নিজের ছেলের দাসী কিংবা ছেলের উম্মুল ওয়ালাদ[1]-এর সংগে ব্যভিচারী পিতার দন্ড বাতিলে তারা প্রমাণ দিয়েছেন রাসূল (ছাঃ)-এর এই বাণী দিয়ে যে, أَنْتَ وَمَالُكَ لِأَبِيكَ ‘তুমি ও তোমার ধস-সম্পদ তোমার পিতার’।[2] কিন্তু তারা এই হাদীছের মর্মের বিরোধিতা করে বলেছেন, ‘স্বীয় পুত্রের সম্পদে পিতার কোন অধিকার নেই বরং পুত্রের সম্পদ থেকে আরাক গাছের ডাল (যা দিয়ে মেসওয়াক করা হয়) কিংবা তার থেকেও ক্ষুদ্র কিছু পর্যন্ত নেওয়া তার জন্য জায়েয হবে না’। এছাড়াও তারা পুত্রের ঋণের জন্য পিতাকে আটক করা এবং তার কোন সম্পদ নষ্ট করলে এর ক্ষতিপূরণ দেওয়া পিতার উপর আবশ্যক বলেছেন।
ইকামতদাতা যখন قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ ‘ক্বাদ ক্বামাতিছ ছালাহ’ বলবে ইমাম তখন তাকবীরে তাহরীমা বলবে-এ কথার পক্ষে তারা বিলাল (রাঃ)-এর হাদীছ দ্বারা দলীল দেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলেছিলেন, لَا تَسْبِقُنِي بِآمِينَ ‘আপনি আমার আগে আমীন বলবেন না’।[3] অনুরূপভাবে আবূ হুরায়রা (রাঃ) মারওয়ানকে বলেছিলেন, لَا تَسْبِقُنِي بِآمِينَ ‘আপনি আমার আগে আমীন বলবেন না’।[4] তারপর তারা উচ্চৈঃস্বরে পঠিত ক্বিরাআতের ছালাতে এই হাদীছের বিরোধিতা করে বলেছেন, لَا يُؤَمِّنُ الْإِمَامُ وَلَا الْمَأْمُومُ ‘তাতে না ইমাম আমীন বলবে, না মুক্তাদী’।
তারা মুগীরা ইবনু শু‘বাহর হাদীছ দ্বারা মাথার
চার ভাগের এক ভাগ মাসাহ করা ফরয হওয়ার দলীল দেন। তিনি বলেন যে,أَنَّ
رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَسَحَ بِنَاصِيَتِهِ
وَعِمَامَتِهِ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর মাথার সামনের অংশ ও পাগড়ির উপর
মাসাহ করলেন’।[5]
তারপর তারা হাদীছটির নির্দেশিত বিষয় উপেক্ষা করে বলেন,لَا يَجُوزُ الْمَسْحُ عَلَى الْعِمَامَةِ، وَلَا أَثَرَ لِلْمَسْحِ عَلَيْهَا أَلْبَتَّةَ ‘পাগড়ির উপর মাসাহ করা জায়েয হবে না। পাগড়ির উপর মাসেহর নিশ্চিতই কোনো কার্যকারিতা নেই’।[6] কারণ মাথার সম্মুখভাগ মাসাহ করলেই ফরয আদায় হয়ে যায়। তাদের মতে পাগড়ির উপর মাসাহ না ফরয, না মুস্তাহাব।
তারা
ইমামের অনুগমন মুস্তাহাবের পেছনে দলীল দেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ ‘ইমাম নিযুক্ত করা হয়েছে তার
অনুসরণের জন্য’।[7] তারা বলেন, ‘ইমামের অনুসরণ’ কথাটি দাবী করে যে, তার
প্রতিটি কাজ মুক্তাদী সমান তালে করবে। তারপর তারা হাদীছটির নির্দেশনা
উপেক্ষা করে যান। কেননা ঐ হাদীছেই আছে, فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا،
وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوا، وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
فَقُولُوا: رَبَّنَا وَلَك الْحَمْدُ، وَإِذَا صَلَّى جَالِسًا فَصَلُّوا
جُلُوسًا أَجْمَعُون ‘সুতরাং যখন সে তাকবীর বলবে তখন তোমরাও তাকবীর বলবে;
যখন সে রুকূ‘ করবে তখন তোমরাও রুকূ‘ করবে; যখন সে ‘সামি‘আল্লাহু লিমান
হামিদাহ’ বলবে তখন তোমরা বলবে ‘রববানা ওয়া লাকাল হামদ’; আর যখন সে বসে
ছালাত আদায় করবে তখন তোমরাও সবাই বসে ছালাত আদায় করবে’।[8]
তারা
ছালাতে ভুলকারীর হাদীছ দ্বারা ছালাতে সূরা ফাতেহা পাঠ অবধারিত না হওয়ার
দলীল দেন- যাতে রাসূল (ছাঃ) তাকে বলেছিলেন, اقْرَأْ مَا تَيَسَّرَ مَعَك
مِنْ الْقُرْآنِ ‘কুরআন থেকে যতটুকু তোমার জোটে বা সহজ হয়, তুমি ততটুক
পড়বে’।[9]
কিন্তু তারাই আবার হাদীছের সরাসরি ও সুস্পষ্ট বক্তব্য লংঘন করছেন। ঐ হাদীছে এসেছে, ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَعْتَدِلَ قَائِمًا، ثُمَّ اُسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ‘তারপর তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত রুকূ‘তে থাকবে যতক্ষণ না তুমি স্থিরতার সাথে রুকূ‘ করবে; তারপর তুমি ততক্ষণ মাথা তুলে থাকবে যতক্ষণ না স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে; তারপর তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত সিজদারত থাকবে যতক্ষণ না তুমি স্থিরতার সাথে সিজদা সম্পন্ন করবে’।[10] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঐ ভুলকারীকে বলেছিলেন, ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّك لَمْ تُصَلِّ ‘তুমি পুনরায় ছলাত আদায় কর। কেননা তোমার ছালাত আদায় হয়নি’।[11]
কিন্তু তারা বলছেন, ‘যে ব্যক্তি স্থিরতা পরিহার করে দ্রুত ছালাত আদায় করবে তার ছালাত হয়ে যাবে। স্থিরতার উক্ত আদেশ ফরয ও আবশ্যিক নয়’। অথচ হাদীছটিতে একই সাথে স্থিরতা অবলম্বন ও ক্বিরাআত পাঠের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
তারা আবু হুমায়েদ (রাঃ)-এর হাদীছ দ্বারা ‘জালসায়ে ইস্তেরাহাত’ ‘আরামের বৈঠক’-কে বাতিল করে দিয়েছে।[12] কেননা আবু হুমায়েদ (রাঃ)-এর হাদীছে ‘আরামের বৈঠক’-এর উল্লেখ নেই।[13] অথচ ঐ একই হাদীছে রুকূ‘তে যাওয়ার ও রুকূ‘ থেকে মাথা তোলার সময় হাত তোলার উল্লেখ রয়েছে; কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেননি।
ছালাতে
নবী (ছাঃ)-এর উপর ছালাত ও সালাম পাঠ ফরয হওয়াকে তারা ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর
হাদীছের বরাতে বাতিল করে দিয়েছেন। ইবনু মাসঊদের হাদীছে আছে, فَإِذَا قُلْتَ
ذَلِكَ فَقَدْ تَمَّتْ صَلَاتُكَ ‘যখন তুমি উহা (তাশাহহুদ) বলবে তখনই
তোমার ছালাত পূর্ণ হয়ে যাবে’।[14]
তারপর তারা খোদ হাদীছের কথাই উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘সে তাশাহহুদ না বললেও তার ছালাত পূর্ণ হয়ে যাবে’।
জুম‘আর দিনে ইমামের মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুৎবা দান কালে কথা বলার বৈধতার উপর তারা দলীল দেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খুৎবা দান কালে জনৈক প্রবেশকারীকে বলেন, أَصَلَّيْتَ يَا فُلَانٌ قَبْلَ أَنْ تَجْلِسَ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: قُمْ فَارْكَعْ رَكْعَتَيْنِ ‘হে ‘অমুক! তুমি কি বসার আগে ছালাত আদায় করেছ? সে বলে, ‘না’। তিনি বলেন, ‘ওঠো এবং দু’ রাক‘আত আদায় কর’।[15] কিন্তু তারা হাদীছটির মূল নির্দেশেরই বিপরীতে গিয়ে বলেন, ‘ইমামের খুৎবা দান কালে যে মসজিদে ঢুকবে সে ছালাত না পড়ে বসে পড়বে’।
ছালাতে
দু’হাত তোলাকে তারা মাকরূহ বা অপসন্দনীয় ভাবেন। তারা দলীলে বলেন যে,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا بَالُهُمْ رَافِعِي أَيْدِيهِمْ كَأَنَّهَا
أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمُسٍ ‘তাদের হ’ল কি? তারা খালিই তাদের হাত তুলছে, যেন
অবাধ্য ঘোড়া লেজ ওঠাচ্ছে আর নামাচ্ছে?’[16]
তারপর
তারা হাদীছটির মূল নির্দেশেরই বিরোধিতা করেন। কেননা ঐ হাদীছে আছে,إنَّمَا
يَكْفِي أَحَدَكُمْ أَنْ يُسَلِّمَ عَلَى أَخِيهِ مِنْ عَنْ يَمِينِهِ
وَشِمَالِهِ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ، السَّلَامُ
عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ الله ‘তোমাদের কারও জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে
ডানে-বাঁয়ে তার ভাইকে সালাম জানাবে- ‘আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’,
‘আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’।[17]
তারা বলেন, ‘ছালাত শেষ করার জন্য সালাম বলার দরকার নেই; বরং ছালাত ভঙ্গ হয় এমন যে কোন কাজ করলেই মুছল্লীর জন্য যথেষ্ট হবে’।
ইমামের
ওযূ ছুটে গেলে কাউকে স্থলাভিষিক্ত করার বৈধতা সম্পর্কে তারা একটি ছহীহ
হাদীছের উদ্ধৃতি দেন যে,أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ خَرَجَ وَأَبُو بَكْرٍ يُصَلِّي بِالنَّاسِ فَتَأَخَّرَ أَبُو
بَكْرٍ، وَتَقَدَّمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى
بِالنَّاسِ ‘আবূবকর (রাঃ) লোকদের ইমামতি করছিলেন, এমন সময় রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) হাযির হন। তখন আবূবকর (রাঃ) পিছিয়ে যান এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এগিয়ে
গিয়ে লোকেদের ইমামতি করেন’।[18]
তারপর তারাই আবার হাদীছের বিরোধিতা করে বলেছেন, ‘যে এমন কাজ করবে তার ছালাত বাতিল হয়ে যাবে’। দেখুন! তারা নবী (ছাঃ), আবূবকর (রাঃ) ও ছাহাবীদের কাজের ন্যায় যে কাজ করবে তার ছালাত বাতিল করে দিচ্ছেন; আর হাদীছ যা বুঝায় না তাকে দিয়ে তার প্রমাণ দিচ্ছেন, অথচ হাদীছ যা বুঝায় তার উপর আমল বাতিল করে দিচ্ছেন।
তারা
বলেন, ‘অসুস্থতার জন্য ইমাম ছালাতে বসে ইমামতী করলেও মুক্তাদীরা দাঁড়িয়ে
ছালাত আদায় করবে’। কেননা ছহীহ হাদীছে এসেছে, أَنَّهُ خَرَجَ فَوَجَدَ أَبَا
بَكْرٍ يُصَلِّي بِالنَّاسِ قَائِمًا، فَتَقَدَّمَ النَّبِيُّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَلَسَ وَصَلَّى بِالنَّاسِ؛ وَتَأَخَّرَ أَبُو
بَكْر- ‘নবী (ছাঃ) মসজিদে এসে আবূবকর (রাঃ)-কে লোকদের ছালাতে দাঁড়িয়ে
ইমামতী করা অবস্থায় পেলেন। তিনি তখন সামনে গিয়ে বসলেন এবং লোকদের ইমামতী
করলেন, আর আবূবকর (রাঃ) পিছিয়ে এলেন’।[19]
তারপর
তারা হাদীছের মূলভাষ্যেরই বিরোধিতা করে বলেন, ‘পবিত্রতা ভঙ্গের কারণ
ব্যতীত ইমাম পিছিয়ে এলে এবং অন্য কেউ এগিয়ে এলে উভয় ইমামের এবং সকল
মুক্তাদীর ছালাত বাতিল হয়ে যাবে’।[20]
যে
ছায়েম রাত আছে মনে করে খেয়ে নিল এবং পরে প্রকাশ পেল যে, দিন হয়ে গেছে তার
ছিয়াম বাতিল হওয়ার প্রমাণ দিতে গিয়ে তারা বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন,إنَّ بِلَالًا يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ، فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى
يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُوم ‘নিশ্চয়ই বিলাল রাতে আযান দেন, সুতরাং
তোমরা খানাপিনা চালিয়ে যাও যে পর্যন্ত না ইবনু উম্মে মাকতূম আযান দেন’।[21]
তারপর তারা হাদীছের নির্দেশনার বিপরীতে গিয়ে বলছেন, ‘ফজরের আযান রাতে দেওয়া জায়েয নেই-না রমযানে, না রমযানের বাইরে। তারা আরেক দিক দিয়েও হাদীছটির বিরোধিতা করেছেন। কেননা খোদ হাদীছে আছে, وَكَانَ ابْنُ مَكْتُومٍ رَجُلًا أَعْمَى لَا يُؤَذِّنُ حَتَّى يُقَالَ لَهُ : أَصْبَحَتْ أَصْبَحَتْ- ‘ইবনু উম্মে মাকতূম একজন অন্ধ মানুষ ছিলেন। তাকে ‘ভোর হয়ে গেছে, ভোর হয়ে গেছে’ না বলা পর্যন্ত তিনি আযান দিতেন না’।[22] অথচ তাদের মতে এ সময়ে খানাপিনা করলে ছিয়াম বাতিল হয়ে যায়।
পায়খানাকালে
ক্বিবলাকে সামনে রেখে কিংবা পশ্চাতে রেখে বসা নিষিদ্ধ হওয়ার পক্ষে তারা
দলীল দেন যে, নবী (ছাঃ) বলেছেন, لَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ بِغَائِطٍ
وَلَا بَوْلٍ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا- ‘তোমরা পায়খানা ও পেশাবকালে না
ক্বিবলামুখী হয়ে বসবে, না কিবলা পশ্চাতে রেখে বসবে’।[23]
তারপর তারা হাদীছের বিরুদ্ধে গিয়ে ক্বিবলার দিকে মুখ করে কিংবা কিবলাকে পিছনে রেখে পেশাব করা জায়েয বলেছেন।[24]
তারা
‘ই‘তিকাফকালে ছিয়াম রাখা শর্ত নয়’-বলে একটি ছহীহ হাদীছ দ্বারা দলীল দেন।
ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, أَنَّهُ نَذَرَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ أَنْ
يَعْتَكِفَ لَيْلَةً فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ، فَأَمَرَهُ رَسُولُ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُوفِيَ بِنَذْرِه- ‘তিনি জাহেলী
যামানায় মাসজিদুল হারামে এক রাত ই‘তিকাফের মানত করেছিলেন। ফলে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) তাকে তার ঐ মানত পূরণের আদেশ দিয়েছিলেন’।[25]
অথচ ঐ হাদীছ তারা বলে না। কেননা তাদের মতে, কাফেরের মানত সিদ্ধ নয় এবং তার ইসলাম গ্রহণের পর তা পূরণ করাও যরূরী নয়।
তারা রদের[26]
ক্ষেত্রে একটি হাদীছ দলীল হিসাবে বলেন যে, নবী (ছাঃ) বলেছেন,تَحُوزُ
الْمَرْأَةُ ثَلَاثَ مَوَارِيثَ؛ عَتِيقَهَا، وَلَقِيطَهَا، وَوَلَدَهَا
الَّذِي لَاعَنَتْ عَلَيْهِ ‘স্ত্রীলোক তিন শ্রেণীর লোকের (সরাসরি) ওয়ারিছ
হ’তে পারবে। (১) তার আযাদকৃত দাস-দাসীর। (২) তার পথে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুর
(যাকে সে পেয়ে লালন-পালন করেছে) এবং (৩) তার গর্ভজাত সেই সন্তানের, যার
জন্য সে স্বামীর সাথে লি‘আনে[27] প্রবৃত্ত হয়েছিল।[28]
হাদীছে বর্ণিত কুড়িয়ে পাওয়া শিশুর সম্পদের ওয়ারিছ প্রাপক স্ত্রীলোকের হওয়ার কথা তারা বলেন না। অথচ ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) ও ইসহাক বিন রাহওয়াইহ তার ওয়ারিছ হওয়ার কথা বলেন। আর সেটাই সঠিক।
তারা আত্মীয়দের ওয়ারিছ গণ্য করতে সেই
হাদীছকে দলীল গণ্য করেছেন, যাতে আছে, الْتَمِسُوا لَهُ وَارِثًا أَوْ ذَا
رَحِمٍ فَلَمْ يَجِدُوا، فَقَالَ : أُعْطُوهُ الْكُبْرَ مِنْ خُزَاعَة-
‘তোমরা তার জন্য একজন ওয়ারিছ অথবা আত্মীয় তালাশ কর। তারা কাউকে না পাওয়ায়
তিনি বললেন, ঐ ওয়ারিছী স্বত্ব বনু খুযা‘আর সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ ব্যক্তিকে
দাও’।[29]
কিন্তু তারা হাদীছ অনুযায়ী যে মৃতের কোন ওয়ারিছ নেই তার সম্পদ তার গোত্রের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষকে দেওয়ার পক্ষে মত দেন না।
তারা
আমর বিন শু‘আইব কর্তৃক তার পিতার মাধ্যমে দাদা থেকে বর্ণিত হাদীছ দ্বারা
দলীল দেন যে, ‘হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির ওয়ারিছ হবে না’। উক্ত হাদীছে
আছে,لَا يَرِثُ قَاتِلٌ، وَلَا يُقْتَلُ مُؤْمِنٌ بِكَافِر- ‘হত্যাকারী
ওয়ারিছ হবে না এবং কোন মুমিনকে কাফেরের হত্যার দরুন হত্যা করা যাবে না’।[30] তারা হাদীছের প্রথম অংশ মানেন, কিন্তু দ্বিতীয় অংশ মানেন না।[31]
[চলবে]
[1]. যে দাসী তার মনিবের ঔরসে সন্তান জন্ম দেয় তাকে উম্মুল ওয়ালাদ বলে।-অনুবাদক।
[2]. আবূদাঊদ হা/৩৫৩০।
[3]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২৬৩৬; আবূদাঊদ হা/৯৩৭। এ সকল বর্ণনায় কথক বিলাল (রাঃ); কিন্তু আহমাদ ও বায়হাক্বীর বর্ণনায় কথক হ’লেন নবী (ছাঃ)। দেখুন : আহমাদ হা/২৩৮৮৩ ও বায়হাক্বী হা/২২৮৯। বায়হাক্বী বলেছেন, বিলাল যেন নবী (ছাঃ)-এর আগে আমীন বলে উঠতেন; তাই নবী (ছাঃ) তাকে বলেন, তুমি আমার আগে আমীন বল না। বিস্তারিত দেখুন : টীকা নং ২, পৃ. ৫০২।
[4]. বায়হাক্বী হা/২২৯৮, সনদ ছহীহ। বুখারী তার ‘ছহীহ’তে ‘তা‘লীক’ আকারে উল্লেখ করেছেন হা/৭৮০-এর পূর্বে; আবূ হুরায়রা উচ্চৈঃস্বরে ইমামকে বলতেন, আমাকে আমীন বলায় বিপদে ফেলবে না। দেখুন : মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক ২/৯৬।
[5]. মুসলিম হা/২৭৪।
[6]. অর্থাৎ পাগড়ির উপর মাসাহ করলে মাথা মাসাহর ফরয আদায় হবে না, বিধায় ওযূ হবে না। -অনুবাদক।
[7]. বুখারী হা/৭৩৪; মুসলিম হা/৪১৪, ৪১৫, ৪১৭।
[8]. ঐ।
[9]. বুখারী হা/৭৫৭, ৭৯৩; মুসলিম হা/৩৯৭।
[10]. ঐ।
[11]. ঐ।
[12]. দুই সিজদার পর সোজা উঠে না দাঁড়িয়ে একটু বসে তারপর ওঠাকে ‘আরামের বৈঠক’ বলে।-অনুবাদক।
[13]. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাতের পদ্ধতি বর্ণনায় আবু হুমায়েদ (রাঃ)-এর হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে আবূদাঊদ হা/৭৩০, ৭৩৩, ৭৩৪; তিরমিযী হা/৩০৪; ইবনু মাজাহ হা/১০৬১ প্রভৃতি গ্রন্থ সমূহে।
[14]. উক্তিটি কি নবী (ছাঃ)-এর নাকি ইবনু মাসঊদের তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। বিস্তারিত দেখুন : টীকা নং ২, পৃ. ৫০৪।
[15]. বুখারী হা/৯৩০, ৯৩১; মুসলিম হা/৮৭৫।
[16]. মুসলিম হা/৪৩১।
[17]. ঐ।
[18]. বুখারী হা/৬৮৪, ১২০১, ১২১৮, ২৬৯০, ৭১৯০; মুসলিম হা/৪২১।
[19]. বুখারী হা/৬৬৪; মুসলিম হা/৪১৮।
[20]. পবিত্রতা ভঙ্গের দরুণ আবূবকর (রাঃ) পিছিয়ে আসেননি, বরং নবী (ছাঃ)-এর জন্য তিনি পিছিয়ে এসেছিলেন।-অনুবাদক।
[21]. বুখারী হা/৬১৭, ৬২০, ৬২৩, ১৯১৮; মুসলিম হা/১০৯২।
[22]. ঐ।
[23]. বুখারী হা/১৪৪; মুসলিম হা/২৬৪।
[24]. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) পেশাব-পায়খানা কালে ক্বিবলাকে সামনে করে ও ক্বিবলাকে পিছনে রেখে উভয়ভাবে বসা অবৈধ হওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি খোলা স্থান কিংবা শৌচাগারের মধ্যে কোন পার্থক্য করেননি। যাদুল মা‘আদ ১/৮, ২/৮; তাহযীবুস-সুনান ১/২২, ২৩; মাদারিজুস সালিকীন ২/৩৮৬। শায়খ আলবানী (রহঃ)ও এই মতকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ছহীহা হা/২২৩।
[25]. বুখারী হা/২০৩২, ২০৪২, ২০৪৩; মুসলিম হা/১৬৫৬।
[26]. রদ ফারায়েযের একটি বিধান। যাবিল ফুরুযদের অংশ প্রদানের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য।-অনুবাদক।
[27]. কোন পুরুষ নিজ স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সাথে যেনায় লিপ্ত দেখে, যার প্রতক্ষ্যদর্শী সে নিজেই। কিন্তু ব্যভিচারের শাস্তি সাব্যস্ত করার জন্য চারজন সাক্ষীর প্রয়োজন। সে কারণে নিজের সঙ্গে অতিরিক্ত তিনজন সাক্ষী সংগ্রহ না করতে পারলে স্ত্রীর উপর ব্যভিচারের শাস্তি প্রয়োগ করা যাবে না। কিন্তু নিজের চোখে দেখার পর এ রকম অসতী স্ত্রী নিয়ে সংসার করাও সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় শরী‘আতে এর সমাধান দিয়েছে যে, স্বামী আদালতে কাযীর সামনে চারবার আল্লাহর নামে কসম (শপথ) করে বলবে যে, সে তার স্ত্রী উপর ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়ায় সত্যবাদী। অথবা স্ত্রীর এই সন্তান বা গর্ভ তার নয়। আর পঞ্চমবারে বলবে যে, আমি যদি এ ব্যাপারে মিথ্যাবাদী হই, তাহ’লে আমার উপর আল্লাহর অভিশাপ হোক। (অনুরূপ স্ত্রীও নিজের উপর লা‘নত বা অভিশাপ দেবে। স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের এই লা‘নত করাকে লি‘আন বলা হয় (বিস্তারিত দ্রঃ ফিকহুস সুন্নাহ ২/৩১৬)।-অনুবাদক।
[28]. আবূদাঊদ হা/২৯০৬; তিরমিযী হা/২১১৫; নাসাঈ হা/৬৩৬০, ৬৩৬১; ইবনু মাজাহ হা/২৭৪২; ত্বাহাবী, মুশকিলুল আছার হা/২৭৮০, ৫১৩৬, ৫১৩৭।
[29]. আবূদাঊদ তায়ালিসী হা/১৪৪৩; আবূদাঊদ হা/২৯০৩, ২৯০৪; নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/৬৩৯৪, ৬৩৯৫, ৬৩৯৬।
[30]. আবূদাঊদ হা/৪৫৬৪; তাবারানী, আল-আওসাত হা/৮৮৪; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫৭০; তিরমিযী হা/১৪১৩; ইবনু মাজাহ হা/২৬৫৯; ইবনু খুযায়মা হা/২২৮০।
[31]. ইগাছাতুল লাহফান ১/৩৭৩।