বিদায়ের আগে রেখে যাও কিছু পদচিহ্ন (৬ষ্ঠ কিস্তি)

পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ ।

সঞ্চারণশীল উপকারমূলক আমলের কিছু নমুনা 

১০. ছাদাক্বা ও দরিদ্র-অভাবীদের জন্য অর্থ ব্যয়ে মহা পুরস্কার ও চক্রবৃদ্ধি হারে ছওয়াব লাভ :

আল্লাহ তা‘আলা ছাদাক্বাকে লালন-পালন করেন এবং ছাদাক্বা দাতাকে চক্রবৃদ্ধি হারে ছওয়াব দেন। তার মর্যাদা অনেক বাড়িয়ে দেন। এ সম্পর্কে প্রচুর আয়াত ও হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।

ছাদাক্বার চক্রবৃদ্ধি হারে ছওয়াব অর্জন বিষয়ক কিছু আয়াত :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنَّ الْمُصَّدِّقِينَ وَالْمُصَّدِّقَاتِ وَأَقْرَضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعَفُ لَهُمْ وَلَهُمْ أَجْرٌ كَرِيمٌ- ‘নিশ্চয়ই দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেয়, তাদেরকে দেওয়া হবে বহুগুণ বেশী। আর তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার’ (হাদীদ ৫৭/১৮)

অন্যত্র তিনি বলেন,مَنْ ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً وَاللهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ- ‘কোন্ সে ব্যক্তি যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিবে, অতঃপর তিনি তার বিনিময়ে তাকে বহুগুণ বেশী প্রদান করবেন? বস্ত্ততঃ আল্লাহই রূযী সংকুচিত করেন ও প্রশস্ত করেন। আর তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’ (বাক্বারাহ ২/২৪৫)

আল্লাহ তা‘আলা কেন ছাদাক্বাকে কর্য নামে আখ্যায়িত করেছেন তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, ‘মানুষ যাতে তাদের ছাদাক্বার ছওয়াব অবশ্যম্ভাবী পায় সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা ছাদাক্বাকে কর্য নাম দিয়েছেন। কেননা কর্য দিলে তা অবশ্যই ফেরত পাওয়ার কথা’।[1] আল্লাহ বলেন,مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ- ‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্যবীজের ন্যায়। যা থেকে সাতটি শীষ জন্ম নেয়। প্রতিটি শীষে একশ’টি দানা হয়। আর আল্লাহ যার জন্য চান বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ’ (বাক্বারাহ ২/২৬১)

ছাদাক্বার ফলে প্রচুর ছওয়াবপ্রাপ্তি বিষয়ক কিছু হাদীছ : আবু কাবশা আনমারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন,ثَلَاثَةٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ قَالَ: مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ، وَلَا ظُلِمَ عَبْدٌ مَظْلِمَةً فَصَبَرَ عَلَيْهَا إِلَّا زَادَهُ اللهُ عِزًّا، وَلَا فَتَحَ عَبْدٌ بَابَ مَسْأَلَةٍ إِلَّا فَتَحَ اللهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقْرٍ أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا- ‘আমি তিনটি বিষয়ে শপথ করছি এবং তোমাদেরকে একটি হাদীছ বলছি। তোমরা সেটা মুখস্থ রেখো। তিনি বলেন, দান-খয়রাতের ফলে কোন বান্দার সম্পদ হ্রাস পায় না। কোন বান্দার উপর যুলুম করা হ’লে এবং সে তাতে ধৈর্যধারণ করলে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তার সম্মান বাড়িয়ে দেন। আর কোন বান্দা ভিক্ষার দরজা খুললে আল্লাহ তার জন্য অভাবের দরজা খুলে দেন’। অথবা তিনি অনুরূপ বলেছেন।[2]

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا تَصَدَّقَ أَحَدٌ بِصَدَقَةٍ مِنْ طَيِّبٍ، وَلَا يَقْبَلُ اللهُ إِلَّا الطَّيِّبَ، إِلَّا أَخَذَهَا الرَّحْمَنُ بِيَمِينِهِ، وَإِنْ كَانَتْ تَمْرَةً، فَتَرْبُو فِي كَفِّ الرَّحْمَنِ حَتَّى تَكُونَ أَعْظَمَ مِنَ الْجَبَلِ، كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ أَوْ فَصِيلَهُ- ‘যে ব্যক্তি হালাল মাল থেকে ছাদাক্বা দেয়- আর আল্লাহ পবিত্র মাল ছাড়া গ্রহণ করেন না; দয়াময় আল্লাহ তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন, যদিও তা একটা খেজুর হয়। অতঃপর সে ছাদাক্বা দয়াময় আল্লাহর হাতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। অবশেষে তা পাহাড়ের চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়ায়। যেমন কেউ তার ঘোড়ার কিংবা উটের বাচ্চা লালন-পালন করে (এবং সে দিন দিন বড় হ’তে থাকে)’।[3]

ছাদাক্বা দেহের হেফাযত করে এবং দাতাকে বালা-মুছীবত ও রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করে :

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,دَاوُوا مَرْضَاكُمْ بِالصَّدَقَةِ ‘তোমরা ছাদাক্বা দ্বারা তোমাদের রোগীদের চিকিৎসা করো’।[4]

হাদীছ গ্রন্থ ‘মুস্তাদরাকে হাকেম’-এর সংকলক আবু আব্দুল্লাহ হাকেম (রহ.)-এর মুখমন্ডলে একবার প্রায় এক বছর যাবৎ ক্ষত হয়েছিল। তিনি নেককার লোকদের নিকট দো‘আ চান। তারা খুব করে দো‘আ করেন। তারপর তিনি তার বাড়ির সামনে একটি কূয়া তৈরি করে তাতে পানির ব্যবস্থা করেন এবং মুসলিমদের পানি পানের জন্য তা ছাদাক্বা করে দেন। লোকেরা তার দেওয়া পানি পান করতে শুরু করে। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই দেখা গেল আল্লাহর রহমতে তার রোগ হ্রাস পেতে শুরু করেছে। অল্পদিনেই তার সব ক্ষত দূর হয়ে যায় এবং চেহারা আগের থেকেও সুন্দর হয়ে ওঠে।

আল্লামা মুনাভী (রহঃ) ঠিকই বলেছেন, ছাদাক্বা রূহানী ওষুধ। এটি বহুল পরীক্ষিত সত্য যে, অনেক সময় রূহানী ওষুধে যে কাজ হয় বাহ্যিক ওষুধে সে কাজ হয় না। এ সত্য কেবল তারাই অস্বীকার করতে পারে যাদের চোখে ঠুলি পরা।[5]

কতিপয় পূর্বসূরী মনে করেন যে, ছাদাক্বা সব রকমের বালা-মুছীবত ও সঙ্কট দূর করে, এমনকি ছাদাক্বাকারী যালেম হ’লেও। ইবরাহীম নাখঈ (রহঃ) বলেছেন, আমাদের পূর্বসূরী সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিরা মনে করেন যে, ছাদাক্বাই মহা যালেম থেকেও বিপদাপদ হটিয়ে দেয়।[6]

ছাদাক্বার বিস্ময়কর উপকারিতার সাম্প্রতিক একটি ঘটনা : আবু সারা একজন ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তার মাসিক বেতন নয় হাযার রিয়াল। এত উচ্চ বেতন ও নিজস্ব বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তিনি লক্ষ্য করছিলেন যে, তার বেতন দ্রুতই ফুরিয়ে যায়। কিন্তু কেন এমন হয় তা তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তিনি বিস্মিত সুরে বলেন, সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি বুঝি না, বেতনের এ টাকা কোথায় যায়? তিনি বলেন, প্রত্যেক মাসেই আমি বলি, এখন থেকে সঞ্চয় করতে শুরু করব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই আগের অবস্থার কোন পরিবর্তন হ’ল না। এসময় জনৈক বন্ধু আমার বেতনের একটা অংশ আমাকে ছাদাক্বা করতে উপদেশ দেয়। আমি বেতন থেকে পাঁচশত রিয়াল দানের জন্য নির্দিষ্ট করি। আল্লাহর কসম! প্রথম মাসেই আমি দু’হাযার রিয়াল জমাতে সক্ষম হই। অথচ আমার খাদ্য-খানা ও অন্যান্য খরচে কোন হেরফের হয়নি। এতে আমি খুব খুশী। পরে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, দানের পরিমাণ পাঁচশত থেকে বাড়িয়ে নয়শত রিয়াল করব। পাঁচ মাস পর আমি খবর পেলাম যে, অচিরেই আমার বেতন বাড়ানো হচ্ছে। আল-হামদুলিল্লাহ। এটা আমার রবের মহা অনুগ্রহ, আমি এর কৃতজ্ঞতা জানাতে অক্ষম। ছাদাক্বার কল্যাণে আমি আমার সম্পদে, পরিবারে ও যাবতীয় ক্ষেত্রে বরকত লক্ষ্য করি। আমার ভাইয়েরা, তোমরা পরীক্ষা করে দেখ, আমি তোমাদের যা বলছি তা সঠিক পাবে, এমনকি বেশীও পাবে।

ছাদাক্বার বিস্ময় শেষ হবার নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সত্য বলেছেন, مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ ‘ছাদাক্বার ফলে বান্দার সম্পদ হ্রাস পায় না’। বরং তাতে বরকত হয় এবং বাহ্যিক দৃষ্টিতে যে সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে বলে মনে হয় তা পূরণ হয়ে যায়।

১১. কর্যে হাসানা গ্রহীতা এবং বাকীতে ক্রয়কারী অভাবীকে অর্থ পরিশোধে সময় প্রদান :

কর্যে হাসানা গ্রহণকারী এবং বাকীতে ক্রয়কারী অভাবীকে অর্থ পরিশোধে সময় প্রদান পরকালীন জীবনে নাজাত লাভের বড় উপায়। এ বিষয়ে ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُقْرِضُ مُسْلِمًا قَرْضًا مَرَّتَيْنِ إِلَّا كَانَ كَصَدَقَتِهَا مَرَّةً- ‘কোন মুসলিম অন্য মুসলিমকে দু’বার কর্য দিলে তা অবশ্যই ঐ পরিমাণ মাল একবার দানের সমতুল্য বলে গণ্য হবে’।[7]

হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,تَلَقَّتِ الْمَلَائِكَةُ رُوْحَ رَجُلٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَقَالُوا: أَعَمِلْتَ مِنَ الْخَيْرِ شَيْئًا؟ قَالَ: لَا، قَالُوا: تَذَكَّرْ، قَالَ: كُنْتُ أُدَايِنُ النَّاسَ فَآمُرُ فِتْيَانِي أَنْ يُنْظِرُوا الْمُعْسِرَ، وَيَتَجَوَّزُوا عَنِ الْمُوسِرِ، قَالَ: قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: تَجَوَّزُوا عَنْهُ- ‘তোমাদের পূর্বকালে এক ব্যক্তির (মৃত্যুর পর তার) রূহের সাথে ফেরেশতারা দেখা করেন। তারা তাকে বলেন, তুমি কি সৎকাজ কিছু করেছ? সে বলে, না। তারা বললেন, মনে করে দেখ। তখন সে বলল, আমি মানুষকে ধার-কর্য দিতাম এবং আমার কর্মচারীদের বলতাম, তারা যেন বাকীতে ক্রয়কারী অভাবীকে অর্থ পরিশোধে সময় দেয় এবং সচ্ছল লোকদের প্রতি সদয় হয়। তিনি বলেন, আল্লাহ তখন বললেন, তোমরা তাকে মাফ করে দাও’।[8]

১২. আহার করানো :

কাউকে খাবার খেতে দেওয়া মহা পুণ্যের কাজ। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,أَنَّ رَجُلاً سَأَلَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ، ‘এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, কোন ইসলাম (ইসলামে কোন কাজ) উত্তম? তিনি বললেন, তুমি (মানুষ ও অন্য প্রাণীকে) খাবার খেতে দিবে এবং তোমার পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দিবে’।[9]

অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلاَمٍ، قَالَ: لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ انْجَفَلَ النَّاسُ إِلَيْهِ، وَقِيلَ: قَدِمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَجِئْتُ فِي النَّاسِ لأَنْظُرَ إِلَيْهِ، فَلَمَّا اسْتَبَنْتُ وَجْهَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَرَفْتُ أَنَّ وَجْهَهُ لَيْسَ بِوَجْهِ كَذَّابٍ وَكَانَ أَوَّلُ شَيْءٍ تَكَلَّمَ بِهِ أَنْ قَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، أَفْشُوا السَّلاَمَ، وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ، وَصَلُّوا وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُونَ الجَنَّةَ بِسَلاَمٍ.

‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যেদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় পদার্পণ করেন সেদিন লোকেরা তাঁর কাছে ছুটে যায়। চারিদিকে রব ওঠে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এসেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এসেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এসেছেন। লোকেদের মাঝে আমিও তাঁকে দেখতে এলাম। আমি যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চেহারা খুব ভালো ভাবে পরখ করে দেখলাম তখন আমি বুঝতে পারলাম, এ চেহারা কোন মিথ্যুকের চেহারা নয়। তখন প্রথম যে কথাটি তিনি বলেছিলেন তা হ’ল,يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلَامَ، وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ، تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلَامٍ، ‘হে লোকসকল! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, খাবার খেতে দাও এবং রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন ছালাত আদায় করো, তাহ’লে শান্তিতে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে’।[10]

আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,فُكُّوا الْعَانِىَ يَعْنِى الأَسِيرَ وَأَطْعِمُوا الْجَائِعَ وَعُودُوا الْمَرِيضَ- ‘তোমরা বন্দীদের মুক্ত করো, ক্ষুধার্তকে খেতে দাও এবং রোগীর সেবা করো’।[11]

একই রাবী থেকে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ الأَشْعَرِيِّينَ إِذَا أَرْمَلُوا فِى الْغَزْوِ، أَوْ قَلَّ طَعَامُ عِيَالِهِمْ بِالْمَدِينَةِ جَمَعُوا مَا كَانَ عِنْدَهُمْ فِى ثَوْبٍ وَاحِدٍ، ثُمَّ اقْتَسَمُوهُ بَيْنَهُمْ فِى إِنَاءٍ وَاحِدٍ بِالسَّوِيَّةِ، فَهُمْ مِنِّى وَأَنَا مِنْهُمْ- ‘আশ‘আরী গোত্রের লোকেদের যখন যুদ্ধে পাথেয় বা খরচের অর্থ ফুরিয়ে আসে, কিংবা মদীনাতে তাদের পরিবার-পরিজনের খাদ্য-খানা কমে যায় তখন তারা তাদের কাছে যা কিছু থাকে তা এক কাপড়ে জমা করে, তারপর তারা একপাত্রে সেই খাদ্য নিজেদের মধ্যে সমান করে ভাগ করে নেয়। তাই তারা আমার একজন এবং আমিও তাদের একজন’।[12]

এ হাদীছে নিজের উপর অপরকে প্রাধান্য দানের ও পারস্পরিক সহযোগিতার ফযীলত এবং সফরে ও বাড়িতে একে অন্যের সম্বল মিশিয়ে ব্যবহার মুস্তাহাব হওয়ার কথা রয়েছে।[13]

১৩. ইয়াতীমদের প্রতি দয়া করা :

ইয়াতীমদের প্রতি দয়া করলে আল্লাহ তা‘আলার দয়া মিলবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ، ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না। তোমরা সদ্ব্যবহার কর পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম-মিসকীন, নিকট প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, (নিঃস্ব) পথিক ও তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের সাথে’ (নিসা ৪/৩৬)

ইয়াতীমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে থাকবেন। সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِى الْجَنَّةِ هَكَذَا وَقَالَ بِإِصْبَعَيْهِ السَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى- ‘আমি ও ইয়াতীমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব। তিনি তার তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল মিলিয়ে দেখালেন’।[14] ইবনু বাত্তাল (রহঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক মুমিন যেই এ হাদীছ শুনবে তারই কর্তব্য হবে হাদীছ অনুযায়ী আমল করা, তাহ’লে সে জান্নাতে নবী করীম (ছাঃ) ও নবী-রাসূলদের জামা‘আতের সাথী হবে।[15]

আল্লাহ তা‘আলা বনূ ইসরাঈল সম্প্রদায়ের নিকট থেকে ইয়াতীমদের সাথে ভালো ব্যবহারের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ، ‘আর (স্মরণ কর) যখন আমরা বনু ইস্রাঈলের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো দাসত্ব করবে না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন ও ইয়াতীম-মিসকীনদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে’ (বাক্বারাহ ২/৮৩)। আমরা মুসলিমরা বনী ইসরাঈল থেকে এ কাজের ফযীলত লাভের বেশী হকদার।

সুতরাং যে চায় তার মন নরম হোক এবং তার প্রয়োজন পূরণ হোক সে যেন ইয়াতীমের উপর দয়া করে, তার মাথায় হাত বুলায় এবং তার খাদ্য থেকে ইয়াতীমকে খেতে দেয়।

আবুদ্দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে এসে তার মনের কঠোরতা সম্পর্কে অনুযোগ করল। তখন তিনি তাকে বললেন,أَتُحِبُّ أَنْ يَلِينَ قَلْبُكَ وَتُدْرَكَ حَاجَتُكَ؟ ارْحَمِ الْيَتِيمَ، وَامْسَحْ رَأْسَهُ، وَأَطْعِمْهُ مِنْ طَعَامِكَ، يَلِيْنُ قَلْبُكَ وَتُدْرِكُ حَاجَتَكَ- ‘তুমি কি চাও যে তোমার মন নরম হোক এবং তোমার প্রয়োজন পূরণ হোক? তাহ’লে তুমি ইয়াতীমের উপর দয়া করো, তার মাথায় হাত বুলাও এবং তোমার খাদ্য থেকে ইয়াতীমকে খেতে দাও। এতে তোমার মন নরম হবে এবং তোমার প্রয়োজন পূরণ হবে’।[16]

জনৈক সালাফ বলেছেন, আমার জীবনের প্রথম লগ্নে আমি পাপের পথে হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকতাম। প্রচন্ড মদ পান করতাম। একদিন আমি এক দরিদ্র ইয়াতীম বাচ্চাকে হাতে পেলাম। তাকে কাছে নিয়ে আদর করলাম, খাবার খেতে দিলাম, পরার জন্য কাপড় দিলাম, গোসলখানায় নিয়ে তার গা থেকে ময়লা দূর করলাম এবং তার সঙ্গে পিতা যেমন সন্তানের সাথে স্নেহপূর্ণ আচরণ করে তদ্রূপ কিংবা তার থেকেও বেশী স্নেহপূর্ণ আচরণ করলাম। এ ঘটনার পর এক রাতে আমি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখলাম যে, ক্বিয়ামত কায়েম হয়ে গেছে এবং আমাকে হিসাব দেওয়ার জন্য তলব করা হয়েছে। যেহেতু আমি পাপে ডুবে ছিলাম তাই হিসাব শেষে আমাকে জাহান্নামে ফেলে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হ’ল। আগুনে ফেলার জন্য যাবানিয়াহ ফেরেশতারা আমাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগল। আমি তাদের হাতে একেবারে লাঞ্ছিত নিরুপায়। এমন সময় সেই ইয়াতীম বাচ্চাটা পথে আমার জন্যে আড় হয়ে দাঁড়াল। সে বলল, একে ছেড়ে দাও, হে আমার রবের ফেরেশতাগণ। আমি তার জন্য আমার রবের দরবারে সুফারিশ করব। সে আমার উপর দয়া করেছিল এবং আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছিল। কিন্তু ফেরেশতারা বলল, আমাদের তো এ অনুমতি নেই। এমন সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা হ’ল: তোমরা তাকে ছেড়ে দাও। এই ইয়াতীমের সুফারিশে এবং তার সঙ্গে ভালো ব্যবহারের ফলে আমি তাকে মাফ করে দিয়েছি। তারপর জেগে উঠে আমি আল্লাহর নিকট তওবা করি এবং ইয়াতীমদের প্রতি দয়ার্দ্র আচরণে আমার সামর্থ্য ব্যয় করতে শুরু করি।[17]

১৪. স্বামীহীনা ও নিঃস্ব-গরীবের ব্যয় নির্বাহের জন্য আয়-রোযগার : স্বামীহীনা ও নিঃস্ব-গরীবের ব্যয় নির্বাহের জন্য আয়-রোযগারের চেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। এ কাজের উপকার অন্যের মাঝে সঞ্চারণশীল। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,السَّاعِى عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالْمِسْكِينِ كَالْمُجَاهِدِ فِى سَبِيلِ اللهِ أَوِ الْقَائِمِ اللَّيْلَ الصَّائِمِ النَّهَارَ- ‘স্বামীহীনা ও নিঃস্ব-গরীবের ব্যয় নির্বাহের জন্য আয়-রোযগারকারী আল্লাহর পথের মুজাহিদ অথবা রাতে ছালাত আদায়কারী ও দিনে ছিয়াম পালনকারীর সমতুল্য’।[18]

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘চেষ্টাকারী’ (السَّاعِى) অর্থ স্বামীহীনা ও নিঃস্ব-গরীবের জন্য অর্থ উপার্জনকারী এবং ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালনকারী। ‘আরমালা’ (الأَرْمَلَةِ) বলা হয় ঐ নারীদের, যাদের স্বামী নেই- চাই ইতিপূর্বে তাদের বিয়ে হয়ে থাকুক কিংবা না থাকুক। কেউ কেউ বলেছেন, যে নারীর স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটেছে তাকে ‘আরমালা’ বলা হয়েছে। ইবনু কুতায়বা বলেন, ‘আরমালা’ শব্দটি ‘ইরমাল’ (الإرمال) শব্দ থেকে এসেছে। ‘ইরমাল’ অর্থ দারিদ্র্য। স্বামী না থাকায় এ ধরনের নারীরা সাধারণত দরিদ্রতার শিকার হয় এবং তাদের অর্থ-বিত্ত থাকে না। তাই তাদের ‘আরমালা’ বলা হয়েছে।

‘মিসকীন’ ঐ লোককে বলে, যার কিছুই নেই। কেউ কেউ বলেছেন, যার সামান্য কিছু আছে তাকে মিসকীন বলে। কখনো কখনো দুর্বলকে মিসকীন বলা হয়। ফকীর অর্থেও মিসকীন শব্দ ব্যবহার করা হয়। অনেকে এ অর্থই যথার্থ মনে করেন। ‘আল্লাহর পথে মুজাহিদের সমতুল্য’ অর্থ স্বামীহীনা ও নিঃস্ব-গরীবের জন্য আয়-রোযগারকারী, তাদের জন্য ব্যয় নির্বাহকারী এবং তাদের সহযোগিতাকারীর ছওয়াব জিহাদে যোগদানকারী মুজাহিদের ছওয়াবের মতো। কেননা অর্থ-বিত্ত নফসের সহোদর ভাই। নফস অর্থ ব্যয়ে মোটেও সায় দেয় না। যুদ্ধ যেমন নফসের কুরবানী চায়, স্বামীহীনা ও মিসকীনদের সেবাও তেমন অর্থের কুরবানী চায়। রবের সন্তুষ্টি কামনায় অর্থ ও সময় ব্যয় তাই একজন মুজাহিদের ভূমিকা রাখে।[19]

১৫. প্রতিবেশীর সাথে ভাল আচরণ :

প্রতিবেশীর সাথে ভাল আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ، ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। তোমরা সদ্ব্যবহার কর পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম-মিসকীন, নিকট প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, (নিঃস্ব) পথিক ও তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের সাথে’ (নিসা ৪/৩৬)

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইবাদতের সঙ্গে মাতা-পিতা, ইয়াতীম ও আত্মীয়দের সাথে ভাল ব্যবহার এবং প্রতিবেশীর হকও যুক্ত করেছেন। এতে প্রতিবেশীর সাথে ভাল ব্যবহারের বিষয়টি সমান গুরুত্ব পেয়েছে।

আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا زَالَ جِبْرِيْلُ يُوْصِيْنِي بِالْجَارِ، حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ- ‘জিবরীল আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অনুক্ষণ এত নছীহত করে যে, আমার মনে হয়েছে, অচিরেই তাকে সে ওয়ারিছ বানিয়ে দেবে’।[20]

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ جَارَهُ، ‘যে আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে’।[21] আরেক বর্ণনায় এসেছে, فَلْيُحْسِنْ إِلَى جَارِهِ، ‘সে যেন তার প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে’।[22]

সাঈদ থেকে আবু শুরাইহ (রাঃ)-এর মাধ্যমে নবী করীম (ছাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ، وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ، وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ. قِيلَ: مَنْ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: الَّذِي لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ- ‘আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার নয়, আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার নয়, আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার নয়। জিজ্ঞেস করা হ’ল, কে সে হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)? তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার ও অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়’।[23]

প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাল ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে, প্রতিবেশীর বিপদে তাকে সান্ত্বনা দেয়া, আনন্দ-ফুর্তিতে মুবারকবাদ জানানো, রোগে-শোকে সেবা-যত্ন করা, তাকে আগে সালাম দেয়া, হাস্যোজ্জ্বল মুখে তার সাথে দেখা করা, দুনিয়া ও আখেরাতে তার যাতে কল্যাণ হয় সে সম্পর্কে তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা ইত্যাদি।

মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)-এর পরিবারে একবার তার জন্য একটা ছাগল যবেহ করা হয়। তিনি বাড়ি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে গোশত উপহার দিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘জিবরীল আমাকে প্রতিবেশী নিয়ে সবসময় এত নছীহত করে যে, আমার মনে হয়েছে, অচিরেই তাকে সে ওয়ারিছ বানিয়ে দেবে’।[24]

১৬. স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণ-পোষণ :

স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণ-পোষণের জন্য পুরুষ যে অর্থ ব্যয় করে তা সঞ্চারণশীল আমলের অন্তর্ভুক্ত। এজন্য সে ছওয়াব পাবে।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,دِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِيْ سَبِيلِ اللهِ وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِي رَقَبَةٍ، وَدِينَارٌ تَصَدَّقْتَ بِهِ عَلَى مِسْكِيْنٍ، وَدِيْنَارٌ أَنْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ، أَعْظَمُهَا أَجْرًا الَّذِيْ أَنْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ- ‘তুমি এক দীনার আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে ব্যয় করেছ, এক দীনার দাসমুক্তিতে ব্যয় করেছ, এক দীনার মিসকীনকে দান করেছ এবং এক দীনার তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করেছ, এগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ হ’ল ঐ দীনার, যা তুমি তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করেছ’।[25]

কা‘ব বিন উজরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, مَرَّ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ، فَرَأَى أَصْحَابُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ جَلَدِهِ ونَشَاطِهِ مَا أَعْجَبَهُمْ، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، لَوْ كَانَ هَذَا فِي سَبِيلِ اللهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنْ كَانَ خَرَجَ يَسْعَى عَلَى وَلَدِهِ صِغَارًا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ، وَإِنْ خَرَجَ يَسْعَى عَلَى أَبَوَيْنِ شَيْخَيْنِ كَبِيرَيْنِ فَهُوَ فِيْ سَبِيلِ اللهِ، وَإِنْ كَانَ يَسْعَى عَلَى نَفْسِهِ يَعِفُّها فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ، وَإِنْ كَانَ خَرَجَ رِيَاءً وتَفَاخُرًا فَهُوَ فِي سَبِيلِ الشَّيْطَانِ- ‘এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর পাশ দিয়ে চলে গেল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ তার শক্তিমত্তা ও উদ্যম দেখে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এ শক্তি যদি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়িত হ’ত! তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘যদি সে তার ছোট ছোট সন্তানদের জন্য কামাই-রোযগারে বের হয়, তবে তা হবে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়। আর যদি সে তার বয়স্ক বৃদ্ধ মাতা-পিতার জন্য কামাই-রোযগারে বের হয়, তবে তা হবে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়। আর যদি সে নিজেকে পবিত্র-নির্দোষ রাখার নিয়তে নিজের জন্য কামাই-রোযগারে শ্রম ব্যয় করে, তবে তাও হবে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়। আর যদি সে লোকদেখানো ও অহঙ্কার বা গৌরব করার জন্য কামাই-রোযগারে বের হয়, তবে তা হবে শয়তানের রাস্তায় ব্যয়’।[26]

১৭. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা :

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা আরেকটি সঞ্চারণশীল আমল। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিকূলকে সৃষ্টি করেন। যখন তিনি তার সৃষ্টিকর্ম শেষ করেন তখন ‘আত্মীয়তা’ দাঁড়িয়ে বলল, এটা (আল্লাহর দরবার) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আশ্রয় প্রার্থীর আশ্রয়স্থল। আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ। তুমি কি এতে খুশি নও যে, তোমাকে যে যুক্ত রাখবে আমি তার সাথে যুক্ত থাকব, আর যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব? সে বলল, আমি অবশ্যই খুশি। আল্লাহ বললেন, ‘তোমার জন্য এ ব্যবস্থাই থাকল। তারপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা চাইলে কুরআন থেকে পড়,فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ، أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ، أَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا، ‘অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহ’লে অবশ্যই তোমরা জনপদে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাৎ করেন। অতঃপর তাদেরকে তিনি বধির করেন ও তাদের চক্ষুগুলিকে অন্ধ করে দেন। তবে কি তারা কুরআন অনুধাবন করে না? নাকি তাদের হৃদয়গুলি তালাবদ্ধ?’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২২-২৪)[27]

আব্দুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ বলেছেন,قَالَ اللهُ أَنَا الرَّحْمَنُ وَهِىَ الرَّحِمُ شَقَقْتُ لَهَا اسْمًا مِنَ اسْمِى مَنْ وَصَلَهَا وَصَلْتُهُ وَمَنْ قَطَعَهَا بَتَتُّهُ- ‘আমি রহমান, আর সে রাহেম বা আত্মীয়তা। আমার রহমান নাম থেকে রাহেম নামটি আমি বের করেছি। যে তাকে যুক্ত রাখবে আমি তার সাথে যুক্ত থাকব, আর যে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব’।[28]

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী এবং যার সঙ্গে আত্মীয়তা করা হচ্ছে, উভয়ের সামর্থ্য ও সাধ্য অনুসারে আত্মীয়-স্বজনদের উপকার করা হ’ল ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক’। এ উপকার কখনো অর্থ-সম্পদ দিয়ে, কখনো সেবা-যত্ন দিয়ে, কখনো দেখা-সাক্ষাৎ ও সালাম শুভেচ্ছা বিনিময় কিংবা অন্য কিছু দিয়ে হ’তে পারে।[29]

১৮. মুসলিমদের হাল-অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়া :

মুসলিমদের হাল-অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন,لِلْفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا فِي سَبِيلِ اللهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الْأَرْضِ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ مِنَ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُمْ بِسِيمَاهُمْ لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللهَ بِهِ عَلِيمٌ، ‘তোমরা ব্যয় কর ঐসব অভাবীদের জন্য, যারা আল্লাহর পথে আবদ্ধ হয়ে গেছে, যারা ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণে সক্ষম নয়। না চাওয়ার কারণে অজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদের চেহারা দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের কাছে নাছোড়বান্দা হয়ে চায় না। আর যা কিছু তোমরা উত্তম সম্পদ হ’তে ব্যয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত’ (বাক্বারাহ ২/২৭৩)

এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা অবহিত করেছেন যে, মুসলমানদের মাঝে এমন কিছু লোক আছে যারা সাহায্য-সহযোগিতা লাভে সবচেয়ে বেশী মুখাপেক্ষী। কিন্তু তাদের সম্ভ্রমপূর্ণ মন মানুষের কাছে হাত পাততে অস্বীকার করে। এজন্য নেককার লোকেরা সদাই তাদের এমন ভাই-বোনদের তালাশ করতেন।

আমরা যাতে প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর রাখি সেজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও আমাদেরকে আদেশ করেছেন। তিনি বলেন,لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالَّذِيْ يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِع إِلَى جنبه- ‘যে পেট পুরে খায়, আর তার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে সে মুমিন নয়’।[30]

ছাহাবীদের মধ্যে দেখা যেত যে, কোন ছাহাবীর কাছে হাদিয়া এলে তিনি তা নিজে না রেখে প্রতিবেশী ছাহাবীর বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন। সেই ছাহাবী আবার অন্য প্রতিবেশীর বাড়িতে তা পাঠিয়ে দিতেন। এভাবে তা দশ বা তার বেশী বাড়ি ঘুরে দেখা যেত প্রথম বাড়িতে এসে হাযির হয়েছে।

একটি ঘটনা : একবার এক ব্যক্তি তার বন্ধুর দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ল। বন্ধু বেরিয়ে এসে বলল, কি ভাই, কেন এসেছ? সে বলল, চার শত দিরহাম ঋণ শোধ করতে হবে। বন্ধু তখন ওযন করে চারশ’ দিরহাম তাকে বুঝিয়ে দিল এবং কাঁদতে কাঁদতে ঘরে ফিরল। তার স্ত্রী দেখে বলল, তোমারই যখন কষ্ট তখন তাকে দিতে গেলে কেন? সে বলল, আমি তাকে দিরহাম দেওয়ার জন্য কাঁদছি না। আমি কাঁদছি এজন্য যে, আমি তার খোঁজ-খবর নেইনি, আর সে কারণে শেষ পর্যন্ত তাকেই আমার কাছে ছুটে আসতে হ’ল!

১৯. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া :

রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া একটি ছওয়াবের আমল। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,الْإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً، فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الْأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ، وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الْإِيمَانِ- ‘ঈমানের ৭৩/৬৩-এর অধিক শাখা আছে। তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠতম শাখা হ’ল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা এবং নিম্নতম শাখা রাস্তা থেকে কোন কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জা ঈমানের অন্যতম শাখা’।[31]

আবু যার (রাঃ) কর্তৃক নবী করীম (ছাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,عُرِضَتْ عَلَيَّ أَعْمَالُ أُمَّتِيْ حَسَنُهَا وَسَيِّئُهَا، فَوَجَدْتُ فِي مَحَاسِنِ أَعْمَالِهَا الْأَذَى يُمَاطُ عَنِ الطَّرِيقِ، وَوَجَدْتُ فِيْ مَسَاوِيْ أَعْمَالِهَا النُّخَاعَةَ تَكُوْنُ فِيْ الْمَسْجِدِ، لَا تُدْفَنُ- ‘আমার সামনে আমার উম্মতের ভালো-মন্দ সকল প্রকার আমল তুলে ধরা হ’ল। আমি দেখতে পেলাম, উৎকৃষ্ট আমলের মধ্যে রয়েছে কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং নিকৃষ্ট আমলের মধ্যে রয়েছে মসজিদের মধ্যে নাকের সর্দি ফেলে রাখা, তা না মুছা’।[32]

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِى بِطَرِيقٍ وَجَدَ غُصْنَ شَوْكٍ عَلَى الطَّرِيقِ فَأَخَّرَهُ، فَشَكَرَ اللهُ لَهُ، فَغَفَرَ لَهُ- ‘এক ব্যক্তি কোন এক পথে হেঁটে যেতে রাস্তায় কাঁটাযুক্ত একটা ডাল পেয়ে তা হাতে তুলে নিয়ে দূরে ফেলে দেন। ফলে আল্লাহ তার এ কাজে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন’।[33] [ক্রমশঃ]


মূল (আরবী) : মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ

অনুবাদ : মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

[1]. যাদুল মাসীর ১/২৯০।

[2]. তিরমিযী হা/২৩২৫; আহমাদ হা/১৮০৬০; মিশকাত হা/৫২৮৭; ছহীহুত তারগীব হা/২৪৬৩।

[3]. মুসলিম হা/১০১৪; তিরমিযী হা/৬৬১; নাসাঈ হা/২৫২৫।

[4]. বায়হাক্বী হা/৬৮৩২; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৫৮, হাদীছ হাসান।

[5]. ফয়যুল কাদীর ৩/৬৮৭।

[6]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৫৫৯।

[7]. ইবনু মাজাহ হা/২৪৩০; ছহীহুত তারগীব হা/৯০১।

[8]. মুসলিম হা/১৫৬০।

[9]. বুখারী হা/১২; মুসলিম হা/৩৯; মিশকাত হা/৪৬২৯।

[10]. তিরমিযী হা/২৪৮৫; ছহীহুত তারগীব হা/৯৪৯; ইবনু মাজাহ হা/৩২৫১; মিশকাত হা/১৯০৭।

[11]. বুখারী হা/৩০৩৪; মিশকাত হা/১৫২৩।

[12]. বুখারী হা/২৪৮৬; মুসলিম হা/২৫০০।

[13]. ফাৎহুল বারী ৫/১৩০।

[14]. বুখারী হা/৬০০৫; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১৩৫।

[15]. ইবনু বাত্তাল, শরহে বুখারী ৯/২১৭।

[16]. মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৩৫০৯; ছহীহুত তারগীব হা/২৫৪৪।

[17]. আল-কাবায়ের, পৃ. ৬৫।

[18]. বুখারী হা/৫৩৫৩; মুসলিম হা/২৯৮২; মিশকাত হা/৪৯৫১।

[19]. নববী, শরহে মুসলিম ১৮/১১২।

[20]. বুখারী হা/৬০১৫; মুসলিম হা/২৬২৫; মিশকাত হা/৪৯৬৪।

[21]. বুখারী হা/৬০১৯; মুসলিম হা/৪৭; মিশকাত হা/৪৯৬৪।

[22]. মুসলিম হা/৪৭।

[23]. বুখারী হা/৬০১৬; মুসলিম হা/৪৬; মিশকাত হা/৪৯৬২।

[24]. আবূদাঊদ হা/৫১৫২; তিরমিযী হা/১৯৪৩; ছহীহুত তারগীব হা/২৫৭৪।

[25]. মুসলিম হা/৯৯৫; মিশকাত হা/১৯৩১।

[26]. তাবারাণী, আওসাত্ব হা/৬৮৩৫,৭/৫৬; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৯২।

[27]. মুসলিম হা/২৫৫৪

[28]. আবূদাঊদ হা/১৬৯৪; ছহীহুত তারগী হা/২৫২৮।

[29]. নববী, শরহ মুসলিম ২/২০১।

[30]. বায়হাক্বী হা/১৯৬৬৮; মিশকাত হা/৪৯৯১; ছহীহুত তারগীব হা/২৫৬২।

[31]. মুসলিম হা/৩৫; মিশকাত হা/৫।

[32]. মুসলিম হা/৫৫৩; মিশকাত হা/৭০৯।

[33]. বুখারী হা/৬৫২; মুসলিম হা/১৯১৪।






১৬ মাসের মর্মান্তিক কারা স্মৃতি (৩য় কিস্তি) - মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
হেদায়াত - যহূর বিন ওছমান, দিনাজপুর
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সম্পর্কে কটূক্তিকারী নাস্তিকদের শারঈ বিধান - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
মুহাসাবা (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ইখলাছ মুক্তির পাথেয় (শেষ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
পরকীয়া : কারণ ও প্রতিকার (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
হজ্জের ক্ষেত্রে প্রচলিত কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি - মুহাম্মাদ ইমদাদুল্লাহ
নেতৃত্বের মোহ (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ভুল সংশোধনে নববী পদ্ধতি (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ছিয়ামের ফাযায়েল ও মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
মাদ্রাসার পাঠ্যবই সমূহের অন্তরালে (৩য় কিস্তি) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
এলাহী তাওফীক্ব লাভ করবেন কিভাবে? - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
আরও
আরও
.