জিবরীল (আঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে অহী নিয়ে আসতেন। তিনি সরাসরি রাসূল (ছাঃ)-কে ছালাতের পদ্ধতি ও সময় সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তেমনি দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ও ছাহাবায়ে কেরামকে তিনি সরাসরি শিক্ষা দিয়েছেন। একদা দ্বীন শিক্ষা দিতে রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে তিনি আগমন করেন। এ সম্পর্কেই নিম্নোক্ত হাদীছ।-

আবূ খায়ছামা যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়া‘মার (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (ইয়াহইয়া ইবনু ইয়া‘মার) বলেন, সর্বপ্রথম তাক্বদীর সম্পর্কে বছরা শহরে মা‘বাদ আল-জুহানী কথা তোলেন। আমি (ইয়াহইয়া ইবনু ইয়া‘মার) এবং হুমায়েদ ইবনু আব্দুর রহমান আল-হিমায়ারী হজ্জ অথবা ওমরা আদায়ের জন্য মক্কা মু‘আযযামায় আসলাম। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম যে, যদি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কোন ছাহাবীর সাক্ষাৎ পাই তাহ’লে তাঁর কাছে এসব লোক তাক্বদীর সম্পর্কে যা বলে বেড়াচ্ছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম। সৌভাগ্যক্রমে মসজিদে নববীতে আমরা আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর ইবনে খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর দেখা পাই। আমরা তাঁর কাছে গিয়ে একজন তাঁর ডানপাশে এবং আরেকজন বামপাশে বসলাম। আমার মনে হ’ল, আমার সাথী চান যে, আমিই কথা বলি। আমি আরয করলাম, হে আবূ আব্দুর রহমান! (আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ)-এর কুনিয়াত ছিল আবূ আব্দুর রহমান)। আমাদের দেশে এমন কতিপয় লোকের আবির্ভাব হয়েছে, যারা কুরআন পাঠ করে এবং ইল্‌মে দ্বীন সম্পর্কে গবেষণা করে। (রাবী বলেন,) তিনি তাদের অবস্থা সম্পর্কে আরো কিছু উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, তারা মনে করে তাক্বদীর বলতে কিছু নেই। সবকিছু তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বললেন, তাদের সাথে তোমাদের দেখা হ’লে বলে দিও যে, তাদের সাথে আমার কোন সস্পর্ক নেই এবং আমার সঙ্গে তাদেরও কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহর কসম! যদি এদের কেউ ওহোদ পাহাড় পরিমাণ সোনার মালিক হয় এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে, তাক্বদীরের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত আল্লাহ তা কবুল করবেন না।

তারপর তিনি বললেন, আমাকে আমার পিতা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হাদীছ শুনিয়েছেন যে, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খিদমতে ছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমাদের কাছে এসে হাযির হ’লেন। তাঁর পরিধানের কাপড় ছিল সাদা ধবধবে, মাথার কেশ ছিল কাল কুচকুচে। তাঁর মধ্যে সফরের কোন চিহ্ন ছিল না। আমরা কেউ তাঁকে চিনি না। তিনি নিজের দুই হাঁটু নবী করীম (ছাঃ)-এর দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর তার দুই হাত নবী করীম (ছাঃ)-এর দুই উরুর উপর রাখলেন।

তারপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ইসলাম হ’ল, তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, ছালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রামাযানের ছিয়াম পালন করবে এবং বায়তুল্লাহ পৌঁছার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তার কথা শুনে আমরা বিস্মিত হ’লাম যে, তিনিই প্রশ্ন করেছেন আবার তিনিই তা সত্যায়ন করছেন।

অতঃপর আগন্তুক বললেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঈমান হ’ল আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনবে, আর তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন।

তারপর বললেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ইহসান হ’ল, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ, যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহ’লে ভাববে তিনি তোমাকে দেখছেন।

আগন্তুক বললেন, আমাকে ক্বিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, এ বিষয়ে  প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন। আগন্তুক বললেন, আমাকে এর আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তা হ’ল এই যে, দাসী তার প্রভুকে প্রসব করবে। আর নগ্নপদ, নগ্নদেহ দরিদ্র মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে।

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বললেন যে, অতঃপর আগন্তুক লোকটি প্রস্থান করলেন। আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তারপর রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন, হে ওমর! তুমি কি জানো, এই প্রশ্নকারী কে? আমি চললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সম্যক জ্ঞাত আছেন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তিনি হচ্ছেন জিবরীল। তিনি তোমাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন’ (মুসলিম হা/১০২, ১০৬)

শিক্ষা : আল্লাহ জিবরীল (আঃ) মারফত দ্বীনের বিভিন্ন বিধান রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিয়েছেন। আলোচ্য হাদীছটি যার বাস্তব উদাহরণ। সুতরাং একথা সুস্পষ্ট যে, দ্বীনের বিধান কারো মনগড়া নয়, বরং তা আল্লাহ প্রদত্ত। তাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেখানো পদ্ধতি মোতাবেক দ্বীন পালন করা যরূরী। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্বীনের বিধান যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দান করুন-আমীন!







রূহ কবয ও মৃত্যুকাল মুসলিম ও কাফিরের অবস্থা - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
হাদীছের উপরে আবূ বকর (রাঃ)-এর দৃঢ়তা - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা যাবে না - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
মুমিনদের শাফা‘আত - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
লি‘আনের বিধান প্রবর্তনের ঘটনা - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
ইয়াহ্য়াহ বিন যাকারিয়া (আঃ) ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পাঁচ উপদেশ - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
খুৎবাতুল হাজাতের গুরুত্ব ও ব্যক্তির উপরে তার প্রভাব - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এক যুবকের অদ্ভুত আবেদন - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
আল্লাহর রহমত ব্যতীত কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না - উম্মে হাবীবা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
মৃত্যুর ভয় - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
ছুটে যাওয়া সুন্নাত আদায় প্রসঙ্গে - .
যুলুম হ’ল অন্ধকার - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
আরও
আরও
.