রাসূল
(ছাঃ)-এর সীমাহীন মহানুভবতা ও অনুপম আদর্শে মুগ্ধ হয়ে অনেক ছাহাবী ইসলামের
সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। ইয়ামামার বনু হানীফ গোত্রের নেতা
ছুমামাহ ইবনু উছাল (রাঃ) ছিলেন তাদের অন্যতম। তার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী
বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত হাদীছে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) একদল অশ্বারোহী সৈন্য নজদের দিকে পাঠিয়েছিলেন। তারা ছুমামাহ ইবনু উছাল নামক বনু হানীফা গোত্রের এক লোককে ধরে আনলেন এবং মসজিদে নববীর একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখলেন। তখন নবী করীম (ছাঃ) তার কাছে গিয়ে বললেন, ওহে ছুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে উত্তর দিল, হে মুহাম্মাদ! আমার কাছে তো ভালই মনে হচ্ছে। যদি আমাকে হত্যা করেন তাহ’লে আপনি একজন খুনীকে হত্যা করবেন। আর যদি আপনি অনুগ্রহ করেন তাহ’লে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে অনুগ্রহ করবেন। আর যদি আপনি অর্থ-সম্পদ পেতে চান, তাহ’লে যতটা ইচ্ছা দাবী করুন। নবী করীম (ছাঃ) তাকে সেই অবস্থায় রেখে দিলেন।
এভাবে পরের দিন আসল। নবী করীম (ছাঃ) আবার তাকে বললেন, ওহে ছুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে বলল, আমার কাছে সেটিই মনে হচ্ছে যা আমি আপনাকে বলেছিলাম যে, যদি আপনি অনুগ্রহ করেন তাহ’লে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করবেন। তিনি তাকে সেই অবস্থায় রেখে দিলেন। এভাবে এর পরের দিনও আসল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে ছুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে বলল, আমার কাছে তা-ই মনে হচ্ছে যা আমি পূর্বেই বলেছি।
নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমরা ছুমামাহর বন্ধন খুলে দাও। তখন ছুমামাহ (রাঃ) নিকটবর্তী একটি খেজুর বাগানে প্রবেশ করে গোসল সেরে ফিরে আসল। অতঃপর ছুমামাহ মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল। (তিনি বললেন,) হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর কসম! ইতিপূর্বে আমার কাছে যমীনের উপর আপনার চেহারার চেয়ে অধিক অপসন্দনীয় আর কোন চেহারা ছিল না। কিন্তু এখন আপনার চেহারাই আমার কাছে সকল চেহারা অপেক্ষা অধিক প্রিয়। আল্লাহর কসম! আমার কাছে আপনার দ্বীন অপেক্ষা অধিক ঘৃণিত অন্য কোন দ্বীন ছিল না। এখন আপনার দ্বীনই আমার কাছে সকল দ্বীনের চেয়ে প্রিয়তর। আল্লাহর কসম! আমার মনে আপনার শহরের চেয়ে অধিক খারাপ শহর অন্য কোনটি ছিল না। কিন্তু এখন আপনার শহরটিই আমার কাছে সকল শহর অপেক্ষা অধিক প্রিয়। আপনার অশ্বারোহী সৈনিকগণ আমাকে ধরে এনেছে, সে সময় আমি ওমরাহর উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলাম। এখন আপনি আমাকে কী হুকুম করেন?
তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁকে সু-সংবাদ প্রদান করলেন এবং ওমরাহ আদায়ের নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি যখন মক্কায় আসলেন তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, বেদ্বীন হয়ে গেছ? তিনি উত্তরে বললেন, না, বরং আমি মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আর আল্লাহর কসম! নবী করীম (ছাঃ)-এর অনুমতি ব্যতীত তোমাদের কাছে ইয়ামামাহ থেকে গমের একটি দানাও আসবে না’ (বুখারী হা/৪৩৭২; মুসলিম হা/১৭৬৪; মিশকাত হা/৩৯৬৪)।
শিক্ষা :
১. প্রয়োজনে কাফের-মুশরিককে মসজিদে বেঁধে রাখা যায়। যাতে সে মুসলমানদের ইবাদত আদায়ের পদ্ধতি ও সুন্দর আচরণ নিকট থেকে দেখার সুযোগ পায়।
২. সদাচরণ মানুষের অন্তরে প্রভাব বিস্তার করে। যেভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ব্যবহার ছুমামার অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও রাসূল (ছাঃ) ছুমামাকে ক্ষমা করে দেওয়ায় ছুমামার অন্তর ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ফলে সে ইসলাম কবুল করে।
৩. এ হাদীছ দ্বারা ইসলাম গ্রহণের পূর্বে গোসল করার বিষয়টি জানা যায়।
৪. কোন বন্দীর ইসলাম গ্রহণের সম্ভাবনা থাকলে তার প্রতি সদাচরণ করা যায়। বিশেষ করে যার ইসলাম গ্রহণের কারণে তার কওমের ইসলাম গ্রহণের সম্ভাবনা থাকে।
৫. মুশরিকদের কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তারা তাকে ছাবীই বা ধর্মত্যাগী বলত। অর্থাৎ বাপ-দাদার ধর্ম থেকে বিচ্যুত বলত। যাতে মানুষ তার থেকে দূরে সরে যায় এবং তাকে তিরস্কার করে।
৬. মূর্তিপূজাকে ধর্ম বলা হয় না। কেননা সেটা শয়তানী কর্মকান্ড ও প্ররোচনা। যা মানুষের স্বভাব, দ্বীন ও বিবেক পরিপন্থী।
মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
পিঞ্জুরী, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ।