পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । শেষ পর্ব ।

২য় মূলনীতি ঃ তাক্বলীদে শাখছী বা অন্ধ ব্যক্তিপূজার অপনোদন

‘তাক্বলীদ’ অর্থ- শারঈ বিষয়ে বিনা দলীলে কারো কোন কথা চোখ বুঁজে মেনে নেওয়া। ‘তাক্বলীদ’ দু’প্রকারেরঃ জাতীয় ও বিজাতীয়। জাতীয় তাক্বলীদ বলতে ধর্মের নামে মুসলিম সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন মাযহাব ও তরীকার অন্ধ অনুসরণ বুঝায়। বিজাতীয় তাক্বলীদ বলতে- বৈষয়িক ব্যাপারের নামে সমাজে প্রচলিত পুঁজিবাদ, সমাজবাদ, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রভৃতি বিজাতীয় মতবাদের অন্ধ অনুসরণ বুঝায়।[1]

আভিধানিক অর্থে তাক্বলীদ ঃ

‘তাক্বলীদ’ (اَلتَّقْلِيْدُ) শব্দটি ‘ক্বালাদাতুন’ (قِلاَدَةٌ) হ’তে গৃহীত। যার শাব্দিক অর্থ কণ্ঠহার বা রশি। যেমন বলা হয় قَلَّدَ الْبَعِيْرَ ‘সে উটের গলায় রশি বেঁধেছে’। সেখান থেকে মুক্বাল্লিদ (مُقَلِّدٌ) অর্থ যিনি কারো আনুগত্যের রশি নিজের গলায় বেঁধে নিয়েছেন।

পারিভাষিক অর্থে তাক্বলীদ ঃ পারিভাষিক অর্থে ‘নবী ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তির কোন শারঈ সিদ্ধান্তকে বিনা দলীলে মেনে নেওয়াকে ‘তাক্বলীদ’ বলা হয়। মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, اَلتَّقْلِيْدُ قُبُوْلُ قَوْلِ الْغَيْرِ بِلاَ دَلِيْلٍ فَكَأَنَّهُ لِقُبُوْلٍهِ جَعَلَهُ قِلاَدَةً فِىْ عُنُقِهِ ‘অন্যের কোন কথা বিনা দলীলে গ্রহণ করার নাম ‘তাক্বলীদ’। এইভাবে গ্রহণ করার ফলে ঐ ব্যক্তি যেন নিজের গলায় রশি পরিয়ে নিল’।[2]

আল্লামা জুরজানী (রহঃ)-এর মতে اَلتَّقْلِيْدُ هُوَ قَبُوْلُ قَوْلِ الْغَيْرِ بِلاَ حُجَّةٍ وَلاَ دَلِيْلٍ ‘বিনা দলীল-প্রমাণে অন্যের কথা গ্রহণ করাই হচ্ছে তাক্বলীদ’।[3]

ইত্তেবা ও তাক্বলীদ ঃ

অনেকে ইত্তেবা ও তাক্বলীদকে এককার করে ফেলেন। তাদের মতে ইত্তেবাই তাক্বলীদ, তাক্বলীদই ইত্তেবা। তারা এও বলেন যে, প্রত্যেক মুসলমানকেই কারো না কারো তাক্বলীদ করতে হবে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের জন্য তো তাক্বলীদ ব্যতীত কোন গত্যন্তর নেই। আসলে ইত্তেবা ও তাক্বলীদের পার্থক্য না বুঝার কারণে তারা এমন উদ্ভট ও অমূলক কথা বলে থাকেন। এর মাধ্যমে তাদের ইলমের দৈন্যতাও ফুটে ওঠে।

মূলতঃ ইত্তেবা ও তাক্বলীদ কখনো এক নয়। দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। ‘তাক্বলীদ’ হ’ল নবী-রাসূল ব্যতীত অন্য কারো শারঈ বক্তব্যকে বিনা দলীলে মেনে নেওয়া। পক্ষান্তরে ছহীহ দলীল অনুযায়ী নবীর অনুসরণ করাকে বলা হয় ‘ইত্তেবা’। একটি হ’ল দলীল বিহীন ব্যক্তির রায়ের অনুসরণ, অন্যটি হ’ল দলীলের অর্থাৎ কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর অনুসরণ।

اَلتَّقْلِيْدُ هُوَ قُبُوْلُ قَوْلِ الغَيْرِ بِلاَ دَلَيْلٍ وَالْإِتِّبَاعُ هُوَ قُبُوْلُ قَوْلِ الغَيْرِ مَعَ دَلِيْلٍ-

‘তাক্বলীদ হ’ল বিনা দলীলে কারো কোন কথা মেনে নেওয়া। আর ইত্তেবা হ’ল দলীল সহ কারো কথা মেনে নেয়া’। অন্য কথায় ‘তাক্বলীদ’ হ’ল রায়ের অনুসরণ, ‘ইত্তেবা’ হ’ল ‘রেওয়ায়াতের’ অনুসরণ। যেমনটি ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেছেন।

اَلتَّقْلِيْدُ إِنَّمَا هُوَ قُبُوْلُ الرَّأىِ وَالْإِتِّبَاعُ إِنَّمَا هُوَ قُبُوْلُ الرِّوَايَةِ، فَالْإِتِّبَاَعُ فِى الدِّيْنِ مُسَوَّغٌ وَالتَّقْلِيْدُ مَمْنُوْعٌ-

অর্থাৎ ‘তাক্বলীদ’ হ’ল রায়-এর অনুসরণ এবং ‘ইত্তেবা’ হ’ল রেওয়ায়াতের’ অনুসরণ। ইসলামী শরী‘আতে ‘ইত্তেবা’ সিদ্ধ এবং ‘তাক্বলীদ’ নিষিদ্ধ।[4]

সুতরাং কোন আলেমের ছহীহ দলীল ভিত্তিক কথা মেনে নেওয়ার নাম তাক্বলীদ নয়; বরং তা হ’ল ইত্তেবা। অনুরূপভাবে কোন আলেমের দেওয়া ফৎওয়ার বিপরীতে কোন ছহীহ দলীল পাওয়া গেলে উক্ত ফৎওয়া পরিত্যাগ করে ছহীহ দলীলের অনুসরণ করাকে বলা হয় ‘ইত্তেবা’।

তাক্বলীদের আবির্ভাব ঃ

ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনে এযামের যুগ শেষে দ্বিতীয় শতাব্দী হিজরীর পরে মুসলিম সমাজে সৃষ্ট অনৈক্য ও   বিভ্রান্তির যুগে তাক্বলীদের আবির্ভাব ঘটে। তবে বিভিন্ন উসতায ও ইমামের তাক্বলীদের ভিত্তিতে সৃষ্ট বিভিন্ন মাযহাবী দলের উদ্ভব ঘটে চতুর্থ শতাব্দী হিজরীতে। যেমন ভারতগুরু শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (১১১৪-১১৭৬ হিঃ/১৭০৩-১৭৬২ খৃঃ) বলেন,

إِعْلَمْ أَنَّ النَّاسَ كَانُوْا قَبْلَ الْمِائَةِ الرَّابِعَةِ غَيْرَ مُجْمَعِيْنَ عَلَى التَّقْلِيْدِ الْخَالِصِ لِمَذْهَبٍ وَاحِدٍ بِعَيْنِهِ-

‘জেনে রাখ (হে পাঠক!) চতুর্থ শতাব্দী হিজরীর আগের লোকেরা  কোন  একজন  নির্দিষ্ট  ব্যক্তির   একক   মাযহাবী

তাক্বলীদের উপরে সংঘবদ্ধ ছিল না’।[5]

তাক্বলীদের বিরোধিতায় ছাহাবীগণ ঃ

ওমর ফারূক (রাঃ) যখন কোন বিষয়ে নিজের পক্ষ থেকে ফৎওয়া দিতেন তখন বলতেন,

هَذَا رَأْىُ عُمَرَ فَإِنْ كَانَ صَوَابًا فَمِنَ اللهِ وَإِنْ كانَ خَطَاءً فَمِنْ عُمَرَ-

‘এটি ওমরের রায়। যদি এটা সঠিক হয়, তাহ’লে আল্লাহর পক্ষ হ’তে। আর যদি ভুল হয় তাহ’লে তা ওমরের পক্ষ হ’তে’।[6]

ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন,

..فَإِنْ يَّكُنْ صَوَابًا فَمِنَ اللهِ وَ إِنْ يَكُنْ خَطاَءً فَمِنِّىْ وَمِنَ الشَّيْطَانِ-

‘যদি আমার রায় সঠিক হয়, তবে তা আল্লাহর পক্ষ হ’তে, আর যদি ভুল হয় তাহ’লে আমার পক্ষ হ’তে ও শয়তানের পক্ষ হ’তে’।[7]

তাক্বলীদের বিরোধিতায় ইমামগণ ঃ

যে ইমামগণের নামে পরবর্তীতে চারটি প্রসিদ্ধ মাযহাব চালু হয়েছে। যে কারণে মুসলমানরা আজ শতধা বিভক্ত। যে সকল মাযহাবের তাক্বলীদের দোহাই দিয়ে সাধারণ মুসলমানদেরকে ইত্তেবা হ’তে যোজন যোজন দূরে রাখা হচ্ছে, সে ইমামগণের কেউই তাদের নিজেদের নামে মাযহাব তৈরী করতে বলেননি। বলেননি অন্ধভাবে তাদের যেকোন ফৎওয়ার অনুসরণের কথা। বরং প্রত্যেকেই তাক্বলীদের ব্যাপারে তাদের অনুসারীদের কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। নিম্নে তাক্বলীদের বিরুদ্ধে ইমামগণের কিছু দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য তুলে ধরা হ’ল।-

ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০ হিঃ)-এর বক্তব্য ঃ

إيَّاكُمْ وَالْقَوْلَ فِى دِيْنِ اللهِ تَعَالَى بِالرَّأىِ وَعَلَيْكُمْ بِاِتِّبَاعِ السُّنَّةِ فَمَنْ خَرَجَ عَنْهَا  ضَلَّ-

‘তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে নিজ নিজ রায় অনুযায়ী কথা বলা হ’তে বিরত থাক, তোমাদের জন্য সুন্নাতের অনুসরণ করা অপরিহার্য। যে ব্যক্তি সুন্নাতের অনুসরণ থেকে বেরিয়ে যাবে, সে পথভ্রষ্ট হবে’।[8] তিনি আরও বলেন,

حَرَامٌ عَلَى مَنْ لّمْ يَعْرِفْ دَلِيْلِىْ أَن يُّفْتِىَ بِكَلاَمِىْ-

‘আমার কথা অনুযায়ী ফৎওয়া দেওয়া হারাম ঐ ব্যক্তির জন্য, যে আমার গৃহীত দলীল সম্পর্কে অবগত নয়’।[9]

তিনি বলেন, إذا صَحَّ الحديثُ فهو مذهبى ‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, জেনো সেটাই আমার মাযহাব’।[10]

তিনি ফৎওয়া দিলে বলে দিতেন যে,

هذا رأى أبى حنيفةَ وهو أحسنُ ما قدَّرنا عليه فمن جاء بأحسنَ منه فهو أولَى بالصوابِ-

‘এটি আবু হানীফার রায়। আমাদের সাধ্যপক্ষে এটিই উত্তম মনে হয়েছে। এর চেয়ে উত্তম পেলে সেটিই সঠিকতর বলে গণ্য হবে’।[11]

তিনি আরও বলেন,

إِنَّنَا بَشَرٌ، نَقُوْلُ الْقَوْلَ الْيَوْمَ، وَنَرْجِعُ عَنْهُ غَدًا-                                       

‘নিশ্চয়ই আমরা মানুষ। আমরা আজকে যা বলি, আগামীকাল তা থেকে ফিরে আসি’।[12] তিনি স্বীয় ছাত্র আবু ইউসুফকে সতর্ক করে বলেন,

وَيْحَكَ يَا يَعْقُوْبُ! لَا تَكْتُبْ كُلَّ مَا تَسْمَعُ مِنِّيْ، فَإِنِّيْ قَدْ أَرَى الْرَأْيَ الْيَوْمَ وَأَتْرُكُهُ غَدًا، وَأَرَى الْرَأْيَ غَدًا وَأَتْرُكُهُ بَعْدَ غَدٍ-

‘সাবধান হে ইয়াকূব (আবু ইউসুফ)! আমার নিকট থেকে যা-ই শোন তাই-ই লিখে নিও না। কেননা আমি আজকে যে রায় দেই, কালকে তা পরিত্যাগ করি এবং কাল যে রায় দেই, পরদিন তা প্রত্যাহার করি’।[13]

ইমাম মালিক (৯৩-১৭৯ হিঃ)-এর বক্তব্য ঃ

إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ أُخْطِئُ وأُصِيْبُ فَانْظُرُوْا فِىْ رَائِى فَكُلُّ مَا وَافَقَ الْكِتَابَ وَالسُّنَّةَ فَخُذُوْهُ وَكُلُّ مَا لَمْ يُوَافِقْ فَاتْرُكُوْهُ-

‘আমি একজন মানুষ মাত্র। আমি ভুল করি, সঠিকও বলি। অতএব আমার সিদ্ধান্তগুলি তোমরা যাচাই কর। যেগুলি কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পাও, সেগুলি গ্রহণ কর, যেগুলি না পাও, সেগুলি পরিত্যাগ কর’।[14]

তিনি মূলনীতির আকারে বলেন,

مَا مِنْ أَحَدٍ إِلاَّ وَمَأْخُوْذٌ مِنْ كَلاَمِهِ وَمَرْدُوْدٌ عَلَيْهِ إِلاَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ-

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যতীত দুনিয়াতে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার সকল কথা গ্রহণীয় অথবা বর্জনীয়।[15] অন্য বর্ণনায় এসেছে,إلا صاحبُ هذه الروضة  ‘এই কবরবাসী ব্যতীত’।[16]

ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪ হিঃ)-এর বক্তব্য ঃ

إِذَا رَأَيْتُمْ كَلاَمِى يُخَالِفُ الْحَدِيْثَ فَاعْمَلُوا بِالْحَدِيْثِ وَاضْرِبُوْا بِكَلاَمِى الْحَائِطَ وَ قَالَ يَوْماً لِلْمُزَنِىِّ يَا إِبْرَاهِيْمُ لاَ تُقَلِّدْنِىْ فِى كُلِّ مَا أَقُوْلُ وَانْظُرْ فِى ذَالِكَ لِنَفْسِكَ فَإِنَّهُ دِيْنٌ-

‘যখন তোমরা আমার কোন কথা হাদীছের বরখেলাফ দেখবে, তখন হাদীছের উপর আমল করবে এবং আমার কথাকে দেওয়ালে ছুঁড়ে মারবে’। তিনি একদা স্বীয় ছাত্র ইবরাহীম মুযানীকে বলেন, ‘হে ইবরাহীম! তুমি আমার সকল কথার তাক্বলীদ করবে না। বরং নিজে চিন্তা-ভাবনা করে দেখবে। কেননা এটা দ্বীনের ব্যাপার’।[17]

তিনি আরো বলেন,

كُلُّ مَا قلتُ فَكَانَ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خِلاَفَ قَوْلِى مِمَّا يَصِحُّ فَحَدِيْثُ النَّبِىِّ أَوْلَى فَلاَ تُقَلِّدُوْنِى-

‘আমি যেসব কথা বলেছি, তা যদি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছহীহ হাদীছের বিপরীত হয়, তবে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছই অগ্রগণ্য। অতএব তোমরা আমার তাক্বলীদ কর না’।[18]

তিনি আরো বলেন,كُلُّ حَدِيْثٍ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَهُوَ قَوْلِىْ، وَإِنْ لَمْ تَسْمَعُوْهُ مِنِّى- ‘রাসূল (ছাঃ)-এর প্রত্যেকটি হাদীছই আমার কথা, যদিও আমার নিকট থেকে তোমরা না শুনে থাক’।[19]

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ)-এর বক্তব্য ঃ

لاَ تُقَلِّدْنِىْ وَلاَ تُقَلِّدَنَّ مَالِكاً وَلاَ الْأَوْزَاعِىَّ وَلاَ النَّخْعِىَّ وَلاَ غَيْرَهُمْ وَ خُذِ الْأَحْكَامَ مِنْ حَيْثُ أَخَذُوْا مِنَ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ-

‘তুমি আমার তাক্বলীদ কর না। তাক্বলীদ কর না ইমাম মালেক, আওযাঈ, নাখ্ঈ বা অন্য কারও। বরং নির্দেশ গ্রহণ কর কুরআন ও সুন্নাহর মূল উৎস থেকে, যেখান থেকে তাঁরা সমাধান গ্রহণ করতেন’।[20]

ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন,

و قد علم كل عالم أنهم (أى الصحابة والتابعين و تابعيهم) لم يكونوا مقلدين ولا منتسبين إلى فرد من أفراد العلماء بل كان الجاهل يسئل العالم عن الحكم الشرعى الثابت فى كتاب الله أو بسنة رسوله صلى الله عليه وسلم فيفتيه به و يرويه له لفظا أو معنى فيعمل بذلك من باب العمل بالرواية لا بالرأى وهذا أسهل من التقليد-

‘প্রত্যেক বিদ্বান এ কথা জানেন যে, ছাহাবা, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈন কেউ কারো মুক্বাল্লিদ ছিলেন না। ছিলেন না কেউ কোন বিদ্বানের প্রতি সম্বন্ধযুক্ত। বরং জাহিল ব্যক্তি আলেমের নিকট থেকে কিতাব ও সুন্নাহ হ’তে প্রমাণিত শরী‘আতের হুকুম জিজ্ঞেস করতেন। আলেমগণ সেই মোতাবেক ফৎওয়া দিতেন। কখনও শব্দে শব্দে বলতেন, কখনও মর্মার্থ বলে দিতেন। সে মতে লোকেরা আমল করত (কুরআন ও হাদীছের) রেওয়ায়াত (বর্ণনা) অনুযায়ী, কোন বিদ্বানের রায় অনুযায়ী নয়। বলা বাহুল্য, কারও তাক্বলীদ করার চেয়ে এই তরীকাই সহজতর’।[21]

মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন,

ومن المعلوم أن الله ةعالى ما كلَّف أحدا أن يكون حنفيا أو مالكيا أو شافعيا و حنبليا بل كلَّفهم أن يعملوا السنة-

‘এটা জানা কথা যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা কাউকে বাধ্য করেননি এজন্যে যে, সে হানাফী, মালেকী, শাফেঈ বা হাম্বলী হৌক। বরং বাধ্য করেছেন এজন্য যে, তারা সুন্নাত অনুযায়ী আমল করুক’।[22]

উপরের আলোচনা সমূহ হ’তে এ কথা সুস্পষ্ট যে, বিগত কোন ইমামই পরবর্তীকালে সৃষ্ট বিভিন্ন মাযহাবী ফের্কাবন্দীর জন্য দায়ী ছিলেন না, তাদের কেউ নিজেদের অন্ধ অনুসরণের কথা বলেননি। বরং প্রত্যেকেই পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর নিঃশর্ত অনুসরণের নির্দেশ প্রদান করেছেন।

[চলবে]


[1]. আহলেহাদীছ আন্দোলন পরিচিতি লিফলেট, পৃঃ ৩।

[2]. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, তিনটি মতবাদ (রাজশাহীঃ হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২য় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারী ২০১০), পৃঃ ৬; গৃহীতঃ হাকীকাতুল ফিক্বহ (বোম্বাইঃ তাবি), পৃঃ ৪৪

[3]. শরীফুল ইসলাম বিন যয়নুল আবেদীন, কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাক্বলীদ, পৃঃ ২০; গৃহীতঃ জুরজানী, কিতাবুত তা‘রীফাত, পৃঃ ৬৪

[4]. তিনটি মতবাদ, পৃঃ ৭; গৃহীতঃ শাওকানী, আল-ক্বাওলুল মুফীদ (মিসরী ছাপাঃ ১৩৪০/১৯২১ খৃঃ), পৃঃ ১৪

[5]. তিনটি মতবাদ, পৃঃ ৮; গৃহীতঃ শাহ অলিউল্লাহ, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ (মিসরঃ খায়রিয়াহ প্রেস, ১৩২২ হিঃ), ১ম খন্ড পৃঃ ১২২।

[6]. আহলেহাদীছ আন্দোলনঃ উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, পৃঃ ১৭০; গৃহীতঃ আব্দুল ওয়াহ্হাব শা‘রানী, কিতাবুল মীযান, ১ম খন্ড, পৃঃ ৬১

[7]. আহলেহাদীছ আন্দোলনঃ উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, পৃঃ ১৭০; গৃহীতঃ হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াক্কেঈন ১/৫৭ পৃঃ

[8]. তিনটি মতবাদ, পৃঃ ১৫; গৃহীতঃ আব্দুল ওয়াহ্হাব শা‘রানী (৮৯৮-৯৭৩হিঃ) কিতাবুল মীযান (দিল্লীঃ আকমালুল মাতাবে, ১২৮৬ হিঃ) ১ম খন্ড, পৃঃ ৬৩, লাইন ১৮।

[9]. তিনটি মতবাদ, পৃঃ ১৫।

[10]. তিনটি মতবাদ, পৃঃ ১৬; গৃহীতঃ ইবনু আবেদীন, শামী রাদ্দুল মুহতার শরহ দুর্রে মুখতার (দেওবন্দঃ ১২৭২হিঃ) ১/৪৬ পৃঃ।

[11]. তিনটি মতবাদ, পৃঃ ১৬; গৃহীতঃ কিতাবুল মীযান, ১ম খন্ড, ৬৩ পৃঃ

[12]. কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাক্বলীদ, পৃঃ ৩০; গৃহীতঃ ড. অছিউল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আববাস, আত-তাক্বলীদ ওয়া হুকমুহু ফী যুইল কিতাব ওয়াস-সুন্নাহ, পৃঃ ২০।

[13]. আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন?, পৃঃ ৭; গৃহীত ঃ আবুবকর আল-খত্বীব বাগদাদী, তারীখু বাগদাদ ১৩/৪০২ পৃঃ।

[14]. তিনটি মতবাদ, পৃঃ ১৬; গৃহীতঃ ইউসুফ জয়পুরী, হাক্বীক্বাতুল ফিক্বহ (বোম্বাইঃ পরিবর্ধিত সংস্করণ, তাবি) পৃঃ ৭৩।

[15]. তিনটি মতবাদ, পৃঃ ১৬; গৃহীতঃ শাহ ওয়ালিউল্লাহ, ইক্বদুল জীদ উর্দূ অনুবাদসহ (লাহোরঃ তাবি) ৯৭ পৃঃ ৩য় লাইন।

[16]. তিনটি মতবাদ, পৃঃ ১৭; গৃহীতঃ কিতাবুল মীযান ১/৬৪ পৃঃ।

[17]. তিনটি মতবাদ, পৃঃ ১৭; গৃহীতঃ ইক্বদুল জীদ ৯৭ পৃঃ ৭ম লাইন।

[18]. কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাক্বলীদ, পৃঃ ৩২; গৃহীতঃ ইবনু আবী হাতেম, পৃঃ ৯৩।

[19]. কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাক্বলীদ, পৃঃ ৩২; গৃহীতঃ ইবনু আবী হাতেম, পৃঃ ৯৩ সনদ ছহীহ

[20]. তিনটি মতবাদ, পৃঃ ১৭; গৃহীতঃ ইক্বদুল জীদ, ৯৮ পৃঃ ৩য় লাইন।

[21]. তিনটি মতবাদ, পৃঃ ১৭-১৮; গৃহীতঃ শাওকানী, আল-ক্বাওলুল মুফীদ (মিসরী ছাপা ১৩৪০/১৯২১ খৃঃ), পৃঃ ১৫

[22]. তিনটি মতবাদ, পৃঃ ১৮





মাদ্রাসার পাঠ্যবই সমূহের অন্তরালে (২য় কিস্তি) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আত্মসমর্পণ - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
মানব জীবনে সূদের ক্ষতিকর প্রভাব - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
হজ্জ পরবর্তী করণীয় - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আল্লাহর প্রতি ঈমানের স্বরূপ (তৃতীয় কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
মুসলিম সমাজে মসজিদের গুরুত্ব (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
পুনরুত্থান - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
সীমালংঘন ও দুনিয়াপূজা : জাহান্নামীদের দুই প্রধান বৈশিষ্ট্য (৫ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
আল্লামা আলবানী সম্পর্কে শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্বের সমালোচনার জবাব (৪র্থ কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
শায়খ আলবানীর তাৎপর্যপূর্ণ কিছু মন্তব্য (১ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
ইসলামে শিষ্টাচারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
বিবাহের গুরুত্ব ও পদ্ধতি (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
আরও
আরও
.