সমাজ সংস্কারের প্রতিজ্ঞা নিয়ে সংগঠনে আত্মনিয়োগ করুন!

-আমীরে জামা‘আত

গত ১০ ও ১১ই আগস্ট বৃহস্পতি ও শুক্রবার ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়ায় অনুষ্ঠিত বার্ষিক কর্মী সম্মেলনে প্রদত্ত উদ্বোধনী ভাষণে সম্মেলনের সভাপতি মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত আহবান জানান। অতঃপর তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন,  

প্রিয় সাথী ও বন্ধুগণ!

আজকের এ কর্মী সম্মেলন উদ্বোধনের শুরুতে হাম্দ ও ছানার পর আমরা অতীব বেদনার সাথে স্মরণ করছি আমাদের সেইসব নিরপরাধ কর্মী ভাইদের, যারা অন্যায়ভাবে সরকারের যিন্দানখানায় বন্দী থাকার কারণে আজকের এ সম্মেলনে আসতে পারেননি। স্মরণ করছি সেইসব ভাইদেরকে, যাদের স্বার্থে আমরা সম্মেলন এক সপ্তাহ এগিয়ে আনা সত্ত্বেও হঠাৎ বিমানের সিডিউল এগিয়ে আসায় তারা হজ্জে যাত্রার কারণে আজকের এ সম্মেলনে যোগদান করতে পারেননি। আল্লাহ তাদের হজ্জ কবুল করুন!

স্মরণ করছি সেইসব নতুন আহলেহাদীছ ভাইদের, যাদের নিজেদের হাতে গড়া জামে মসজিদ বিদ‘আতীরা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ও দিনে-দুপুরে দখল করে নিয়েছে স্রেফ বিশুদ্ধ আক্বীদা গ্রহণ করার কথিত অপরাধে। স্মরণ করছি নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই-বোনদের, যারা স্বদেশ ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে আমাদের দেশে এসে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। স্মরণ করছি চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধসে নিহত-আহত ও ভিটে-মাটি হারা ভাই-বোনদের। স্মরণ করছি সিলেটের হাওর অঞ্চলের এবং দেশের পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের বন্যার্ত অসহায় ভাই-বোনদের। আল্লাহ তাদের সবাইকে বিপদে ধৈর্য্য ধারণের তাওফীক দান করুন এবং স্বীয় অনুগ্রহে তাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করে দিন- আমীন!

আজকের এ সম্মেলনের রওনক বৃদ্ধি করেছেন সৌদী আরব, বাহরাইন ও সিঙ্গাপুর প্রবাসী কর্মী ভাইয়েরা। অন্যান্য ভাই-বোনদের সাথে আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি।   

বন্ধুগণ!

আজ এক ক্রান্তিকালে আমাদের এ কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হ’তে যাচ্ছে। কারণ বিশ্বের ও নিজ দেশের সামগ্রিক অবস্থাকে এড়িয়ে কোন আন্দোলন বা সংগঠন চলতে পারে না। পুরা জাতি যখন দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে, তখন তাকে টেনে ধরা ও উদ্ধার করা খুবই দুরূহ কাজ। যখন ঘনঘটাপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থা, তমসাচ্ছন্ন ধর্মীয় অবস্থা, ধস নামানো অর্থনৈতিক অবস্থা জাতির ভবিষ্যৎকে ক্রমেই স্বপ্নহীন করে ফেলছে, তখন আমাদের ২০১৫-২০১৭ সেশনের কর্মী সম্মেলন নিঃসন্দেহে গুরুত্বের দাবী রাখে।

বন্ধুগণ!

মানুষ বেঁচে থাকে তার মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে। আর মূল্যবোধ বেঁচে থাকে একটি সুনির্দিষ্ট আদর্শ নিয়ে। আর আদর্শ বেঁচে থাকে মানুষের হৃদয়ে ও আচরণে। আজকের সমাজে মূল্যবোধ ভূলুণ্ঠিত। অপহৃত ভাই ও তার পরিবারের আহাযারী যখন আকাশ-বাতাস ভারী করে তুলছে, তখন এর প্রতিরোধে সমাজ সংস্কারের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে এগোনো ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই।

রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মনীতি সব সেক্টরেই যখন ঘুণে ধরেছে, তখন ঘুণে ধরা বাঁশ দিয়ে গৃহনির্মাণ করলে তা অবশ্যই হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়বে। তাই বর্তমানের জরাজীর্ণ সমাজ কাঠামো সংস্কার করতে গেলে এই কাঠামোতে বিশ্বাসী ও এই কাঠামোতে তৈরী মানুষ দিয়ে আদৌ সম্ভব নয়। সেকারণ আমরা চেয়েছি এমন কিছু নিবেদিতপ্রাণ কর্মী বাহিনী তৈরী করতে, যারা সমাজ সচেতন ও সমাজ সংস্কারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যারা এই নষ্ট সমাজে নিজেরা নষ্ট হননি। সাথে সাথে অন্যকে বাঁচাতে সদা সচেষ্ট থাকেন। নিঃসন্দেহে ঐ ব্যক্তিকে দিয়ে সমাজ সংস্কার সম্ভব নয়, যে ব্যক্তি নিজে বাতিলের সাথে আপোষকামী। যারা সমাজের ও পরিবেশের দোহাই দিয়ে নিজেরা অন্যায় করে। যারা অধিক পাওয়ার আকাংখায় হারামকে হালাল করে এবং আখেরাত বিক্রি করে দুনিয়া অর্জন করে। ইহূদী-নাছারাদের তওরাত বিকৃত করে অর্থ উপার্জনের ন্যায় মুসলিম রাজনীতিক ও ধর্মনেতারা কুরআন-হাদীছের অপব্যাখ্যা করে দুনিয়া অর্জন করছেন। ফলে মুসলমানদের হাত দিয়েই শূকর-বানরের উত্তরাধিকারীদের নীল-নকশা বাস্তবায়িত হচ্ছে। শৈথিল্যবাদী নেতৃবর্গ ও চরমপন্থী জঙ্গীবাদীরাই প্রধানতঃ তাদের লোভনীয় শিকার।

বিদেশী আধিপত্যবাদী শক্তি ও দেশীয় শৈথিল্যবাদীদের সম্মিলিত চক্রান্তে বিশুদ্ধ ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অন্যান্য মুসলিম দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য হাছিল করা ছাড়াও তাদের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এবং এখনও আছে, আর তা হ’ল দেশে দেশে ইসলামের বিশুদ্ধ আন্দোলন তথা সালাফী আন্দোলন সমূহকে দমন করা ও নিশ্চিহ্ন করা। এদেশেও একই পলিসি কাজ করছে। সেকারণ ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-কে ২০০৫ সালে কঠিন রাজনৈতিক পরীক্ষার সম্মুখীন হ’তে হয়েছে। যা কমবেশী এখনো অব্যাহত রয়েছে। 

বন্ধুগণ!

কোন নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী নিয়ে আমাদের আন্দোলন নয়। আমাদের আহবান সকল মানুষের নিকট। কারণ আমাদের সকলেরই আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়া। তাই কোন আদম সন্তান পরকালে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধীভূত হৌক, সেটা আমরা চাই না। আমরা সকল মানুষকে আহবান জানাই আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রেরিত স্বচ্ছ বিধানের দিকে, পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দিকে। আমাদের উক্ত আহবানে সাড়া দিয়ে যতই মানুষ এদিকে আগ্রহী হচ্ছে, ততই আমাদের পরীক্ষা ও দায়িত্ব দু’টিই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মনে রাখবেন, আমাদের দাওয়াত যত বিশুদ্ধ হৌক, আমাদের আহবান যত আন্তরিক হৌক- যদি সেটা আমাদের কথায় ও কর্মে প্রতিফলিত না হয়, তাহ’লে এ দাওয়াত ব্যর্থ হবে। কেননা কোন আন্দোলনই স্বার্থকতা লাভ করে না, যদি না সেটি মানুষের কল্যাণে হয় এবং যদি না সেটি মানুষের হৃদয়পটে স্থান লাভ করে। তাই নিজেদের গৃহীত আদর্শকে অন্যদের কাছে গ্রহণীয় ও বরণীয় করে তোলা প্রত্যেক কর্মীর একান্ত কর্তব্য। অতএব ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’কে আমাদের সার্বক্ষণিক চেতনায় জাগরূক রাখতে হবে এবং এর অগ্রগতির জন্য কথা, কলম, অর্থ, সময় ও শ্রম সবকিছু ব্যয় করতে হবে। এ মহান আন্দোলনের জন্য ব্যয়িত আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত ও প্রতিটি পয়সা আল্লাহর পথে ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ হবে।

যদি আমরা আমাদের আন্দোলনকে পরকালীন মুক্তির অসীলা হিসাবে বিশ্বাস না করি এবং একে সমাজ পরিবর্তনের একমাত্র মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ না করি ও এর জন্য জানমাল কুরবানী দিতে না পারি, তাহ’লে আমরা প্রকৃত প্রস্তাবে কোন কর্মী নই। জোয়ারে আসা ও ভাটায় চলে যাওয়া সুবিধাবাদীদের দলভুক্ত হ’লে আমরা দুনিয়া ও আখেরাত দু’টিই হারাব। মনে রাখবেন কর্মীকে দেখেই আদর্শ যাচাই হয়ে থাকে এবং কর্মীদের দেখেই মানুষ সংগঠনে আসবে। কথা ও কর্মে মিল না থাকলে আপনার সাথে আপনার সংগঠনও মার খাবে। এমনকি পরোক্ষভাবে আদর্শও মার খাবে। তাই আমরা চাই না এমন কর্মী, যিনি ইসলামের হালাল-হারামের বিধানকে মানেন না। যিনি নিজের ইচ্ছার বিপরীত হ’লে কোন সিদ্ধান্তকে গ্রাহ্য করেন না। সামান্য স্বার্থ ক্ষুন্ন হ’লে কোন আদেশকে তোয়াক্কা করেন না। যিনি নানা অজুহাতে দায়িত্ব এড়িয়ে যান। এমনকি যিনি আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করতে আদৌ কুণ্ঠাবোধ করেন না। বরং আমরা চাই এমন কর্মী, যিনি হবেন ‘ইমারতে’র প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কথায় ও কর্মে আনুগত্যশীল। আদর্শের প্রতি দৃঢ়চিত্ত ও সর্বদা আল্লাহর উপরে আস্থাশীল। এক কথায় যিনি হবেন আপাদমস্তক নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। যার উপরে ভিত্তি করেই একটি আদর্শ সংগঠন ও সমাজ গড়ে উঠবে। সংগঠনই শক্তি। প্রত্যেক কর্মী একেকটি ইটের মত। সিমেন্ট-বালু ও আরসিসি ব্যতীত যেমন মযবূত দালান তৈরী করা সম্ভব নয়, তেমনি সচেতন ও আনুগত্যশীল কর্মী বাহিনী ব্যতীত মযবূত সংগঠন সম্ভব নয়। আর তাদের দিয়ে সমাজ পরিবর্তনও সম্ভব নয়। যাদের কথা ও কাজে মিল নেই, তাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন না। আল্লাহ বলেন,كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لاَ تَفْعَلُونَ- إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ- ‘আল্লাহর নিকটে বড় ক্রোধের বিষয় এই যে, তোমরা বল এমন কথা যা তোমরা কর না’। ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে লড়াই করে সারিবদ্ধভাবে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায়’ (ছফ ৬১/৩-৪)

প্রিয় সাথী ও কর্মীগণ!

আমাদের দাওয়াত যেন আমাদের জীবনেই শেষ না হয়ে যায়, মৃত্যুর পরেও যেন এর নেকী আমাদের আমলনামায় যুক্ত হয়, সেজন্য প্রত্যেকে নিজ পরিবারকে নিজ আদর্শে গড়ে তুলুন। নিজের সন্তান গড়ে না উঠলে অন্যের সন্তান গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। সেই-ই ক্বিয়ামতের মাঠে আপনার জন্য ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ হিসাবে দেখা দিবে। আপনার দাওয়াতে যত মানুষ বিশুদ্ধ এ সংগঠনে আসবে, তাদের নিজেদের নেকীর সমপরিমান নেকী আপনার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হবে। আপনার প্রতিটি ফোনকল হৌক একেকটি দাওয়াত। হ’তে পারে ফোন শেষ হওয়ার আগেই আপনার শেষ নিঃশ্বাস বেরিয়ে যেতে পারে। ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ ‘সোনামণি’ ও ‘মহিলা সংস্থা’-কে সর্বদা পৃষ্ঠপোষকতা দিন। তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদেরকে আখেরাতের সুন্দর স্বপ্ন দিয়ে গড়ে তুলুন। যেন দুনিয়ার মিথ্যা চাকচিক্যে তারা ধ্বংস না হয়ে যায়। কেবল আকাংখাই যথেষ্ট নয়, ‘গঠনতন্ত্র’ ও ‘কর্মপদ্ধতি’ মেনে সুশৃংখলভাবে কাজ করুন। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন- আমীন!

বন্ধুগণ!

‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-কে জীবনের লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করুন। নিজের জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্যকে বাড়ানোর জন্য সর্বদা চেষ্টিত থাকুন। আন্দোলনের ময়দানে আপনি যত বেশী আন্তরিক হবেন, তত বেশী আপনার জ্ঞান ও  বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য বৃদ্ধি পাবে। সংগঠনের লেখনীগুলিকে আত্মস্থ করুন। বক্তব্যগুলির সাথে একাত্ম হৌন! সবকিছুই আল্লাহ দেখছেন ও শুনছেন, এ বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর পথে নেকীর প্রতিযোগিতা করুন। তুচ্ছ নেকীর কাজকেও বড় মনে করুন এবং তুচ্ছ গোনাহ থেকেও তওবা করুন। মৃত্যুর আগেই পরকালের পাথেয় সঞ্চয় করুন। আপনার আয়ের একটা নির্দিষ্ট অংশ নিয়মিতভাবে সংগঠনকে দান করুন। নফল ছাদাক্বা দেওয়ার সময় গণনা করবেন না। সংগঠনকে ছাদাক্বায়ে জারিয়াহর প্রধান ক্ষেত্র হিসাবে গ্রহণ করুন। এ সমাজ পরিবর্তন করতেই হবে, এ স্থির লক্ষ্য নিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপ রাখুন। আপনি কোথাও গেলে, উঠলে বা বসলে যেন মানুষ বুঝতে পারে যে, আপনি ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর একজন নিষ্ঠাবান কর্মী।

প্রিয় সাথীগণ!

আধুনিক জাহেলিয়াতের মধ্যে সবচেয়ে বড় জাহেলিয়াত হ’ল, রাজনীতি সহ সর্বত্র নির্বাচনী জাহেলিয়াত। পুঁজিবাদের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া এ যুগের এই রাজনৈতিক প্রতারণার ফাঁদে কোন কর্মী পা দিলে তার আদর্শ ভূলুণ্ঠিত হবে। সংগঠন ও সমাজ বিপর্যস্ত হবে। আমরা এর বিপরীতে জ্ঞানীদের পরামর্শ ভিত্তিক এবং দল ও প্রার্থীবিহীন ইসলামী নেতৃত্ব নির্বাচন পদ্ধতির কল্যাণমুখী দিক সমূহ জনগণকে বুঝাতে চেষ্টা পাব। এর পরেই হ’ল সূদ-ঘুষের ও জুয়া-লটারীর রক্তচোষা পুঁজিবাদী অর্থনীতি। এখানে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত কঠিন পরীক্ষা সমূহের সম্মুখীন হ’তে হচ্ছে। এ থেকে বাঁচার একটাই পথ হ’ল অল্পে তুষ্ট থাকা এবং নিজের চাইতে নিম্নস্তরের বান্দাদের দেখে উপদেশ হাছিল করা। দ্বিতীয় হ’ল, হালাল রূযীকে লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং অধিক পাওয়ার আকাংখাকে পায়ের তলে দাবিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করা। তৃতীয় হ’ল, কৃপণতা হ’তে তওবা করা। কেননা কৃপণ ব্যক্তি নিজেরও কল্যাণ করে না, অপরেরও কল্যাণ করে না। তার সঞ্চিত ধন ক্বিয়ামতের দিন বিষধর সাপের রূপ ধারণ করে তার দুই চোয়াল চেপে ধরে বলবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমার সঞ্চিত ধন’। অতএব যেটা দিবেন, সেটাই আপনার। যেটা রাখবেন, সেটা অন্যের। আর সর্বদা এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহর পক্ষ হ’তে আমার জন্য বরাদ্দ রূযী কেউ নিতে পারবে না। চতুর্থ বিষয় হ’ল, পরনিন্দা ও পরচর্চা করা। বরং ঐ সময়টা আত্মসমালোচনা ও আল্লাহর যিকরে ব্যয় করুন। তাতে নেকীর পাল্লা ভারী হবে। নেক নিয়তে সংশোধনের স্বার্থ ব্যতীত এই মহাব্যাধি থেকে দূরে থাকুন ও ঘন ঘন তওবা-ইস্তিগফার করুন। কেননা যবান যদি একবার অন্যের নিন্দায় অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহ’লে আমরা নিজেরাই এর শিকারে পরিণত হব। পঞ্চম বিষয় হ’ল, হিংসা-অহংকার ও আত্মম্ভরিতা। মনে রাখবেন, এগুলি মনের রোগ। যার মধ্যে এ রোগগুলি সক্রিয় হবে, সে ধ্বংস হবে। তাই এগুলি মাথা চাড়া দেওয়ার সাথে সাথে নাঊযুবিল্লাহ-আস্তাগফিরুল্লাহ বলে তওবা করুন।

ষষ্ঠ বিষয় হ’ল, কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক মধুর ও দৃঢ় করুন। অহেতুক সন্দেহবাদ পরিহার করুন। সংগঠনের সকল পর্যায়ের কর্মীকে দ্বীনী ভাই হিসাবে মহববতের বন্ধনে আবদ্ধ করুন। পরস্পরের প্রতি আস্থা, ভালবাসা ও আন্তরিকতা বৃদ্ধির সবধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। ক্ষমা ও উদারতার মাধ্যমে পরস্পরকে আপন করে নিন। সপ্তম বিষয় হ’ল, আমানতকে হেফাযত করুন। এ ব্যাপারে সবধরনের শিথিলতা পরিহার করুন। সংগঠনের যেকোন আমানত সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সাথে রক্ষা করুন। যেন এই মুহূর্তে মৃত্যু হ’লেও সাথীদের নিকট সমস্ত হিসাব পরিষ্কার থাকে। যিনি যত বড় দায়িত্বশীল, আল্লাহর নিকট তিনি তত বড় কৈফিয়তের সম্মুখীন হবেন। অতএব সাবধান! ‘আমাদের কান, চোখ ও হৃদয় সবকিছু আল্লাহর নিকট জিজ্ঞাসিত হবে’। অষ্টম বিষয় হ’ল, মানুষকে ভালবাসুন। আর্ত-মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিন। মানব সেবার মধ্যে আল্লাহর রহমত তালাশ করুন। ‘আল্লাহ বান্দার সাহায্যে অতক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে’। নবম বিষয় হ’ল, পরস্পরের প্রতি শুকরিয়া আদায় করুন ও পরস্পরের জন্য বেশী বেশী দো‘আ করুন। বিগত দিনে ও বর্তমান সময়ে আল্লাহ যাকে দিয়ে যতটুক আন্দোলন ও সংগঠনের কাজ নিয়েছেন, ততটুকুর জন্য আমরা সর্বদা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। সেই সাথে সকলের প্রতি সুধারণা রাখব ও কল্যাণের দো‘আ করব। দশম বিষয় হ’ল, আল্লাহর পথে যেকোন কষ্টে ধৈর্য্যধারণ করুন এবং এটিকে আল্লাহর পরীক্ষা হিসাবে হাসিমুখে বরণ করুন। যেন আমাদের ত্যাগ ও কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ এদেশে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সর্বোচ্চ অধিকারকে সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা দান করেন- আমীন!

আল্লাহ বলেন, أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللهِ أَلاَ إِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيبٌ- ‘তোমরা কি ধারণা করেছ জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের উপর এখনও তাদের মত অবস্থা আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। নানাবিধ বিপদ ও দুঃখ-কষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করেছিল ও তারা ভীত-কম্পিত হয়েছিল। অবশেষে রাসূল ও তার সাথী মুমিনগণ বলতে বাধ্য হয়েছিল যে, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য অতীব নিকটবর্তী’ (বাক্বারাহ ২/২১৪)। তিনি তার মুমিন বান্দাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَنْصُرُوا اللهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ- ‘হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা গুলিকে দৃঢ় করবেন’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৭)। অর্থাৎ যদি তোমরা আল্লাহর বিধান সমূহ মেনে চল, তাহ’লে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান সুদৃঢ় করবেন। অতঃপর তিনি বলেন, وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لاَ يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ ‘আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহ’লে তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। অতঃপর তারা তোমাদের মত হবে না’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৩৮)

আল্লাহ স্বীয় মেহেরবানীতে আমাদেরকে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর কর্মী হিসাবে বেছে নিয়েছেন, সেজন্য অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি এবং আমাদের সাধ্যমত জান-মালের কুরবানীর বিনিময়ে আখেরী যামানায় ফিরক্বা নাজিয়াহর অন্তর্ভুক্ত থাকার জন্য তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করছি। আমরা সর্বাবস্থায় আল্লাহর রহমতের ভিখারী এবং তাঁর প্রতিশ্রুতিতে আশাবাদী। কারণ তিনি বলেছেন, وَلَيَنْصُرَنَّ اللهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ‘আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করেন, যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও মহা পরাক্রান্ত’ (হজ্জ ২২/৪০)। অতএব দুনিয়া ও আখেরাতে সর্বাবস্থায় আমরা আল্লাহর সাহায্য চাই। যার সাহায্য পেলে অন্য কারু সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। কারণ তিনি বলেন,إِنَّا لَنَنْصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الْأَشْهَادُ ‘নিশ্চয়ই আমরা সাহায্য করব আমাদের রাসূলদের ও মুমিনদের, যেদিন দন্ডায়মান হবে সাক্ষীগণ’ (মুমিন ৪০/৫১)। মৃত্যুর ৮০ দিন পূর্বে বিদায় হজ্জের পর কুরবানীর দিনের ভাষণে উম্মতের প্রতি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উদাত্ত আহবান স্মরণ রাখুন, اتَّقُوا اللهَ رَبَّكُمْ وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُومُوا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيعُوا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ- ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় কর। পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় কর। রামাযানের ছিয়াম পালন কর। মালের যাকাত দাও। তোমাদের আমীরের আনুগত্য কর। তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ কর’ (ছহীহাহ হা/৮৬৭)। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর- আমীন!

পরিশেষে বিরূপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্রেফ দ্বীনের মহববতে ও সংগঠনের টানে যেসব কর্মী ভাই ও বোন এখানে উপস্থিত হয়েছেন, তাদের সবাইকে সাদর অভিনন্দন জানিয়ে আল্লাহর নামে আজকের এই ‘বার্ষিক কর্মী সম্মেলনে’র শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি। আসসালামু ‘আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

দরসে কুরআন : পরদিন শুক্রবার বাদ ফজর তিনি সূরা তাকাছুরের উপর দরসে কুরআন পেশ করেন। তিনি বলেন, অধিক পাওয়ার আকাংখা সকল ধ্বংসের মূল। অতএব অল্পে তুষ্ট থেকে আল্লাহর পথে দৃঢ় পদে দাওয়াত ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে হবে।

জুম‘আর খুৎবা : হাম্দ ও ছানা পাঠের পর আমীরে জামা‘আত বার্ষিক কর্মী সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। অতঃপর মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে জাতিকে আল্লাহর পথে আহবান করুন। এ পথে যাবতীয় দুঃখ-কষ্টকে আল্লাহর পরীক্ষা হিসাবে বরণ করে নিন।

সম্মেলনের অন্যান্য রিপোর্ট :

১ম দিন বাদ আছর পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত ও ইসলামী জাগরণী পরিবেশনের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। অতঃপর ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইনের পরিচালনায় স্বাগত ভাষণ পেশ করেন কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম এবং উদ্বোধনী ভাষণ পেশ করেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত। অতঃপর মাসিক আত-তাহরীক, আগস্ট’১৭ সংখ্যার সম্পাদকীয় ‘পিওর ও পপুলার’ পাঠ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম। এরপর ‘কর্মীদের গুণাবলী’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক জালালুদ্দীন (নরসিংদী) এবং ‘হিংসা ও অহংকার’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম (রাজশাহী; বাহরাইন প্রবাসী)।

অতঃপর বাদ মাগরিব বক্তব্য রাখেন আমীরে জামা‘আতের জ্যেষ্ঠ পুত্র আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামাবাদ, পাকিস্তান থেকে হাদীছের উপর এম.এস. ডিগ্রী নিয়ে সদ্য প্রত্যাগত আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাক্বিব। অতঃপর মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা) ‘সমাজ সংস্কারে নেতৃত্ব ও আনুগত্যের গুরুত্বে’র উপর বক্তব্য রাখেন। এরপর প্রবাসী সংগঠন সমূহের প্রতিনিধিদের পক্ষে বক্তব্য পেশ করেন তোফায্যল হোসাইন (কুমিল্লা; আল-খাফজী, সঊদী আরব), সোহরাব হোসাইন (পাবনা; রিয়াদ, সঊদী আরব), মু‘আয্যম হোসাইন (বগুড়া; সিঙ্গাপুর)। অতঃপর বাদ এশা ‘দাওয়াতের পদ্ধতি ও মাধ্যম’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন মাওলানা মুখলেছুর রহমান (নওগাঁ)।

অতঃপর সংগঠনের উন্নতি ও অগ্রগতি বিষয়ে যেলা সভাপতি ও প্রতিনিধিগণের মধ্য হ’তে পরামর্শমূলক বক্তব্য সমূহ পেশ করেন, চট্টগ্রাম যেলা সভাপতি ডা. শামীম আহসান, চুয়াডাঙ্গা যেলার সহ-সভাপতি ক্বামারুয্যামান ও ঠাকুরগাঁও যেলার আহবায়ক কমিটির সদস্য যিয়াউর রহমান প্রমুখ।

পরদিন বাদ ফজর আমীরে জামা‘আতের ‘দরসে কুরআন’ পেশের পর কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক অধ্যাপক আমীনুল ইসলামের পরিচালনায় ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন?’ বইয়ের উপর ‘গ্রুপ ডিসকাশন’ অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর উক্ত বইয়ের উপরে বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত কর্মীদেরকে বিষয়টি বিশদভাবে বুঝিয়ে দেন। এরপর কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা দুররুল হুদা ও কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলামের পরিচালনায় ‘ফিরক্বা নাজিয়াহ’ বইয়ের উপর ‘গ্রুপ ডিসকাশন’ অনুষ্ঠিত হয়।

নাশতার বিরতির পর ‘আদর্শ মানুষ গঠনে ‘সোনামণি’ সংগঠনের ভূমিকা’-এর উপর ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক আবদুল হালীম, সমাজ সংস্কারে ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র ভূমিকা’-এর উপর ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশীদ আখতার, ‘পারিবারিক জীবনে ইসলামের অনুশীলন: কর্মীদের দায়িত্ব’-এর উপর ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, ইহতিসাব পর্যালোচনা-এর উপর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন বক্তব্য পেশ করেন। অতঃপর ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মাদ নযরুল ইসলাম বক্তব্য পেশ করেন। এরপর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এই কর্মী সম্মেলনে যোগদানকারী কর্মীদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সম্মেলনের আহবায়ক ও ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম। ‘বার্ষিক সাংগঠনিক রিপোর্ট’ পেশ এবং ২০১৭-২০১৯ সেশনের মনোনীত যেলা সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। অতঃপর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ২০১৭-২০১৯ সেশনের মজলিসে আমেলা, মজলিসে শূরা সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন এবং সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের নিকট হ’তে আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণ করেন।

কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য সম্মেলন :

সম্মেলনের ২য় দিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯-টা থেকে ১১-টা পর্যন্ত আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর পূর্ব পার্শ্বস্থ ভবনের ৩য় তলায় ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম। অতঃপর ২০১৫-২০১৭ সেশনের কেন্দ্রীয় বার্ষিক আয়-ব্যয়ের অডিটকৃত হিসাব পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম। এরপর কেন্দ্রীয় সংগঠনের সার্বিক রিপোর্ট পেশ করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। সংগঠনের অগ্রগতি সম্পর্কে পরামর্শমূলক বক্তব্য পেশ করেন অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), মাওলানা আলতাফ হোসাইন (সাতক্ষীরা), মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম (বগুড়া), মাস্টার খায়রুল আযাদ (রংপুর), শহীদুয্যামান ফারূক (সাতক্ষীরা), মাষ্টার ফারূক ছিদ্দীক্বী (নওগাঁ) প্রমুখ। অতঃপর কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মাদ নযরুল ইসলাম। অতঃপর মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের সমাপনী ভাষণের মাধ্যমে সম্মেলন শেষ হয়।







আরও
আরও
.