ভূমিকা :

জিহাদ ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া। এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যে ইবাদতকে শয়তান সবচেয়ে বেশী ভয় পায়। চূড়া বা ছাদ না থাকলে যেমন কোন ঘরে আশ্রয় নেওয়া যায় না। তেমনি জিহাদ বিহীন ইসলামের মাধ্যমেও সফলতার আশা করা যায় না। কেননা দ্বীনের বিজয় জিহাদের উপরে নির্ভশীল। মুসলিমদের উপর জিহাদের বিধান আরোপ করার পাশাপাশি মহান আল্লাহ ইসলামী শরী‘আতে এমন কতিপয় বিয়ষাবলী বিধিবদ্ধ করেছেন, যা জিহাদের ন্যায় ফযীলতপূর্ণ। বক্ষমান নিবন্ধে আমরা এই ব্যাপারে আলোকপাত করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

জিহাদের ফযীলত :

জিহাদ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি বড় মাধ্যম, যার প্রতিদান জান্নাত। ওবাদাহ ইবনে ছামেত (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,عَلَيْكُمْ بِالْجِهَادِ فِي سَبِيلِ اللهِ فَإِنَّهُ بَابٌ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ يُذْهِبُ اللهُ بِهِ الْهَمَّ وَالْغَمَّ ‘তোমাদের কর্তব্য হ’ল তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। কেননা জান্নাতের দরজাসমূহের অন্যতম দরজা হ’ল জিহাদ। আল্লাহ এর মাধ্যমে যাবতীয় উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা দূরীভূত করে দেন’।[1] অনত্র তিনি বলেন,مَنْ قَاتَلَ فِيْ سَبِيلِ اللهِ فُوَاقَ نَاقَةٍ فَقَدْ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ، ‘যে ব্যক্তি দু’বার উষ্ট্রীর দুধ দহনের মধ্যবর্তী সময়কাল আল্লাহর পথে জিহাদ করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়’।[2] মহান আল্লাহ বলেন,فَلْيُقَاتِلْ فِيْ سَبِيلِ اللهِ الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْآخِرَةِ وَمَنْ يُقَاتِلْ فِيْ سَبِيلِ اللهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا، ‘অতএব যারা আখেরাতের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে বিক্রি করে, তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদ করে। আর যে আল্লাহর পথে লড়াই করে, অতঃপর সে নিহত হোক কিংবা বিজয়ী হোক, অচিরেই আমি তাকে মহা পুরস্কার দান করব’ (নিসা ৪/৭৪)

জিহাদের ন্যায় ফযীতলতপূর্ণ আমল সমূহ :

মুমিন ব্যক্তি তার যাপিত জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ও চিন্তা-চেতনায় শয়তান ও কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করে। সঠিক ক্ষেত্র ও পরিস্থিতিতে সে অবশ্যই কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ করার জন্য প্রস্ত্তত থাকে। জিহাদের অপব্যাখ্যা করে কখনো একে সন্ত্রাসের প্রতিশব্দ বানানোর অপচেষ্টা করে না। সে কখনো তার মুসলিম ভাইয়ের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলন করে না। মহান আল্লাহ তাঁর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের মাধ্যমে আমাদেরকে এমন কিছু আমলের বিধান দিয়েছেন, যা সম্পাদনের মাধ্যমে মুমিন বান্দা জিহাদে অংশগ্রহণের নেকী লাভ করতে সক্ষম হয়। নিমেণ সেই আমলগুলো ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হ’ল-

১. যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের আমল :

যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের নেক আমল আল্লাহর নিকটে জিহাদের চেয়েও ফযীলতপূর্ণ। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ أَيَّامٍ العَمَلُ الصَّالِحُ فِيهِنَّ أَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنْ هَذِهِ الأَيَّامِ العَشْرِ، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَلَا الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَلَا الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ، إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْءٍ ‘(বছরের) যে কোন দিনের সৎ আমলের চেয়ে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমল মহান আল্লাহর নিকটে অধিকতর প্রিয়। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আল্লাহর পথে জিহাদও নয় কি? তিনি বললেন, না, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে সেই ব্যক্তির কথা স্বতন্ত্র, যে তার জান-মাল নিয়ে জিহাদে বের হয়েছে এবং কোন একটি নিয়েও ফিরে আসেনি’ (অর্থাৎ সে শহীদ হয়ে যায়)।[3] ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, যিলহজ্জের প্রথম দশক এত তাৎপর্যমন্ডিত হওয়ার কারণ হ’ল ছালাত, ছিয়াম, ছাদাক্বাহ, হজ্জসহ শরী‘আতের মূল ইবাদতগুলোর সমাবেশ ঘটে এই দশকে’।[4] ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, যিলহজ্জের প্রথম দশক উত্তম নাকি রামাযানের শেষ দশকের আমল উত্তম। তিনি জবাবে বললেন,أيام عشر ذي الحجة أفضل من أيام العشر من رمضان، والليالي العشر الأواخر من رمضان أفضل من ليالي عشر ذي الحجة، ‘রামাযানের শেষ দশ দিনের চেয়ে যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের আমল শ্রেষ্ঠ। আর যিলহজ্জের দশ রাতের চেয়ে রামাযানের শেষ দশ রাতের ইবাদত শ্রেষ্ঠ’।[5]

২. আওয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা :

মহান আল্লাহ আমাদের উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। পাশাপশি এই ছালাতগুলো আদায় করার সময়সীমাও নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا ‘নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে ছালাত সম্পাদন করা মুমিনদের জন্য ফরয’ (নিসা ৪/১০৩)। আর এই নির্ধারিত সময়ে এবং আওয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা আল্লাহর নিকটে জিহাদসহ সকল ইবাদতের চেয়ে প্রিয়। আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ العَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ؟ قَالَ: الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: ثُمَّ بِرُّ الوَالِدَيْنِ قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ ‘আমি একবার নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর নিকটে সর্বোত্তম আমল কোন্টি? তিনি বললেন, সময়মত ছালাত আদায় করা। রাবী বলেন, এরপর কোন্টি? তিনি বললেন, তারপর পিতামাতার সাথে সদাচরণ করা। ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বললেন, এরপর কোন্টি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা’।[6] অপর এক বর্ণনায় আওয়াল ওয়াক্ত (الصَّلَاةُ فِي أَوَّلِ وَقْتِهَا) কথাটি উল্লেখ আছে।[7] সুতরাং বোঝা গেল, আল্লাহর নিকটে জিহাদের চেয়েও প্রিয় আমল হ’ল সঠিক সময়ে বা আওয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা। আর জামা‘আতে ছালাত আদায় করার মাধ্যমে এর নেকী সাতাশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,صَلَاةُ الْجَمَاعَةِ أَفْضَلُ مِنْ صَلَاةِ الْفَذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً ‘জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করা একাকী ছালাত আদায় করার চেয়ে সাতাশ গুণ বেশী মর্যাদাসম্পন্ন’।[8] এজন্য ইমাম যুহরী (রহঃ) একদিন একজন অশুদ্ধভাষী ব্যক্তির পিছনে ছালাত আদায় করে বলেন,لولا أن الصلاة في جماعة فضلت على الفذ؛ ما صليت وراءه ‘যদি একাকী ছালাতের চেয়ে জামা‘আতে ছালাতের মর্যাদা বেশী না হ’ত, তাহ’লে আমি এই লোকের পিছনে ছালাত আদায় করতাম না’।[9]

৩. এক ছালাতের পর অপর ছালাতের জন্য অপেক্ষমান থাকা :

জিহাদের মর্যাদা লাভের আরেকটি মাধ্যম হ’ল মসজিদে ফরয ছালাত আদায় করে অপর ছালাতের জন্য অপেক্ষমান থাকা। আবূহুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مُنْتَظِرُ الصَّلَاةِ مِنْ بَعْدِ الصَّلَاةِ، كَفَارِسٍ اشْتَدَّ بِهِ فَرَسُهُ فِي سَبِيلِ اللهِ عَلَى كَشْحِهِ، تُصَلِّي عَلَيْهِ مَلَائِكَةُ اللهِ، مَا لَمْ يُحْدِثْ أَوْ يَقُومُ، وَهُوَ فِي الرِّبَاطِ الْأَكْبَرِ ‘এক ছালাতের পরে আরেক ছালাতের জন্য আপেক্ষমান ব্যক্তি সেই অশ্বারোহী সৈনিকের মত, আল্লাহর পথে যার কোমরে ঘোড়ার লাগাম শক্ত করে বাধা আছে। ফেরেশতামন্ডলী তার জন্য রহমত প্রার্থনা করতে থাকেন, যতক্ষণ না তার ওযূ টুটে যায় অথবা মুছাল্লা ছেড়ে উঠে পড়ে। আর সে যেন সীমান্ত প্রহরার মহান কাজে নিয়োজিত’।[10] অন্যত্র তিনি বলেছেন, أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا، وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ، وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ ‘আমি কি তোমাদেরকে বলব না, আল্লাহ কিসের মাধ্যমে পাপরাশি মুছে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? ছাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই (বলে দিন)। তিনি বললেন, অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও ভালোভাবে ওযূ করা, অধিক পদচারণায় মসজিদে আসা এবং এক ছালাতের পর অপর ছালাতের জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এটাই হ’ল রিবাত্ব বা সীমান্ত প্রহরা’।[11]

৪. পিতামাতার সাথে সদাচরণ :

আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল সমূহের অন্যতম হ’ল পিতামাতার সাথে সদাচরণ করা এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা।[12] এই হাদীছে জিহাদের চেয়েও পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহারকে আগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এসে বলল, আমি আপনার নিকটে হিজরত ও জিহাদের উপরে বায়‘আত করতে চাই। যার দ্বারা আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাত কামনা করি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পিতা-মাতার কেউ জীবিত আছেন কি? লোকটি বলল, হ্যাঁ। বরং দু’জনেই বেঁচে আছেন। আমি তাদের উভয়কে ক্রন্দনরত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। রাসূল (ছাঃ) বললেন, এরপরেও তুমি আল্লাহর নিকট পুরস্কার আশা কর? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন,فَارْجِعْ إِلَى وَالِدَيْكَ فَأَحْسِنْ صُحْبَتَهُمَا فَفِيهِمَا فَجَاهِدْ ‘তুমি তোমার পিতা-মাতার নিকটে ফিরে যাও ও তাদেরকে সর্বোত্তম সাহচর্য দান কর এবং তাদের কাছেই জিহাদ কর’।[13] তিনি আরও বলেন,فَارْجِعْ إِلَيْهِمَا فَأَضْحِكْهُمَا كَمَا أَبْكَيْتَهُمَا، وَأَبَى أَنْ يُبَايِعَهُ ‘তুমি তাদেরকে হাসাও, যেমন তুমি তাদেরকে কাঁদিয়েছ। অতঃপর তিনি তার বায়‘আত নিতে অস্বীকার করলেন’।[14]

এর দ্বারা বুঝা যায় যে, পিতা-মাতার সেবা কখনো কখনো জিহাদের চেয়ে উত্তম হয়ে থাকে। জমহূর বিদ্বানগণের নিকটে সন্তানের উপর জিহাদে যাওয়া হারাম হবে, যদি তাদের মুসলিম পিতা-মাতা উভয়ে কিংবা কোন একজন জিহাদে যেতে নিষেধ করেন। কেননা তাদের সেবা করা সন্তানের জন্য ‘ফরযে আয়েন’। পক্ষান্তরে জিহাদ করা তার জন্য ‘ফরযে কিফায়াহ’। যা সে না করলেও অন্য কেউ করবে ইসলামী রাষ্ট্রের আমীরের হুকুমে।[15]

৫. বিধবা ও মিসকীনদের সহযোগিতা :

সহায়-সম্বলহীন মিসকীন ও স্বামীহারা বিধবা মহিলাদেরকে সহযোগিতার মাধ্যমে একজন মুসলিম ছিয়ামপালনকারী, তাহাজ্জুদের ছালাত আদায়কারী অথবা আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মত মর্যাদা লাভ করতে পারেন। আবূহুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,السَّاعِي عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالمِسْكِينِ كَالمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللهِ أَوْ كَالَّذِي يَصُومُ النَّهَارَ وَيَقُومُ اللَّيْلَ. ‘বিধবা ও মিসকীনদের ভরণ-পোষণের জন্য চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ অথবা সারাদিন ছিয়াম পালনকারী ও সারারাত (তাহাজ্জুদ) ছালাত আদায়কারীর সমান ছওয়াবের অধিকারী’।[16]

৬. যাকাত সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত থাকা :

যারা যাকাত সংগহের কাজে নিয়োজিত থাকে, তারা আল্লাহর পথে সংগ্রামকারীর মত মর্যাদাবান। রাফে‘ ইবনে খাদীজ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি,الْعَامِلُ عَلَى الصَّدَقَةِ بِالْحَقِّ كَالْغَازِي فِي سَبِيلِ اللهِ، حَتَّى يَرْجِعَ إِلَى بَيْتِه ‘সততার সাথে যাকাত আদায়কারী ব্যক্তি আল্লাহর পথের গাযী সৈনিকের মত মর্যাদাসম্পন্ন, যতক্ষণ না সে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে’।[17]

৭. জ্ঞান অর্জন করা :

জিহাদের ছওয়াব হাছিল করার অন্যতম মাধ্যম হ’ল দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করা। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ خَرَجَ فِي طَلَبِ العِلْمِ فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ حَتَّى يَرْجِعَ، ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণে বেরিয়ে পড়ে, সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় আছে বলে গণ্য হবে’।[18] বিশেষ করে মসজিদে নববীতে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে গমনকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে সংগ্রামরত মুজাহিদের ন্যায় মর্যাদাবান। আবূহুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ جَاءَ مَسْجِدِي هَذَا، لَمْ يَأْتِهِ إِلَّا لِخَيْرٍ يَتَعَلَّمُهُ أَوْ يُعَلِّمُهُ، فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللهِ، وَمَنْ جَاءَ لِغَيْرِ ذَلِكَ، فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الرَّجُلِ يَنْظُرُ إِلَى مَتَاعِ غَيْرِهِ ‘যে ব্যক্তি আমার এই মসজিদে (মসজিদে নববী) জ্ঞান শেখার জন্য অথবা শিক্ষা দেওয়ার জন্য আগমন করে, তার মর্যাদা আল্লাহর পথে জিহাদরত সৈনিকের মত। আর যে ব্যক্তি ভিন্ন উদ্দেশ্যে এখানে আসে, তার উপমা সেই ব্যক্তির মত, যে অপরের সম্পদের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে’।[19] এই জ্ঞানের উদ্দেশ্য হ’ল দ্বীনী জ্ঞান, যা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অর্জন করা হয় এবং যা মানুষকে পাপ থেকে দূরে থেকে সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করতে শেখায়।

৮. হজ্জ ও ওমরাহ করা :

হজ্জ একটি ফরয ইবাদত, যা সম্পাদনের মাধ্যমে জিহাদের নেকীও অর্জিত হয়। শিফা বিনতে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي أُرِيدُ الْجِهَادَ فِي سَبِيلِ اللهِ، فَقَالَ: أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى جِهَادٍ لَا شَوْكَةَ فِيهِ؟ قُلْتُ: بَلَى، قَالَ: حَجٌّ الْبَيْتِ، ‘এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল, আমি আল্লাহর পথে জিহাদ করতে চাই। তখন তিনি (ছাঃ) বললেন, ‘আমি কি তোমাকে এমন এক জিহাদের সন্ধান দেব, যাতে কোন কষ্ট নেই?’ আমি বললাম, অবশ্যই। তিনি বললেন, বায়তুল্লাহর হজ্জ করা’।[20] অপর এক বর্ণনায় এসেছে, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল,إِنِّي جَبَانٌ، وَإِنِّي ضَعِيفٌ قَالَ: هَلُمَّ إِلَى جِهَادٍ لَا شَوْكَةَ فِيهِ، الْحَجُّ، ‘আমি ভীরু এবং দুর্বল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন,  ‘চলো! এমন একটি জিহাদে যাই, যে জিহাদের পথে কোন কাঁটা নেই। আর তা হ’ল হজ্জ করা’।[21]

৯. নিজ পরিবার এবং পিতামাতার জন্য উপার্জন করা :

পরিবার, স্ত্রী-সন্তান, পিতামাতা এবং নিজের জন্য হালাল পথে আয়-উপার্জন করা জিহাদের ন্যায় ফযীলতপূর্ণ ইবাদত। কা‘ব ইবনে উজরা (রাঃ) বলেন,مَرَّ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ، فَرَأَى أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ جِلْدِهِ وَنَشَاطِهِ، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ: لَوْ كَانَ هَذَا فِي سَبِيلِ اللهِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنْ كَانَ خَرَجَ يَسْعَى عَلَى وَلَدِهِ صِغَارًا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ، وَإِنْ كَانَ خَرَجَ يَسْعَى عَلَى أَبَوَيْنِ شَيْخَيْنِ كَبِيرَيْنِ فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ، وَإِنْ كَانَ يَسْعَى عَلَى نَفْسِهِ يُعِفُّهَا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ، وَإِنْ كَانَ خَرَجَ رِيَاءً وَمُفَاخَرَةً فَهُوَ فِي سَبِيلِ الشَّيْطَانِ، ‘এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর পাশ দিয়ে চলে গেল। রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ সেই লোকের কায়িক পরিশ্রম ও কর্মোদ্যম দেখে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সে যদি আল্লাহ পথে এই পরিশ্রম করত, (তাহ’লে কতই না ভাল হ’ত)। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, সে যদি তার ছোট্ট সন্তাদের জন্য উপার্জনে বের হয়, তাহ’লে সে আল্লাহর পথেই ব্যস্ত আছে। সে যদি তার বৃদ্ধ পিতামাতার জন্য রোজগারে বের হয়, তাহ’লে সে আল্লাহর পথেই কষ্ট স্বীকার করছে। সে যদি নিজেকে সংযত রাখার জন্য আয়-উপার্জনে বের হয়, তাহ’লে সে আল্লাহর পথেই কাজ করছে। তবে সে যদি লৌকিকতা এবং অহংকারের জন্য উপার্জনে বের হয়, তাহ’লে সে শয়তানের পথে কাজ করছে’।[22]

১০. ফিৎনার সময় সুন্নাতকে আঁকড়ে থাকা :

যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে নিহত হয়, তারা শহীদ। আর যারা ফিৎনা ও প্রতিকূল পরিবেশে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাতকে মযবূতভাবে ধারণ করতে সক্ষম হন, তারাও শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ مِنْ وَرَائِكُمْ زَمَانَ صَبْرٍ، للمُتَمَسِّكِ فِيهِ أَجْرُ خَمْسِيْنَ شَهِيدًا، فَقَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللهِ، مِنَّا أَوْ مِنْهُمْ؟ قَالَ: مِنْكُمْ ‘নিশ্চয়ই তোমাদের পরবর্তীতে এমন এক ধৈর্যের যুগ আসবে, যে ব্যক্তি সেই মুহূর্তে আমার সুন্নাতকে আঁকড়ে থাকবে, সে পঞ্চাশজন শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। তখন ওমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যকার নাকি তাদের মধ্যকার (পঞ্চাশজন শহীদের মর্যাদ লাভ করবে)? রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যকার (৫০ জন) শহীদের মর্যাদা লাভ করবে’।[23]

১১. স্বৈরাচারী শাসকের সামনে হক কথা বলা :

স্বৈরাচারী এবং অত্যাচারী শাসকের সামনে হক কথা বলা এবং তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা অন্যতম জিহাদ। যারা এই কাজ করতে গিয়ে নিহত হন, তারা শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, سَيِّدُ الشُّهَدَاءِ حَمْزَةُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، وَرَجُلٌ قَالَ إِلَى إِمَامٍ جَائِرٍ فَأَمَرَهُ وَنَهَاهُ فَقَتَلَهُ ‘শহীদগণের সর্দার হ’ল হামযাহ ইবনু আব্দুল মুত্ত্বালিব এবং সেই ব্যক্তি, যে কোন অত্যাচারী শাসকের কাছে গিয়ে তাকে সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে। ফলে তাকে হত্যা করা হয়’।[24]

১২. প্রত্যেক ফরয ছালাতের পরে তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর পড়া :

অক্ষম, দুর্বল ও গরীব-মিসকীনরা প্রত্যেক ছালাতের পর রাসূল (ছাঃ)-এর শেখানো যিকির পাঠ করার মাধ্যমে জিহাদের নেকী লাভ করতে পারে। আবূহুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, দরিদ্র লোকেরা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল,ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ مِنَ الأَمْوَالِ بِالدَّرَجَاتِ العُلاَ، وَالنَّعِيمِ الـمُقِيمِ يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي، وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ، وَلَهُمْ فَضْلٌ مِنْ أَمْوَالٍ يَحُجُّونَ بِهَا، وَيَعْتَمِرُونَ، وَيُجَاهِدُونَ، وَيَتَصَدَّقُونَ، ‘সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চ মর্যাদা ও চিরস্থায়ী নে‘মত নিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে গেলেন। তাঁরা আমাদের মত ছালাত আদায় করছেন, আমাদের মত ছিয়াম পালন করছেন এবং তারা তাদের অর্থ-সম্পদের মাধ্যমে হজ্জ, ওমরাহ, জিহাদ ও ছাদাক্বাহ করার মর্যাদাও লাভ করছেন’। এ কথা শুনে রাসূল (ছাঃ) বললেন,أَلاَ أُحَدِّثُكُمْ إِنْ أَخَذْتُمْ أَدْرَكْتُمْ مَنْ سَبَقَكُمْ وَلَمْ يُدْرِكْكُمْ أَحَدٌ بَعْدَكُمْ، وَكُنْتُمْ خَيْرَ مَنْ أَنْتُمْ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِ إِلَّا مَنْ عَمِلَ مِثْلَهُ تُسَبِّحُوْنَ وَتَحْمَدُوْنَ وَتُكَبِّرُوْنَ خَلْفَ كُلِّ صَلاَةٍ ثَلاَثًا وَثَلاَثِيْنَ، ‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে, তাদের পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে। কেউ তোমাদের সমপর্যায়ে উপনীত হ’তে পারবে না। আর লোকদের মাঝে তোমরাই হবে উত্তম আমলকারী, তবে যে ব্যক্তি এ ধরনের আমল করবে তার কথা স্বতন্ত্র। তোমরা প্রত্যেক ছালাতের পর তেত্রিশ বার করে তাসবীহ্ (সুবহানাল্লাহ্), তাহমীদ (আলহামদুল্লিল্লাহ্) এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে। রাবী বলেন, এতে আমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হ’ল। কেউ বলল, আমরা তেত্রিশ বার তাসবীহ্ পড়ব। তেত্রিশ বার তাহমীদ আর চৌত্রিশ বার তাকবীর পড়ব। অতঃপর আমি তাঁর নিকট ফিরে গেলাম। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলবে, যাতে সবগুলোই তেত্রিশবার করে হয়ে যায়’।[25] অপর এক বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর ‘সুবহা-নাল্লাহ’ ৩৩ বার, ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার, ‘আল্লাহু আক্বার’ ৩৩ বার, সর্বমোট ৯৯ বার এবং ১০০ বার পূরণ করার জন্য একবার لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْـحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ দাহু লা-শারী-কা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর) পাঠ করবে, তার পাপ সমুদ্রের ফেনারাশি পরিমাণ হ’লেও মাফ হয়ে যাবে’।[26]

১৩. একশত বার আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করা :

উম্মে হানী (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার নিকটে আসলেন। আমি তাঁকে বললাম,يا رسولَ الله! قد كَبِرْتُ وضَعُفْتُ فمُرْني بِعَملٍ أعْملُهُ وأنا جالِسَةٌ، ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং দুর্বল হয়ে পড়েছি। তাই আমাকে এমন একটি আমলের ব্যাপারে নির্দেশনা দিন, যেই আমল আমি বসে বসে সম্পাদন করতে পারব’। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,سَبِّحِى اللَّهَ مِائَةَ تَسْبِيحَةٍ فَإِنَّهَا تَعْدِلُ لَكِ مِائَةَ رَقَبَةٍ تُعْتِقِينَهَا مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ وَاحْمَدِى اللَّهَ مِائَةَ تَحْمِيدَةٍ فَإِنَّهَا تَعْدِلُ لَكِ مِائَةَ فَرَسٍ مُسْرَجَةٍ مُلْجَمَةٍ تَحْمِلِينَ عَلَيْهَا فِى سَبِيلِ اللَّهِ وَكَبِّرِى اللَّهَ مِائَةَ تَكْبِيرَةٍ فَإِنَّهَا تَعْدِلُ لَكِ مِائَةَ بَدَنَةٍ مُقَلَّدَةٍ مُتَقَبَّلَةٍ وَهَلِّلِى اللَّهَ مِائَةَ تَهْلِيلَةٍ - تَمْلأُ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ وَلاَ يُرْفَعُ يَوْمَئِذٍ لأَحَدٍ عَمَلٌ إِلاَّ أَنْ يَأْتِىَ بِمِثْلِ مَا أَتَيْتِ بِهِ ‘তুমি একশত বার ‘সুবহানাল্লাহ’ পাঠ কর, তাহ’লে ইসমাঈলের বংশধর থেকে একশত জন গোলাম আযাদ করার সমপরিমাণ নেকী লাভ করতে পারবে। একশত বার ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ পাঠ কর, তাহ’লে তোমার জন্য সেই পরিমাণ নেকী লেখা হবে, যেন তুমি জিন বাঁধা ও লাগাম পরিহিত একশতটি ঘোড়ায় চড়ে আল্লাহর পথে লড়াই করছ। একশত বার ‘আল্লাহু আকবার’ পাঠ করবে, তাহ’লে তোমার জন্য কবুলযোগ্য একশতটি পশু কুরবানীর নেকী লেখা হবে। আর একশত বার ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করবে, তাহ’লে আকাশ ও যমীনের মধ্যবর্তী জায়গা নেকী দ্বারা পূর্ণ হয়ে যাবে। সেই দিন কারও আমল তোমার মত হবে না। তবে সেই ব্যক্তি ব্যতীত, যে তোমার মত এরূপ আমল করেছে’।[27]

১৪. আল্লাহর কাছে শাহাদত কামনা করা :

শহীদের মর্যাদা লাভের অন্যতম উপায় হ’ল সবসময় শহীদী মৃত্যু কামনা করা। যার হৃদয়ে শাহাদতের তামান্না থাকে, সে নিজ গৃহে মৃত্যুবরণ করলেও শাহাদতের মর্যাদা হাছিল করতে পরবে। সাহল ইবনে হুনাইফ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ سَأَلَ اللهَ الشَّهَادَةَ بِصِدْقٍ، بَلَّغَهُ اللهُ مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ، وَإِنْ مَاتَ عَلَى فِرَاشِهِ، ‘যে ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে শাহাদত প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদায় অভিষিক্ত করবেন, যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করে’।[28] অর্থাৎ শুধু বিশুদ্ধ নিয়তের কারণে জিহাদে অংশগ্রহণ না করেও সে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাবূক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে যখন মদীনার নিকটবর্তী হ’লেন, তখন তিনি বললেন,إِنَّ بِالْمَدِينَةِ أَقْوَامًا، مَا سِرْتُمْ مَسِيرًا، وَلاَ قَطَعْتُمْ وَادِيًا إِلَّا كَانُوا مَعَكُمْ ‘মদীনায় এমন কতিপয় লোক আছে যে, তোমরা এমন কোন পথ ভ্রমণ করনি এবং এমন কোন উপত্যকা অতিক্রম করনি, যেখানে তারা তোমাদের সাথে ছিল না। ছাহাবায়ে কেরাম বললেন,يَا رَسُولَ اللهِ، وَهُمْ بِالْمَدِينَةِ؟ ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তারা তো মদীনাতেই ছিল’। তখন তিনি বললেন, وَهُمْ بِالْمَدِينَةِ، حَبَسَهُمُ العُذْرُ، ‘তারা মদীনাতে ছিল, তবে ওযর তাদেরকে অাঁটকে রেখেছিল’।[29] অপর বর্ণনায় তিনি বলেন, حَبَسَهُمُ الْمَرَضُ ‘রোগ-ব্যাধি তাদেরকে অাঁটকে রেখেছিল’।[30] অর্থাৎ সেই সকল ছাহাবীগণ তাবূক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও, শুধু তাদের বিশুদ্ধ নিয়তের কারণে জিহাদে যোগদান করার নেকী লাভ করেছিলেন।

১৫. শহীদের মর্যাদা দানকারী বিপদ ও রোগ :

এমন কিছু বিপদাপদ ও রোগ-ব্যাধি আছে, যারা সেই বিপদাপদ ও রোগে মৃত্যুবরণ করে, তারা শহীদের মর্যাদা লাভ করতে পারে। জাবের ইবনে আতীক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,الشَّهَادَةُ سَبْعٌ سِوَى الْقَتْلِ فِي سَبِيلِ اللهِ: الْمَطْعُونُ شَهِيدٌ، وَالْغَرِقُ شَهِيدٌ، وَصَاحِبُ ذَاتِ الْجَنْبِ شَهِيدٌ، وَالْمَبْطُونُ شَهِيدٌ، وَصَاحِبُ الْحَرِيقِ شَهِيدٌ، وَالَّذِي يَمُوتُ تَحْتَ الْهَدْمِ شَهِيدٌ، وَالْمَرْأَةُ تَمُوتُ بِجُمْعٍ شَهِيدٌ ‘আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি ছাড়াও আরও সাত শ্রেণীর শহীদ রয়েছে। তারা হ’ল : (১) মহামারীতে মৃত (মুমিন) ব্যক্তি (২) পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি (৩) ‘যাতুল জাম্ব’ নামক কঠিন রোগে মৃত ব্যক্তি[31] (৪) (কলেরা, ডায়রিয়া বা অনুরূপ) পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি (৫) আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি (৬) ধ্বসে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি ও (৭) গর্ভাবস্থায় মৃত মহিলা’।[32] অন্যত্র তিনি বলেন (৮) যে মহিলা নিফাসগ্রস্ত হয়ে মারা যায়, সে শহীদ।[33] (৯) ফুসফুসের প্রদাহ বা যক্ষ্মা রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ।[34] (১০) বৃষ্টির পানিতে ডুবে মৃত (মুমিন) ব্যক্তি শহীদ।[35] (১১) সমুদ্রে সফরকারী সৈনিকের নৌযানের ঝাঁকুনিতে বমি হ’লে, তার জন্য রয়েছে শহীদের নেকী। (১২) সমুদ্রে ডুবে যাওয়া ব্যক্তির জন্য রয়েছে দু’জন শহীদের ছওয়াব’।[36] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্যত্র বলেন, مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دِينِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دَمِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ أَهْلِهِ فَهُوَ شَهِيد، ‘(১৩) যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ। (১৪) যে মুসলমান তার দ্বীনের জন্য নিহত হয়, সে শহীদ। (১৫) যে তার জীবন রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ। (১৬) যে ব্যক্তি তার পরিবার রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ’।[37] তিনি আরও বলেন, مَنْ قُتِلَ دُونَ مَظْلَمَتِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ (১৭) যে ব্যক্তি মযলূম অবস্থায় নিহত হয়, সে শহীদ’।[38] (১৮) যে ব্যক্তি তার ন্যায্য অধিকার রক্ষায় নিহত হয়, সে শহীদ’।[39] (১৯) ‘যে ব্যক্তি পাহাড়ের চূড়া থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করে, সে শহীদ। (১৯) যাকে হিংস্র প্রাণী ভক্ষণ করে, সে শহীদ’।[40] (২০) যে ব্যক্তি জিহাদের তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নিজ শয্যায় মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দান করেন।[41]

উল্লেখ্য যে, ঐ সকল মুমিন ব্যক্তি আখেরাতে শহীদের নেকী পাবেন। যদিও দুনিয়াতে তাদের গোসল ও জানাযা করা হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে নিহত শহীদের গোসল নেই। তিনি ঐ অবস্থায় ক্বিয়ামতের দিন উঠবেন।[42]

মূলত শহীদগণ তিন শ্রেণীর : (১) যারা দুনিয়া ও আখেরাতে শহীদ। এঁরা হ’লেন, কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত মুমিন ব্যক্তি। (২) আখেরাতে শহীদ। তারা হ’লেন উপরে বর্ণিত অন্যান্য শহীদগণ। (৩) দুনিয়াতে শহীদ, আখেরাতে নয়। তারা হ’ল, যুদ্ধের ময়দানে গণীমতের মাল আত্মসাৎকারী অথবা জিহাদ থেকে পলাতক অবস্থায় নিহত ব্যক্তি’।[43]

উপসংহার :

জান্নাত পিয়াসী মুমিন বান্দার উচিত অন্তরে সর্বদা জিহাদের তামান্না রাখা এবং সব ধরনের জিহাদের জন্য প্রস্ত্তত থাকা। আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,الْجِهَاد نَوْعَيْنِ جِهَاد بِالْيَدِ والسنان وَهَذَا المشارك فِيهِ كثير وَالثَّانِي الْجِهَاد بِالْحجَّةِ وَالْبَيَان وَهَذَا جِهَاد الْخَاصَّة من اتِّبَاع الرُّسُل وَهُوَ جِهَاد الائمة وَهُوَ افضل الجهادين لعظم منفعَته وَشدَّة مُؤْنَته وَكَثْرَة اعدائه ‘জিহাদ দুই প্রকার। (১) হাত ও অস্ত্রের দ্বারা জিহাদ, যেখানে অনেকেই অংশগ্রহণ করে থাকে। (২) দলীল ও বক্তব্যের মাধ্যমে জিহাদ, এটা নবী-রাসূলদের অনুগামীদের জিহাদ এবং প্রথমটি রাষ্ট্রনেতাদের জিহাদ। উভয় প্রকার জিহাদের মধ্যে উপকারিতার আধিখ্য, রসদ যোগানের অসুবিধা এবং শত্রুর সংখ্যাধিক্যের কারণে দ্বিতীয়টিই অধিকতর উত্তম।[44] মহান আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকার জিহাদের জন্য প্রস্ত্তত থাকার এবং উল্লিখিত আমলসমূহ সম্পাদনের মাধ্যমে শহীদী মর্যাদা লাভ করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!


[1]. আহমাদ হা/২২৭১৯; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৮৫৫; ছহীহাহ হা/১৯৪১; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০৬৩।

[2]. আবূদাঊদ হা/২৫৪১; তিরমিযী হা/১৬৫০; নাসাঈ হা/৩১৪৫; ইবনু মাজাহ হ/২৭৯২; মিশকাত হা/৩৮২৫; সনদ ছহীহ।

[3]. আবূদাঊদ হা/২৪৩৮; তিরমিযী হ/৭৫৭; ইবনু মাজাহ হা/১৭২৭; মিশকাত হা/১৪৬০; সনদ ছহীহ।

[4]. ফাৎহুল বারী ২/৫৩৪।

[5]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ ২৫/১৫৪।

[6]. বুখারী হা/৫২৭; মুসলিম হা/৮৫; তিরমিযী হা/১৮৯৮; নাসাঈ হা/৬১০; মিশকাত হা/৫৬৮।

[7]. আবূদাঊদ হা/৪২৬; তিরমিযী হা/১৭০, সনদ ছহীহ।

[8]. বুখারী হা/৬৪৫; মুসলিম হা/৬৫০; তিরমিযী হা/২১৫; নাসাঈ হা/৮৩৭; ইবনু মাজাহ হা/৭৮৯।

[9]. আবূ নু‘আঈম, হিলয়াতুল আওলিয়া ৩/৩৬৪।

[10]. মুসনাদে আহমাদ হা/৮৬২৫; তাবারাণী, মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৮১৪৪, সনদ হাসান।

[11]. মুসলিম হা/২৫১; তিরমিযী হা/৫১; নাসাঈ হা/১৪৩; ইবনু মাজাহ হা/৪২৭।

[12]. বুখারী হা/৫২৭; মুসলিম হা/৮৫; তিরমিযী হা/১৮৯৮; নাসাঈ হা/৬১০; মিশকাত হা/৫৬৮।

[13]. মুসলিম হা/২৫৪৯; মিশকাত হা/৩৮১৭।

[14]. আহমাদ হা/৬৮৩৩; আবুদাঊদ হা/২৫২৮; ইবনে মাজাহ হা/২৭৮২; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১৯, ছহীহ হাদীছ।

[15]. ফাৎহুল বারী হা/ ২৮২৫-এর ব্যাখ্যা, ৬/৪৫ পৃঃ। বিস্তারিত ‘জিহাদ ও ক্বিতাল’ বই দ্রঃ।

[16]. তিরমিযী হা/১৯৬৯; নাসাঈ হা/২৫৭৭; ইবনু মাজাহ হা/২১৪০, সনদ ছহীহ।

[17]. আবূদাঊদ হা/২৯৩৬; তিরমিযী হা/৬৪৫; ইবনু মাজহ হা/১৮০৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৪১১৭; মিশকাত হা/১৭৮৫, ছহীহ হাদীছ।

[18]. ছহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৮৮, সনদ হাসান লিগায়রিহী।

[19]. ইবনু মাজাহ হা/২২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৪২১৪, সনদ ছহীহ।

[20]. তাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/৭৯২; ছহীহুল জামে‘ হা/২৬১১।

[21]. তাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/২৯১০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭০৪৪।

[22]. তাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/২৮২; আল-জামে‘উছ ছাগীর হা/২৬৬৯; ছহীহুল জামে’ হা/১৪২৮।

[23]. তাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/১০৩৯৪; ছহীহুল জামে’ হা/২২৩৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৯৪।

[24]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/৪৮৮৪; ছহীহুত তারগীব হা/২৩০৮; ছহীহাহ হা/৩৭৪; ছহীহুল জামে’ হা/৩৬৭৫।

[25]. বুখারী হা/৮৪৩; মুসলিম হা/৫৯৫।

[26]. মুসলিম হা/৫৯৭; মিশকাত হা/৯৬৭।

[27]. নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/১০৬১৩; ছহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৫৫৩; সনদ হাসান।

[28]. মুসলিম হা/১৯০৯; আবূ দাঊদ হা/১৫২০; তিরমিযী হা/১৬৫৩; ইবনু মাজাহ হা/২৭৯৭; মিশকাত হা/৩৮০৮।

[29]. বুখারী হা/৪৪২৩; মিশকাত হা/৩৮১৫।

[30]. মুসলিম হা/১৯১১।

[31]. এটি সে যুগে একটি কঠিন মরণব্যাধি হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিল। নামটি স্ত্রীলিঙ্গ হওয়ায় রোগটি মেয়েদের মধ্যেই অধিকহারে হ’ত বলে ধারণা করা হয়। যেসব গর্ভবর্তী মেয়েদের পেটে বাচ্চা মারা যায় এবং সেকারণে মাও মারা যায়, ঐ মেয়েকে যাতুল জাম্ব-এর রোগিনী বলা হয়। ইবনু হাজার বলেন, এটিই প্রসিদ্ধ (ফাৎহুল বারী হা/২৮২৯-এর ব্যাখ্যা, ৬/৫১ পৃ.)। গৃহীত: মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, জিহাদ ও ক্বিতাল’ (রাজশাহী: হাফাবা, ২য় সংস্করণ, ২০১৩ খ্রিঃ) পৃ. ২০।

[32]. আবুদাঊদ হা/৩১১১; মিশকাত হা/১৫৬১, সনদ ছহীহ।

[33]. নাসাঈ হা/৩১৬৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৪৪১।

[34]. ছহীহুল জামে’ হা/৩৬৯১।

[35]. ছহীহুল জামে‘ হা/৪৪৩৯।

[36]. আবূদাঊদ হা/২৪৯৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৬৪২।

[37]. তিরমিযী হা/১৪২১; আবূদাঊদ হা/৪৭৭২; নাসাঈ হা/৪০৯৪; মিশকাত হা/৩৫২৯, হাদীছ ছহীহ।

[38]. নাসাঈ হা/৪০৯৩; ছহীহুত তারগীব হা/১৪১৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪৪৭।

[39]. মুসনাদে আবু ইয়া‘লা হা/৬৭৭৫, সনদ হাসান।

[40]. তাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/৯৭১৮; মুছান্নাফ আব্দুর রায্যাক হা/৯৫৭২; ইবনু হাজার হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন, ফাৎহুল বারী ৬/৪৪।

[41]. মুসলিম হা/১৯০৯; আবূদাঊদ হা/১৫২০; তিরমিযী হা/১৬৫৩; ইবনু মাজাহ হা/২৭৯৭; দারেমী হা/১৪৪৬; মিশকাত হা/৩৮০৮।

[42]. বুখারী হা/৪০৭৯; মিশকাত হা/১৬৬৫।

[43]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/৯১।

[44]. মিফতাহু দারিস সা‘আদাহ ১/৭০।






যাকাতুল ফিৎর : একটি পর্যালোচনা - মুহাম্মাদ খোরশেদ আলম
বিদায়ের আগে রেখে যাও কিছু পদচিহ্ন (৫ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ক্ষমা ও সহিষ্ণুতা : মুমিনের দুই অনন্য বৈশিষ্ট্য - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
মিথ্যার ধ্বংসাত্মক প্রভাব - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর পাঁচ দফা মূলনীতি : একটি বিশ্লেষণ (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
নেতৃত্বের মোহ (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আল-কুরআনের আলোকে ক্বিয়ামত (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
বিতর্কের ক্ষেত্রে করণীয়-বর্জনীয় - আসাদ বিন আব্দুল আযীয
আদর্শ সমাজ গঠনে সালামের ভূমিকা - মুহাম্মাদ মাইনুল ইসলাম
অল্পে তুষ্টি (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
খেয়াল-খুশির অনুসরণ (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ছিয়ামের ফাযায়েল ও মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
আরও
আরও
.