আঠারো শতকের প্রথম দিকে মানুষ বেচাকেনা হ’ত সিলেটে। এমন ঘটনার চারটি দলীল ছিল সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মহাফেযখানায়। এসব দলীলে জীবন্ত হয়ে রয়েছে তৎকালীন মানুষ বেচাকেনার চিত্র। যেখানে রয়েছে ঋণ পরিশোধের জন্য এক মা ও তার সন্তান বিক্রির ইতিহাস। রয়েছে ‘দাস’ হিসাবে অনাগত সন্তানের জন্মের আগেই বিক্রি হওয়ার মর্মান্তিক ইতিহাস। ওই সময় দাস-দাসীর মূল্য ছিল মাত্র ১০ থেকে ২৫ টাকা। এসব দাস-দাসী ক্রয় করতেন তৎকালীন একই যেলার বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দারা। দাস হিসাবে সবচেয়ে কম মূল্য ছিল শিশুদের। ৫০ বছরের জন্য মাত্র সোয়া ১ রুপিতে ৪ বছরের এক শিশু বিক্রির ঘটনাও ঘটেছিল সেই সময়ের শ্রীহট্ট নামক বর্তমান সিলেটে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ ১৮০১ সালের মানুষ বেচাকেনার দলীলের একটি নকল কপি সিলেট সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সংগ্রহ করে। সেই দলীলের সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে সিলেটে ২০০ বছর আগে মানুষ বেচাকেনার আরও ৩টি দলীল। চারটি দলীলই লেখা হয়েছে কয়েকটি ভাষা মিলিয়ে।
সিলেট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে থাকা প্রায় দেড় হাজার পৃষ্ঠার এই বালাম বইগুলোর অধিকাংশ দলীল নাগরী লিপি, উর্দূ, ফারসী, ব্রজবুলি ও সংস্কৃত ভাষায় লেখা। যার বেশীর ভাগই তৎকালীন জমি কেনাবেচার তথ্য। এ অফিসের মহাফেযখানার পাঁচটি বালাম বই পড়ে উদ্ধার করা হয় ১৮০৬ সালের একটি ও ১৮০৭ সালের দু’টি দলীল।
মানুষ বিক্রির চার দলীলের একটিতে তৎকালীন শেখ বিআনিয়া নামক ২৫ বছরের এক যুবকের যবানবন্দী লেখা ছিল- আজীবন সে দাস থাকবে। কাজে গাফিলতি করবে না। আর পালিয়ে গেলে ধরে এনে মনিব যে শাস্তি দেবে, সে তা মাথা পেতে নেবে। বিআনিয়ার মৌখিক স্বীকারোক্তির পরিপ্রেক্ষিতে লেখা হয়েছিল মানুষ বিক্রির সেই দলীল। ফয়েযুল্লাহ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি মাত্র ১০ রুপিতে দাস হিসাবে কিনে নিয়েছিলেন শেখ হাবীবের ছেলে শেখ বিআনিয়াকে। বিআনিয়া জানিয়েছিল, কর্য পরিশোধের জন্য বিক্রি করছেন নিজেকে। ১৮০৬ সালে নথিভুক্ত হয় এ দলীল।
১৮০৭ সালে অনুপ রায় বেপারী নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২৫ টাকায় কেনা হয়েছিল গনাইকে। গনাইয়ের সন্তান হ’লে তারাও একই মালিকের ক্রীতদাস হবে বলে শর্ত দেওয়া আছে নথিতে। একই সনে পাওয়া গেছে মা আর ছেলে একসাথে বিক্রি হওয়ার নথি।
উল্লেখ্য সেসময়ের বিভিন্ন সংবাদপত্রেও প্রকাশিত হয়েছে এসব খবর। যেমন ১৮২৫ সালের ১৮ জুন ‘বাঙ্গালা সমাচারপত্র’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় কন্যা বিক্রির একটি খবর। ১৮২৮ সালের ১১ অক্টোবর প্রকাশিত হয় স্ত্রী বিক্রির খবর। তুলার মূল্যবৃদ্ধিতে আতঙ্কিত হয়ে নিজের স্ত্রীকে এক যুবকের কাছে কিছু টাকায় বিক্রি করেছিলেন বর্ধমানের এক ব্যক্তি।
[এসব খবর প্রমাণ করে যে, কেবলমাত্র আরবে আইয়ামে জাহেলিয়াতে দাসপ্রথা ছিল না। বরং বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সর্বত্র দাসপ্রথা ছিল। যেমন পার্শ্ববর্তী ভারতেও ছিল (ঢাকা, দৈনিক কালের কণ্ঠ ০২.০৭.২০১৮)। ইসলাম এই দাসপ্রথার বিরুদ্ধে ধর্মীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ফলে মুসলিম বিশ্ব থেকে দাসপ্রথা নির্মূল হয়ে গেছে(স.স.)]।