রমনা, ঢাকা ২২শে মে সোমবার : অদ্য সকাল ৯-টায় ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন ২০১৭-য়ে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব সভাপতির ভাষণে সকলের প্রতি উপরোক্ত আহবান জানান।

তিনি বলেন, ইসলাম শান্তি-নিরাপত্তা, উদারতা ও পরমতসহিষ্ণুতার ধর্ম। যা মানুষকে সর্বদা শান্তি ও কল্যাণের পথ দেখায় এবং অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা পরিহারের প্রতি আহবান জানায়। কিন্তু বর্তমানে কিছু সুচতুর মানুষ জিহাদ ও ক্বিতালের নামে তরুণ ও যুবসমাজকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করছে। ধর্মের নামে এক শ্রেণীর লোক ইসলামের শত্রুদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে একদিকে যেমন আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে বিতর্কিত করছে, অন্যদিকে শান্তির ধর্ম ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

তিনি বলেন, সত্য কখনো বাধাহীন গতিতে এগিয়ে যায়নি। যাদের গন্তব্য জাতীয় সংসদ, আর যাদের গন্তব্য জান্নাতুল ফেরদৌস, উভয়ের চলার পথ এক হ’তে পারে না। অতএব যত বাধাই আসুক না কেন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর প্রত্যেক কর্মীকে যেকোন মূল্যে রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের উপর দৃঢ় থাকতে হবে। সাথে সাথে জিহাদের নামে বর্তমানে যে সন্ত্রাস চলছে, এর বিরুদ্ধে আমাদের সকল সদস্যকে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর কর্মীদের প্রতি উদার মানসিকতা প্রদর্শনের জন্য প্রশাসনের প্রতি আবেদন জানান।  

মাত্র একদিন আগে অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও ৫২টি সাংগঠনিক যেলার প্রায় প্রত্যেকটি থেকে পূর্ব নির্ধারিত সংখ্যা অনুযায়ী নেতা-কর্মীগণ উক্ত সম্মেলনে যথাসময়ে সমবেত হন। যা ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত হওয়ায় মিলনায়তনের বাইরে কর্মীদের জন্য কয়েকটি প্রজেক্টর দেওয়া হয়। মিলনায়তনের কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান জনাব সালমান এফ রহমান বলেন, জঙ্গীবাদ গোটা মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। মুসলমানদেরকেই এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এখন মুসলমান মুসলমানকে হত্যা করছে।

তিনি বলেন, প্রফেসর ড. আসাদুল্লাহ আল-গালিবের সাথে আমার পূর্বে কোন পরিচয় ছিল না। ২০০৮ সালে বগুড়া জেলখানায় তাঁর সাথে আমার পরিচয় হয়। ইসলাম সম্পর্কে আমি সামান্যই জ্ঞান রাখি। তবে আগে থেকেই একটা প্রশ্নের আমি জবাব পেতাম না যে, ইসলামের মধ্যে বিভিন্ন মাযহাব, শী‘আ-সুন্নী এত ভাগ কেন? আমরা কেন এক হ’তে পারি না? তাঁর সাথে সাক্ষাতের প্রথম দিনেই আমি তাঁকে এ প্রশ্নটি করি। তখন তিনি আমাকে সুন্দরভাবে বিষয়টি বুঝিয়ে দেন। সেদিন তিনি আমাকে যে বুঝ দিয়েছিলেন, সেটাই আমি এখন সবাইকে বলি যে, ইসলাম হ’ল কুরআন ও ছহীহ হাদীছ। সকলে আমরা যদি এটা মেনে চলি, তাহ’লে আর আমাদের মাঝে কোন বিভেদ থাকবে না। অনেকে আমাকে বলে আমি আহলেহাদীছ হয়ে গেছি, সালাফী হয়ে গেছি, ওয়াহাবী হয়ে গেছি। আমি বলি, না ভাই আমি কেবল কুরআন ও ছহীহ হাদীছ মেনে চলি।

তিনি বলেন, সরকার যাদেরকে জঙ্গীবাদের অভিযোগে গ্রেফতার করছে, তাদের অনেকে বলে আমি আহলেহাদীছ। সে বুঝে বলে, না না বুঝে বলে সেটা অন্য বিষয়। ফলে গোটা আহলেহাদীছ জামা‘আত এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আমি সরকারকে বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করছি। আপনাদেরকেও এই অপপ্রচার বন্ধে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আহলেহাদীছ তথা কুরআন-হাদীছের অনুসারীদের ছহীহ পথে দৃঢ় রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সাথে সাথে জিহাদের প্রকৃত ব্যাখ্যা জনগণের নিকটে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, আপনাদের বিরুদ্ধে পুলিশের Hello CT Apps থেকে ‘ইক্বামতে দ্বীন : পথ ও পদ্ধতি’ বই এবং ‘আক্বীদায়ে মোহাম্মদী’ বই দু’টি দু’এক দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলে আমি আশা করি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাতক্ষীরা-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, আপনাদের কার্যক্রম যথেষ্ট ভালো। আপনারা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আমি কামনা করি যে, আপনাদের এই আহলেহাদীছ আন্দোলন আরো দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাক। আর স্বরাষ্টমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা আছেন, তাদেরকে আপনাদের বিষয়টি আমরা বুঝানোর চেষ্টা করছি। অতএব আপনাদের কোন বাধা আগামীতে থাকবে না ইনশাআল্লাহ।

অতিথিদের বক্তব্যের আগে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম সরকারের প্রতি নিম্নোক্ত পরামর্শ ও সংগঠনের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত দাবী সমূহ পেশ করেন।-

পরামর্শ সমূহ : (১) ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ এবং তার অঙ্গ সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সমূহ সম্পর্কে সরকার ও প্রশাসনকে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে এবং তাদের সম্পর্কে অহেতুক ধারণা করা হ’তে বিরত থাকতে হবে।

(২) জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে অত্র সংগঠন কর্তৃক প্রকাশিত ও পরিবেশিত বই, পত্রিকা ও বক্তৃতা সমূহ ব্যাপকভাবে প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। (৩) ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-কে সারা দেশে অবাধে সাংগঠনিক প্রোগ্রাম চালানোর সুযোগ দিতে হবে। (৪) ইতিমধ্যে তাদের যেসব নেতা-কর্মীকে সন্দেহবশে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অহেতুক হয়রানী বন্ধ করতে হবে। (৫) জঙ্গীবাদের পক্ষে অনলাইন প্রচার সমূহ কার্যকরভাবে বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

(৬) ফেব্রুয়ারী’১৭-তে র‌্যাব কর্তৃক প্রকাশিত জঙ্গীবাদ বিরোধী বইয়ে ৩২ ও ৩৩ পৃষ্ঠায় ৩ ও ৪ নং বিষয়ে আহলেহাদীছ ও সালাফীদের বিরুদ্ধে ও তাদের আক্বীদার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা প্রচার চালানো হয়েছে, সেগুলি অনতিবিলম্বে বাদ দিতে হবে। সেই সাথে পুলিশের Hello CT Apps থেকে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আমীরে জামা‘আত লিখিত ‘ইক্বামতে দ্বীন : পথ ও পদ্ধতি’ বই এবং ‘আক্বীদায়ে মোহাম্মদী’ বই দু’টি প্রত্যাহার করে নিতে হবে।

দাবী সমূহ : (১) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর পরিচালনা কমিটিতে আহলেহাদীছ প্রতিনিধি রাখতে হবে এবং সেখানে আহলেহাদীছ বিদ্বানগণের বই-পত্র সসম্মানে স্থান পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। (২) বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে অন্ততঃ একজন আহলেহাদীছ ইমাম রাখতে হবে এবং তিনি যাতে মাসে কমপক্ষে একটি খুৎবা দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। (৩) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিলেবাস কমিটিতে ও ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটিতে আহলেহাদীছ বিদ্বানগণের প্রতিনিধি রাখতে হবে। (৪) হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষা বোর্ড এবং দারুলহাদীছ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিতে হবে।

(৫) হাইকোর্টের সামনে স্থাপিত দেবীমূর্তি সরাতে হবে। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যের নামে ঢাকার রাজপথের বিভিন্ন মোড়ে মূর্তি নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। মসজিদ নগরী ঢাকার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।

সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ‘আন্দোলন’-এর  সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল লতীফ, প্রশিক্ষণ সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক দুর্রুল হুদা, দফতর ও যুববিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আমীনুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা আলতাফ হোসাইন (সাতক্ষীরা), অধ্যাপক জালালুদ্দীন (নরসিংদী), ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশীদ আখতার (কুষ্টিয়া), ‘সোনামণি’ পরিচালক আব্দুল হালীম (রাজশাহী), ‘আন্দোলন’-এর কুমিল্লা যেলা সভাপতি মাওলানা ছফিউল্লাহ, ঢাকা যেলা সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ তাসলীম সরকার, খুলনা যেলা সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, সাতক্ষীরা যেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান, নারায়ণগঞ্জ যেলা সভাপতি শফীকুল ইসলাম, ঢাকার মাদারটেক আহলেহাদীছ জামে মসজিদের খত্বীব মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল, বায়তুল মা‘মূর জামে মসজিদের খত্বীব মাওলানা শামসুর রহমান, মাওলানা মুখলেছুর রহমান (নওগাঁ) প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত করেন হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির ও হাফেয আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (ঢাবি)। ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করেন মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান (জয়পুরহাট) ও রোকনুয্যামান (সাতক্ষীরা)। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া, রাজশাহীর ভাইস প্রিন্সিপাল নূরুল ইসলাম (সংবাদটি ঐদিন ইন্ডেপেনডেন্ট, ডিবিসি ও বাংলা ভিশন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয় এবং ২৩শে মে’১৭ দৈনিক প্রথম আলো ৪র্থ পৃ. ৪-৬ কলাম; নয়াদিগন্ত ২য় পৃ. ২য় কলাম; ইংরেজী দৈনিক ইন্ডেপেনডেন্ট ২য় পৃ. ১-৫ কলাম ও ২৪শে মে দৈনিক ইনকিলাব ৫ম পৃ. ৬-৮ কলামে প্রকাশিত হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানটি ইন্টারনেটে লাইভ সম্প্রচার করা হয়)






আরও
আরও
.