মহান
আল্লাহ মানুষের জন্য যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করে থাকেন। তাই আল্লাহর কাছেই
মানুষকে চাইতে হবে। জুতার ফিতার প্রয়োজন হ’লেও রাসূল (ছাঃ) আল্লাহর কাছে
চাইতে বলেছেন। আল্লাহর কাছে চাইলে তিনি খুশী হন এবং তিনি বান্দার দো‘আ বা
প্রার্থনা কবুল করেন। তিনি বলেন,ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ، ‘তোমরা আমাকে
ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব’ (গাফির/মুমিন ৪০/৬০)।
ইসলামে দো‘আর গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ‘দো‘আই ইবাদত’।[1] অন্যত্র তিনি বলেন, أَفْضَلُ الْعِبَادَةِ الدُّعَاءُ ‘উত্তম ইবাদত হচ্ছে দো‘আ’।[2] দো‘আ কবুল হওয়ার জন্য কতিপয় আদব বা শিষ্টাচার রয়েছে। সেগুলি পালন করা না হ’লে দো‘আ কবুল হয় না। নিম্নে দো‘আর আদব সমূহ উল্লেখ করা হ’ল।-
১. দো‘আকারীকে তাওহীদপন্থী হ’তে হবে :
প্রার্থনাকারীকে আল্লাহর রুবুবিয়্যত, উলূহিয়্যত ও আসমা ওয়াছ ছিফাতের প্রতি একত্ববাদী হ’তে হবে। সেই সাথে বান্দাকে আল্লাহর আহবানে সাড়া দিয়ে নেক কাজ করতে হবে এবং গোনাহ পরিত্যাগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّيْ فَإِنِّيْ قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوْا لِيْ وَلْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ- ‘আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে, (তখন তাদের বল যে,) আমি অতীব নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমাকে আহবান করে এবং আমার উপরে নিশ্চিন্ত বিশ্বাস রাখে। যাতে তারা সুপথপ্রাপ্ত হয়’ (বাক্বারাহ ২/১৮৬)।
২. একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে দো‘আ করা :
যে কোন ইবাদত খালেছভাবে আল্লাহর জন্য করা না হ’লে তা আল্লাহ কবুল করেন না। তিনি বলেন,وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ ‘অথচ তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খালেছ অন্তরে একনিষ্ঠভাবে কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে’ (বাইয়্যেনাহ ৯৮/৫)। তাই ইখলাছের সাথে দো‘আ করতে হবে। অন্যথা তা কবুল হবে না।
৩. আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে দো‘আ করা :
আল্লাহর অনেক গুণবাচক নাম রয়েছে। সেগুলির মাধ্যমে দো‘আ করার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُوْنَ فِيْ أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ- ‘আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর নাম সমূহ। সে নামেই তোমরা তাঁকে ডাক এবং তাঁর নাম সমূহে যারা বিকৃতি ঘটিয়েছে তাদেরকে তোমরা পরিত্যাগ কর’ (আ‘রাফ ৭/১৮০)।
৪. দো‘আ করার পূর্বে আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করা :
দো‘আর অন্যতম আদব হচ্ছে দো‘আর পূর্বে আল্লাহর প্রশংসা করা। ফাযালা বিন ওবায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,
بَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاعِدٌ إِذْ دَخَلَ رَجُلٌ فَصَلَّى فَقَالَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَجِلْتَ أَيُّهَا الْمُصَلِّي إِذَا صَلَّيْتَ فَقَعَدْتَ فَاحْمَدْ اللهَ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ وَصَلِّ عَلَيَّ ثُمَّ ادْعُهُ قَالَ ثُمَّ صَلَّى رَجُلٌ آخَرُ بَعْدَ ذَلِكَ فَحَمِدَ اللهَ وَصَلَّى عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّهَا الْمُصَلِّي ادْعُ تُجَبْ-
‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উপবিষ্ট
ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে ছালাত আদায় করল। এরপর দো‘আ করল, হে আল্লাহ!
তুমি আমাকে মাফ করে দাও, তুমি আমাকে দয়া কর। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,
হে মুছল্লী! তুমি বেশ তাড়াহুড়া করে ফেললে। তুমি ছালাত আদায় করে যখন বসবে
তখন আগে আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করবে, আমার ওপর দরূদ পড়বে। এরপর আল্লাহর
কাছে দো‘আ করবে’।[3] অপর এক বর্ণনায় এসেছে,إذَا صَلَّى
أَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِتَحْمِيدِ اللهِ وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ ثُمَّ
لْيُصَلِّ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ
لْيَدْعُ بَعْدُ بِمَا شَاءَ- ‘যখন তোমাদের কেউ ছালাত আদায় করবে (শেষ করবে)
তখন আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি দিয়ে শুরু করবে। এরপর নবী করীম (ছাঃ)-এর ওপর
দরূদ পড়বে। অতঃপর যা ইচ্ছা দো‘আ করবে’। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর অপর এক লোক
ছালাত আদায় করল। সে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করল, নবী করীম (ছাঃ)-এর ওপর
দরূদ পড়ল। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘হে মুছল্লী! দো‘আ কর, আল্লাহ তোমার
দো‘আ কবুল করবেন’।[4]
৫. নবী করীম (ছাঃ)-এর ওপর দরূদ পড়া :
দো‘আর
আরেকটি আদব হচ্ছে রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে দরূদ পাঠ করা। তিনি বলেন,كُلُّ
دُعَاءٍ مَحْجُوبٌ حَتَّى يُصَلِّيَ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ ‘নবী করীম (ছাঃ)-এর উপর দরূদ না পড়া পর্যন্ত প্রত্যেক দো‘আ আটকে
থাকে’।[5] অন্যত্র তিনি আরো বলেন,إِنَّ الدُّعَاءَ مَوْقُوْفٌ بَيْنَ
السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَا يَصْعَدُ مِنْهُ شَيْءٌ حَتَّى تُصَلِّيَ عَلَى
نَبِيِّكَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ‘দো‘আ আকাশ ও যমীনের
মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, তোমার নবীর প্রতি যতক্ষণ তুমি দরূদ
পাঠ না কর ততক্ষণ তার কিছুই উপরে উঠে না’।[6]
৬. ক্বিবলামুখী হয়ে দো‘আ করা :
দো‘আ
করার সময় ক্বিবলামুখী হয়ে তথা বায়তুল্লাহর দিকে ফিরে দো‘আ করা উত্তম। ওমর
বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) মুশরিকদের দিকে তাকালেন; তাদের সংখ্যা ছিল এক হাযার। আর তাঁর
সাথীবর্গের সংখ্যা ছিল তিনশত ঊনিশ। তখন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে হাত প্রসারিত
করলেন, তারপর তাঁর রবকে ডাকতে শুরু করলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যে ওয়াদা
দিয়েছেন সেটা বাস্তবায়ন করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যে প্রতিশ্রুতি
দিয়েছেন সেটা দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি যদি মুসলমানদের এ দলটিকে ধ্বংস করে
দেন তাহ’লে পৃথিবীতে আপনার ইবাদত হবে না’। এভাবে দুই হাত প্রসারিত করে
ক্বিবলামুখী হয়ে তাঁর রবকে ডাকতে থাকলেন। এমনকি এক পর্যায়ে তাঁর কাঁধ থেকে
চাদরটি পড়ে গেল...।[7]
ইমাম নববী (রহঃ) ‘শারহু মুসলিম’ গ্রন্থে বলেন, এ হাদীছে দো‘আ কালে ক্বিবলামুখী হওয়া ও দুই হাত তুলে দো‘আ করা মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে প্রমাণ রয়েছে।
৭. দুই হাত উত্তোলন করা :
দু’হাত
উত্তোলন করে দো‘আ করা উত্তম। সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ رَبَّكُمْ تَبَارَكَ وَتَعَالَى حَيِيٌّ
كَرِيمٌ، يَسْتَحْيِيْ مِنْ عَبْدِهِ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَيْهِ، أَنْ
يَرُدَّهُمَا صِفْرًا- ‘নিশ্চয়ই তোমাদের সুমহান রব হচ্ছেন লজ্জাশীল ও মহান
দাতা। বান্দা যখন তাঁর কাছে দু’হাত তোলে তখন তিনি সে হাতদ্বয় শূন্য ফিরিয়ে
দিতে লজ্জাবোধ করেন’।[8]
এ সময় হাতের তালু
থাকবে আকাশের দিকে। যেভাবে একজন নতজানু দরিদ্র সাহায্যপ্রার্থী কিছু পাওয়ার
আশায় হাত পাতে। মালেক বিন ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন,إِذَا سَأَلْتُمُ اللهَ فَاسْأَلُوهُ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ وَلاَ
تَسْأَلُوهُ بِظُهُوْرِهَا- ‘যখন তোমরা আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইবে তখন
হাতের তালু দিয়ে চাইবে; হাতের পিঠ দিয়ে নয়’।[9]
হাত
তোলার সময় দুই হাত কিভাবে থাকবে এ সম্পর্কে শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, হাত
দু’টি মিলিয়ে রাখবে। তিনি আরো বলেন, ‘দুই হাতের মাঝখানে ফাঁক রাখা ও এক হাত
থেকে অন্য হাত দূরে রাখা সম্পর্কে আমি কোন দলীল পাইনি। না হাদীছে আর না
আলেমগণের বাণীতে’।[10]
৮. দো‘আ কবুলের ব্যাপারে আল্লাহর প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস রাখা :
এ
ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহ দো‘আ কবুল করবেন এবং মনোযোগ সহকারে
দো‘আ করা। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, وَلْيَعْزِمْ فِي الْمَسْأَلَةِ فَإِنَّ
اللهَ لَا مُكْرِهَ لَهُ- ‘দো‘আ কবুল হওয়ার নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে সে যেন
দো‘আ করে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা অবহেলাকারী ও অমনোযোগী অন্তরের দো‘আ কবুল
করেন না’।[11]
৯. বারবার প্রার্থনা করা :
বান্দা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর যা ইচ্ছা তা চাইবে, কাকুতি-মিনতি করবে। তবে দো‘আর ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া করবে না। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,
لاَ يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ. قِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ مَا الاِسْتِعْجَالُ قَالَ يَقُولُ قَدْ دَعَوْتُ وَقَدْ دَعَوْتُ فَلَمْ أَرَ يَسْتَجِيبُ لِى فَيَسْتَحْسِرُ عِنْدَ ذَلِكَ وَيَدَعُ الدُّعَاءَ.
‘বান্দার
দো‘আ ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে
কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দো‘আ করে। বান্দার দো‘আ ততক্ষণ
পর্যন্ত কবুল করা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া
করে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাড়াহুড়া বলতে কী বুঝাচ্ছেন? তিনি
বললেন, বান্দা বলে যে, আমি দো‘আ করেছি, আমি দো‘আ করেছি। কিন্তু আমার দো‘আ
কবুল হ’তে দেখিনি। তখন সে ব্যক্তি উদ্যম হারিয়ে ফেলে এবং দো‘আ করা ছেড়ে
দেয়’।[12]
১০. দৃঢ়তার সাথে দো‘আ করা :
দৃঢ়তার
সাথে আল্লাহর কাছে দো‘আ করতে হবে। অর্থাৎ আমি দো‘আ করলাম, আল্লাহ চাইলে
কবুল করবেন, নচেৎ নয়। এরূপ মনে করে দো‘আ করা যাবে না। নবী করীম (ছাঃ)
বলেছেন,لَا يَقُولَنَّ أَحَدُكُمُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي إِنْ شِئْتَ
اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي إِنْ شِئْتَ لِيَعْزِمِ الْمَسْأَلَةَ فَإِنَّهُ لَا
مُكْرِهَ لَهُ- ‘তোমাদের কেউ যেন অবশ্যই এভাবে না বলে, হে আল্লাহ! আপনি
যদি চান আমাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি যদি চান আমাকে দয়া করুন। বরং সে
যেন দৃঢ়ভাবে চায়। কেননা আল্লাহর ওপর জবরদস্তি করার কেউ নেই’।[13]
১১. অনুনয়-বিনয়, আশা ও ভয় সহকারে দো‘আ করা :
দো‘আ কুবলের আশা নিয়ে এবং কবুল না হওয়ার ভয় নিয়ে বিনীতভাবে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দো‘আ করতে হবে। তিনি বলেন, ادْعوا رَبَّكمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً- ‘তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক’ (আ‘রাফ ৭/৫৫)। তিনি আরো বলেন,إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِيْنَ- ‘তারা (পিতা-পুত্র) সর্বদা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত। তারা আশা ও ভীতির সাথে আমাদের ডাকত। আর তারা ছিল আমাদের প্রতি বিনয়াবনত’ (আম্বিয়া ২১/৯০)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَاذْكُرْ رَبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ- ‘তোমার প্রতিপালককে স্মরণ কর মনে মনে কাকুতি-মিনতি ও ভীতি সহকারে অনুচ্চৈঃস্বরে সকালে ও সন্ধ্যায়’ (আ‘রাফ ৭/২০৫)।
১২. তিনবার করে দো‘আ করা :
দো‘আর
বিষয়টি তিনবার উল্লেখ করা উচিত। আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, ‘একবার রাসূল (ছাঃ) বায়তুল্লাহর কাছে ছালাত আদায় করছিলেন।
সেখানে আবু জাহল ও তার সঙ্গীরা বসা ছিল। পূর্বের দিন উট যবেহ করা হয়েছিল।
এমন সময় আবু জাহল বলে উঠল, তোমাদের মধ্যে কে অমুক গোত্রের উটনীর নাড়িভুঁড়ি
এনে মুহাম্মাদ যখন সিজদা করবে তখন তার পিঠের উপর রাখতে পারবে? তখন কওমের
সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকটি দ্রুত গিয়ে উটনীর নাড়িভুঁড়ি নিয়ে এল এবং রাসূল (ছাঃ)
যখন সিজদায় গেলেন তখন সেগুলো তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দিল। বর্ণনাকারী
বলেন, তারা নিজেরা হাসতে থাকল। হাসতে হাসতে একে অন্যের ওপর হেলে পড়ল। আমি
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। হায়! আমার যদি প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকত তাহ’লে
আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিঠ থেকে এগুলো ফেলে দিতাম। রাসূল (ছাঃ) সিজদায়
পড়ে থাকলেন। মাথা উঠালেন না। এক পর্যায়ে এক লোক গিয়ে ফাতেমা (রাঃ)-কে খবর
দিল। খবর শুনে তিনি ছুটে এলেন। সে সময় ফাতেমা (রাঃ) ছিলেন ছোট বালিকা। তিনি
এসে উটের নাড়িভুঁড়ি তাঁর পিঠ থেকে ফেলে দিলেন। এরপর লোকদের দিকে মুখ করে
তাদেরকে গালমন্দ করলেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) যখন তাঁর ছালাত শেষ করলেন, তখন
তিনি কণ্ঠস্বর উঁচু করলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে বদ দো‘আ করলেন। তিনি যখন দো‘আ
করতেন তখন তিনবার করতেন এবং যখন প্রার্থনা করতেন তখন তিনবার করতেন। এরপর
বললেন, হে আল্লাহ্! আপনি কুরাইশকে ধ্বংস করুন। এভাবে তিনবার বললেন। তারা
যখন তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে পেল তাদের হাসি মিলিয়ে গেল এবং তারা তাঁর বদ
দো‘আকে ভয় পেল। এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ্! আবু জাহল ইবনে হিশাম, ওতবা
ইবনে রাবী‘আ, শায়বা ইবনে রবী‘আ, ওয়ালীদ ইবনে উকবা, উমাইয়্যা ইবনে খালাফ ও
উকবা ইবনে আবু মু‘আইতকে ধ্বংস করুন। (রাবী বলেন, তিনি সপ্তম ব্যক্তির নামও
বলেছিলেন কিন্তু আমি স্মরণ রাখতে পারিনি)। সেই সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মাদ
(ছাঃ)-কে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, রাসূল (ছাঃ) যাদের নাম উচ্চারণ করেছিলেন,
আমি বদর যুদ্ধের দিন তাদেরকে নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। পরবর্তীতে
তাদেরকে টেনেহিঁচড়ে বদরের কূপের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়’।[14]
১৩. জীবিকা হালাল হওয়া :
দো‘আর
অন্যতম আদব হচ্ছে জীবিকা হালাল হওয়া। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘হে লোকসকল! নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র। তিনি
পবিত্র ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেননা। তিনি রাসূলদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন
একই নির্দেশ মুমিনদের প্রতিও জারী করেছেন। তিনি বলেন,يَاأَيُّهَا الرُّسُلُ
كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّيْ بِمَا
تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ- ‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত হ’তে আহার কর এবং
সৎকর্ম কর। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর, সব বিষয়ে আমি অবগত’ (মুমিনূন ২৩/৫১)।
তিনি আরও বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ
مَا رَزَقْنَاكُمْ ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমরা তোমাদের যে রূযী দান করেছি, সেখান
থেকে পবিত্র বস্ত্ত সমূহ ভক্ষণ কর’ (বাক্বারাহ ২/১৭২)। এরপর তিনি
উল্লেখ করেন যে, জনৈক ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করে উষ্কখুষ্ক চুল নিয়ে ধুলিমলিন
অবস্থায় দুই হাত আকাশের দিকে তুলে দো‘আ করে, ইয়া রবব, ইয়া রবব! অথচ তার
খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, সে পরিপুষ্ট হয়েছে হারাম
খেয়ে, তাহ’লে তার দো‘আ কিভাবে কবুল হবে?’[15]
ইবনে
রজব (রহঃ) বলেন,فأكل الحرام وشربه ولبسه والتغذي به سبب موجب، ‘হালাল
খাওয়া, হালাল পান করা, হালাল পরিধান করা ও হালাল খেয়ে পরিপুষ্ট হওয়া দো‘আ
কবুল হওয়ার শর্ত’।[16]
১৪. নীরবে-নিভৃতে দো‘আ করা :
নির্জনে ও নিভৃতে দো‘আ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,ادْعوا رَبَّكمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً- ‘তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক’ (আ‘রাফ ৭/৫৫)। আল্লাহ তা‘আলা যাকারিয়া (আঃ)-এর প্রশংসা করে বলেন,إذْ نَادَى رَبَّهُ نِدَاءً خَفِيًّا، ‘যখন তিনি তার রবকে ডেকেছিলেন নিভৃতে’ (মারিয়াম ১৯/৩)।
দো‘আ কবুলের স্থান ও সময়সমূহ
দো‘আ কবুলের অনেক সময় ও স্থান রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ-
(১) লায়লাতুল ক্বদর :
ক্বদরের রাত্রিতে দো‘আ কবুল হয়। আয়েশা (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-কে
বললেন,أَرَأَيْتَ إِنْ عَلِمْتُ أَيُّ لَيْلَةٍ لَيْلَةُ الْقَدْرِ مَا
أَقُولُ فِيهَا قَالَ قُولِي اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ
الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي، ‘যখন আমি জানব যে, লায়লাতুল ক্বদর কোন্টি তখন
আমি কি বলব? তিনি বললেন, তুমি বলবে, হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। ক্ষমাকে
ভালবাস। অতএব আমাকে তুমি ক্ষমা কর’।[17]
(২) মধ্যরাতে দো‘আ : রাত্রির শেষভাগে আল্লাহ তা‘আলা ৭ম আসমানে অবতরণ করেন। তিনি এসময় বান্দাকে আহবান জানান এবং তাদের প্রয়োজন সমূহ পূরণ করেন। আর তিনি তাদের দুঃখ-কষ্টগুলি দূর করেন। তিনি বলেন,مَنْ يَدْعُونِيْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ- ‘কে আছে আমাকে আহবান করবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে তা দিব। আমার কাছে কে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিব’।[18]
(৩) প্রত্যেক ছালাতের শেষে : প্রত্যেক ফরয ছালাতের শেষে দো‘আ কবুল হয়। তবে এখানে হাদীছে বর্ণিত দো‘আগুলি পাঠ করতে হবে, যেভাবে রাসূল (ছাঃ) শিখিয়েছেন। আবূ উমামাহ (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে,أَيُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ؟ قَالَ: جَوْفَ اللَّيْلِ الْآخِرِ، وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ ‘কোন সময়ের দো‘আ অধিক শ্রুত হয়? তিনি বললেন, রাতের শেষার্ধে এবং প্রত্যেক ফরয ছালাতের শেষে’।[19] উল্লেখ্য যে, ফরয ছালাতের পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দো‘আ করার প্রচলিত নিয়মটি বিদ‘আত।
‘দুবুরুছ ছালাত’ সম্পর্কে মতভেদ : এ
মর্মে মতানৈক্য রয়েছে যে, সেটি সালামের পূর্বে নাকি পরে? শায়খুল ইসলাম
ইবনু তায়মিয়া এবং ইবনুল ক্বাইয়েম (রহঃ) একে সালামের পূর্বে বলে মত ব্যক্ত
করেছেন। ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেছেন, دبر كل شيء منه كدبر الحيوان ‘প্রত্যেক
বস্ত্তর দুবুর তারই অন্তর্গত। যেমন পশুর দুবুর তথা পশ্চাৎ’।[20]
শায়েখ উছায়মীন (রহঃ) বলেছেন,ما ورد من الدعاء مقيداً بدبر الصلاة فهو قبل السلام وما ورد من الذكر مقيداً بدبر الصلاة، فهو بعد الصلاة؛ لقوله تعالى : فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَاذْكُرُوا اللهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِكُمْ، ‘যেসকল নির্দিষ্ট দো‘আ দুবুরুছ ছালাতের সাথে শর্তযুক্ত সেগুলি সালামের পূর্বে পাঠ করতে হয়। আর যে সকল যিকির দুবুরুছ ছালাতের সাথে নির্দিষ্ট সেগুলি ছালাতের পর পাঠ করতে হয়। কেননা আল্লাহ বলেছেন, ‘অতঃপর যখন তোমরা (ভীতির) ছালাত শেষ করবে, তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া সর্বাবস্থায় আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ কর’ (নিসা ৪/১০৩)।
(৪) আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়ে : আযান ও ইক্বামতের মাঝে দো‘আ করলে কবুল হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يُرَدُّ الدُّعَاءُ بَيْنَ الأَذَانِ وَالإِقَامَةِ- ‘আযান ও ইক্বমাতরে মধ্যবর্তী সময়ের দো‘আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না’।[21] তিনি আরো বলেন, إِذَا نَادَى الْمُنَادِي فُتِحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَاسْتُجِيبَ الدُّعَاءُ- ‘যখন মুওয়াযযিন আযান দেয়, তখন আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং দো‘আ কবুল করা হয়’।[22]
(৫) যুদ্ধক্ষেত্রে কাতার সোজা করার সময় : যুদ্ধক্ষেত্রে
সৈন্যদের সারি ঠিক করার সময় দো‘আ করলে তা কবুল হয়। সাহল বিন সা‘দ (রাঃ)
মারফূরূপে বর্ণনা করেছেন যে,ثِنْتَانِ لاَ تُرَدَّانِ أَوْ قَلَّمَا
تُرَدَّانِ : الدُّعَاءُ عِنْدَ النِّدَاءِ وَعِنْدَ الْبَأْسِ حِينَ
يُلْحِمُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا- ‘দু’টি সময়ে দো‘আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না অথবা
বলেছেন কমই ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ১. আযানের সময়ে ও ২. যুদ্ধক্ষেত্রে, যখন তুমুল
লড়াই শুরু হয়ে যায়’।[23]
তিনি অন্যত্র
বলেন,اطْلُبُوا اسْتِجَابَةَ الدُّعَاءِ عِنْدَ الْتِقَاءِ الْجُيُوشِ،
وَإِقَامَةِ الصَّلَاةِ، ونُزُولِ الْغَيْثِ، ‘তোমরা দো‘আ কবুল হওয়ার জন্য
সৈন্যবাহিনী পরস্পর মুখোমুখী হওয়া, ছালাত দন্ডায়মান হওয়া এবং বৃষ্টি
বর্ষণের সময় তালাশ কর’।[24]
(৬) বৃষ্টি বর্ষণের সময় :
বৃষ্টি বর্ষণের সময় দো‘আ কবুল হয়। সাহল বিন সা‘দ মারফূ রূপে বর্ণনা করেছেন
যে, ثِنْتَانِ لاَ تُرَدَّانِ: الدُّعَاءُ عِنْدَ النِّدَاءِ وَتَحْتَ
الْمَطَرِ ‘দু’টি সময়ে দো‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১. আযানের সময়। ২. বৃষ্টি
বর্ষণের সময়’।[25]
(৭) রাতের একটি বিশেষ মুহূর্তে : রাতে এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, যখন বান্দা কোন দো‘আ করলে আল্লাহ তাকে তা দান করেন। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ فِى اللَّيْلِ لَسَاعَةً لاَ يُوَافِقُهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللهَ خَيْرًا مِنْ أَمْرِ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهُ وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ- ‘নিশ্চয়ই রাতের মধ্যে একটি মুহূর্ত রয়েছে, সে সময় মুসলিম বান্দা দুনিয়া ও আখেরাতের এমন কোন বিষয়ে আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণ প্রার্থনা করলেই তিনি তাকে তা দিবেন। আর এটা (এই মুহূর্তটি) প্রতি রাতেই এসে থাকে’।[26] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,
يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ فَيَقُوْلُ مَنْ يَدْعُوْنِىْ فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِى فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِى فَأَغْفِرَ لَهُ-
‘প্রত্যহ আল্লাহ রববুল আলামীন রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ
অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বলতে থাকেন, কে আমার নিকট কোন কিছুর
জন্য প্রার্থনা করবে, আমি তার দো‘আ কবুল করব, যে কেউ আমার নিকট কিছু যাচঞা
করবে, আমি তা তাকে প্রদান করব এবং যে আমার নিকট গোনাহ মাফের জন্য দো‘আ
করবে, আমি তার গোনাহ মাফ করব’।[27]
(৮) জুম‘আর দিনে : জুম‘আর দিনে বিশেষ একটা সময় আছে, যখন দো‘আ কবুল হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَقَالَ فِيْهِ سَاعَةٌ لَا يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي يَسْأَلُ اللهَ تَعَالَى شَيْئًا إِلَّا أَعْطَاهُ إِيَّاهُ وَأَشَارَ بِيَدِهِ يُقَلِّلُهَا-
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুম‘আ দিবসের
উল্লেখ করে বললেন, এই দিবসে এমন একটি সময় রয়েছে, যখন কোন মুসলিম বান্দা
ছালাতে দন্ডায়মান অবস্থায় সেই মুহূর্তটির সদ্ব্যবহার করে তখন যদি সে
আল্লাহ তা‘আলার নিকটে কোন বস্ত্ত প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তাকে সেই
বস্ত্ত প্রদান করবেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় হাত দ্বারা ইশারা
করলেন সেই সময়টির স্বল্পতা বুঝাবার জন্য’।[28]
(৯) সিজদাকালে :
ছালাত আদায় কালে সিজদায় দো‘আ করলে তা কবুল হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন,أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ،
فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ ‘সিজদারত অবস্থায় বান্দা তার রবের সবচাইতে অধিক
নিকটবর্তী হয়। সুতরাং তোমরা (সিজদায়) বেশী বেশী দো‘আ করবে’।[29]
(১০) মোরগ ডাকার সময় :
মোরগ ডাকার সময় দো‘আ কবুল হয়। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,إِذَا سَمِعْتُمْ
صِيَاحَ الدِّيَكَةِ فَاسْأَلُوا اللهَ مِنْ فَضْلِهِ فَإِنَّهَا رَأَتْ
مَلَكًا- ‘যখন মোরগ ডাকে তখন তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। কেননা সে
ফেরেশতাকে দেখতে পায়’।[30]
(১১) দো‘আ ইউনুস পাঠ করার সময় : দো‘আ ইউনুস পাঠ করে দো‘আ করলে তা কবুল হয়। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
دَعْوَةُ ذِي النُّونِ إِذْ دَعَا بِهَا وَهُوَ فِي بَطْنِ الْحُوتِ: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ، فَإِنَّهُ لَنْ يَدْعُوَ بِهَا مُسْلِمٌ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلَّا اسْتَجَابَ لَهُ-
‘ইউনুসের
দো‘আ যখন তিনি মাছের পেটে থেকে বলেছিলেন যে, লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাক
ইন্নী কুনুত মিনায যালিমীন। কোন মুসলিম কখনো এটা পাঠ করে দো‘আ করলে তার
দো‘আ কবুল করা হবে’।[31]
(১২) বিপদে পতিত হয়ে ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন বললে : উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ تُصِيبُهُ مُصِيبَةٌ فَيَقُولُ مَا أَمَرَهُ اللهُ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ اللَّهُمَّ أْجُرْنِىْ فِىْ مُصِيبَتِى وَأَخْلِفْ لِى خَيْرًا مِنْهَا. إِلاَّ أَخْلَفَ اللهُ لَهُ خَيْرًا مِنْهَا- ‘যখন কোন মুসলিম বিপদে পতিত হবে তখন বলবে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। আল্লা-হুম্মা আজিরনী ফী মুছীবাতী ওয়া আখলিফ্লী খায়রাম মিনহা’।
অর্থ
: আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। হে
আল্লাহ! আমাকে আমার বিপদ হতে রক্ষা কর এবং এর চাইতে ভাল অবস্থানে আসীন কর’।[32]
(১৩) মৃত্যু আসন্ন ব্যক্তির রূহ কবযের সময়ে : এ সময় দো‘আ করলে আল্লাহ কবুল করেন। উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন,
دَخَلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى أَبِى سَلَمَةَ وَقَدْ شَقَّ بَصَرُهُ فَأَغْمَضَهُ ثُمَّ قَالَ إِنَّ الرُّوحَ إِذَا قُبِضَ تَبِعَهُ الْبَصَرُ. فَضَجَّ نَاسٌ مِنْ أَهْلِهِ فَقَالَ لاَ تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ إِلاَّ بِخَيْرٍ فَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ يُؤَمِّنُونَ عَلَى مَا تَقُولُونَ-
‘রাসূল (ছাঃ) আবূ সালামার ঘরে প্রবেশ করলেন। তার চোখ
দু’টি খোলা ছিল। তখন তিনি তার চোখ দু’টি বন্ধ করে দিয়ে বললেন, রূহ যখন কবয
করা হয় তখন চক্ষু তা দেখতে থাকে। তার পরিবারের একজন চিৎকার করে বলল, তোমরা
তোমাদের নিজেদের সম্পর্কে কল্যাণ ব্যতীত আর কিছুর জন্য দো‘আ করো না। কেননা
ফেরেশতাগণ তোমরা যা বল তার উপর ভিত্তি করে আমীন বলে থাকেন’।[33]
(১৪) রোগীর নিকটে দো‘আ করা :
রোগীর নিকটে উপস্থিত হয়ে দো‘আ করলে তা কবুল হয়। উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا حَضَرْتُمُ الْمَرِيضَ أَوِ الْمَيِّتَ
فَقُولُوا خَيْرًا فَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ يُؤَمِّنُونَ عَلَى مَا
تَقُولُونَ ‘যখন তোমরা রোগীদের নিকটে অথবা মৃতব্যক্তির নিকটে হাযির থাকবে
তখন ভাল ভাল কথা বলবে। কেননা সেসময় তোমরা যা বলবে, তাতেই ফেরেশতাগণ আমীন
বলতে থাকেন’। তিনি (উম্মে সালামাহ বললেন), যখন আবূ সালামাহ মারা গেলেন তখন
আমি রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গিয়ে বললাম, আবূ সালামাহ মারা গিয়েছেন। তখন তিনি
আমাকে বললেন,قُولِي اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَلَهُ وَأَعْقِبْنِي مِنْهُ
عُقْبًى حَسَنَةً قَالَتْ فَفَعَلْتُ فَأَعْقَبَنِي اللهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ
مِنْهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘বল, হে
আল্লাহ! আমাকে ও তাকে ক্ষমা করো। আর আমাকে উত্তম পরিণতি দান কর। তখন আমি
বললাম, এরপর আল্লাহ আমাকে তার চাইতে উত্তম ব্যক্তিকে দান করলেন। আর তিনি
হ’লেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)’।[34]
(১৫) মাযলূমের দো‘আ :
মাযলূম বা অত্যাচারিত ব্যক্তি দো‘আ করলে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়ে না। নবী করীম
(ছাঃ) বলেন, اتَّقِ دَعْوَةَ المَظْلُومِ فَإِنَّها لَيْسَ بَيْنَها
وَبَيْنَ اللهِ حِجابٌ ‘মাযলূমের দো‘আ হ’তে বেঁচে থাক। কারণ তার ও আল্লাহর
মাঝে কোন পর্দা নেই’।[35] নবী করীম (ছাঃ) আরো বলেছেন,دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ
مُسْتَجَابَةٌ، وَإِنْ كَانَ فَاجِرًا فَفُجُورُهُ عَلَى نَفْسِهِ
‘মাযলূমের দো‘আ কবুল করা হয়ে থাকে, যদিও সে পাপী হয়। তার পাপ তার নিজের
উপরে বর্তাবে’।[36]
(১৬) সন্তানের জন্য পিতার নেক দো‘আ, ছায়েমের ও মুসাফিরের দো‘আ :
সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দো‘আ এবং ছায়েম ও মুসাফিরের দো‘আ প্রত্যাখ্যাত
হয় না। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ لاَ تُرَدُّ دَعْوَةُ
الْوَالِدِ، وَدَعْوَةُ الصَّائِمِ وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ- ‘তিন ব্যক্তির
দো‘আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ১. সন্তানের জন্য পিতার দো‘আ। ২. ছায়েমের দো‘আ ও
৩. মুসাফিরের দো‘আ’।[37]
(১৭) সন্তানের বিরুদ্ধে পিতার বদ দো‘আ :
সন্তানের বিরুদ্ধে পিতার বদদো‘আ কবুল হয়। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ثَلَاثُ
دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ: دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ
وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ، ‘তিন ব্যক্তির দো‘আ কবুল করা হয়ে
থাকে। ১. মাযলূমের দো‘আ। ২. মুসাফিরের দো‘আ ও ৩. সন্তানের বিরুদ্ধে পিতার
বদ দো‘আ’।[38]
(১৮) মা-বাবার জন্য সৎ সন্তানের দো‘আ :
পিতামাতার জন্য সন্তানের দো‘আ কবুল হয়। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا مَاتَ
الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ
صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ
يَدْعُو لَهُ، ‘যখন কোন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তিনটি আমল ব্যতীত তার সবই
বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১. ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ বা প্রবাহমান দান। ২. অথবা এমন
ইলম যা উপকার প্রদান করে। ৩. অথবা সৎ সন্তান যে তার জন্য দো‘আ করে’।[39]
(১৯) যোহরের পূর্বে সূর্য পশ্চিমে হেলে যাওয়ার পর :
যোহরের পূর্বে সূর্য পশ্চিমে হেলে যাওয়ার পর দো‘আ করলে তা কবুল করা হয়।
আব্দুল্লাহ বিন সায়েব হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন,كَانَ يُصَلِّي أَرْبَعًا
بَعْدَ أَنْ تَزُولَ الشَّمْسُ قَبْلَ الظُّهْرِ وَقَالَ إِنَّهَا سَاعَةٌ
تُفْتَحُ فِيهَا أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَأُحِبُّ أَنْ يَصْعَدَ لِي فِيهَا
عَمَلٌ صَالِحٌ- ‘যোহরের পূর্বে রাসূল (ছাঃ) সূর্য পশ্চিামাকাশে হেলে
যাওয়ার পর চার রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। এটা এমন সময় যখন আকাশের দরজাগুলি
খুলে দেওয়া হয়। আর আমি চাই আমার নেক আমলগুলি এ সময়ে ঊর্ধ্বাকাশে উত্থিত
হোক’।[40]
(২০) রাতে ঘুম হ’তে জাগ্রত হওয়ার সময়ে : রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দো‘আ করলে তা কবুল হয়ে থাকে। ওবাদা ইবনুছ ছামিত (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেন,
مَنْ تَعَارَّ (أي : استيقظ) مِنَ اللَّيْلِ، فَقَالَ: لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، الحَمْدُ لِلَّهِ، وَسُبْحَانَ اللهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، ثُمَّ قَالَ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، أَوْ دَعَا، اسْتُجِيبَ لَهُ، فَإِنْ تَوَضَّأَ وَصَلَّى قُبِلَتْ صَلاَتُهُ-
‘যে ব্যক্তি রাতে জেগে উঠে এ দো‘আ পড়ে, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আলহাম্দুলিল্লা-হি ওয়া সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ। ‘এক আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। রাজ্য তাঁরই। যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই। তিনিই সব কিছুর উপরে শক্তিমান। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহরই জন্য, আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, আল্লাহ ব্যতীত সত্য ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান, গুনাহ থেকে বাঁচার এবং নেক কাজ করার কোন শক্তি নেই
আল্লাহর তাওফীক ব্যতীত। তারপর বলে, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। বা (অন্য কোন) দো‘আ করে, তাঁর দো‘আ কবুল করা হয়’।[41]
দো‘আ করার ফযীলত : দো‘আর ফযীলত অত্যধিক। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُو بِدَعْوَةٍ لَيْسَ فِيهَا إِثْمٌ وَلَا قَطِيعَةُ رَحِمٍ إِلَّا أَعْطَاهُ اللهُ بِهَا إِحْدَى ثَلَاثٍ: إِمَّا أَنْ يُعَجِّلَ لَهُ دَعْوَتَهُ وَإِمَّا أَنْ يَدَّخِرَهَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ وَإِمَّا أَنْ يَصْرِفَ عنهُ من السُّوءِ مثلَها قَالُوا: إِذنْ نُكثرُ قَالَ: الله أَكثر-
‘কোন মুসলিম দো‘আ করার সময় কোন গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দো‘আ না করলে অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা তাকে এ তিনটির একটি দান করেন। (১) হয়তো তাকে তার কাঙ্ক্ষিত বিষয় দুনিয়ায় দান করেন, (২) অথবা তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন (৩) অথবা তার মতো কোন অকল্যাণ বা বিপদাপদকে তার থেকে দূরে করে দেন। ছাহাবীগণ বললেন, তবে তো আমরা অনেক বেশী লাভবান হব। তিনি বললেন, আল্লাহ এর চেয়েও বেশী দেন’।[42]
পরিশেষে বলব, আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে ও ইখলাছ সহকারে প্রার্থনা করলে তিনি সে প্রার্থনা কবুল করেন এবং বান্দার প্রার্থিত বস্ত্ত দান করেন। তাই আমাদেরকে উপরোক্ত আদব সমূহ প্রতিপালনের মাধ্যমে যথাযথভাবে আল্লাহর কাছে দো‘আ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে দো‘আ করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
[1]. তিরমিযী হা/৩৩৭২; আবূদাউদ হা/১৪৭৯; ইবনু মাজাহ হা/৩৮২৮, হাদীছ ছহীহ।
[2]. ছহীহুল জামে‘ হা/১১২২; ছহীহাহ হা/১৫৭৯।
[3]. তিরমিযী হা/৩৪৭৬; নাসাঈ হা/১২৮৪, সনদ ছহীহ।
[4]. তিরমিযী হা/৩৪৭৭, ছহীহ তিরমিযী হা/২৭৬৫, ২৭৬৭।
[5]. তরাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত ১/২২০; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৩৯৯; ছহীহাহ হা/২০৩৫।
[6]. তিরমিযী হা/৪৮৬; ছহীহাহ হা/২০৫৩।
[7]. মুসলিম হা/১৭৬৩।
[8]. আবূদাউদ হা/১৪৮৮; ছহীহ আবূদাউদ হা/১৩২০।
[9]. আবূদাউদ হা/১৪৮৬; ছহীহ আবূদাউদ হা/১৩১৮।
[10]. আশ-শারহুল মুমতি‘ ৪/২৫।
[11]. আবূদাউদ হা/১৪৮৫; তিরমিযী হা/৩৪৭৯; ছহীহ তিরমিযী হা/২৭৬৬; ইবনু মাজাহ হা/৩৮৫৪, হাদীছ হাসান।
[12]. বুখারী হা/৬৩৪০; মুসলিম হা/২৭৩৫।
[13]. বুখারী হা/৬৩৩৯; মুসলিম হা/২৬৭৯।
[14]. বুখারী হা/২৪০; মুসলিম হা/১৭৯৪।
[15]. মুসলিম হা/১০১৫।
[16]. ইবনু রজব আল-হাম্বলী, জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম, ১ম খন্ড (বৈরূত : দারুল মারিফাহ, ১ম প্রকাশ, ১৪০৮ হিঃ), পৃঃ ২৯৩।
[17]. তিরমিযী হা/৩৫১৩, হাদীছ ছহীহ।
[18]. বুখারী হা/১১৪৫।
[19]. তিরমিযী হা/৩৪৯৯, হাদীছ হাসান।
[20]. যাদুল মা‘আদ ১/৩০৫।
[21]. আবূদাঊদ হা/৫২১; তিরমিযী হা/২১২; ছহীহুল জামে হা/২৪০৮।
[22]. ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল-লায়লা হা/৯৮; ছহীহুল জামে হা/৮০৩; ছহীহাহ হা/১৪১৩।
[23]. আবূদাঊদ হা/; ছহীহুল জামে হা/৩০৭৯।
[24]. বায়হাকী, মারিফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/৭২৩৬; ছহীহুল জামে‘ হা/১০২৬; ছহীহাহ হা/১৪৬৯।
[25]. আবূদাঊদ হা/২৫৪০; ছহীহুল জামে‘ হা/৩০৭৮।
[26]. মুসলিম হা/৭৫৭।
[27]. আবূদাউদ হা/১৩১৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৪৩।
[28]. বুখারী হা/৯৩৫।
[29]. মুসলিম হা/৪৮২।
[30]. বুখারী হা/২৩০৪; মুসলিম হা/২৭২৯।
[31]. তিরমিযী হা/৩৫০৫, হাদীছ ছহীহ।
[32]. মুসলিম হা/৯১৪।
[33]. মুসলিম হা/৯২০।
[34]. মুসলিম হা/৯১৯।
[35]. বুখারী হা/১৪৯৬; আবূদাঊদ হা/১৫৮৪।
[36]. তাবারানী, আদ-দো‘আ হা/১৩১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৮২।
[37]. বায়হাকী হা/৬৩৯২; ছহীহুল জামে‘ হা/৩০৩২।
[38]. তিরমিযী হা/৩৪৪৮।
[39]. মুসলিম হা/৪৩১০; তিরমিযী হা/১৩৭৬; নাসাঈ হা/৩৬৫১।
[40]. তিরমিযী হা/৪৭৮, হাদীছ ছহীহ।
[41]. বুখারী হা/১১৫৪।
[42]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭১০, হাদীছ হাসান।