মানুষের
সামাজিক সমস্যার সমাধান করার জন্য সভায় বা বৈঠকে বসতে হয়। আবার বিভিন্ন
সময়ে দ্বীনী আলোচনা শ্রবণ করা বা পার্থিব বিষয়ে কারো বক্তব্য শুনতে
সভা-সেমিনারে উপস্থিত থাকতে হয়। সেখানে কিছু আদব-কায়েদা ও শিষ্টাচার মেনে
চলতে হয়। এতে সভা-সমাবেশের পরিবেশ ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে। ফলে কারো কথা শুনতে
বা বলতে যেমন কোন অসুবিধা হয় না, তেমনি সমস্যার সমাধান করা সহজ হয়। তাই এই
আদব-কায়েদা মেনে চলা যরূরী। আলোচ্য নিবন্ধে বৈঠকের আদব বা শিষ্টাচারসমূহ
আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ। এর পূর্বে কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয় উল্লেখ করা
হ’ল।-
মজলিস বা সভার প্রকারভেদ :
মজলিস বা বৈঠককে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. দ্বীনী সভা- যা তাসবীহ-তাহলীল, যিকর-আযকার, ইলম অর্জন এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। ২. দুনিয়াবী সভা- পার্থিব কোন উদ্দেশ্যে যেসকল বৈঠক হয়ে থাকে তাকে দুনিয়াবী সভা বা বৈঠক বলা হয়। এসব আবার দু’প্রকার। যথা- ক. বৈধ বৈঠক ও খ. নিন্দনীয় বা অবৈধ বৈঠক।
ক. বৈধ বৈঠক : এমন বৈঠক যাতে বৈধ আলোচনা হয় এবং বৈধ কর্মকান্ড সম্পাদিত হয়। যেমন- ১. ব্যবসায়ীদের সভা বা বৈঠক : এতে পণ্য বাযারজাত করার পদ্ধতি, গুণগত মান ঠিক রাখা, পণ্যমূল্য নির্ধারণ এবং বাযারজাত করার সমস্যাবলী সমাধানের ক্ষেত্রে আলোচনা করা হয়। ২. চাকুরীজীবীদের সভা বা বৈঠক : যেখানে কর্মক্ষেত্রের উন্নতি-অগ্রগতি এবং সমস্যাবলী ও তা সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। সাথে সাথে সেখানে কর্মপরিকল্পনা ও কর্মবণ্টন হয়ে থাকে। ৩. শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সভা বা বৈঠক : যাতে শিক্ষার ধরন, কোন বিষয়ের দুর্বোধ্যতা দূরীকরণ, নতুন কেŠশল উদ্ভাবন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা ও পাঠদান পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। ৪. পেশাজীবীদের বৈঠক : যাতে সংশ্লিষ্ট পেশার লোকদের সমস্যা ও উন্নতি-অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। ৫. মহিলাদের বৈঠক : যাতে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। যেমন- পোষাক-পরিচ্ছদ, রান্নার পদ্ধতি ও কৌশল, দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন সমস্যা ও তা সমাধানের উপায়, অতিথি আপ্যায়নের সহজ কৌশল, সংসারের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপকরণ ইত্যাদি। এসব বৈঠক বৈধ বলে তাতে অংশগ্রহণ করা যাবে। তবে সেখানে শরী‘আতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবস্থান, আলোচনা ও কর্মকান্ড পরিচালিত হ’তে হবে।
খ. নিন্দনীয় বা অবৈধ বৈঠক : যেসকল বৈঠক বা সভার শুরু বা শেষ আল্লাহর নামে হয় না[1]
এবং যাতে অন্যায়-অশ্লীল কথাবার্তা আলোচনা হয়, পাপাচার করা হয়, গীবত-তোহমত
করা হয় এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা হয় না। এ ধরনের সভা-সেমিনার
পরিহার করা যরূরী। সেই সাথে যেসব বৈঠকে পাপী, অত্যাচারী ও দুষ্ট লোকজন
থাকে সেখানে যোগদান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।[2]
মজলিস বা সভার জন্য কিছু গর্হিত বিষয় :
সভা-সেমিনার, মজলিস বা বৈঠকের জন্য কিছু নিন্দনীয় বিষয় রয়েছে। যা পরিহার করা যরূরী। এর মধ্যে কিছু সভাস্থলের সাথে এবং কিছু উপস্থিত সদস্যদের সাথে সংশ্লিষ্ট।
সভাস্থলের সাথে সংশ্লিষ্ট নিন্দনীয় কর্মকান্ড : কোন কোন সভা বা মজলিসে নানা ধরনের নিন্দনীয় কাজ হয়ে থাকে। যেমন সভামঞ্চ ও মিলনায়তনের দেওয়াল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ছবি ও অন্যান্য প্রাণীর ছবি দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। অথচ শরী‘আতে এসব হারাম। একান্তই সভাস্থল সাজাতে হ’লে গাছ-পালা, ফুল-ফল ও প্রাণহীন জিনিসের ছবি দিয়ে সাজানো যায়। আবার সভাস্থলে ব্যবহৃত আসবাবপত্রে অনেক সময় প্রাণীর ছবি-মূর্তি খোদাই করা থাকে। এসব পরিহার করা যরূরী। কারণ এগুলিও হারাম। কোন কোন সভাস্থলে টিভির পর্দায় বা প্রজেক্টরে বিনোদনের নামে বিভিন্ন ইসলাম গর্হিত ও অশ্লীল বিষয় দেখানো হয়। এগুলি পরিত্যাজ্য।
সভার সদস্যদের সাথে সংশ্লিষ্ট : সভায় অংশগ্রহণকারী সদস্য ও আলোচকগণ অনেক সময় বিভিন্ন নিষিদ্ধ কাজ করেন ও কথা বলে থাকেন। এসব থেকে বিরত থাকা যরূরী। যেমন গীবত-তোহমত, চোগলখুরী, মন্দ নাম ও উপাধিতে কাউকে সম্বোধন করা, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার, মিথ্যাচার, হাসি-তামাশা করা, অপ্রয়োজনীয় ও অতিরঞ্জিত প্রশংসা ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে কথাবার্তার শিষ্টাচার রক্ষা করা হয় না এবং পানাহারের আদব রক্ষা করা হয় না। কোন কোন বৈঠকে কাউকে অপমান-অপদস্ত করা হয়, মাদক সেবন করার মত বিভিন্ন পাপাচার করা হয়। এসব বৈঠক বা মজলিস পরিহার করা আবশ্যক।
মজলিস বা সভার প্রয়োজনীয়তা :
মজলিস বা সভাকে সমাজের দর্পন বলা যায়। কারণ বৈঠক বা সভা পরিচালনা করেন সমাজের সর্বাধিক বুদ্ধিদীপ্ত ও মেধাবী লোকজন। তাদের উন্নত চিন্তাধারা, যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও মূল্যবান পরামর্শ সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করে থাকে। আবার মীমাংসা বৈঠকে বিচারকগণ মানুষের নানা সমস্যার সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাধান দেন। আর দ্বীনী বৈঠকে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে মনীষীগণ মানুষের জ্ঞান-ভান্ডার সমৃদ্ধ করেন এবং ধর্মীয় বিষয়ে তাদেরকে উজ্জীবিত করেন। তবে কিছু মজলিস আছে, যা অসদুদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। সেসব থেকে সবাইকে দূরে থাকতে হবে। বিশেষত আল্লাহভীরু মুমিন মানুষের জন্য সভা একদিকে জনকল্যাণ করার ক্ষেত্র এবং দ্বীনী দাওয়াত ও যিকর-আযকার, নছীহতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তোষ লাভের মাধ্যম হ’তে পারে। সর্বোপরি বৈঠক ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ সংশোধনের মাধ্যম। কেননা সভায় উপস্থিত সদস্যগণ সেখান থেকে লব্ধ জ্ঞান নিজ পরিবার ও এলাকায় গিয়ে প্রচার করে। যাতে ব্যক্তি-পরিবার ও সমাজ সংশোধিত হয়।
বৈঠকের আদব বা শিষ্টাচার
বৈঠকের আদবগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ক. পালনীয় ও খ. বর্জনীয়। নিম্নে আদবসমূহ উল্লেখ করা হ’ল।
ক. পালনীয় আদব সমূহ :
১. বৈঠকে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় সালাম দেওয়া :
কোন
মজলিস বা সভায় প্রবেশকালে ও বের হওয়ার সময় উপস্থিত সদস্যদের উদ্দেশ্যে
সালাম দেওয়া সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِذَا انْتَهَى أَحَدُكُمْ إِلَى
مَجْلِسٍ فَلْيُسَلِّمْ فَإِنْ بَدَا لَهُ أَنْ يَّجْلِسَ فَلْيَجْلِسْ
ثُمَّ إِذَا قَامَ فَلْيُسَلِّمْ فَلَيْسَتِ الأُولَى بِأَحَقَّ مِنَ
الآخِرَةِ- ‘যখন তোমাদের কেউ মজলিসে পৌঁছবে তখন যেন সে সালাম করে। এরপর যদি
তার সেখানে বসতে ইচ্ছা হয় তবে বসবে। অতঃপর যখন উঠে দাঁড়াবে তখনও সে যেন
সালাম দেয়। শেষেরটির চাইতে প্রথমটি বেশী উপযুক্ত নয়’।[3]
এক
সাথে অনেকে বা দলগতভাবে কোন বৈঠকে প্রবেশ করলে ঐ দলের পক্ষ থেকে একজন
সালাম দিলে তা সকলের জন্য যথেষ্ট হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,يُجْزِئُ عَنِ
الْجَمَاعَةِ إِذَا مَرُّوْا أَنْ يُسَلِّمَ أَحَدُهُمْ وَيُجْزِئُ عَنِ
الْجُلُوْسِ أَنْ يَرُدَّ أَحَدُهُمْ، ‘পথ অতিক্রমকালে দলের একজন যদি সালাম
দেয় তাহ’লে তা সকলের জন্য যথেষ্ট। এমনিভাবে উপবিষ্টদের একজন তার উত্তর
দিলে তা সকলের জন্য যথেষ্ট’।[4]
২. বৈঠকে কথা বলার ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখা :
বৈঠকে
কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে কথা বলার আদব বা শিষ্টাচার বজায় রাখা যরূরী। যেমন
নিন্দনীয় ও অশ্লীল কথা না বলা। বরং উত্তম কথা বলা। আল্লাহ বলেন,وَقُلْ
لِعِبَادِيْ يَقُوْلُوْا الَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ الشَّيْطَانَ
يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوًّا
مُبِيْنًا، ‘(হে নবী!) তুমি আমার বান্দাদের বল, তারা যেন (পরস্পরে) উত্তম
কথা বলে। (কেননা) শয়তান সর্বদা তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়।
নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’ (ইসরা ১৭/৫৩)। আর উত্তম কথা বলায় ছওয়াব রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَالْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ، ‘ভাল কথাও ছাদাক্বাহ’।[5]
তিনি আরো বলেন,وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ
فَلْيَقُلْ خَيْرًا أو لِيَصْمُتْ، ‘যে লোক আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি
বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে’।[6]
৩. বৈঠকের শেষপ্রান্তে যেখানে জায়গা পাবে সেখানে বসবে :
মজলিসে উপস্থিত হয়ে যেখানে জায়গা পাবে সেখানে বসাই আদব। কারো ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ। এতে একদিকে যেমন উপবিষ্ট লোকদের বিরক্ত করা হয়, তেমনি সভার শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا انْتَهَى أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَجْلِسِ، فَإِنْ وُسِّعَ لَهُ فَلْيَجْلِسْ، وَإِلَّا فَلْيَنْظُرْ أَوْسَعَ مَكَانٍ يَرَاهُ فَيَجْلِسَ فِيْهِ- ‘তোমাদের কেউ যখন কোন সভার নিকটে পৌঁছবে, তখন সে বসার মত জায়গা পেলে বসবে। অন্যথা জায়গা প্রশস্ত হওয়ার অপেক্ষা করবে। অতঃপর জায়গা পেলে সেখানে বসবে’।[7] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবূ ওয়াক্বিদ আল-লায়ছী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَمَا هُوَ جَالِسٌ فِى الْمَسْجِدِ وَالنَّاسُ مَعَهُ، إِذْ أَقْبَلَ ثَلاَثَةُ نَفَرٍ، فَأَقْبَلَ اثْنَانِ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَذَهَبَ وَاحِدٌ، قَالَ فَوَقَفَا عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَمَّا أَحَدُهُمَا فَرَأَى فُرْجَةً فِى الْحَلْقَةِ فَجَلَسَ فِيْهَا، وَأَمَّا الآخَرُ فَجَلَسَ خَلْفَهُمْ، وَأَمَّا الثَّالِثُ فَأَدْبَرَ ذَاهِبًا، فَلَمَّا فَرَغَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَلاَ أُخْبِرُكُمْ عَنِ النَّفَرِ الثَّلاَثَةِ أَمَّا أَحَدُهُمْ فَأَوَى إِلَى اللهِ، فَآوَاهُ اللهُ، وَأَمَّا الآخَرُ فَاسْتَحْيَا، فَاسْتَحْيَا اللهُ مِنْهُ، وَأَمَّا الآخَرُ فَأَعْرَضَ، فَأَعْرَضَ اللهُ عَنْهُ.
‘আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ) একদা মসজিদে বসে ছিলেন। তাঁর সাথে আরও লোকজন ছিলেন।
এমতাবস্থায় তিনজন লোক আসলেন। তন্মধ্যে দু’জন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর দিকে
এগিয়ে আসলেন এবং একজন চলে গেলেন। আবূ ওয়াকিদ (রাঃ) বলেন, তাঁরা দু’জন
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তাঁদের একজন
মজলিসের মধ্যে কিছুটা খালি জায়গা দেখে সেখানে বসে পড়লেন এবং অপরজন তাদের
পেছনে বসলেন। আর তৃতীয় ব্যক্তি ফিরে গেলেন। যখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) অবসর
হ’লেন, তখন (ছাহাবীদের লক্ষ্য করে) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এই তিন ব্যক্তি
সম্পর্কে কিছু বলব না? তাদের একজন আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করল, আল্লাহ্
তাকে আশ্রয় দিলেন। অন্যজন লজ্জাবোধ করল, তাই আল্লাহও তার ব্যাপারে লজ্জাবোধ
করলেন। আর অপরজন (মজলিসে হাযির হওয়া থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিল, তাই আল্লাহও
তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন’।[8] অন্য বর্ণনায় এসেছে, জাবির ইবনু সামুরাহ্
(রাঃ) বলেন,كُنَّا إِذَا أَتَيْنَا النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم جَلَسَ
أَحَدُنَا حَيْثُ يَنْتَهِى، ‘আমরা যখন নবী করীম (ছাঃ)-এর দরবারে উপস্থিত
হ’তাম, তখন শেষের দিকের খালি জায়গায় বসে পড়তাম’।[9]
৪. সভাস্থল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধ মুক্ত রাখা :
সভা বা বৈঠকে বহু লোকজনের সমাগম হয়। সেখানে একেকজন কিছু ফেললে সভাস্থল আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে যাবে। তাই সেখানে কিছু না ফেলে সে স্থান পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। তেমনি দুর্গন্ধ ছড়ায় এমন কিছু নিয়ে সেখানে প্রবেশ করা বা দুর্গন্ধযুক্ত কিছু খেয়ে সেখানে প্রবেশ করাও ঠিক নয়। আল্লাহ বলেন, وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ ‘অপবিত্রতা হ’তে দূরে থাক’ (মুদ্দাচ্ছির৭৪/৫)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,طَهِّرُوْا
أَفْنِيَتَكُمْ؛ فَإِنَّ الْيَهُوْدَ لاَ تُطَهِّرُ أَفْنِيَتَهَا ‘তোমরা
তোমাদের বাড়ীর আঙ্গিনা ও সম্মুখভাগ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখ। কেননা ইহুদীরা
তা পরিস্কার রাখে না’।[10]
৫. চোখ-কান-জিহবা হেফাযত করা :
মজলিসে
বসে নিষিদ্ধ জিনিস দেখা থেকে চোখকে, হারাম জিনিস শোনা থেকে কানকে এবং
অন্যায়-অশ্লীল কথা বলা থেকে জিহবাকে হেফাযত করা আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন,وَمَنِ اسْتَمَعَ إِلَى حَدِيْثِ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُوْنَ أَوْ
يَفِرُّوْنَ مِنْهُ، صُبَّ فِىْ أُذُنِهِ الآنُكُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ،
‘যে কেউ কোন এক দলের কথার দিকে কান লাগাল। অথচ তারা এটা পসন্দ করে না অথবা
বলেছেন, তারা তার থেকে পলায়নপর। ক্বিয়ামতের দিন তার উভয় কানে সীসা ঢেলে
দেয়া হবে’।[11]
৬. বৈঠকে আলোচিত কথাবার্তার গোপনীয়তা রক্ষা করা :
অনেক সময় বৈঠকে গোপনীয় বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়ে থাকে। যেগুলি বাইরে প্রকাশ করা সমীচীন নয়। এই গোপনীয়তা রক্ষা করা সদস্যদের জন্য যরূরী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِذَا حَدَّثَ الرَّجُلُ بِالْحَدِيْثِ ثُمَّ الْتَفَتَ فَهِىَ أَمَانَةٌ، ‘যখন কেউ কোন কথা বলে এদিক-ওদিক তাকায়, তবে তা
আমানত’।[12] মুমিন এ আমানত রক্ষা করবে।[13]
৭. মজলিসে আগত সদস্যদের মাঝে পরস্পর রহম করা :
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা এবং তাদের মাঝে দয়ার্দ্র আচরণ করা যরূরী (ফাতহ ৪৮/২৯)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ تَبَاغَضُوْا، وَلاَ تَحَاسَدُوْا، وَلاَ
تَدَابَرُوْا، وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا، ‘তোমরা পরস্পর
বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হয়ো না, হিংসা কর না এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন থেক না। আর
তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ও পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও’।[14]
৮. মজলিস প্রশস্ত করা ও অপরকে বসার সুযোগ দেওয়া :
সভা বা বৈঠকে অন্যের জন্য জায়গা করে দেওয়া বা মজলিস প্রশস্ত করা অশেষ ছওয়াব লাভের একটা উপায়। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا قِيْلَ لَكُمْ تَفَسَّحُوْا فِي الْمَجَالِسِ فَافْسَحُوْا يَفْسَحِ اللهُ لَكُمْ وَإِذَا قِيْلَ انْشُزُوْا فَانْشُزُوْا، ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমাদের বলা হয় মজলিস প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা সেটি করে দাও। আল্লাহ তোমাদের জন্য প্রশস্ত করে দিবেন। আর যখন বলা হয়, উঠে যাও, তখন উঠে যাও’ (মুজাদালা ৫৮/১১)।
৯. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করা :
সভা-সমাবেশে ইসলামের কোন প্রচার করা হ’লে তা দ্রুত বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেকারণ সভায় সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করার ব্যবস্থা থাকা যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ- ‘যদি তোমাদের মধ্যে কোন লোক কোন অন্যায় সংঘটিত হ’তে দেখে তাহ’লে সে যেন তার হাত দ্বারা (ক্ষমতা প্রয়োগে) তা প্রতিহত করে। যদি এই সক্ষমতা তার না থাকে তাহ’লে সে যেন তার মুখ দ্বারা তা প্রতিহত করে। যদি এই সাধ্যও তার না থাকে তাহ’লে সে যেন তার অন্তর দ্বারা তা প্রতিহত করে (অন্যায়কে ঘৃণা করে)। আর এটা হ’ল দুর্বলতম ঈমান’।[15] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِىْ حَازِمٍ قَالَ قَامَ أَبُو بَكْرٍ فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ تَقْرَءُوْنَ هَذِهِ الآيَةَ (يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لاَ يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ) وَإِنَّا سَمِعْنَا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا الْمُنْكَرَ لاَ يُغَيِّرُوْنَهُ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللهُ بِعِقَابِهِ.
ক্বায়েস ইবনে আবূ হাযেম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়ালেন, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন, অতঃপর
বললেন, হে লোকসকল! তোমরা তো এই আয়াত তিলাওয়াত করো যে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা
সাধ্যমত তোমাদের কাজ করে যাও। পথভ্রষ্টরা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না,
যখন তোমরা সৎপথে থাকবে’ (মায়েদাহ ৫/১০৫)। আমরা রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, লোকেরা কোন মন্দ কাজ হ’তে দেখে তা পরিবর্তনের
চেষ্টা না করলে আল্লাহ অচিরেই তাদের সকলের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি প্রেরণ
করেন’।[16]
১০. মজলিসে ডানদিক থেকে শুরু করা :
সভা-সমাবেশে কোন কিছু বিতরণের ক্ষেত্রে ডান দিক থেকে শুরু করতে হবে। কারণ ডান দিক থেকে শুরু করা সুন্নাত। সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) বলেন,
أُتِىَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم بِقَدَحٍ فَشَرِبَ مِنْهُ، وَعَنْ يَمِيْنِهِ غُلاَمٌ أَصْغَرُ الْقَوْمِ، وَالأَشْيَاخُ عَنْ يَسَارِهِ فَقَالَ يَا غُلاَمُ أَتَأْذَنُ لِىْ أَنْ أُعْطِيَهُ الأَشْيَاخَ. قَالَ مَا كُنْتُ لأُوْثِرَ بِفَضْلِى مِنْكَ أَحَدًا يَا رَسُولَ اللهِ. فَأَعْطَاهُ إِيَّاهُ-
‘নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট একটি পেয়ালা আনা হ’ল। তিনি তা হ’তে পান করলেন। তখন তাঁর ডান দিকে ছিল একজন বয়ঃকনিষ্ঠ বালক আর বয়স্ক লোকেরা ছিলেন তাঁর বাম দিকে। তিনি বললেন, হে বালক! তুমি কি আমাকে অবশিষ্ট (পানিটুকু) বয়স্কদেরকে দেয়ার অনুমতি দিবে? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনার নিকট থেকে ফযীলত পাওয়ার ব্যাপারে আমি আমার চেয়ে অন্য কাউকে প্রাধান্য দিব না। অতঃপর তিনি তা তাকে প্রদান করলেন’।[17] অন্যত্র এসেছে, আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
حُلِبَتْ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم شَاةٌ دَاجِنٌ وَهْىَ فِى دَارِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، وَشِيْبَ لَبَنُهَا بِمَاءٍ مِنَ الْبِئْرِ الَّتِى فِى دَارِ أَنَسٍ، فَأَعْطَى رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْقَدَحَ فَشَرِبَ مِنْهُ، حَتَّى إِذَا نَزَعَ الْقَدَحَ مِنْ فِيهِ، وَعَلَى يَسَارِهِ أَبُو بَكْرٍ وَعَنْ يَمِيْنِهِ أَعْرَابِىٌّ فَقَالَ عُمَرُ وَخَافَ أَنْ يُعْطِيَهُ الأَعْرَابِىَّ أَعْطِ أَبَا بَكْرٍ يَا رَسُولَ اللهِ عِنْدَكَ. فَأَعْطَاهُ الأَعْرَابِىَّ الَّذِى عَلَى يَمِيْنِهِ، ثُمَّ قَالَ الأَيْمَنَ فَالأَيْمَنَ.
‘রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য একটি
বকরীর দুধ দোহন করা হ’ল। তখন তিনি আনাস ইবনু মালেক (রাঃ)-এর ঘরে অবস্থান
করছিলেন এবং সেই দুধের সঙ্গে আনাস ইবনু মালেকের বাড়ীর কূয়ার পানি মেশানো
হ’ল। তারপর পাত্রটি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে দেয়া হ’ল। তিনি তা হ’তে পান
করলেন। পাত্রটি তাঁর মুখ হ’তে আলাদা করার পর তিনি দেখলেন যে, তাঁর বাম দিকে
আবূবকর ও ডান দিকে একজন বেদুঈন রয়েছে। পাত্রটি তিনি হয়ত বেদুঈনকে দিয়ে
দিবেন এ আশঙ্কায় ওমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আবূবকর (রাঃ)
আপনারই পাশে, তাকে পাত্রটি দিন। তিনি বেদুঈনকে পাত্রটি দিলেন, যে তাঁর ডান
পাশে ছিল। অতঃপর তিনি বললেন, ডান দিকের লোক বেশী হক্বদার’।[18] অন্যত্র
তিনি বলেন, الأَيْمَنُوْنَ، الأَيْمَنُوْنَ، أَلاَ فَيَمِّنُوْا ‘ডান দিকের
ব্যক্তিদেরই (অগ্রাধিকার), ডান দিকের ব্যক্তিদের (অগ্রাধিকার)। শোন! ডান
দিক থেকেই শুরু করবে’।[19]
১১. মুসলমানদের ইয্যত-সম্মান রক্ষা করা :
সভা-সমাবেশে যাতে মুসলমানদের সম্মান রক্ষা করা হয় এবং তাদের অপমান-অপদস্ত না করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। কোন মজলিসে এরূপ কাজ হ’তে দেখলে সে সভা ত্যাগ করা যরূরী। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,
مَنْ أُغْتُيِبَ عِنْدَهُ مُؤْمِنٌ فَنَصَّرَهُ جَزَاهُ اللهُ بِهَا خَيْرًا فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، وَمَنْ أُغْتُيِبَ عِنْدَهُ مُؤْمِنٌ فَلَمْ يُنَصِّرْهُ جَزَاهُ اللهُ بِهَا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ شَرًّا، وَمَا الْتَقَمَ أَحَدٌ لُقْمَةً شَرًّا مِنَ اغْتِيَابِ مُؤْمِنٍ، إِنْ قَالَ فِيهِ مَا يَعْلَمُ فَقَدِ اغْتَابَهُ، وَإِنْ قَالَ فِيْهِ مَا لَمْ يَعْلَمْ فَقَدْ بَهَتَهُ-
‘যার নিকট কোন মুমিনের গীবত করা হ’ল, আর সে তার
(অনুপস্থিত মুমিনের) সাহায্য করল, আল্লাহ এজন্য তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে
পুরস্কৃত করবেন। আর যার কাছে কোন মুমিনের গীবত করা হ’ল সে তার সাহায্য করল
না (তার পক্ষ সমর্থন করে গীবতকারীকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করল না) আল্লাহ
তাকে এজন্য দুনিয়া ও আখিরাতে এর মন্দ ফল (শাস্তি) ভোগ করাবেন। মুমিনের
গীবতের চাইতে মন্দ গ্রাস আর কেউই গ্রহণ করে না- যদি সে তার সম্পর্কে তার
জ্ঞাত সত্য কথাই বর্ণনা করে তবে সে তার গীবত করল। আর যদি সে এমন কথা বলল,
যা তার অজ্ঞাত, তাহ’লে সে ব্যক্তি তার বিরুদ্ধ অপবাদ রটাল’।[20]
অন্য
বর্ণনায় এসেছে, জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এমন সময় আমরা
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। فَارْتَفَعَتْ رِيحُ جِيفَةٍ مُنْتِنَةٍ
فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَدْرُونَ مَا
هَذِهِ الرِّيحُ هَذِهِ رِيحُ الَّذِينَ يَغْتَابُوْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ،
‘দুর্গন্ধময় দুষিত বায়ু প্রবাহিত হ’লে তিনি বলেন, তোমরা কি জান, তা কি? এটা
হ’ল মুমিন লোকদের গীবতকারীদের বায়ু’।[21] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন,مَنْ ذَبَّ عَنْ لَحْمِ أَخِيهِ بِالْغِيبَةِ كَانَ حَقًّا عَلَى
اللهِ أَنْ يُعْتِقَهُ مِنَ النَّارِ، ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ভাইয়ের
অনুপস্থিতিতে তার গোশত খাওয়া থেকে অন্যকে প্রতিহত করবে, আল্লাহ তা‘আলার ওপর
হক এই যে, তিনি তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিবেন’।[22]
১২. বৈঠকে মাঝে-মধ্যে দো‘আ করা : মজলিসে মাঝে-মধ্যে দো‘আ করা সুন্নাত। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন,
قَلَّمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْمُ مِنْ مَجْلِسٍ حَتَّى يَدْعُوَ بِهَؤُلاَءِ الْكَلِمَاتِ لأَصْحَابِهِ اللَّهُمَّ اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا يَحُوْلُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيْكَ وَمِنْ طَاعَتِكَ مَا تُبَلِّغُنَا بِهِ جَنَّتَكَ وَمِنَ الْيَقِيْنِ مَا تُهَوِّنُ بِهِ عَلَيْنَا مُصِيْبَاتِ الدُّنْيَا وَمَتِّعْنَا بِأَسْمَاعِنَا وَأَبْصَارِنَا وَقُوَّتِنَا مَا أَحْيَيْتَنَا وَاجْعَلْهُ الْوَارِثَ مِنَّا وَاجْعَلْ ثَأْرَنَا عَلَى مَنْ ظَلَمَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى مَنْ عَادَانَا وَلاَ تَجْعَلْ مُصِيبَتَنَا فِىْ دِيْنِنَا وَلاَ تَجْعَلِ الدُّنْيَا أَكْبَرَ هَمِّنَا وَلاَ مَبْلَغَ عِلْمِنَا وَلاَ تُسَلِّطْ عَلَيْنَا مَنْ لاَ يَرْحَمُنَا.
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার ছাহাবীগণের জন্য এই বাক্যে দো‘আ না করে কোন মজলিস থেকে খুব কমই বিদায় হ’তেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের মধ্যে এত পরিমাণ আল্লাহভীতি বণ্টন কর যা আমাদের মধ্যে ও তোমার প্রতি অবাধ্যাচারী হওয়ার মধ্যে প্রতিবন্ধক হ’তে পারে এবং আমাদের মধ্যে তোমার প্রতি আনুগত্য এত পরিমাণ বণ্টন কর যার অসীলায় তুমি আমাদেরকে তোমার জান্নাতে পৌঁছে দিবে, এতটা দৃঢ় প্রত্যয় বণ্টন কর যার দ্বারা তুমি দুনিয়ার যে কোন বিপদ আমাদের জন্য সহজতর করবে, যাবত তুমি আমাদের জীবিত রাখ ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কান, আমাদের চোখ ও আমাদের শক্তি-সামর্থ্য দ্বারা আমাদের জীবনোপকরণ দান কর (অথবা আমাদের চোখ-কান মৃত্যু পর্যন্ত সতেজ ও সুস্থ রাখ), যে আমাদের উপর অত্যাচার করে তার প্রতি আমাদের প্রতিশোধ সুনির্ধারিত কর, যে আমাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে তার বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর, আমাদের দ্বীন পালনে আমাদেরকে বিপদগ্রস্ত কর না, দুনিয়াকে অর্জন আমাদের ও আমাদের জ্ঞানের লক্ষ্যবস্ত্ততে পরিণত কর না এবং যে আমাদের প্রতি দয়া করবে না তাকে আমাদের উপর প্রভাবশালী
(শাসক নিয়োগ) কর না’।[23]
১৩. বৈঠকে আল্লাহর যিকর ও রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করা : সভা-সমাবেশে
আল্লাহর নাম স্মরণ করা বা তাঁর যিকর করা এবং রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ
পাঠ করা যরূরী। কেননা যে মজলিস আল্লাহর যিকর ও রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ
পাঠ না করে সমাপ্ত হয় তাকে গাধার মৃতদেহের সাথে তুলনা করা হয়েছে। রাসূল
(ছাঃ) বলেন,مَا مِنْ قَوْمٍ يَقُوْمُوْنَ مِنْ مَجْلِسٍ لاَ يَذْكُرُوْنَ
اللهَ فِيْهِ إِلاَّ قَامُوْا عَنْ مِثْلِ جِيْفَةِ حِمَارٍ وَكَانَ لَهُمْ
حَسْرَةً- ‘কোন কওমের লোকেরা কোন সমাবেশে একত্রিত হওয়ার পর চলে যাবার সময়
তাতে আল্লাহকে স্মরণ না করেই চলে গেলে তা যেন গাধার মৃতদেহ। আর তা তাদের
জন্য পরিতাপের কারণ হবে’।[24] অন্যত্র তিনি বলেন,مَا جَلَسَ قَوْمٌ
مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا اللهَ فِيْهِ وَلَمْ يُصَلُّوْا عَلَى
نَبِيِّهِمْ إِلاَّ كَانَ عَلَيْهِمْ تِرَةً فَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُمْ
وَإِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُمْ- ‘যে সমস্ত লোক কোন দরবারে বসেছে অথচ তারা
আল্লাহ তা‘আলার যিকর করেনি এবং তাদের নবীর প্রতি দরূদও পড়েনি, তারা
বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হবে। আল্লাহ তা‘আলা চাইলে তাদেরকে শাস্তিও দিতে পারেন
কিংবা ক্ষমাও করতে পারেন’।[25]
১৪. বৈঠক ভঙ্গের দো‘আ পাঠের মাধ্যমে মজলিস শেষ করা : মজলিস ভঙ্গের দো‘আ পাঠের মাধ্যমে তা শেষ করা। এতে তা ঐ মজলিসে সংঘটিত কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি বা গোনাহের জন্য কাফফারা স্বরূপ হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَنْ جَلَسَ فِى مَجْلِسٍ فَكَثُرَ فِيْهِ لَغَطُهُ فَقَالَ قَبْلَ أَنْ يَقُوْمَ مِنْ مَجْلِسِهِ ذَلِكَ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ. إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا كَانَ فِى مَجْلِسِهِ ذَلِكَ.
‘যে ব্যক্তি এমন সভায় বসে, যাতে খুব বেশী ভুল হয়, অতঃপর যদি উক্ত সভা ত্যাগ করে চলে যাওয়ার আগে এই দো‘আ পড়ে, সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক
(অর্থাৎ তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে। আমি
সাক্ষ দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকট ক্ষমা
প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে তওবা (প্রত্যাবর্তন) করছি। তাহ’লে উক্ত
মজলিসে কৃত অপরাধ তার জন্য ক্ষমা করে দেওয়া হয়’।[26]
খ. বর্জনীয় বিষয় সমূহ :
১. কাউকে উঠিয়ে দিয়ে তার স্থানে বসা :
মজলিস
বা বৈঠকে উপবিষ্ট কাউকে তার আসন থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসা যাবে না। নবী
করীম (ছাঃ) বলেন,لاَ يُقِيْمُ الرَّجُلُ الرَّجُلَ مِنْ مَجْلِسِهِ، ثُمَّ
يَجْلِسُ فِيْهِ. ‘কোন ব্যক্তি অপর কাউকে তার বসার জায়গা থেকে তুলে দিয়ে
সেখানে বসবে না’।[27] অন্যত্র তিনি বলেন,لاَ يُقِيْمُ الرَّجُلُ الرَّجُلَ
مِنْ مَجْلِسِهِ فَيَجْلِسَ فِيْهِ وَلَكِنْ تَفَسَّحُوْا وَتَوَسَّعُوْا-
‘কোন ব্যক্তিকে তার বসার জায়গা থেকে তুলে দিয়ে সেখানে কেউ বসবে না। তবে
তোমরা বসার জায়গা করে দাও এবং প্রশস্ত করে দাও’।[28]
২. দু’জনের মাঝখানে বসা :
কোন
বৈঠকে দু’জনে পাশাপাশি বসলে তাদের মাঝে গিয়ে বসা সমীচীন নয়। বরং তাদের
পাশে বসবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ يَحِلُّ لِرَجُلٍ أَنْ يُفَرِّقَ
بَيْنَ اثْنَيْنِ إِلاَّ بِإِذْنِهِمَا. ‘কারো জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে
দু’জনকে পৃথক করে দিয়ে (তাদের মাঝখানে বসবে) তাদের অনুমতি ছাড়াই’।[29]
৩. কেউ কোন প্রয়োজনে উঠে গেলে তার স্থানে বসা :
মজলিসে
বা সভায় বসার পরে কেউ কোন প্রয়োজনে উঠে গেলে তার জায়গায় বসা উচিত নয়। আর
যদি কেউ কারো আসনে বসে পড়ে তাহ’লে ঐ ব্যক্তি ফিরে আসলে তার জায়গা তাকে ছেড়ে
দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِذَا قَامَ الرَّجُلُ مِنْ مَجْلِسٍ
ثُمَّ رَجَعَ إِلَيْهِ فَهُوَ أَحَقُّ بِهِ. ‘কোন ব্যক্তি যখন নিজের আসন
হ’তে উঠে গিয়ে (কোথাও গিয়ে পুনরায়) ফিরে আসে তাহ’লে সেই হবে তার পূর্বোক্ত
আসনের অধিক হক্বদার’।[30] অন্যত্র তিনি বলেন,مَنْ قَامَ مِنْ مَجْلِسِهِ
ثُمَّ رَجَعَ إِلَيْهِ فَهُوَ أَحَقُّ بِهِ، ‘কেউ তার আসন হ’তে উঠে গিয়ে
পুনরায় ফিরে আসলে সেই হবে তার অধিক হক্বদার’।[31]
৪. তৃতীয়জনকে বাদ দিয়ে দু’জনে কানে কানে কথা বলা :
বৈঠকে বসে দু’জনে কানে কানে কথা বলা বা গোপনে পরামর্শ করা শিষ্টাচার বহির্ভূত। আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا النَّجْوَى مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَلَيْسَ بِضَارِّهِمْ شَيْئًا إِلَّا بِإِذْنِ اللهِ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ- ‘ঐ কানাঘুষা শয়তানের কাজ বৈ তো নয়, যা মুমিনদের দুঃখ দেওয়ার জন্য করা হয়। অথচ তা তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত। অতএব মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপর ভরসা করা’ (মুজাদালাহ ৫৮/১০)।
নবী
করীম (ছাঃ) বলেন,إِذَا كُنْتُمْ ثَلاَثَةً فَلاَ يَتَنَاجَى رَجُلاَنِ
دُوْنَ الآخَرِ، حَتَّى تَخْتَلِطُوْا بِالنَّاسِ، أَجْلَ أَنْ يُحْزِنَهُ-
‘যখন কোথাও তোমরা তিনজন থাক, তখন একজনকে বাদ দিয়ে দু’জনে কানে কানে কথা
বলবে না। এতে তার মনে দুঃখ হবে। তোমরা পরস্পর মিশে গেলে তবে তা করাতে দোষ
নেই’।[32] অন্যত্র তিনি বলেন,إِذَا كَانَ ثَلاَثَةٌ جَمِيعاً فَلاَ
يَتَنَاجَ اثْنَانِ دُوْنَ الثَّالِثِ- ‘যখন কোথাও কেবল তিনজন থাকবে, তখন
তৃতীয় জনকে ছেড়ে তারা দুু’জনে যেন গোপনে পরামর্শ না করে’।[33]
তবে
পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির অনুমতি সাপেক্ষে কানে কানে কথা বলা বা গোপনে
পরামর্শ করা যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِذَا كُنْتُمْ ثَلاَثَةً فَلاَ
يَتَنَاجَى اثْنَانِ دُوْنَ الثَّالِثِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ فَإِنَّ ذَلِكَ
يُحْزِنُهُ، ‘তোমরা তিনজন থাক, তখন একজনকে বাদ দিয়ে দু’জনে গোপনে পরামর্শ
কর না তার অনুমতি ব্যতীত। কেননা সেটি তাকে দুঃখিত করবে’।[34]
৫. হাতে বা দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসা :
পিছনে হাত রেখে ঠেস দিয়ে বসা বা দেওয়ালে ঠেস লাগিয়ে বসা মজলিসের আদবের পরিপন্থী। তাই এভাবে না বসে সোজা হয়ে বসা উচিত। শারীদ ইবনু সুওয়াইদ (রাঃ) বলেন,
مَرَّ بِىْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا جَالِسٌ هَكَذَا وَقَدْ وَضَعْتُ يَدِىَ الْيُسْرَى خَلْفَ ظَهْرِىْ وَاتَّكَأْتُ عَلَى أَلْيَةِ يَدِىْ فَقَالَ أَتَقْعُدُ قِعْدَةَ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ.
‘একদা
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আমি আমার বাম হাত পিঠে
নিয়ে তার পাতার উপর বসেছিলাম। তিনি বললেন, ‘তুমি কি তাদের মতো বসছো, যারা
অভিশপ্ত’?[35]
৬. মজলিসে হাসাহাসি করা :
মজলিসে
বা সভায় বসে হাসাহাসি ও খেল-তামাশা করা যাবে না। এতে একদিকে বৈঠকের
শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়, অপরদিকে আলোচকের কথা শুনতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ تُكْثِرُوا الضَّحِكَ فَإِنَّ كَثْرَةَ
الضَّحِكِ تُمِيْتُ الْقَلْبَ ‘তোমরা অধিক হাসবে না। কারণ অধিক হাসি
অন্তরের মৃত্যু ঘটায়’।[36] অন্যত্র তিনি বলেন,وَأَقِلَّ الضَّحِكَ فَإِنَّ
كَثْرَةَ الضَّحِكِ تُمِيْتُ الْقَلْبَ، ‘কম হাসবে। কেননা অত্যধিক হাসি
অন্তর সমূহকে মেরে ফেলে’।[37]
অনেক মানুষ
আছে, যারা অন্যের ত্রুটি বা অন্যায় কাজ দেখে হাসে। অথচ সেই কাজ ঐ ব্যক্তি
নিজেও করে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لِمَ يَضْحَكُ أَحَدُكُمْ مِمَّا
يَفْعَلُ ‘তোমাদের কেউ কেউ হাসে সে কাজটির জন্য সে কাজটি সে নিজেও করে’।[38]
৭. অহংকার, আত্মপ্রশংসা ও নিজেকে প্রকাশ করার মানসিকতা :
মজলিসে
অহংকার ও নিজের প্রশংসা করা যাবে না এবং নিজেকে যাহির করার মানসিকতা
পরিহার করতে হবে। কারণ এর মাধ্যমে ঐ ব্যক্তি মানুষের কাছে যেমন নিন্দনীয়
হবে, তেমনি সে গোনাহগারও হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَإِنَّ اللهَ أَوْحَى
إِلَىَّ أَنْ تَوَاضَعُوْا حَتَّى لاَ يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ وَلاَ
يَبْغِى أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ- ‘আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর অহী করেছেন যে,
তোমরা পরস্পর বিনয় প্রদর্শন করবে। যাতে কেউ কারো উপর অহংকার ও গৌরব প্রকাশ
না করে’।[39]
৮. গুপ্তচরবৃত্তি ও দোষ-ত্রুটি তালাশ করা :
মজলিসে বা সভায় কারো দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করার জন্য বা গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য গমন করা যাবে না। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيْثِ، وَلاَ تَحَسَّسُوْا، وَلاَ تَجَسَّسُوْا، وَلاَ تَحَاسَدُوْا، وَلاَ تَدَابَرُوْا، وَلاَ تَبَاغَضُوْا، وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا. ‘তোমরা কারো প্রতি কু-ধারণা পোষণ কর না। কেননা কু-ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। একে অপরের ছিদ্রান্বেষণ কর না, একে অন্যের ব্যাপারে মন্দ কথায় কান দিও না এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ কর না, বরং পরস্পর আল্লাহর বান্দাও ভাই ভাই হয়ে যাও’।[40]
৯. আল্লাহর আয়াত নিয়ে সীমালংঘন হয় এমন বৈঠকে যোগদান :
পবিত্র কুরআনের কোন আয়াত নিয়ে বিদ্রুত ও সীমালংঘণ হয় এমন বৈঠক পরিত্যাগ করতে হবে। যে বৈঠকে এমনটি হবে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়া আবশ্যক। মহান আল্লাহ বলেন,وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِيْنَ يَخُوْضُوْنَ فِيْ آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِهِ وَإِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ، ‘যখন তুমি দেখবে যে, লোকেরা আমাদের আয়াত সমূহে ছিদ্রান্বেষণ করছে, তখন তুমি তাদের থেকে সরে যাও, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান তোমাকে এটা ভুলিয়ে দেয়, তাহ’লে স্মরণ হওয়ার পর আর যালেম সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না’ (আন‘আম ৬/৬৮)। তিনি আরো বলেন,وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتَّى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِثْلُهُمْ إِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا، ‘আর তিনি কুরআনের মধ্যে তোমাদের উপর এই আদেশ নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা লোকদের থেকে কুরআনের আয়াত সমূহে অবিশ্বাস ও বিদ্রূপ শুনবে, তখন তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় লিপ্ত হয়। অন্যথা তোমরাও তাদের সদৃশ গণ্য হবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফেরদের জাহান্নামে একত্রিত করবেন’ (নিসা ৪/১৪০)।
পরিশেষে বলব, সভা-সমাবেশ, বৈঠকে বসার ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলা যরূরী। এর মাধ্যমে ইহকালে যেমন সুফল পাওয়া যাবে, তেমনি পরকালীন জীবনে অশেষ ছওয়াব হাছিল করা যাবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলার তাওফীক দান করুন-আমীন!
[1]. আবূদাঊদ হা/৪৮৫৫; মিশকাত হা/২৭৭৩; ছহীহাহ হা/৭৭-৭৬; ছহীহুল জামে হা/৫৭৫০।
[2]. কাহফ ১৮/২৮; বুখারী হা/২১০১, ৫৫৩৪; মুসলিম হা/২৬২৮; মিশকাত হা/৫০১০।
[3]. তিরমিযী হা/২৭০৬; মিশকাত হা/৪৬৬০; ছহীহাহ হা/১৮৩।
[4]. আবূদাউদ হা/৫২১০, ‘দলের পক্ষ থেকে একজনের সালামের উত্তর দেয়া’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৪৬৪৮; ইরওয়া হা/৭৭৮।
[5]. বুখারী হা/২৯৮৯; মুসলিম হা/১০০৯; মিশকাত হা/১৮৯৬।
[6]. বুখারী হা/৬০১৮-১৯; মুসলিম হা/৪৭।
[7]. ছহীহাহ হা/১৩২১; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৯৯।
[8]. বুখারী হা/৬৬; ছহীহাহ হা/৩৩০।
[9]. আবূদাউদ হা/৪৮২৫; তিরমিযী হা/২৭২৫; মিশকাত হা/৪৭২৯; ছহীহাহ হা/৩৩০।
[10]. তাবারাণী, মু‘জামুল আওসাত্ব; ছহীহাহ হা/২৩৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৯৩৫।
[11]. বুখারী হা/৭০৪২; তিরমিযী হা/১৭৫১; গাইয়াতুল মারাম হা/১২০, ৪২২।
[12]. আবূদাঊদ হা/৪৮৬৮; তিরমিযী হা/১৯৫৯; মিশকাত হা/৫০৬১; ছহীহাহ হা/১০৮৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৮৬।
[13]. আহমাদ হা/১২৫৮৯; মিশকাত হা/৩৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৭১৭৯।
[14]. বুখারী হা/৬০৭৬; মুসলিম হা/২৫৫৮।
[15]. মুসলিম হা/৪৯; নাসাঈ হা/৫০০৮-৯; তিরমিযী হা/২১৭২; ইবনু মাজাহ হা/১২৭৫; মিশকাত হা/৫১৩৭।
[16]. ইবনু মাজাহ হা/৪০০৫; তিরমিযী হা/২১৬৮; মিশকাত হা/৫১৪২; ছহীহাহ হা/১৫৬৪।
[17]. বুখারী হা/২৩৫১, ২৩৬৬, ২৪৫১, ২৬০২, ২৬০৫, ৫৬২০; মুসলিম হা/২০৩০; মিশকাত হা/৪২৭৪।
[18]. বুখারী হা/২৩৫২, ২৫৭১, ৫৬১২, ৫৬১৯; মুসলিম হা/২০২৯।
[19]. বুখারী হা/২৫৭১; মিশকাত হা/৪২৭৩।
[20]. আদাবুল মুফরাদ হা/৭৩৪, সনদ ছহীহ।
[21]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭৩৭; বায়হাক্বী, শু’আবুল ঈমান হা/৭৬৪৩, আহমাদ হা/১৪৮২৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৪০; গায়াতুল মারাম হা/৪২৯, সনদ হাসান।
[22]. আহমাদ, মিশকাত হা/৪৯৮১; ছহীহুল জামে হা/৬২৪০; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৪৭।
[23]. তিরমিযী হা/৩৫০২; আল-কালিমুত তাইয়্যিব হা/২২৫/১৬৯; মিশকাত হা/২৪৯২, সনদ হাসান।
[24]. আবূদাউদ হা/৪৮৫৫; মিশকাত হা/২২৭৩; ছহীহাহ হা/৭৭।
[25]. তিরমিযী হা/৩৩৮০; মিশকাত হা/২২৭৪; ছহীহাহ হা/৭৪, ৭৮-৭৯।
[26]. তিরমিযী হা/৩৪৩৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৯২।
[27]. বুখারী হা/৬২৬৯; ছহীহাহ হা/২২৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৭৭০।
[28]. আহমাদ হা/৪৬৫৯; মিশকাত হা/৪৬৯৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৭৭১।
[29]. আবূদাউদ হা/৪৮৪৫; তিরমিযী হা/২৭৫২; মিশকাত হা/৪৭০৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৬৫৬।
[30]. আবূদাউদ হা/৪৮৫৩, সনদ ছহীহ।
[31]. মুসলিম হা/২১৭৯; মিশকাত হা/৪৬৯৭।
[32]. বুখারী হা/৬২৯০; তিরমিযী হা/২৮২৫।
[33]. আহমাদ; ছহীহাহ হা/১৪০২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৬২।
[34]. মুসনাদ আহমাদ হা/৬৩৩৮, সনদ ছহীহ।
[35]. আবূদাউদ হা/৪৮৪৮; মিশকাত হা/৪৭৩০; ছহীহুত তারগীব হা/৩০৬৬।
[36]. ইবনু মাজাহ হা/৪১৯৩; তিরমিযী হা/২৩০৫; মিশকাত হা/৫১৭১।
[37]. ইবনু মাজাহ হা/৪২১৭; ছহীহাহ হা/৫০৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৫৮০।
[38]. বুখারী হা/৪৯৪২; মিশকাত হা/৩২৪২।
[39]. মুসলিম হা/২৮৬৫; ইবনু মাজাহ হা/৪১৭৯; মিশকাত হা/৪৮৯৮।
[40]. বুখারী হা/৬০৬৪; মুসলিম হা/২৫৬৩; আবূদাঊদ হা/৪৯১৭; মিশকাত হা/৫০২৮।