জান্নাতে প্রাসাদ নির্মাণ করবেন যেভাবে

ভূমিকা :

জান্নাত লাভ করা প্রত্যেক বান্দার আরাধ্য বিষয়। মুমিন বান্দা হৃদয়ে সর্বদা জান্নাত লাভের স্বপ্ন লালন করেন। তবে শুধু কামনা করলেই জান্নাত পাওয়া যায় না; বরং এর জন্য কিছু করণীয় ও বর্জনীয় রয়েছে। পাশাপাশি ইসলামী শরী‘আতে এমন কতিপয় নেক আমল আছে, যা সম্পাদন করার মাধ্যমে মুমিন বান্দা জান্নাতের বিশেষ বিশেষ প্রাসাদ সমূহের মালিক হ’তে পারেন। আলোচ্য নিবন্ধে জান্নাতে প্রাসাদ নির্মাণকারী সৎ আমল সমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।

জান্নাতের প্রাসাদ কেমন?

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমরা একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, الْجَنَّةُ مَا بِنَاؤُهَا؟ ‘জান্নাতের (প্রাসাদসমূহ) কি দ্বারা নির্মিত? তিনি বললেন, لَبِنَةٌ مِنْ ذَهَبٍ وَلَبِنَةٌ مِنْ فِضَّةٍ وَمِلَاطُهَا الْمِسْكُ الْأَذْفَرُ وَحَصْبَاؤُهَا اللُّؤْلُؤُ وَالْيَاقُوتُ وَتُرْبَتُهَا الزَّعْفَرَانُ مَنْ يَدْخُلُهَا يَنْعَمُ وَلَا يَبْأَسُ وَيَخْلُدُ وَلَا يَمُوتُ وَلَا يَبْلَى ثِيَابُهُمْ وَلَا يَفْنَى شَبَابُهُمْ، ‘(জান্নাতী প্রাসাদের) একটি ইট স্বর্ণের ও একটি ইট রৌপ্যের। সুগন্ধময় কস্ত্তরী হচ্ছে তার খামির বা সিমেন্ট। মণি-মুক্তা হ’ল তার কঙ্কর বা খোয়া। আর মাটি জাফরানের। যে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে সে অত্যন্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবে। কখনো হতাশা বা দুশ্চিন্তায় পতিত হবে না। সে তাতে চিরস্থায়ী থাকবে। কখনো মৃত্যুবরণ করবে না। তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ ময়লা-পুরান হবে না এবং তাদের যৌবনও শেষ হবে না’।[1] জান্নাতের মাটি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, دَرْمَكَةٌ بَيْضَاءُ مِسْكٌ خَالِصٌ ‘(জান্নাতের মাটি) সাদা ও খাঁটি মিশকের সুগন্ধযুক্ত হবে’।[2]

পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে আলোচিত জান্নাতের প্রাসাদ সমূহের বর্ণনা শুনে হৃদয়ের ক্যানভাসে সেগুলোর কাল্পনিক চিত্র ভেসে ওঠে। কিন্তু জান্নাতের প্রাসাদ ও নায-নে‘মত মানুষের কল্পনার চেয়েও সুনদর। হাদীছে কুদসীতে মহান আল্লাহ বলেন, أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ، ‘আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য (জান্নাতে) এমন সব জিনিস প্রস্ত্তত রেখেছি, যা কোন চোখ কোনদিন দেখেনি, কোন কান কোনদিন শোনেনি এবং কোন হৃদয় কখনো কল্পনাও করেনি’।[3]

জান্নাতের প্রাসাদ লাভের শর্তাবলী :

জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার জন্য মোটা দাগে দু’টি শর্ত প্রযোজ্য। (১) ঈমান আনা এবং (২) আমলে ছালেহ তথা সৎকর্ম সম্পাদন করা।

এখানে ‘ঈমান আনা’-এর অর্থ হ’ল ঈমানের ৬টি স্তম্ভের উপর পরিপূর্ণভাবে বিশ^াস স্থাপনের মাধ্যমে সার্বিক জীবনে তাওহীদ বাস্তবায়ন করা এবং যাবতীয় শিরক বর্জন করা। আর ‘আমলে ছালেহ’-এর অর্থ হ’ল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের উপর সুদৃঢ় থাকা, ইহসানের[4] দাবী বাস্তবায়ন করা, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী ফরয ইবাদতসমূহ সম্পাদন করা এবং হারাম কথা-কাজ ও উপার্জনসহ যাবতীয় পাপাচার থেকে সর্বোতভাবে বিরত থাকা। এই দু’টি শর্ত পূরণ না করা পর্যন্ত কোন বান্দা জান্নাত লাভের যোগ্য হ’তে পারে না।

মহান আল্লাহ এ দু’টি শর্তের বর্ণনা দিয়ে বলেন, وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُبَوِّئَنَّهُمْ مِنَ الْجَنَّةِ ‌غُرَفًا تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا نِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ- ‘আর যারা ঈমান আনে ও সে অনুযায়ী সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করে আমরা অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষসমূহে স্থান দেব। যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত। যেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কতই না উত্তম প্রতিদান সৎকর্মশীলদের জন্য’ (আনকাবূত ২৯/৫৮)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَمَا أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ بِالَّتِي تُقَرِّبُكُمْ عِنْدَنَا زُلْفَى إِلَّا مَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُولَئِكَ لَهُمْ جَزَاءُ الضِّعْفِ بِمَا عَمِلُوا وَهُمْ فِي ‌الْغُرُفَاتِ آمِنُونَ- ‘তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদেরকে আমাদের নিকটবর্তী করে দিবে না। কেবল যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারা তাদের সৎকর্মের বহুগুণ বেশী প্রতিদান পাবে। আর তারা (জান্নাতের) কক্ষ সমূহে শান্তির সাথে থাকবে’ (সাবা ৩৪/৩৭)। অত্র আয়াতদ্বয়ে জান্নাতের কক্ষ বলতে প্রাসাদ বুঝানো হয়েছে।

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ يَرَوْنَ أَهْلَ الْغُرَفِ، كَمَا تَرَوْنَ الْكَوْكَبَ الدُّرِّيَّ الْغَابِرَ فِي الْأُفُقِ مِنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لِتَفَاضُلِ مَا بَيْنَهُمَا، ‘অবশ্যই জান্নাতবাসীরা তাদের উপরের বালাখানার বাসিন্দাদের এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা আকাশের পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে উজ্জ্বল দীপ্তিমান নক্ষত্র দেখতে পাও। এটা হবে তাদের মধ্যে মর্যাদার পার্থক্যের কারণে। ছাহাবীগণ বললেন,يَا رَسُولَ اللهِ، تِلْكَ مَنَازِلُ الْأَنْبِيَاءِ لَا يَبْلُغُهَا غَيْرُهُمْ؟ ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এ তো নবীগণের জায়গা। তাদের ব্যতীত অন্যরা সেখানে পৌঁছতে পারবে না। তিনি বললেন,بَلَى وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، رِجَالٌ آمَنُوا بِاللهِ وَصَدَّقُوا الْمُرْسَلِينَ، ‘হ্যাঁ, সে সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যেসব লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং রাসূলগণকে সত্য বলে স্বীকার করবে (তারাও সেই মর্যাদায় উপনীত হ’তে সক্ষম হবে)।[5]

জান্নাতের প্রাসাদ নির্মাণ করার উপায়

পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে এমন কিছু নেক আমলের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যে আমলগুলো সম্পাদন করলে সেই বান্দার জন্য সাথে সাথে জান্নাতে বিশেষ ধরনের প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। আর এর মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে, জান্নাতে যার প্রাসাদ থাকবে, সে জান্নাতেই যাবে; জাহান্নামে নয়। কুরআন ও হাদীছে কয়েকটি নামে জান্নাতের প্রাসাদকে অভিহিত করা হয়েছে। যেমন- الغُرْفَةُ (ঘর), البَيْتُ (বাড়ি) এবং القَصْرُ (প্রাসাদ) প্রভৃতি। খাত্ত্বাবী বলেন, জান্নাতের ঘর বা বাড়ি বলতে প্রাসাদকেই বুঝানো হয়েছে।[6] জান্নাতে প্রাসাদ নির্মাণের আমল সমূহ নিম্নে ধারাবাহিকভাবে আলোকপাত করা হ’ল।-

(১) তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অবলম্বন করা :

প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে যাবতীয় পাপাচার ও হারাম থেকে বিরত থেকে আল্লাহর আনুগত্য করার নাম হ’ল তাক্বওয়া। যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতের প্রাসাদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, لَكِنِ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ ‌غُرَفٌ مِنْ فَوْقِهَا ‌غُرَفٌ مَبْنِيَّةٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَعْدَ اللهِ لَا يُخْلِفُ اللهُ الْمِيعَادَ، ‘আর যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে স্তরের উপর স্তর বিশিষ্ট সুউচ্চ প্রাসাদ। যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। এটাই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি। আর আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না’ (যুমার ৩৯/২০)। অত্র আয়াতে মুত্তাকী বান্দাদের জন্য জান্নাতী প্রাসাদের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। আলী (রাঃ) বলেন, ‌كونوا ‌لقبول ‌العمل ‌أشد ‌اهتماما ‌منكم ‌بالعمل، فإنّه لن يقلّ عمل مع التّقوى، وكيف يقلّ عمل متقبّل؟ ‘তোমরা আমল করার চেয়ে আমল কবুল হওয়ার ব্যাপারে বেশী গুরুত্ব দাও। কেননা তাক্বওয়ার সাথে সম্পাদিত কোন আমল অল্প হয় না, তাহ’লে কবুলযোগ্য আমল কিভাবে অল্প হবে?’[7] ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘তাক্বওয়ার তিনটি স্তর আছে। প্রথম স্তর : অন্তর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পাপাচার ও হারাম বিষয় সমূহ থেকে রক্ষা করা। দ্বিতীয় স্তর : মাকরূহ বা অপসন্দনীয় বিষয় সমূহ থেকে বিরত থাকা। তৃতীয় স্তর : অনর্থক বিষয় সমূহ থেকে বেঁচে থাকা। প্রথম স্তর বান্দাকে নব জীবন দান করে, দ্বিতীয় স্তর তার স্বাস্থ্য ও শক্তিমত্তাকে ফলদায়ক করে এবং তৃতীয় স্তর তাকে আনন্দ, প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা দান করে’।[8] হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন,ما زالت التقوى بالمتَّقين حتى تركوا كثيرًا من الحلال؛ مخافة الحرام، ‘পরহেযগার ব্যক্তিদের তাক্বওয়া ততক্ষণ পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ থাকে, যতক্ষণ তারা হারামে পতিত হওয়ার ভয়ে অনেক হালাল বিষয়কেও পরিহার করেন’।[9]

(২) আল্লাহর উপর ভরসা করা :

তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। পার্থিব জীবনে সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায় এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে মুমিন বান্দা আল্লাহর উপর ভরসা করে অপার্থিব প্রশান্তি লাভ করে। আর এ কারণেই তাদের জন্য জান্নাতে অনবদ্য প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُبَوِّئَنَّهُمْ مِنَ الْجَنَّةِ غُرَفًا تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا نِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ، الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ- ‘আর যারা ঈমান আনে ও সে অনুযায়ী সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করে আমরা অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষসমূহে স্থান দেব। যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত। যেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কতই না উত্তম প্রতিদান সৎকর্মশীলদের জন্য। যারা দৃঢ় থাকে এবং তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করে’ (আনকাবূত ২৯/৫৮-৫৯)। জীবনের সকল ক্ষেত্রে যারা ধৈর্যশীলতার পরিচয় দেন এবং কেবল আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হন, অত্র আয়াতে তাদের জন্য জান্নাতী প্রাসাদ বরাদ্দ দেওয়ার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।

ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহঃ) বলেন,الْمَقْدُورُ يَكْتَنِفُهُ أَمْرَانِ: التَّوَكُّلُ قَبْلَهُ، وَالرِّضَا بَعْدَهُ، ‌فَمَنْ ‌تَوَكَّلَ ‌عَلَى ‌اللهِ ‌قَبْلَ ‌الْفِعْلِ. وَرَضِيَ بِالْمَقْضِيِّ لَهُ بَعْدَ الْفِعْلِ فَقَدْ قَامَ بِالْعُبُودِيَّةِ، ‘ভাগ্য দু’টি বিষয় দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে : কাজের শুরুতে তাওয়াক্কুল এবং শেষে সন্তুষ্টি। সুতরাং যে ব্যক্তি কাজ করার শুরুতে আল্লাহর উপর ভরসা করল এবং কাজের শেষে আল্লাহর ফায়ছালায় সন্তুষ্ট থাকল, সে যেন পূর্ণভাবে আল্লাহর দাসত্ব করে নিল’।[10]

আবূ আলী দাক্কাক্ব (রহঃ) বলেন, ‌‘আল্লাহর ওপর ভরসা করার তিনটি স্তর রয়েছে : (১) তাওয়াক্কুল বা ভরসা, (২) তাসলীম বা মেনে নেওয়া এবং (৩) তাফবীয বা সমর্পণ করা। তাওয়াক্কুলের অধিকারী ব্যক্তি আল্লাহর প্রতিশ্রুতির ওপর ভরসা করে নিশ্চিন্ত থাকেন। তাসলীমের অধিকারী ব্যক্তি তার সম্পর্কে আল্লাহ যে ইলম রাখেন, একেই যথেষ্ট মনে করেন। আর তাফবীযের অধিকারী ব্যক্তি আল্লাহর ফায়ছালায় পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট থাকেন। সুতরাং তাওয়াক্কুল হ’ল সাধারণ মুমিনের বৈশিষ্ট্য, তাসলীম হ’ল আল্লাহর ওলীদের বৈশিষ্ট্য এবং তাফবীয হ’ল তাওহীদপন্থীদের বৈশিষ্ট্য’। অন্যভাবে বলা যায়- তাওয়াক্কুল হ’ল সাধারণ নবীদের বৈশিষ্ট্য, তাসলীম হ’ল আল্লাহর বন্ধু ইবরাহীম (আঃ)-এর বৈশিষ্ট্য এবং তাফবীয হ’ল আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর বৈশিষ্ট্য’।[11]

(৩) ধৈর্যশীল হওয়া :

ধৈর্যশীলতা নেক আমলের অর্ন্তভুক্ত, যার মাধ্যমে মুমিন বান্দা জান্নাতে বিশেষ ধরনের অট্টালিকার মালিক হ’তে পারে। আল্লাহ বলেন, أُولَئِكَ يُجْزَوْنَ ‌الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوا وَيُلَقَّوْنَ فِيهَا تَحِيَّةً وَسَلَامًا، خَالِدِينَ فِيهَا حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا- ‘তাদেরকে তাদের ধৈর্যের প্রতিদান স্বরূপ জান্নাতের কক্ষ দেওয়া হবে এবং তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা দেওয়া হবে অভিবাদন ও সালাম দ্বারা। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কতই না সুন্দর সেই আশ্রয়স্থল ও আবাসস্থল!’ (ফুরক্বান ২৫/৭৫-৭৬)। অর্থাৎ দ্বীনের পথে দাওয়াত-তাবলীগ, ইলম অর্জন, দরিদ্রতা, রোগ-ব্যাধি, ইবাদত-বন্দেগী ও পাপাচার বর্জনের ক্ষেত্রে ধৈর্যের প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ মুমিন বান্দাকে জান্নাতের বিশেষ বালাখানার মাধ্যমে মর্যাদা দান করবেন।[12]

ধৈর্য ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ, যা না থাকলে পূর্ণাঙ্গ মুমিন হওয়া যায় না। সুফিয়ান ইবনে উয়ায়না (রহঃ) বলেন, يَحْتَاجُ الْمُؤْمِنُ إِلَى الصَّبْرِ ‌كَمَا ‌يَحْتَاجُ ‌إِلَى ‌الطَّعَامِ ‌وَالشَّرَابِ، ‘মুমিন বান্দা খানাপিনার মতই ধৈর্যশীলতার মুখাপেক্ষী থাকে’।[13] ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক যেমন, ঈমানের সাথে ধৈর্যের সম্পর্ক ঠিক তেমন। আর এই ধৈর্য তিনভাবে হয়ে থাকে: (১) ফরয ইবাদত সম্পাদনে ধৈর্যধারণ, যা ইবাদত বিনষ্ট হ’তে দেয় না, (২) হারাম থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ, যা হারামে জড়িত হ’তে দেয় না এবং (৩) নির্ধারিত তাক্বদীর ও ফায়ছালাতে ধৈর্যধারণ, যা (মন্দ তাক্বদীরে) অসন্তুষ্ট হ’তে দেয় না। কোন ব্যক্তি যখন এই তিনটি স্তর পরিপূর্ণ করে, তখন পূর্ণতা লাভ করে তার ধৈর্য এবং সে দুনিয়ার মিষ্টতা, আখেরাত ও তার সুখ-সম্ভার, সফলতা এবং উভয়জগতের বিজয় লাভ করে। আর ধৈর্য ছাড়া কেউ সেই মর্যাদায় পৌঁছাতে পারে না, যেমনভাবে পুলছিরাত পার হওয়া ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে না’।[14]

তবে আল্লাহ শুধু বিপদাপদ দিয়ে বান্দার ধৈর্যের পরীক্ষা নেন না; বরং কখনো কখনো সুখ-শান্তি দিয়েও ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) বলেন, ابتلينا بالضراء فصبرنا وابتلينا بالسراء فلم نصبر ولذلك حذر الله عباده من فتنة المال والأزواج والأولاد، ‘আমাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করা হ’লে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) আমরা ধৈর্য ধারণ করতে পারি। কিন্তু যখন সুখ-শান্তি দিয়ে পরীক্ষা করা হয়, তখন ধৈর্য ধারণ করতে পারি না। সেজন্যই আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে সম্পদ, স্ত্রী-পরিজন ও সন্তান-সন্ততির ফেৎনা থেকে সতর্ক করেছেন’।[15] ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,كثير من الناس يصبر على مكابدة قيام الليل في الحر والبرد وعلى مشقة الصيام ولا يصبر عن نظرة محرمة، ‘এমন অনেক মানুষ আছে, যারা শীত-গ্রীষ্মে তাহাজ্জুদের পরিশ্রমে ধৈর্য ধারণ করতে পারে, ছিয়ামের কষ্টে ছবর করতে পারে; কিন্তু তারা হারাম দৃষ্টিপাতের ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করতে পারে না’।[16]

(৪) মসজিদ নির্মাণ করা :

মসজিদ আল্লাহর ঘর। যারা আল্লাহর ঘর নির্মাণ করেন, মহান আল্লাহ জান্নাতে তাদের জন্য বিশেষ বালাখানা তৈরী করেন। ওছমান ইবনে আফ্ফান (রাঃ) বলেন, مَنْ بَنَى لِلَّهِ مَسْجِدًا بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’।[17] ইমাম নববী বলেন, দুনিয়াতে অন্যান্য বাড়ির তুলনায় আল্লাহর ঘর মসজিদের মর্যাদা অধিক। তদ্রূপ জান্নাতে মসজিদ নির্মাণকারীদের ঘর অন্যান্য জান্নাতীদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ হবে।[18]

অনুরূপভাবে যারা মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা করবেন, তাদের জন্যও আল্লাহ জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ كَمَفْحَصِ قَطَاةٍ، أَوْ أَصْغَرَ، بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কবুতরের ডিম পাড়ার জায়গা পরিমাণ অথবা তার চেয়েও ক্ষুদ্র একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন’।[19] ইমাম শাওকানী বলেন, কবুতরের ডিম পাড়ার জায়গা পরিমাণ স্থানে ছালাত আদায় করা সম্ভব নয়। সুতরাং অত্র হাদীছের মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে যে, কেউ যদি মসজিদ নির্মাণে সামান্য কিছু অবদান রাখে, তবে সেও মসজিদ নির্মাণের ছওয়াব লাভ করবে।[20] সেজন্য মসজিদ নির্মাণের কাজে অল্প কিছু অংশগ্রহণ করাকেও তুচ্ছ মনে করা উচিত নয়।

স্মর্তব্য যে, আল্লাহর ঘর নির্মাণ করতে গিয়ে মনে যেন কোনরূপ লৌকিকতা ও শ্রুতি স্থান না পায়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ بَنَى مَسْجِدًا، لَا يُرِيدُ بِهِ رِيَاءً، وَلَا سُمْعَةً، بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، ‘যে ব্যক্তি কাউকে দেখানো বা শুনানোর উদ্দেশ্য ছাড়াই একটি মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’।[21] ইবনু হাযার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীছের মাধ্যমে মসজিদ নির্মাণে ইখলাছ বজায় রাখতে বলা হয়েছে। ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, ‘কেউ যদি মসজিদ নির্মাণ করে নিজের নামে মসজিদের নাম রাখে, তবে সে ইখলাছ থেকে বহু দূরে অবস্থান করছে’।[22] সুতরাং এটা প্রমাণিত হয় যে, যারা মসজিদ কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য মসজিদে দান করেন, অথবা নিজের নামে মসজিদের নামকরণ করেন, তারা মসজিদ নির্মাণের ফযীলত থেকে বঞ্চিত হ’তে পারেন। অনুরূপভাবে যদি মসজিদ নির্মাণের মাধ্যমে সুন্নাত প্রতিষ্ঠা না করে শিরক-বিদ‘আত প্রতিষ্ঠা করা হয়, তবে এ ক্ষেত্রেও নেকীর পরিবর্তে গোনাহ হবে। এজন্য নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন,يريد المسلمون إقامة الدولة المسلمة، ولا يستطيعون إقامة مسجد على السنَّة، ‘মুসলিমরা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়, অথচ তারা সুন্নাতের ভিত্তিতে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না’।[23]

(৫) নিয়মিত নফল ও সুন্নাতে রাতেবা ছালাত আদায় করা :

পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাতের পরে যত ছালাত আছে, সবই নফল ছালাতের অন্তর্ভুক্ত। নফল ছালাত সমূহের মধ্যে সুন্নাতে রাতেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সুন্নাতে রাতেবা হচ্ছে সেই সব সুন্নাত ছালাত, যা ফরয ছালাত সমূহের আগে-পরে আদায় করা হয়। যারা এই সুন্নাতগুলোর ব্যাপারে যত্নশীল হয়, তাদের নামে জান্নাতে প্রাসাদ বরাদ্দ রাখা হয়। উম্মু হাবীবা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ صَلَّى فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الجَنَّةِ: أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ المَغْرِبِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ العِشَاءِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلَاةِ الْفَجْرِ صَلَاةِ الْغَدَاةِ، ‘যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে বারো রাক‘আত (সুন্নাত) ছালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। (সেগুলো হ’ল) যোহরের (ফরয ছালাতের) পূর্বে চার রাক‘আত এবং পরে দুই রাক‘আত, মাগরিবের পরে দুই রাক‘আত, এশার ছালাতের পরে দুই রাক‘আত এবং ফজরের পূর্বে দুই রাক‘আত (সুন্নাত ছালাত)’।[24] অপর বর্ণনায় এসেছে, مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّي لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا، غَيْرَ فَرِيضَةٍ، إِلَّا بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، أَوْ إِلَّا بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ، ‘কোন মুসলিম বান্দা যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে দিনে-রাতে ফরয ছালাত ব্যতীত ১২ রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করে, আল্লাহ তার জন্য জানণাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। অথবা তার জন্য জানণাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়’।[25] ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহঃ) বলেন,لَنْ يَتَقَرَّبَ الْعِبَادُ إِلَى اللهِ بشيءٍ أَفْضَلَ مِنَ الْفَرَائِضِ، الْفَرَائِضُ رُءُوسُ الْأَمْوَالِ وَالنَّوَافِلُ الْأَرْبَاحُ، ‘বান্দারা ফরয ইবাদতের চেয়ে ফযীলর্তপূর্ণ অন্য কোন ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে না। তাই ফরয ইবাদতসমূহ সম্পদের মূলধনের মত। আর নফল ইবাদতগুলো তার লভ্যাংশ বা মুনাফা’।[26] ক্বিয়ামতের ময়দানে এই ইবাদতগুলোর মাধ্যমে বান্দার ফরয ইবাদত সমূহের ঘাটতি পূরণ করা হবে।[27]

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, أَرْبَعَةٌ تَجْلِبُ الرِّزْقَ: قِيَامُ اللَّيْلِ، وَكَثْرَةُ الِاسْتِغْفَارِ بِالْأَسْحَارِ، وَتَعَاهُدُ الصَّدَقَةِ، وَالذِّكْرُ أَوَّلَ النَّهَارِ وَآخِرَه. وَأَرْبَعَةٌ تَمْنَعُ الرِّزْقَ: نَوْمُ الصُّبْحَةِ، وَقِلَّةُ الصَّلَاةِ، وَالْكَسَلُ، وَالْخِيَانَةُ، ‘চারটি বিষয় রিযিকে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসে। (সেগুলো হ’ল) ক্বিয়ামুল লায়ল, শেষ রাতে বেশী বেশী ক্ষমাপ্রার্থনা, নিয়মিত দান-ছাদাক্বা করা এবং সকাল-সন্ধ্যায় যিকির করা। আর চারটি বিষয় রিযিককে বাধাপ্রাপ্ত করে। (সেগুলো হ’ল) প্রত্যুষে ঘুমানো, নফল ছালাতের স্বল্পতা, অলসতা এবং খিয়ানত’।[28]

(৬) চার রাক‘আত চাশতের ছালাত আদায় করা :

নিয়মিত চার রাক‘আত চাশতের ছালাত আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতী প্রাসাদের মালিক হওয়া যায়। এ ছালাতকে আরবীতে ‘ছালাতুয যোহা’ বলে। আবার এ ছালাতকে ইশরাক্বের ছালাতও বলা হয়। সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’ এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে ‘ছালাতুয যোহা’ বা চাশতের ছালাত বলা হয়।[29] এ ছালাতে বিবিধ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ صَلَّى الضُّحَى أَرْبَعًا، وَقَبْلَ الْأُولَى أَرْبَعًا بُنِيَ لَهُ بِهَا بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ، ‘যে ব্যক্তি (সকাল বেলা) চার রাক‘আত চাশতের ছালাত আদায় করবে এবং যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নিমার্ণ করা হবে’।[30]

(৭) আল্লাহর পথে হিজরত করা ও জিহাদ করা :

যারা আল্লাহর পথে ত্যাগ স্বীকার করে, মহান আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতে সম্মানিত করেন। ফাযালা বিন উবায়েদ (রাঃ) বলনে, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, أَنَا زَعِيمٌ، وَالزَّعِيمُ الْحَمِيلُ لِمَنْ آمَنَ بِي، وَأَسْلَمَ وَهَاجَرَ بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ، وَبِبَيْتٍ فِي وَسَطِ

الْجَنَّةِ، وَأَنَا زَعِيمٌ لِمَنْ آمَنَ بِي، وَأَسْلَمَ، وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللهِ، بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ، وَبِبَيْتٍ فِي وَسَطِ الْجَنَّةِ، وَبِبَيْتٍ فِي أَعْلَى غُرَفِ الْجَنَّةِ، مَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَلَمْ يَدَعْ لِلْخَيْرِ مَطْلَبًا، وَلَا مِنَ الشَّرِّ مَهْرَبًا، يَمُوتُ حَيْثُ شَاءَ أَنْ يَمُوتَ، ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের উপকণ্ঠে একটি ঘরের এবং মধ্যখানে একটি ঘরের যিম্মাদার হ’লাম, যে আমার প্রতি ঈমান আনল, ইসলাম গ্রহণ করল এবং হিজরত করল। আর আমি জান্নাতের উপকণ্ঠে একটি ঘরের, মধ্যখানে একটি ঘরের এবং জান্নাতের কক্ষসমূহের উপরিভাগে আরেকটি ঘরের যিম্মাদার হ’লাম ঐ ব্যক্তির জন্য, যে আমার প্রতি ঈমান আনল, ইসলাম গ্রহণ করল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করল। যে ব্যক্তি এই কাজগুলো করবে, সে যদি কল্যাণের সন্ধান পরিত্যাগ না করে এবং মন্দ থেকে পলায়ন করার চেষ্টা নাও করে, (তবুও তার জন্য জান্নাত অবধারিত থাকবে) সে যেখানে চায় সেখানে মৃত্যুবরণ করলেও’।[31] অত্র হাদীছ দ্বারা বোঝা গেল, যারা নবীর প্রতি ঈমান আনে, ইসলামকে মনে-প্রাণে কবুল করে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জান্নাতের তিনটি প্রাসাদের যিম্মাদারী গ্রহণ করেছেন- একটি প্রাসাদ জান্নাতের উপকণ্ঠে, আরেকটি জান্নাতের মাঝখানে এবং অপরটি জান্নাতের উপরিভাগে।

[ক্রমশঃ]

* এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ও শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।


[1]. তিরমিযী ২৫২৬; মিশকাত হা/ ৫৬৩০, সনদ ছহীহ।

[2]. মুসলিম হা/২৯২৮; মিশকাত হা/৫৪৯৬।

[3]. বুখারী হা/৩২৪৪; মুসলিম হা/২৮২৪; মিশকাত হ/৫৬১২।

[4]. ইহসান হচ্ছে অন্তরে সর্বদা এমন অনুভূতি বজায় রাখা যে, বান্দা যেন আল্লাহ্কে দেখে দেখে ইবাদত করছে অথবা এই অনুভূতি রাখা যে, আল্লাহ সর্বদা তাকে পর্যবেক্ষণ করছেন।

[5]. বুখারী হা/৩২৫৬; মিশকাত হা/৫৬২৪।

[6]. খাত্ত্বাবী, মা‘আলিমুস সুনান ৪/১১০।

[7]. আবূ নু‘আইম ইছফাহানী, হিলয়াতুল আওলিয়া ১/৭৫; সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১১/২৯৯।

[8]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ ১/৪৫।

[9]. ওমর মুক্ববিল, মাওয়া‘ইযুছ ছাহাবাহ, পৃ. ১৯২; মাওসূ‘আতুল আখলাক্ব ২/৭৬।

[10]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন, ২/১২২।

[11]. মাদারিজুস সালিকীন, ২/৩৯০।

[12]. কুরতুবী, তাবারী, ফাৎহুল কাদীর, ক্বাসেমী, বাগাভী প্রমুখ

[13]. ইবনু আবীদ্দুনয়া, আছ-ছাবরু ওয়াছ ছওয়াব, পৃ. ৬১।

[14]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আত-তিববুন নববী, পৃ. ২৫১।

[15]. ইবনুল ক্বাইয়িম, উদ্দাতুছ ছাবেরীন, পৃ. ৬৪।

[16]. উদ্দাতুছ ছাবিরীন, পৃ. ১৯।

[17]. বুখারী হা/৪৫০; মুসলিম হা/৫৩৩; মিশকাত হা/৬৯৭।

[18]. শারহুন নববী আলা মুসলিম ৫/১৫।

[19]. ইবনু মাজাহ হা/৭৩৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১২৮; ছহীহুত তারগীব হা/২৭১; সনদ ছহীহ। রাবী জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ)।

[20]. শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ২/১৭৩।

[21]. তাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৭০০৫; ছহীহুত তারগীব হা/২৭৪; ছহীহাহ হা/৩৩৯৯, সনদ হাসান। রাবী আয়েশা (রাঃ)।

[22]. ইবনে হাজার, ফাৎহুল বারী ১/৫৪৫।

[23]. আলবানী, সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান-নূর: ১০৬৮।

[24]. তিরমিযী হা/৪১৫; মিশকাত হা/১১৫৯, সনদ ছহীহ।

[25]. মুসলিম হা/৭২৮; মিশকাত হা/১১৫৯।

[26]. আবূ নু‘আইম ইছফাহানী, হিলয়াতুল আওলিয়া ৮/১০০।

[27]. তিরমিযী হা/৪১৩; মিশকাত হা/১৩৩০, সনদ ছহীহ।

[28]. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৪/৩৭৮।

[29]. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃ. ২৫৪।

[30]. তাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৪৭৫৩; ছহীহাহ হা/২৩৪৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩৪০, সনদ হাসান।

[31]. নাসাঈ হা/৩১৩৩; ইবনু হিববান হা/৪৬১৯; ছহীহুত তারগীব হা/১৩০০, সনদ ছহীহ।






বিষয়সমূহ: পরকাল
ঈছালে ছওয়াব : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
ইসলামী গান ও কবিতায় ভ্রান্ত আক্বীদা - মুহাম্মাদ আব্দুল হামীদ
ছিয়ামের ফাযায়েল ও মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
আল্লাহ সর্বশক্তিমান - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
আশূরায়ে মুহাররম - আত-তাহরীক ডেস্ক
হিজামা : নবী (ছাঃ)-এর চিকিৎসা - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
লায়লাতুল ক্বদর : ফযীলত ও করণীয় - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
বিশ্ব ভালবাসা দিবস - আত-তাহরীক ডেস্ক
আক্বীদা ও আহকামে হাদীছের প্রামাণ্যতা (৮ম কিস্তি) - মীযানুর রহমান মাদানী
ঈদায়নের কতিপয় মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
আহলেহাদীছ জামা‘আতের বিরুদ্ধে কতিপয় মিথ্যা অপবাদ পর্যালোচনা (৫ম কিস্তি) - তানযীলুর রহমান - শিক্ষক, বাউটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজশাহী
আল্লাহর প্রতি ঈমানের স্বরূপ (চতুর্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
আরও
আরও
.