ভূমিকা :

মানুষের দৈহিক ইবাদত তিন ভাগে বিভক্ত। অন্তরের ইবাদত, মৌখিক ইবাদত এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ইবাদত। অনেকে ইবাদত বলতে শুধু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও মৌখিক ইবাদতকেই বুঝে থাকেন। কিন্তু অন্তরের ইবাদত সম্পর্কে তারা উদাসীন থাকেন। অথচ অন্তরের ইবাদতের উপর ভিত্তি করেই অন্যান্য সকল ইবাদত-বন্দেগী সম্পাদিত হয়। সেকারণ অন্তরের ইবাদতে বেশী জোর দেওয়া উচিত। কেননা হৃদয় যখন ইবাদতে রত হয়ে যায়, তখন হাত, পা, জিহবা, কান, চোখ সহ শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর আনুগত্যে নিয়োজিত হয়ে যায়। আর অন্তরের যত শক্তিশালী ইবাদত আছে, তন্মধ্যে অন্যতম হ’ল চিন্তার ইবাদত।

চিন্তা বলতে কী বুঝায়?

চিন্তা হ’ল মানব মস্তিষ্কের অপরিহার্য ক্রিয়া। চিন্তাশক্তি থাকার কারণেই অন্যান্য প্রাণীর উপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত। চিন্তা-ভাবনাকে আরবীতে ‘তাফাক্কুর’ (التَّفَكُّرُ) বলা হয়। এর আরবী প্রতিশব্দগুলো হ’ল-التَّأَمُّلُ، التَّدَبُّرُ، العِبْرَةُ، النَّظْرَةُ،। আর এর বাংলা প্রতিশব্দ হ’ল- গভীর চিন্তা, ধ্যান, ভাবনা, উপদেশ, শিক্ষা লাভ প্রভৃতি। কুরআন ও হাদীছে এই শব্দটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।

চিন্তার সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। কারণ নির্দিষ্ট সংজ্ঞার মাধ্যমে চিন্তার পরিচয় তুলে ধরা সহজ নয়। তাই বিদ্বানগণ বিভিন্নভাবে ‘তাফাক্কুর’ বা ‘চিন্তা-ভাবনা’-এর সংজ্ঞা দিয়েছেন। যেমন- ইবনে মানযূর (রহঃ) বলেন, الفِكْرُ: إِعمال الْخَاطِرِ فِي الشَّيْءِ- ‘মনকে কোন কিছুর মাঝে ব্যস্ত রাখার নাম হ’ল চিন্তা-ভাবনা’।[1] জুরজানী বলেন, أن التفكر تصرف القلب بالنظر في الدليل، ‘দলীল নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য হৃদয়ের কাজের নাম হ’ল চিন্তা-ভাবনা’।[2] ইবনে আশুর (রহঃ) বলেন, التَّفَكُّرُ: جَوَلَانُ الْعَقْلِ فِيْ طَرِيْقِ اسْتِفَادَةِ علم صَحِيح ‘বিশুদ্ধ জ্ঞানের ফায়েদা হাছিলের জন্য ভাবনার আবর্তন-পুনরাবর্তনকে ‘তাফাক্কুর’ বা চিন্তা-ভাবনা বলা হয়’।[3]

ইমাম বাগাভী (রহঃ) বলেন, التَّفَكُّرُ تَصَرُّفُ الْقَلْبِ فِي طَلَبِ مَعَانِي الْأَشْيَاءِ، ‘বিবিধ বস্ত্তর নিগূঢ় তত্ত্ব অনুসন্ধানের জন্য

অন্তরের কাজকে চিন্তা বলা হয়’।[4]

ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, تَحْدِيْقُ الْقَلْبِ إِلَى جِهَةِ الْمَطْلُوبِ الْتِمَاسًا لَهُ، ‘আকাঙিক্ষত বস্ত্তকে পাওয়ার জন্য সেই দিকে হৃদয়ের গভীর দৃষ্টিপাতের নাম তাফাক্কুর বা চিন্তা-ভাবনা’।[5]

আহমাদ শারবাছী (রহঃ) বলেন, التفكر هو أن ينظر الإنسان في الشيء على وجه العبرة والعظة، لتقوية جوانب الخير والصلاح، ومقاومة دواعي الشر والفساد، ‘চিন্তা-ভাবনা হ’ল উপদেশ ও শিক্ষা লাভের জন্য কোন কিছুর প্রতি মানুষের মনোযোগী দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা, যাতে কল্যাণ ও উপকারিতার দিকটি শক্তিশালী হয় এবং মন্দ ও অপকারিতার উপকরণগুলো প্রতিহত হয়’।[6]

মোটকথা, অন্তরের অনুভাবিত শক্তির মাধ্যমে কোন বস্ত্ত বা বিষয়ের তাৎপর্য অনুসন্ধান করা এবং উপদেশ লাভের উদ্দেশ্যে মনের দৃষ্টি দিয়ে সেই বস্ত্ত বা বিষয়ের ভাল-মন্দ দিকটি পর্যবেক্ষণ করার মনোবৃত্তিকে ‘চিন্তা-ভাবনা’ বলা হয়।

চিন্তা কি ইবাদত?

চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া। কখনো ব্যক্তি ও বস্ত্তর প্রভাবে, আবার কখনো পারিপার্শ্বিকতার কারণে মানুষের চিন্তা-চেতনার রং বদলায় এবং সর্বদা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। ফলে মানব মনে যেমন খারাপ চিন্তার প্রকাশ ঘটে, তেমনি তার মাঝে ভালো চিন্তারও অবির্ভাব ঘটে। খারাপ চিন্তা ব্যক্তিকে মন্দ পথে ধাবিত করে। আর ভালো চিন্তা তাকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়।

ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,قَاعِدَة جليلة أصل الْخَيْر وَالشَّر من قبل التفكّر فَإِن الْفِكر مبدأ الْإِرَادَة والطلب فِي الزّهْد وَالتّرْك وَالْحب والبغض ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হ’ল ভালো-মন্দ সবকিছু চিন্তা-ভাবনা থেকেই উৎপন্ন হয়। কারণ চিন্তাই হচ্ছে ইচ্ছা-অভিলাষের মূলভিত্তি। চাই সেটা দুনিয়াবিমুখতার ক্ষেত্রে হোক বা কোন কিছু পরিত্যাগ করার এবং ভালবাসা ও শত্রুতার ক্ষেত্রে হোক’।[7] সেজন্য একজন মুসলিম ও অমুসলিমের চিন্তা-ভাবনার মাঝে বিস্তর ফারাক রয়েছে। অমুসলিমের চিন্তা শুধু পার্থিব লাভ-ক্ষতি নিয়েই আবর্তিত হয়। কিন্তু একজন প্রকৃত মুসলিমের চিন্তা-ভাবনা শুধু দুনিয়ার লাভ-লোকসানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং সেই চিন্তা পৃথিবীর গন্ডি ছাড়িয়ে তার মৃত্যুর পরবর্তী আখেরাতের জীবন পর্যন্ত প্রলম্বিত হয়। আল্লাহর সৃষ্টিশৈলী, নৈপুণ্য ও তাঁর দয়ার বিশালতা মননশীল মুমিনের চিন্তার দিগন্ত খুলে দেয়। এই চিন্তার প্রভাবে প্রভাবিত হয় তার দেহ-মন। ফলে সেই চিন্তার আলোকেই তার জীবনযাত্রা চলতে থাকে। সুতরাং যেই চিন্তার মাধ্যমে একজন বান্দা আল্লাহমুখী হ’তে পারে, তাঁর সৃষ্টির নিগূঢ় রহস্য উপলব্ধি করতে পারে, তাঁর নে‘মত সম্ভারের বিশালতা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে, নিজের ভুল সংশোধনে উদ্যোগী হ’তে পারে এবং আখেরাতমুখী জীবন গঠনে অনুপ্রাণিত হ’তে পারে, তখন সেই চিন্তা-ভাবনা ইবাদতে রূপান্তরিত হয়। আর এই চিন্তা-ভাবনাকেই চিন্তার ইবাদত বলে আখ্যায়িত করা হয়।

পবিত্র কুরআনের প্রায় একশত আয়াতে মহান আল্লাহ চিন্তার ইবাদতে রত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ، ‘এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শন সমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-গবেষণা করতে পার’ (বাক্বারাহ ২/২১৯)

অন্যত্র তিনি বলেন, 

أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوا فِي أَنْفُسِهِمْ مَا خَلَقَ اللهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَجَلٍ مُسَمًّى وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ بِلِقَاءِ رَبِّهِمْ لَكَافِرُونَ، أَوَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَيَنْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ كَانُوا أَشَدَّ مِنْهُمْ قُوَّةً وَأَثَارُوا الْأَرْضَ وَعَمَرُوهَا أَكْثَرَ مِمَّا عَمَرُوهَا وَجَاءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَمَا كَانَ اللهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ

‘তারা কি নিজেদের অন্তরে ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য? কিন্তু অনেক মানুষ তাদের পালনকর্তার সাথে সাক্ষাতে অবিশ্বাসী। তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না, অতঃপর দেখে না যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণতি কিরূপ হয়েছে? তারা তাদের চাইতে অধিক শক্তিশালী ছিল। তারা যমীনে চাষাবাদ করত এবং তাতে আবাদ করত যা এরা আবাদ করে তার চাইতে বেশী। তাদের নিকট তাদের রাসূলগণ এসেছিল সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে। অতঃপর আল্লাহ তাদের শাস্তি দিতে চাননি। কিন্তু তারাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল’ (রূম ৩০/৮-৯)

উবাইদ ইবনে উমাইর (রহঃ) বলেন, আমি আয়েশা ছিদ্দীকা (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে বললাম,أَخْبِرِينَا بِأَعْجَبِ شَيْءٍ رَأَيْتِهِ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর এমন অবস্থান সম্পর্কে আমাদের বলুন, যা আপনার কাছে সবচেয়ে বেশী আশ্চর্যজনক মনে হয়েছে’। এ প্রশ্নের পর আয়েশা (রাঃ) চুপ থাকলেন। কিছুক্ষণ পরে বললেন, ‘কোন এক রাতের কথা। রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন,يَا عَائِشَةُ ذَرِينِي أَتَعَبَّدُ اللَّيْلَةَ لِرَبِّي ‘হে আয়েশা! আমাকে ছাড়। আজ সারা রাত আমি আমার রবের ইবাদত করব’। তাঁর কথার প্রত্যুত্তরে আমি বললাম,وَاللهِ إِنِّي لَأُحِبُّ قُرْبَكَ وَأُحِبُّ مَا سَرَّكَ، ‘আল্লাহর কসম! আমি আপনার সঙ্গ ভালোবাসি এবং আপনাকে যা আনন্দিত করে, তাও আমি ভালোবাসি’। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘তিনি (আমার কথার কোন জবাব না দিয়ে) উঠে পড়লেন। তারপর পবিত্রতা অর্জন করে ছালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি কাঁদতে থাকলেন, ফলে অশ্রুতে তার গাল ভিজে গেল। তিনি আবার কাঁদতে থাকলেন। কাঁদতে কাঁদতে তার দাঁড়ি অশ্রুতে ভিজে গেল। তিনি আবার কাঁদতে থাকলেন। তাঁর চোখের পানিতে মাটিও ভিজে গেল। অতঃপর (ফজর) ছালাতের আযান দেওয়ার জন্য বেলাল (রাঃ) আসলেন। এসে দেখলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কাঁদছেন। তিনি বললেন, يَا رَسُولَ اللهِ لِمَ تَبْكِي وَقَدْ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ وَمَا تَأَخَّرَ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কাঁদছেন কেন? আল্লাহ তো আপনার পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,أَفَلَا أَكُونُ عَبْدًا شَكُورًا لَقَدْ نَزَلَتْ عَلَيَّ اللَّيْلَةَ آيَةٌ وَيْلٌ لِمَنْ قَرَأَهَا وَلَمْ يَتَفَكَّرْ فِيهَا: {إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ} ‘আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? (শুনে রাখ!) আজ রাতে আমার উপর একটি আয়াত নাযিল হয়েছে। ধ্বংস সেই ব্যক্তির জন্য, যে এই আয়াত তেলাওয়াত করল, কিন্তু তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করল না। অতঃপর তিনি তেলাওয়াত করলেন,إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ، ‘নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিবসের আগমন-নির্গমনে জ্ঞানীদের জন্য (আল্লাহর) নিদর্শন সমূহ রয়েছে’ (আলে ইমরান ৩/১৯০)[8]

সুফইয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, مَنْ قَرَأَ آخِرَ آلِ عِمْرَانَ فَلَمْ يَتَفَكَّرْ فِيهِ ويْلَه. يَعُدُّ بِأَصَابِعِهِ عَشْرًا ‘যে ব্যক্তি সূরা আলে ইমরানের শেষাংশ তেলাওয়াত করবে। কিন্তু এগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে না, তার জন্য ধ্বংস। তিনি এ কথাটি হাতের আঙুলে দশ বার গণনা করে বলেন (তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস!)।[9] ড. ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন, এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তি কুরআনের আয়াত ও আল্লাহর নিদর্শনাবলী নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করবে না, তার জন্য ধ্বংস ও শাস্তির হুমকি দেওয়া হয়েছে। চিন্তা-ভাবনা না করার কারণেই এই ভীতি-প্রদর্শন। কিন্তু আল্লাহর শাস্তির ভীতি-প্রদর্শন কেবল আল্লাহর আদেশের বিপরীত করার কারণেই এসে থাকে। সুতরাং এটা স্পষ্ট হ’ল যে, চিন্তা-ভাবনা করা ওয়াজিব’।[10]

ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীন চিন্তা-ভাবনার এই আবশ্যকতার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতেন। উম্মুদ্দারদা (রাঃ) বলেন, كانت أكثر عبادة أبي الدرداء التفكّر ‘আবুদ্দারদা (রাঃ) যে ইবাদত সবচেয়ে বেশী করতেন, সেটা হ’ল চিন্তা-ভাবনা’।[11] হাসান বছরী (রহঃ) বলেন, أَفْضَلُ الْعِبَادَةِ التَّفَكُّرُ وَالْوَرَعُ ‘শ্রেষ্ঠ ইবাদত হ’ল চিন্তা-ভাবনা এবং আল্লাহভীরুতা’।[12]

তারা শুধু নিজেরা এই আমলে নিয়োজিত থাকতেন না; বরং অন্যদেরকেও এই মহান ইবাদতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। আবূ সুলাইমান আদ্দারানী (রহঃ) বলেন, عَوِّدُوا أَعْيُنَكُمُ الْبُكَاءَ وَقُلُوبَكُمُ التَّفَكُّرَ، ‘তোমরা তোমাদের চোখগুলোকে অশ্রুবর্ষণে এবং অন্তরগুলোকে চিন্তা-ভাবনায় অভ্যস্ত করো’।[13] ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, إِخْوَانِي: تَفَكَّرُوا لِمَاذَا خُلِقْتُمْ فَالتَّفَكُّرُ عِبَادَةٌ، ‘হে আমার ভাইয়েরা! কেন তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা কর। (মনে রেখ!) এই চিন্তা-ভাবনা করাও এক ধরনের ইবাদত’।[14] সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহঃ) বলেন,إِنَّمَا الْعِبَادَةُ التَّفَكُّرُ فِي أَمْرِ اللهِ وَالْوَرَعُ فِي دِينِهِ، ‘ইবাদত হচ্ছে আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা এবং তাঁর দ্বীনের ব্যাপারে তাক্বওয়া অবলম্বন করা’।[15]

সুতরাং বোঝা গেল, আখেরাতমুখী চিন্তা-ভাবনা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম ইবনুল জাওযী চিন্তার ইবাদতের ধরন বর্ণনা করে বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তির সকল চিন্তা-ভাবনা আখেরাতকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। সে এই জীবনে যা কিছুর মুখোমুখি হয় তার সবই তাকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মানুষ সাধারণত যা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সেই দিকেই তার মনোযোগ নিবদ্ধ হয়। যেমন যদি একদল মিস্ত্রি কোন বাড়িতে প্রবেশ করে, তাহ’লে কাঠমিস্ত্রি বাড়ির ফার্নিচার-আসবাবপত্রগুলো নিরীক্ষণ করে। রাজমিস্ত্রির নযর থাকে ছাদ ও দেয়ালের দিকে। আর যে দর্জি সে পর্যবেক্ষণ করে বাড়ির পর্দাগুলো।

ঠিক তেমনই মুমিন বান্দা যখন অন্ধকার দেখে, তখন সে অন্ধকার কবরের কথা স্মরণ করে। যখন ব্যথা পায়, তখন আল্লাহর শাস্তির কথা ভাবে। আর যখন কোন ভয়ানক শব্দ শুনতে পায়, তখন তার কল্পনায় ভেসে ওঠে ক্বিয়ামত দিবসের শিঙ্গায় ফুঁৎকারের আওয়াজ। শুধু তাই নয়, সে যখন মানুষকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে, তখন কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তির কথা ভাবে। যখন আনন্দের কিছু দেখতে পায়, তখন জান্নাতের সুখ-শান্তির কল্পনায় বিভোর হয়। সুতরাং তার পূর্ণ মনোযোগ ফিরে যায় তার প্রকৃত জীবনের দিকে এবং এই অবস্থা তাকে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকে দূরে রাখে’।[16]

সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, চিন্তা-ভাবনাও ইবাদত হ’তে পারে, যদি সেই চিন্তা ব্যক্তিকে আল্লাহমুখী করে এবং সেই চিন্তা থেকে উপদেশ হাছিল করা যায়। এটা কোন সাধারণ ইবাদত নয়; বরং অনেক বড় ধরনের ইবাদত, যার ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই গাফেল থাকে।

চিন্তা-ভাবনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য :

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে এবং বুদ্ধিবৃত্তির উন্মেষ সাধনে চিন্তার ইবাদতের কোন বিকল্প নেই। যার ভাবনার জগৎ যত প্রসারিত, তার দূরদর্শিতা তত অবারিত। মানবজীবনের সংবিধান কুরআনকে অনুধাবনে, রাসূলের মুখনিঃসৃত হাদীছের মর্ম উপলব্ধিতে, হক্ব-বাতিলের পার্থক্য নিরূপনে এবং সর্বোপরি তাওহীদের বিশুদ্ধ জ্ঞান আহরণে চিন্তা-ভাবনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনস্বীকার্য।

১.আল্লাহ চিন্তার ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন :

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে মানুষকে চিন্তা-ভাবনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে মানুষ তার চার পাশের পরিদৃষ্ট সকল কিছু থেকে উপদেশ হাছিল করতে পারে এবং তাঁর সৃষ্টিকর্তার বড়ত্ব ও মহত্ত্ব অনুভব করতে পারে। এমনকি একজন জন্মান্ধ ব্যক্তিও অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে আল্লাহর নে‘মতরাজি অবলোকন করতে পারেন। কিন্তু অন্তরের চোখ মুদিত থাকলে বাহ্যিক চোখ দিয়ে কখনোই আল্লাহর সৃষ্টিরাজির প্রকৃত রহস্য-নিপুণত্ব উপলব্ধি করা সম্ভব হয় না। মহান আল্লাহ বলেন, أَفَلَمْ يَسِيْرُوْا فِي الْأَرْضِ فَتَكُوْنَ لَهُمْ قُلُوبٌ يَعْقِلُونَ بِهَا أَوْ آذَانٌ يَسْمَعُوْنَ بِهَا فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَكِنْ تَعْمَى الْقُلُوْبُ الَّتِي فِي الصُّدُوْرِ- ‘তারা কি পৃথিবী ভ্রমণ করেনি? তাহ’লে তাদের হৃদয়গুলি তা থেকে জ্ঞান হাছিল করত এবং তাদের কানগুলি তা যথার্থভাবে শুনত। কেননা চোখ অন্ধ হয় না, বরং অন্ধ হয় হৃদয়, যা বুকের মধ্যে থাকে’ (হজ্জ ২২/৪৬)। এই আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, মানুষের দৃষ্টি দুই ধরনের; চোখের দৃষ্টি এবং অন্তরের দৃষ্টি। যাদের হৃদয়ের চোখ অন্ধ থাকে তারা এই পৃথিবীর কোথাও সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণ খুঁজে পায় না। চোখ থাকতেও এরা অন্ধ। আর যাদের হৃদয়ের দৃষ্টি প্রখর, তারা আকাশ-যমীনের সর্বত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অস্তিত্বর প্রমাণ খুঁজে পায়। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, لكل إنسان أربع أعين: عينان في رأسه لدنياه، وعينان في قلبه لآخرته، فإن عميت عينا رأسه وأبصرت عينا قلبه فلم يضره عماه شيئا، وإن أبصرت عينا رأسه وعميت عينا قلبه فلم ينفعه نظره شيئا، ‘প্রত্যেক মানুষের চারটি করে চোখ আছে। দুনিয়া দেখার জন্য তার মাথায় স্থাপিত দু’টি চোখ এবং তার আখেরাত অবলোকনের জন্য হৃদয়ের দু’টি চোখ। তার অন্তরের চোখ যদি ভালো থাকে, তাহ’লে তার মাথার চোখ অন্ধ হ’লেও সেই অন্ধত্ব তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। কিন্তু অন্তরের চোখ যদি অন্ধ হয়ে যায়, তাহ’লে মাথার চোখ দৃষ্টিসম্পন্ন হ’লেও এই দৃষ্টিশক্তি তার কোনই উপকার করতে পারে না’।[17]

সুতরাং মানুষের হৃদয়ের চোখই প্রকৃত চোখ। দুনিয়াতে যাদের হৃদয়ের চোখ অন্ধ থাকবে আখেরাতে সে অন্ধ হয়ে উত্থিত হবে। তখন সে আক্ষেপ করে বলবে,رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيرًا، ‘হে আমার রব! কেন তুমি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালে? অথচ আমি তো দুনিয়াতে চক্ষুষ্মান ছিলাম’ (তোয়াহা ২০/১২৫)। কিন্তু সেই দিন আক্ষেপ করে কোনই লাভ হবে না। সেকারণ মহান আল্লাহ দুনিয়াতে হৃদয়ের দৃষ্টি প্রসারিত করে চিন্তার ইবাদতে রত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوْا فِيْ أَنْفُسِهِمْ مَا خَلَقَ اللهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَجَلٍ مُسَمًّى وَإِنَّ كَثِيْرًا مِنَ النَّاسِ بِلِقَاءِ رَبِّهِمْ لَكَافِرُوْنَ- ‘তারা কি নিজেদের অন্তরে ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য? কিন্তু অনেক মানুষ তাদের পালনকর্তার সাথে সাক্ষাতে অবিশ্বাসী’ (রূম ৩০/৮)। অত্র আয়াতে মানুষকে আকাশ-যমীন এবং তাদের নিজেদের সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন মানুষ এর মাধ্যমে আল্লাহর একত্ব, রাজত্ব ও ক্ষমতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে।[18]

মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানক্বীতী (রহঃ) বলেন, সৃষ্টিকুল নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করার কারণেই অধিকাংশ মানুষ কাফের। যদি তারা আকাশ-যমীন ও সৃষ্টিরাজি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করত, তাহ’লে তারা তাদের সৃষ্টিকর্তার সন্ধান পেয়ে যেত।[19] আল্লামা শাওক্বানী (রহঃ) বলেন,لو تفكروا فيها كما ينبغي، لعلموا وحدانية الله، ‘তারা যদি

সৃষ্টিরাজি নিয়ে যথার্থভাবে চিন্তা করত, তাহ’লে তারা

আল্লাহর একত্ব সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করত’।[20]

মানুষ যখন আল্লাহর সৃষ্টিরাজি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে তখন তার হৃদয়ের অন্ধত্ব দূর হয়ে যায়। হৃদয়ের দৃষ্টি ফিরে পায় সীমাহীন আলো। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, الْبَصِيرَةُ نُورٌ يَجْعَلُهُ اللهُ فِي عَيْنِ الْقَلْبِ، يُفَرِّقُ بِهِ الْعَبْدُ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ، ‘দূরদর্শিতা এক ধরনের আলো, যা আল্লাহ বান্দার অন্তরের চোখে স্থাপন করে দেন। এই আলোর সাহায্যে সে হক্ব ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য করতে পারে’।[21] ইবনু আব্দি রবিবহী বলেন,إنّ العقل عين القلب، فإذا لم يكن للمرء عقل كان قلبه أكمه، ‘নিশ্চয়ই বিবেক-বুদ্ধি হ’ল হৃদয়ের চোখ। যদি মানুষের বিবেক না থাকে, তাহ’লে তার চোখ অন্ধ হয়ে যায়’।[22] সেকারণ অন্তরের অন্ধত্ব দূর করে যথার্থভাবে আল্লাহর পরিচয় লাভ করার জন্য মানবজাতিকে চিন্তার ইবাদতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেননা তাওহীদের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসী বান্দার অন্তরদৃষ্টি কখনো অন্ধ হয় না। তিনি জন্মান্ধ হ’তে পারেন, চোখ হারিয়ে ফেলতে পারেন, বৃদ্ধ বয়সে তার চোখে ছানি পড়তে পারে, কিন্তু তার অন্তরদৃষ্টি সদা জাগ্রত ও প্রখর থাকে। এই অন্তরদৃষ্টির প্রখরতার মূল হাতিয়ার হ’ল চিন্তার ইবাদত।

২.হেরা গুহায় রাসূল (ছাঃ)-এর ধ্যান :

কা‘বা গৃহ থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত একটি পাহাড়ের নাম ‘জাবালে নূর’। এ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ‘হেরা গুহা’ ছিল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একটি আধ্যাত্মিক শিক্ষায়তন। তিনি নবুঅত লাভের আগ মুহূর্তে মক্কার কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থেকে দূরে হেরা গুহার নিরিবিলি স্থানকে বেছে নেন। আল্লাহ এই ছোট গুহাকে তার প্রিয় স্থানে পরিণত করে দেন। ফলে বাড়ীতে তাঁর মন বসতো না। তাই ছাতু ও পানি নিয়ে চলে যেতেন হেরা গুহায়। কখনো কখনো খাদীজা (রাঃ) সেখানে তাঁকে খাবার পৌঁছিয়ে দিতেন। মানবতার মঙ্গল চিন্তায় নিঃসঙ্গপ্রিয়তা এবং আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হওয়া ছিল নবুঅত প্রাপ্তির পূর্ব নিদর্শন। যা ছিল মহান আল্লাহর দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং মহতী ব্যবস্থাপনার অংশ।

প্রাচীন আরবী প্রবাদে বলা হয়, ما نفع القلب شيء مثل عزلة يدخل بها ميدان فكرة، ‘চিন্তার ময়দানে ঢুকে পড়ে একাকীত্ব অবলম্বনের মতো কোন কিছুই হৃদয়কে এত উপকৃত করতে পারে না’।[23] ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) বলেন, জাহেলী যুগে নিঃসঙ্গ ইবাদত ছিল কুরায়েশদের রীতি। তারা পূর্ব থেকে যেমন আশূরার ছিয়াম পালন করত, তেমনি হেরা গুহায় নিঃঙ্গ ইবাদত করত। রাসূলুল্লাহ প্রতি বছর এক মাস করে হেরা গুহায় অবস্থান করতেন’।[24] মূলতঃ মহান আল্লাহর ইশারায় রাসূল (ছাঃ) এই নির্জন গুহাতে ধ্যান করতেন এবং চিন্তার ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন (أَنَّهُ كَانَ يَتَعَبَّدُ بِالتَّفَكُّرِ)।[25] এভাবে চিন্তার ইবাদতে রত থাকাবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী নিয়ে হাযির হন স্বয়ং জিব্রীল (আঃ)। অবতীর্ণ হয় হেদায়াতের দিশারী মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের সূরা ‘আলাক্বের প্রথম পাঁচটি আয়াত। যে আয়াতগুলোতে পড়ালেখা ও তার মাধ্যমে এমন জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়, যা আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক উভয় জ্ঞানের সমন্বয় সাধন করে। যারা চিন্তা-ভাবনা করে এই কুরআনের মর্মবাণী অনুধাবন করতে পেরেছে, তাদের ভিতর-বাহির আলোকিত হয়েছে এবং তাদের মাধ্যমেই অধঃপতিত মানবতা ফিরে পেয়েছে মুক্তি ও সফলতার নিশ্চয়তা।

সুতরাং বলা যায়, ইসলামের সূচনাই হয়েছিল চিন্তার ইবাদতের মাধ্যমে। এটা ছিল পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর অনুপম আদর্শ। তারকা ও সূর্য পুঁজারীদের চিন্তার দেয়ালে তিনি অভিনব কায়দায় আঘাত করেছিলেন। তাদের চিন্তার দুর্গ ভেঙ্গে দিয়ে সেখানে তাওহীদের ভীত রচনার প্রয়াস পেয়েছিলেন। মহান আল্লাহ সূরা আন‘আমে এটা বিষদভাবে তুলে ধরেছেন। সেজন্য নিঃসঙ্গ চিন্তার ইবাদতকে বলা হয় ইবরাহীমী ইবাদতের অবশিষ্টাংশ’(فَالتَّحَنُّثُ مِنْ بَقَايَا الإبْرَاهِيْمِيَّةِ)।[26] যার মাধ্যমে আল্লাহভীরু বান্দার মধ্যে আধ্যাত্ম চেতনার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটা সম্ভব হয়।

৩. চিন্তা-ভাবনা হৃদয়ের ইবাদত :

প্রত্যেক ইবাদতের মূল শর্ত হ’ল ঈমান। আর ঈমানের সংজ্ঞা হ’ল হৃদয়ে বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়ন। এর আলোকে ঈমানের শাখা-প্রশাখাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

(১) অন্তরের শাখা-প্রশাখা (شُعَبُ الْقَلْبِ): যেমন- ঈমানের ছয়টি রুকনের উপর বিশ্বাস রাখা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা পোষণ করা, আল্লাহভীতি, চিন্তা-ভাবনা প্রভৃতি। (২) মৌখিক শাখা-প্রশাখা (شُعَبُ اللِّسَانِ) যেমন- কালেমা শাহাদাতের সাক্ষ্য দেওয়া, যিকির-আযকার করা, কুরআন তেলাওয়াত করা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ ইত্যাদি। (৩) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শাখা-প্রশাখা (شُعَبُ الْـجَوَارِحِ): যেমন- ওযূ, ছালাত, যাকাত, ছিয়াম, হজ্জ, পিতামাতার খেদমত, জিহাদ প্রভৃতি।

সুতরাং চিন্তা-ভাবনা হৃদয়ের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত। মুমিন বান্দা এই ইবাদতের মাধ্যমে যে ঈমানী শক্তি লাভ করে, সেই শক্তিই তাকে অন্যান্য সকল ইবাদতের জন্য যোগ্য করে তোলে। যেমন কেউ যদি দুনিয়ার নশ্বরতা এবং আখেরাতের স্থায়ীত্ব নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে, তাহ’লে সে কখনোই ছালাত পরিত্যাগ করবে না, হারাম উপার্জনে পা বাড়াবে না। বরং আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনে সুখী হওয়ার জন্য সে আল্লাহমুখী হবে, পৃথিবীর সকল স্বার্থ উপেক্ষা করে নিরন্তর ছুটে চলবে তার রবের পানে। ক্বাতাদা (রহঃ) বলেন, مَنْ تَفَكَّرَ فِيْ خَلْقِ نَفْسِهِ عَرَفَ أَنَّهُ إِنَّمَا خُلِقَ وَلُيِّنَتْ مَفَاصِلُهُ لِلْعِبَادَةِ، ‘যে ব্যক্তি নিজের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে, সে জানতে পারবে তাকে (কেন) সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ইবাদতের জন্য অনুগত হয়ে যাবে’।[27] আর চিন্তার ইবাদতে যিনি যত বেশী আত্মনিয়োগ করবেন তার হৃদয়জগৎ তত বেশী আলোকিত হবে এবং অন্তরদৃষ্টি প্রখর হবে।

পক্ষান্তরে বান্দা যদি হৃদয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে যত্নশীল ও অভ্যস্ত না হন, তাহ’লে তার দ্বীন-ইসলাম শুষ্ক বিয়াবানে পরিণত হবে। ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘যদি কোন গাছের সঠিক পরিচর্যা ও সেচ দেওয়া না হয়, তাহ’লে সেই গাছটি এক পর্যায়ে মারা যায়। এমনকি স্বাভাবিক পরিচর্যা নিয়েও যদি সেচ দেওয়া বন্ধ করা হয়, তবুও গাছটি আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়। ঠিক সেভাবেই একজন বান্দার হৃদয় যমীনে ইসলামের বৃক্ষ রোপিত থাকবে, সে যদি নিয়মিত এর পরিচর্যা না করে এবং সবসময় উপকারী জ্ঞান, নেক আমল এবং চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে একে সিক্ত না রাখে, তাহ’লে তার লালিত ইসলামের বৃক্ষটি এক পর্যায়ে বিবর্ণ ও শুষ্ক হয়ে যায়’।[28] সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহঃ) বলেন, التَّعَبُّدُ هو التَّفَكُّرُ فِي أَمرِ اللهِ وَالْوَرَعُ عَنْ مَحَارِمِ اللهِ، وَأَدَاءُ فَرَائِضِ اللهِ تَعَالَى، ‘ইবাদত হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশনা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা, তাঁর নিষিদ্ধ কার্যাবলী থেকে বিরত থাকা এবং তাঁর নির্দেশিত ফরয বিধি-বিধান আদায় করা’।[29]

৪. নেক আমল সম্পাদনে চিন্তা-ভাবনার প্রভাব :

প্রত্যেক নেক আমল ও ইবাদত-বন্দেগীর সাথে চিন্তা-ভাবনার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। চিন্তা যখন হৃদয় যমীনকে আচ্ছন্ন করে, তখন সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে সিণগ্ধতার আবেশ। দেহ-মন নুয়ে পড়ে আল্লাহর ইবাদতে। কিন্তু মনের গহীনে যদি চিন্তার বৃষ্টি না ঝরে, তখন হৃদয় ঊষর মরুতে পরিণত হয়। সেখানে প্রশান্তির কোন ফুল ফোটে না। ফলে কায়িক ইবাদত সম্পাদিত হয়ে যায়, কিন্তু মানসিক তৃপ্তি সেখানে অনুপস্থিত থাকে। মহান আল্লাহ বলেন,أَنْ تَقُومُوا لِلَّهِ مَثْنَى وَفُرَادَى ثُمَّ تَتَفَكَّرُوْا، ‘তোমরা আল্লাহর জন্য দু’দু’জন বা এক একজন করে দাঁড়াও। অতঃপর চিন্তা-ভাবনা কর’ (সাবা ৩৪/৪৬)

শায়খ ছালেহ আল-উছায়মীন (রহঃ) বলেন,ينبغي للإنسان إذا قام لله يعمل، أن يتفكر ماذا فعل في هذا العمل، ‘মানুষ যখন আল্লাহর জন্য আমল সম্পাদনে দন্ডায়মান হয়, তখন তাকে এটা ভেবে দেখা উচিত যে, সে এই আমল সম্পাদনে কী কী করছে’।[30]

অর্থাৎ কোন ইবাদত করার সময় চিন্তা করে দেখতে হবে- আমি কতটুকু মনোযেগী হয়ে এই ইবাদত করতে পারছি, ইবাদতটা শারঈ পদ্ধতিতে হচ্ছে কি-না, কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি হচ্ছে কি-না, জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য এবং জান্নাত লাভের জন্য আমি এটা করছি কি-না, এটা স্রেফ আল্লাহর জন্য হচ্ছে কি-না, ইবাদতটি যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ততটুকু গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কি-না। বান্দা ইবাদত-বন্দেগী করার সময় এসব বিষয় ভাবতে না পারলে তিনি স্রেফ অভ্যাসে তাড়িত হয়ে ইবাদতটি করবেন। এটা নিছক আল্লাহর আনুগত্য হিসাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হবেন। তাই তো রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا قُمْتَ فِي صَلَاتِكَ فَصَلِّ صَلَاةَ مُوَدِّعٍ، ‘যখন তুমি ছালাতে দাঁড়াবে, তখন সে ছালাতকে নিজের জীবনের শেষ ছালাত মনে করে আদায় করবে’।[31]

মানুষ যদি ছালাত আদায়ের প্রাক্কালে এই চিন্তা মাথায় নিয়ে আসতে পারে, তাহ’লে বলা যেতে পারে যে, এটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সফলতা। কেননা একজন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী ফাঁসির কাষ্ঠে যাওয়ার আগে যে অনুভূতি নিয়ে জীবনের সর্বশেষ ছালাত আদায় করতে পারে, একজন স্বাধীন বান্দা কখনই সেই অনুভূতি নিয়ে ছালাত আদায় করতে পারে না। তবে যারা সাচ্চা ঈমানদার, নিজের ঈমানের পারদকে সর্বদা উর্ধ্বগামী করে রাখার চেষ্টা করেন, চিন্তার ইবাদতে সদা তৎপর থেকে সাধ্যানুযায়ী পাপমুক্ত জীবন যাপনের চেষ্টা করেন, আল্লাহর যিকিরে অন্তরকে সদা সিক্ত রাখেন, তাদের জন্য মৃত্যুর অনুভূতি নিয়ে ছালাত আদায় করা খুব কঠিন নয়।

তাছাড়া অনুধাবন না করে অমনোযোগী হয়ে ইবাদত করারও কোন মূল্য নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,اعْلَمُوا أَنَّ اللهَ لَا يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لَاهٍ، ‘জেনে রাখ! আল্লাহ গাফেল ও অমনোযোগী মনের দো‘আ কবুল করেন না’।[32]

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,رَكْعَتَانِ مُقْتَصِدَتَانِ فِي تَفَكُّرٍ، خَيْرٌ مِّنْ قِيَامِ لَيْلَةٍ وَالْقَلْبُ سَاهٍ، ‘অমনোযোগী মনে সারা রাত ক্বিয়ামুল লাইল আদায় করার চেয়ে চিন্তা-ভাবনাসহ দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা উত্তম’।[33] আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেন, تَفَكُّرُ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ قِيَامِ لَيْلَةٍ ‘পুরো রাত তাহাজ্জুদ পড়ার চেয়ে এক ঘণ্টা চিন্তা-ভাবনা করা উত্তম’।[34] আবূ ত্বালেব মাক্কী (রহঃ) বলেন, إن التفكر في الصلاة أفضل منه في غير الصلاة لأنهما عملان، ‘ছালাতের বাইরে চিন্তা করার চেয়ে ছালাতের ভিতরে চিন্তা-ভাবনা করা অধিকতর উত্তম। কেননা এতে দু’টি আমল একসাথে সম্পাদিত হয় (একটি ছালাত, আরেকটি হ’ল চিন্তা-ভাবনা)’।[35]

স্মর্তব্য যে, চিন্তার ইবাদতে অধিক গুরুত্ব দিতে গিয়ে একদল মানুষ এটাকে অপব্যাখ্যা করে থাকে। মূল ইবাদত থেকে সরে গিয়ে কোয়ান্টাম মেথড, মুরাকাবা প্রভৃতি আবিষ্কারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে পথভ্রষ্ট করে থাকে। সুতরাং মনে রাখতে হবে যে, একজন মুসলিম চিন্তা-ভাবনা ও ইবাদতের মাঝে সমন্বয় করবে। অর্থাৎ চিন্তা-ভাবনায় যতটুকু সময় সে ব্যয় করবে, তা ইবাদত ব্যতীত ব্যয় করবে না। আর যতটুকু সময় ইবাদতে ব্যয় করবে, তা চিন্তা-ভাবনা ব্যতীত ব্যয় করবে না। বরং উভয়টিকে একত্রিত করবে।

ইবনুল আরাবী (রহঃ) বলেন, ‘মানুষ মতভেদ করে থাকে যে, ছালাত না-কি চিন্তা-ভাবনা, কোনটি উত্তম ইবাদত? ভ্রান্ত ছূফীরা চিন্তা-ভাবনাকে বেশী গুরুত্ব দেয়। আর ফুক্বাহায়ে কেরাম দু’টির সমন্বয় করে ছালাতকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। রাসূল (ছাঃ)-এর কর্মপন্থার দিকে নযর দিলে দেখা যাবে এটাই ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত। সুতরাং তাঁর সুন্নাতের উপরেই আমাদের নির্ভর করতে হবে। অপরদিকে ছুফীদের দিকে লক্ষ্য করুন! তাদের গুরু একদিন, একরাত, একমাস ধরে ধ্যান করে; এই দীর্ঘ সময়ে তারা তাদের ধ্যান ভঙ্গ করে না। এই পদ্ধতি সঠিকতা থেকে যোজন যোজন দূরে এবং মানুষের জন্য একেবারেই অনুপযোগী’।[36] সুতরাং একজন মুসলিম ইবাদত ও চিন্তা-ভাবনার মাঝে সমন্বয় সাধন করবে। একটির প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে আরেকটিকে পরিত্যাগ করবে না। কারণ এমনটি করলে সে ভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতায় নিপতিত হবে।

(ক্রমশঃ)

আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ

এম.এ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

[1]. ইবনে মানযূর আফ্রীকী, লিসানুল আরব (বৈরূত: দারু ছাদের, ২য় মুদ্রণ, ১৪১৪হি.), ৫ম খন্ড, পৃ. ৬৫।

[2]. জুরজানী, কিতাবুত তা‘রীফাত (বৈরূত: দারুল কুতুবিল-ইলমিইয়াহ, ১ম মুদ্রণ, ১৪০৩হি./১৯৮৩খ্রি.), পৃ. ৫৪।

[3]. ইবনে আশুর, আত-তাহরীর ওয়াত তানবীর, পৃ. ৭/২৪৪।

[4]. মুহিউস সুন্নাহ বাগাভী, মা‘আলিমুত তানযীল ফী তাফসীরিল কুরআন (তাফসীরে বাগাভী), ৪/২৯৪।

[5]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদরিজুস সালেকীন ১/১৬৬।

[6]. ড. আহমাদ শারবাছী, মাওসূ‘আতু আখলাক্বিল কুরআন (বৈরূত: দারুর রাইদ আল-আরাবী, তাবি) ২/২৬৬।

[7]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ. ১৯৮।

[8]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬২০; ছহীহুত তারগীব হা/১৪৬৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৮, সনদ ছহীহ।

[9]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ২/১৮৯।

[10]. ড. ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ, আত-তাফাক্কুর (জেদ্দা: মাজমূ‘আতু যাদ, ১ম মুদ্রণ, ১৪৩০হি./২০০৯খ্রি.) পৃ. ১০।

[11]. আবূ নু‘আইম ইছ্ফাহানী, হিলয়াতুল আওলিয়া ১/২০৮।

[12]. ইবনু আবিদ্দুন্ইয়া, আল-ওরা‘উ, পৃ. ৫৩।

[13]. হিলয়াতুল আওলিয়া ৯/২৭৪।

[14]. ইবনুল জাওযী, আত-তাবছিরাহ, ২/৭২।

[15]. বায়হাক্বী, আয-যুহদুল কাবীর, পৃ. ৩১২।

[16]. ইবনুল জাওযী, ছায়দুল খাত্বের, পৃ. ৫২১।

[17]. তাফসীরে কুরতুবী ১২/৭৭।

[18]. ঐ, ১৪/৮।

[19]. শানক্বীতী, আযওয়াউল বায়ান ৬/১৬৮।

[20]. শাওক্বানী, ফাৎহল ক্বাদীর ৪/২৪৮।

[21]. মাদারিজুস সালেকীন, ২/৩২০।

[22]. ইবনু আব্দি রবিবহী, আল-ইক্বদুল ফারীদ ২/১১৩।

[23]. আহমাদ ইবনু আজীবাহ, আল-বাহরুল মাদীদ ফী তাফসীরিল কুরআনিল মাজীদ, ২/৪৯৪।

[24]. সীরাত ইবনু হিশাম ১/২৩৫; ফাৎহুল বারী, ১০/৪২৫।

[25]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী ৮/৭১৭।

[26]. ড. আকরাম যিয়া উমরী, সীরাহ নববিয়াহ ছহীহাহ ১/১২৩-টিকা।

[27]. তাফসীর ইবনে কাছীর ৭/৪১৯।

[28]. ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুয়াক্কি‘ঈন ১/১৩৪।

[29]. আবূ নু‘আইম, হিলয়াতুল আওলিয়া, ২/১৬১।

[30]. উছায়মীন, শারহু রিয়াযিছ ছালেহীন, ১/৫৭৭।

[31]. ইবনু মাজাহ হা/৪১৭১; মিশকাত হা/৫২২৬, সনদ হাসান।

[32]. তিরমিযী হা/৩৪৭৯; মিশকাত হা/২২৪১, সনদ হাসান।

[33]. ইবনুল মুবারাক, আয্-যুহদ ওয়ার রাক্বায়েক্ব ১/৯৭; গাযালী, ইহয়াউ উলূমিদ্দীন ৪/৪২৫।

[34]. বায়াহক্বী, শু‘আবুল ঈমান ১/২৬২।

[35]. আবূ ত্বালেব মাক্কী, কূতুল কুলূব ফী মু‘আমালাতিল মাহবূব ১/৮৬।

[36]. তাফসীরে কুরতুবী ৪/৩১৫।






বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
তওবা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
দাফনোত্তর দলবদ্ধ মুনাজাতের বিধান - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
ঈদায়নের কতিপয় মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
আহলেহাদীছ জামা‘আতের বিরুদ্ধে কতিপয় মিথ্যা অপবাদ পর্যালোচনা (৫ম কিস্তি) - তানযীলুর রহমান - শিক্ষক, বাউটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজশাহী
আযান ও ইক্বামত : বিভ্রান্তি নিরসন - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
মহামনীষীদের পিছনে মায়েদের ভূমিকা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
তাক্বলীদের বিরুদ্ধে ৮১টি দলীল (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কর্তব্য - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকার - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
সর্বনাশের সিঁড়ি - মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান
হাদীছ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পরিক্রমা (২য় কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
বিদায়ের আগে রেখে যাও কিছু পদচিহ্ন (৬ষ্ঠ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আরও
আরও
.