(১) (ক) ৮ই যিলহজ্জ মক্কায় স্বীয় অবস্থানস্থল থেকে ইহরাম বেঁধে মিনায় গমন ও সেখানে দুপুরের পূর্বে অবস্থান। (খ) ৯ই যিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফা গমন ও সেখানে মাগরিব পর্যন্ত অবস্থান। (গ) মাগরিবের পর মুযদালেফা গমন ও সেখানে রাত্রিযাপন। অতঃপর ১০ই যিলহজ্জ ফজরের পর মিনায় প্রত্যাবর্তন এবং সূর্যোদয়ের পর ‘বড় জামরা’য় কংকর নিক্ষেপ। অতঃপর কুরবানী, মাথামুন্ডন ও মক্কায় গিয়ে ত্বাওয়াফে ইফাযাহ শেষে পুনরায় মিনায় প্রত্যাবর্তন। একইদিনে মক্কায় ফেরা ও ত্বাওয়াফে ইফাযাহ করা সম্ভব না হ’লে যিলহজ্জ মাসের মধ্যে এটি সম্পন্ন করবেন ও পূর্ণ হালাল হবেন। (ঘ) ১১, ১২ ও ১৩ই যিলহজ্জ মিনায় অবস্থান ও প্রতিদিন সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ার পর তিন জামরায় কংকর নিক্ষেপ। (ঙ) অতঃপর মিনা থেকে মক্কায় ফিরে বিদায়ী ত্বাওয়াফ শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন (মোট ৬ দিন)।

(২) ‘মীক্বাত’ থেকে ইহরামের কাপড় পরে ‘হজ্জে তামাত্তু’ পালনকারীগণ ওমরাহর নিয়ত করবেন এবং সংক্ষিপ্ত তালবিয়াহ বলবেন ‘লাববায়েক ওমরাতান’। ‘হজ্জে ‘ক্বিরান’ পালনকারীগণ একই সাথে হজ্জ ও ওমরাহর নিয়ত করবেন এবং সংক্ষিপ্ত ‘তালবিয়াহ’ বলবেন ‘লাববায়েক ওমরাতান ওয়া হাজ্জান’। হজ্জে ‘ইফরাদ’ পালনকারীগণ শুধুমাত্র হজ্জের নিয়ত করবেন এবং বলবেন ‘লাববায়েক হাজ্জান’।

বদলী হজ্জ হ’লে এবং মুওয়াক্কিল পুরুষ হ’লে তার নিয়ত করে সংক্ষিপ্ত ‘তালবিয়াহ’ বলবেন, ‘লাববায়েক ‘আন ফুলান’ (অমুকের পক্ষ হ’তে আমি হাযির)। আর মহিলা হ’লে বলবেন, ‘লাববায়েক ‘আন ফুলা-নাহ’। যদি ‘আন ফুলান বা ফুলা-নাহ বলতে ভুলে যান, তাতেও অসুবিধা নেই। নিয়তের উপরেই আমল কবুল হবে ইনশাআল্লাহ। অতঃপর সরবে ‘তালবিয়াহ’ পড়তে পড়তে কা‘বা গৃহে পৌঁছবেন।

(৩) কা‘বাকে বামে রেখে ‘হাজারে আসওয়াদ’ বরাবর ডাইনে সবুজ বাতি হ’তে ডান দিক থেকে ত্বাওয়াফ শুরু করে পুনরায় হাজারে আসওয়াদে এসে এক ত্বাওয়াফ শেষ করবেন। এসময় পুরুষেরা ‘ইযতিবা’ করবেন। অর্থাৎ ডান কাঁধ ফাঁকা করে বাম কাঁধের উপর চাদর রাখবেন। প্রথম তিন ত্বাওয়াফে একটু দ্রুত চলবেন। যাকে ‘রমল’ বলা হয়। কেবল ত্বাওয়াফে কুদূম ও ওমরার প্রথম তিন ত্বাওয়াফে ‘রমল’ করবেন, অন্য কোন ত্বাওয়াফে নয়। মহিলারা সর্বদা স্বাভাবিক পোষাকে ও স্বাভাবিক গতিতে চলবেন। এভাবে সাত ত্বাওয়াফ শেষ করবেন। ‘রুক্নে ইয়ামানী’ ও ‘হাজারে আসওয়াদ’-এর মধ্যে ‘রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়া ক্বিনা ‘আযাবান্না-র’ দো‘আটি বারবার পড়বেন।

(৪) ত্বাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইব্রাহীমের পিছনে অথবা হারামের যেকোন স্থানে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করবেন। এসময় সূরা ফাতেহা শেষে প্রথম রাক‘আতে ‘সূরা কাফেরূন’ ও দ্বিতীয় রাক‘আতে ‘সূরা ইখলাছ’ পাঠ করবেন। অন্য সূরাও পড়া যাবে। অতঃপর যমযমের পানি পান করবেন।

(৫) এরপর ছাফা ও মারওয়া সাঈ করবেন। প্রথমে ‘ছাফা’ পাহাড়ে উঠে কা‘বার দিকে মুখ করে দু’হাত তুলে কমপক্ষে তিন বার ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু; লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর; আ-য়েবূনা তা-য়েবূনা ‘আ-বেদূনা সা-জেদূনা লি রবিবনা হা-মেদূন; ছাদাক্বাল্ল-হু ওয়া‘দাহু ওয়া নাছারা ‘আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযা-বা ওয়াহদাহু’ দো‘আটি পড়ে ‘মারওয়া’র দিকে ‘সাঈ’ শুরু করবেন। অল্প দূর গিয়ে দু’টি দীর্ঘ সবুজ চিহ্নের মধ্যে কিছুটা দ্রুত চলবেন। তবে মহিলাগণ স্বাভাবিক গতিতে চলবেন। ‘ছাফা’ হ’তে ‘মারওয়া’ পর্যন্ত একবার ‘সাঈ’ হবে। এইভাবে সপ্তম বারে ‘মারওয়া’য় গিয়ে দো‘আ পাঠ শেষে ‘সাঈ’ সমাপ্ত হবে।

(৬) ‘সাঈ’ শেষে ডাইনে বেরিয়ে গিয়ে মাথা মুন্ডন করবেন অথবা সব চুল ছোট করে ছাঁটবেন। মহিলাগণ বেণীর অগ্রভাগ থেকে আঙ্গুলের মাথা পরিমাণ ছাঁটবেন।

(৭) ‘হজ্জে তামাত্তু’ পালনকারীগণ ত্বাওয়াফ-সাঈ শেষে ওমরাহ থেকে হালাল হবেন ও সাধারণ পোষাক পরবেন। কিন্তু ‘ক্বিরান’ ও ‘হজ্জে ইফরাদ’ পালনকারীগণ ইহরামের পোষাকে থেকে যাবেন।

(৮) ৮ই যিলহজ্জ সকালে মক্কায় স্বীয় অবস্থানস্থল থেকে ওযূ-গোসল সেরে ও সুগন্ধি মেখে হজ্জের ইহরাম বাঁধবেন। অতঃপর ‘লাববায়েক আল্লা-হুম্মা লাববায়েক, লাববায়েকা লা শারীকা লাকা লাববায়েক; ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক; লা শারীকা লাক’ বলে তালবিয়াহ পাঠ করতে করতে মিনার দিকে রওয়ানা হবেন।

(৯) মিনায় পৌঁছে যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজরের ছালাত পৃথক পৃথকভাবে নির্দিষ্ট ওয়াক্তে ‘ক্বছর’ সহ আদায় করবেন। দুই ওয়াক্তের ছালাত একত্রে জমা করবেন না।

(১০) ৯ তারিখ সূর্যোদয়ের পর ধীর-স্থিরভাবে ‘তালবিয়াহ’ ও ‘তাকবীর’ বলতে বলতে আরাফাহ ময়দানের দিকে যাত্রা শুরু করবেন ও সেখানে গিয়ে যেকোন স্থানে অবস্থান নিবেন। অতঃপর ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত তুলে দো‘আ-ইস্তেগফার ও যিকর-আযকারে রত হবেন। বিশেষ করে আল্লাহ যেন আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেন, সেই দো‘আ করবেন। অতঃপর হজ্জের খুৎবা শ্রবণ করবেন। অতঃপর সূর্য পশ্চিমে ঢলার পর এক আযান ও দুই এক্বামতে যোহর ও আছরের ছালাত ইমামের সাথে যোহরের আউয়াল ওয়াক্তে ‘ক্বছর’ সহ ‘জমা তাক্বদীম’ করবেন। না পারলে যার যার তাঁবুতে জমা ও ক্বছরের সাথে ছালাত পড়বেন। এ সময় প্রত্যেকের আযান দেওয়া যরূরী নয়।

(১১) সূর্যাস্তের পর আরাফাত থেকে মুযদালেফায় রওয়ানা হবেন। সেখানে পৌঁছে এক আযান ও দুই ইক্বামতে মাগরিবের তিন রাক‘আত ও এশার দু’রাক‘আত ছালাত ক্বছর সহ এশার আউয়াল ওয়াক্তে ‘জমা তাখীর’ করবেন। ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমাদের একটি বর্ণনা মতে, আযান ছাড়াই প্রত্যেকে দুই এক্বামতে ছালাত ‘জমা তাখীর’ করবেন।[1] অতঃপর ঘুমিয়ে যাবেন। ঘুম থেকে উঠে আউয়াল ওয়াক্তে ফজরের ছালাত আদায় করে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত তুলে দো‘আ-দরূদ ও যিকর-আযকারে লিপ্ত হবেন। অতঃপর আকাশ ফর্সা হ’লে সূর্যোদয়ের আগেই মিনা অভিমুখে রওয়ানা হবেন। এ সময় মুযদালেফা থেকে ৭টি কংকর সংগ্রহ করবেন।

(১২) মিনায় পৌঁছে সূর্যোদয়ের পর ‘জামরাতুল আক্বাবা’য় অর্থাৎ বড় জামরায় গিয়ে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন ও প্রতিবারে ‘আল্লাহু আকবার’ বলবেন। কংকর মারার পর একটু দূরে গিয়ে দু’হাত তুলে আল্লাহর নিকট প্রাণ ভরে দো‘আ করবেন। অতঃপর মাথা মুন্ডন করবেন অথবা সমস্ত মাথার ছোট করে চুল ছাঁটবেন। অতঃপর কুরবানী করবেন। তবে এগুলিতে আগপিছ হ’লে দোষ নেই। 

(১৩) এরপর ইহরাম খুলে ‘প্রাথমিক হালাল’ হবেন ও স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করবেন। এসময় স্ত্রী মিলন ব্যতীত বাকী সব কাজ করা যাবে।

(১৪) অতঃপর মক্কায় গিয়ে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ করবেন। এসময় তামাত্তু হাজীগণ ছাফা-মারওয়া সাঈ করবেন। কিন্তু ক্বিরান ও ইফরাদ হাজীগণ শুরুতে মক্কায় পৌঁছে ত্বাওয়াফ ও সাঈ করে থাকলে শেষে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ্’র পর আর সাঈ করবেন না।

(১৫) কা‘বা থেকে সেদিনই মিনায় ফিরে আসবেন ও সেখানে রাত্রি যাপন করবেন। অতঃপর ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে প্রতিদিন দুপুরে সূর্য ঢলার পর তিন জামরায় ৩´৭=২১টি করে কংকর নিক্ষেপ করবেন এবং প্রতিবার নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলবেন। ১ম ও ২য় জামরায় কংকর নিক্ষেপ শেষে একটু দূরে গিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে প্রাণ খুলে আল্লাহর নিকট দো‘আ করবেন।

(১৬) ১২ তারিখে কংকর মারার পর সূর্যাস্তের পূর্বেই যদি কেউ মক্কায় ফিরতে চান, তবে ফিরতে পারেন। কিন্তু ১২ তারিখে রওয়ানা হওয়ার পূর্বেই যদি মিনায় সূর্যাস্ত হয়, তাহ’লে সেখানেই অবস্থান করবেন ও ১৩ তারিখ অপরাহ্নে কংকর মেরে মক্কায় ফিরবেন।

(১৭) সবশেষে মক্কা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় ‘ত্বাওয়াফে বিদা’ বা বিদায়ী ত্বাওয়াফ করতে হবে। তবে ঋতুবতী ও নেফাসওয়ালী নারীদের জন্য এটা মাফ। ‘ত্বাওয়াফে বিদা‘র মাধ্যমে হজ্জ সমাপ্ত হবে ইনশাআল্লাহ।[2]

বি.দ্র. হজ্জের বিস্তারিত নিয়মাবলী জানার জন্য প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব রচিত ‘হজ্জ ও ওমরাহ’ বইটি পাঠ করুন!


[1]. শরহ নববী হা/১২১৮-এর আলোচনা ৮/১৮৮ পৃ.।

[2]. মুসলিম হা/১২১৮; মিশকাত হা/২৫৫৫; ‘বিদায় হজ্জের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ।






বিষয়সমূহ: হজ্জ ও ওমরাহ
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আকাঙ্ক্ষা : গুরুত্ব ও ফযীলত - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
মুসলিম নারীর পর্দা ও চেহারা ঢাকার অপরিহার্যতা (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
জ্যোতির্বিজ্ঞানের নিরিখে যেলাসমূহের মাঝে সময়ের পার্থক্যের কারণ - তাহসীন আল-মাহী
প্রগতি ও সংকট - আফতাব আহমদ রহমানী
ক্ষমা ও সহিষ্ণুতা : মুমিনের দুই অনন্য বৈশিষ্ট্য - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
জুম‘আর কতিপয় বিধান - মুহাম্মাদ আকমাল হুসাইন
সঠিক আক্বীদাই পরকালীন জীবনে মুক্তির উপায় - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
অনুমতি গ্রহণের আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
সংগঠনের প্রচার ও প্রসারে তাবলীগী ইজতেমার ভূমিকা - ড. এ এস এম আযীযুল্লাহ
ভূমিকম্পের টাইম বোমার ওপর ঢাকা : এখনই সচেতন হ’তে হবে - কামরুল হাসান দর্পণ
উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আহলেহাদীছগণের অগ্রণী ভূমিকা - ড. নূরুল ইসলাম
আরও
আরও
.