বিরল ব্লাড গ্রুপ রয়েছে, যা শতচেষ্টাতেও এবং হাযার হাযার টাকা খরচ করেও পাওয়া যায় না। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ আমাদের সংস্থা সেটা দিতে সক্ষম। তাই আমার আবেদন, প্রত্যেক সাংগঠনিক এলাকায় আল-‘আওনের শাখা গঠন করুন ও ডোনার বৃদ্ধি করুন!
২৪. কাযী হারূণুর রশীদ (অর্থ সম্পাদক, ঢাকা যেলা) : মনে রাখবেন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ ভার্সাস সমস্ত আন্দোলন। এ আন্দোলনকে খতম করার জন্য সব ধরনের চক্রান্ত চলছে। ছহীহ আক্বীদার মোড়কেও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এদের থেকে সাবধান!
২৫. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব (সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ) : বিদেশে থাকার কারণে এবারই প্রথম আমার এই সফরের অভিজ্ঞতা। আমার মনে হচ্ছে যদি কেবল আজকের বাদ মাগরিবের ‘দরস’ ও এই অনুষ্ঠানটিই হ’ত, তবে সেটাই যথেষ্ট হ’ত। এর মধ্যে কয়েকটি বিষয় আমরা উপলব্ধি করছি (১) সংগঠনের গুরুত্ব। সংগঠন না থাকলে এ ধরণের সফর সম্ভব হ’ত না। (২) লোকদের প্রশ্নের উত্তরে আমরা সংগঠনিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে পেরেছি। যা আমাদেরকে অন্যরকম শক্তি যুগিয়েছে। (৩) এই সফরে Relax উদ্দেশ্য ছিল না। বরং প্রত্যেকের মধ্যে দাওয়াতী জাযবা ছিল। যেন তারা কেবল দাওয়াত দিতেই এসেছেন। অতএব এটাকে দাওয়াতী শিক্ষা সফর বলা উচিৎ। (৪) এসব এলাকার মানুষ ছহীহ আক্বীদার দাওয়াত গ্রহণের জন্য উদগ্রীব। (৫) আমরা এখানে সহযোগী পাওয়ার উদ্দেশ্যে আসিনি। বরং দাওয়াতের ক্ষেত্র তৈরীর জন্য এসেছি। (৬) এই সফরের বরকত এটা হয়েছে যে, আমরা বই বিতরণের জাযবা পেয়েছি। ব্যক্তিগত সফরে গেলেও যেন আমরা এই নীতি বজায় রাখি। (৭) ‘যুবসংঘে’র পক্ষ থেকেও আমরা প্রতি বছর এমন একটি শিক্ষা সফর রাখব ইনশাআল্লাহ।
২৬. অধ্যাপক আমীনুল ইসলাম, রাজশাহী (কেন্দ্রীয় যুব বিষয়ক সম্পাদক) : বার্ষিক শিক্ষা সফরকে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত দাওয়াতী কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২৭. বাহারুল ইসলাম, কুষ্টিয়া (কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক) : আমীরে জামা‘আতকে একসঙ্গে দুইদিন ও তিনরাত একসঙ্গে পাওয়াটাই আমাদের জন্য বড় ভাগ্যের ব্যাপার। তাঁর কাছে থেকে জ্ঞানের যে পুঁজি আমরা পেয়েছি, আমি মনে করি এটাই আমাদের বড় পুঁজি।
২৮. ইয়াকুব আলী খান, রংপুর (কুয়েত প্রবাসী)[1] : নিঝুম দ্বীপে একটা ছেলেকে পেলাম। সে কমলা দেয়ার শর্তে তাবীয খুলতে রাযী হ’ল। পরে সাথীরা সবাই তাকে ১০/২০ টাকা করে দিলে সে কয়েকশ’ টাকা পেল। তারপর হাতিয়া তমরুদ্দি বাজারে ‘তাবলীগে’র লোকদের দাওয়াত দিতে গিয়ে তারা আমাকে গলাধাক্কা দিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দেন। পরে বাজারের একজন ব্যবসায়ী নূরুল আবছার (নীরব) আমাকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করেন। অথচ আমি ইতিপূর্বে নিজেও তাবলীগের ‘চিল্লা’ দিয়েছি। কিন্তু এখন ছহীহ তাবলীগ করতে গিয়ে অপদস্থ হ’লাম। অতঃপর ঐ ব্যবসায়ী স্যারের নাম শুনে আরও দু’জন ব্যবসায়ীকে নিয়ে তিনি লঞ্চে এসে স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা স্যারের ও আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈলের বক্তব্য ইউটিউবে নিয়মিত শোনেন এবং ভক্তি রাখেন।
তিনি বলেন, ইজতেমায় আসার জন্য আমি আমার কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করি। প্রথমে নামঞ্জুর হয়। পরে ইজতেমার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে পুনরায় দরখাস্ত করি। ২৫-২৬শে ফেব্রুয়ারী কুয়েতের জাতীয় দিবস হওয়ায় সকলের ছুটি বাতিল। অথচ অলৌকিকভাবে আমার ছুটির আবেদন মঞ্জুর হ’ল। শুধু তাই নয়, ১০ দিন আগের ও ৭ দিন পরের যোগ করে একসাথে দীর্ঘ ছুটি ও যাওয়া-আসার টিকেট পেয়ে গেলাম। আমি মনে করি, এটি ইজতেমার প্রতি আমার খুলূছিয়াতের পুরস্কার। ৫ দিন ধরে সারা দেশে বৃষ্টি। কেঁদে কেঁদে দো‘আ করেছি, যাতে ইজতেমা ভালভাবে হয়। আলহামদুলিল্লাহ! সর্বত্র বৃষ্টি হ’লেও ইজতেমা ময়দান ও তার আশপাশে বৃষ্টি হয়নি। দু’দিনের ইজতেমা সুন্দরভাবে সফল হয়েছে। ইজতেমায় ১০ জনকে এনেছি। ৪ জনকে নিজে খরচ দিয়েছি। ১০ হাযার টাকার বই কিনেছি বিতরণের জন্য। আর সবচেয়ে বড় পাওয়া হ’ল, আমীরে জামা‘আতের সাথে সফরের সুযোগ লাভ করা।
২৯. ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, কুমিল্লা (কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক) : এতদঞ্চলে প্রথমবারের মত আহলেহাদীছ-এর দাওয়াত আনতে পেরে আমরা সৌভাগ্যবান বোধ করছি। এখানকার মানুষের জীবন বড়ই ঝুঁকিপূর্ণ। মনপুরার ব্যবসায়ী ইউনুস নাযীর বললেন, আসল মনপুরা সাগরে হারিয়ে গেছে। উত্তরে ভাঙছে, দক্ষিণে গড়ছে। জীবনে বহু এক্সিডেন্ট ঘটেছে। মাছ ধরতে গিয়ে নৌকা ডুবে মেঘনায় ভাসতে ভাসতে বেঁচে গেছি। ১৯৭০-এর বন্যায় আমি ও আমার ভাই একটা গাছের ডালে ছিলাম। পরদিন পানি নেমে গেলে আমার আববা আমাদের খুঁজে বের করেন। একজন হোন্ডা চালক তরুণ বলল, এখানে চুরি হয় না। এখানে কোন মাদকসেবী নেই।
৩০. অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ (কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল) : এটি আমীরে জামা‘আতের একটি দূরদর্শী দাওয়াতী পরিকল্পনা। তাঁর পরিকল্পনা মতে কয়েকবারে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি সফর শেষে এবার দেশের সর্বদক্ষিণের দ্বীপাঞ্চল সফর। তিনি চান দেশের সর্বত্র ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর বিশুদ্ধ দাওয়াত পৌঁছে যাক। যাতে আল্লাহর নিকটে কৈফিয়ত দেওয়া যায়। এর বিনিময়ে আমরা কেবলই জান্নাত চাই।
আপনাদের প্রতি আমাদের আবেদন, সংগঠনকে একটি ‘পরিবার’ বলে মনে করবেন। আপনার মৃত্যুর পরে আপনার সন্তানরা দো‘আ না করলেও পূরা সংগঠন আপনার জন্য দো‘আ করবে।
‘নিঝুম
দ্বীপে’ আমীরে জামা‘আতের ভাষণ শুনে মসজিদের পাশের একটা ছেলে নাম ‘সোহেল’
মোবাইল বের করে বলে, ইনি কি সেই ব্যক্তি? যার ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ বই
আমার মোবাইলে আছে। এই নিঝুম দ্বীপে আমি তাঁর অনুসারী। মনপুরা ফাযিল
মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল জসীমুদ্দীন বললেন, আগে জানলে আমরা আজকে এখানে
স্যারকে নিয়ে একটা বড় প্রোগ্রাম করতাম। উনি ডাঃ রফীকুল ইসলামের নিকট থেকে
প্রথম এই দাওয়াত পান। মনপুরার ব্যবসায়ী ইউনুস নাযীর বলেন, ডাঃ রফীকুল
ইসলামের মত ভাল মানুষ এই মনপুরায় খুব কমই এসেছেন।[2]
বই বিতরণ :
এবারের সফরে ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), মীলাদ প্রসঙ্গ, শবেবরাত, কোরআন ও কলেমাখানী’ চারটি বই সহ ‘আন্দোলন পরিচিতি’ ও ‘যাবতীয় চরমপন্থা হ’তে বিরত থাকুন!’ লিফলেট, এবং মাসিক ‘আত-তাহরীকে’র পুরানো কপি সমূহ বিতরণ করা হয়।
বিতরণের স্থান সমূহ :
(১) রাজশাহী থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে সকাল ৭-৪০-এর সিল্কসিটি এক্সপ্রেসে দু’টি বগিতে ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), আত-তাহরীক এবং ‘পরিচিতি’ ও ‘যাবতীয় চরমপন্থা হ’তে বিরত থাকুন!’ লিফলেট বিতরণ করা হয়।
(২) নিঝুম দ্বীপ (৮. ৩. ২০১৯, শুক্রবার) : ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), আত-তাহরীক, ‘মীলাদ প্রসঙ্গ’ ‘শবেবরাত’ ‘কোরআন ও কলেমাখানী’ প্রতিটি ৫০ কপি করে এবং ‘পরিচিতি’ ও ‘যাবতীয় চরমপন্থা হ’তে বিরত থাকুন!’ লিফলেট।
(৩) হাতিয়া দ্বীপ (৯. ৩. ২০১৯) : এখানে বই বিতরণ সম্পর্কে অধ্যাপক মুবীনুল ইসলাম বলেন, প্রথমে ওছখালি বাজারে ও উপযেলা সদরে আমরা বই বিতরণ করি। সোনালী ব্যাংকের জনৈক ম্যানেজার (অবঃ) আমাদের পরিচয় পেয়ে খুশী হয়ে বলেন, আমি তো ড. গালিব স্যারের নাম জানি। তখন তাকে সব বই এক কপি করে দেওয়া হয়। অতঃপর সেখান থেকে কমলাদীঘি স্পটে গিয়ে দু’জন বন কর্মকর্তাকে সব বই এক সেট করে দেই। কমলাদীঘির পাশের দোকানদার (ফাযিল পাস), যেখানে কর্মীরা সবাই দাঁড়িয়ে স্যারের সামনে প্রোগ্রাম করে, তাকে এক সেট বই ও লিফলেট দেই। কাযীর বাজারের ১৫/২০টি দোকানের সবগুলিতে এক সেট করে বিতরণ করি। অল্প দূরে আরেকটি বাজার সেখানে ই.ফা.বা.-এর একটি অফিস ছিল, সেখানে মসজিদে ও বাজারে কমপক্ষে ৫০টি দোকানে বিতরণ করা হয়। কাযীর বাজার থেকে ভুলক্রমে জনাব ইসমাঈল (সভাপতি, চাপাই-দক্ষিণ) দলছুট হয়ে যান। ফলে তিনি পায়ে হেঁটে ২ কি.মি. পথ বই বিতরণ করতে করতে আসেন। তাঁর সঙ্গে ছিল গাযীপুর যেলা ‘যুবসংঘে’র সেক্রেটারী শরীফুল ইসলাম। এরপর ওছখালী বড় বাজারে প্রায় ২০০ দোকানে ব্যাপকহারে বিতরণ করা হয়। কক্সবাজারের জনাব মুজীবুর রহমান ও চট্টগ্রামের শেখ সাদী কয়েকটি স্কুল ও কলেজে গিয়ে বই বিতরণ করেন। এরপর তমরুদ্দি লঞ্চঘাটের বাজারে বই ও লিফলেট বিতরণ করা হয়।
(৪) মনপুরা দ্বীপ (৯. ৩. ২০১৯) : অবশিষ্ট সব বই এখানে বিতরণ করা হয়। এখানকার ৫টি মসজিদে, একজন চেয়ারম্যান ও ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে এবং প্রাইমারী স্কুল, মক্তব ও নূরানী মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষকের কাছে বই দেওয়া হয়।
যেভাবে যেতে হবে :
ঢাকা সদরঘাট থেকে নোয়াখালী যেলাধীন হাতিয়া উপযেলার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন সন্ধ্যায় লঞ্চ ছেড়ে যায়। প্রায় ১১ থেকে ১২ ঘন্টা সময় লাগে। হাতিয়া উপযেলার তমরুদ্দি লঞ্চ ঘাট থেকে মটরসাইকেল বা সিএনজিতে হাতিয়া উপযেলা শহর এবং কমলা দীঘি পর্যটনকেন্দ্র সহ বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করা যায়।
হাতিয়া থেকে নিঝুম দ্বীপ যেতে স্থলপথে মটরসাইকেল বা সিএনজি-তে করে মোক্তারিয়া ঘাট পর্যন্ত ৩৫ কি.মি. যেতে হয়। সেখান থেকে নৌকায় বা স্পীড বোটে নদী পার হয়ে বন্দরটিলা ঘাট। তারপর ভাড়া মটরসাইকেল বা অটো-তে করে নিঝুম দ্বীপের ‘নামার বাযার’ ৯ কি.মি.। আর নৌপথে সকাল ৯-টার দিকে জোয়ারের সময় ইঞ্জিন চালিত নৌকা অথবা ট্রলারে করে মেঘনার পূর্ব পাড় হাতিয়া চ্যানেল ধরে সোজা নিঝুম দ্বীপ ‘নামার বাযার’ ট্রলার ঘাট। সেখান থেকে বিকাল ৩-টার দিকে জোয়ারের সময় ইঞ্জিন চালিত নৌকা অথবা ট্রলারে করে হাতিয়া চ্যানেল ধরে সোজা হাতিয়া তমরুদ্দি লঞ্চ ঘাট। জোয়ারে সময় লাগে ৩-ঘণ্টা করে।
তমরুদ্দি লঞ্চ ঘাট থেকে সোজা মেঘনার পশ্চিম পাড়ে ভোলা যেলার অন্তর্ভুক্ত ‘মনপুরা’ দ্বীপ উপযেলা। হাতিয়া থেকে এই দ্বীপে যেতে নৌপথে ৪৫ মিনিটের পথ। এছাড়া ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চযোগে সরাসরি এই দ্বীপে আসা যায়।
সারসংক্ষেপ :
দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপাঞ্চলসমূহে এই সাংগঠনিক শিক্ষাসফর যথেষ্ট ফলপ্রসূ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। বিশেষতঃ
সফরকারীদের মনে যে নতুন দাওয়াতী জাযবা সৃষ্টি করেছে, তা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। নিয়মিতভাবে এ ধরণের দাওয়াতী সফর হ’লে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দাওয়াতকে দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন!
[1]. উল্লেখ্য যে, ইনি প্রথমে হানাফী ও তাবলীগী জামায়াতের সাথে ছিলেন। পরে আহলেহাদীছ হন এবং আমীরে জামা‘আতের নামে নিজের ছেলের নাম রাখেন। এবারই প্রথম রাজশাহীর ‘তাবলীগী ইজতেমা’য় আসেন এবং আমীরে জামা‘আতের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ঢাকার উত্তরায় সপরিবারে থাকেন। তিনি বাংলাদেশ আর্মী থেকে অবসর পেয়ে এখন কুয়েত আর্মীতে চাকুরী করেন।
[2]. উল্লেখ্য যে, ডাঃ রফীকুল ইসলাম আমীরে জামা‘আতের ছোট ভায়রা ভাই। যিনি ইতিপূর্বে মনপুরায় উপযেলা মেডিকেল অফিসার হিসাবে ২০১০ সালের ১০ই জানুয়ারী হ’তে ২০১২ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আড়াই বছর চাকুরী রত ছিলেন।