[সম্প্রতি দেশের বিশিষ্ট একজন আলেম পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে একটি বিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। তিনি ইমাম মাহদীর সম্ভাব্য আগমনকাল আগামী ২০১৯/২০২০ সাল বলে মন্তব্য করায় অনেকের মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছে। ১৯৯৬ সালে জনৈক মিসরীয় লেখক আমীন মুহাম্মাদ জামালুদ্দীন একই বিষয়ের অবতারণা করে পর পর তিনটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। প্রথমে তিনি প্রকাশ করেন, عمر أمّة الإسلام وقرب ظهور المهدى عليه السلام (মুসলিম উম্মাহর বয়স ও মাহদী আগমনের প্রাক্কাল) অতঃপর উক্ত বইয়ের উপর আলোচনা-সমালোচনা শুরু হ’লে এর জবাবে তিনি লেখেন, القول المبين فى الأشراط الصغرى ليوم الدين استقصاءً وشرحاً وبياناً لوقوعها (‘ক্বিয়ামত পূর্বেকার ছোট আলামত সমূহ সংঘটিত হওয়া সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা) এবংرد السهام عن كتاب عمر أمة الإسلام (‘মুসলিম উম্মাহর বয়স সম্পর্কিত বইয়ের প্রতিবাদের প্রতিবাদ)। এমনকি তাঁর চিন্তাধারার উপর ভিত্তি করে ইমাম মাহদীর উপর পৃথক গবেষণা সেন্টারও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর এসব গ্রন্থের জবাবে বেশ কিছু প্রবন্ধ ও নিবন্ধ লিখিত হয়েছে এবং তাঁর দাবীসমূহ খন্ডন করা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি এই বিতর্কটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুনরায় মাথা চাড়া দেওয়ায় তা পর্যালোচনার দাবী রাখে। সেকারণ এ বিষয়ে একটি দলীল ভিত্তিক আলোচনার দায়িত্ব প্রদান করা হয় লেখককে। অতঃপর তা হা.ফা.বা গবেষণা বিভাগ কর্তৃক পরিমার্জনা অন্তে ‘দিশারী’ কলামে পত্রস্থ করা হ’ল।- সম্পাদক] 

মুসলিম উম্মাহর মেয়াদকাল :

মুসলিম জাতির বয়স এবং ইমাম মাহদীর আগমনকাল প্রসঙ্গটি ইসলামী একাডেমিয়া বা ইলমী ঘরানায় বিশেষ কোন আলোচ্য বিষয় না হ’লেও সাধারণ জনগণের মাঝে তা যথেষ্ট কৌতুহলের বিষয়। ফলে এ বিষয়ক কিছু হাদীছকে কেন্দ্র করে মাঝে-মধ্যেই বিভিন্ন উপলক্ষে বিতর্ক উত্থাপিত হ’তে দেখা যায়। যেমনটি ২০০০ সালের ৫ই মে ক্বিয়ামতের দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল। তাতে সারা দেশে আতংক তৈরী হয়েছিল। এরপরে ঢাকাতে মাহদীর ঠিকানা দিয়ে প্রচার করা হয়। সম্প্রতি এই বিতর্কটি আবারও শুরু হয়েছে। বিশেষতঃ হিজরী পনের শতকে মুসলিম উম্মাহ তার মেয়াদকালের চূড়ান্তসীমায় পৌঁছতে চলেছে কি-না, সেটি একদল মানুষের চিন্তা ও আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে। নিম্নে এ বিষয়ে আমরা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে আলোচনা তুলে ধরলাম।-

বিতর্কটির গোড়ার কথা :

মূলতঃ দু’টি হাদীছকে কেন্দ্র করে এ বিতর্কটি উত্থাপিত হয়েছে।-

(১) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

إِنَّمَا بَقَاؤُكُمْ فِيمَا سَلَفَ قَبْلَكُمْ مِنَ الأُمَمِ كَمَا بَيْنَ صَلاَةِ الْعَصْرِ إِلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ، أُوتِىَ أَهْلُ التَّوْرَاةِ التَّوْرَاةَ فَعَمِلُوا حَتَّى إِذَا انْتَصَفَ النَّهَارُ عَجَزُوا، فَأُعْطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا، ثُمَّ أُوتِىَ أَهْلُ الإِنْجِيلِ الإِنْجِيلَ فَعَمِلُوا إِلَى صَلاَةِ الْعَصْرِ، ثُمَّ عَجَزُوا، فَأُعْطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا، ثُمَّ أُوتِينَا الْقُرْآنَ فَعَمِلْنَا إِلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ، فَأُعْطِينَا قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ، فَقَالَ أَهْلُ الْكِتَابَيْنِ أَىْ رَبَّنَا أَعْطَيْتَ هَؤُلاَءِ قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ، وَأَعْطَيْتَنَا قِيرَاطًا قِيرَاطًا، وَنَحْنُ كُنَّا أَكْثَرَ عَمَلاً، قَالَ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ هَلْ ظَلَمْتُكُمْ مِنْ أَجْرِكُمْ مِنْ شَىْءٍ قَالُوا لاَ، قَالَ فَهْوَ فَضْلِى أُوتِيهِ مَنْ أَشَاءُ-

‘আগেকার উম্মতের স্থায়িত্বের তুলনায় তোমাদের স্থায়িত্ব হ’ল আছর হ’তে সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের ন্যায়। তাওরাত অনুসারীদেরকে তাওরাত দেয়া হয়েছিল। তারা তদনুযায়ী কাজ করতে লাগল। যখন দুপুর হ’ল, তখন তারা অপারগ হয়ে পড়ল। তাদের এক এক ক্বীরাত করে পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়। আর ইনজীল অনুসারীদেরকে ইনজীল দেয়া হ’ল। তারা আছরের ছালাত পর্যন্ত কাজ করে অপরাগ হয়ে পড়ল। তাদেরকে এক এক ক্বীরাত করে পারিশ্রমিক দেয়া হ’ল। অতঃপর আমাদেরকে কুরআন দেয়া হ’ল। আমরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করলাম। আমাদের দু’ দু’ ক্বীরাত করে দেয়া হ’ল। এতে উভয় কিতাবী সম্প্রদায় বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দুই দুই ক্বীরাত করে দান করেছেন, আর আমাদের দিয়েছেন এক এক ক্বীরাত করে; অথচ আমলের দিক দিয়ে আমরাই বেশি। আল্লাহ তা‘আলা বললেন, তোমাদের পারিশ্রমিকের ব্যাপারে আমি কি তোমাদের প্রতি কোনরূপ যুলুম করেছি? তারা বলল, না। তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেন, এ হ’ল, আমার অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তাকে দেই’।[1]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন,كُنَّا جُلُوساً عِنْدَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَالشَّمْسُ عَلَى قُعَيْقِعَانَ بَعْدَ الْعَصْرِ فَقَالَ: مَا أَعْمَارُكُمْ فِى أَعْمَارِ مَنْ مَضَى إِلاَّ كَمَا بَقِىَ مِنَ النَّهَارِ فِيمَا مَضَى مِنْهُ – ‘আমরা একদিন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট বসে ছিলাম। তখন আছরের পর সূর্য কু‘আইকে‘আন পাহাড়ের উপরে অবস্থান করছিল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমাদের পূর্বের যেসব উম্মত অতীত হয়ে গেছে তাদের অনুপাতে তোমাদের বয়স হ’ল এখন থেকে দিনের বাকী অংশ পরিমাণ।[2]

অন্য বর্ণনায় এসেছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّمَا أَجَلُكُمْ فِى أَجَلِ مَنْ خَلاَ مِنَ الأُمَمِ مَا بَيْنَ صَلاَةِ الْعَصْرِ إِلَى مَغْرِبِ الشَّمْسِ ‘তোমাদের পূর্বের যেসব উম্মত অতীত হয়ে গেছে তাদের অনুপাতে তোমাদের বয়স হ’ল আছরের ছালাত এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়টুকুর সমান’।[3]

(২) হযরত আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,

مَثَلُ الْمُسْلِمِيْنَ وَالْيَهُوْدِ وَالنَّصَارَى كَمَثَلِ رَجُلٍ اسْتَأْجَرَ قَوْمًا يَعْمَلُوْنَ لَهُ عَمَلاً إِلَى اللَّيْلِ، فَعَمِلُوا إِلَى نِصْفِ النَّهَارِ، فَقَالُوا لاَ حَاجَةَ لَنَا إِلَى أَجْرِكَ، فَاسْتَأْجَرَ آخَرِينَ فَقَالَ أَكْمِلُوا بَقِيَّةَ يَوْمِكُمْ، وَلَكُمُ الَّذِى شَرَطْتُ، فَعَمِلُوا حَتَّى إِذَا كَانَ حِينَ صَلاَةِ الْعَصْرِ قَالُوا لَكَ مَا عَمِلْنَا. فَاسْتَأْجَرَ قَوْمًا فَعَمِلُوا بَقِيَّةَ يَوْمِهِمْ حَتَّى غَابَتِ الشَّمْسُ، وَاسْتَكْمَلُوا أَجْرَ الْفَرِيقَيْنِ-

‘মুসলিম, ইহূদী ও নাছারাদের উদাহরণ হ’ল, যেমন এক ব্যক্তি একদল লোককে নিয়োগ করল এই চুক্তিতে যে, তারা তার জন্য রাত পর্যন্ত কাজ করবে। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত কাজ করে তারা বলল, আপনার পারিশ্রমিকের আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। তখন সে ব্যক্তি অন্য আরেক দল লোককে কাজে নিয়োগ করল এবং বলল, তোমরা দিনের বাকী অংশ কাজ কর, তোমরা আমার নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবে। তারা কাজ শুরু করল। যখন আছরের ছালাতের সময় হ’ল, তখন তারা বলল, আমরা যা কাজ করেছি তা আপনার জন্য রেখে গেলাম। অতঃপর সে ব্যক্তি আরেক দল লোককে নিয়োগ করল। তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত দিনের বাকী অংশে কাজ করল এবং আগের দু’দলের পূর্ণ পারিশ্রমিক তারা লাভ করল’।[4]

এছাড়া পৃথিবীর মোট বয়স প্রসঙ্গে আরও কিছু জাল ও যঈফ আছার রয়েছে যা ইবনু জারীর ত্বাবারী স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। আলোচনার পরবর্তী অংশে তা আসবে।

উক্ত হাদীছ দু’টির ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণের বক্তব্য :

(১) ‘মুসলিম উম্মাহর সময়কাল আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত’-হাদীছাংশটির ব্যাখ্যায় ইবনু রজব হাম্বলী (রহঃ) বলেন,

أَنَّ الْمُرَادَ بِهَذَا الْحَدِيْثِ مُدَّةُ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَ مُدَّةِ أُمَّةِ مُوْسَى وَعِيْسِى عَلَيْهِمُ السَّلَامَ، فَمُدَّةُ هَذِهِ الْأُمَمِ الثَّلاَثِ كَيَوْمٍ تَامٍّ، وَمُدَّةُ مَا مَضَى مِنَ الْأُمَمِ فِيْ أَوَّلِ الدُّنْيَا كَلَيْلَةِ هَذَا الَْيِوْمِ فإن الليل سابق للنهار -  

‘অত্র হাদীছ দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল মূসা (আঃ), ঈসা (আঃ) এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উম্মতত্রয়ের মিলিত সময়কাল বর্ণনা করা। এই তিন উম্মতের সম্মিলিত মেয়াদকাল হবে পূর্ণ একদিনের সমান। আর পৃথিবীর শুরুকালে অতিক্রান্ত হওয়া প্রাচীন উম্মতগুলির বয়স ছিল এই এক দিনের সমান এক রাত। কেননা রাত আসে দিনের পূর্বেই।[5]

অতঃপর তিনি ওয়াকেদী’র বরাত দিয়ে উলেলখ করেছেন যে, কোন কোন আলেমের মতে, পৃথিবীর প্রথমভাগে আগত নবীদের মধ্যে আদম ও নূহের মাঝে ১০০০ বছর, নূহ ও ইবরাহীমের মাঝে ১০০০ বছর, ইবরাহীম ও মূসার মাঝে ১০০০ বছরের ব্যবধান ছিল (অর্থাৎ এই হিসাবে পৃথিবীর বয়স ৩০০০×২= ৬০০০ বছর)।

তিনি আহলে কিতাবদের বরাত দিয়ে আরও উল্লেখ করেছেন যে, সৌরবর্ষ মোতাবেক আদম (আঃ) থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর হিজরত পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান ছিল ৬১১৪ বছর। এর মধ্যে আদম (আঃ) থেকে মূসা (আঃ) পর্যন্ত ব্যবধান ছিল (৩৩২৮+৫৬৭) ৩৮৯৫ বছর (অর্থাৎ এই হিসাবে পৃথিবীর বয়স হবে (৩৮৯৫×২) ৭৭৯০ বছর। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর বয়স হবে ৭৭৯০-৬১১৪= ১৬৭৬ বছর)।   

অতঃপর তিনি আরও কিছু মত উল্লেখ করেছেন। যেমন : কারো মতে আদম (আঃ) থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান ৫৯৯২ বছর। কারও মতে, ৪৬৪২ বছর। ইবনু আববাসের মতে, ৭০০০ বছর। কা‘ব ও ওয়াহহাবের মতে, ৬০০০ বছর। মুজাহিদ ও ইকরামার মতে ৫০০০০ বছর (যেহেতু সূরা মা‘আরিজের ৪ নং আয়াতে ক্বিয়ামত দিবসের একদিনকে পৃথিবীর পঞ্চাশ হাযার বছরের সমপরিমাণ বলা হয়েছে), তবে এর মধ্যে কত বছর গত হয়েছে এবং কত বছর বাকি রয়েছে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।[6]

পর্যালোচনা : ইবনু রজব হাম্বলী (রহঃ) তাঁর আলোচনায় মুসলিম উম্মাহর বয়সসীমা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। বরং বিভিন্ন জনের মত তুলে ধরেছেন মাত্র। এ সকল হিসাব প্রথমতঃ একান্তই অনুমানভিত্তিক। দ্বিতীয়তঃ জাল এবং ইসরাঈলী বর্ণনা ভিত্তিক। সুতরাং এর ভিত্তিতে কোন দলীল গ্রহণ করার সুযোগ নেই। এজন্য ইবনু রজব হাম্বলী (রহঃ) উক্ত আলোচনার উপসংহারে বলেন,

 لكن مدة الماضي من الدنيا إلى بعثة محمد صلى الله عليه وسلم، ومدة الباقي منها إلى يوم القيامة، لا يعلمه على الحقيقة إلا الله عز وجل، وما يذكر في ذلك فأنما هو ظنون لا تفيد علماً.

‘মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমনের পূর্বের সময়সীমা এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট সময়সীমা সম্পর্কে সঠিক ও প্রকৃত জ্ঞান আল্লাহ ব্যতীত কেউই রাখেন না। এ ব্যাপারে যা কিছু বলা হয়, সবই ধারণাপ্রসূত। যা কোন জ্ঞান দান করে না’।[7]

তিনি আরো বলেন,وأخذ بقاء ما بقي من الدنيا على التحديد من هذه النصوص لا يصح؛ فإن الله استأثر بعلم الساعة، ولم يطلع عليه أحداً من خلقه.. وإنما خرج هذا من النبي صلى الله عليه وسلم على وجه التقريب للساعة من غير تحديد لوقتها- ‘এই দলীলগুলোর ভিত্তিতে দুনিয়ার অবশিষ্ট মেয়াদকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা যথার্থ নয়। কারণ আল্লাহ ক্বিয়ামতের জ্ঞান নিজের কাছে রেখেছেন। তার কোন সৃষ্টিকে অবহিত করেননি... এটি রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে কোন সময়কাল নির্ধারণ ব্যতীত কেবল ক্বিয়ামতের নিকটবর্তিতার প্রতি ইঙ্গিতস্বরূপ বর্ণিত হয়েছে’।[8]

(২) হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,

ظَاهِرُهُ أَنَّ بَقَاءَ هَذِهِ الْأُمَّةِ وَقَعَ فِي زَمَانِ الْأُمَمِ السَّالِفَةِ وَلَيْسَ ذَلِكَ الْمُرَادُ قَطْعًا وَإِنَّمَا مَعْنَاهُ أَنَّ نِسْبَةَ مُدَّةِ هَذِهِ الْأُمَّةِ إِلَى مُدَّةِ مَنْ تَقَدَّمَ مِنَ الْأُمَمِ مِثْلُ مَا بَيْنَ صَلَاةِ الْعَصْرِ وَغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى بَقِيَّةِ النَّهَارِ…..إِلَخْ

‘(হাদীছটি থেকে) বাহ্যিকভাবে মনে হয় যে, মুসলিম জাতির মেয়াদকাল বিগত জাতিসমূহের মেয়াদকালের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত। এর উদ্দেশ্য কোনভাবেই এটা নয়। বরং এর অর্থ বিগত জাতিসমূহের মেয়াদ অনুপাতে এই জাতির মেয়াদকাল হ’ল আছর ছালাত থেকে দিনের বাকি অংশ তথা সূর্যাস্ত পর্যন্ত’।[9]

(৩) ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) অন্যত্র বলেন,

وَاسْتُدِلَّ بِهِ عَلَى أَنَّ بَقَاءَ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَزِيدُ عَلَى الْأَلْفِ لِأَنَّهُ يَقْتَضِي أَنَّ مُدَّةَ الْيَهُودِ نَظِيرُ مُدَّتَيِ النَّصَارَى وَالْمُسْلِمِينَ وَقَدِ اتَّفَقَ أَهْلُ النَّقْلِ عَلَى أَنَّ مُدَّةَ الْيَهُودِ إِلَى بَعْثَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَتْ أَكْثَرَ مِنْ أَلْفَيْ سَنَةٍ وَمُدَّةَ النَّصَارَى مِنْ ذَلِكَ سِتُّمِائَةٍ وَقِيلَ أَقَلُّ فَتَكُونُ مُدَّةُ الْمُسْلِمِينَ أَكْثَرَ مِنْ أَلْفٍ قَطْعًا-

‘এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয় যে, এই উম্মতের অবশিষ্ট সময়কাল এক হাযার বছরের উপরে। কেননা হাদীছের ভাষ্য থেকে প্রতীয়মান হয়, ইহূদীদের অবস্থানকাল খৃষ্টান ও মুসলমানদের সময়কালের সমান। আর বিদ্বানগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, রাসূল (ছাঃ)-এর নবুঅতপ্রাপ্তি পর্যন্ত ইহূদীদের অবস্থানকাল হ’ল দুই হাযার বছরের উপরে। এর মধ্যে খৃষ্টানদের বয়স ছয়শ’ বছর। কেউ কেউ বলেছেন, তার থেকে কম।  তাহ’লে  অকাট্যভাবে  মুসলমানদের  সময়কাল

হবে এক হাযার বছরের উপরে।[10]

পর্যালোচনা :

ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) উপরোক্ত মন্তব্যে এক হাযার বছরের কথা উল্লেখ করলেও সুনির্দিষ্ট বয়সকাল নির্ধারণ করেননি। বরং আনুমানিক একটি ধারণা উল্লেখ করেছেন যা পৃথিবীর স্বল্প মেয়াদের দিকে নির্দেশ করে। যেমন তিনি অন্যত্র পৃথিবীর মেয়াদকাল সম্পর্কে ইবনু জারীর ত্বাবারী উল্লিখিত হাদীছ সমূহ বিশ্লেষণ করার পর সিদ্ধান্তমূলক বক্তব্যে বলেন,

أَنَّ الْمُرَادَ بِالتَّشْبِيهِ التَّقْرِيبُ وَلَا يُرَاد حَقِيقَة الْمِقْدَار فبه يَجْتَمِعُ مَعَ حَدِيثِ أَنَسٍ وَأَبِي سَعِيدٍ عَلَى تَقْدِيرِ ثُبُوتِهِمَا وَالثَّانِي أَنْ يُحْمَلَ عَلَى ظَاهِرِهِ فَيقدم حَدِيث بن عُمَرَ لِصِحَّتِهِ وَيَكُونُ فِيهِ دَلَالَةٌ عَلَى أَنَّ مُدَّةَ هَذِهِ الْأُمَّةِ قَدْرُ خُمُسِ النَّهَارِ تَقْرِيبًا-

‘এই সাদৃশ্য দ্বারা (ক্বিয়ামতের) নিকটবর্তীতা উদ্দেশ্য, সময়সীমা নির্ধারণ উদ্দেশ্য নয়। এর দ্বারা হযরত আনাস (রাঃ) ও আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত নির্ধারিত সময়সীমা সম্বলিত হাদীছদ্বয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয় (হাদীছ দু’টি নিম্নে বর্ণিত হয়েছে), যদি এ দু’টি হাদীছকে ছহীহ ধরে নেয়া হয়। দ্বিতীয়তঃ এখান থেকে প্রকাশ্য অর্থও নেয়া যায়। সেই মোতাবেক ইবনু ওমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত (উপরোক্ত) হাদীছটি প্রাধান্য পাবে বিশুদ্ধতার কারণে এবং এত্থেকে প্রকাশ পায় যে, মুসলিম জাতির সময়কাল প্রায় দিনের এক পঞ্চমাংশ’।[11] তিনি আরো স্পষ্টভাষায় বলেন,وَتَضَمَّنَ الْحَدِيثُ الْإِشَارَةَ إِلَى قَصْرِ الْمُدَّةِ الَّتِي بَقِيَتْ مِنَ الدُّنْيَا ‘অত্র হাদীছ দুনিয়ার অবশিষ্টভাগের স্বল্প মেয়াদের ইঙ্গিত বহন করে’।[12]

(৪) জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেন, الذي دلت عليه الآثار أن مدة هذه الأمة تزيد على الألف ولاتبلغ الزيادة خمسمائة أصلا  ‘হাদীছ সমূহ যা প্রমাণ করে তা হ’ল এই যে, এই উম্মতের বয়স এক হাযারের উপরে তবে পনেরশ’ বছরের বেশী কখনো নয়।[13]

পর্যালোচনা : সুয়ূতী যে সকল বর্ণনার ভিত্তিতে উক্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন তার কিছু জাল ও কিছু ইসরাঈলী বর্ণনা। সেই সাথে তা বাস্তবতারও বিরোধী। শায়খ আলবানী (রহঃ) যথার্থই বলেছেন যে, ‘..বাস্তবতা এ সকল হাদীছ সমূহের অসারতা প্রমাণ করে। ইমাম সুয়ূতী তাঁর রিসালায় উল্লিখিত হাদীছ ও অন্যান্য হাদীছের (যার অধিকাংশই দুর্বল) উপর ভিত্তি করে মন্তব্য করেছেন যে, এই উম্মতের বয়স এক হাযার বছরের ঊর্ধ্বে। তবে তা অতিরিক্ত আরও পাঁচশত বছরের বেশী হবে না। আর লোকেরা পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয়ের পর ১২০ বছর পৃথিবীতে অবস্থান করবে! এ সম্পর্কে আমরা বলব যে, এখন আমরা ১৩৯১ হিজরীতে (শায়খ আলবানীর সময়কার হিজরী সাল)। অর্থাৎ পাঁচশত বছর পূর্ণ হ’তে আর মাত্র ১০৯ বছর বাকি। সুয়ূতীর বক্তব্য মতে, আমাদের এই বছর থেকে আরও ১১ বছর পূর্বেই সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হওয়ার কথা। অথচ এখনও তা হয়নি। একমাত্র আল্লাহ্ই জানেন কখন সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হবে। আর এটি কি করে সম্ভব যে, মানুষ এমন সময় নির্ধারণ করে দিবে যাতে ক্বিয়ামতের সময়কাল নির্দিষ্ট হয়ে যায়? এটি আল্লাহ তা‘আলার বাণীর বিপরীত যাতে ক্বিয়ামত হঠাৎ করে আসার কথা বলা হয়েছে। এরপর তিনি সূরা আ‘রাফের ১৮৭  আয়াতটি উদ্ধৃত করেন।[14]

(৫) কাযী ইয়ায বলেন,أشار بهذا الحديث على اختلاف ألفاظه إلى قلة المدة بينه وبين الساعة ‘এই হাদীছে শব্দসমূহের ভিন্নতা ছাড়াও ক্বিয়ামত ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মাঝে সময়ের স্বল্পতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে’।[15]

সারকথা :

ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীছদ্বয় পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, মুসলিম উম্মাহর বয়স সম্পর্কে সেখানে সুনির্দিষ্ট কোন সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি। এতদসত্ত্বেও ওলামায়ে কেরামের মধ্যে যেমন ইবনু হাজার আসক্বালানী এই মেয়াদ ১০০০ বছরের ঊর্ধ্বে উল্লেখ করেছেন। অনুরূপভাবে জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী সর্বনিম্ন ১০০০ বছরের কথা উল্লেখ করেছেন এবং সর্বোচ্চ মেয়াদ বেঁধে দিয়েছেন ১৫০০ বছর। 

এই সূত্র ধরেই মিসরীয় লেখক আমীন মুহাম্মাদ জামালুদ্দীন হিসাব কষেছেন এভাবে যে, হাদীছের বর্ণনা মোতাবেক যেহেতু অর্ধেক দিন ইহূদীদের, সুতরাং তা দুই হাযার বছরের বেশী বা ২১শ’ বছর। অপরদিকে মুসলিম ও খৃষ্টানদের সম্মিলিত বয়স অর্ধদিবস তথা ২ হাযার বছরের বেশী বা ২১শ’ বছর। আর খৃষ্টানদের বয়স ৬০০ বছর। যেমনটি সালমান ফারেসী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে,فَتْرَةٌ بَيْنَ عِيسَى وَمُحَمَّدٍ  صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِتُّمِائَةِ سَنَةٍ ‘ঈসা এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমনের মধ্যে ছয়শ’ বছরের ব্যবধান ছিল’।[16] সুতরাং মুসলিম উম্মাহর বয়স ২১০০-৬০০= ১৫০০ বছর। সব মিলিয়ে আনুমানিক ১৪০০ বছর বা তার কিছু বেশী হবে মুসলিম উম্মাহর বয়স। তিনি ১৪১৭ সনে উক্ত মন্তব্যটি করেন। তারপর আরও ২২ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে।

কেউ কেউ উক্ত এক হাযার বছরের সাথে আল্লাহ প্রদত্ত পাঁচশত বছর বোনাস হিসাবে মুসলিম উম্মাহর মোট বয়স ১৫০০ বছর হিসাব করেছেন। অতিরিক্ত পাঁচশত বছরের হাদীছটি সা‘দ বিন আবূ ওয়াক্কাছ (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে। তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِنِّى لأَرْجُو أَنْ لاَ تُعْجِزَ أُمَّتِى عِنْدَ رَبِّهَا أَنْ يُؤَخِّرَهُمْ نِصْفَ يَوْمٍ. قِيلَ لِسَعْدٍ وَكَمْ نِصْفُ يَوْمٍ قَالَ خَمْسُمِائَةِ سَنَةٍ ‘আমি আশা করি, আমার উম্মত তার প্রতিপালকের নিকট অক্ষম হবে না যে, তিনি তাদেরকে অর্ধ দিবসে (ক্বিয়ামতের) অবকাশ দান করবেন’। তখন সা‘দ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয় ‘অর্ধ দিবস’ কত সময়? তিনি বলেন, এর অর্থ পাঁচশত বছর’।[17]

উক্ত হাদীছটি সম্পর্কে আপত্তি রয়েছে। প্রথমত : হাফেয ইবনু হাজার, আহমাদ শাকের ও শু‘আইব আরনাঊত্ব বর্ণনাটিতে ইনকিত্বা‘ থাকায় যঈফ বলেছেন।[18] দ্বিতীয়ত : আলবানীর দৃষ্টিতে হাদীছটি ছহীহ[19] হ’লেও বর্ণনাটি ক্বিয়ামত সংক্রান্ত কি-না এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের মাঝে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে। যেমন উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ছাহেবে ‘আওন বলেন, অর্থাৎ আমার উম্মতের ধনীরা অগ্রগামী দরিদ্র মুসলিমদের সাথে ৫০০ বছরের মধ্যে মিলিত হ’তে অপারগ হবে না।[20] আর এই বর্ণনার সপক্ষে ছহীহ হাদীছও রয়েছে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, মুসলিম দরিদ্ররা তাদের ধনীদের অর্ধদিবস পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তা হ’ল পাঁচশ’ বছর’।[21] ছাহেবে ‘আওন আরো বলেন, জেনে রেখ! ‘আলক্বামী ও জামে‘ ছাগীরের ব্যাখ্যাকারগণ এমন ব্যাখ্যাই করেছেন। তবে হাদীছটি ক্বিয়ামতের বিষয়ে হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।[22] হাফেয ইবনু হাজার বলেন, ‘মাছাবীহর কিছু ব্যাখ্যাকার উক্ত হাদীছটিকে ক্বিয়ামতের দিনের বিষয়ে বর্ণনা করেছেন। আর আল্লামা ত্বীবী সেটিকে জাল মন্তব্য করে সঠিক কাজ করেছেন’।[23] অতএব এ হাদীছটি দলীলযোগ্য নয়।

মোটকথা এটাই স্বতঃসিদ্ধভাবে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মাহর সুনির্দিষ্ট মেয়াদকাল সম্পর্কে স্পষ্ট কোন বিবরণ নেই। আর যে সকল ওলামায়ে কেরাম মুসলিম উম্মাহর বয়স এক হাযার বা দেড় হাযার বলেছেন, তা নিতান্তই আনুমানিক হিসাব, যার কোন সুনিশ্চিত ভিত্তি নেই।

সুতরাং কাযী ইয়াযের মন্তব্যই এখানে প্রণিধানযোগ্য যে, এ সকল হাদীছগুলি মূলতঃ ক্বিয়ামত আসন্ন- এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করে। আর সে কারণেই রাসূল (ছাঃ), ছাহাবীগণ ও পরবর্তী ওলামায়ে কেরাম ক্বিয়ামতের ভয়ে সর্বদা শংকিত থাকতেন। সেজন্য আমাদেরকেও সর্বদা ক্বিয়ামত সংঘটনের জন্য প্রস্ত্তত থাকতে হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট সময় ও মেয়াদকাল নির্ধারণ করে নেয়া একেবারেই অগ্রহণীয় এবং বিভ্রান্তিকরও বটে।

পৃথিবীর বয়স কি সাত হাযার বছর? এ বিষয়ে কিছু হাদীছ ও আছার বর্ণিত হয়েছে। ইবনু জারীর ত্বাবারী পৃথিবীর বয়সের শিরোনাম উল্লেখ করে বলেন, اِخْتَلَفَ السَّلَفُ قبلنا مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ فِيْ ذَلِكَ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ : قَدْرُ جَمِيْعِ ذَلِكَ سَبْعَةُ آَلَافِ سَنَةٍ. وَقَالَ آخَرُونَ: قَدْرُ جَمِيعِ ذَلِكَ سِتَّةُ آلافِ سَنَةٍ- ‘পূর্ববর্তী বিদ্বানগণ এই বিষয়ে বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন, তাদের কেউ বলেন, পৃথিবীর সমগ্র সময়কাল হ’ল সাত হাযার বছর। অন্য আরেক দল মনে করেন, ছয় হাযার বছর।[24] এরপর তিনি কিছু হাদীছ ও আছার নিয়ে এসেছেন যার কোনটি ভিত্তিহীন, কোনটি জাল ও যঈফ আবার কোনটি ইসরাঈলী বর্ণনা। যেমন-

১. ইবনু আববাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,الدُّنْيَا جُمُعَةٌ مِنْ جُمَعِ الْآخِرَةِ سَبْعَةُ آلَافِ سَنَةٍ وَقَدْ مَضَى سِتَّةُ آلَافِ وَمِائَةُ سَنَةٍ- ‘দুনিয়া হ’ল আখেরাতের জুম‘আ সমূহের মধ্যে একটি জুম‘আর সমতুল্য। আর তা হ’ল সাত হাযার বছর। এর মধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে ছয় হাযার একশ’ বছর।[25]

পর্যালোচনা : বর্ণনাটি ইবনু আববাস ও সাঈদ বিন জুবায়ের থেকে বিভিন্ন তাফসীর ও ইতিহাসের গ্রন্থে থাকলেও তা যঈফ  হওয়ায় পরিত্যাজ্য। হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ)-এর সনদকে যঈফ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘বর্ণনাটি ইয়াহ্ইয়া বিন ই‘য়াকূবের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যাকে ইমাম বুখারী মুনকিরুল হাদীছ বলেছেন’।[26] ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) দুনিয়া সাত হাযার বছরের বর্ণনাটি উপস্থাপনের পর বলেন, ‘এটি ডাহা মিথ্যা। কেননা যদি এটি সত্য হ’ত তাহ’লে প্রত্যেকে জানত যে, ক্বিয়ামত হ’তে আর দু’শত একান্ন বছর অবশিষ্ট রয়েছে যা কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ বিরোধী’।[27]

২. যাহহাক বিন যিম্ল আল-জুহানী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى الصُّبْحَ... فَإِذَا أَنَا بِكَ يَا رَسُولَ اللهِ عَلَى مِنْبَرٍ فِيهِ سَبْعَ دَرَجَاتٍ، وَأَنْتَ فِي أَعْلَاهَا دَرَجَةً،... وَأَمَّا الْمِنْبَرُ الَّذِي رَأَيْتَ فِيهِ سَبْعَ دَرَجَاتٍ وَأَنَا فِي أَعْلَى دَرَجَةٍ، فَالدُّنْيَا سَبْعَةُ آلَافِ سَنَةٍ وَأَنَا فِي آخِرِهَا أَلْفًا-

‘রাসূল (ছাঃ) ফজর ছালাতের পর ছাহাবীদেরকে তাদের রাতে দেখা স্বপ্ন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন। আমি স্বপ্নে দেখলাম... হে আল্লাহর রাসূল! আপনি একটি মিম্বারের উপর আছেন যার সাতটি স্তর ছিল। আর আপনি সর্বোচ্চ স্তরে আরোহন করেছেন।... এর ব্যাখ্যায় রাসূল (ছাঃ) বললেন, এর অর্থ হ’ল দুনিয়ার বয়স সাত হাযার বছর আর আমি সপ্তম সহস্রাব্দে পদার্পণ করছি’।[28]

পর্যালোচনা : বর্ণনাটি বিভিন্ন গ্রন্থে থাকলেও মুহাদ্দিছগণের দৃষ্টিতে তা অগ্রহণযোগ্য। বায়হাক্বী বলেন, এর সনদে দুর্বলতা আছে। ইবনু সাকান বলেন, আব্দুল্লাহ বিন যিমল থেকে অজ্ঞাত সনদে দুনিয়া সাত হাযার বছরের হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে। তিনি কোন পরিচিত ছাহাবী নন। এর সনদে দুর্বলতা রয়েছে। তার থেকে অনেক মুনকার হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। আর ইবনে হিববান বলেন যে, তিনি ছাহাবী। কিন্তু তার সনদে বর্ণিত কোন হাদীছের উপর আমি নির্ভর করি না।[29] যাহাবী তাকে তাবেঈ বলেছেন এবং হাদীছ মুরসাল করার দোষে দোষী বলেছেন।[30] ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, ‘তিনি নির্ভরযোগ্য নন’ (মীযান ৪/১০০)। এর সনদে সুলায়মান বিন আত্বা নামে আরেকজন রাবী আছেন, যিনি সর্বসম্মতিক্রমে যঈফ।[31] শায়খ আলবানী বর্ণনাটিকে ‘জাল’ বলেছেন।[32]

৩. ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,

أَنَّ الْيَهُودَ كَانُوا يَقُولُونَ مُدَّةُ الدُّنْيَا سَبْعَةُ آلَافِ سَنَةٍ، وَإِنَّمَا نُعَذَّبُ بِكُلِّ أَلْفِ سَنَةٍ مِنْ أَيَّامِ الدُّنْيَا يَوْمًا وَاحِدًا فِي النَّارِ، وَإِنَّمَا هِيَ سَبْعَةُ أَيَّامٍ مَعْدُودَةٍ، ثُمَّ يَنْقَطِعُ الْعَذَابُ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ فِي ذَلِكَ: وَقالُوا: لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ-

‘ইহূদীরা বলত, পৃথিবীর মেয়াদকাল সাত হাযার বছর। পৃথিবীর দিনসমূহের তুলনায় প্রতি হাযারে আমাদেরকে একদিন জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। আর তা নির্দিষ্ট সাতদিন। এরপর শাস্তি মওকূফ হয়ে যাবে। এর প্রতিবাদে আললাহ তা‘আলা নাযিল করেন, ‘আর তারা বলে, আমাদের আগুন কখনো স্পর্শ করবে না’...।[33]

পর্যলোচনা : হাফেয ইবনু হাজারের দৃষ্টিতে এর সনদ হাসান হ’লেও বর্ণনাটি ইবনু আববাস (রাঃ) ইহূদীদের নিকট থেকে শ্রবণ করায় তা গ্রহণযোগ্য নয়।[34] কারণ কোন ইসরাঈলী বর্ণনা দলীল গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাছাড়া এর সনদে মুহাম্মাদ বিন আবুবকর নামে একজন রাবী আছেন যাকে যাহাবী ও হাফেয ইবনু হাজার মাজহূল বা অজ্ঞাত বলেছেন। সর্বোপরি শায়খ আলবানী বর্ণনাটিকে যঈফ বলেছেন।[35]

৪. মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন জনৈক নওমুসলিম আহলে কিতাব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,إن الله تَعَالَى خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ، {وَإِنَّ يَوْمًا عِنْدَ رَبِّكَ كَأَلْفِ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ} وَجَعَلَ أَجَلَ الدُّنْيَا سِتَّةَ أَيَّامٍ، وَجَعَلَ السَّاعَةَ فِي الْيَوْمِ السَّابِعِ، {وَإِنَّ يَوْمًا عِنْدَ رَبِّكَ كَأَلْفِ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ}، فَقَدْ مَضَتِ السِّتَّةُ الْأَيَّامُ، وَأَنْتُمْ فِي الْيَوْمِ السَّابِعِ- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও যমীন ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি দুনিয়ার বয়স ছয় দিন নির্ধারণ করেছেন এবং ক্বিয়ামত সপ্তম দিনে ধার্য করেছেন। ‘তোমার প্রতিপালকের কাছে একটি দিন তোমাদের গণনার এক হাযার বছরের সমান’ (হজ্জ ২২/৪৭)। এর মধ্যে ছয় দিন অতিবাহিত হয়েছে এবং তোমরা সপ্তম দিনে অবস্থান করছ।[36]

পর্যালোচনা : এটি ইসরাঈলী বর্ণনা, যা ওলামায়ে কেরামের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।[37]

৫. ওছমান বিন যায়দাহ হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, كَانَ كُرْزٌ مُجْتَهِدًا فِي الْعِبَادَةِ، فَقِيلَ لَهُ: أَلَا تُرِيحُ نَفْسَكَ سَاعَةً؟ فَقَالَ: كَمْ بَلَغَكُمْ عُمَرُ الدُّنْيَا؟ قَالُوا: سَبْعَةُ آلَافِ سَنَةٍ. قَالَ: فَكَمْ بَلَغَكُمْ مِقْدَارُ يَوْمِ الْقِيَامَةِ؟ قَالُوا: خَمْسِينَ أَلْفِ سَنَةٍ. قَالَ: أَفَيَعْجَزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَعْمَلَ سُبْعَ يَوْمٍ حَتَّى يَأْمَنَ مِنْ ذَلِكَ الْيَوْمِ؟ ‘কুরয ইবাদতে মশগূল থাকতেন। তাকে বলা হ’ল, আপনি কি কিছু সময় নিজেকে বিশ্রাম দিবেন না? তিনি বললেন, পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে তোমাদের নিকট কি সংবাদ পেঁŠছেছে? তারা বলল, সাত হাযার বছর। তিনি বললেন, ক্বিয়ামতের দিনের পরিমাণ সম্পর্কে কি সংবাদ পেয়েছ? তারা বলল, পঞ্চাশ হাযার বছর। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ কি দিনের এক সপ্তাংশ সময় আমল করতে সক্ষম হবে, যাতে সে ঐ দিনে নিরাপত্তা লাভ করবে?’।[38]

পর্যালোচনা : এই বর্ণনাটি কুরয বিন আলকামা নামক একজন অপ্রসিদ্ধ ছাহাবীর বর্ণনা, যার কোন হাদীছ কুতুবে সিত্তাহর মধ্যে নেই।[39] এই বর্ণনাটির তরজমাতুল বাবে  সাখাভী বলেন,ولا يصح بل كل ما ورد مما فيه تحديد لوقت يوم القيامة على التعيين فاما أن يكون لا أصل له أو لا يثبت إسناده ‘বর্ণনাটি বিশুদ্ধ নয়। বরং ক্বিয়ামতের সময় নির্দিষ্ট করে যত বর্ণনা রয়েছে সেগুলো হয় ভিত্তিহীন নতুবা সনদ সাব্যস্ত হয়নি’।[40]

৬. আনাস বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ قَضَى حَاجَةَ الْمُسْلِمِ فِي اللهِ كَتَبَ اللهُ لَهُ عُمُرَ الدُّنْيَا سَبْعَةَ آلَافِ سَنَةٍ، صِيَامُ نَهَارِهِ وَقِيَامُ لَيْلِهِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য মুসলমানের কোন প্রয়োজন পূরণ করবে, আল্লাহ তার আমলনামায় পৃথিবীর বয়স সাত হাযার বছরের সমপরিমাণ দিনে ছিয়াম ও রাতে ক্বিয়াম করার ছওয়াব লিখে দিবেন’।[41]

পর্যালোচনা : বর্ণনাটির সনদ ছহীহ নয়। এর সনদে আবু হাশেম উবল্লী নামে একজন মুনকিরুল হাদীছ, কারো মতে মাতরূকুল হাদীছ রাবী রয়েছেন। যিনি সকল মুহাদ্দিছের নিকট অত্যন্ত যঈফ।[42] এছাড়া এর সনদে হুসাইন বিন দাঊদ বালখী নামে আরেক দুর্বল রাবী রয়েছেন।[43] খত্বীব বাগদাদী বলেন, ‘হুসাইন বিন দাঊদ ছিক্বাহ নন। তার বর্ণিত হাদীছ জাল’।[44]

৭. আনাস বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,عُمْرُ الدُّنْيَا سَبْعَةُ أَيَّامٍ مِنْ أَيَّامِ الْآخِرَةِ قَالَ اللهُ تَعَالَى: (وَإِنَّ يَوْمًا عِنْدَ رَبِّكَ كَأَلْفِ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّوْنَ) আখেরাতের দিনগুলোর তুলনায় পৃথিবীর বয়স সাত দিন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমার প্রতিপালকের নিকট একটি দিন তোমাদের গণনার এক হাযার বছরের সমান’।[45]

পর্যালোচনা : উক্ত বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনায় ‘আলা বিন যায়দ/যায়দাল নামে একজন বর্ণনাকারী আছেন যিনি হাদীছ জাল করার দোষে অভিযুক্ত। সকল মুহাদ্দিছ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।[46] শায়খ আলবানীও বর্ণনাটিকে জাল বলেছেন।[47]

৮. আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

إِنَّمَا الشَّفَاعَة يَوْم الْقِيَامَة لمن عمل الْكَبَائِر من أمتِي ثمَّ مَاتُوا عَلَيْهَا فهم فِي الْبَاب الأول من جَهَنَّم لَا تسود وُجُوههم وَلَا تزرق أَعينهم وَلَا يغلون بالأغلال وَلَا يقرنون مَعَ الشَّيَاطِين وَلَا يضْربُونَ بالمقامع وَلَا يطرحون فِي الأدراك مِنْهُم من يمْكث فِيهَا سَاعَة وَمِنْهُم من يمْكث يَوْمًا ثمَّ يخرج وَمِنْهُم من يمْكث شهرا ثمَّ يخرج وَمِنْهُم من يمْكث فِيهَا سنة ثمَّ يخرج وأطولهم مكثاً فِيهَا مثل الدُّنْيَا مُنْذُ يَوْم خلقت إِلَى يَوْم أفنيت وَذَلِكَ سَبْعَة آلَاف سنة...-

‘শাফা‘আত কেবলমাত্র আমার উম্মতের যারা কবীরা গুনাহের উপর মারা গেছে তাদের জন্য হবে। তারা জাহান্নামের প্রথম দরজায় থাকবে। তাদের মুখমন্ডল কালো হবে না, তাদের চোখ সবুজ হবে না, তাদেরকে বেড়ী পরানো হবে না, তাদেরকে শয়তানদের সাথে মিলিত করা হবে না, তাদেরকে লেŠহ-মুগুর দ্বারা পিটানো হবে না এবং জাহান্নামের তলদেশে নিক্ষেপ করা হবে না। সেখানে তাদের কেউ এক ঘণ্টা অবস্থান করবে, কেউ একদিন অবস্থান করে মুক্তি পাবে, কেউ একমাস অবস্থান করে মুক্তি পাবে এবং কেউ এক বছর অবস্থান করার পর মুক্তি পাবে। আর সর্বোচ্চ অবস্থান হবে পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে ধ্বংস হওয়ার সময় পরিমাণ। আর তা হ’ল সাত হাযার বছর...’।[48]

পর্যালোচনা : প্রথমত বর্ণনাটি জাল।[49] এর সনদে তিনজন দুর্বল রাবী আছেন। লায়ছ বিন সুলাইম জমহূর ওলামায়ে কেরামের নিকট যঈফ। ইয়া‘লা/মু‘লা বিন হিলাল ও ছালেহ বিন আহমাদ অপরিচিত রাবী।[50] হাফেয ইরাকী এর সনদকে যঈফ বলেছেন।[51] শায়খ আলবানী বলেন, হাদীছটি জাল হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হ’ল তা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ বিরোধী। কারণ বর্ণনাটিতে বলা হয়েছে তাদের মুখমন্ডল কালো হবে না। অথচ আল্লাহ বলেন, কালো হবে (আলে ইমরান ৩/১০৬)। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের বলবেন, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান আছে, তাকে জাহান্নাম হ’তে বের করে আনো। তারপর তাদের জাহান্নাম হ’তে এমন অবস্থায় বের করা হবে যে, তারা (পুড়ে) কালো হয়ে গেছে। অতঃপর তাদের বৃষ্টিতে বা হায়াতের নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে তারা সতেজ হয়ে উঠবে...।[52]

৯. ইবনু আববাস থেকে বর্ণিত একটি বর্ণনায় রয়েছে যে,الدّنْيَا سَبْعَةُ أَيّامٍ كُلّ يَوْمٍ أَلْفُ سَنَةٍ وَبُعِثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي آخِرِ يَوْمٍ مِنْهَا ‘দুনিয়া সাতদিন। প্রতিদিন এক হাজার বছরের সমান। আর রাসূল (ছাঃ)-কে  প্রেরণ করা হয়েছে এর শেষদিনে’।[53]

পর্যালোচনা : হাদীছটি শায়খ আলবানী রাসূলের নামে জাল বলে উল্লেখ করলেও তিনি ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে আছার হিসাবে ছহীহ বলেছেন যেমনটি সুহায়লীও বলেছেন।[54] কিন্তু ক্বিয়ামতের সময়সীমার ব্যাপারে এখান থেকে দলীল গ্রহণ করা যাবে না। যেমন তিনি বলেন,

وَفِي الْاِسْتِدْلِالِ بِهِ عَلَى صِحَّةِ الْحَدِيْثِ نَظَرٌ؛ لِأَنَّهُ مَوْقُوْفٌ، ومن المحتمل أن يكون ابن عباس تلقاه من بعض مسلمة أهل الكتاب، بل هذا هو الظاهر من بعض الطرق عنه

‘হাদীছটির বিশুদ্ধতা মেনে নিলেও তা দলীলযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে। কারণ তা মওকূফ। তাছাড়া হ’তে পারে যে, ইবনু আববাস (রাঃ) আহলে কিতাবী মুসলমানদের থেকে (ইসরাঈলী বর্ণনা) গ্রহণ করেছেন। বরং তাঁর থেকে বর্ণিত কোন কোন সূত্র থেকে সেটিই স্পষ্ট হয়। যেমন একটি বর্ণনায় এসেছে ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,

أَنَّ يَهُودَ كَانُوا يَقُولُونَ هَذِهِ الدُّنْيَا سَبْعَةُ آلَافِ سَنَةٍ، وَإِنَّمَا نُعَذَّبُ لِكُلِّ أَلْفِ سَنَةٍ يَوْمًا فِي النَّارِ وَإِنَّمَا هِي سَبْعَةُ أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٌ، فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي ذَلِكَ وَقَالُوا: (لَنْ تَمَسَّنا النَّارُ إِلَّا أَيَّامًا مَعْدُودَةً) إِلَى قَوْلِهِ (فِيهَا خَالِدُونَ)-  

‘ইহূদীরা বলে যে, এই দুনিয়ার বয়স সাত হাযার বছর। আর প্রত্যেক হাযার বছরের জন্য আমাদেরকে জাহান্নামে একদিন শাস্তি দেওয়া হবে। আর এটি নির্দিষ্ট সাতদিন। তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন, আর তারা বলে যে, (জাহান্নামের) আগুন আমাদের কখনোই স্পর্শ করবে না গণিত কয়েকটা দিন ব্যতীত....তারাই হ’ল জাহান্নামের অধিবাসী এবং সেখানেই তারা চিরকাল থাকবে (বাক্বারাহ ২/৮০-৮১)।[55] ইবনু আববাস (রাঃ) যে ইহূদীদের থেকে শুনেছিলেন তা নিম্নের বর্ণনাটি থেকে আরো স্পষ্ট হয়। তিনি বলেন, قَدِمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَالْيَهُودُ تَقُولُ: إِنَّمَا هَذِهِ الدُّنْيَا سَبْعَةُ آلَافِ سَنَةٍ ‘রাসূল (ছাঃ) যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন ইহূদীরা বলত, এই দুনিয়া সাত হাযার বছরের’ (হাকেম হা/৪১৭১)।[56] এজন্য শায়খ আলবানী এই আছারের ব্যাখ্যায় ইমাম সুয়ূতীর মুসলিম উম্মাহর  বয়স  ১৫০০  বছর  নির্ধারণ মতবাদের চরম বিরোধিতা করেছেন।[57]

সারকথা : রাসূল (ছাঃ) থেকে পৃথিবীর বয়সসীমা প্রসঙ্গে একটিও ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি। ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত আছারটি ছহীহ হ’লেও ইসরাঈলী সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় তা দলীলযোগ্য নয়। সুতরাং পৃথিবীর বয়স নির্দিষ্টভাবে সাত হাযার বছর বলে উল্লেখ করা জায়েয হবে না। কারণ পৃথিবীর বয়স সাত হাযার বছর নির্দিষ্ট করলে ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দিনক্ষণ সবার জানা হয়ে যাবে। যা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ বিরোধী। আল্লাহ বলেন,إِنَّ اللهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ خَبِيْرٌ- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটেই রয়েছে ক্বিয়ামতের জ্ঞান। আর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনিই জানেন মায়ের গর্ভাশয়ে কি আছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন মাটিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত’ (লোকমান ৩১/৩৪)

রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَفَاتِحُ الْغَيْبِ خَمْسٌ إِنَّ اللهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ، وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ، وَيَعْلَمُ مَا فِى الأَرْحَامِ، وَمَا تَدْرِى نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا، وَمَا تَدْرِى نَفْسٌ بِأَىِّ أَرْضٍ تَمُوتُ، إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ- ‘গায়েবের চাবিকাঠি পাঁচটি। আল্লাহ ব্যতীত যা কেউ জানে না। অতঃপর তিনি অত্র আয়াতটি পাঠ করেন’।[58]  আল্লাহ বলেন, وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ ‘আল্লাহর নিকটেই রয়েছে অদৃশ্যের চাবিকাঠি। তিনি ব্যতীত তা কেউ জানে না’ (আন‘আম ৬/৫৯)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এই পাঁচটি বস্ত্ত আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। এগুলি জানে না কোন নিকটবর্তী ফেরেশতা বা জানেন না কোন প্রেরিত নবী। অতএব যে ব্যক্তি এগুলির কিছু অংশ জানে বলে দাবী করবে, সে ব্যক্তি কুরআনকে অস্বীকার করবে। কেননা কুরআন তার বিপরীত বলেছে’ (কুরতুবী)

হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,وكذا كل حديث ورد فيه تحديد وقت يوم القيامة على التعيين؛ لا يثبت إسناده ‘যে সকল হাদীছে নির্দিষ্ট করে ক্বিয়ামতের সময়কাল বর্ণিত হয়েছে, তার কোনটিই ছহীহ সনদে প্রমাণিত হয়নি’।[59]

সেজন্য ইবনু রজব হাম্বলী সকল মতামত উল্লেখ করার পর বলেন, وما يذكر في ذلك فأنما هو ظنون لا تفيد علماً. ‘এ ব্যাপারে যা বলা হয়ে থাকে তার সবই ধারণা প্রসূত, কোন স্পষ্ট জ্ঞান নয়’।[60]

হাফেয ইবনু হাজার পৃথিবীর মেয়াদ নির্ধারণের প্রতিবাদ করে বলেন,وَقَدِ انْضَافَ إِلَى ذَلِكَ مُنْذُ عَهْدِ عِيَاضٍ إِلَى هَذَا الْحِين ثَلَاثمِائَة سنة وَقَالَ بن الْعَرَبِيِّ قِيلَ الْوُسْطَى تَزِيدُ عَلَى السَّبَّابَةِ نِصْفَ سبعها وَكَذَلِكَ الْبَاقِي من الدُّنْيَا مِنَ الْبَعْثَةِ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ قَالَ وَهَذَا بَعِيدٌ وَلَا يُعْلَمُ مِقْدَارُ الدُّنْيَا... فَالصَّوَابُ الْإِعْرَاضُ عَنْ ذَلِكَ ‘কাযী ইয়াযের সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আরো তিনশত বছর যোগ হয়েছে। ইবনুল ‘আরাবী বলেন, বলা হয়েছে, মধ্যমা অঙ্গুলী শাহাদাত অঙ্গুলী অপেক্ষা এক সপ্তাংশের অর্ধেক বেশী। অনুরূপ রাসূলের প্রেরণ থেকে ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার জন্য দুনিয়া অবশিষ্ট রয়েছে। তিনি বলেন, এটি বহু দূরের কথা। পৃথিবীর বয়সসীমা অজ্ঞাত বিষয়।...এগুলোকে এড়িয়ে যাওয়াই সঠিক।[61]

ত্বাবারী ও সুহায়লীসহ অন্যান্যদের হুরূফে মুকাত্ত্বা‘আতের ব্যাখ্যায় ক্বিয়ামতের দিন ধার্য করার প্রতিবাদ করে হানাফী বিদ্বান আল্লামা আলূসী বলেন,ومن أعجب ما رأيت ما زعمه بعض الإسلاميين من أن الساعة تقوم بعد ألف وأربعمائة وسبع سنين ‘বড় বিস্ময়কর একটি ব্যাপার যে, আমি কতিপয় ইসলামী চিন্তাবিদকে দাবী তুলতে দেখেছি চৌদ্দশ’ সাত বছর পর ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে’![62]

আল্লামা ছান‘আনী বলেন,اعلم أن مقدار الدنيا لا يعمله إلا الله، ولم يرد نص من كتاب ولا سنة في بيان ذلك، ووردت أحاديث وآثار ما لا يحصل بها جزم بأنه مقدار معين ‘জেনে রেখ, পৃথিবীর বয়সসীমা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। এ ব্যাপারে কিতাব ও সুন্নাতে কোন দলীল বর্ণিত হয়নি। এ বিষয়ে বেশ কিছু হাদীছ ও আছার বর্ণিত হয়েছে যেগুলোর দ্বারা দৃঢ়ভাবে নির্দিষ্ট সময়সীমার জ্ঞান অর্জিত হয় না।[63]

আবুল ফয়েয আল-গুমারী (১৯০১-১৯৬০) বলেন,

وكذا كل حديث فيه (الدنيا سبعة آلاف سنة) وإنما ذلك مأخوذ من الإسرائيليات وعن أهل الكتاب، أخذه الضعفاء فركبوا له الأسانيد ورفعوه إلى النبي صلى اللَّه عليه وسلم

‘অনুরূপ প্রত্যেকটি হাদীছ যেখানে বলা হয়েছে- ‘দুনিয়ার বয়স সাত হাযার বছর’- সেগুলো ইসরাঈলিয়াত এবং আহলে কিতাবদের থেকে গৃহীত বর্ণনা। যঈফ বর্ণনাকারীরা এগুলো গ্রহণ করে সনদ জুড়ে দিয়েছে এবং তা রাসূলের নামে চালিয়ে দিয়েছে।[64]

উপসংহার : ক্বিয়ামত আসন্ন- এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। মুসলিম উম্মাহর সময়কাল শেষের পথে সে ব্যাপারেও কোন বিতর্ক নেই। বরং ক্বিয়ামতকে নিকটবর্তী মনে করা ছাহাবীগণের আদর্শ। কারণ তারা সূর্য গ্রহণ হ’লে ক্বিয়ামতের আশঙ্কা করতেন।[65] আবার অনেক ছাহাবী ইবনু ছাইয়াদকে নিশ্চিত দাজ্জাল মনে করতেন।[66] যদিও দাজ্জাল এখনো আসেনি। কিন্তু তাই বলে ক্বিয়ামতের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা মোটেও জায়েয হবে না। আর এটা এজন্যই যে, আল্লাহ তা‘আলা এই জ্ঞান নিজের কাছে রেখেছেন। যাতে করে প্রত্যেক ব্যক্তি আমলের প্রতি ধাবিত হয় এবং আল্লাহ তার প্রতিদান দিতে পারেন (ত্ব-হা ২০/১৫)

তিনি বলেন,أَفَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَى أَنْ يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا بَيَاتًا وَهُمْ نَائِمُونَ، أَوَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَى أَنْ يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا ضُحًى وَهُمْ يَلْعَبُونَ، أَفَأَمِنُوا مَكْرَ اللهِ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ জনপদের অধিবাসীরা কি এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে যে, রাত্রিকালে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের উপর আমাদের শাস্তি আপতিত হবে না? অথবা জনপদের অধিবাসীরা কি এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে যে, দিনের বেলা খেল-তামাশায় ব্যস্ত থাকা অবস্থায় তাদের উপর আমাদের শাস্তি আপতিত হবে না? তারা কি তাহ’লে আল্লাহর পাকড়াওয়ের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে? বস্ত্ততঃ আল্লাহর পাকড়াওয়ের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয় কেবল তারাই যাদের ধ্বংস আসন্ন হয় (আ‘রাফ ৭/৯৭-৯৯)

পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরাম যারা এ বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন সেগুলো তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যা মাত্র। সেগুলো অহী নয় যে, বিশ্বাস করতে হবে। সুতরাং ঈমানদারদের জন্য কর্তব্য হ’ল ক্বিয়ামত অত্যাসন্ন ধরে নিয়ে আমল করে যাওয়া। ছাহাবীগণ যেমন ক্বিয়ামতের বড় আলামতগুলোকে নিকটতম মনে করে আমলের ক্ষেত্রে অগ্রগামী হ’তেন, সেভাবে আমল করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি ক্বিয়ামত এসে যায় এবং তখন তোমাদের কারো হাতে একটি খেজুরের চারা থাকে, তবে ক্বিয়ামত হওয়ার আগেই তার পক্ষে সম্ভব হ’লে যেন চারাটি রোপণ করে।[67] অর্থাৎ দুনিয়াবী জীবনের সর্বশেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নেকীর কাজ চালিয়ে যেতে হবে। স্মর্তব্য যে, ক্বিয়ামতের পূর্বে সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে

উদিত হবে, তখন কোন নতুন আমলের মূল্য থাকবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ছয়টি বিষয় প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই সৎকাজে অগ্রবর্তী হও। পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, ধোঁয়া নির্গত হওয়া, দাববাতুল আরয-এর আত্মপ্রকাশ, দাজ্জালের আবির্ভাব এবং বিশেষ বিপদ ও ব্যাপক বিপদ’।[68]

অতএব নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে নয় বরং আগামীকালই ক্বিয়ামত ধরে নিয়ে আমাদেরকে নিয়মিত আমল করে  যেতে হবে এবং পরকালীন পাথেয় অর্জন করতে হবে’।[69] রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অাঁধার রাতের মতো ফিৎনা আসার পূর্বেই তোমরা সৎ আমলের দিকে ধাবিত হও। সে সময় সকালে একজন মুমিন হ’লে বিকালে কাফির হয়ে যাবে। বিকেলে মুমিন হ’লে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার বিনিময়ে সে তার দ্বীন বিক্রি করবে’।[70]

মনে রাখা ভাল যে, পৃথিবী ধ্বংস হওয়া এবং ইমাম মাহদী সম্পর্কে অতি বাড়াবাড়ি প্রচারণা বর্তমান যুগে পথভ্রষ্টতার অন্যতম কারণ। শী‘আরা সহ কাদিয়ানী, বাহাই, জঙ্গীবাদী দায়েশ এবং বাংলাদেশের বায়েজীদ খান পন্নী ও তার হিযবুত তাওহীদ, তুরস্কের আদনান ওকতার ওরফে হারূন ইয়াহইয়া ইত্যাদি যত বিভ্রান্ত দল ও ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে বর্তমান যুগে, তারা সকলেই ইমাম মাহদী সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর আক্বীদার শিকার। এদের অনেকে আবার নিজেকেই ইমাম মাহদী বলে দাবী করেন। তাছাড়া ইসলামী খেলাফতের অবর্তমানে এবং বিশ্ব রাজনীতিতে মুসলমানদের দুর্বল অবস্থানের প্রেক্ষাপটে একদল মুসলমান পরাজিত মানসিকতা সম্পন্ন ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সেই প্রেক্ষাপট থেকে তারা ইমাম মাহদীতেই সমাধান খুঁজছে এবং তাঁর অপেক্ষাতে দিন অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুতরাং এই বিষয়ে কোন প্রকার বাড়াবাড়ি ও হঠকারিতা যেন আমাদের ঈমান-আক্বীদাকে ধ্বংস না করে ফেলে, সে ব্যাপারে হকপন্থী মুসলিম সমাজকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং সঠিক আমল করার তাওফীক দান করুন-আমীন! 


[1]. বুখারী হা/৫৫৭, ‘ছালাতের সময়সমূহ’ অধ্যায়, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের ছালাতের পূর্বে আছরের এক রাকা‘আত ছালাত পাবে’ অনুচ্ছেদ; আহমাদ হা/৬১৩১; তিরমিযী হা/২৮৭১; মিশকাত হা/৬২৭৪

[2]. আহমাদ হা/৫৯৬৬, ছহীহ লি-গায়রিহী; মু‘জামুল কাবীর হা/১৩৫১৯; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৮২২১

[3]. বুখারী হা/৩৪৫৯; মিশকাত হা/৬২৭৪

[4]. বুখারী হা/৫৫৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮৫২

[5]. ফাৎহুল বারী ৪/৩৩৯

[6]প্রাগুক্ত; আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আদম ও নূহের মাঝে ১০০০ বছর, নূহ ও ইবরাহীমের মাঝে ১০০০ বছর, ইবরাহীম ও মূসার মাঝে ৭০০ বছর, মূসা ও ঈসার মাঝে ১৫০০ বছর এবং ঈসা ও মুহাম্মাদের মাঝে ৬০০ বছরের ব্যবধান ছিল (হাকেম হা/৪১৭২); আইয়ূব বিন উৎবা থেকেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায় (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৪৭২১; ইবনু আসাকির ৬/১৭২)। তবে উক্ত বর্ণনাগুলি ইসরাঈলী রেওয়ায়াত ভিত্তিক হওয়ায় তা গ্রহণযোগ্য নয়।

[7]. ফাৎহুল বারী ৪/৩৪৪

[8]. ফাৎহুলবারী ৪/৩৩৮, হা/৫৫৭-এর আলোচনা

[9]. ফাৎহুল বারী ২/৩৯হা/৫৫৭-এর আলোচনা

[10]. ফাৎহুল বারী ৪/৪৪৯; উমদাতুল ক্বারী ১২/৯০; হাশিয়াতুস সিন্দীতে একই কথা উল্লেখ করা হয়েছে

[11]. ফাৎহুল বারী ১১/৩৫১ হা/৬১৪০-এর আলোচনা

[12]. ফাৎহুল বারী ৪/৪৪৮ হা/২১৫১-এর আলোচনা

[13]. রিসালাতুল কাশফ ফী মুজাওয়াযাতে হাযিহিল উম্মাহ, পৃ. ২০৬; আল-হাবী লিল ফৎওয়া ২/১০৪

[14]. আলবানী, যঈফাহ হা/৩৬১১-এর আলোচনা দ্রষ্টব্যيَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّي لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا إِلَّا هُوَ ثَقُلَتْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً يَسْأَلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا  يَعْلَمُونَ অনুবাদ: তারা তোমাকে প্রশ্ন করছে ক্বিয়ামত কখন হবে? বলে দাও, এর জ্ঞান কেবল আমার প্রতিপালকের কাছেই রয়েছে। তার নির্ধারিত সময় কেবল তিনিই প্রকাশ করে দিবেন। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে সেটি হবে একটি ভয়ংকর বিষয়। যা তোমাদের নিকটে আসবে আকস্মিকভাবে। তারা তোমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করে যেন তুমি এ বিষয়ে পূর্ণ অবগত! বলে দাও, এর জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না’ (আ‘রাফ ১৮৭)

[15]. ফাৎহুলবারী ১১/৩৪৯; তোহফা ৬/৩৮১

[16]. বুখারী হা/৩৯৪৮; হাকেম হা/৪১৭২

[17]. আহমাদ হা/১৪৬৫; আবুদাউদ হা/৪৩৫০; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৯৬৭; মিশকাত হা/৫৫১৪; ছহীহাহ হা/১৬৬৩; ছহীহুল জামে‘ হা/২৪৮১

[18]. আবুদাউদ হা/৪৩৫০-এর আলোচনা’ ও আহমাদ হা/১৪৬৭-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; ফাৎহুলবারী ১১/৩৫১

[19]. ছহীহাহ হা/১৬৪৩; ছহীহুল জামে‘ হা/২৪৮১

[20]. ‘আওনুল মা‘বূদ ১১/৩৪১, হা/৪৩৫০-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য

[21]. ইবনু মাজাহ হা/৪১২২; মিশকাত হা/৫২৪৩; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৮৯

[22]. ‘আওনুল মা‘বূদ ১১/৩৪১

[23]. ফাৎহুল বারী ১১/৩৫২

[24]. তারীখু ত্বাবারী ১/১০

[25]. তারীখু ত্বাবারী ১/১০, ১৬ ; ইবনু আবী হাতেম হা/১৩৯৮৭, ১৮৪৩৪; শাওকানী, ফাৎহুল কাদীর ৩/৫৪৫; রওযাতুল মুহাদ্দিছীন হা/২৬৪৪

[26]. ফাৎহুলবারী ১১/৩৫০-৩৫১

[27]. আল-মানারুল মুনীফ ১/৮০

[28]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/৮১৪৬; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১১৭৭২; বায়হাকী, দালায়েলুল নবুঅত হা/২৯৬০; সুহায়লী, আর-রওযুল উনুফ ৪/২৩০

[29]. আল-ইছাবাহ ক্রমিক সংখ্যা ৪১৮৪, ৪৭০৩, ৪/৮৪বিস্তারিত দ্র: আহমাদ বিন মুহাম্মাদ, আল মুদাওয়া লি-ইলালিল জামে‘ ৪/৬০, হা/৪২৭৮

[30]. আল-মুগনী ১/৩৩৯; সাখাভী, আল-আজওয়াবাতুল মুরযিয়াহ ৩/৯৩৭

[31]. তাহযীবুত তাহযীব ৪/১৮৫

[32]. যঈফুল জামে‘ হা/৩০১৩বিস্তারিত, রওযাতুল মুহাদ্দিছীন ৬/৩৭৩

[33]. বাকারাহ ১/৮০; মু‘জামুল কাবীর হা/১১১৬০; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১০৮৩৬; রওযাতুল মুহাদ্দিছীন হা/২১৯৪; সুহায়লী, আর-রওযুল উনুফ ৪/২৩০; বর্ণনাটি বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থেও রয়েছে

[34]. ফাৎহুল বারী ১০/২৪৬

[35]. যঈফাহ হা/৩৬১১-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য

[36]. তাফসীরে ইবনু আবী হাতেম হা/১৩৯৮৮; তাফসীরে ইবনু কাছীর ৫/৪৪০; তারীখুল খামীস ১/৩৪; দুররুল মানছূর ৬/৬৩

[37]. ড. আবু শাহবাহ, আল-ইসরাঈলিয়াত ওয়াল মওযূ‘আত ১/৩৬৫-৩৬৬

[38]. আল-মুজালাসা হা/৯১৭; সাখাভী, আল-মাক্বাছিদুল হাসানাহ হা/১২৪৩; সুয়ূতী, আল-হাভী লিল ফাতাওয়া ২/১০৭; ইহ্ইয়াউ ঊলূমিদ্দীন ৭/৬৯

[39]. আহমাদ হা/১৫৯১৮-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; আল-মাক্বাছিদুল হাসানাহ হা/১২৪৩, ১/৬৩৯; কাশফুল খাফা হা/২৭৯৯, ২/৩১৪

[40]. আল মাক্বাছিদুল হাসানাহ হা/১২৪৩, ১/৬৯৩; ইসমাঈল আজলূনী, কাশফুল খাফা, ২/৩১৪

[41]. ইবনু আসাকির ২৩/১৩৩; আল-হাভী ২/১০৫

[42]. যঈফাহ হা/৩৬১১-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য

[43]. নাবীল বিন মানছূর, আনীসুস সারী ৪/৩১১০

[44]. কানযুল উম্মাল হা/১৬৪৫৯

[45]. হজ্জ ২২/৪৭)-(তারীখে জুরজান ১/১৪০; ফালাকী, আল-ফাওয়ায়েদ ২/৮৮ ; আল-হাভী ২/১০৫

[46]. ইবনুল জাওযী, আল-মাওযূ‘আত ৩/২৪৩; আনীসুস সারী ৪/৩১১০

[47]. যঈফাহ হা/৩৬১১-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ৮/১০১

[48]. হাকীম তিরমিযী, নাওয়াদিরুল উছূল ২/৩৬; ইবনু আবী হাতেম হা/১২৩২৮; তাফসীরে ইবনু কাছীর ৪/৫২৬, সূরা হিজরের ২-৩ আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য; ইহয়াউ উলূমিদ্দীন ১/১৬৭৬

[49]. যঈফাহ হা/৫৩৮১

[50]. নাবীল বিন মানছূর, আনীসুস সারী ৪/৩১১০

[51]. তাখরীজু আহাদীছিল ইহ্ইয়া হা/৪১৩৭, ৯/১৩৭; ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৫/৩১২

[52]. বুখারী হা/২২; মুসলিম হা/১৮৪; মিশকাত হা/৫৫৮০

[53]. সুয়ূতী, আল-লাআ’লিল মাছনূ‘আ ২/৩৬৯; সুহায়লী, আর-রওযুল উনুফ ৪/২৩৮; উমদাতুল ক্বারী ৫/৫২-৫৩

[54]. আর-রওযুল উনুফ ৪/২৩৮।

[55]. যঈফাহ হা/৩৬১১-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য

[56]. উল্লেখ্য যে, উক্ত আছারটিকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে জামে‘আ ক্বাসেমিয়া নরসিংদী’র প্রধান মুহাদ্দিছ মুফতী কাযী ইবরাহীম পৃথিবীর মূল বয়স ৭০০০ উল্লেখ করেছেন এবং অপর বর্ণনায় উল্লেখিত ৫০০ বছর বোনাসসহ তা মোট ৭৫০০ বছর। তাঁর মতে, আদম (আঃ) থেকে শুরু করে রাসূল (ছাঃ) পর্যন্ত পৃথিবীর বয়স ৬ হাযার বছর ধরে নিলে বাকি রয়েছে ১৫০০ বছর। এই ১৫০০ বছরের মধ্যে অতিক্রান্ত হয়েছে (১৪৩৮+মাক্কী জীবনের ১৩ বছর) ১৪৫১ বছর। অর্থাৎ মুসলিম জাতির বয়স অতিক্রান্ত হয়েছে ১৪৫১ বছর। সুতরাং বাকী রয়েছে আর ৪৯ বছর। যেহেতু অন্য হাদীছের বর্ণনামতে, ইমাম মাহদী ৭ বছর এবং ঈসা (আঃ) ৪০ বছর পৃথিবী শাসন করবেন। সুতরাং এই ৪৭ বছর বাদ দিলে থাকে (৪৯-৪৭) ২ বছর। অতএব তার মতে, ২০১৯/২০২০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যেই ইমাম মাহদীর আগমন ঘটতে পারে। এমনকি তিনি সম্প্রতি ঘোড়সওয়ার পরিবেষ্টিত এবং দাঁড়ি ছাটা অবস্থায় ইমাম মাহদীকে স্বপ্নে দেখেছেন বলেও দাবী করেছেন!- লেখক।

[57]. যঈফাহ হা/৩৬১১-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য

[58]. বুখারী হা/৪৬২৭

[59]. যঈফাহ হা/৩৬১১-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য

[60]. ফাৎহুল বারী ৪/৩৪৪

[61]. ফাৎহুল বারী ১১/৩৫০

[62]. তাফসীর রূহুল মা‘আনী ১৩/২১০

[63]. রিসালাহ শরীফাহ ৩০ পৃষ্ঠা

[64]. আল-মুদাওয়া লি-ইলালিল জামে‘ইছ ছগীর ৪/৬০-৬১, হা/৪২৭৮/১৮০২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য

[65]. বুখারী হা/১০৫৯; মুসলিম হা/৯১২; মিশকাত হা/১৪৮৪

[66]. বুখারী হা/৭৩৫৫; আবুদাউদ হা/৪৩৩১

[67]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৭৯; আহমাদ হা/১২৯২৫; ছহীহাহ হা/০৯

[68]. মুসলিম হা/২৯৪৭; মিশকাত হা/৫৪৬৫

[69]. বুখারী হা/৬৫১১; মুসলিম হা/২৯৫২; মিশকাত হা/৫৫১২

[70]. মুসলিম হা/১১৮; মিশকাত হা/৫৩৮৩





ছাহাবায়ে কেরাম কি আমাদের আদর্শ হওয়ার যোগ্যতা রাখেন? (২য় কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
সঊদী আরবের সঙ্গে একই দিনে ছিয়াম ও ঈদ পালনের পক্ষে-বিপক্ষে বাহাছ; বিপক্ষ দলের বিজয়
মক্কা-মদীনার বাইরে আলেম নেই? - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
কা‘বাগৃহের নীচে কবরস্থান! সংশয় নিরসন - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
ইছলামী জামাআত-বনাম আহলেহাদীছ আন্দোলন - মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কোরায়শী
পীরতন্ত্র : সংশয় নিরসন - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পরিচয় - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
বুখারী ও মুসলিম গ্রন্থদ্বয়ের পরিচয় (৫ম কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
উলুল আমর-এর সঠিক ব্যাখ্যা - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
গোপালপুরের নব আহলেহাদীছদের উপর নির্যাতিত - জামীলুর রহমান - কোরপাই, বুড়িচং, কুমিল্লা
পীরতন্ত্র! সংশয় নিরসন (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
প্রশ্ন (১৮/১৭৮) : হিজড়া পশু কুরবানী করা যাবে কি না?
আরও
আরও
.