ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সহ পরিচালনা পরিষদের বিভিন্ন পদে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। গত ৫ই জানুয়ারী’১৭ বৃহস্পতিবার ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সভায় এ পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটি ‘জামায়াতে ইসলামী’ নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক হিসাবেই পরিচিত ছিল। আগে থেকে উদ্যোগ থাকলেও বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৬ সালের ২রা জুন ব্যাংকটির ৩৩তম বার্ষিক সাধারণ সভায় নতুন শেয়ার হোল্ডার পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালকবৃন্দ নিয়োগের মাধ্যমে। এজন্য নতুন নতুন কোম্পানী তৈরী করে ব্যাংকটির পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। অবশেষে ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদের ২৪০তম সভায় বড় ধরনের এই পরিবর্তন আনা হয়। তবে উক্ত সভায় এমডি মোহাম্মাদ আব্দুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন না। বর্তমানে ১৮ জন পরিচালকের মধ্যে ৯ জন শেয়ার হোল্ডারদের প্রতিনিধি ও ৯ জন স্বতন্ত্র পরিচালক রয়েছেন। মূলতঃ তাঁরাই ব্যাংকটি পরিচালনায় মূল ভূমিকা রাখবেন। উক্ত ৯ জন স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে আছেন (১) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মাদ আফজাল (২) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম (৩) পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহা পরিদর্শক আব্দুল মাবুদ (৪) আইনজীবী বুরহানুদ্দীন আহমেদ ও (৫) বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান শাইনপুকুর সিরামিক ও নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির। এছাড়া বিদেশী শেয়ারধারীদের মধ্যে পরিচালক হিসাবে রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক আল-রাজী ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (জেদ্দা)।

ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ দুই বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানই হ’ল বিদেশী। এর মধ্যে একক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ইসলামী ব্যাংকের সবচেয়ে বেশী শেয়ার রয়েছে সঊদী আরবের আল-রাজী কোম্পানীর। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসাবে এবারেও ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ইউসুফ আল-রাজী। অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিতের বক্তব্য অনুযায়ী মূলতঃ তাঁরই সম্মতির ভিত্তিতেই বড় ধরণের এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।

সাবেক চেয়ারম্যান জামায়াতের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য আবু নাছের মুহাম্মাদ আব্দুজ জাহের ব্যাংকটির দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে দেশত্যাগ করার পর ২০১৫ সাল থেকে ভাইস চেয়ারম্যান ও ইবনে সিনা ট্রাস্টের প্রতিনিধি মুস্তাফা আনোয়ার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। একই সাথে তিনি ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছিলেন। এই সভায় তিনি উভয় পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন কমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব আরাস্ত্ত খান ও ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হন সাবেক সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানকে সরিয়ে নতুন এমডি হিসাবে ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি আব্দুল হামিদ মিঞাকে এবং ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হকের স্থলে সৈয়দ আহসানুল আলমকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একইসাথে মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল মতিনকে নির্বাহী কমিটি ও মো. জিল্লুর রহমানকে অডিট কমিটি এবং মোহাম্মাদ আব্দুল মাবুদকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান করে একাধিক কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। এছাড়া ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মাদ আফজাল।

দায়িত্ব গ্রহণের পর চেয়ারম্যান আরাস্ত্ত খান বলেন, ব্যাংকের দর্শন বা মৌলিক নীতির কোন পরিবর্তন হবে না। তবে এতদিন একটি বিশেষ দলের লোকদের কেবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ করা হবে। দেশের সব শ্রেণীর মেধাবী যেন এই ব্যাংকে নিয়োগ পেতে পারে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া নারী ও হিন্দুরাও এখন থেকে ইসলামী ব্যাংকে নিয়োগ পাবেন। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের সম্পদের পরিমাণ অনেক। এই ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারের বড় বড় প্রকল্পেও অর্থায়ন হবে।

ঐদিন সন্ধ্যায় প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে বর্তমান পরিচালনা পরিষদের পক্ষে ভাইস চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক আহসানুল আলম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ঈসার আমলে ঈসা, আর মূসার আমলে মূসার শাসন চলবে। এটাই নীতি। ইসলামী ব্যাংকও এই নীতির বাইরে নয়। এতদিন নির্দিষ্ট কিছু মানুষ ইসলামী ব্যাংকের সুবিধা পেয়েছে। নির্দিষ্ট যেলার লোকেরা নিয়োগ পেয়েছে। এখানে রাজনৈতিক ইসলামের চর্চা ছিল। তবে আমরাই প্রকৃত ইসলামী। তিনি বলেন, ৬/৭ মাস আগে যে কথা স্বপ্নের মত ছিল, এখন তা বাস্তব হয়েছে। চেয়ারম্যান আরাস্ত্ত খান বলেন, ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে ইসলামী শরী‘আহর সব বিধি-বিধান কঠোরভাবে পরিপালন করা হবে। ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সর্বদা অটুট রাখা হবে। সুনির্দিষ্ট অপরাধ ছাড়া কারও চাকুরী যাবে না। ইতিমধ্যে ব্যাংটির কর্মীদের জন্য ২০ শতাংশ  বেতন বাড়ানো হয়েছে এবং ৫টি করে বোনাস তাদের ব্যাংক একাউণ্টে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক ১৩টি প্রতিষ্ঠানের ৬৩ শতাংশের বেশী মালিকানা নিয়ে ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড যাত্রা শুরু করে। তবে গত দু’বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের মালিকানা ছেড়ে দেয়। এছাড়া দেশীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলি ছিল বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন, ইবনে সিনা ট্রাষ্ট, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ইসলামিক ইকোনমিক রিসার্চ ব্যুরো। এগুলি জামায়াতের প্রতিষ্ঠান হিসাবে খ্যাত। বর্তমান পরিবর্তনের ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মুক্ত হ’ল ইসলামী ব্যাংক।

বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের ১৪.০৬ শতাংশের মালিক হ’ল দেশের বৃহত্তম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ। তারা সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে গত ৭ মাসে ৭টি নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরী করে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ৭টি শেয়ার খরিদ করে। অতঃপর ৫ই জানুয়ারী’১৭ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ব্যাক্তিদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেয় ইসলামী ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পরিষদ। বর্তমানে এস আলম গ্রুপ হ’ল ইসলামী ব্যাংকের সবচেয়ে বড় দেশীয় শেয়ার হোল্ডার।






৯ম দেশ হিসাবে করোনা থেকে মুক্তি পেয়েছে তানজানিয়া
ব্রিটেনে ফুটপাথে ঘুমায় ২৪ হাযার ফকীর-মিসকীন
২ লাখ ৪০ হাযার সূদ দেয়ার পরও আসল ৪০ হাযার টাকা বাকি; দাদন ব্যবসায়ীর পক্ষে পুলিশ
ঢাকায় রোবট রেস্টুরেন্ট!
ক্ষুধার্ত সন্তানদের সান্ত্বনা দিতে মায়ের পাথর রান্না!
বিনা ভাড়ায় যাতায়াত সুবিধা লুক্সেমবার্গ
সৈকতে লাল জোয়ার
যন্ত্র নয়, মানুষের লোভই মানবসভ্যতার ভয়ের কারণ - -স্টিফেন হকিং
মেডিকেলে চান্স পেল ৫ মাস বয়সে পিতৃহারা দরিদ্র পরিবারের জমজ তিন ভাই
কাশ্মীর বিরোধ নিরসনে প্রস্তাব
আসামে মুসলমানদের উপর চাপানো হ’ল শর্ত সর্বোচ্চ দুই সন্তান, বহুবিবাহে ও সন্তান মাদ্রাসায় পড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা
মুসলিম নয়, কেবল শিখরা দাড়ি রাখতে পারবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে!
আরও
আরও
.