বাজার থেকে কাকড়া কিনে ছোট ছোট খাচায় রেখে মোটাতাজা করা হচ্ছে। ২০ থেকে ২২ দিনেই একবার খোলস পরিবর্তন করে প্রতিটি কাকড়া। এতে প্রতিটি কাকড়ার ওযন বেড়ে দ্বিগুণের চেয়ে বেশী হয়। পরে এই কাকড়া রপ্তানী হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আর এতে লাভ বেশী ও রোগবালাই কম হওয়ায় সাতক্ষীরায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাচায় কাকড়া চাষ পদ্ধতি। যেলার শ্যামনগর উপযেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের কলবাড়ি ব্রীজ সংলগ্ন খাস জমিতে বিশেষ এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিসের আওতায় শ্যামনগর উপযেলা প্রশাসন গড়ে তুলেছে কাকড়া মোটাতাজাকরণ খামার। দুই বিঘা জমির এই খামারে সাড়ে পাঁচ হাযার খাচায় কাকড়া মোটাতাজা করা হচ্ছে। যার ব্যবস্থাপনায় রয়েছে স্থানীয় বাগদী সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা। সমবায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত এই খামার সম্পর্কে মালঞ্চ সমবায় সমিতির সভাপতি জয়ন্ত মন্ডল বাগদী বলেন, প্রতিদিন বাজার থেকে ছোট সাইজের কাকড়া কিনে খাচায় রেখে মোটাতাজা করা হয়। হাতে থাকা কাকড়া দেখিয়ে তিনি বলেন, সকালে বাজার থেকে তিনি ১০ কেজি কাকড়া কিনেছেন। প্রতি কেজিতে ৫টি করে কাকড়া হয়েছে। এই কাকড়া ২০ থেকে ২২ দিন খাচায় লালন-পালন করে মোটাতাজা করা হবে। এতে প্রতিটি কাকড়ার ওযন হবে দ্বিগুণের চেয়ে বেশী। তখন ৫টি কাকড়ার ওযন হবে দুই কেজির অধিক। জয়ন্ত মন্ডল জানান, এতে খরচও কম। শুধুমাত্র খাবার দিতে হয়। খাবার হিসাবে তারা প্রতিদিন ছোট ছোট একটি করে তেলাপিয়া মাছ খাচায় দেন। যা বাজার থেকে সস্তায় কেনা হয়। কয়েকদিনের মধ্যে খোলস পরিবর্তন করলেই কাঙ্ক্ষিত ওযন বেড়ে যায় কাকড়ার। এ সময় কাকড়ার খোলস নরম থাকে। এ কারণে বাজার চাহিদাও বেশী। পরে তা প্যাকেটজাত করে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। দামও পাওয়া যায় ভালো, কেজি প্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। শুধু বাগদী সম্প্রদায়ের মানুষ নয়, চিংড়ি চাষের তুলনায় লাভ ও ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা না থাকায় অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন কাকড়া চাষে। যার ফলশ্রুতিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ইতিমধ্যে যেলায় ৩৭০টি কাকড়া মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। আর এ খাত থেকে ক্রমেই বাড়ছে রপ্তানী আয়। এ খাতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রায় ১১ হাযার মানুষ। সূত্র জানায়, যেলায় ২০১৫ সালে সদর উপযেলায় ৩ মেট্রিক টন, তালায় ৭ মেট্রিক টন, আশাশুনিতে ২০৫ মেট্রিক টন, দেবহাটায় ৩১১ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জে ৭৪৫ মেট্রিক টন ও শ্যামনগরে এক হাযার পাঁচশ’ ৪৩ মেট্রিক টন কাকড়া উৎপাদন হয়। শ্যামনগরের কাকড়া চাষী বিশ্বজিৎ কুমার জানান, মোটাতাজা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাকড়া জোগান দেওয়া সম্ভব হ’লে রপ্তানি খাতে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হ’তে পারে। কিন্তু যতই মোটাতাজাকরণের খামার বাড়ছে ততই ছোট কাকড়ার প্রাপ্যতা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। এজন্য এ এলাকায় একটি কাকড়া প্রজনন কেন্দ্র স্থাপনের দাবী জানান তিনি। শ্যামনগর উপযেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাঈদ মুহাম্মাদ মনযুর আলম জানান, শ্যামনগরে ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিসের আওতায় মৎস্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে খাচায় কাকড়া মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে আদিবাসীদের দারিদ্র বিমোচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ক্রমেই এই উদ্যোগ সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। যেলা মৎস্য কর্মকর্তা রামাযান আলী জানান, লাভ বেশি হওয়ায় যেলায় কাকড়া চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
মোট রপ্তানীর একটি বড় অংশ সাতক্ষীরা থেকে যায়। এছাড়া রপ্তানী আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার এই খাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতাও দিয়ে যাচ্ছে।