
রাসূল (ছাঃ)-এর লক্ষাধিক ছাহাবী ছিলেন। প্রত্যেক ছাহাবী ছিলেন নিজ অঙ্গনে এক একটি নক্ষত্র সদৃশ। তাদের পরহেযগারিতা ও ইলমী আমানতদারিতা ছিল অতুলনীয়। তন্মধ্যে উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) ছিলেন কুরআনিক খেদমতের নিখাদ বাতিঘর। ইলমে ক্বিরাআতে তার ছিল বিশেষ পারদর্শিতা। তিনি ছিলেন সেরাদের সেরা। তিনি সায়্যিদুল কুররা তথা ক্বারীদের সর্দার হিসাবে অভিহিত হ’তেন। স্বয়ং মহান আল্লাহ স্বীয় প্রিয় হাবীব মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে তাঁর নিকট থেকে কুরআন তেলাওয়াত শুনতে বলেন। কৌতুহলী কা‘ব (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, মহান আল্লাহ নিজেই কি আমার নামটি বলেছিলেন? রাসূল (ছাঃ) হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। কা‘ব (রাঃ) খুশীতে আত্মহারা হয়ে কেঁদে দিয়েছিলেন। এ অঙ্গনে শুধুমাত্র তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি মহান আল্লাহর নিকট থেকে এমন বিরল সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন।
পরিচয় : উবাই ইবনু কা‘ব আল-আনছারী একজন বিশিষ্ট ছাহাবী। রাসূল (ছাঃ)-এর মাতুল-কুল মদীনার আন-নাজ্জার গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। জন্ম তারিখ অজ্ঞাত। বংশ তালিকা হ’ল- উবাই ইবনু কা‘ব ইবনে কায়েস ইবনে উবায়দ ইবনে যায়েদ ইবনে মু‘আবিয়া ইবনে আমর মালিক ইবনে নাজ্জার আল-খায্যরাজী আল-আনছারী। তার মাতার নাম ছিল সুহায়লা বিনতুল আসওয়াদ ইবনু হারাম। তিনিও নাজ্জার বংশোদ্ভূত এবং প্রখ্যাত ছাহাবী আবু ত্বালহা আল-আনছারীর ফুফু। সুতরাং উবাই (রাঃ) আবু ত্বালহা (রাঃ)-এর ফুফাতো ভাই। উবাই (রাঃ)-এর দু’টি উপনাম ছিল। একটি রাসূল (ছাঃ) প্রদত্ত আবুল মুনযির এবং অন্যটি তার পুত্র তুফায়ল-এর নামানুসারে ওমর (রাঃ) প্রদত্ত আবুত তুফায়ল।[1]
ইসলামের বিখ্যাত কবি, রাসূল (ছাঃ)-এর কাব্যযোদ্ধা ও প্রিয়ভাজন হাসসান বিন ছাবেত (রাঃ)-এর সাথে তার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল।[2] রাসূল (ছাঃ) তাকে ভালবেসে ‘সায়্যিদুল আনছার’ বা আনছারদের নেতা হিসাবেও সম্বোধন করেছেন।[3] সাধারণ জনগণ তাকে ‘সায়্যিদুল মুসলিমীন’ হিসাবে জানত।[4]
ইসলাম গ্রহণ : মদীনায় ইহুদীদের যথেষ্ট ধর্মীয় প্রভাব ছিল। ইসলাম-পূর্ব জীবনে তিনি তাওরাতসহ অন্যান্য যে সকল ধর্মীয় গ্রন্থ পড়েছিলেন, মূলতঃ সেই জ্ঞানই তাঁকে ইসলামের দিকে টেনে আনে। নবুঅতের ত্রয়োদশ বর্ষে মুছ‘আব ইবনু উমায়ের (রাঃ)-এর নেতৃত্বে ৭০ জন আনছার ছাহাবীর সাথে তিনি আকাবার দ্বিতীয় আনুগত্যের শপথ অনুষ্ঠানে শরীক হন। যে সকল মদীনাবাসী মক্কায় গিয়ে সর্বশেষ আকাবায় রাসূলুল্লাহর (ছাঃ) হাতে বায়‘আত করেন তিনিও তাঁদের একজন। আর এখান থেকেই তাঁর ইসলামী জীবনের সূচনা।[5]
হিজরতের পর রাসূলে করীম (ছাঃ) আশারা মুবাশশারার অন্যতম সদস্য সাঈদ ইবনু যায়েদের সাথে উবাইয়ের ভ্রাতৃ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেন। কেউ কেউ বলেন, ত্বালহা ইবনু উবায়দুল্লাহর সাথে তাঁর ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।[6] রাসূল (ছাঃ) মদীনায় আগমনের পর আবু আইউব আনছারী (রাঃ)-এর বাড়ীতে অতিথি হন। তবে বালাযুরীর একটি বর্ণনা মতে, তাঁর বাহন উটনীটি উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর বাড়ীতেই ছিল।[7]
শারীরিক গঠন ও চরিত্র : উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ)-এর বিশিষ্ট ছাত্র আববাস ইবনে সাহল, ঈসা ইবনে তালহার বর্ণানুযায়ী, তার অবয়ব ছিল মধ্যামাকৃতির। বার্ধক্যে তার দাঁড়ি ও মাথার চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল। তবে তিনি তাতে কোন খেযাব বা মেহদী ব্যবহার করতেন না। তিনি ছিলেন খুবই সুশ্রী এবং তার চেহারায় কিছুটা বাদামী রংয়ের সংমিশ্রণ ছিল।[8] দেখতে পাতলা সাদা চুল ও দাড়ি তার চেহারার শোভা বর্ধন করেছিল। বর্ণনাকারী উতাই ইবনে যমরা তাকে এমনভাবেই অবলোকন করেছিলেন।[9]
কুরআনের খাদেম মহান এই ছাহাবী সর্বোত্তম চরিত্রের এবং খুবই দরদী হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। উম্মাহ সচেতন ব্যক্তি হিসাবে সর্বত্র বরিত হ’তেন। সত্যনিষ্ঠ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) ওয়াদা পালনে ছিলেন প্রবাদতুল্য ব্যক্তিত্ব। অন্যায় দেখলে তিনি সহ্যই করতে পারতেন না, চট করে রেগে যেতেন।
নাহি আনিল মুনকার তথা অন্যায়ের প্রতিবাদ করার নযীর তার জীবনে অনেক রয়েছে। প্রখ্যাত তাবেঈ বিদ্বান ইবনে সীরীন (রহঃ) বলেন, একজন ব্যক্তি মসজিদে হারানো জিনিসের ঘোষণা দিচ্ছিল। এমতাবস্থায় উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তার উপর খুবই ক্ষিপ্ত হ’লেন এবং কঠিন ভাষায় ধমক দিলেন। লোকটি তাকে বলল, হে আবুল মুনযির! আপনি তো কখনোই কটুভাষী ছিলেন না। তিনি সোজাসাপটা জবাব দিলেন এ বিষয়ে আমি আদিষ্ট হয়েছি। রাসূল (ছাঃ)-এর এ সংক্রান্ত হাদীছটি তিনি তাকে শুনিয়ে দিলেন।[10]
রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশ পালনে তিনি সর্বদা সচেষ্ট থাকতেন। ওমর (রাঃ)-এর ইমামতিতে একদিন একজন ব্যক্তি তাকে ছালাতের প্রথম কাতারে চাপাচাপি করে দাঁড়াতে দেখে একটু আপত্তি করলেন। তিনি বলেন, এটি রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশ, আনছার-মুহাজিরগণ ছালাতের প্রথম কাতারে দাঁড়াবে। পরে লোকটি জানতে পারেন যে, তিনি হ’লেন সায়িদুল মুসলিমীন উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ)।[11]
গায়রত ও মাহরাম সম্পর্কে এক আলোচনা প্রসঙ্গে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) বলে ফেললেন, যদি ব্যাপারটি আমার সাথে ঘটত, তাহ’লে আমি তাকে তরবারী দিয়ে এর জবাব দিতাম। রাসূল (ছাঃ)-এর প্রত্যুত্তর শুনে হেসে দিলেন। স্নেহভরে তিনি তাকে বললেন, তুমি খুবই ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। আর আমি তোমার চেয়ে এবং মহান আল্লাহ সবার চেয়ে! [12]
জীবন পরিক্রমা : নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাকে কুরআনের জ্ঞানার্জনে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছিলেন। মদীনায় রাসূল (ছাঃ)-এর ছুহবত পাওয়ার পর থেকেই তাঁর মধ্যে কুরআন হিফয করার প্রবণতা দেখা দেয়। যতটুকু কুরআন অবতীর্ণ হ’ত তিনি হিফয করে ফেলতেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় মু‘আয ইবনে জাবাল, উবাদাহ ইবনে ছমেত, উবাই ইবনে কা‘ব, আবু আউয়ূব এবং আবুদ দারদা পাঁচজন ব্যক্তি সমগ্র কুরআন হিফয সম্পন্ন করেন।[13] মদীনার খাযরাজ গোত্রের লোকেরা গর্ব করে বলত, আমাদের গোত্রের চার ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় সমগ্র কুরআন সংগ্রহ করেনি। তাদের অন্যতম হ’লেন উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)।[14]
উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) পবিত্র কুরআনের প্রতিটি হরফ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পবিত্র মুখ থেকে শুনে হিফয করেন। রাসূল (ছাঃ)ও অত্যধিক আগ্রহ দেখে তাঁর শিক্ষার প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি সীমাহীন শ্রদ্ধা ও ভীতির কারণে অনেক বিশিষ্ট ছাহাবী অনেক সময় তাঁর কাছে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকতেন। কিন্তু উবাই নিঃসংকোচে যা ইচ্ছা তাই প্রশ্ন করতেন। তাঁর এই আগ্রহের কারণ রাসূল (ছাঃ) মাঝে মাঝে প্রশ্ন করার আগেই তাঁকে অনেক কথা বলে দিতেন। একবার তাঁকে বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি সূরার কথা বলছি, তাওরাত ও ইনজীলে যার সমকক্ষ কোন কিছু নেই। এমনকি কুরআনেও এর মত দ্বিতীয়টি নেই। এতটুকু বলে তিনি অন্য কথায় চলে গেলেন। উবাই বলেন, আমার ধারণা ছিল তিনি বলে দিবেন; কিন্তু তা না বলে বাড়ী যাওয়ার জন্য উঠে পড়লেন। আমি পিছনে পিছনে চললাম। এক সময় তিনি আমার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে কথা বলতে আরম্ভ করলেন এবং বাড়ীর দরজা পর্যন্ত পৌঁছলেন। তখন আমি সেই সূরাটির নাম বলার জন্য আরয করলাম। তিনি সূরাটির নাম আমাকে বলে দিলেন।[15]
উবাই বিন কা‘ব ছিলেন কুরআনের একজন বিশেষজ্ঞ ক্বারী। কুরআন এমন বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করতে পারতেন যে, তাকে সায়্যিদুল কুররা (কারীগণের সর্দার) বলা হ’ত। রাসূল (ছাঃ) আল্লাহর নির্দেশে তাকে কুরআন মাজীদ পাঠ করে শুনাতেন।[16]
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) একবার উবাই ইবনু কা‘বকে ডেকে বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে কুরআন তেলাওয়াত করে শুনাতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা কি আপনার নিকট আমার নাম উল্লেখ করেছেন? রাসূল (ছাঃ) বলেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট তোমার নাম উল্লেখ করেছেন। এ কথা শুনে উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। ক্বাতাদার বর্ণনা মতে, এই নির্দেশ ছিল সূরা বাইয়্যিনাহ সম্পর্কে।[17]
রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা চার ব্যক্তির নিকট থেকে কুরআন শিক্ষা কর, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ, সালেম, মু‘আয ইবনু জাবাল ও উবাই ইবনু কা‘ব।[18] ওমর (রাঃ) বিশুদ্ধ ক্বিরাআত শুনার জন্য তাকে তেলাওয়াত করতে বলতেন। এতদ্ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ে জটিল সমস্যা দেখা দিলে তার নিকট থেকে পরামর্শ গ্রহণ করতেন।
কথিত আছে যে, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) একদিন উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-কে তাক্বওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। উবাই বললেন, أَمَا سَلَكْتَ طَرِيقًا ذَا شَوْكٍ؟ ‘আপনি কি কাঁটাযুক্ত পথে চলেননি? ওমর (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। উবাই বললেন, কিভাবে চলেছেন? ওমর (রাঃ) বললেন, খুব সাবধানে ও কষ্ট করে চলেছি। উবাই বললেন, فَذَلِكَ التَّقْوَى ‘ওটাই হ’ল তাক্বওয়া’।[19]
ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তির বিশেষত্ব রাসূল (ছাঃ) নিজে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেইসব মহান ব্যক্তির একজন উবাই। তাঁর সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আক্বরাহুম উবাই ‘তাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত (ক্বারী) উবাই’।[20]
একবার রাসূলে করীম (ছাঃ) ফজরের ছালাত পড়ালেন এবং একটি আয়াত ভুলে বাদ পড়ে গেল। উবাই মাঝখানে ছালাতে শরীক হন। ছালাত শেষে রাসূল (ছাঃ) প্রশ্ন করলেন, তোমাদের কেউ কি আমার ক্বিরাআতের প্রতি মনোযোগী ছিলে? লোকেরা কেউ কোন জবাব দিল না। তিনি আবার জানতে চাইলেন, উবাই ইবনু কা‘ব আছ কি? উবাই ততক্ষণে বাকী ছালাত শেষ করেছেন। তিনি বলে উঠলেন, আপনি অমুক আয়াতটি পাঠ করেননি। আয়াতটি কি মানসূখ (রহিত) হয়েছে নাকি আপনি পড়তে ভুলে গেছেন? রাসূল (ছাঃ) বললেন, মানসূখ হয়নি, আমি পড়তে ভুলে গেছি। আমি জানতাম তুমি ছাড়া আর কেউ হয়তো এইদিকে মনোযোগী হবে না।[21]
উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা একথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, কোন বিষয় উবাইয়ের বোধগম্য না হ’লে অন্য ছাহাবীদের মত চুপ থাকতেন না; বরং বিষয়টি নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে কথা বলতেন। একবার মসজিদে নববীতে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) একটি আয়াত পাঠ করলেন। যেহেতু তিনি ছিলেন হুজায়ল গোত্রের লোক, এ কারণে তাঁর উচ্চারণে একটু ভিন্নতা ছিল। উবাই তাঁর পাঠ শুনে প্রশ্ন করেন, আপনি এই আয়াত কার কাছে শিখেছেন? আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আয়াতটির পাঠ এভাবে শিখেছি। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ বললেন, আমাকেও তো রাসূল (ছাঃ) শিখিয়েছেন। উবাই বলেন, সেই সময় আমার অন্তরে ভ্রান্ত ধারণার প্রবাহ বয়ে যেতে লাগলো। আমি ইবনু মাসঊদকে সঙ্গে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ও তাঁর কুরআন পাঠে তারতম্য দেখা দিয়েছে। রাসূল (ছাঃ) আমার পাঠ শুনলেন এবং বললেন, তুমি ঠিক পড়েছ। তারপর ইবনু মাসঊদের পাঠ শুনে বললেন, তুমিও ঠিক পড়েছ। আমি হাত দিয়ে ইশারা করে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দুইজনের পাঠ সঠিক হয় কি করে? এতক্ষণে উবাই ঘেমে একাকার হয়ে গেছেন। রাসূল (ছাঃ) এ অবস্থা দেখে তাঁর বুকের ওপর হাত রেখে বললেন, হে আল্লাহ! উবাইয়ের সংশয় দূর করে দাও। পবিত্র হাতের স্পর্শে তাঁর হৃদয়ে পূর্ণ প্রত্যয় নেমে আসে।[22]
রাসূলে করীম (ছাঃ) নিজে উবাইকে কুরআন তিলাওয়াত করে শুনাতেন। যে বছর তিনি মৃত্যুবরণ করেন সে বছরও উবাইকে কুরআন শোনান। আর একথাও বলেন যে, জিবরীল আমাকে বলেছেন, আমি যেন উবাইকে কুরআন শুনাই। যখনই কুরআনের যে আয়াতটি বা সূরাটি নাযিল হ’ত রাসূল (ছাঃ) উবাইকে পাঠ করে শোনাতেন। শুধু তাই নয়, মুখস্থ করিয়ে দিতেন।[23]
আব্দুর রহমান ইবনু আবী আবযা নামক উবাইয়ের এক ছাত্র উস্তাদের এই ঘটনা অবগত হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আবুল মুনযির! সম্ভবতঃ সেই সময় আপনি বিশেষ পুলক ও আনন্দ অনুভব করেছিলেন? উবাই বললেন, কেন করবো না? একথা বলে তিনি সূরা ইউনুসের ৫৮নং আয়াতটি পাঠ করেন।[24] ক্বিরাআত শাস্ত্রে তাঁর পারদর্শিতার কারণে বিশেষ এক ধরনের ক্বিরাআত সেখানে তাঁর নাম চালু হয় এবং ‘ক্বিরাআতে উবাই’ নামে পরিচিতি লাভ করে।[25]
উবাই (রাঃ) মৃত্যুর সময় তাঁর ক্বিরাআত শাস্ত্রে দু’জন যোগ্য উত্তরসূরী রেখে যান যাঁরা বিশ্ব মুসলিমের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। তাঁরা হ’লেন, আবূ হুরায়রা ও আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)। পরবর্তীকালে বিখ্যাত সাত ক্বারীর মধ্যে নাফে‘ ইবনু কাছীর মাক্কীর সনদ আব্দুল্লাহ ইবনু আববাসের মাধ্যমে উবাই ইবনু কা‘বে গিয়ে মিলিত হয়েছে। সেকালে উবাইয়ের মাদ্রাসাতুল ক্বিরাআহ (কিরাআত শাস্ত্রের শিক্ষালয়) একটি কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে। আরব, রোম, শাম এবং ইসলামী খিলাফতের নানা অঞ্চলের ছাত্ররা মদীনায় এসে তাঁর শিক্ষালয়ে ক্বিরাআত শিখতো। বহু বড় বড় ছাহাবী দূর-দূরান্ত থেকে উৎসাহী লোকদের সাথে করে মদীনায় নিয়ে আসতেন এবং উবাই (রাঃ)-এর মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিতেন। ওমর (রাঃ) তাঁর খিলাফতকালে আবূদ দারদা আল-আনছারী (রাঃ)-কে লোকদের কুরআন শিক্ষাদানের জন্য শামে পাঠান। তিনি ছিলেন সেই পাঁচ রত্নের অন্যতম যাঁরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় গোটা কুরআন হিফয করেন। তা সত্ত্বেও তিনি উবাইয়ের ক্বিরাআতের ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। একবার ওমর (রাঃ) খিলাফতকালে শামবাসীদের একটি দল সঙ্গে নিয়ে তিনি মদীনায় উবাইয়ের নিকট আসেন। তাঁর নিকট তাঁদের সাথে তিনি নিজেও কুরআন পড়েন।[26]
মাসরূক বর্ণনা করেন, ছাহাবীদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন প্রখ্যাত মুফতী বা (আছহাবুল কুযাত) ওমর (রাঃ), আলী (রাঃ), আব্দুল্লাহ (রাঃ), উবাই (রাঃ), যায়েদ (রাঃ) ও আবু মুসা (রাঃ)। ইলমে ক্বিরাআতের ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বাধিক জ্ঞানী। আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, আমার উম্মাতের মধ্যে উম্মাতের প্রতি সর্বাধিক দয়াপরবশ হ’ল আবু বকর, দ্বীনের ব্যাপারে সর্বাধিক কঠোর হ’ল ওমর, সর্বাধিক লাজুক হ’ল ওছমান, হালাল-হারামের ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞাত হ’ল মু‘আয ইবনু জাবাল, ফারায়েযের ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞাত হ’ল যায়েদ ইবনু ছাবিত, কিরাআতে সর্বাধিক জ্ঞাত হ’ল উবাই ইবনু কা‘ব। আর প্রত্যেক উম্মতের একজন আমীন থাকে। এই উম্মতের আমীন হ’ল আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ।[27]
উবাই ইবনু কা‘বের পবিত্র জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত জ্ঞান চর্চার জন্য নিবেদিত ছিল। মদীনার আনছার-মুহাজিরগণ যখন ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিকাজ নিয়ে দারুণ ব্যস্ত থাকতেন, উবাই তখন মসজিদে নববীতে কুরআন-হাদীছের জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার পঠন-পাঠনে সময় অতিবাহিত করতেন। আনছারদের মধ্যে তাঁর চেয়ে বড় কোন আলিম কেউ ছিলেন না। আর কুরআন বুঝার দক্ষতা এবং হিফয ও ক্বিরআতে মুহাজির ও আনছারদের মধ্যে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ছিল সর্বজন স্বীকৃত।
ইসলামী জ্ঞান ছাড়া প্রাচীন আসমানী কিতাবের জ্ঞানেও ছিল তাঁর সমান দক্ষতা। তিনি তাওরাত ও ইনজীলের আলিম ছিলেন। অতীতের আসমানী গ্রন্থসমূহে রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে যে সকল ভবিষ্যদ্বাণী ও সুসংবাদ ছিল সে বিষয়ে তিনি ছিলেন একজন বিশেষজ্ঞ। তাঁর এই পান্ডিত্যের কারণে ফারূকে আযম তাঁকে খুবই সমীহ ও সম্মান করতেন। এমনকি তিনি নিজেই বিভিন্ন মাসয়ালার সমাধান জানার জন্য সময়-অসময়ে তাঁর গৃহে যেতেন। ইসলামের ইতিহাসে গভীর জ্ঞান ও অসাধারণ মনীষার জন্য আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) ‘হিবরুল উম্মাহ’ নামে খ্যাত। তিনিও উবাইয়ের দারসে উপস্থিত হওয়াকে গৌরবজনক বলে মনে করতেন। তাঁর এই ফযীলত ও মর্যাদা ছিল নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট থেকে অর্জিত জ্ঞানের কারণেই। তিনি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট থেকে এত বেশী পরিমাণ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন যে, অন্য কারও নিকট জ্ঞানের জন্য যাওয়ার প্রয়োজন তাঁর ছিল না।[28]
জাহেলী যুগে জ্ঞানসম্পন্ন লোকের সংখ্যা ছিল নিতান্ত নগণ্য। সে যুগে তার লিখন ক্ষমতার খুব সুনাম ছিল। তিনি ছিলেন একজন সুশিক্ষিত পন্ডিত ব্যক্তি। ওয়াক্বিদীর বর্ণনা মতে তিনিই সর্বপ্রথম রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য মদীনার চুক্তিনামা মুক্বাদ্দামা লিপিবদ্ধ করেন। আর তিনিই সর্বপ্রথম পত্রের শেষে (কাতাবা ফুলান ইবনু ফুলান) (অমুকের পুত্র অমুক কর্তৃক লিখিত) এই কথা লেখার প্রচলন করেন। ইসলামী যুগে তিনি অহী লেখার দায়িত্ব পালন করতেন।[29]
ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই উবাই কুরআনের সাথে অস্বাভাবিক প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলেন। রাসূল (ছাঃ) মদীনায় আগমনের পর অহী লেখার সর্বপ্রথম গৌরব তিনিই অর্জন করে।[30]
উবাই (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট যতটুকু কুরআন পড়তেন, ঘরে ফিরে তা লিখে রাখতেন। ওমর (রাঃ) একজন তেলাওয়াতকারীর সূরা আহযাবের ৬নং আয়াতে النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ - أُمَّهَاتُهُمْ-এর স্থলে اب لهم পড়ল। তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলল, এটি উবাই ইবনে কা‘ব-এর মাছহাফ। আমীরুল মুমিনীন উবাই (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলে, তিনি বললেন, প্রকৃতপক্ষে, সে কুরআন দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছে এবং আপনাকে বাজারের দর কষাকষি অমনোযোগী করে দিয়েছে।[31]
পরহেযগারিতা : দুনিয়া নিয়ে যে ব্যক্তি ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ল, সে ধ্বংস হ’ল। তাই উবাই দুনিয়া নয়, আখেরাতের সফলতা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। শরী‘আতের প্রতি তার ছিল প্রগাঢ় ভক্তি ও আনুগত্য।
একদিন জাবের অথবা জুবায়ের নামের একজন ব্যক্তি ওমর (রাঃ) নিকট এসে দুনিয়া সংক্রান্ত কিছু কথাবার্তা বলছিলেন। তার পাশেই সাদা চুল, দাড়ি ও সাদা পোষাক পরিহিত একজন ব্যক্তি ছিলেন। জুবায়ের কথাবার্তা শুনে তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন, দুনিয়া কাকে বলে, তুমি জান? উত্তর না পেয়ে তিনি বললেন, দুনিয়ার আমল আখেরাতের সম্বল এবং পরকালে আমাদেরকে তার বদলা দেয়া হবে। জুবায়ের বললেন, আমীরুল মুমিনীন লোকটি কে? তিনি বললেন, সায়্যিদুল মুসলিমীন উবাই ইবনে কা‘ব।[32]
ওছমান (রাঃ) কুরআন জমা করার জন্য কুরায়েশ ও আনছারদের মধ্যে যেই ১২ জন ছাহাবীকে মনোনীত করেছিলেন উবাই ইবনু কা‘ব তাদের অন্যতম ছিলেন। তিনি গভীর মনোযোগের সাথে কুরআন তেলওয়াত করতেন। তিনি আট রাতে কুরআন খতম করতেন।
আল্লাহ ও বিচার দিনের ভয়ে সব সময় তিনি কাঁদতেন। কুরআন পাঠের সময় ভীষণ ভীত হয়ে পড়তেন। আযাবের আয়াতগুলি যখন পাঠ করতেন বিশেষতঃ সূরা আন‘আম ৬৫ আয়াত قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلَى أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا ....তখন তাঁর শঙ্কা ও ভয়ের সীমা থাকতো না, অঝর নয়নে কাঁদতেন।[33]
কুরআন : উবাই (রাঃ) ছিলেন কুরআনের মুফাসসির (ভাষ্যকার) ছাহাবীদের অন্যতম। এই শাস্ত্রের বড় একটি অংশ তাঁর থেকে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আবু জা‘ফর আর রাযী তার বর্ণনাকারী। মাত্র তিনটি মাধ্যমে এই সনদ উবাই পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই শাস্ত্রে উবাইয়ের বহু ছাত্র ছিল। তাফসীরের বিভিন্ন গ্রন্থে তাঁদের বর্ণনা ছড়িয়ে রয়েছে। তবে তার সিংহভাগ আবুল আলিয়াহ মাধ্যমে আমাদের নিকট পৌঁছেছে। এই আবুল আলিয়ার ছাত্র রাবী‘ ইবনু আনাস। ইমাম তিরমিযীর সনদের ধারাবাহিকতা এই রাবী‘ পর্যন্ত পৌঁছেছে। উবাইয়ের তাফসীরের বর্ণনাসমূহ ইবনু জারীর ও ইবনু আবী হাতেম প্রচুর পরিমাণে নকল করেছেন। হাকেম তাঁর মুসতাদরাকে এবং ইমাম আহমাদ তাঁর মুসনাদে কিছু বর্ণনা সংকলন করেছেন।[34]
তাফসীর শাস্ত্রে উবাই থেকে দুই রকম রিওয়ায়াত (বর্ণনা) আছে। ক. তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে যে সকল প্রশ্ন করেন এবং রাসূল (ছাঃ) তার যে সকল জবাব দেন।
খ. এমন সব তাফসীর, যা খোদ উবাইয়ের প্রতি সম্বন্ধিত করা হয়েছে। প্রথম প্রকারের তাফসীর, যেহেতু তা রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে এ কারণে তা ঈমান ও ইয়াক্বীনের স্তরে উন্নীত হয়েছে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় প্রকারের তাফসীর হচ্ছে উবাইয়ের মতামত ও সিদ্ধান্তের সমষ্টি। তার কোনটিকে তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন (কুরআনের দ্বারা কুরআনের তাফসীর)-এর পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, কোনটিকে সমকালীন চিন্তা-বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটেছে। কোন ক্ষেত্রে এ সবের ঊর্ধ্বে উঠে একজন মুজতাহিদের মত নিজস্ব মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। মূলতঃ এটাই তাঁর তাফসীর শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ অবদান। শানে নুযূল বিষয়ে তাঁর থেকে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। তাফসীরের বিভিন্ন গ্রন্থে তা ছড়িয়ে রয়েছে।
সূরা ফাতিহা : একদিন রাসূল (ছাঃ) উবাই ইবনু কা‘বকে ডাকলেন, এমতাবস্থায় তিনি ছালাতরত ছিলেন। উবাই (রাঃ) ছালাত সংক্ষিপ্ত করলেন এবং রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম দিলেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, আমার ডাকে সাড়া দিলেনা কেন? তিনি বললেন, আমি ছালাতে ছিলাম। তুমি কি কুরআনে এই আয়াতটি পাওনি? يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ ‘হে বিশ্বাসীগণ! রাসূল যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে আহবান করে, যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে, তখন আল্লাহ ও রাসূলের আহবানে সাড়া দাও (আনফাল ৮/২৪)।
জী, হ্যাঁ। ইনশাল্লাহ আর হবে না। আমি তোমাকে এমন একটি সূরা শিখাতে চাই পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাত, ইনজীল, যাবূর ও ফুরক্বানে অনুরূপ কোন সূরা অবতীর্ণ হয়নি। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্ত্বার কসম করে বলছি, তাওরাত, ইনজীল, যাবূর ও ফুরক্বানে অনুরূপ কোন সূরা অবতীর্ণ হয়নি। সেটি হ’ল সাবঊল মাছানী এবং মহান কুরআন যা আমাকে দেয়া হয়েছে।[35]
সূরা বাক্বারাহ : উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) সূরা বাক্বারাহর অনেকগুলি আয়াতে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন। ৩৬ আয়াতে হযরত আদম (আঃ) ও মা হাওয়া (আঃ) সম্পর্কে এবং ২০০ আয়াত ও আয়াতুল কুরসী সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন। কুরআনে কোন আয়াতটি (মর্যাদায়) সবচেয়ে বড়? তিনি বলেন, হে আবুল মুনযির! জ্ঞান ও প্রজ্ঞা তোমার জন্য মুবারক হোক। যার হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্তার কসম করে বলছি, তার একটি জিহবা এবং দু’টি ঠোঁট থাকবে আরশের নীচে মালিকের গুণকীর্তন করবে।[36]
এতদ্ব্যতীত আলে-ইমরান ১৪, ২০০, ১৩৪ নিসা ২৪, ১০১, ১১৭ মায়েদাহ ১০৫ আন‘আম ৬৫ আ‘রাফ ২২, ১৭২ তাওবাহ ১২৮ ইউনুস ২, ২৬ ইউসুফ-এর শিক্ষা, ইবরাহীম ৫ নাহল ১২৬ ইসরা ১, ৭৯ কাহাফ ৬১, ৬৩, ৬৫, ৮০ হজ্জ ৫৫ নূর ৩৫, ৩৯, ৫৫ সাজদাহ ২১ আহযাব ৬, ৫২, ৫৬, ৭৫, ১১২, ছফফাত ১৪৭, শূরা ২০, ক্বফ ৩০, ত্বালাক ৪ নাযি‘আত ৭, তাকবীর ৫, লাইল ৬, বাইয়্যিনা, ইনশারাহ, তাকাছূর, ইখলাছসহ বিভিন্ন সূরা ও আয়াতের তাফসীর, শানে নুযূল তার ইলমী দক্ষতার অনন্য সংযোজন।[37]
তাঁর লিখিত মুছহাফ ওছমান (রাঃ)-এর খিলাফতকাল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। এই মুছহাফের খ্যাতি ছিল বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। উবাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মুহাম্মাদ মদীনায় বসবাস করতেন। একবার ইরাক থেকে কিছু লোক তাঁর নিকট এসে বলল, আমরা আপনার পিতার মুছহাফ দেখার জন্য এসেছি। তিনি বললেন, মুছহাফ তো আমাদের নিকট নেই তা খলীফা ওছমান (রাঃ)-এর নিকট সংরক্ষিত আছে।[38]
হাদীছ বর্ণনা : ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে যাঁদেরকে হাদীছের বিশেষজ্ঞ বলা হয় উবাই ইবনু কা‘ব ছিলেন তাঁদের অন্যতম। যাহাবী বলেছেন, উবাই ছিলেন সেই সকল ব্যক্তিদের একজন যাঁরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট থেকে হাদীছের বিরাট এক অংশ শুনেছিলেন। এই কারণে জ্ঞানীগুণী ছাহাবীদের মধ্যে যাঁদের নিজস্ব হালকা-ই-দারস ছিল তাঁরাও উবাইয়ের দারসে শরীক হওয়াকে গৌরবের বিষয় বলে মনে করতেন। আর এই কারণে তাঁর দারসে তাবেঈদের চেয়ে ছাহাবীদের সমাবেশ ঘটতো বেশী। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব, আবু আইউব আল-আনছারী, উবাদাহ ইবনু ছামিত, আবূ হুরায়রা, আবূ মূসা আল-আশ‘আরী, আনাস ইবনু মালিক, আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস, সাহল ইবনু সা‘দ, সুলায়মান ইবনু সুরাদ (রাঃ) প্রমুখের মত উঁচু স্তরের ছাহাবীগণ উবাইয়ের দারসে বসতেন। তাঁর দরসের নির্দিষ্ট সময় ছিল। তবে তাঁর জ্ঞান ভান্ডার সবার জন্য সর্বক্ষণ উন্মুক্ত ছিল। যখন তিনি ছালাতের জন্য মসজিদে নববীতে আসতেন তখন কেউ কিছু জানতে চাইলে মাহরূম করতেন না।[39]
কায়স ইবনু আববাদ ছাহাবীদের দীদার লাভে ধন্য হওয়ার জন্য একবার মদীনায় আসেন। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন এভাবে, আমি মদীনায় উবাই ইবনু কা‘ব অপেক্ষা অধিকতর বড় কোন আলিম পাইনি। ছালাতের সময় হ’লে মানুষ সমবেত হ’ল। জনগণের মধ্যে ওমর (রাঃ)ও ছিলেন। উবাই কোন একটি বিষয়ে মানুষকে শিক্ষাদানের প্রয়োজন অনুভব করলেন। ছালাত শেষে তিনি দাঁড়ালেন এবং সমবেত জনমন্ডলীর নিকট রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছ পৌঁছালেন। জনতা অত্যন্ত আগ্রহ ও আবেগের সাথে নীরবে তাঁর কথা শুনছিল। উবাইয়ের এমন সম্মান ও মর্যাদা দেখে কায়স আজীবন মুগ্ধ ছিলেন। হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে উবাই ছিলেন খুবই বিচক্ষণ ও সতর্ক। এ কারণে জীবনে বিরাট একটা অংশ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাহচর্যে কাটালেও খুব বেশী হাদীছ তিনি বর্ণনা করেননি। ইমাম বুখারী ও মুসলিম তাঁর বর্ণিত ১৬৪টি হাদীছ উল্লেখ করেছেন।[40]
ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে যাঁদের ইজতিহাদ ও ইসতিম্বাতের যোগ্যতা ছিল, উবাই তাঁদের অন্যতম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবনকালেই তিনি ফৎওয়ার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। আবুবকর (রাঃ)-এর খিলাফতকালেও সিদ্ধান্তদানকারী ফক্বীহদের মধ্যে গণ্য ছিলেন। ইবনু সা‘দ বর্ণনা করেন, আবুবকর (রাঃ) কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হ’লে মুহাজির ও আনছারদের মধ্যে যাঁরা চিন্তাশীল ও সিদ্ধান্তদানকারী ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাঁদের সাথে পরামর্শ করতেন। এই সকল ব্যক্তির একজন ছিলেন উবাই ইবনু কা‘ব। ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর খিলাফতকালেও তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ইবনু সা‘দ, সাহল ইবনু আবী খায়ছামা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে তিনজন মুহাজির ও তিনজন আনছার ফৎওয়া দিতেন। তাঁরা হ’লেন, ওমর, ওছমান, আলী, উবাই, মু‘আয ও যায়েদ ইবনু ছাবিত। রাসূল (ছাঃ) থেকে তিনি বহু হাদীছ রেওয়ায়াত করেছেন যেগুলি বিভিন্ন ছহীহ হাদীছ গ্রন্থসমূহে স্থান পেয়েছে। ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশের অধিক ছাহাবী হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে ওমর, আবু আইয়ুব আনছারী, উবাদা ইবনু ছামেত, সাহল ইবনু সা‘দ, আবু মূসা, ইবনু আববাস, আবূ হুরায়রা, আনাস ইবনু মালেক, সুলায়মান ইবনু সুরাদ, আব্দুল্লাহ ইবনু খাববাব এবং তদীয় পুত্র তুফায়েল প্রমুখ তাঁর নিকট থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন।[41]
যুদ্ধ ও জিহাদ : উবাই (রাঃ) বদর থেকে শুরু করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় যত যুদ্ধ হয়েছে তার প্রত্যেকটিতে যোগদান করেন। কুরাইশরা বদরে পরাজিত হয়ে মক্কায় ফিরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করে দেয়। ওহোদ যুদ্ধের প্রাক্কালে মক্কায় অবস্থানকারী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চাচা আববাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব গোপনে বনী গিফার গোত্রের এক লোকের মাধ্যমে একটি পত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট পাঠান। সেই পত্রে তিনি কুরাইশদের সকল গতিবিধি রাসূল (ছাঃ)-কে অবহিত করেন। লোকটি মদীনার উপকণ্ঠে কুবায় পত্রখানি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট হস্তান্তর করেন। রাসূল (ছাঃ) পত্রখানা সেখানে উবাই ইবনু কা‘বের দ্বারা পাঠ করিয়ে শোনেন এবং পত্রের বিষয় গোপন রাখার নির্দেশ দেন।
ওহোদ যুদ্ধ শেষে রাসূলে করীম (ছাঃ) আহত-নিহতদের খোঁজ-খবর নেওয়ার নির্দেশ দিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেন, তোমাদের কেউ একজন সা‘দ ইবনু রাবীর খোঁজ নাও তো। একজন আনছারী ছাহাবী (কা‘ব) তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় শহীদদের লাশের স্তূপ থেকে খুঁজে বের করেন।
খন্দক যুদ্ধের প্রাক্কালে মক্কার কুরাইশ নেতা আবূ সুফিয়ান, আবূ ওছামা আল-জাশামীর মারফত একটি চিঠি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট পাঠান। সেই চিঠিও রাসূল (ছাঃ) উবাইয়ের দ্বারা পাঠ করান। তেমনিভাবে হিজরী ২য় সনের রজব মাসে রাসূল (ছাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনু জাহাশ আল-আসাদীর নেতৃত্বে একটি বাহিনী নাখলা অভিমুখে প্রেরণ করেন। যাত্রাকালে তিনি আব্দুল্লাহর হাতে একটি সীলকৃত চিঠি দিয়ে বলেন, ‘দুই রাত একাধারে চলার পর চিঠিটি খুলে পাঠ করবে এবং এর নির্দেশ মত কাজ করবে। রাসূল (ছাঃ) এই চিঠিটি উবাইয়ের দ্বারা লেখান।[42] বদর, ওহোদ ও খন্দকসহ সকল যুদ্ধে তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি তিনি ওহোদ যুদ্ধে শত্রু পক্ষের নিক্ষিপ্ত তীরের আঘাতে আহতও হয়েছিলেন। রাসূল (ছাঃ) তাঁর চিকিৎসার জন্য একজন চিকিৎসক পাঠান। চিকিৎসক তাঁর রগ কেটে সেই স্থানে সেঁক দেয়।[43]
মর্যাদা : ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে তিনি সম্মানিত ছিলেন। উবাই (রাঃ) বিভিন্ন শাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন। তবে বিশেষভাবে কুরআন, তাফসীর, শানে নুযূল, নাসিখ-মানসূখ, হাদীছ ও ফিক্বহ শাস্ত্রে ছিলেন ইমাম ও মুজতাহিদ। একজন মুজতাহিদ বা গবেষকের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কুরআন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতেন। একদিন রাসূল (ছাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা বলতো কুরআনের শ্রেষ্ঠতম আয়াত কোনটি? বললেন, আয়াতুল কুরসী। রাসূল (ছাঃ) দারুণ খুশী হ’লেন এবং বললেন, উবাই, এই ইলম তোমাকে খুশী করুক। উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা বুঝা যায় তিনি কুরআনের আয়াত নিয়ে কতখানি চিন্তা-ভাবনা করতেন।[44]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর ওমর (রাঃ) উবাই সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর এসব বাণী অনেকবার মানুষকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেন। একবার মসজিদে নববীর মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, উবাই সবচেয়ে বড় ক্বারী। সিরিয়া সফরের সময় জাবিয়া নামক স্থানের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বলেন, তোমাদের কেউ কুরআন শিখতে চাইলে সে যেন উবাইয়ের কাছে আসে।[45] রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতী ছালাতুত তারাবীহ তাকে দিয়েই ওমর (রাঃ) পুনরায় চালু করেছিলেন। তিনি তাঁকে সায়্যিদুল মুসলিমীন নামে আখ্যায়িত করেছেন।[46]
ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেন, তিনি একজন বদরী ছাহাবী এবং ক্বারীদের সর্দার ছিলেন। তিনি আক্বাবায় শপথকারী এবং বদর রণাঙ্গনের সম্মুখযোদ্ধা। তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় ছিলেন কাতিবে অহি তথা কুরআন সংকলক। ইলমে ও আমলে নেতৃস্থানীয় একজন সম্মানিত ছাহাবী।[47] ইবনু হাজার আসক্বালানী তার প্রখ্যাত গ্রন্থ তাকরীবুত তাহযীবে বলেন, তিনি ছিলেন উঁচু দরের সম্মানিত একজন ছাহাবী।[48]
মৃত্যু : তার মৃত্যু নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ইবনু আবদিল বার বলেন, অধিকাংশের মতে তিনি ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে মৃত্যুবরণ করেন। ইবনু খায়ছামা ইয়াহয়া ইবনু মুঈন-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ২০ বা ১৯ হিজরীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ইবনু হিববান ও ওয়াকেদী বর্ণনা মতে ২২ হি.। তার মৃত্যুতে ওমর বলেছিলেন, আজ সায়্যিদুল মুসলিমীনের মৃত্যু হ’ল। কেউ বলেন, তার মৃত্যু হয়েছে ৩০ হি. বা ৩২ হিজরীতে ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতকালে। আবু নু‘আয়ম উক্ত বর্ণনাকে সঠিক বলেছেন। তার দলীল হ’ল, যিরর ইবনু হুবায়শ ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতকালে তার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
ইমাম বুখারী (রহঃ) তার তারীখে উল্লেখ করেন, আব্দুর রহমান ইবনু আবযা ওছমান (রাঃ)-এর (মুনাফিকদের সৃষ্ট) ফিতনার সময় উবাই ইবনু কা‘ব-এর সাথে সাক্ষাৎ করে ফিতনা সর্ম্পকে মর্মপীড়া ব্যক্ত করেন। ইমাম বাগাবী (রহঃ) হাসান-এর সূত্র উল্লেখ করেন যে, তিনি ওছমান (রাঃ)-এর শাহাদতের এক শুক্রবার পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন।[49]
তুফায়ল ও মুহাম্মাদ নামে তাঁর দুই পুত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাদের মাতা ছিল উম্মে তুফায়ল বিনতুত তুফায়ল ইবনু আমর। উম্মে আমর নামে তার এক কন্যা ছিল। কিন্তু তার মাতার নাম অজ্ঞাত।[50]
উপসংহার : কুরআন মানবতার একমাত্র মুক্তির সনদ। কুরআনের সেবায় যাদের জীবন ধন্য, এমন গৌরবময় জীবন আর কার হ’তে পারে! রাসূল (ছাঃ) দ্ব্যর্থহীনভাবে কুরআনের সেবকদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।[51] এক ব্যক্তি উবাই ইবনে কা‘বকে বললেন, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, আল্লাহর কিতাবকে পথপ্রদর্শক হিসাবে গ্রহণ করুন এবং বিচারক ও সালিসকারী হিসাবে এতে সন্তুষ্ট থাকুন। কেননা মহান আল্লাহই তোমাদের মধ্যে তোমাদের রাসূলকে স্থলাভিষিক্ত করেছেন। যিনি আপনার রাসূলকে আপনার উত্তরাধিকারী, সুপারিশকারী, আনুগত্যকারী এবং সাক্ষী হিসাবে নিযুক্ত করেছেন।[52] উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ)-এর জীবন থেকে আমরা অনেক শিক্ষা পাই। তিনি ছিলেন একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব, যিনি ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। তাঁর খেদমত ইসলাম ও মুসলমানের জন্য চির স্বরণীয় হয়ে থাকবে।
ড. মুখতার আযহার
প্রভাষক, কাশিয়াবাড়ী আলিম মাদ্রাসা, গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
[1]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, আল-ইছাবাহ, উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ), ক্র. ৩২, ১/২৭ পৃ.; শায়খ ছফওয়ান দাবূদী, আ‘লামুল মুসলিমীন উবাই ইবনে কা‘ব (দামেশ্ক : দারুল কলাম ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি. ১৪-১৬ পৃ.)।
[2]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী (বৈরূত : দারুল মা‘রিফাহ, ১৩৭৯ হি.), ৫/৩৯৬, ৩৮৭ পৃ.।
[3]. আবুল হাসান নূরুদ্দীন আল-হায়ছামী, মাজমাঊয যাওয়ায়েদ ওয়া মামবাঊল ফাওয়ায়েদ (কায়রো : মাকতাবুল কুদসী ১৪১৪/১৯৯৪), তাহক্বীক: হিসামুদ্দীন কুদসী, ২/২০০, ২০৩ পৃ.।
[4]. হাফেয শামসুদ্দীন আয-যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, তাহক্বীক : শুয়াইব আরনাউত্ব, (বৈরূত : মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ৯ম সংস্করণ, ১৪১৩/১৯৯৩), ক্রমিক নং ৮২, ১/৩৯৯ পৃ.।
[5]. ইসলামী বিশ্বকোষ ৫/৬২৬ পৃ.।
[6]. ছাফওয়ান আদনান দাঊদী, উবাই ইবনে কা‘ব (দামেশ্ক : দারুল কলাম, ১ম প্রকাশ ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.), পৃ. ২৩।
[7]. আহমাদ ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে জাবের ইবনে দাউদ বালাযুরী, আনসাবুল আশরাফ (প্রকাশ, ১৪১৭/১৯৯৬), ১/২৬৭ পৃ.।
[8]. মুসতাদরাকে হাকেম ৩/৩০৩ পৃ; আবু উবাইদ, গারীবুল মুছান্নেফ ১/৯৬ পৃ.।
[9]. আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে সা‘দ, তাবাক্বাত ইবনে সা‘দ (সঊদী আরব : মাকতাবাতুছ ছাদীক, ১৪১৬ হি.), ৩/৪৯৯ পৃ.।
[10]. আবু বকর আব্দুর রাযযাক ইবনে হুমাম, মুছান্নাফে আব্দির রাযযাক (বৈরূত : মাকতাবুল ইসলামী, ২য় সংস্করণ, ১৪০৩হিঃ), ১/৪৩৮ পৃ.।
[11]. মুসতাদরাকে হাকেম ৩/৩০৩; মুছান্নাফে আব্দির রাযযাক ২/৫৩ পৃ.।
[12]. মুহাম্মাদ ইউসুফ কান্দালভী, হায়াতুছ ছাহাবা (বৈরূত : মুআসসাসাতুর রিসালাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪২০/১৯৯৯), ৩/২৮৪ পৃ.; উবাই ইবনে কা‘ব, পৃ. ২৮।
[13]. উবাই ইবনে কা‘ব, পৃ. ৩২।
[14]. হায়াতুছ ছাহাবা ১/৪৭৬ পৃ.।
[15]. আহমাদ ২/৪১৩; হাকেম ২/২৫৮।
[16]. আহমাদ ৩/১৩০; বুখারী হা/৪৯৫৯; মুসলিম হা/৭৯৯; তিরমিযী হা/৩৭৯৫।
[17]. বুখারী হা/৪৯৫৯; তাবাক্বাত ৩/৪৯৯-৫০০; উসদুল গাবাহ ১/৪৯ পৃ.।
[18]. বুখারী হা/৩৮০৮।
[19]. বায়হাক্বী, যুহদুল কবীর ১/৩৫০, গৃহীত : প্রফেসর ড. আসাদুলাহ আল-গালিব, মুত্তাক্বীদের পরিচয়, মাসিক আত-তাহরীক, জানুয়ারী ২০১৩।
[20]. মুসতাদরাকে হাকেম ৩/৪২২ পৃ.।
[21]. আহমাদ ৫/১২৩, ১৪৪ পৃ.।
[22]. ইসলামী বিশ্বকোষ ৫/৬২৬ পৃ.।
[23]. আল-ইছাবাহ ১/১৯ পৃ.।
[24]. মুসনাদ আহমাদ ৪/১১৩ পৃ.।
[25]. ইসলামী বিশ্বকোষ, ঐ।
[26]. উবাই ইবনে কা‘ব, পৃ. ৩২।
[27]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১২২৪; মিশকাত হা/৬১১১।
[28]. তাবাক্বাতুল কুবরা ৪/১৮৪; হায়াতুছ ছাহাবাহ ৩/৭৯৫ পৃ.।
[29]. তাবাক্বাত ৩/৪৯৮; উসদুল গাবা ১/৫০ পৃ.।
[30]. আল-ইছাবাহ ১/২৭ পৃ.।
[31]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৩/২৪১ পৃ.; দুররুল মানছূর ৫/১৮৩ পৃ.।
[32]. তাবাক্বাতুল কুবরা ৩/৬০; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৩/২৪১ পৃ.।
[33]. খালেদ মুহাম্মাদ ছাবেত, রিজালুন হাওলার রাসূল (বৈরূত : দারুল ফিকর, ১ম সংস্করণ, ১৪২১হি./২০০০ খ্রি.), পৃ. ৩৬৫।
[34]. আহমাদ ৫/১৩৫ পৃ.; ইবনু জারীর ৭/২৬৬ পৃ.; উবাই ইবনু কা‘ব, পৃ. ১১৯।
[35]. আহমাদ ২/৪১৩; হাকেম ২/২৫৮।
[36]. আহমাদ ৫/১৪২; মুসলিম হা/৮১০; আবূদাঊদ হা/১৪৬০।
[37]. উবাই ইবনে কা‘ব ১১৬-১৪০ পৃ. দ্র.।
[38]. ইসলামী বিশ্বকোষ ৫/৬২৬ পৃ.।
[39]. সিয়ারু আ‘লামুন নুবালা ৩/২৪৩ পৃ.।
[40]. সিয়ারু আ‘লামুন নুবালা, ঐ।
[41]. উবাই ইবনে কা‘ব, পৃ. ৫১-৭৭; ইসলামী বিশ্বকোষ, ৫/৬২৬ পৃ.।
[42]. তাবাক্বাতুল কুবরা ৩/৪৯৮ পৃ.।
[43]. আহমাদ ৩/৩০৩, হা/১৪২৫২।
[44]. রিজালুন হাওলার রাসূল, পৃ. ৩৬৪ ।
[45]. মুসনাদ আহমাদ ৫/১২৩; হায়াতুছ ছাহাবা ৩/২০১ পৃ.।
[46]. হায়াতুছ ছাহাবাহ ৩/৫১৯; তাযকিরাতুল হুফফায ১/১৭; আল-ইছাবাহ, ১/১৯ পৃ.।
[47]. সিয়ারু আ‘লামিল নুবালা ১/৮৯; তারীখুল ইসলাম ২/১০৭ প।
[48]. ইবনে হাজার, তাক্বরীবুত তাহযীব (সিরিয়া : দারুর রাশেদ, ১ম সংস্করণ, ১৪০৬হি./১৯৮৬ খ্রি.), ১৮৩ পৃ.।
[49]. তিরমিযী হা/১৯৭৯; ছহীহাহ হা/২৭৬; মিশকাত হা/৪৯৩৪।
[50]. বিস্তারিত দ্র. ইসলামী বিশ্বকোষ ৫/৬২৬ পৃ.।
[51]. বুখারী হা/৫০২৭; আবূদাঊদ হা/১৪৫২; মিশকাত হা/২১০৯।
[52]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৩/২৩৮ পৃ.।