প্রশ্ন : ছহীহ হাদীছের মাপকাঠি বা বৈশিষ্ট্য কি?
উত্তর : ছহীহ হাদীছের সংজ্ঞা থেকেই ছহীহ হাদীছের মাপকাঠি ও বৈশিষ্ট্য জানা যায়।
ছহীহ হাদীছের সংজ্ঞা :
مَا اِتَّصَلَ سَنَدُهُ بِنَقلِ العَدلِ الضَّابِطِ عَن مثله إِلَى مُنتَهَاهُ مِن غَيرِ شُذُوذٍ وَلاَ عِلَّةٍ-
‘যে
হাদীছ অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিক সনদে ন্যায়পরায়ন প্রখর স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন
ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত পৌঁছেছে আর তা (شاذ) ও নয় এবং معلل তথা
ত্রুটিযুক্তও নয়’।[1]
উলেখিত সংজ্ঞা থেকে জানা গেল, ছহীহ হাদীছের মাপকাঠি হচ্ছে তার সনদে পাঁচটি বিষয় বিদ্যমান থাকা : (১) মুত্তাছিল সনদ হওয়া (২) রাবী ন্যায়পরায়ণ হওয়া (৩) রাবী পূর্ণ সংরক্ষণকারী হওয়া (৪) شاذ না হওয়া (৫) ত্রুটিমুক্ত হওয়া।
(১) মুত্তাছিল সনদ হওয়া :
معناه أن كل راو من رواته قد أخذه مباشرة عمن فوقه من أول السند إلى منتهاه-
‘এর অর্থ হ’ল- হাদীছের প্রত্যেক রাবী তার ঊর্ধ্বতন রাবী থেকে সরাসরি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। আর এটা সনদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে’।
(২) রাবীর ন্যায়পরায়ণতা :
أي أن كل راو من رواته اتصف بكونه مسلماً بالغاً عاقلاً غير فاسق وغير مخروم المروءة-
অর্থাৎ ‘হাদীছের সনদের প্রত্যেক রাবী মুসলিম, প্রাপ্ত বয়স্ক, জ্ঞানী, ফাসিক্ব নয় এবং মানবিকতা বিবর্জিত নয়, এসবগুণে গুণান্বিত হওয়া’।
(৩) রাবী পূর্ণ সংরক্ষণকারী হওয়া :
أي أن كل راو من رواته كان تام الضبط، أما ضبط صدر أو ضبط كتاب-
অর্থাৎ ‘হাদীছের প্রত্যেক রাবীকে পরিপূর্ণরূপে সংরক্ষণশীল হ’তে হবে। বক্ষে সংরক্ষণ হোক অথবা গ্রন্থে সংরক্ষণ হোক’।
(৪) شاذ না হওয়া :
أي أن لا يكون الحديث شاذاً، والشذوذ هو مخالفة الثقة لمن هو أوثق منه-
অর্থাৎ হাদীছটি شاذ হ’তে পারবে না। আর شاذ হ’ল ثقة বা নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর হাদীছ তার চেয়েও অধিক নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর হাদীছের বিপরীত হওয়া।
(৫) ত্রুটিমুক্ত হওয়া :
أي أن لا يكون الحديث معلولا، والعلة سبب غامض خفي يقدح في صحة الحديث، مع أن الظاهر السلامة منه-
অর্থাৎ
‘হাদীছটি ত্রুটিযুক্ত না হওয়া। আর ত্রুটি হ’ল এমন সূক্ষ্ম দোষ, যা হাদীছের
বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি করে, বাহ্যিক দৃষ্টিতে ঠিক থাকার
পরেও’।[2]
প্রশ্ন :عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ تَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ হাদীছটি কি ছহীহ?
উত্তর :
প্রশ্নে উলিখিত হাদীছটি ছহীহ। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীছটি বর্ণনা শেষে
মন্তব্য করেছেন, هذا حديث حسن صحيح ‘এই হাদীছটি হাসান ছহীহ’।[3]
শু‘আইব আরনাউত্ব বলেন,حديث صحيح ورجاله ثقات ‘এ হাদীছ ছহীহ এবং এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।[4]
আল-হারুবী
বলেন, وهذا من أجود حديث فى أهل الشام ‘এটা সিরিয়াবাসীর উত্তম হাদীছের
অন্যতম’। আল-বায্যার বলেন, حديث ثابت صحيح ‘এটা প্রমাণিত ছহীহ হাদীছ’। ইবনু
আব্দিল বার্র বলেন, حديث ثابت ‘এটা প্রমাণিত হাদীছ’।[5] হাকিম নিসাপুরী
(রহঃ) বলেন, صحيح ليس له علة ‘হাদীছ ছহীহ, এর কোন ত্রুটি নেই।[6] যিয়া
আল-মাকদেসী একে ছহীহ বলেছেন।[7] আলামা নাছিরুদ্দীন আলবানীও একে ছহীহ
বলেছেন।[8]
(চলবে)
[1]. অধ্যাপক ড. মাহমুদ আত-ত্বাহান, তাইসীরু মুছত্বালাহিল হাদীছ (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি), পৃঃ ২১।
[2]. ঐ, পৃঃ ২১।
[3]. তিরমিযী হা/২৬৭৬ ‘ইলম’ অধ্যায়, ‘সুন্নাতকে গ্রহণ ও বিদ‘আতকে পরিহার করা’ অনুচ্ছেদ ২/৯৬ পৃঃ।
[4]. মুসনাদে আহমাদ হা/১৭১৮৪-এর আলোচনা দ্রঃ, ৪/১২৬।
[5]. আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ৮/১০৭।
[6]. ঐ; মুসনাদে আহমাদ হা/১৭১৪৪-এর আলোচনা দ্রঃ, ২৮/৩৭৩, টীকা-২।
[7]. ইত্তেবাউস সুন্নান ওয়া ইজতিনাবুল বিদ‘ ১/৭৯।
[8]. আবু দাউদ হা/৪৬০৭; মিশকাত হা/১৬৫; ছহীহাহ হা/৯৩৭, ৩০০৭।