কোয়েল পালনে স্বাবলম্বী

দিনাজপুরের পার্বতীপুর শহরের এক শিক্ষিত যুবক কামরুল হুদা ১৯৯৫ সালে পার্বতীপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে বিএ পাস করে জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন ব্যবসার সাথে। এর মাঝে তার মনে জাগে কোয়েল পাখী পালনের সখ। এক সময় সখ করে কোয়েল পালন করলেও পরবর্তীতে তিনি বুঝতে পারেন যে, এটা একটি লাভজনক ব্যবসা। অল্প জায়গায় কম খরচে বেশী লাভ করার সুযোগ রয়েছে এ ব্যবসায়। তখন থেকেই বাণিজ্যিকভাবে তিনি কোয়েল পালন শুরু করেন। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিজ বাড়ীতে মাত্র ৩৫০টি কোয়েল নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। ২০০৯ সালে জানুয়ারী মাসে পার্বতীপুর শহরের পুরাতন বাজার এলাকার পরিত্যাক্ত সাগর সিনেমা হল ভবনে কোয়েল পাখীর ফার্ম ও হ্যাচারি গড়ে তোলেন। এই ফার্ম ও হ্যাচারি করে সেখানকার আয় দিয়ে তার সংসার চালিয়েও অর্থ গচ্ছিত করতে পারছেন।

এক সময় ৩৫০টি কোয়েল পাখী দিয়ে এ ফার্মের যাত্রা শুরু হ’লেও বর্তমানে এ ফার্মে ৬ হাযার কোয়েল পাখী রয়েছে। প্রতিমাসে কোয়েল পাখী ও ডিম বিক্রি করে যে আয় হয় তা দিয়ে তার ৪ সদস্যের সংসার ভালভাবে চলা ছাড়াও একটা মোটা অংকের টাকা গচ্ছিত রাখা সম্ভব হচ্ছে। এখন এ ফার্মে একদিন বয়সের কোয়েল পাখী থেকে শুরু করে ডিম পাড়া ও গোশত খাওয়া পাখী পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। একদিনের বাচ্চার মূল্য ১০ টাকা এবং বড়পাখীর মূল্য ৩০ টাকা। একশ’টি কোয়েল পাখীর ডিম ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। অন্য সব পশু পাখীর চেয়ে কোয়েল পাখী পালনে খরচ কম হ’লেও আয় বেশী। আর এ পাখী পালনে বেশী জায়গারও প্রয়োজন হয় না। একটি বড় কোয়েল পাখী মাসে ২ কেজি খাবার খায়। অথচ ডিম দেয় মাসে ২৫ থেকে ২৮টি। এই পাখীর কোন রোগ বালাই নেই বলে বাড়তী ওষুধ পত্রেরও প্রয়োজন হয় না। তাছাড়াও এই পাখীর ডিম ও গোশতের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তার এই ফার্মে তিনি নিজে পাখী পরিচর্যা করার পাশাপাশি আরও দু’জন বেতনভুক্ত কর্মচারী রেখেছেন এগুলো দেখাশোনার জন্য। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা ও সরকারী সাহায্য-সহযোগিতা পেলে বিদেশে কোয়েল পাখীর গোশত রপ্তানি করা যাবে। আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকেরা লেখাপড়া শিখে চাকুরী পাওয়ার আশায় ছুটাছুটি করে বেড়ান। অথচ অল্প জায়গায় সামান্য পুঁজিতে কোয়েল পাখী পালন করে তারা সহজেই স্বাবলম্বী হ’তে পারেন।

স্বল্প শ্রমে অধিক লাভ

আর্থিকভাবে লাভজনক ও অবিশ্বাস্য মাত্রায় পুষ্টির আধার হচ্ছে গ্রাম-বাংলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সজনে গাছ। সজনে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় এবং এর ফুল, বীজ, পাতা, ছাল, আঠা, শিকড় ইত্যাদি যাবতীয় পুষ্টির আধার ও সাধারণ রোগ নিরাময়ে খুবই কার্যকরী। এখন সজনের পুরো মৌসুম। বাড়তি খরচ ছাড়াই খুব কম যত্ন আর অল্প শ্রমে বেড়ে ওঠা একটি বড় আকারের সজনে গাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ মণ ডাঁটা সংগ্রহ করা যায়। বাজারে যখন সজনে ডাঁটার প্রথম আমদানি ঘটে তখন প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। আমদানি বৃদ্ধির সাথে প্রতিকেজির মূল্য ১৫ থেকে ২০ টাকায় দাঁড়ায়। এ হিসাবে প্রতিটি গাছ থেকে ৯ হাযার ৬শ’ থেকে ১২ হাযার টাকার সজনে ডাঁটা বিক্রি করা যায়। সরাসরি বীজ থেকে আবার গাছের ডাল পুঁতে সহজেই এ গাছ রোপণ করা যায়। তেমন খরচ ছাড়াই সামান্য যত্ন আর পরিশ্রমের উদ্যোগ নিলেই প্রতি পরিবারেই আসতে পারে মোটা অংকের বাড়তি আয়। এদিকে এ গাছটির গুণাগুণ সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, তাজা সজনে পাতায় রয়েছে গাজরের চেয়ে ২ গুণ বেশী ভিটামিন-এ, কমলা লেবুর চেয়ে ৭ গুণ বেশী ভিটামিন-সি, কলার চেয়ে ৩ গুণ বেশী পটাশিয়াম, দইয়ের চেয়ে ২ গুণ বেশী প্রোটিন, দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশী ক্যালসিয়াম ও পালংশাকের চেয়ে ৩-৪ ভাগ বেশী আয়রণ। শুকনো সজনে পাতায় রয়েছে গাজরের চেয়ে ১০ গুণ বেশী ভিটামিন-এ, কমলার অর্ধেক ভিটামিন-সি, কলার চেয়ে ১৫ গুণ বেশী পটাশিয়াম, দইয়ের চেয়ে ৯ গুণ বেশী প্রোটিন, দুধের চেয়ে ১৭ গুণ বেশী ক্যালসিয়াম ও পালংশাকের চেয়ে ২৫ গুণ বেশী আয়রণ। সজনে পাতায় আর যেসব ভিটামিন, খনিজ বা খাদ্যপ্রাণ রয়েছে সেগুলো হ’ল ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, ক্রোমিয়াম, কপার, আয়রণ, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাসিয়াম, প্রোটিন ও জিংক। এছাড়া সজনে গাছের প্রতিটি অংশই উপকারী। এ গাছের পাতা-ডাঁটা পুষ্টি ও ওষুধ হিসাবে এবং ফুল, ছাল, আঠা ও শেকড় ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা যায়। সজনের বীজ পানি পরিশোধনকারী, রান্নার তেল ও প্রসাধনী কাজে ব্যবহার করা যায়। প্রতিদিন ৮ থেকে ২৪ গ্রাম সজনে পাতা খেলে স্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি ঘটে। তরকারীর সাথে রান্না করে, তাজা অথবা শুকনো সজনে পাতা যে কোন খাবারের সাথে খাওয়া যায়। এর পাতা শুকিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণে রেখেও সারাবছর তরকারীর সাথে খাওয়া যায়। সজনে পাতা শুকিয়ে অথবা কাঁচা অবস্থায়  এবং ডাঁটা তরকারীর সাথে নিয়মিত খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সুন্দর ও মযবুত হয়। গবাদিপশুর জন্যও সজনে পাতা এক আদর্শ খাবার। সজনে পাতা গবাদিপশুকে নিয়মিত খাওয়ালে দুধ ও গোশত দু’টোই অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। সজনে পাতা শুকনো অথবা কাঁচা উভয়ভাবেই গবাদিপশুকে খাওয়ানো যায় সারা বছর। সজনের বাগান করা খুবই সহজ। তুলনামূলক অনুর্বর জমিতে স্বল্প স্থানেই এ গাছ রোপণ করা যায়।

\ সংকলিত \






আরও
আরও
.