মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর তিনটি আমল ব্যতীত কোন আমল কাজে আসে না। ছাদাক্বায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম ও নেক সন্তানের দো‘আ।[1] ওছমান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর নবী করীম (ছাঃ) যখন অবসর গ্রহণ করতেন তখন তিনি সেখানে দাঁড়াতেন এবং উপস্থিত লোকদেরকে বলতেন, তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং ঈমানের উপর দৃঢ় রাখার জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ কর। কারণ এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে’।[2] মৃতের জন্য দো‘আ করতে হবে। কিন্তু এই দো‘আর পদ্ধতি কেমন হবে তা নিয়ে কিছু মানুষ বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে। এখন মুসলিম হিসাবে আমাদের করণীয় হ’ল রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের অনুসরণ। আর তা হ’ল মাইয়েতের জন্য একাকী ক্ষমা প্রার্থনা করা ও তার দৃঢ় থাকার জন্য দো‘আ করা। রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ লাশ দাফনের পর কখনো দলবদ্ধভাবে মুনাজাত করেননি। কারণ জানাযার ছালাতই মাইয়েতের জন্য শ্রেষ্ঠ মুনাজাত। রাসূল (ছাঃ) জনৈক ছাহাবীর জানাযার ছালাত সমাপ্ত করলে আরেক ছাহাবী আকাঙ্ক্ষা করে বলেছিলেন, আমি যদি এই মাইয়েত হ’তাম। কারণ জানাযায় তিনি মাইয়েতের জন্য হৃদয় স্পর্শী ও সুন্দর দো‘আ পাঠ করেছিলেন।[3] এই হাদীছ থেকে বুঝা যায়, দো‘আর মূল স্থান জানাযার ছালাত। মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার যে প্রথা সমাজে চালু আছে শরী‘আতে তার কোন ছহীহ ভিত্তি নেই। প্রচলিত পদ্ধতিকে বৈধ করার জন্য যে সকল বর্ণনা পেশ করা হয় তার কিছু জাল কিছু যঈফ, আবার কিছু অপব্যাখ্যা। যেমন-

1- عَنْ حُصَيْنِ بْنِ وَحْوَحٍ، أَنَّ طَلْحَةَ بْنَ الْبَرَاءِ لَمَّا لَقِيَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ مُرْنِي بِمَا أَحْبَبْتَ وَلَا أَعْصِي لَكَ أَمْرًا فَعَجِبَ لِذَلِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ غُلَامٌ، فَقَالَ لَهُ عِنْدَ ذَلِكَ: اذْهَبْ فَاقْتُلْ أَبَاكَ، قَالَ: فَخَرَجَ مُوَلِّيًا لِيَفْعَلَ، فَدَعَاهُ، فَقَالَ لَهُ: أَقْبِلْ فَإِنِّي لَمْ أُبْعَثْ بِقَطِيعَةِ رَحِمٍ، فَمَرِضَ طَلْحَةُ بَعْدَ ذَلِكَ فَأَتَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُوْدُهُ فِي الشِّتَاءِ فِيْ بَرْدٍ وغَيْمٍ، فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ لِأَهْلِهِ: لَا أَرَى طَلْحَةَ إِلَّا قَدْ حَدَثَ فِيهِ الْمَوْتُ فَآذِنُونِيْ بِهِ حَتَّى أَشْهَدَهُ وَأُصَلِّيَ عَلَيْهِ وعَجِّلُوهُ، فَلَمْ يَبْلُغِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَنِي سَالِمِ بْنِ عَوْفٍ حَتَّى تُوُفِّيَ، وجَنَّ عَلَيْهِ اللَّيْلُ، فَكَانَ فِيمَا قَالَ طَلْحَةُ: ادْفِنُونِي وَأَلْحِقُونِي بِرَبِّيْ عَزَّ وَجَلَّ، وَلَا تَدْعُوْا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِنِّيْ أَخَافُ الْيَهُوْدَ أَنْ يُصَابَ فِيْ سَبَبِيْ، فَأُخْبِرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ أَصْبَحَ، فَجَاءَ حَتَّى وَقَفَ عَلَى قَبْرِهِ، فَصَفَّ النَّاسُ مَعَهُ، ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ: اللَّهُمَّ الْقَ طَلْحَةَ يَضْحَكُ إِلَيْكَ وَتَضْحَكُ إِلَيْهِ-

১- হুসাইন বিন ওয়াহওয়াহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, ত্বালহা ইবনু বারা একদা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে ইচ্ছামত নির্দেশ দিন। আমি আপনার অবাধ্যতা করব না। নবী করীম (ছাঃ) এতে খুশি হ’লেন। কারণ সে ছোট বালক ছিল। তখন নবী করীম (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি গিয়ে তোমার বাবাকে হত্যা কর। বর্ণনাকারী বলেন, সে তা করার জন্য বেরিয়ে পড়ল। পরে তাকে ডেকে তিনি বললেন, তুমি ফিরে এসো। কারণ আমি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য প্রেরিত হয়নি। এরপর তালহা অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে রাসূল (ছাঃ) শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডা ও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় তাকে দেখতে এসে বললেন, ত্বালহা মৃত্যুর রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সুতরাং তোমরা আমাকে তার মৃত্যুর খবর জানাবে। যাতে আমি তার জানাযায় উপস্থিত থাকতে পারি। কিন্তু তারা তাড়াহুড়া করল। রাসূল (ছাঃ) বাণী সালেম বিন আওফ গোত্রের এলাকায় না পৌঁছতেই সে মারা গেল। এর মধ্যে রাত গভীর হয়ে গিয়েছিল। সে তার পরিবারকে আগেই বলেছিল আমি রাত্রে মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে দাফন করবে আর রাসূল (ছাঃ)-কে ডেকো না। কারণ আমি আশংকা করছি আমার কারণে তিনি ইহূদী কর্তৃক আক্রান্ত হ’তে পারেন। অতঃপর সকাল হ’লে রাসূল (ছাঃ)-কে সংবাদ দেওয়া হয়। ফলে তিনি এসে তার কবরের পাশে দাঁড়ান এবং লোকেরাও তাঁর সাথে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়ায়। তারপর তিনি তাঁর দু’হাত তুললেন এবং দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! ত্বালহার জন্য বংশধর অবশিষ্ট রাখুন যার দিকে আপনি সন্তুষ্ট হবেন আর সে আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে’।[4]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি কয়েকটি কারণে অগ্রহণযোগ্য। উক্ত হাদীছের শেষাংশ অর্থাৎ ‘অতঃপর তিনি দু’হাত তুললেন এবং দো‘আ করলেন...এই কথাটুকু তাবারানী ও আবু নাঈম ইস্ফাহানী ব্যতীত অন্য কোন হাদীছের গ্রন্থে নেই। এমনকি তাবারানীর মু‘জামুল আওসাত্ব গ্রন্থে হাদীছটি থাকলেও সেখানে হাত তোলার কথা নেই।[5] এটি ছহীহ হাদীছের সরাসরি বিরোধী। কারণ উক্ত হাদীছ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থেও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোথাও সেই অংশটুকু নেই। বিশেষ করে এই হাদীছটি ছহীহ বুখারীতে প্রায় ৮ জায়গায় এসেছে কিন্তু কোন স্থানে ঐ অতিরিক্ত অংশটুকু নেই।[6] তার মধ্যে একটি হ’ল-

عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عنهما قَالَ مَاتَ إنْسَانٌ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُوْدُهُ فَمَاتَ بِاللَّيْلِ فَدَفَنُوْهُ لَيْلًا فَلَمَّا أصْبَحَ أَخْبَرُوْهُ فَقَالَ مَامَنَعَكُمْ أَنْ تَعْلَمُوْنِىْ؟ قالُوْا كَانَ اللَّيْلُ فَكَرِهْنَا وَكَانَتْ ظُلْمَةً أنْ نَّشُقَّ عَلَيْكَ فَأتَى قَبْرَهُ فَصَلَّى عَلَيْهِ.

ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি মারা যায়, রাসূল (ছাঃ) যাকে দেখতে গিয়েছিলেন। সে রাত্রে মারা গেলে লোকেরা তাকে রাতেই দাফন করে ফেলে। সকাল হ’লে তারা রাসূল (ছাঃ)-কে সংবাদ দেয়। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমাকে জানাতে তোমাদেরকে কিসে বাধা দিল? তারা বলল, রাত্রির কারণে আমরা আপনাকে সংবাদ দেওয়া অপসন্দ করেছি। আর রাত্রিও ছিল প্রচন্ড অন্ধকার। তাই আমরা আপনাকে কী করে কষ্ট দেই। অতঃপর তিনি কবরের কাছে গেলেন এবং তার কবর সামনে করে ছালাত পড়লেন।[7] অন্য হাদীছে এসেছে, ‘তিনি তাদের ইমামতি করলেন আর তারা তাঁর পিছনে ছালাত আদায় করল’।[8] অন্যত্র এসেছে, ‘তিনি দাঁড়ালেন আর আমরা তাঁর পিছনে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালাম’।[9] এভাবে অন্যান্য বর্ণনাগুলোতেও একই শব্দ এসেছে। কিন্তু হাত তোলার ঐ বাড়তি অংশ নেই।

দ্বিতীয়তঃ উক্ত বর্ণনার সনদে অনেক ত্রুটি রয়েছে। ইবনুল কালবী (রহঃ) বলেন, বর্ণনাটি মুরসাল হিসাবে যঈফ। কারণ হাদীছটি সাঈদ বিন উরওয়াহ থেকে হুছাইন বিন ওয়াহওয়াহ বর্ণনা করেছে। অথচ উভয়ের সাথে কোনদিন সাক্ষাৎ হয়নি।[10] শায়খ আলবানী বলেন, এর সনদ অন্ধকারাচ্ছন্ন যঈফ (ضعيف مظلم)। ছাহাবী হুছাইন বিন ওয়াহওয়াহ (রাঃ) ব্যতীত সকল বর্ণনাকারী অপরিচিত।[11] নাবীল বিন মানছূর বলেন, বর্ণনাটি যঈফ, এর সনদে বহু মাজহূল বর্ণনকারী রয়েছে। সাঈদ বিন ওছমান বালাবী মাজহূল। কারণ ঈসা বিন ইউনূস ছাড়া কেউ তার থেকে হাদীছ বর্ণনা করেননি।[12] উরওয়া বিন সাঈদ সম্পর্কে যাহাবী বলেন, তার পরিচয় জানা যায় না।[13] হাফেয ইবনু হাজার উরওয়া বিন সাঈদ ও তার পিতা সাঈদ আনছারীকে মাজহূল রাবী বলে উল্লেখ করেছেন।[14]

তৃতীয়ত : তাদের মতামতের ভিত্তিতে বর্ণনাটিকে হাসান লিগায়রিহী ধরে নিলেও অত্র বর্ণনায় দলবদ্ধ মুনাজাতের পক্ষে দলীল পাওয়া যায় না। কারণ তখন রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বহু ছাহাবী ছিলেন অথচ তাদের কারো হাত উঠানোর কথা হাদীছটিতে উল্লেখ নেই। অথচ রাসূল (ছাঃ)-এর মাদানী জীবনে ছাহাবীদের সাথে নিয়ে বহু ছাহাবীর দাফনকার্য সম্পাদন করেছেন। কিন্তু কারো দাফনের পরে একবারো দলবদ্ধ মুনাজাত করেননি। একবার করলেও ছাহাবীগণ তা বর্ণনা করতেন। তাঁদের বর্ণনা না করাটাই কাজটি বিদ‘আত হওয়ার বড় প্রমাণ।

2- عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ رَأَيْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ أَتَى قَبْرَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَقَفَ فَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ انْصَرَفَ-

২. আবূ উমামা হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আনাস বিন মালেককে দেখলাম যে, তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর কবরের নিকটে এসে দাঁড়ালেন, অতঃপর হাত উত্তোলন করলেন। দীর্ঘক্ষণ হাত তুলে থাকার কারণে মনে করলাম যে, তিনি ছালাতের সূচনা করেছেন। এরপর তিনি নবী করীম (ছাঃ)-এর প্রতি সালাম দিয়ে ফিরে আসলেন’।[15] অনেকে এই আছার দ্বারা দাফনোত্তর মুনাজাতের পক্ষে দলীল গ্রহণ করে থাকেন। অথচ এই আছারে বিদ‘আতীদের পক্ষে কোন দলীল নেই। অত্র আছারে আনাস বিন মালেকের একাকী মুনাজাতের কথা বর্ণিত হয়েছে যা শরী‘আত সম্মত। এখানে তারা বিদ‘আত প্রসারের অপচেষ্টা করেছেন। এজন্য উবাই বিন কা‘ব, আবুদ্দারদা ও ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, اقْتِصَادٌ فِيْ سُنَّةٍ خَيْرٌ مِنْ اجْتِهَادٍ فِيْ بِدْعَةٍ ‘বিদ‘আতের পক্ষে চেষ্টা করা অপেক্ষা সুন্নাত পালনের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উত্তম’।[16]

3- عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ:  وَاللهِ لَكَأَنِّي أَرَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ، وَهُوَ فِي قَبْرِ عَبْدِ اللهِ ذِي الْبِجَادَيْنِ وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُمْ، يَقُولُ: أَدْلِيَا مِنِّي أَخَاكُمَا ، وَأَخَذَهُ مِنْ قِبَلِ الْقِبْلَةِ حَتَّى أَسْنَدَهُ فِي لَحْدِهِ، ثُمَّ خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَوَلَّاهُمَا الْعَمَلَ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ دَفْنِهِ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ رَافِعًا يَدَيْهِ يَقُولُ: اللهُمَّ إِنِّي أَمْسَيْتُ عَنْهُ رَاضِيًا فَارْضَ عَنْهُ، وَكَانَ ذَلِكَ لَيْلًا، فَوَاللهِ لَقَدْ رَأَيْتُنِي وَلَوَدِدْتُ أَنِّي مَكَانُهُ، وَلَقَدْ أَسْلَمْتُ قَبْلَهُ بِخَمْسَةَ عَشَرَ سَنَةً-

৩. আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর কসম আমি যেন এখনো তাবুক যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ)-কে দেখছি। যখন তিনি আব্দুল্লাহ যুল-বিজাদাইনের কবরে ছিলেন এবং আবুবকর ও ওমর (রাঃ) তাঁর সাথে ছিলেন। রাসূল (ছাঃ) তাঁদেরকে বলছিলেন, তোমাদের ভাইকে আমার নিকটে নিয়ে এসো। এরপর তিনি তাকে ক্বিবলার দিক থেকে লাহাদ কবরে নামালেন। অতঃপর তিনি কবর থেকে বের হয়ে তাদের দু’জনকে বাকী কাজগুলো সম্পাদন করার দায়িত্ব দিলেন। দাফনকার্য সম্পাদন করে তিনি ক্বিবলার দিকে দুই হাত উত্তোলন করে বললেন, হে আল্লাহ! আমি তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে সকাল করেছি। অতএব আপনিও তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। বর্ণনাকারী বলেন, এটি ছিল রাতের ঘটনা। আল্লাহর কসম! আমি আকাঙ্ক্ষা করছিলাম যে, যদি তার স্থানে আমি হ’তাম! অথচ আমি এর পনের বছর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম’।[17]

অত্র বর্ণনাটি কয়েকটি কারণে জাল ও বাতিল। হাদীছটি কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যার সবগুলো যঈফ। আল্লামা হায়ছামী বলেন, আববাদ বিন আহমাদ আরযামী মাতরূকুল হাদীছ।[18] ইমাম বাযযার হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, আব্দুর রহমান বিন মুহাম্মাদ ও সা‘দ বিন ছালত ছাড়া কেউ আ‘মাশ থেকে তিনি আবু ওয়ায়েল থেকে তিনি ইবনু মাসঊদ থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেননি।[19] শায়খ নাবীল বিন মানছূর কুয়েতী বলেন, মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান আরযামী ও আব্দুর রহমান বিন মুহাম্মাদ দু’জনই মাতরূকুল হাদীছ।[20] আরেক রাবী সা‘দ বিন ছালত যাকে ইবনু হিববান ছিক্বাহ রাবীর মধ্যে গণ্য করলেও তিনি বলেন, সে মাঝে মধ্যে অভিনব কিছু বলত।[21] শায়খ আলবানী সা‘দ বিন ছালতকে সমালোচিত রাবী বলে গণ্য করেছেন।[22] হাফেয ইবনু হাজার বলেন, সে হারূন বিন আবিল জাহম থেকে মুনকার হাদীছ বর্ণনা করত।[23] অত্র হাদীছটি অন্য একটি সনদে বর্ণিত হয়েছে, যা মুনকাতি‘।[24]

দ্বিতীয়তঃ হাদীছটি তাবারানী তার মু‘জামুল আওসাত্ব (হা/৯১১১), মুসনাদে বাযযার (হা/১৭০৬), ইবনুল কাইয়্যিমের যাদুল মা‘আদে (৩/৪৭১), ইবনু ইসহাকের কিতাবুল মাগাযীতে ও সীরাতে ইবনু হিশামে (২/২২৭)  বর্ণিত হ’লেও কোথাও হাত উত্তোলনের কথা নেই। এথেকে বুঝা যায় যে, বর্ণনাটি বহু দোষে দূষিত।[25] হাত উত্তোলনের বিষয়টি কেবল আবু নাঈম ইস্ফাহানী তার ‘মা‘রিফাতুছ ছাহাবা’ ও ‘হিলইয়াতুল আওলিয়া’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। অতএব অত্র বর্ণনায় হাত তুলে দলবদ্ধ মুনাজাতের কোন দলীল নেই।

তৃতীয়তঃ আব্দুল্লাহ যুল-বিজাদাইন (রাঃ)-এর দাফনকার্য সম্পাদনের সময় আবুবকর ও ওমরের মত ছাহাবীরা রাসূলের সাথে উপস্থিত ছিলেন। অথচ তারা হাত উত্তোলন করে মুনাজাত করেননি। করলে ইবনু মাসঊদ (রাঃ) অবশ্যই তা বর্ণনা করতেন।

4- عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ قَالَ حَضَرْتُ ابْنَ عُمَرَ فِى جِنَازَةٍ فَلَمَّا وَضَعَهَا فِى اللَّحْدِ قَالَ بِسْمِ اللهِ وَفِى سَبِيلِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللهِ. فَلَمَّا أُخِذَ فِى تَسْوِيَةِ اللَّبِنِ عَلَى اللَّحْدِ قَالَ اللَّهُمَّ أَجِرْهَا مِنَ الشَّيْطَانِ وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ اللَّهُمَّ جَافِ الأَرْضَ عَنْ جَنْبَيْهَا وَصَعِّدْ رُوحَهَا وَلَقِّهَا مِنْكَ رِضْوَانًا. قُلْتُ يَا ابْنَ عُمَرَ أَشَىْءٌ سَمِعْتَهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَمْ قُلْتَهُ بِرَأْيِكَ قَالَ إِنِّى إِذًا لَقَادِرٌ عَلَى الْقَوْلِ بَلْ شَىْءٌ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم-

৪. সাঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রাঃ) বলেন, আমি একদা ইবনু ওমর (রাঃ)-এর সাথে এক জানাযায় উপস্থিত হয়েছিলাম। যখন জানাযাকে লাহাদে রাখা হ’ল তখন তিনি বললেন, বিসমিল্লা-হি ওয়া ফী সাবীলিল্লা-হি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লা-হি। অতঃপর যখন লাহাদে ইট দেয়া শুরু হ’ল তখন তিনি বললেন, আল্লাহুম্মা আজিরহা মিনাশ শায়ত্ব-নির রাজীম ওয়া মিন আযাবিল কাবরি। আল্লা-হুম্মা জাফিল আরযা আন জানবাইহা ওয়া ছাইয়িদ রূহাহা ওয়া লাক্কিহা মিনকা রিযওয়ানা। আমি বললাম, হে ইবনু ওমর (রাঃ)! আপনি কি এটা রাসূল (ছাঃ) থেকে শুনেছেন না নিজে থেকেই বললেন? তিনি বললেন, আমি কি কোন কথা বলার সাধ্য রাখি? বরং আমি এটি রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে শুনেছি’।[26] অত্র হাদীছ দ্বারা কেউ কেউ দাফনোত্তর দলবদ্ধ মুনাজাতের দলীল গ্রহণ করে থাকে। অথচ এখানে এ বিষয়ে কোন দলীল নেই।

প্রথমতঃ বর্ণনাটি যঈফ। কারণ এর সনদে হাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান নামক একজন রাবী রয়েছে, যে সবার নিকটে যঈফ। এছাড়া ইদরীস আল-আওদী নামক আরেকজন মাজহূল রাবী রয়েছে।[27]

দ্বিতীয়তঃ অত্র হাদীছে হাত তুলে মুনাজাত করার কথা উল্লেখ নেই। বরং শরী‘আতে একাকী দো‘আ পাঠের যে বিধান রয়েছে ইবনু ওমর (রাঃ) তাই করছেন।

5- رُوِيَ أَنَّ النبي صلى اللهُ عليه وسلم صلى عَلَى جِنَازَةٍ فلما فَرَغَ جَاءَ عُمَرُ وَمَعَهُ قَوْمٌ فَأَرَادَ أَنْ يُصَلِّيَ ثَانِيًا فقال له النبي صلى اللهُ عليه وسلم الصَّلَاةُ عَلَى الْجِنَازَةِ لَا تُعَادُ وَلَكِنْ اُدْعُ لِلْمَيِّتِ وَاسْتَغْفِرْ له-

৫. বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (ছাঃ) কোন এক ব্যক্তির জানাযার ছালাত পড়ালেন। অতঃপর ওমর (রাঃ) ও তাঁর সাথে একদল লোক দ্বিতীয়বার ছালাত আদায় করার জন্য আসলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাঁকে বললেন, মাইয়েতের উপর ছালাত পুনরাবৃত্তি হয় না। বরং মাইয়েতের জন্য দো‘আ কর ও তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর’।[28] এই বর্ণনাটি পেশ করে অনেকে দাফনোত্তর মুনাজাতের দলীল গ্রহণ করে থাকে। অথচ এটি কোন হাদীছই নয়।

ইবনুল জাওযী বলেন, وهَذَا شَيْء لَا يعرف ‘এর ভিত্তিই জানা যায় না।[29] উপরন্তু অত্র বর্ণনায় মুনাজাতের কোন কথা নেই। অনুরূপ একাকী দো‘আর বহু বর্ণনা দিয়ে বিদ‘আতীরা দলবদ্ধভাবে মুনাজাতের দলীল পেশ করে থাকে। অথচ একটি বর্ণনাতেও হাত তুলে দলবদ্ধ মুনাজাতের কথা নেই। এজন্য ছাহাবীগণ বিদ‘আতের পক্ষে চেষ্টা করা অপেক্ষা ইবাদত পালনে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে উৎসাহিত করেছেন।

বিশ্ব বিখ্যাত ওলামায়ে কেরামের অভিমত :

বিশ্বের বিখ্যাত আলেমগণ দাফনোত্তর জামা‘আতবদ্ধ মুনাজাতকে বিদ‘আত বলে ফৎওয়া দিয়েছেন। নিম্নে কয়েকজন আলেমের ফৎওয়া উপস্থাপন করা হ’ল-

১. শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম বলেন, জানাযার ছালাতের সালাম ফিরানোর পরে মাইয়েতের জন্য দো‘আ করায় কোন বাধা নেই যদি তা বিদ‘আতের সাথে সংশ্লিষ্ট ও দলবদ্ধভাবে না হয়।[30] অর্থাৎ দলবদ্ধভাবে মুনাজাত করা যাবে না।

২. শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন (রহঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন,ليس هذا من سُنة الرسول عليه الصلاة والسلام ولا من سنة الخلفاء الراشدين رضي الله عنهم وإنما كان الرسول عليه الصلاة والسلام يرشدهم إلى أن يستغفروا للميت، ويسألوا له التثبيت، كل بنفسه وليس جماعة- ‘দলবদ্ধ মুনাজাত রাসূল (ছাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের কোন সুন্নাত নয়। রাসূল (ছাঃ) কেবল মাইয়েতের জন্য ইস্তিগফার ও তার সুদৃঢ় থাকার জন্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রত্যেকে নিজে নিজে পাঠ করবে, দলবদ্ধভাবে নয়’।[31]

অন্যত্র তিনি বলেন,لا يجتمع الجميع على دعاءٍ واحد لأن ذلك من البدع حيث إن رسول الله صلى الله عليه وعلى آله وسلم لم يرشد إلى ذلك ولم يفعله بنفسه ‘একজনের দো‘আয় সকলে অংশগ্রহণ করবে না। কেননা তা বিদ‘আত। কারণ নবী করীম (ছাঃ) এই পদ্ধতিতে নির্দেশনা দেননি এবং তিনি নিজেও এভাবে করেননি’।[32]

৩. সউদী আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতী শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, ‘কবরের নিকটে দলবদ্ধভাবে দো‘আর কোন ভিত্তি নেই (الدعاء الجماعي عند القبر ليس له أصل)। দাফনকারীরা যদি একজনের উপর নির্ভর করে। আর সে বলে, তোমরা একত্রিত হও। আমি দো‘আ করব আর আপনারা আমীন বলবেন, এর কোন ভিত্তি আমি জানি না। সালাফে ছালেহীন থেকে এর কোন ভিত্তি আমার জানা নেই। তবে কেউ যদি কারো অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য ছাড়া কবরের পাশে দো‘আ করে আর তার দো‘আয় আমীন বলে তবে এতে কোন বাধা নেই। যেমন কেউ দাফনের সময় তার ভাইয়ের জন্য ‘আল্লাহুম্মাগফির লাহু ওয়া ছাবিবতহু বিল কাওলিছ ছাবিত’ দো‘আ বলার সময় উপস্থিত কিছু ব্যক্তি বলল আমীন, আমীন। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে একত্রিত হয়ে কেউ দো‘আ করল আর অন্যরা আমীন আমীন বলল। সালাফে ছালেহীনদের থেকে এর কোন ভিত্তি আমার জানা নেই। অতএর এরূপ কর্ম ত্যাগ করা উত্তম ও নিরাপদ।[33]

৪. সঊদী আরবের সর্বোচ্চ ফৎওয়া বোর্ড ফাতাওয়া লাজনাহ আদ-দায়েমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে উত্তরে বলা হয়-

الدعاء عبادة من العبادات، والعبادات مبنية على التوقيف، فلا يجوز لأحد أن يتعبد بما لم يشرعه الله. ولم يثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم أنه دعا بصحابته على جنازة ما بعد الفراغ من الصلاة عليها، والثابت عنه صلى الله عليه وسلم أنه كان يقف على القبر بعد أن يسوى على صاحبه ويقول: استغفروا لأخيكم واسألوا له التثبيت، فإنه الآن يسأل- وبما تقدم يتبين أن الصواب: القول بعدم جواز الدعاء بصفة جماعية بعد الفراغ من الصلاة على الميت، وأن ذلك بدعة-

‘দো‘আ অন্যতম ইবাদত। আর ইবাদত দলীলের উপর নির্ভরশীল। অতএব কারো জন্য শরী‘আত বহির্ভূত পন্থায় ইবাদত করা জায়েয হবে না। আর নবী করীম (ছাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়নি যে, তিনি জানাযার ছালাতের পরে ছাহাবীদের নিয়ে দো‘আ করেছেন। তাঁর থেকে যা সাব্যস্ত হয়েছে তা হ’ল- তাঁর সাথীদের কবর সমান করা হ’লে তিনি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং ঈমানের উপর দৃঢ় রাখার জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ কর। কারণ এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে’।[34] পূর্বের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মাইয়েতের জন্য ছালাত আদায় করার পর দলবদ্ধভাবে মুনাজাত করা জায়েয না হওয়াই সঠিক। কারণ তা বিদ‘আত’।[35]

৫. শায়খ ইবরাহীম আলে শায়খকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি বলেন, من السنة أن يقف المشيعون عند القبر بعد الدفن  ويدعوا للمية فرادى بالرحمة والمغفرة والةثبية أما الدعاء الجماعى والةأمين على دعاء واحد من الحضور فهذا ليس من السنة ‘সুন্নাত হ’ল-দাফনের পর শোকার্তরা কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ব্যক্তিগতভাবে মাইয়েতের জন্য রহমত, মাগফিরাত ও তার দৃঢ় থাকার জন্য দো‘আ করবে। কিন্তু দলবদ্ধ দো‘আ এবং একজনের দো‘আয় উপস্থিত লোকদের আমীন আমীন বলা- এটি কোন সুন্নাতী আমল নয়’।[36]

৬. মিসরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মুছতফা মুরাদ বলেন, أنه من بدع الدفن الدعاء الجماعي بعد دفن الميت ‘দাফন সংশ্লিষ্ট বিদ‘আত হ’ল-দাফনের পর দলবদ্ধভাবে মুনাজাত করা’।[37]

৭. শায়খ মুহাম্মাদ বাইউমী বলেন, ما يفعله بعض الناس من الدعاء الجماعي حيث يدعوا أحد الحاضرين ويؤمن الباقون على دعائه فهذا من البدع ومن محدثات الأمور والصواب أن يدعوا كل إنسان بمفرده ‘কিছু লোক দলবদ্ধভাবে যে দো‘আ করে যাতে উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন দো‘আ করে এবং অন্যরা তার দো‘আয় আমীন বলে-এটি বিদ‘আত এবং নতুন উদ্ভাবন। সঠিক হ’ল প্রত্যেকে বক্তিগতভাবে দো‘আ করা’।[38]

والدعاء والتأمين بشكل جماعي بعد دفن الميت بدعة محدثة، لأنه لم يكن من هدي النبي صلى الله عليه وسلم ولا من هدي أصحابه رضي الله عنهم، ولو كان خيراً لسبقونا إليه-

‘মাইয়েতকে দাফনের পর দলবদ্ধভাবে দো‘আ ও আমীন বলা নব সৃষ্ট বিদ‘আত। এটি রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণের কোন পদ্ধতি নয়। এটি কোন কল্যাণকর আমল হ’লে তারাই আমাদের চেয়ে অগ্রগামী হ’তেন’।[39]

৮. তাহের বিন আহমাদ বুখারী হানাফী বলেন, মাইয়েতের জানাযার পূর্বে বা পরে কুরআন পাঠের জন্য দাঁড়াবে না এবং জানাযার পরে দো‘আর জন্যও অবস্থান করবে না।[40]

৯. ইবনু হুমাম হানাফীর ছাত্র ইবরাহীম বিন আব্দুর রহমান কারকী বলেন, ‘জানাযার ছালাতের পরে দো‘আ করা মাকরূহ’।[41]

মাইয়েতের জন্য জীবিতদের করণীয় :

মাইয়েতের আত্মীয়দের জন্য করণীয় হ’ল তারা দ্রুত কাফন-দাফন ও মৃতের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করবে, যদিও তার সমস্ত মাল দিয়ে হয়। কিছু না থাকলে বা কেউ না থাকলে বা ঋণ মাফ না করলে সমাজ বা রাষ্ট্র তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করবে।[42]  দ্রুত গোসল ও কাফন-দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া সুন্নাত।[43] সাদা, সুতী ও সাধারণ মানের পরিষ্কার কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। মাইয়েতের নিজস্ব সম্পদ থেকে কাফন দেওয়া কর্তব্য। তার ব্যবহৃত কাপড় দিয়েও কাফন দেওয়া যাবে। মাইয়েতের নিজস্ব সম্পদ না থাকলে কিংবা তাতে কাফনের ব্যবস্থা না হ’লে কেউ দান করবে অথবা বায়তুল মাল থেকে বা সরকারী তহবিল থেকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।[44] পুরুষ ও মহিলা সকল মাইয়েতের জন্য তিনটি কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। মহিলাদের জন্য প্রচলিত পাঁচটি কাপড়ের হাদীছ ‘যঈফ’।[45]

জানাযার ছালাতের জন্য সাধারণভাবে লোকদেরকে অবহিত করবে। তারা মাইয়তের জন্য খালেছ অন্তরে দো‘আ করবে। রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ فَأَخْلِصُوْا لَهُ الدُّعَاءَ- ‘যখন তোমরা জানাযার ছালাত আদায় করবে, তখন মাইয়তের জন্য খালেছ অন্তরে দো‘আ করবে’।[46] অতএব মাইয়েত ভাল-মন্দ যাই-ই হৌক না কেন, তার জন্য খোলা মনে দো‘আ করতে হবে। কবুল করা বা না করার মালিক আল্লাহ। মাইয়েতের জন্য যেকোন দো‘আ করা যায়। তবে হাদীছে বর্ণিত দো‘আ সমূহ পাঠ করাই উত্তম। এই সময় সর্বনাম সমূহ পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। কেননা ‘মাইয়েত’ এখানে উদ্দেশ্য। ‘মাইয়েত’ (مَيِّتٌ) আরবী শব্দ, যা স্ত্রী ও পুরুষ উভয় লিঙ্গে ব্যবহৃত হয়।[47]

এই সময় মৃতের মাগফিরাতের জন্য দো‘আ করা ও তার সদগুণাবলী বর্ণনা করা উচিত। কেননা তাতে ফেরেশতাগণ ‘আমীন’ বলেন ও তার জন্য সেগুলি ওয়াজিব হয়ে যায়’।[48] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়’।[49] একটি বর্ণনায় এসেছে যে, ৪, ৩ এমনকি ২ জন নেককার মুমিন ব্যক্তিও যদি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে উত্তম সাক্ষ্য দেয়, তাতেই তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।[50] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কোন মুসলমান মারা গেলে তার নিকটতম প্রতিবেশীদের চারজন যদি তার সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয় যে, তারা তার সম্পর্কে ভাল ব্যতীত কিছুই জানে না, তাহ’লে আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের সাক্ষ্য কবুল করলাম এবং আমি তার ঐসব গোনাহ মাফ করে দিলাম, যেগুলি তোমরা জানো না’।[51] তবে এর অর্থ এই নয় যে, খারাপ মানুষের ভাল প্রশংসা করলেই আল্লাহ কবুল করে নিবেন। সাধারণতঃ মানুষ খারাপকে খারাপ ও ভালকে ভালই বলে। উল্লেখ্য যে, জানাযার সময় মাইয়েত সম্পর্কে উপস্থিত সকলের সমস্বরে ‘ভাল’ বলে সাক্ষ্য দেওয়ার রেওয়াজটি নিন্দনীয় বিদ‘আত।[52]

মসজিদের বাইরে জানাযা পড়াই উত্তম।[53] তবে প্রয়োজনে মসজিদে পড়াও জায়েয আছে। সুহায়েল বিন বায়যা (রাঃ) ও তার ভাইয়ের জানাযা রাসূল (ছাঃ) মসজিদের মধ্যে পড়েছিলেন।[54] মহিলারাও পর্দার মধ্যে জানাযায় শরীক হ’তে পারেন। আয়েশা (রাঃ) ও অন্যান্য উম্মাহাতুল মুমিনীন (রাঃ) মসজিদে নববীর মধ্যে সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ)-এর লাশ আনিয়ে নিজেরা জানাযা পড়েছিলেন।[55] একই ব্যক্তি বিশেষ কারণে একাধিক বার জানাযার ছালাত আদায় করতে পারেন বা ইমামতি করতে পারেন।[56]

মুসলিম মাইয়েতকে মুসলিম কবরস্থানে দাফন করতে হবে, ইহূদী-নাছারা ও কাফের-মুশরিকদের সাথে নয়। যাতে তারা মুসলিম যিয়ারতকারীদের দো‘আ লাভে উপকৃত হন। শিরক ও বিদ‘আতপন্থী ব্যক্তির পাশে ছহীহ হাদীছপন্থী মুসলমানের কবর দেওয়া উচিত নয়। পায়ের দিক দিয়ে মাইয়েতকে কবরে নামাবে। অসুবিধা হ’লে যেভাবে সুবিধা সেভাবে নামাবে। মাইয়েতকে ডান কাতে ক্বিবলামুখী করে শোয়াবে। এই সময় কাফনের কাপড়ের গিরাগুলি খুলে দেবে।[57]

কবরে শোয়ানোর সময় بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ ‘বিসমিল্লা-হি ওয়া ‘আলা মিল্লাতে রাসূলিল্লা-হ’ (অর্থ: ‘আল্লাহর নামে ও আল্লাহর রাসূলের দ্বীনের উপরে’) বলবে। ‘মিল্লাতে’-এর স্থলে ‘সুন্নাতে’ বলা যাবে। এই সময় কোন সুগন্ধি বা গোলাপ পানি ছিটানো বিদ‘আত।[58] কবর বন্ধ করার পরে উপস্থিত সকলে (বিসমিল্লাহ বলে) তিন মুঠি করে মাটি কবরের মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে দেবে।[59] এ সময় ‘মিনহা খালাক্বনা-কুম ওয়া ফীহা নু‘ঈদুকুম ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা-রাতান উখরা’ (ত্বোয়াহা ২০/৫৫) পড়ার কোন ছহীহ দলীল নেই।[60]

বর্তমান যুগে অনেকে দাফনের পরপরই পুনরায় হাত তুলে দলবদ্ধভাবে দো‘আ করেন। কেউ একই দিনে বা দু’একদিন পরে আত্মীয়-স্বজন ডেকে এনে মৃতের বাড়ীতে দো‘আর অনুষ্ঠান করেন। এগুলি নিঃসন্দেহে বিদ‘আত। জানাযার পরে বা দাফনের পূর্বে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সম্মানের নামে করুণ সুরে বিউগল বাজানো সহ যা কিছু করা হয়, সবই বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে মৃতের উপর বিলাপধ্বনি করা হয়, কবরে ও ক্বিয়ামতের দিন এজন্য তাকে আযাব দেওয়া হবে’।[61] আর এটা নিঃসন্দেহে ঐ মাইয়েতের জন্য, যে এসব কাজ সমর্থন করে এবং এসব না করার জন্য মৃত্যুর আগে অছিয়ত না করে যায়।[62]

দাফনের পরে মাইয়েতের ‘তাছবীত’ (التثبيت) অর্থাৎ মুনকার ও নাকীর (দু’জন অপরিচিত ফেরেশতা)-এর সওয়ালের জওয়াব দানের সময় যেন তিনি দৃঢ় থাকতে পারেন, সেজন্য ব্যক্তিগতভাবে সকলের দো‘আ করা উচিত। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِسْتَغْفِرُوْا لِأَخِيْكُمْ وَسَلُوا اللهَ لَهُ التَّثْبِيْتَ فَإِنَّهُ اَلْآنَ يُسْأَلُ ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার দৃঢ় থাকার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ কর। কেননা সত্বর সে জিজ্ঞাসিত হবে’।[63] অতএব এ সময় প্রত্যেকের নিম্নোক্তভাবে দো‘আ করা উচিত। যেমন,اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَثَبِّتْهُ ‘আল্লা-হুম্মাগফির লাহূ ওয়া ছাবিবতহু’ (অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন ও তাকে দৃঢ় রাখুন’)।[64] অথবা  اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ‘আল্লা-হুম্মা ছাবিবতহু বিল ক্বাউলিছ   ছা-বিত’ (হে আল্লাহ! আপনি তাকে কালেমা শাহাদাত দ্বারা সুদৃঢ় রাখুন)।[65] এই সময় ঐ ব্যক্তি দো‘আর ভিখারী। আর জীবিত মুমিনের দো‘আ মৃত মুমিনের জন্য খুবই উপকারী। এই সময় মাইয়েতের তালক্বীনের উদ্দেশ্যে সকলের লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ পাঠের কোন দলীল নেই। যেটা কোন কোন মাযহাবে ও এলাকায় ব্যাপকভাবে চালু আছে।[66] ব্যক্তিগতভাবে নিম্নের দো‘আটিও পড়া যায় اَللَّهُمَّ اغْفِرْلَهُ وَارْحَمْهُ، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرالرَّحِيْمُ (আল্লা-হুম্মাগফিরলাহূ ওয়ারহামহু, ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম) পড়া যায়। তবে দাফনের পরে একজনের নেতৃত্বে সকলে সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে দো‘আ করা ও সকলের সমস্বরে ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলার প্রচলিত প্রথার কোন ভিত্তি নেই।[67]

পরিশেষে বলা যায়, শরী‘আতের অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি। তাই শরী‘আতে বর্ণিত পন্থায় সকল ইবাদত করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের প্রকৃত অনুসারী হওয়ার মাধ্যমে জান্নাতুল ফিরদাউস লাভের তাওফীক দান করুন- আমীন!


[1]. মুসলিম হা/১৬৩১ ; মিশকাত হা/২০৩

[2]. আবুদাঊদ হা/৩২২১; মিশকাত হা/১৩৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭৬০

[3]. মুসলিম হা/৯৬৩; মিশকাত হা/১৬৫৫

[4]. তাবরাণী, মু‘জামুল কবীর হা/৩৫৫৪; ফাযযুল বি‘আ হা/২৮; আবু নাঈম, মা‘রিফাতুছ ছাহাবা হা/২০১৮, ৩৪৭৯

[5]. মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৮১৬৮

[6]. বুখারী হা/৮৫৭, ১২৪৭, ১৩১৯, ১৩২১, ১৩২২, ১৩২৬, ১৩৩৬ ও ১৩৪০

[7]. বুখারী হা/১২৪৭; মিশকাত হা/১৬৫৮-৫৯আহকামুল জানায়েয ১/৮৭

[8]. বুখারী হা/১৩৩৬; ইরওয়া হা/৩১৮৭

[9]. বুখারী হা/১৩২১মিশকাত হা/১৬৫৮

[10]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, আল-ইছাবাহ ফী তাময়ীযিছ ছাহাবাহ, ২/২৬১-২৬২ পৃঃ ও ৯/১০৩ পৃঃ, রাবী নং ৭৭৪৫; আবুদাঊদ হা/৩১৫৯; যঈফাহ হা/৩২৩২; মিশকাত হা/১৬২৫

[11]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩২৩২

[12]. লিসানুল মীযান ৭/২৩০; মীযানুল ই‘তিদাল ২/১৫১

[13]. মীযানুল ই‘তিদাল ৩/৬৪

[14]. তাক্বরীবুত তাহযীব ১/৩৯২; আনীসুস সারী ফী তাখরীযে আহাদীছে ফাতহিল বারী হা/১৫৫৩-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য

[15]. শু‘আবুল ঈমান হা/৪১৬৪; ইহ্ইয়া ৭/২১৫, সনদ হাসান, তাহক্বীক,  মুখতার আহমাদ নাদভী, শু‘আবুল ঈমান হা/৩৮৬৭

[16]. মু‘জামুল কাবীর হা/১০৪৮৮; ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/১০৯; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮০৪

[17]. মা‘রিফাতুছ ছাহাবা হা/৩৬৪৫,৩৬৪৪; হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/১২২; আনীসুস সারী হা/ ২১৩১; ফাতহুল বারী ১১/১৪৪

[18]. মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৫৯৮৩

[19]. মুসনাদে বাযযার হা/১৭০৬,১৫১৫

[20]. দারাকুৎনী, কিতাবুয-যুআ‘ফা ১/১৫, রাবী নং ৩৪০

[21]. ছিক্বাত ৬/৩৭৮, রাবী নং ৮১৮৫

[22]. যঈফাহ হা/৬৪২১-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য

[23]. লিসানুল মীযান ৬/১৭৭, রাবী নং ৬২৪; মীযানুল ই‘তিদাল ৪/২৮২, রাবী নং৯১৫১

[24]. সীরাতে ইবনু হিশাম ২/২২৭; আল-ইছাবাহ ৬/১৪৯

[25]. আনীসুস-সারী ২১৩০ হাদীছের আলোচনা দ্রষ্টব্য

[26]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৫৩; মু‘জামুল কাবীর হা/১৩০৯৪

[27]. মিছবাহুজ জুযাযাহ হা/৫৫৯; ইবনুল মুলাক্কিন, আল-বাদরুল মুনীর ৫/৩৩৭

[28]. আল-মুহীতুল বুরহানী ২/৩৬২; বাদায়েঊছ ছানায়েঈ ৩/২৮৫

[29]. আত-তাহক্বীক ফী আহাদিছিল খিলাফ হা/৮৯৯

[30]. ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ৩/১৯৪, প্রশ্ন নং ৮৯৮

[31]. ফাতাওয়াল জানায়েয ১/২২৮; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/১৪০, প্রশ্ন নং ১৩২

[32]. ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব ১৩/১৯৬

[33]. http://majles.alukah.net/t21559; http://www.binbaz.org.sa/noor/1160.

[34]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৩৩

[35]. ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ৯/১৬, ফৎওয়া নং ২২৫১

[36]. আদ-দাওয়াত ১৫৭৬

[37]. আখতা’উনা ফিল ইবাদাতে ওয়াল মু‘আমিলাত ৩৮২ পৃষ্টা

[38]. ফিক্বহুল জানায়েয ১১৫ পৃষ্ঠা

[39]. ড. আব্দুল্লাহ ফক্বীহ পরিচালিত ফাতাওয়া শাবকাতুল ইসলামিয়া ৩/৩৭৩৫, ফৎওয়া নং ১৬৬৫১

[40].  খোলাছাতুল ফৎওয়া ১/২২৫

[41]. ফাতাওয়া ফায়য কারকী  ৮৮ পৃষ্ঠা

[42]. বুখারী হা/২২৯৮; মুসলিম হা/১৬১৯; মিশকাত হা/ ২৯১৩; তালখীছ ১৩-১৪ পৃঃ

[43]. বুখারী হা/১৩১৫; মুসলিম হা/৯৪৪; মিশকাত হা/১৬৪৬

[44]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৭০

[45]. আবুদাঊদ, হা/৩১৫৭; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৮৪৪

[46]. আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬৭৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৬৯

[47]. আওনুল মা‘বূদ হা/৩১৮৪-এর ভাষ্য ৮/৪৯৬; নায়ল ৫/৭২, ৭৪

[48]. মুসলিম হা/৯১৯; মিশকাত হা/১৬১৭

[49]. বুখারী  হা/১৩৬৭; মিশকাত হা/১৬৬২, ১৯; তালখীছ ১৩, ২৫ পৃঃ

[50]. বুখারী হা/১৩৬৮; মিশকাত হা/১৬৬৩

[51]. ইবনু হিববান হা/৩০২৬; ছহীহুত তারগীব হা/৩৫১৫; তালখীছ ২৬ পৃঃ

[52]. তালখীছ পৃঃ ২৬

[53]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৮২

[54]. মুসলিম হা/৯৭৩; মিশকাত হা/১৬৫৬

[55]. মুসলিম হা/৯৭৩; মিশকাত হা/১৬৫৬

[56]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৫৮

[57]. বুখারী হা/১৩৯০; মিশকাত হা/১৬৯৫; মির‘আত ৫/৪২৮-২৯; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৯০

[58]. তালখীছ, পৃঃ ১০২

[59]. তালখীছ, পৃঃ ৫৮-৬৫, ৬৯; মির‘আত ‘মাইয়েতের দাফন’ অনুচ্ছেদ, ৫/৪২৬-৫৭

[60]. আহমাদ হা/২২২৪১; হাকেম হা/৪৩৩৩; মাজমাঊয-যাওয়ায়েদ হা/৪২৩৯, সকল মুহাদ্দিছ এর সনদকে যঈফ বলেছেনু; তালখীছ পৃঃ ১০২; আলবানী, আহকামুল জানায়েয, টীকা দ্রঃ, মাসআলা নং ১০৬ দ্রঃ

[61]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৪০-৪২

[62]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৫৪

[63]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৩৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৯৪৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩৫১১

[64]. হিছনুল মুসলিম, দো‘আ নং ১৬৪

[65]. উছায়মীন, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব ৫/২০১

[66]. মিরক্বাত ১/২০৯; মির‘আত ১/২৩০

[67]. বিস্তারিত, ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২১৩-২৩৪ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য





ইসলামে ভ্রাতৃত্ব (৩য় কিস্তি) - ড. এ এস এম আযীযুল্লাহ
আলেমগণের মধ্যে মতভেদের কারণ (১ম কিস্তি) - আব্দুল আলীম বিন কাওছার
ছালাত পরিত্যাগকারীর ভয়াবহ পরিণতি - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
সাকীনাহ : প্রশান্তি লাভের পবিত্র অনুভূতি (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
ঈমানের গুরুত্ব ও ফযীলত - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
খতমে নবুঅত আন্দোলন ও আহলেহাদীছ ওলামায়ে কেরাম - ড. নূরুল ইসলাম
১৬ মাসের মর্মান্তিক কারা স্মৃতি (৭ম কিস্তি) - মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
কুরআন তেলাওয়াতের আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আদর্শ পরিবার গঠনে করণীয় (৪র্থ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
নিয়মের রাজত্ব - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
মীরাছ বণ্টন : শারঈ দৃষ্টিকোণ - ড. শিহাবুদ্দীন আহমাদ, শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, রাজশাহী
যাকাত ও ছাদাক্বা - আত-তাহরীক ডেস্ক
আরও
আরও
.