১. আমাদের আক্বীদা :
আমরা অন্তর, যবান ও আমল দ্বারা একথার সাক্ষ্য প্রদান করি যে, لا إله إلا الله ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই’। আল্লাহই প্রধান বিচারপতি, আইনপ্রণেতা, প্রয়োজন পূরণকারী, বিপদ দূরকারী এবং ফরিয়াদ শ্রবণকারী। প্রকৃতি বা স্বরূপ নির্ধারণ, সাদৃশ্য প্রদান এবং নির্গুণ সাব্যস্ত করা ছাড়াই আমরা আল্লাহর গুণাবলীকে মানি। তিনি সাত আসমানের উপরে স্বীয় আরশের উপরে সমুন্নত আছেন। যেমনটা তাঁর জন্য মানানসই। তাঁর জ্ঞান ও ক্ষমতা সৃষ্টিজগতের সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে। আমরা অন্তর, যবান ও আমল দ্বারা একথার সাক্ষ্য প্রদান করি যে, محمد رسول الله ‘মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল’। তিনি সর্বশেষ নবী, সকল সৃষ্টির ইমাম, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, সত্য পথপ্রদর্শক এবং তাঁর অনুসরণ আবশ্যক। তাঁর নবুঅত, ইমামত (নেতৃত্ব) ও রিসালাত কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তাঁর কথা, কাজ ও স্বীকৃতি সব প্রামাণ্য দলীল। তাঁর প্রকৃত অনুসরণের মধ্যে উভয় জগতের সফলতার নিশ্চয়তা রয়েছে এবং তাঁর নাফারমানীতে উভয় জগতের ব্যর্থতা ও ধ্বংসের নিশ্চয়তা রয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে এত্থেকে রক্ষা করুন!
আমরা কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে দলীল এবং সত্যের মানদন্ড হিসাবে মানি। কুরআন ও হাদীছ দ্বারা যেহেতু এটা প্রমাণিত আছে যে, মুসলিম উম্মাহ পথভ্রষ্টতার উপরে একত্রিত হ’তে পারে না,[1] সেহেতু আমরা ইজমায়ে উম্মতকেও[2] হুজ্জাত (দলীল) মানি। স্মর্তব্য যে, ছহীহ হাদীছের বিপরীতে ইজমা হয়-ই না। আমরা সকল ছাহাবীকে ন্যায়পরায়ণ এবং আমাদের প্রিয়ভাজন মানি। সব ছাহাবীকে হিযবুল্লাহ (আল্লাহর দল) এবং আল্লাহর ওলী মনে করি। তাঁদের প্রতি ভালবাসা পোষণ করাকে ঈমানের অঙ্গ মনে করি। যারা তাঁদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, আমরা তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করি। আমরা তাবেঈন, তাবে তাবেঈন এবং মুসলমানদের ইমাম যেমন ইমাম মালেক, শাফেঈ, আহমাদ বিন হাম্বল, আবু হানীফা, বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ প্রমুখকে ভালবাসি। যারা তাঁদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, আমরা তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করি।
তাওহীদ, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর রিসালাত এবং তাকদীরের উপরে আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। আমরা আদম (আঃ) থেকে শুরু করে মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত সকল নবী ও রাসূল-এর নবুঅত ও রিসালাতের স্বীকৃতি প্রদান করি। কুরআন মাজীদকে আল্লাহ তা‘আলার কালাম (বাণী) মনে করি। কুরআন মাজীদ মাখলূক (সৃষ্ট) নয়। আমরা ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধিরও প্রবক্তা। অর্থাৎ আমাদের দৃষ্টিতে ঈমান বেশী হয় এবং কমও হয়। আমাদের পূর্বসুরি আলেমগণ আহলে সুন্নাতের যে আক্বীদা বর্ণনা করেছেন, তার প্রতি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে। যেমন ইমাম ইবনু খুযায়মাহ, উছমান বিন সাঈদ আদ-দারেমী, বায়হাকী, ইবনু আবী আছেম, ইবনু মান্দাহ, আবু ইসমাঈল আছ-ছাবূনী, আব্দুল গণী মাকদেসী, ইবনু কুদামা, ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, আজুর্রী, লালকাঈ প্রমুখ। আল্লাহ তাঁদের সকলের প্রতি রহম করুন!
২. আমাদের মূলনীতি :
হাদীছ ছহীহ বা যঈফ হওয়ার ভিত্তি হচ্ছেন মুহাদ্দিছীনে কেরাম। যেই হাদীছের বিশুদ্ধতা বা বর্ণনাকারীর বিশ্বস্ততার ব্যাপারে মুহাদ্দিছগণের ঐকমত্য রয়েছে, সেই হাদীছ নিশ্চিত ও অকাট্যভাবে ছহীহ এবং বর্ণনাকারীও অবশ্যই বিশ্বস্ত। এভাবে যেই হাদীছের দুর্বলতা বা বর্ণনাকারীর ত্রুটির ব্যাপারে মুহাদ্দিছগণের ঐকমত্য রয়েছে, সেই হাদীছ নিশ্চিতভাবে ত্রুটিযুক্ত। যেই হাদীছের বিশুদ্ধতা ও দুর্বলতা এবং বর্ণনাকারীর বিশ্বস্ততা ও ত্রুটির ব্যাপারে মুহাদ্দিছগণের মধ্যে মতভেদ থাকবে (এবং সমন্বয় সাধন সম্ভব হবে না), তখন সর্বদা বিশ্বস্ত, অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞ মুহাদ্দিছগণের অধিকাংশের তাহকীক ও সাক্ষ্যকে ছহীহ বলে মেনে নিতে হবে। এ সকল মূলনীতিকে সামনে রেখে এই সংক্ষিপ্ত পুস্তিকায় কিছু মতভেদপূর্ণ মাসআলার ব্যাপারে ছহীহ তাহকীক পেশ করা হল। আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা তিনি যেন আমাদেরকে মুসলিম ও মুমিন হিসাবে জীবিত রাখেন এবং ইসলাম ও ঈমানের উপরেই মৃত্যু দেন। আমীন!
৩. আহলেহাদীছগণের ফযীলত :
এটা সম্পূর্ণ সঠিক যে, কুরআন মাজীদ উম্মতে মুহাম্মাদীকে মুসলিম উপাধি দিয়েছে। কিন্তু এ বাস্তবতাকেও ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে, মুসলমানদের একটি বিশেষ দল, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছের সাথে যাদের জ্ঞানগত ও আমলগত ভালবাসা ছিল, তারা নিজেদেরকে আহলেহাদীছ উপাধিতে ভূষিত করে আসছেন।[3] মুসলমানদের জন্য আহলে সুন্নাত, আহলেহাদীছ প্রভৃতি উপাধি অসংখ্য ইমাম থেকে প্রমাণিত। যেমন মুহাম্মাদ বিন সিরীন, ইবনুল মাদীনী, বুখারী, আহমাদ বিন সিনান, ইবনুল মুবারক, তিরমিযী প্রমুখ। কোন একজন নির্ভরযোগ্য ইমাম বা আলেম থেকে এর অস্বীকৃতি বর্ণিত নেই। এজন্য উক্ত উপাধিগুলো সঠিক হওয়ার ব্যাপারে ইজমা রয়েছে। সকল নির্ভরযোগ্য আলেম ‘আহলেহাদীছ’ ও ‘আছহাবুল হাদীছ’কে সাহায্যপ্রাপ্ত দলের হাদীছের হকদার বলে আখ্যা দিয়েছেন।[4]
জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى يُقَاتِلُوْنَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِيْنَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ- ‘আমার উম্মতের একটি দল ক্বিয়ামত পর্যন্ত সর্বদা হক-এর উপর লড়াই করবে বিজয়ী অবস্থায়’।[5]
এই হাদীছ সম্পর্কে আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীছ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, يعنى أهل الحديث অর্থাৎ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল আহলেহাদীছ।[6]
আছহাবুল হাদীছ ও আহলেহাদীছ দু’টিই একই জামা‘আতের বৈশিষ্ট্যগত নাম। ইমাম আহমাদ বিন সিনান আল-ওয়াসেতী (মৃঃ ২৫৯ হিঃ) বলেছেন,لَيْسَ فِي الدُّنْيَا مُبْتَدِعٌ إِلاَّ وَهُوَ يَبْغَضُ أَهْلَ الْحَدِيْثِ، وَإِذَا ابْتَدَعَ الرَّجُلُ نُزِعَ حَلاَوَةُ الْحَدِيْثِ مِنْ قَلْبِهِ- ‘দুনিয়াতে এমন কোন বিদ‘আতী নেই, যে আহলেহাদীছদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না। যখন কোন ব্যক্তি বিদ‘আত করে, তখন তার অন্তর থেকে হাদীছের স্বাদ ছিনিয়ে নেওয়া হয়’।[7]
আহলেহাদীছ ও আহলে আছারদের মর্যাদার জন্য খতীব বাগদাদীর শারফু আছহাবিল হাদীছ, যাহাবীর তাযকিরাতুল হুফফায এবং আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভীর ইমামুল কালাম (পৃঃ ২১৬) প্রভৃতি অধ্যয়ন করুন।
৪. মুহাদ্দিছগণের মাসলাক :
জনৈক ব্যক্তি শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেন যে, বুখারী, মুসলিম, আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, আবুদাঊদ তায়ালেসী, দারেমী, বাযযার, দারাকুৎনী, বায়হাকী, ইবনু খুযায়মাহ, আবু ইয়া‘লা মুছেলী (রহঃ) মুজতাহিদগণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, না কোন ইমামের মুক্বাল্লিদ ছিলেন? তিনি আল-হামদু লিল্লাহি রবিবল আলামীন বলে উত্তর দেন, أَمَّا الْبُخَارِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ فَإِمَامَانِ فِي الْفِقْهِ مِنْ أَهْلِ الْاِجْتِهَادِ. وَأَمَّا مُسْلِمٌ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه وَابْنُ خُزَيْمَةَ وَأَبُو يَعْلَى وَالْبَزَّارُ وَنَحْوُهُمْ فَهُمْ عَلَى مَذْهَبِ أَهْلِ الْحَدِيثِ. لَيْسُوا مُقَلِّدِينَ لِوَاحِدٍ بِعَيْنِهِ مِنَ الْعُلَمَاءِ ... وَهَؤُلاَءِ كُلُّهُمْ يُعَظِّمُوْنَ السُّنَّةَ وَالْحَدِيْثَ- ‘ইমাম বুখারী ও আবুদাঊদ দু’জনেই ফিক্বহের ইমাম ও মুজতাহিদ (মুত্বলাক্ব)। পক্ষান্তরে ইমাম মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, ইবনু খুযায়মাহ, আবু ই‘য়ালা, বাযযার প্রমুখ আহলেহাদীছ মাযহাবের উপরে ছিলেন। তারা কোন নির্দিষ্ট আলেমের মুক্বাল্লিদ ছিলেন না।... এঁরা সবাই সুন্নাহ ও হাদীছকে সম্মান করতেন’।[8]
ইমাম বায়হাকী স্বীয় প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘আস-সুনানুল কুবরা’তে (১০/১১৩) তাক্বলীদের বিরুদ্ধে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন। এজন্য মুহাদ্দিছগণের উপর খামাখা মিথ্যারোপ করতে গিয়ে এবং নিজেদের নম্বর বাড়ানোর জন্য তাদেরকে মুক্বাল্লিদদের মধ্যে শামিল করা ভুল। স্মর্তব্য যে, আহলেহাদীছ দ্বারা উদ্দেশ্য মুহাদ্দিছগণ এবং তাদের অনুসারীগণ।[9] আহলেহাদীছদের এটা অনেক বড় মর্যাদা যে, তাদের ইমামে আ‘যম বা বড় ইমাম শুধু নবী (ছাঃ)।[10]
৫. ছহীহায়েনের মর্যাদা :
এ বিষয়ে উম্মতের ইজমা রয়েছে যে, ছহীহায়েনের (ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিম) সকল মুসনাদ[11] মুত্তাছিল[12] মারফূ[13] হাদীছ ছহীহ এবং অকাট্যভাবে বিশুদ্ধ।[14]
শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ) বলছেন,أما الصحيحان فقد اتفق المحدثون على أن جميع ما فيهما من المتصل المرفوع صحيح بالقطع، وأنهما متواتران إلى مصنفيهما، وأنه كل من يهون أمرهما فهو مبتدع متبع غير سبيل المؤمنين- ‘ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিমের ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিছ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, এ দু’টি গ্রন্থের সকল মুত্তাছিল ও মারফূ হাদীছ অকাট্যভাবে ছহীহ। এই গ্রন্থ দু’টি তাদের সংকলকদ্বয় পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে পৌঁছেছে। যে ব্যক্তি এ দু’টোকে সম্মান করবে না সে বিদ‘আতী এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথের অনুসারী’।[15]
৬. তাক্বলীদ :
নবী নন এমন ব্যক্তির কথা বিনা দলীলে মানাকে তাক্বলীদ বলে।[16] এই সংজ্ঞার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর ইজমা রয়েছে।[17] ‘আল-ক্বামূসুল ওয়াহীদ’ অভিধানে তাক্বলীদের নিম্নোক্ত অর্থ লিপিবদ্ধ রয়েছে- ‘চিন্তা-ভাবনা না করে বা বিনা দলীলে অনুসরণ, অনুকরণ ও সোপর্দ করা। বিনা দলীলে অনুসরণ, চোখ বন্ধ করে কারো পিছে চলা, কারো অনুকরণ করা। যেমন- قَلَّدَ الْقِرْدُ الْإِنْسَانَ ‘বানরটি লোকটির অনুকরণ করল’।[18]
জনাব মুফতী আহমাদ ইয়ার নাঈমী বাদায়ূনী ব্রেলভী ইমাম গাযালী থেকে উদ্ধৃত করেছেন যে,اَلتَّقْلِيْدُ هُوَ قَبُوْلُ قَوْلٍ بِلاَ حُجَّةٍ ‘বিনা দলীলে কারো কোন কথা মেনে নেওয়াই হল তাক্বলীদ’।[19]
আশরাফ আলী থানবী দেওবন্দীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ‘তাক্বলীদের স্বরূপ কি এবং তাক্বলীদ কাকে বলে’? তিনি জবাবে বলেন, ‘বিনা দলীলে উম্মতের কারো কথা মেনে নেওয়াকে তাক্বলীদ বলে’। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ)-এর কথা মান্য করাকেও কি তাক্বলীদ বলা হবে’? তিনি বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর হুকুম মানাকে তাক্বলীদ বলা হবে না। সেটাকে ইত্তেবা (অনুসরণ) বলা হয়’।[20] স্মর্তব্য যে, উছূলে ফিক্বহে লিখিত আছে যে, কুরআন মানা, রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ মানা, ইজমা মানা, সাক্ষীদের সাক্ষ্যর ভিত্তিতে বিচার-ফায়ছালা করা, সাধারণ মানুষের আলেমদের নিকট প্রত্যাবর্তন করা (এবং মাসআলা জিজ্ঞাসা করে আমল করা) তাক্বলীদ নয়।[21]
মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহ আস‘আদী দেওবন্দী তাক্বলীদের পারিভাষিক অর্থ সম্পর্কে লিখেছেন যে, ‘বিনা দলীলে কারো কথা মেনে নেওয়া। তাক্বলীদের প্রকৃত স্বরূপ এটাই। কিন্তু ...।[22] প্রকৃত স্বরূপকে বাদ দিয়ে তথাকথিত দেওবন্দী ফকীহদের অপব্যাখ্যা কে শোনে।
আহমাদ ইয়ার নাঈমী ছাহেব লিখছেন যে, ‘এই সংজ্ঞা থেকে জানা গেল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অনুসরণ করাকে তাক্বলীদ বলতে পারি না। কেননা তাঁর প্রত্যেকটি কথা ও কাজ শারঈ দলীল। তাক্বলীদে শারঈ দলীলকে না দেখার প্রবণতা থাকে। এজন্য আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ‘উম্মাতী’ বলব, মুক্বাল্লিদ নয়। অনুরূপভাবে সাধারণ মুসলমানরা আলেমের অনুসরণ যেটা করে থাকে তাকেও তাক্বলীদ বলা যাবে না। কেননা কেউই ঐ আলেমদের কথা বা তাদের কাজকে নিজের জন্য হুজ্জাত (দলীল) বানায় না’।[23]
যে সম্পর্কে জানা নেই আল্লাহ সে কথার অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন (বণী ইসরাঈল ১৭/৩৬)। অর্থাৎ দলীলবিহীন কথার অনুসরণ নিষিদ্ধ। যেহেতু আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ)-এর কথা স্বয়ং দলীল এবং ইজমার হুজ্জাত হওয়ার ব্যাপারে দলীল কায়েম রয়েছে, সেজন্য কুরআন, হাদীছ ও ইজমাকে মানা তাক্বলীদ নয়।[24] আল্লাহ এবং রাসূল (ছাঃ)-এর বিপরীতে যেকোন ব্যক্তির তাক্বলীদ করা রিসালাতে শিরক (شرك فى الرسالة)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দ্বীনের মধ্যে রায়ের আলোকে ফৎওয়া দেয়ার নিন্দা করেছেন।[25] ওমর (রাঃ) আহলুর রায়কে রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের দুশমন আখ্যা দিয়েছেন (أَصْبَحَ أَهْلُ الرَّأْيِ أَعْدَاءَ السُّنَنِ)।[26] ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন যে, এই আছার সমূহের সনদ অত্যন্ত বিশুদ্ধ।[27]
মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেছেন,وَأَمَّا زَلَّةُ عَالِمٍ، فَإِنِ اهْتَدَى فَلاَ تُقَلِّدُوْهُ دِيْنَكُمْ ‘আলেমের ভুলের ব্যাপারে বক্তব্য হ’ল, যদি তিনি হেদায়াতের উপরেও থাকেন, তবুও তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে তার তাক্বলীদ করো না’।[28] উক্ত বর্ণনা সম্পর্কে ইমাম দারাকুৎনী বলেছেন,والموقوف هو الصحيح ‘আর (এটি) মাওকূফ (বর্ণনা) হওয়াই ছহীহ’।[29]
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)ও তাক্বলীদ থেকে নিষেধ করেছেন।[30] চার ইমামও (ইমাম মালেক, আবূ হানীফা, শাফেঈ ও আহমাদ বিন হাম্বল) তাদের নিজেদের এবং অন্যদের তাক্বলীদ করতে নিষেধ করেছেন।[31] কোন ইমাম থেকেও এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত নেই যে, তিনি বলেছেন ‘আমার তাক্বলীদ করো’। এর বিপরীতে একথা প্রমাণিত রয়েছে যে, চার মাযহাবের তাক্বলীদের বিদ‘আত হিজরী চতুর্থ শতকে শুরু হয়েছে।[32]
এ ব্যাপারে মুসলমানদের ইজমা রয়েছে যে, মূর্খতার অপর নাম তাক্বলীদ এবং মুক্বাল্লিদ জাহেল (মূর্খ) হয়ে থাকে।[33] ইমামগণ তাক্বলীদের খন্ডনে বই-পুস্তক লিখেছেন। যেমন ইমাম আবু মুহাম্মাদ কাসেম বিন মুহাম্মাদ আল-কুরতুবীর (মৃঃ ২৭৬ হিঃ) ‘আল-ঈযাহ ফির-রাদ্দি আলাল মুক্বাল্লিদীন’ (الإيضاح فى الرد على المقلدين) গ্রন্থটি।[34] পক্ষান্তরে কোন একজন নির্ভরযোগ্য ইমাম থেকে এটা অকাট্যভাবে প্রমাণিত নেই যে, তিনি তাক্বলীদের আবশ্যকতা বা বৈধতার ব্যাপারে কোন গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করেছেন। মুক্বাল্লিদরা পরস্পরের সাথে রক্তাক্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে।[35] একজন আরেকজনকে কাফের আখ্যা দিতে থাকে।[36] তারা বায়তুল্লাহতে চার মুছাল্লা কায়েম করে মুসলিম উম্মাহকে চার ভাগে বিভক্ত করেছে। চার আযান, চার ইকামত এবং চার ইমামত! যেহেতু প্রত্যেক মুক্বাল্লিদ নিজ ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে নিজ ইমাম ও অনুসরণীয় ব্যক্তির সাথে বন্ধনযুক্ত রয়েছে, সেজন্য তাক্বলীদের কারণে মুসলিম উম্মাহর মাঝে কখনো ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাই আসুন! আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কুরআন ও সুন্নাহর রজ্জুকে অাঁকড়ে ধরি। কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যেই দোজাহানের সফলতার পূর্ণ নিশ্চয়তা রয়েছে।
৭. ছালাত :
আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,
لَمَّا بَعَثَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم مُعَاذًا نَحْوَ الْيَمَنِ قَالَ لَهُ إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَى أَنْ يُوَحِّدُوا اللهَ تَعَالَى فَإِذَا عَرَفُوا ذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِى يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ، فَإِذَا صَلُّوا...
‘নবী করীম (ছাঃ) যখন মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)-কে ইয়েমেনে প্রেরণ করেন তখন তাকে বলেন, তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছ। সুতরাং তাদেরকে সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত দিবে। যখন তারা তাওহীদের পরিচয় লাভ করবে তখন তাদেরকে বলবে যে, আল্লাহ দিনে-রাতে তাদের উপরে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যখন তারা ছালাত আদায় করতে শুরু করবে...’।[37]
ফরয ও নফল ছালাতের সংখ্যা, রাক‘আত এবং সমস্ত বিস্তারিত বিবরণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বর্ণনা করে দিয়েছেন এবং স্বীয় উম্মতকে হুকুম দিয়েছেন যে, صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِى أُصَلِّى ‘তোমরা যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখেছ, সেভাবে ছালাত আদায় করো’।[38]
ছাহাবীগণ নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট থেকে ছালাতের পদ্ধতি শিখেছেন। তাঁরা সেই বরকতময় পদ্ধতিকে হাদীছ রূপে মানুষের নিকট পৌঁছিয়েছেন। এজন্য প্রমাণিত হল যে, মুসলিম উম্মাহ হাদীছসমূহ থেকে ছালাতের পদ্ধতি শিখেছে। উম্মতের যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ছালাতের পদ্ধতি ঐ হাদীছ সমূহের বিপরীত যেমন মালেকীদের হাত ছেড়ে দিয়ে ছালাত আদায় প্রভৃতি, তাদের উচিত হ’ল ছহীহ হাদীছ সমূহের আলোকে নিজেদের ছালাতকে সংশোধন করে নেয়া।
৮. ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ[39] :
(ছালাতের ওয়াক্ত সমূহের ব্যাপারে) হাদীছে জিব্রীলে আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সূর্য ঢলে যাওয়ার পরে যোহরের ছালাত পড়ান। অতঃপর বস্ত্তর ছায়া একগুণ হলে আছর পড়ান... এবং দ্বিতীয় দিন বস্ত্তর ছায়া একগুণ হলে যোহর এবং দুইগুণ হলে আছরের ছালাত পড়ান। গতকালের মতো সূর্যাস্তের পর মাগরিব পড়ান এবং বলেন যে, يَا مُحَمَّدُ هَذَا وَقْتُ الأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِكَ. وَالْوَقْتُ فِيمَا بَيْنَ هَذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ- ‘হে মুহাম্মাদ (ছাঃ)! এটাই হল আপনার পূর্ববর্তী নবীগণের ছালাতের ওয়াক্ত। আর ছালাতের সময় এই দুই সময়ের মধ্যবর্তী’। এ হাদীছটিকে ইমাম তিরমিযী (হা/১৪৯) প্রমুখ বর্ণনা করেছেন এবং এর সনদ হাসান।[40] এ জাতীয় হাদীছ সমূহ জাবের (রাঃ) প্রমুখ থেকেও উত্তম সনদ সমূহে বর্ণিত আছে। নিমবী হানাফী বলছেন, ‘আমি কোন সুস্পষ্ট ছহীহ বা যঈফ হাদীছ পাইনি, যা একথার প্রতি নির্দেশ করে যে, বস্ত্তর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত’।[41]
স্মর্তব্য যে, কিছু দেওবন্দী ও ব্রেলভী এ বিষয়ে অস্পষ্ট সন্দেহ পেশ করে থাকেন। অথচ উছূলে ফিক্বহে এ স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম রয়েছে যে, মানতূক[42] (منطوق) মাফহূম[43](مفهوم) -এর উপর প্রাধান্য লাভ করে।[44]
৯. নিয়তের মাসআলা :
এতে সন্দেহ নেই যে, নিয়তের উপরে আমলের ভিত্তি।[45] কিন্তু মনের সংকল্প ও পরিকল্পনাকে নিয়ত বলা হয়। সংকল্প ও পরিকল্পনার স্থান মন, মুখ নয়।[46] মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা নাতো নবী (ছাঃ) থেকে প্রমাণিত আছে, না কোন ছাহাবী থেকে আর না কোন তাবেঈ থেকে’...।[47]
১০. মোজার উপরে মাসাহ :
ইমাম আবুদাঊদ আস-সিজিস্তানী (রহঃ) বলছেন,
وَمَسَحَ عَلَى الْجَوْرَبَيْنِ عَلِىُّ بْنُ أَبِى طَالِبٍ وَابْنُ مَسْعُودٍ وَالْبَرَاءُ بْنُ عَازِبٍ وَأَنَسُ بْنُ مَالِكٍ وَأَبُو أُمَامَةَ وَسَهْلُ بْنُ سَعْدٍ وَعَمْرُو بْنُ حُرَيْثٍ وَرُوِىَ ذَلِكَ عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَابْنِ عَبَّاسٍ. ‘আলী বিন আবু ত্বালেব, ইবনু মাসঊদ, বারা ইবনু আযিব, আনাস বিন মালেক, আবু উমামা, সাহল বিন সা‘দ, আমর বিন হুরাইছ মোজার উপরে মাসাহ করেছেন। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব ও ইবনু আববাস (রাঃ) থেকেও মোজার উপরে মাসাহ বর্ণিত আছে’।[48]
ছাহাবায়ে কেরামের এই আছারগুলো মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা (১/১৮৮, ১৮৯), মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক (১/১৯৯, ২০০), ইবনু হাযম-এর মুহাল্লা (২/৮৪), দূলাবীর আল-কুনা (১/১৮১) প্রভৃতি গ্রন্থে সনদসহ মওজুদ রয়েছে। আলী (রাঃ)-এর আছারটি ইবনুল মুনযিরের ‘আল-আওসাত’ গ্রন্থে (১/৪৬২) ছহীহ সনদে মওজুদ রয়েছে। যেমনটি সামনে আসছে। ইমাম ইবনু কুদামা বলছেন, وَلِأَنَّ الصَّحَابَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ مَسَحُوا عَلَى الْجَوَارِبِ، وَلَمْ يَظْهَرْ لَهُمْ مُخَالِفٌ فِي عَصْرِهِمْ، فَكَانَ إجْمَاعًا ‘যেহেতু ছাহাবীগণ মোজার উপরে মাসাহ করেছেন এবং তাদের যুগে তাদের কোন বিরোধিতাকারী পরিদৃষ্ট হয়নি, সেজন্য এ বিষয়ে ইজমা রয়েছে যে, মোজার উপরে মাসাহ করা সঠিক’।[49] ছাহাবীগণের উক্ত ইজমার সমর্থনে মারফূ বর্ণনাসমূহও মওজুদ রয়েছে।[50]
মোজার (خفين) উপরে মাসাহ মুতাওয়াতির হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে।[51] জিরাবও (جراب) মোজার (خف) একটি প্রকার। যেমনটা আনাস (রাঃ), ইবরাহীম নাখঈ, নাফে প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে। যারা মোজার (جراب) উপরে মাসাহকে অস্বীকার করেন, তাদের নিকটে কুরআন, হাদীছ ও ইজমার একটিও সুস্পষ্ট দলীল নেই।
ইমাম ইবনুল মুনযির নায়সাপুরী (রহঃ) বলেছেন,
حدثنا محمد بن عبد الوهاب، ثنا جعفر بن عون، ثنا يزيد بن مردانبة ، ثنا الوليد بن سريع ، عن عمرو بن حريث، قال : رأيت عليا بال، ثم توضأ، ومسح على الجوربين-
মর্মার্থ :
১. আলী (রাঃ) পেশাব করলেন। অতঃপর ওযূ করলেন এবং মোজার উপরে মাসাহ করলেন।[52] এর সনদ ছহীহ।
২. আবু উমামা (রাঃ) মোজার উপরে মাসাহ করেছেন।[53] এর সনদ হাসান।
৩. বারা ইবনু আযিব (রাঃ) মোজার উপরে মাসাহ করেছেন।[54] এর সনদ ছহীহ।
৪. উকবা বিন আমর (রাঃ) মোজার উপরে মাসাহ করেছেন।[55] এর সনদ ছহীহ।
৫. সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) মোজার উপরে মাসাহ করেছেন।[56] এর সনদ হাসান।
ইবনুল মুনযির বলেছেন যে, ইমাম ইসহাক বিন রাহুয়াহ বলেছেন যে, ‘এই মাসআলায় ছাহাবীগণের মধ্যে কোন মতভেদ নেই’।[57] ইবনু হাযমও প্রায় এরূপই বলেছেন।[58] ইবনু কুদামা বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে ছাহাবীগণের ইজমা রয়েছে’।[59]
জানা গেল যে, মোজার উপরে মাসাহ জায়েয হওয়ার ব্যাপারে ছাহাবীগণের ইজমা রয়েছে। আর ইজমা শারঈ দলীল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَجْمَعُ اللهُ أُمَّتِي عَلَى الضَّلَالَةِ أَبَدًا ‘আল্লাহ আমার উম্মতকে কখনো ভ্রষ্টতার উপরে ঐক্যবদ্ধ করবেন না’।[60]
অতিরিক্ত তথ্য :
১. ইবরাহীম নাখঈ (রহঃ) মোজার উপরে মাসাহ করতেন।[61] এর সনদ ছহীহ।
২. সাঈদ বিন জুবায়ের (রহঃ) মোজার উপরে মাসাহ করেছেন।[62] এর সনদ ছহীহ।
৩. আতা বিন আবী রাবাহ মোজার উপরে মাসাহ-এর প্রবক্তা ছিলেন।[63]
প্রমাণিত হল যে, মোজার উপরে মাসাহ জায়েয হওয়ার ব্যাপারে তাবেঈগণেরও ইজমা রয়েছে। আল-হামদুলিল্লাহ।
১. কাযী আবু ইউসুফ মোজার উপরে মাসাহ-এর প্রবক্তা ছিলেন।[64]
২. মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ-শায়বানীও মোজার উপরে মাসাহ-এর প্রবক্তা ছিলেন।[65]
৩. ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) প্রথমে মোজার উপরে মাসাহ-এর প্রবক্তা ছিলেন না। কিন্তু পরে তিনি তাঁর মত পরিবর্তন করেছিলেন। وعنه أنه رجع إلى قولهما وعليه الفتوى ‘ইমাম ছাহেব থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি ছাহেবায়েনের মতের দিকে ফিরে এসেছিলেন। আর এর উপরেই ফৎওয়া’।[66]
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলছেন, সুফয়ান ছাওরী, ইবনুল মুবারক, শাফেঈ, আহমাদ এবং ইসহাক (বিন রাহুয়াহ) মোজার উপরে মাসাহ-এর প্রবক্তা ছিলেন (এই শর্তে যে, সেটা মোটা হবে)।[67]
জাওরাব (جورب) : سوت يا اون کے موزوں كو کہتے ہيں ‘সূতা বা পশমের মোজাকে জাওরাব বলা হয়’।[68]
সতর্কীকরণ :
কতিপয় ব্যক্তি সাইয়িদ নাযীর হুসাইন দেহলভী (রহঃ)-এর ফৎওয়া দ্বারা মোজার উপরে মাসাহ জায়েয না হওয়া প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। অথচ স্বয়ং সাইয়িদ নাযীর হুসাইন মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ) বলেছেন যে, ‘বাকী থাকল ছাহাবীগণের আমল। তাঁদের থেকে তো মোজার উপরে মাসাহ প্রমাণিত রয়েছে এবং ১৩ জন ছাহাবীর নাম সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, তাঁরা মোজার উপরে মাসাহ করতেন’।[69] এজন্য ইজমায়ে ছাহাবার বিপরীত হওয়ার কারণে সাইয়িদ নাযীর হুসাইন মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ)-এর মোজার উপরে মাসাহ বিরোধী ফৎওয়া অগ্রহণযোগ্য।
১১. ছালাতে বুকের উপরে হাত বাঁধা[70] :
হুল্ব আত-তাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, وَرَأَيْتُهُ يَضَعُ هَذِهِ عَلَى صَدْرِهِ ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি যে, তিনি তাঁর এই (হাত) তাঁর বুকের উপরে রাখতেন’।[71] এর সনদ হাসান। ছহীহ বুখারীতে (১/১০২, হা/৭৪০, ‘আযান’ অধ্যায়) সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছের ব্যাপকতাও (عموم) এর সমর্থক। নবী (ছাঃ) এবং কোন একজন ছাহাবী থেকে নাভির নিচে হাত বাঁধা অকাট্যভাবে প্রমাণিত নেই। পুরুষদের নাভির নিচে এবং মহিলাদের বুকের উপরে হাত বাঁধা কোন ছহীহ তো দূরের কথা যঈফ হাদীছ দ্বারাও প্রমাণিত নেই।
১২. ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ[72] :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ ‘ঐ ব্যক্তির ছালাত সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ে না’।[73] এই হাদীছটি মুতাওয়াতির।[74] এই হাদীছের রাবী (বর্ণনাকারী) উবাদা (রাঃ) ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ার প্রবক্তা ও বাস্তবায়নকারী ছিলেন।[75] অসংখ্য ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুক্তাদীকে ইমামের পিছনে জেহরী ও সের্রী উভয় ছালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার হুকুম দিয়েছেন। যেমন প্রসিদ্ধ তাবেঈ নাফে বিন মাহমূদ আল-আনছারী প্রসিদ্ধ বদরী ছাহাবী উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,فَلاَ تَقْرَءُوا بِشَىْءٍ مِنَ الْقُرْآنِ إِذَا جَهَرْتُ إِلاَّ بِأُمِّ الْقُرْآنِ ‘যখন আমি স্বশব্দে কুরআন পড়ব, তখন তোমরা সূরা ফাতিহা ব্যতীত কুরআন থেকে অন্য কিছু পড়বে না’।[76] এই হাদীছ সম্পর্কে ইমাম বায়হাকী বলেছেন, وهذا إسناد صحيح ورواته ثقات ‘এর সনদ ছহীহ এবং বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত’।[77] ইমাম দারাকুৎনী বলছেন, هَذَا إِسْنَادٌ حَسَنٌ وَرِجَالُهُ ثِقَاتٌ كُلُّهُمْ ‘এর সনদ হাসান এবং এর সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত’।[78] এ জাতীয় অন্যান্য হাদীছগুলোকে আমি আমার ‘আল-কাওয়াকিবুদ দুর্রিয়াহ ফী ওজূবিল ফাতিহা খালফাল ইমাম ফিল-জাহরিয়াহ’(الكواكب الدرية فى وجوب الفاتحة خلف الامام فى الجهرية) গ্রন্থে একত্রিত করে দিয়েছি।
অসংখ্য ছাহাবী ইমামের পিছনে জেহরী ও সের্রী উভয় ছালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার প্রবক্তা ও বাস্তবায়নকারী ছিলেন। যেমন আবু হুরায়রা, আবু সাঈদ খুদরী, আব্দুল্লাহ বিন আববাস, উবাদা বিন ছামিত, আনাস বিন মালেক, জাবের, আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আছ, উবাই ইবনু কা‘ব, আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) প্রমুখ। ছাহাবীগণের এ আছারগুলোকে আমি আমার ‘কান্ধলবী ছাহেব আওর ফাতেহা খালফাল ইমাম’ (আল-কাওয়াকিবুদ দুর্রিয়াহ) গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে সংকলন করেছি এবং মুহাদ্দিছীনে কেরাম থেকে সেগুলোর ছহীহ বা হাসান হওয়া প্রমাণ করেছি। আবু হুরায়রা (রাঃ) জেহরী ও সের্রী উভয় ছালাতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ার হুকুম দিয়েছেন।[79] তিনি বলেছেন যে, ‘যখন ইমাম সূরা ফাতিহা পড়ে তখন তোমরাও পড়ো এবং ইমামের পূর্বেই তা পড়া শেষ করো’।[80]
তাবেঈ ইয়াযীদ বিন শারীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, أنه سأل عمر عن القراءة خلف الإمام فقال : اقرأ بفاتحة الكتاب قلت : وإن كنتَ أنت؟ قال : وإن كنتُ أنا، قلت : وإن جهرتَ؟ قال : وإن جهرتُ-
‘তিনি ইমামের পিছনে কিরাআত সম্পর্কে ওমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সূরা ফাতিহা পড়ো। আমি বললাম, যদি আপনি (ইমাম) হন তবুও? তিনি বললেন, যদি আমি (ইমাম) হই তবুও। আমি বললাম, যদি আপনি সশব্দে কিরাআত পাঠ করেন? তিনি বললেন, যদি আমি স্বশব্দে কিরাআত পাঠ করি (তবুও ফাতিহা পড়ো)’।[81]
ইমাম হাকেম ও ইমাম যাহাবী একে ছহীহ বলেছেন। ইমাম দারাকুৎনী বলছেন, هذا اسناد صحيح ‘এই সনদ ছহীহ’।[82] এর সকল রাবী বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী। কুরআন ও হাদীছে এমন একটি দলীলও নেই, যেখানে সুস্পষ্টভাবে মুক্তাদীকে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। তাক্বলীদপন্থীদের নির্ভরযোগ্য আলেম মৌলভী আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছেন যে, لم يرد في حديث مرفوع صحيح النهى عن قراءة الفاتحة خلف الإمام وكل ما ذكروه مرفوعا فيه إما لا أصل له وإما لا يصح. ‘কোন মারফূ ছহীহ হাদীছে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ার নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়নি এবং এ ব্যাপারে (তারা) যেসকল মারফূ হাদীছ উল্লেখ করে থাকেন সেগুলো হয় ছহীহ নয় বা তার কোন অস্তিত্বই নেই’।[83]
কোন ছাহাবী থেকেও ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ার নিষিদ্ধতা প্রমাণিত নেই। ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র এ বিষয়ে আলেমদের ইজমা উল্লেখ করেছেন যে, ‘যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ল তার ছালাত পরিপূর্ণ হল এবং তাকে পুনরায় ছালাত ঘুরিয়ে পড়ার প্রয়োজন নেই’।[84] ইমাম ইবনু হিববানও উক্ত ইজমারই সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।[85] ইমাম বাগাবী বলছেন যে, ‘ছাহাবায়ে কেরামের একটি জামা‘আত জেহরী ও সের্রী ছালাত সমূহে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া ফরয হওয়ার প্রবক্তা। একথাই ওমর, উছমান, আলী, ইবনু আববাস, মু‘আয, উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে’।[86]
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলছেন যে,
وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا الْحَدِيثِ فِى الْقِرَاءَةِ خَلْفَ الإِمَامِ عِنْدَ أَكْثَرِ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَالتَّابِعِينَ وَهُوَ قَوْلُ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ وَابْنِ الْمُبَارَكِ وَالشَّافِعِىِّ وَأَحْمَدَ وَإِسْحَاقَ يَرَوْنَ الْقِرَاءَةَ خَلْفَ الإِمَامِ-
‘এই হাদীছের ভিত্তিতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করার ব্যাপারে অধিকাংশ ছাহাবী ও তাবেঈর আমল চালু আছে। আর এটাই মালেক বিন আনাস, ইবনুল মুবারক, শাফেঈ, আহমাদ ও ইসহাক বিন রাহুয়াহ-এর মত। এঁরা ইমামের পিছনে ফাতিহা পড়ার প্রবক্তা’।[87]
[চলবে]
[1]. মুস্তাদরাকে হাকেম ১/১১৬, হা/৩৯৯, ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে।
[2]. এখানে উম্মত বলতে ছাহাবায়ে কেরামকে বুঝানো হয়েছে। যেমন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ) বলেন, من ادعى الاجماع فهو كاذب ‘যে ব্যক্তি (ছাহাবীগণের পরে) ইজমা-এর দাবী করে সে মিথ্যাবাদী’ (ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ১/২৪)।-অনুবাদক।
[3]. খাতেমায়ে এখতেলাফ, পৃঃ ১০৭, ১০৮।
[4]. তিরমিযী ৪/৫০৫, বৈরূত ছাপা, হা/২২২৯।
[5]. মুসলিম হা/১৯২৩; মিশকাত হা/৫৫০৭ ‘ফিৎনা সমূহ’ অধ্যায়, ‘ঈসার অবতরণ’ অনুচ্ছেদ; খতীব বাগদাদী, মাসআলাতুল ইহতিজাজ বিশ-শাফিঈ, পৃঃ ৩৪, সনদ হাসান।
[6]. মাসআলাতুল ইহতিজাজ বিশ-শাফেঈ, পৃঃ ৩৫, সনদ ছহীহ।
[7]. হাকেম, মা‘রিফাতু উলূমিল হাদীছ, পৃঃ ৪, সনদ ছহীহ।
[8]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২০/৪০।
[9]. ঐ ৪/৯৫।
[10]. তাফসীর ইবনে কাছীর ৩/৫২, বণী ইসরাঈল ৭১ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্র.। আরো দেখুন : ঐ ১/৩৭৮, আলে ইমরান ৮১ ও ৮২ নং আয়াতের ব্যাখ্যা।
[11]. যে মারফূ বর্ণনার সনদ নবী (ছাঃ) পর্যন্ত মুত্তাছিল (অবিচ্ছিন্ন) তাকে মুসনাদ বলে (দ্র. ড. মাহমূদ আত-তহহান, তায়সীরু মুছত্বলাহিল হাদীছ (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ৯ম সংস্করণ, ১৪১৭ হি./১৯৯৬ খৃ.), পৃ. ১৩৫)। -অনুবাদক।
[12]. যে বর্ণনার সনদ মুত্তাছিল চাই তা মারফূ হোক বা মাওকূফ, তাকে মুত্তাছিল বলে (দ্র. ঐ, পৃ. ১৩৬)। -অনুবাদক।
[13]. যে বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ)-এর কথা, কর্ম, সমর্থন বা গুণ বর্ণিত হয়েছে তাকে মারফূ বলে (দ্র. ঐ, পৃ. ১২৮-২৯)। -অনুবাদক।
[14]. মুকাদ্দামা ইবনুছ ছালাহ, পৃঃ ৪১; ইবনু কাছীর, ইখতিছারু উলূমিল হাদীছ, পৃঃ ৩৫।
[15]. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, পৃঃ ২৪২।
[16]. মুসাল্লামুছ ছুবূত, পৃঃ ২৮৯।
[17]. ইবনু হাযম, আল-ইহকাম, পৃঃ ৮৩৬।
[18]. আল-ক্বামূসুল ওয়াহীদ, পৃঃ ১৩৪৬। আরো দেখুন : আল-মু‘জামুল ওয়াসীত, পৃঃ ৭৫৪।
[19]. জাআল হক, ১/১৫, পুরাতন সংস্করণ।
[20]. আল-ইফাযাতুল ইয়াওমিয়াহ/মালফূযাতে হাকীমুল উম্মাত ৩/১৫৯, বচন নং ২২৮।
[21]. মুসাল্লামুছ ছুবূত, পৃঃ ২৮৯; আত-তাকরীর ওয়াত তাহবীর ৩/৪৫৩।
[22]. উছূলুল ফিক্বহ, পৃঃ ২৬৭।
[23]. জাআল হক ১/১৬।
[24]. ইবনু হুমাম, আত-তাহরীর ৪/২৪১, ২৪২; ফাওয়াতিহুর রাহমূত ২/৪০০।
[25]. ছহীহ বুখারী হা/৭৩০৭, ২/১০৮৬।
[26]. ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন ১/৫৫।
[27]. ঐ।
[28]. ইমাম অকী‘, কিতাবুয যুহদ ১/৩০০, হা/৭১, সনদ হাসান; আবুদাঊদ, কিতাবুয যুহদ, পৃঃ ১৭৭, হা/১৯৩; হিলয়াতুল আওলিয়া ৫/৯৭; ইবনু আব্দিল বার্র, জামেউ বায়ানিল ইলম ওয়া ফাযলিহি ২/১৩৬; ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ৬/২৩৬; ইবনুল ক্বাইয়িম ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন (২/২৩৯) গ্রন্থে একে ছহীহ বলেছেন।
[29]. আল-ইলালুল ওয়ারিদাহ ৬/৮১, প্রশ্ন নং ৯৯২।
[30]. আস-সুনানুল কুবরা ২/১০, হা/২০৭০, সনদ ছহীহ।
[31]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/১০, ২১১; ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন ২/১৯০, ২০০, ২০৭, ২১১, ২২৮।
[32]. ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন ২/২০৮।
[33]. জামেউ বায়ানিল ইলম ২/১১৭; ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন ২/১৮৮, ১/৭।
[34]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১৩/৩২৯।
[35]. মু‘জামুল বুলদান ১/২০৯, ৩/১১৭; ইবনুল আছীর, আল-কামিল ৮/৩০৭, ৩০৮; অফায়াতুল আ‘য়ান ৩/২০৮।
[36]. যাহাবী, মীযানুল ই‘তিদাল ৪/৫২; আল-ফাওয়াইদুল বাহিয়াহ, পৃঃ ১৫২, ১৫৩।
[37]. ছহীহ বুখারী ১/১৯৬, হা/১৪৫৮, ২/১০৯৬, হা/৭৩৭২; মুসলিম ১/৩৬, হা/১৯ শব্দ বুখারীর।
[38]. ছহীহ বুখারী ১/৮৮, হা/৬৩১, ২/৮৮৮, হা/৬০০৮, ২/১০৭৬, হা/৭২৪৬।
[39]. ছালাতের ওয়াক্ত সমূহের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা দেখুন : মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ৪র্থ সংস্করণ, ২০১১, পৃ. ৫৩-৫৫। -অনুবাদক।
[40]. নিমবী হানাফী, আছারুস সুনান, পৃঃ ১২২, হা/১৯৪। তিনি বলেন, إسناده حسن ‘এর সনদ হাসান’।
[41]. আছারুস সুনান (উর্দূ অনুবাদ), পৃঃ ১৬৮, হা/১৯৯।
[42]. শব্দ উচ্চারণ করা মাত্রই যদি তার মর্ম বুঝা যায় তাহলে তাকে মানতূক বলে। -অনুবাদক।
[43]. শব্দ উচ্চারণ করা মাত্রই যদি তার মর্ম বুঝা না যায়, বরং ইঙ্গিতের মাধ্যমে বুঝা যায় তবে তাকে মাফহূম বলে। -অনুবাদক।
[44]. ফাৎহুল বারী ২/২৪২, ২৯৭, ৪৩০, ৪/৩৮২, ৩৮৬, ৯/৩৬৯, ১২/২০৩।
[45]. ছহীহ বুখারী ২/৯৯০, হা/৬৬৮৯; ছহীহ মুসলিম ২/১৪০, ১৪১, হা/১৯০৭ (১৫৫)।
[46]. ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা ১/১।
[47]. যাদুল মা‘আদ ১/২০১। বিস্তারিত দ্র. হাদিয়াতুল মুছল্লীন, হা/১।
[48]. আবুদাঊদ ১/২৪, হা/১৫৯।
[49]. আল-মুগনী ১/১৮১, মাসআলা নং ৪২৬।
[50]. আল-মুস্তাদরাক ১/১৬৯, হা/৬০২।
[51]. জুতা ব্যতীত যে বস্ত্ত দ্বারা পুরা পায়ের পাতা টাখনুর উপর পর্যন্ত ঢেকে রাখা হয়, তাকে ‘মোযা’ বলা হয়। চাই সেটা চামড়ার হৌক বা সুতী হৌক বা পশমী হৌক, পাতলা হৌক বা মোটা হউক’। আশারায়ে মুবাশশারাহ সহ ৮০ জন ছাহাবী মোযার উপর মাসাহর হাদীছ বর্ণনা করেছেন। এ হাদীছ মুতাওয়াতির পর্যায়ভুক্ত’। নববী বলেন, সফরে বা বাড়ীতে প্রয়োজনে বা অন্য কারণে মোযার উপর মাসাহ করা বিষয়ে বিদ্বানগণের ঐক্যমত রয়েছে (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃ. ৬২। -অনুবাদক।
[52]. ইবনুল মুনযির, আল-আওসাত ১/৪৬২, হা/৪৫৮।
[53]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ১/১৮৮, হা/১৯৭৯।
[54]. ঐ, ১/১৮৯, হা/১৯৮৪।
[55]. ঐ, ১/১৮৯, হা/১৯৮৭।
[56]. ঐ, ১/১৮৯, হা/১৯৯০।
[57]. ইবনুল মুনযির, আল-আওসাত ১/৪৬৪, ৪৬৫।
[58]. আল-মুহাল্লা ২/৮৬, মাসআলা নং ২১২।
[59]. আল-মুগনী ১/১৮১, মাসআলা নং ৪২৬।
[60]. হাকেম, আল-মুস্তাদরাক ১/১১৬, হা/৩৯৭, ৩৯৮। আরো দেখুন : সাইয়িদ নাযীর হুসাইন মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ)-এর ছাত্র হাফেয আব্দুল্লাহ গাযীপুরী (মৃঃ ১৩৩৭ হিঃ) রচিত ‘ইবরাউ আহলিল হাদীছ ওয়াল কুরআন মিম্মা ফিশ-শাওয়াহিদ মিনাত তুহমাতি ওয়াল বুহতান’, পৃঃ ৩২।
[61]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ১/১৮৮, হা/১৯৭৭।
[62]. ঐ ১/১৮৯, হা/১৯৮৯।
[63]. আল-মুহাল্লা ২/৮৬।
[64]. আল-হেদায়া ১/৬১।
[65]. ঐ ১/৬১, ‘মোজার উপরে মাসাহ’ অনুচ্ছেদ।
[66]. ঐ।
[67]. তিরমিযী হা/৯৯।
[68]. মুহাম্মাদ তাকী উছমানী দেওবন্দী, দরসে তিরমিযী ১/৩৩৪। আরো দেখুন : আয়নী, আল-বিনায়াহ ফী শারহিল হেদায়া ১/৫৯৭।
[69]. ফাতাওয়া নাযীরিয়া ১/২৩২।
[70]. ছালাতে বুকের উপরে হাত বাঁধা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা দ্রষ্টব্য : ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃ. ৮৩-৮৬। -অনুবাদক।
[71]. মুসনাদে আহমাদ ৫/২২৬, হা/২২০১৭।
[72]. সর্বাবস্থায় ছালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা এবং বিরোধীদের দলীলসমূহ ও তার জওয়াব-এর জন্য দেখুন : ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃ. ৮৮-৯৬। -অনুবাদক।
[73]. ছহীহ বুখারী ১/১০৪, হা/৭৫৬; ছহীহ মুসলিম ১/১৬৯, হা/৩৯৪ (৩৪)।
[74]. ইমাম বুখারী, জুযউল কিরাআহ, হা/১৯।
[75]. বায়হাকী, কিতাবুল কিরাআত, পৃঃ ৬৯, হা/১৩৩, সনদ ছহীহ। আরো দেখুন : আহসানুল কালাম ২/১৪২।
[76]. আবুদাঊদ ১/১২৬, হা/৮২৪; নাসাঈ ১/১৪৬, হা/৯২০; মিশকাত হা/৮৫৪।
[77]. কিতাবুল কিরাআত, পৃঃ ৬৭, হা/১২১।
[78]. দারাকুৎনী ১/৩২০, হা/১২৩৩।
[79]. ছহীহ মুসলিম ১/১৬৯, হা/৩৯৫ (৩৮); মুসনাদে হুমায়দী হা/৯৮০; ছহীহ আবু আওয়ানা ২/১২৮।
[80]. বুখারী, জুযউল কিরাআহ হা/২৩৭, ২৮৩। এর সনদ হাসান। আছারুস সুনান হা/৩৫৮।
[81]. আল-মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহায়েন ১/২৩৯, হা/৮৭৩।
[82]. দারাকুৎনী ১/৩১৭, হা/১১৯৮।
[83]. আত-তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ, পৃঃ ১০১।
[84]. ফাতাওয়াস সুবকী ১/১৩৮।
[85]. আল-মাজরূহীন ২/১৩।
[86]. শারহুস সুন্নাহ ৩/৮৪, ৮৫, হা/৬০৭।
[87]. তিরমিযী ১/৭০, ৭১, হা/৩১১।