তাক্বদীরের ফায়ছালায় সন্তুষ্ট থাকার স্বরূপ

ভূমিকা :

তাক্বদীর বিশ্বজগতের সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে। মানবজীবনের সকল কার্যক্রম ও ঘটনাবলী আল্লাহর নির্ধারিত তাক্বদীর অনুযায়ী সংঘটিত হয়। তাক্বদীরের ফায়ছালা ছাড়া গাছের একটা পাতাও পড়ে না। তাক্বদীরে যা নির্ধারিত আছে, সেটা ঘটবেই। চাই তা ভালো হোক বা মন্দ হোক। তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের অপরিহার্য দাবী। আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্যের প্রতি যার বিশ্বাস যত দৃঢ় হয়, তার জীবন ততটাই প্রশান্তিময় হয়ে ওঠে। বক্ষমান নিবন্ধে তাক্বদীরের ফায়ছালার প্রতি সন্তুষ্ট হওয়ার ব্যাপারে আলোকপাত করা হবে ইনশাআল্লাহ।

তাক্বদীরের পরিচয় :

তাক্বদীর (التَّقْدِيْرُ) আরবী শব্দ। যার অর্থ ভাগ্য, নিয়তি, অদৃষ্ট। ঈমানের ছয়টি রুকনের মধ্যে অন্যতম হ’ল- তাক্বদীরের ভাল ও মন্দ বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। অর্থাৎ আল্লাহ বান্দার তাক্বদীরে যা কিছু নির্ধারণ করেছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকা এবং উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে নির্দ্বিধায় তা মেনে নেওয়া।[1] এটা আল্লাহর রুবূবিয়াতের অংশ। সুতরাং তাক্বদীরকে না মানলে বা এর ব্যাপারে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করলে বান্দার ঈমান নষ্ট হয়ে যায় এবং সে ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে যায়। সুতরাং তাক্বদীরের প্রতি ঈমান আনা ফরযে আইন।

ক্বদর ও ক্বাযার মধ্যকার সম্পর্ক ও পার্থক্য :

তাক্বদীরের আরো দু’টি প্রতিশব্দ হ’ল ক্বদর (القَدْرُ) ও ক্বাযা (القَضَاءُ)। তাক্বদীর সম্পর্কিত আলোচনা করার আগে এ দু’টি শব্দের পরিচয়, সম্পর্ক ও পার্থক্য জেনে নেওয়া খুবই যরূরী।

(ক) ক্বদর (القَدْرُ) শব্দের অর্থ হ’ল ভাগ্য, নিয়তি, অদৃষ্ট, পরিমাণ, পরিমাপ ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন,إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ ‌خَلَقْنَاهُ ‌بِقَدَرٍ، ‘আমরা সবকিছু সৃষ্টি করেছি পরিমাণ মত’ (ক্বামার ৫৪/৪৯)। একই মর্মে অন্যত্র তিনি বলেন, وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِمِقْدَارٍ- ‘তাঁর নিকটে প্রত্যেক বস্ত্তরই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে’ (রা‘দ ১৩/৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, كَتَبَ اللهُ مَقَادِيرَ الْخَلَائِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ، ‘আল্লাহ আকাশ-যমীন সৃষ্টি করার পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বে সৃষ্টিকূলের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেছেন’।[2] অন্যত্র তিনি বলেন,كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى الْعَجْزُ وَالْكَيْسُ- ‘প্রত্যেক বস্ত্তই তাক্বদীর মোতাবেক হয়ে থাকে। এমনকি অক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা’।[3]

(খ) আর ক্বাযা (القَضَاءُ) শব্দের অর্থ হ’ল বিচার (الحُكْمُ), ফায়ছালা (الفَصْلُ), রায়, সম্পাদন, পরিসমাপ্তি ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন,إِنَّ رَبَّكَ هُوَ ‌يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ، ‘নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক ক্বিয়ামতের দিন তাদের মতভেদের বিষয়গুলিতে তাদের মধ্যে ফায়ছালা করে দিবেন’ (সাজদাহ ৩২/২৫)

ইবনু বাত্তাল বলেন, ‌القضاء ‌هو ‌الـمَقْضِيُّ ‘ক্বাযা হচ্ছে ফায়ছালাকৃত বা সম্পাদিত’।[4] ড. সুলায়মান আল-আশক্বার বলেন, مراده بالمقضي المخلوق ‘মাক্বযিউন অর্থ হ’ল সৃষ্ট’।[5] রাগেব ইছফাহানী (মৃ. ৫০২হি.) বলেন,القدر هو التّقدير، والقضاء ‌هو ‌الفصل ‌والقطع، ‘ক্বদর হচ্ছে তাক্বদীর, আর ক্বাযা হ’ল ফায়ছালা, সুনিশ্চিত ব্যাপার’।[6] আল্লাহ বলেন, وَكَانَ أَمْرًا ‌مَقْضِيًّا، ‘আর এ বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত’ (মারিয়াম ১৯/২১)। আল্লাহ বলেন, ‌وَاللهُ ‌يَقْضِي ‌بِالْحَقِّ ‘আর আল্লাহ যথার্থভাবে ফায়ছালা করেন’ (মুমিন ৪০/২০)। আল্লাহ বলেন, لِيَقْضِيَ اللهُ أَمْراً كَانَ مَفْعُولاً، ‘আল্লাহ (উভয় দলকে যুদ্ধে সমবেত করার) এমন একটি কাজ সম্পন্ন করতে চেয়েছিলেন, যা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল’ (আনফাল ৮/৪২)

এখন প্রশ্ন হ’ল- ক্বদর ও ক্বাযা কি একই বিষয়, নাকি ভিন্ন বিষয়। এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে অগ্রগণ্য মত হচ্ছে,أن القدر: هو تقدير لشيء قبل قضائه. والقضاء هو الفراغ من الشيء ‘তাক্বদীর হ’ল কোন কিছুর নির্দেশ বা ফায়ছালা দেওয়ার আগে যা নির্ধারণ করা হয় সেটা। আর ক্বাযা বা ফায়ছালা হ’ল- সে কাজ শেষ করা’।[7]

শায়খ মুহাম্মাদ ছালেহ আল-উছায়মীন (রহঃ) বলেন, فالتقدير: هو ما قدره الله تعالى في الأزل أن يكون في خلقه (بناء على علمه السابق). وأما القضاء؛ فهو ما قضى به الله سبحانه وتعالى في خلقه ‌من ‌إيجاد ‌أو ‌إعدام ‌أو ‌تغيير، وعلى هذا يكون التقدير سابقًا- ‘অনাদিকালে আল্লাহ কর্তৃক (তাঁর পূর্ব জ্ঞানানুসারে) তাঁর সৃষ্টিজগতে যা হবে, তা নির্ধারণ করা হ’ল তাক্বদীর। আর ক্বাযা বা ফায়ছালা হ’ল মহান আল্লাহ কর্তৃক তাঁর সৃষ্টিজগতের মধ্যে কোন কিছুর অস্তিত্ব দেওয়া, বিলীন করা অথবা পরিবর্তন করা। এর ভিত্তিতেই তাক্বদীরের অবস্থান (ফায়ছালার) পূর্বে হয়ে থাকে’।[8] শায়খ উছায়মীন (রহঃ) আরো বলেন,فالقدر تقدير الله تعالى الشيء في الأزل، والقضاء قضاؤه به عند وقوعه، ‘তাক্বদীর হ’ল- অনাদিকালে কোন কিছুর ব্যাপারে আল্লাহর নির্ধারিত সিদ্ধান্ত। আর ক্বাযা বা ফায়ছালা হ’ল কোন কিছু সংঘটিত হওয়ার সময় আল্লাহর সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন’।[9]

বিষয়টি সুস্পষ্ট করতে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে-

মনে করুন! কোন এক ছাত্র পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করবে, এটা মহান আল্লাহ আকাশ-যমীন সৃষ্টি করার পঞ্চাশ হাযার বছর আগেই নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ কর্তৃক এই নির্ধারণকে বলা হয় ‘তাক্বদীর’ বা ক্বদর। আর যখন সেই তাক্বদীর অনুযায়ী আল্লাহর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে, অর্থাৎ সেই ছাত্রের পিএইচ.ডি ডিগ্রি সম্পন্ন হবে, তখন সেটা বলা হবে ‘ক্বাযা’ বা ফায়ছালা (আল্লাহর সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন)।

ইমাম ইবনুল আছীর (রহঃ) বলেন,القَضاء والقَدَر ‌أَمْرَانِ ‌مُتَلازِمان ‌لَا ‌يَنْفَك ‌أحدُهما عَنِ الآخَر، لِأَنَّ أحدَهُما بمَنْزلة الْأَسَاسِ وَهُوَ القَدَر، والآخَرَ بِمَنْزِلَةِ البِناء وَهُوَ القَضاء، فَمَنْ رَامَ الْفَصْلَ بَيْنَهُمَا، فَقَدْ رَامَ هَدْم البِناء ونَقْضَه، ‘ক্বাযা ও ক্বদর দু‘টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত বিষয়, যার একটি আরেকটি থেকে পৃথক করা সম্ভব নয়। কেননা তার একটি হ’ল ভিত্তি তুল্য, যাকে বলা হয় ক্বদর বা তাক্বদীর। আর আরেকটি হ’ল ভবন তুল্য, যাকে বলা হয়, ক্বাযা বা ফায়ছালা। সুতরাং যে কেউ এ দু’টির মধ্যে পার্থক্য করতে চাইবে, সে অবশ্যই ভবন ভাঙ্গার ও নষ্ট করার ইচ্ছাই করবে’।[10]

ইমাম ইবনু বায (রহঃ) সহ অনেকের মতে, ক্বদর ও ক্বাযা শব্দদ্বয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।[11] কেউ কেউ বলেন, তাক্বদীর ও ফায়ছালার মধ্যকার এই অর্থগত পার্থক্য কেবল তখনই ধর্তব্য হবে, যখন শব্দ দু’টি একসাথে উল্লেখ করা হবে। তখন প্রত্যেকটি তার নিজস্ব বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু এ শব্দদ্বয়কে যখন আলাদাভাবে উল্লেখ করা হবে, তখন ক্বদর বলতে ক্বাযাকেও বুঝাবে এবং ক্বাযা বলতে ক্বদকেও বুঝাবে।[12] যেমন শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন,القضاء إذا أطلق شمل القدر، والقدر إذا أطلق شمل القضاء، ولكن إذا قيل: القضاء والقدر صار بينهما فرق، ‘ক্বাযা যখন পৃথকভবে বর্ণিত হবে, তখন ক্বদরকেও শামিল করবে। আর যখন ক্বদর পৃথকভাবে উল্লেখ করা হবে, তখন ক্বাযাকেও শামিল করবে। কিন্তু যখন ক্বাযা ও ক্বদর একসাথে বলা হবে, তখন শব্দ দু’টির মাঝে (মর্মগত) পার্থক্য সূচিত হবে’।[13]

শায়খ আব্দুল আযীয আলে শায়েখ (হাফি.) বলেন,القدر أعم، والقضاء أخص، فالقدر عمومًا والقضاء جزءٌ من القدر ‘ক্বদর হচ্ছে আম। আর ক্বাযা হ’ল খাছ। অতএব তাক্বদীর ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, আর ক্বাযা বা ফায়ছালা তাক্বদীরের একটি অংশ’। মহান আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।

তাক্বদীরের ফায়ছালাতে সন্তুষ্ট হওয়ার অর্থ :

তাক্বদীর অনুযায়ী যখন কোন কিছু সংঘটিত হয়, তখন তাকে বলা হয় তাক্বদীরের ফায়ছালা। তাক্বদীরের ফায়ছালার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করাকে শারঈ ভাষায় ‘রিযা’ (الرِّضَا) বলে। জুরজানী বলেন, الرضا: ‌سرور ‌القلب ‌بِمُرِّ ‌القضاء ‘(তাক্বদীরের) কাষ্টদায়ক ফায়ছালার প্রতি অন্তরের আনন্দকে সন্তুষ্টি বা ‘রেযা’ বলা হয়’।[14]

ইবনু উছায়মীন (রহঃ) বলেন,الرِّضا (بقضاء الله) معناه أن يكونَ مطمئنًّا منشرحَ الصَّدرِ بما قضى اللهُ عزَّ وجَلَّ، لا يتألمُ نفسيًّا، رغم أنَّه يكرَهُ هذا الشَّيءَ الذي أصابه ولا شَكَّ؛ ‘আল্লাহর ফায়ছালায় সন্তুষ্ট থাকার অর্থ হ’ল মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাক্বদীরের ব্যাপারে অন্তরকে প্রশান্ত রাখা, প্রফুল্লচিত্ত থাকা এবং মানসিকভাবে ব্যথিত না হওয়া। যদিও আপতিত বিপদকে সে অপসন্দ করে’।[15]

হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,الرضا ‌سكون ‌النفس ‌إلى ‌القضاء، ‘তাক্বদীরের প্রতি অন্তরের সুস্থিরতাকে

রিযা বা সন্তুষ্টি বলে’।[16]

মোটকথা ‘তাক্বদীরের ফায়ছালায় সন্তুষ্ট থাকা’(الرِّضَا بالقَضَاء) -এর অর্থ হ’ল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা কিছু নির্ধারণ করেছেন, সেটা ভাল হোক বা মন্দ হোক, পসন্দনীয় হোক বা অপসন্দনীয় হোক- সে ব্যাপারে মনের মধ্যে কোন অভিযোগ না রাখা এবং অস্থির না হয়ে সেটাকে নির্দ্বিধায় ও প্রশান্তচিত্তে মেনে নেওয়া। আর এটা বিশ্বাস করা যে, আমাদের সার্বিক জীবনে আগত আনন্দ-বেদনা, রোগ-শোক, বিপদাপদ এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধ সব কিছুই আল্লাহর পূর্ব নির্ধারিত তাক্বদীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আমাদের দ্বীন-দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর সিদ্ধান্তই আমাদের জন্য সর্বাধিক কল্যাণকর ও ইনছাফপূর্ণ।

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘তাক্বদীরের ফায়ছালায় সন্তুষ্ট থাকার জন্য এটা শর্ত নয় যে, ব্যথা অনুভূত হবে না এবং খারাপ লাগবে না। বরং এর জন্য শর্ত হ’ল আল্লাহর ফায়ছালার বিরুদ্ধে আপত্তি না করা এবং বিরক্তি প্রকাশ না করা। কিছু মানুষের কাছে অপসন্দনীয় ও কষ্টকর বিষয়ের উপর সন্তুষ্ট থাকা অসম্ভব মনে হয়। তারা বিষয়টি না বুঝে আপত্তি করে বলে, কষ্টকর বিষয়ে সন্তুষ্ট থাকা মানুষের স্বভাববিরুদ্ধ অসম্ভব ব্যাপার; বরং এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হ’ল ধৈর্য ধারণ করা। সন্তুষ্টি ও অপসন্দ যেখানে বিপরীতমুখী বিষয়, সেখানে এ দু’টি বিষয় একত্রিত হবে কিভাবে?

সঠিক কথা হ’ল, এ দু’টি বিষয়ের মাঝে কোন বৈপরীত্য ও বিরোধ নেই। কষ্ট অনুভব করা এবং কোন কিছু অপসন্দ করা সন্তুষ্ট থাকাকে নাকচ করে দেয় না। যেমন অসুস্থ ব্যক্তি অপসন্দ হওয়া সত্ত্বেও ঔষধ সেবনের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, ছিয়াম পালনকারী তীব্র গরমের দিনেও ক্ষুত-পিপাসার কষ্টে সন্তুষ্ট থাকে, মুজাহিদ ব্যক্তি আহত হওয়ার পরেও শারীরিক ব্যথা-বেদনার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে। এমন আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে’।[17] সুতরাং বোঝা গেল, অপসন্দনীয় ও কষ্টকর ব্যাপারেও সন্তুষ্ট থাকা যায়। আর এটাই ‘আর রিযা বিল-কাযা’ বা তাক্বদীরের প্রতি সন্তুষ্টি।

তাক্বদীরের ফায়ছালায় সন্তুষ্ট থাকার স্তর ও বিধান

তাক্বদীরে ফায়ছালায় সন্তুষ্ট থাকার বিধান অবস্থা ভেদে মোটাদাগে তিন স্তরে বিভক্ত। যথা-

(১) ওয়াজিব বা ফরয সন্তুষ্টি। (২) মুস্তাহাব সন্তুষ্টি। (৩) হারাম সন্তুষ্টি।[18]

(১) ফরয সন্তষ্টি :

মহান আল্লাহ কর্তৃক তাক্বদীরের ভাল-মন্দ নির্ধারণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং নির্দ্বিধায় মেনে নেওয়া ঈমানের অপরিহার্য রুকন। এটা ফরয সন্তুষ্টির অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলে, সন্দেহ পোষণ করলে এবং অস্বীকার করলে বান্দার ঈমান বিনষ্ট হয় এবং সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। হাদীছে জিবরীলে ঈমানের যে ছয়টি রুকনের কথা বলা হয়েছে, তন্মধ্যে ষষ্ঠ রুকন হ’লوَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ، ‘আর তুমি তাক্বদীর বা ভাগ্যের ভালো-মন্দের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখবে’।[19] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَا يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتَّى يُؤْمِنَ بِالقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ، حَتَّى يَعْلَمَ أَنَّ مَا أَصَابَهُ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَهُ، وَأَنَّ مَا أَخْطَأَهُ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَهُ، ‘কোন বান্দাহই মু’মিন হ’তে পারবে না যতক্ষণ না সে তাক্বদীর ও তার ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনবে। এমনকি তার নিশ্চিত বিশ্বাস থাকতে হবে যে, যা কিছু ঘটেছে তা কিছুতেই অঘটিত থাকত না এবং যা কিছু ঘটেনি তা কখনোই সংঘটিত হওয়ার ছিল না’।[20]

আববাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,ذَاقَ طَعْمَ الْإِيمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا، ‘সেই ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পেরেছে, যে আল্লাহকে ‘রব’ হিসাবে, ইসলামকে ‘দ্বীন’ হিসাবে এবং রাসূলকে ‘নবী’ হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছে’।[21] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন,يَا أَبَا سَعِيدٍ، مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا، وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ، ‘হে আবু সাঈদ! যে ব্যক্তি আল্লাহকে ‘রব’ হিসাবে, ইসলামকে ‘দ্বীন’ হিসাবে এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে ‘নবী’ হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট হবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে’।[22]

এখানে এমন তিনটি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে, যে তিনটি বিষয়ে প্রত্যেক বান্দা কবরে জিজ্ঞাসিত হবে। অর্থাৎ তাঁর রব সম্পর্কে, দ্বীন সম্পর্কে এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সম্পর্কে। মূলতঃ এই তিনটি বিষয়ের উত্তর তৈরি করার জন্য আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।

সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্বক্বাছ (রাঃ)-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ قَالَ حِيْنَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَ(أَشْهَدُ) أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، غُفِرَ لَهُ ذَنْبُهُ، ‘যে ব্যক্তি মুওয়ায্যিনকে (আযান শুনে) বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আর আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আমি আল্লাহকে রব হিসাবে, মুহাম্মাদকে রাসূল হিসাবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে’।[23]

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, উপরোক্ত হাদীছদ্বয়ের উপরেই দ্বীনের সকল ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর সেগুলো হ’ল- (১) আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি। (২) তাঁর রাসূলের প্রতি সন্তুষ্টি ও আনুগত্য। (৩) তাঁর দ্বীনকে নির্দ্বিধায় মেনে নেওয়ার প্রতি সন্তুষ্টি।

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) আরো বলেন, ‘এই বিষয়গুলো যার মধ্যে একত্রিত হয়, সে-ই প্রকৃত ছিদ্দীক্ব। এটা মুখে মুখে বলা ও দাবী করা সহজ; কিন্তু বাস্তবতা ও পরীক্ষার সময় তা মেনে নেওয়া অন্ত্যন্ত কঠিন। বিশেষ করে যখন এমন কোন বিষয় আসে, যা প্রবৃত্তির বিপরীত ও নিজ চাওয়া-পাওয়ার সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। আর তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তার সন্তুষ্টি ছিল মুখে মুখে, আর বাস্তব আবস্থা ছিল এর বিপরীত।[24]

(ক) আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকার অর্থ হ’ল তাওহীদের প্রতি পরিপূর্ণভাবে সন্তুষ্ট থাকা। অর্থাৎ মহান আল্লাহর যাবতীয় কাজে তাঁকে এককভাবে সুনির্দিষ্ট করা এবং তাঁর সৃষ্টি, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। তাঁর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধানকে সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করা। একে তাওহীদে রবূবিয়াত বলা হয়।

অনুরূপভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগী একমাত্র আল্লাহর জন্যই সম্পাদন করা। তাঁকে একামাত্র উপাস্য হিসাবে পেয়ে খুশি হওয়া। তাঁর ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করা এবং শিরকের প্রতি চরমভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করা। সর্বোপরি দো‘আ, প্রার্থনা, কুরবানী, মানণত, ছালাত, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভয়, সাহায্য প্রার্থনা, ভরসা প্রভৃতি ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করা। একে তাওহীদে উলূহিয়াত বা তাওহীদে ইবাদত বলা হয়।

অতঃপর আল্লাহ তাঁর সত্তার জন্য যে নাম ও গুণাবলী স্বীয় কিতাব আল-কুরআনে উল্লেখ করেছেন অথবা তাঁর রাসূল (ছাঃ) ছহীহ হাদীছ সমূহে যেভাবে তা বর্ণনা করেছেন, ঠিক সেভাবেই তা গ্রহণ করা। আল্লাহর ছিফাতের কোনরূপ অপব্যাখ্যা (التأويل), তুলনা দেওয়া (التشبيه), সাদৃশ্যের আশ্রয় গ্রহণ করা (التمثيل), তাঁকে তাঁর গুণ থেকে নিষ্ক্রিয় করা (التعطيل) এবং অর্থের বিকৃতি ঘটানো (التكييف) প্রভৃতি থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর নাম ও গুণাবলীকে পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেওয়া। যাকে বলা হয় তাওহীদুল আসমা ওয়াছ ছিফাত।

(খ) তাঁর রাসূলের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার অর্থ হ’ল সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে পৃথিবীর সকল মানুষের চেয়ে অধিক ভালবাসা। তাঁর নবুঅতের প্রতি ঈমান আনা এবং তাতে আন্তরিকভাবে খুশি থাকা। মনে প্রাণে সার্বিক জীবনে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া। বিদ‘আতকে পরিহার করে তাঁর সুন্নাতের ভিত্তিতে এবং তাঁর দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী যাবতীয় ইবাদত সম্পাদন করা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য তালাশ করা। তাঁর কোন সুন্নাত বা আদর্শের প্রতি অসন্তষ্ট না হওয়া। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বণ্টন তথা ছাদাক্বার সম্পদ, ফাইয়ের সম্পদ, গণীমতের সম্পদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাঁর দেখানো বণ্টন পদ্ধতির উপর সন্তুষ্ট থাকা।

(গ) তাঁর দ্বীন ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার অর্থ হ’ল ইসলামকে একমাত্র দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা হিসাবে পেয়ে খুশি হওয়া। ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান, হালাল-হারাম, আইন-কানূন, ফরয-ওয়াজিব, সুন্নাত-মুস্তাহাব, মুবাহ প্রভৃতি বিধানের প্রতি পূর্ণ সন্তুষ্ট থাকা। ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল ধর্মের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকা। মানব রচিত যাবতীত বিধান পরিহার করে সার্বিক জীবনে অহি-র বিধান বাস্তবায়ন করা। অর্থাৎ জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামকেই একমাত্র দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করা। এগুলো তাক্বদীরের ফরয সন্তুষ্টির উদাহরণ। যার প্রতি মনে প্রাণে খুশি না থাকা পর্যন্ত মুসলিম হওয়া যায় না এবং ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করা যায় না।

(২) হারাম সন্তুষ্টি :

তাক্বদীরের সকল ফায়ছালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকার ব্যাপারে বান্দাকে নির্দেশ দেওয়া হয়নি; বরং তাক্বদীরের কিছু ফায়ছালা আছে যার প্রতি খুশি না থাকাই শরী‘আতের বিধান। ইমাম ইবনু আবিল ইয আল-হানাফী (৭৩১-৭৯২হি./১৩৩১-১৩৯০খৃ.) বলেন, نَحْنُ غَيْرُ مَأْمُورِينَ بِالرِّضَا بِكُلِّ مَا يَقْضِيهِ اللهُ وَيُقَدِّرُهُ، وَلَمْ يَرِدْ بِذَلِكَ كِتَابٌ وَلَا سُنَّةٌ، ‘আল্লাহ তাক্বদীরে যা কিছু ফায়ছালা করেছেন এবং নির্ধারণ করেছেন, তার সবকিছুর প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে আমরা আদিষ্ট নই। কুরআন ও হাদীছে এ ব্যাপারে কোনকিছু বর্ণিত হয়নি’।[25]

ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রহঃ) আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থাকার প্রকারভেদ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘কুফরী, ফাসেক্বী এবং পাপের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া হারাম। কেননা মানুষ এগুলোর প্রতি সন্তুষ্টি পোষণের জন্য আদিষ্ট নয়; বরং এগুলোর প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা পোষণের জন্য মানুষ আদিষ্ট। কারণ আল্লাহ এগুলো পসন্দ করেন না এবং এগুলোর প্রতি সন্তুষ্টও হন না’।[26]

শায়খ উছায়মীন বলেন, পাপ ও গুনাহ সংঘটিত হওয়া তাক্বদীরের অন্তর্ভুক্ত। তবে গুনাহের ওপর সন্তুষ্ট হওয়া হারাম। যদিও সেটা আল্লাহর হুকুমেই হয়ে থাকে। সুতরাং এমন বলা উচিত নয় যে, তাক্বদীরে নির্ধারণ করা আছে বলেই এ পাপ সংঘটিত হয়েছে। ফলে এখানে আমার করার কিছু নেই। বরং নিজের মাধ্যমে হোক বা অপরের মাধ্যমে হোক যে কোন পাপের প্রতি অসন্তুষ্টি পোষণ করা ওয়াজিব।[27] আল্লাহ বলেন,يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللهَ لَا يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ، ‘তারা এজন্য শপথ করবে যেন তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হও। এক্ষণে তোমরা যদি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও, তবে আল্লাহ তো পাপাচারী সম্প্রদায়ের প্রতি সন্তুষ্ট হন না’ (তওবা ৯/৯৬)

আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন,وَالْمَقْصُودُ مِنْ إِخْبَارِ اللهِ سُبْحَانَهُ بِعَدَمِ رِضَاهُ عَنْهُمْ: نَهْيُ الْمُؤْمِنِينَ عَنْ ذَلِكَ ‌لِأَنَّ ‌الرِّضَا ‌عَلَى ‌مَنْ ‌لَا ‌يَرْضَى اللهُ عَلَيْهِ مِمَّا لَا يَفْعَلُهُ مُؤْمِنٌ، ‘আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা জানান দেওয়ার উদ্দেশ্য হ’ল- মুমিনদের এমন সন্তুষ্টি থেকে নিষেধ করা। কেননা যার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হন না, তার প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া মমিনের কাজ নয়’।[28]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا عُمِلَتِ الْخَطِيئَةُ فِي الْأَرْضِ، كَانَ مَنْ شَهِدَهَا فَكَرِهَهَا وَقَالَ مَرَّةً: أَنْكَرَهَا، كَانَ كَمَنْ غَابَ عَنْهَا، وَمَنْ غَابَ عَنْهَا فَرَضِيَهَا، كَانَ كَمَنْ شَهِدَهَا، ‘কোন স্থানে পাপ সংঘটিত হ’লে সেখানে উপস্থিত ব্যক্তি যদি তাতে অসন্তুষ্ট হয় বা অপসন্দ করে, তবে সে অনুপস্থিতদের মতই গণ্য হবে (তার গুনাহ হবে না)। অপরদিকে যে ব্যক্তি অনুপস্থিত থেকেও উক্ত কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে, সে উক্ত পাপ কাজে উপস্থিত আছে বলে গণ্য হবে।[29] শুমাইত্ব ইবনে আজলান (রহঃ) বলেন,‌مَنْ ‌رَضِيَ ‌بِالْفِسْقِ ‌فَهُوَ ‌مِنْ ‌أَهْلِهِ وَمَنْ رَضِيَ أَنْ يُعْصَى اللهُ لَمْ يُرْفَعْ لَهُ عَمَلٌ، ‘যে ব্যক্তি পাপের প্রতি সন্তুষ্ট হ’ল, সে পাপীদের মধ্যেই গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতার প্রতি সন্তুষ্ট হবে, তার আমল উপরে উঠানো হবে না (বা কবুল করা হবে না)’।[30] ইমাম কুরতুবী বলেন, الرِّضَا ‌بِالْكُفْرِ ‌كُفْرٌ... ‌الرِّضَا ‌بِالْمَعْصِيَةِ مَعْصِيَةٌ ‘কুফরের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া কুফরী। আর পাপের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া পাপ’।[31] শিরক-বিদ‘আত, পাপাচার, কুফরী, নেফাক্বী এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক বিষয়াবলী তাক্বদীরের অংশ হ’লেও এর প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া জায়েয নয়; বরং এগুলোর প্রতি মন থেকে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা ফরয। এটাই শরী‘আতের নির্দেশ।

(৩) মুস্তাহাব সন্তুষ্টি :

তাক্বদীরের এমন কিছু ফায়ছালা আছে, যার উপর সন্তুষ্ট থাকা মুস্তাহাব। তাক্বদীরের প্রতি মুস্তাহাব সন্তুষ্টি হ’ল আপনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়বেন, অভাব-অনটনে থাকবেন, কোন সংকটে বা বিপদাপদে পড়বেন, দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত হবেন, কোন সমস্যায় পড়বেন তখন বিচলিত না হয়ে ধৈর্য ধরবেন এবং মনকে সুস্থির রাখবেন এবং আল্লাহর ফায়ছালাকে খুশি মনে মেনে নিবেন। মনে কোনরূপ অসন্তোষ প্রকাশ করবেন না।

আপনি যে স্ত্রী পেয়েছেন সে যদি কম সুন্দরী হয়, তার সন্তানদের সংখ্যা যদি কমও হয়, আপনার কাঙ্খিত পুত্র সন্তান না হয়ে যদি কন্যা সন্তান হয় বা এর বিপরীত হয়, অথবা কোন সন্তান-সন্ততিই না হয়, তবে সকল ক্ষেত্রে আপনি নাখোশ বা অখুশি হবেন না; বরং সর্বাবস্থায় আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর সন্তুষ্ট থাকবেন এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তকেই কল্যাণকর মনে করবেন।

হয়ত আপনার বেতন কম, আয়-রোযগার খুবই সামান্য, বংশগত বা সমাজিকভাবে হয়ত আপনি অন্যদের চেয়ে দুর্বল, হয়ত অন্যদের চেয়ে আপনার সম্মান কম, আপনারা পরিচিতি-প্রসিদ্ধি কম তবুও আপনি খুশি, আপনার মনে এজন্য কোন দুঃখ-পরিতাপ নেই, আল্লাহর প্রতি কোন অভিযোগ নেই। নেই হাপিত্যেশ ও না পাওয়ার আক্ষেপ, জীবনের দুর্বিষহ সংকটে আত্মহত্যার মনোবৃত্তি আপনার মাঝে জাগ্রত হয় না; বরং সবকিছুকে আপনি তাক্বদীরের অংশ হিসাবে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেন। সকল অবস্থায় রাযী-খুশি থাকতে পারেন। যদি আপনি এমন অবস্থায় পৌঁছাতে পারেন, তবে আপনি আল্লাহ কর্তৃক তাক্বদীরের ফায়ছালাতে সন্তুষ্ট বান্দা।

মুস্তাহাব স্তর হচ্ছে আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও তাক্বদীরের নির্ধারণের ওপর সন্তুষ্ট থাকার উচ্চ স্তর। বালা-মুছীবতে এ স্তরের মুমিনদের অন্তরে পূর্ণ প্রশান্তি বিরাজ করে। তারা যেমন আনন্দ ও সুখানুভূতির সময় আল্লাহর প্রশসংসা করেন, ঠিক তেমনি দুঃখ-দুর্দশার সময়ও আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং তাঁর শুকরিয়া আদায় করেন। এটি উন্নত ও সম্মানিত একটি স্তর। মহান আল্লাহর অসীম দয়া ও রহমত যে, তিনি আমাদের প্রতি এই স্তরের সন্তুষ্টিকে ওয়াজিব করেননি। কেননা অধিকাংশ মানুষই এই স্তরে পৌঁছাতে সক্ষম হয় না এবং হবে না।

সন্তুষ্টির এ স্তরে যারা উপনীত হ’তে পারেন, তারা আল্লাহর প্রতিটি সিদ্ধান্তের মাঝে কল্যাণ দেখতে পান- সেটা তার জন্য কষ্টদায়ক হোক বা স্বস্তিদায়ক হোক। তারা সন্তুষ্টির প্রতিদানের চিন্তা তাদেরকে বিপদের দঃখ-কষ্ট অনুভব করতে দেয় না। তাক্বদীরের প্রতিটি ফায়ছালাতে তাদের অন্তর প্রশান্তিতে ভরপুর থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, عَجَبًا لِلْمُؤْمِنِ، لَا يَقْضِي اللهُ لَهُ شَيْئًا إِلَّا كَانَ خَيْرًا لَهُ، ‘মুমিনের বিষয়টি আশ্চর্যজনক। আল্লাহ তার জন্য যে ফায়ছালাই করেন, সেটাই তার জন্য কল্যাণকর হয়’।[32] রাসূল (ছাঃ) সৎ কর্মশীল বান্দাদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,وَإِنْ كَانَ أَحَدُهُمْ لَيَفْرَحُ بِالْبَلَاءِ، كَمَا يَفْرَحُ أَحَدُكُمْ بِالرَّخَاءِ، ‘তাদের কেউ বিপদে এত প্রফুল্ল থাকে, যেমন তোমাদের কেউ ধন-সম্পদ পেয়ে আনন্দিত হয়’।[33]

ফাতহ আল-মুছেলী (রহঃ)-এর স্ত্রী একবার হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। এতে তার পায়ের নখ উপড়ে যায়। কিন্তু তার মাঝে ব্যথার কোন অনুভূতি দেখা গেল না; বরং তিনি হাসছিলেন। তাকে একজন জিজ্ঞেস করল, আপনার নখ উপড়ে যাওয়াতে ব্যথা পাননি? জবাবে তিনি বলেন,بلى، ولكن ثواب ذلك ألهاني عن وجود الاشتغال بالألم ‘হ্যঁা! (ব্যথা পেয়েছি) কিন্তু এর মাধ্যমে আমি যে ছওয়াব লাভ করেছি, তা আমাকে বেদনার কথা ভুলিয়ে দিয়েছে’।[34] আহনাফ ইবনে ক্বায়েস একবার তার চাচার কাছে মাড়ির দাঁতে ব্যথার অভিযোগ করলেন। চাচা বললেন, আহনাফ! তুমি দেখছি এক রাত ব্যথা পেয়েই অভিযোগ করা শুরু করেছ। আল্লাহর কসম! আমি ত্রিশ বছর যাবৎ এরূপ দাঁতের ব্যথায় ভুগছি, এটা কেউ জানত না, তবে আজকে তুমি জেনে গেলে’।[35]

অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে, বিপদাপদ ও বালা-মুছীবতে আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থাকা মুস্তাহাব। তবে ধৈর্য ধারণ করা ওয়াজিব। ছবর (ধৈর্য) ও রেযা (সন্তুষ্টি)-এর মধ্যে পার্থক্য নিরূপন করতে গিয়ে শায়খ উছায়মীন (রহঃ)

বলেন,أن الصبر يكون الإنسان فيه كارها للواقع، لكنه لا يأتي بما يخالف الشرع وينافي الصبر، والرضا: لا يكون كارها للواقع فيكون ما وقع، وما لم يقع عنده سواء، فهذا هو الفرق بين الرضا والصبر؛ ولهذا قال الجمهور: إن الصبر واجب، والرضا مستحب، ‘(কোন বিপদে) ধৈর্য ধারণ করা এমন বিষয় যা সংঘটিত হওয়াকে মানুষ অপসন্দ করে। কিন্তু এর জন্য শরী‘আত বহির্ভূত ও ধৈর্যের পরিপন্থী কোন কিছু সে করে না। আর সন্তুষ্টি হ’ল সংঘটিত বিষয়কে সে অপসন্দ করে না। বরং সেই বিপদ ঘটা বা না ঘটা উভয়ই তার কাছে সমান। ধৈর্য ও সন্তুষ্টির মধ্যে পার্থক্য এটাই। এজন্য জমহূর ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, ধৈর্য ধারণ করা ওয়াজিব আর সন্তুষ্ট থাকা মুস্তাহাব’।[36]

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ)-এর নিকটে এই মর্মে একটি পত্র লিখেন যে, أَمَّا بَعْدُ، ‌فَإِنَّ ‌الْخَيْرَ ‌كُلَّهُ ‌فِي ‌الرِّضَا، فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَرْضَى وَإِلَّا فَاصْبِرْ، ‘অতঃপর (মনে রেখ!) সকল কল্যাণ নিহিত আছে সন্তুষ্ট থাকার মাঝে। সুতরাং যদি পার সন্তুষ্ট থাক, অন্যথায় ধৈর্যধারণ কর’।[37]

মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাক্বদীরের সকল ফায়ছালায় পরিপূর্ণভাবে সন্তুষ্ট থাকার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ

 এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও 

শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।


[1]. মুসলিম/৮; মিশকাত হা/২।

[2]. মুসলিম হা/২৬৫৩; মিশকাত হা/৭৯।

[3]. মুসলিম হা/২৬৫৫; মিশকাত হা/৮০।

[4]. ইবনু বাত্তাল, ফাৎহুল বারী, ১১/১৪৯।

[5]. ড. সুলায়মান আল-আশক্বার (জর্ডান : দারুন নাফাইস, ১৩তম সংস্করণ, ১৪২৫হি./২০০৫খৃ.) পৃ. ২৫।

[6]. আগেব ইছফাহানী, আল-মুফরাদাত ফী গারীবিল কুরআন (দামেশক্ব : দারুল কলম, ১ম মুদ্রণ, ১৪১২হি.) পৃ. ৬৭৫।

[7]. উছূলুল ঈমান ফী যূইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ (সঊদী আরব : ওয়াযারাতুশ শুঊন আল-ইসলামিয়্যাহ, ১ম প্রকাশ, ১৪২১হি.) পৃ. ২৪৩।

[8]. মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, শারহুল আক্বীদা আল-ওয়াসিত্বিয়া (সঊদী আরব: ওয়াযারাতুশ শুঊন আল-ইসলামিয়্যাহ, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৪২১হি.) ২/১৮৮।

[9]. মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল, সংকলন: ফাহাদ বিন নাছের আস-সুলায়মান (রিয়াদ: দারুছ ছুরাইয়া, সর্বশেষ সংস্করণ, ১৪১৩হি.) ২/৭৯।

[10]. ইবনুল আছীর, আন-নিহায়া ফী গারীবিল হাদীছ (বৈরূত : আল-মাকতাবাতুল ইলমিইয়াহ, ১৩৯৯হি./১৯৯৭খৃ.) ৪/৭৮।

[11]. ইবনু বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দার্ব ৪/১৯১।

[12]. উছূলুল ঈমান, পৃ. ২৪৪।

[13]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ২/৭৯; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দার্ব লিল ওছায়মীন ২/৪।

[14]. জুরজানী, আত-তা‘রীফাত ( বৈরূত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১ম মুদ্রণ, ১৪০৩হি./১৯৮৩খৃ.) পৃ. ১১১।

[15]. মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, শারহুল আক্বীদাহ আস-সাফারীনিয়াহ (রিয়াদ : দারুল ওয়াত্বান, ১ম সংস্করণ, ১৪২৬হি.) পৃ. ৩৭০-৩৭১।

[16]. ফাৎহুল বারী ১১/১৮৭।

[17]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন ২/১৭৩।

[18]. ইবনে তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১০/৪৮২-৪৮৩; জামে‘উর রাসায়েল ২/১০৬; মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-ওছায়মীন, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ২/৯২।

[19]. মুসলিম/৮; আবূদাঊদ হা/৪৬৯৫; মিশকাত হা/২।

[20]. তিরমিযী হা/২১৪৪; ছহীহাহ হা/২৪৩৯, সনদ ছহীহ।

[21]. মুসলিম হা/৩৪; তিরমিযী হা/৯; মিশকতা হা/২৬২৩।

[22]. মুসলিম হা/১৮৮৪।

[23]. মুসলিম হা/৩৮৬; আবূদাঊদ হা/৫২৫; মিশকাত হা/৬৬১।

[24]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন ২/১৭১।

[25]. ইবনু আবিল ইয্ আল-হানাফী, শারহুল আক্বীদা আত-তাহাবিয়াহ, তাহক্বীক্ব : আহমাদ শাকির (সঊদী আরব : ওযারাতুশ শুঊন আল-ইসলামিয়াহ, ১ম মুদ্রণ, ১৪১৮হি.) ১/৩৩৬।

[26]. ইবনু তায়মিয়াহ, জামে‘উর রাসায়েল, মুহাক্কিক্ব : ড. মুহাম্মাদ রাশাদ সালিম (রিয়াদ : দারুল আত্বা, ১ম মুদ্রণ, ১৪২২হি./২০০১খৃ.) ২/১০৬।

[27]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ও রাসায়েল ২/৯২ (ঈষৎ সক্ষেপায়িত)।

[28]. শাওকানী, ফাৎহুল কাদীর ২/৪৫০।

[29]. আবূদাঊদ হা/৪৩৪৫, সনদ হাসান, রাবী উরস ইবনে আমীরাহ আল-কিন্দী (রাঃ)।

[30]. আহমাদ ইবনে হাম্বল, কিতাবুয যুহদ, পৃ. ১৮৬; ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া ২/২০২।

[31]. তাফসীরে কুরতুবী ৫/৪১৮।

[32]. মুসনাদে্আহমাদ হা/২০২৮২; মুসনাদে আবী ইয়া‘লা মাওছীলী হা/৪২১৭; ছহীহাহ হা/১৪৮, সনদ ছহীহ।

[33]. ইবনু মাজাহ হা/৪০২৪; ছহীহাহ হা/১৪৪, সনদ ছহীহ।

[34]. আব্দুল ওয়াহাব শা‘রানী, তাম্বীহুল মুগতার্রীন, পৃ. ১৮৯; হাসান বিন আলী আল-ফায়ূমী, ফাতহুল ক্বারীবিল মুজীব ৬/৬১৭।

[35]. আব্দুল ওয়াহাব শা‘রানী, তাম্বীহুল মুগতার্রীন, পৃ. ১৯০।

[36]. উছায়মীন, মাজমু‘উ ফাতাওয়া ও রাসায়েল ২/৯২-৯৩; আল-ক্বাওলুল মুফীদ আলা কিতাবিত তাওহীদ ২/১১।

[37]. আব্দুল ক্বাদের জীলানী, গুনয়াতুত ত্বালিবীন, মুহাক্কিক্ব : আবূ আব্দুর রহামান ছালাহ ইবনে মুহাম্মাদ (বৈরূত : দারুল কুতুবিল আল-ইলমিয়াহ, ১ম মুদ্রণ, ১৪১৭হি./১৯৯৭খৃ.) পৃ. ২/৩২৯; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ২/৩৯৭।






আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত পরিচিতি (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
সমাজ সংস্কারে ইমামগণের ভূমিকা - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
বিদায়ের আগে রেখে যাও কিছু পদচিহ্ন (৭ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকার (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
তাছফিয়াহ ও তারবিয়াহ : মুসলিম জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
দাঈর সফলতা লাভের উপায় - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
এলাহী তাওফীক্ব লাভের উপায় - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
আদর্শ সমাজ গঠনে সালামের ভূমিকা - মুহাম্মাদ মাইনুল ইসলাম
আমানত (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান
সীমালংঘন ও দুনিয়াপূজা : জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার দুই প্রধান কারণ (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাক্বলীদ - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত (৫ম কিস্তি ফেব্রুয়ারী সংখ্যার পর) - মুযাফফর বিন মুহসিন
আরও
আরও
.