পথশিশুদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব

প্রতিটি পরিবারের সৌন্দর্য হ’ল আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত চক্ষুশীতলকারী বিশেষ নে‘মত সন্তান-সন্ততি। শিশুরা ফুলবাগানে ফুটন্ত ফুলের মত পরিবার নামক বাগানের শোভা বর্ধন করে। শিশু শব্দটি শুনলেই হৃদয়ে জেগে উঠে মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালবাসায় জড়ানো অদৃশ্য এক বন্ধনের অনুভূতি। কিন্তু সব শিশুদের ক্ষেত্রে সবার এমন অনুভূতি জাগ্রত হয় না। পৃথিবীতে প্রতিটি মানব শিশুই নিজ নিজ পরিবারে স্বাধীন সত্তা, মানবিক এবং সামাজিক সকল অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অথচ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এই অধিকারের ক্ষেত্রে শিশুদের সচ্ছল অথবা অসচ্ছল পরিবারে বেড়ে উঠা সাধারণ শিশু এবং পথ শিশু অভিধায় দু’ভাগে বিভক্ত করেছে। পথ শিশু বলতেই অবহেলায় বেড়ে ওঠা মলিন মুখের চাহনি এবং সুবিধা বঞ্চিত দারিদ্র্যক্লিষ্ট অবয়ব দৃশ্যপটে ভেসে উঠে। তাদের জন্য সমাজের মানুষের দয়ার্দ্র অনুভূতির পরিবর্তে বিরক্তির ছাপ প্রকাশ পায়। তারা ফুল বাগানের সোভা বর্ধনকারী হিসাবে নয় বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা হিসাবে জীবনভর অবহেলিত হ’তে থাকে। তারা পরিবার নামক ফুল বাগানে বিকশিত হয় না বরং রাস্তার দু’ধারে, ময়লার ভাগাড়ে, খাবার হোটেলে, রিকশার চালকের ছিটে অথবা কলকারখানার ভারী মেশিন হাতে যৎ সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে রাষ্ট্র যন্ত্রের উন্নয়নের চাকা অগ্রসর করে। অথচ তারা আগামী দিনের জাতির কর্ণধার। বিশ্ব মানবতার সমৃদ্ধ জীবন উন্নয়নের উদীয়মান সম্ভাবনা। যাদের হাতের ছোঁয়ায় হ’তে পারে বিশ্ব সভ্যতা বিনির্মাণ। তারা আজ পথের কাঙ্গাল, নির্যাতিত, নিগৃহীত এবং বাস্ত্তচ্যুত। তারা কেউ পথশিশু হয়ে জন্মগ্রহণ করেনি। সমাজ তাদের পথশিশু পরিচয় দিয়েছে। সেজন্য তাদের প্রতি সমাজের মানুষের সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে পথশিশুদের প্রতি সমাজের সেই দায়িত্ববোধ নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

সাধারণ শিশু ও পথশিশুর পরিচয় : জাতিসংঘে ১৯৮৯ সালের ২০শে নভেম্বর ১৯৩টি দেশের অংশগ্রহণের মধ্য থেকে ১৯১টি দেশের স্বাক্ষরে সর্বসম্মতিক্রমে আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদ গৃহীত হয়। সে সনদের প্রথম অনুচ্ছেদে শিশুর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘For the purposes of the present Convention, a child means every human being below the age of eighteen years unless under the law applicable to the child, majority is attained earlier’. অর্থাৎ ‘এই সনদে ১৮ বছরের নীচে সব মানব সন্তানকে শিশু বলা হবে, যদি না শিশুর জন্য প্রযোজ্য আইনের আওতায় ১৮ বছরের আগেও শিশুকে সাবালক হিসাবে বিবেচনা করা হয়’।[1]

বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে শিশু অধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০১৩ সালে সেটা পরিবর্তন করে শিশু আইন-২০১৩ প্রণীত হয়। এ আইনের ধারা-৪-এ বলা হয়েছে, ‘বিদ্যমান অন্য কোন আইনে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যক্তি শিশু হিসাবে গণ্য হবে’। শিশু ও শিশুশ্রম বিষয়ক আইনগুলো থেকে শিশুদের বয়সসীমার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যায়। তবে ব্যবহারিক জীবনে ১৮ বছরের নীচে সকলকে সাধারণ শিশু হিসাবে গণ্য করা হয়। এখানে সাধারণ শিশু ও পথশিশুদের বয়সের কোন তারতম্য না থাকলেও সামাজিক অধিকারের ক্ষেত্রে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। আর এই পার্থক্য সৃষ্টিই হয়েছে শিশুদের ‘পথশিশু’ অভিধায় সামাজিক শ্রেণী বিভক্তির কারণে। এক্ষণে পথশিশু বলতে কাদের বোঝানো হয়? লক্ষ্যহীন উদ্দেশ্য নিয়ে যে সমস্ত শিশু বস্তি এলাকা, বিভিন্ন খাবার হোটেল, মার্কেট, রেল স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড, গাড়ী পার্কিং, বর্জ্যভূমি, বেদখল বাসস্থান, নির্মাণাধীন ভবন কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে উদ্বাস্ত্তর ন্যায় মানবেতর জীবন-যাপন করে তাদেরকেই পথশিশু বলা হয়।

সমাজ-কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজ-সেবা অধিদফতরের Appropriate resources for improving street children’s environment (arise) নামে পরিচিত প্রকল্পটি পথশিশুদের নিম্নোক্ত চার ভাগে সংজ্ঞায়িত করেছে : (ক) এক থেকে দশ ঘণ্টা বা তার বেশী সময় যে শিশু রাস্তায় থাকে, কাজ করে এবং কাজ শেষে ফিরে যায় বস্তিতে বা বাসায়। (খ) এক থেকে দশ ঘণ্টা বা তার বেশী সময় রাস্তায় কাজ করে ফিরে যায়, আত্মীয়-স্বজন বা আশ্রয় কেন্দ্রে। (গ) এক থেকে দশ ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশী সময় রাস্তায় কাজ করে, থাকে চাকুরীদাতার বাসায়। (ঘ) চবিবশ ঘণ্টার সারাটা সময় রাস্তায় থাকে, রাস্তায় খায় এবং রাস্তায় ঘুমায়। তবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ চবিবশ ঘণ্টার সারাটা সময় যারা রাস্তায় থাকে, কাজ করে এবং রাস্তাতেই ঘুমায় কেবল তাদেরকেই পথশিশু মনে করে।[2]

জাতিসংঘ স্বীকৃত আন্তর্জাতিক শিশু সংগঠন ইউনিসেফের মতে তিন প্রকার শিশুদের পথশিশু হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। সেগুলো হ’ল, (ক) রাস্তায় বসবাসকৃত শিশু : যারা পরিবার থেকে পালিয়ে একাকী রাস্তায় বসবাস করে।

(খ) রাস্তার শ্রমিক শিশু : যে শিশুরা অধিকাংশ সময় রাস্তায় কাটায় কিন্তু দিনশেষে নিয়মিত বাসায় যায়।

(গ) রাস্তায় পারিবারে বসবাসরত শিশু : যে শিশুরা তাদের পরিবারের সাথেই রাস্তায় বসবাস করে।[3]

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও প্রকল্প পথশিশুদের জীবন যাত্রার উপর ভিত্তি করে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন মাত্র। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে মাথার উপর বিস্তীর্ণ আকাশ যাদের একমাত্র ঢাল, রাস্তা যাদের একমাত্র আবাসস্থল এবং জীবন ও জীবিকার একমাত্র সম্বল তারাই পথশিশু।

পথশিশুদের ইতিহাস : খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীতে ইউরোপে প্রথম পথশিশুরা নযরে আসে। ষোড়শ শতকে শুধুমাত্র ইংল্যান্ডে পথশিশুদের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। সে সময় অবহেলা ও নিষ্ঠুরতার শিকার হওয়ায় তাদেরকে একটি সমস্যা হিসাবে আখ্যায়িত করে সমাধান করা হয়। ফলশ্রুতিতে, ক্রমান্বয়ে লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতেও এ সমস্ত শিশুদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। লন্ডনের বিখ্যাত ইংরেজ সাংবাদিক, নাট্যকার ও উকিল হেনরি মেহেউ (১৮১২-১৮৮৭ খৃ.) লন্ডনের দরিদ্রদের উপর একটি জরিপ পরিচালনা করেন। যেটা পরবর্তীতে ১৮৫১ খৃষ্টাব্দে ‘London Labour and the London Poor’ নামে সিরিজ বই হিসাবে সংকলিত হয়। সেই বইয়ে হেনরি মেহেউ সর্বপ্রথম ‘পথশিশু’ শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৯৭৯ সালকে জাতিসংঘ ‘পথশিশুদের বছর’ ঘোষণা করার পর পথশিশু শব্দটি জনসাধারণের ব্যবহারে আসে। এর পূর্বে তাদের গৃহহীন, পরিত্যক্ত কিংবা বাড়ী থেকে পলাতক শিশু বলা হ’ত। ১৯৮২ সালে একটি এনজিও পথশিশু ও যুবকদের নিয়ে কিছু কর্মসূচী হাতে নেয়। ১৯৮৬ সালে ইউনিসেফের কার্যনির্বাহী বোর্ড যে সমস্ত শিশুরা মানবেতর জীবন যাপন করছিল তাদের জন্য অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তারা পথশিশুদের জন্য নতুন কিছু পরিভাষা উদ্ভাবন করেছিল যেমন, কঠিন পরিস্থিতিতে পড়া শিশু, সুরক্ষাহীন শিশু, অনাথ ও দুর্বল শিশু ইত্যাদি। কিন্তু এ সমস্ত পরিভাষাগুলো শিশুদের জীবনের বাস্তব কঠিন অবস্থা বুঝাতে ব্যর্থ হয়। ১৯৯৪ সালে মানবাধিকার কমিশন যখন পথশিশু পরিভাষাটি ব্যবহার করে, তখন পথশিশুদের নিয়ে কাজ করত এমন কিছু সংস্থা ও প্রতিনিধিরা ক্রমাগত পথশিশু শব্দটি ব্যবহার করতে থাকে।[4]

ফলশ্রুতিতে, এই শব্দের ব্যবহার যত দ্রুত মানুষের মুখে মুখে বৃদ্ধি পেতে থাকে তার চেয়েও দ্বিগুণ গতিতে দেশে দেশে পথশিশুদের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। একটি তথ্য মতে, সমগ্র বিশ্বে ১০০ মিলিয়নেরও বেশী পথশিশু রয়েছে। ইউনিসেফের তথ্য মতে, ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী সংখ্যক পথশিশু রেকর্ড করা হয়েছে, যা আনুমানিক ১৮ মিলিয়ন।[5] ২০১১ সালের একটি জরিপে শুধুমাত্র নয়াদিল্লীতে ১ লক্ষ, কলকাতায় ১ লক্ষ ২৫ হাযার এবং মুম্বাইতে ১ লক্ষ ৫০ হাযার পথশিশু বসবাস করে।[6] বর্তমানে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা সে তথ্য জানা না গেলেও বিশ্বব্যাপী পথশিশু সমস্যার যে কোন স্থায়ী সমাধান হয়নি তা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট।

বাংলাদেশে বর্তমানে পথশিশুদের সংখ্যা কত তার সঠিক কোন হিসাব জানা যায়নি। সর্বশেষ গত মার্চ ২০২৩-এ ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ‘‌সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঢাকাসহ মোট আটটি বিভাগের যেসব স্থানে পথশিশুর আনাগোনা বেশী সেখানকার ৫-১৭ বছর বয়সী ৭ হাযার ২০০ শিশুর কাছে সরাসরি গিয়ে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে জরিপ প্রতিবেদনটি তৈরী করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৮.৫%, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭.৫%, খুলনা বিভাগে ৮.১%, রাজশাহী বিভাগে ৭.৩%, রংপুর বিভাগে ৫.৫%, বরিশাল বিভাগে ৪.৯%, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪.১% এবং সিলেটে সর্বনিম্ন ৪.০% পথশিশু বসবাস করে।[7] জরিপে রাস্তাঘাটে বসবাসকারী শিশুর মোট সংখ্যা না থাকলেও ইউনিসেফ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এ সংখ্যা ১০ লক্ষাধিক হ’তে পারে।[8]

সুতরাং আধুনিক বিশ্ব উৎকর্ষতার চরম শিখরে অবস্থান করলেও পথশিশুদের প্রশ্নে এই উৎকর্ষতার অর্জন ফিকে হয়ে যায়। দরিদ্র দেশগুলোতে পথশিশু থাকাটা স্বাভাবিক ধরা যেতে পারে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতেও যদি পথশিশু থাকে তাহ’লে বিশ্ব বিবেকের কাছে আমাদের প্রশ্ন তবে এই সমৃদ্ধি কাদের জন্য?

পথশিশুদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব : শিশুরা পরিবার ও সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা মানব সভ্যতার রক্ষাকবচ। সেজন্য বলা হয়ে থাকে, আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। প্রতিটি শিশুই আগামীর পৃথিবীকে সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছানোর সুপ্ত প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থার কারণে সে প্রতিভাগুলো অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যায়। সমাজ বিশ্লেষকদের মতে, একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায় পথশিশু। সেজন্য পথশিশুদের সামাজিক মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক সংগঠনকে কাজ করতে দেখা যায়। তারা শুধু বাৎসরিক জরিপ প্রতিবেদন তৈরী করেই দায়মুক্ত হয়ে যান। কিন্তু পথশিশুদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। এর পেছনে বহুমাত্রিক কারণও বিদ্যমান। তন্মধ্যে রাষ্ট্রযন্ত্রের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা এবং সামাজিক অসচেতনতা অন্যতম কারণ। নিম্নে পথশিশুদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য তুলে ধরা হ’ল।

১. মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ : জন্ম পরবর্তী একজন মানুষের প্রধান মৌলিক অধিকার ৫টি যথা- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। রাষ্ট্র ধনী কিংবা দরিদ্র হোক প্রত্যেক নাগরিকেরই সংবিধানসিদ্ধ এই ৫টি অধিকারের চাহিদা পূরণ করতে বাধ্য। পথশিশুদের ক্ষেত্রে এই চাহিদা পূরণের প্রশ্নে ‘সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২’ শীর্ষক সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন বলছে, রাস্তায় ঘুমানো শিশুদের প্রতি তিনজনের মধ্যে প্রায় একজন অর্থাৎ ৩০%-এর বেশী জীবনের প্রয়োজনীয় মৌলিক সুযোগ-সুবিধা যেমন- ঘুমানোর জন্য বিছানা এবং নিরাপত্তা ও স্বস্তির জন্য একটি ঘর থেকে বঞ্চিত। তারা খোলা জায়গায় ঘুমায়। প্রায় অর্ধেক শিশু মাটিতে ঘুমায় শুধু পাটের ব্যাগ, শক্ত কাগজ, প্লাস্টিকের টুকরা বা একটি পাতলা কম্বল নিয়ে। প্রায় ৭% শিশু সম্পূর্ণ একা ঘুমায় এবং ১৭% শিশু কয়েকজন একসাথে মিলে ঘুমানোর মাধ্যমে সুরক্ষা ও স্বস্তি খোঁজে। দশজন পথশিশুর তিনজন কখনোই স্কুলে ভর্তি হয়নি। পথশিশুদের কেবল ১৮.৭% পঞ্চম শ্রেণী পাশ করেছে। খুব নগণ্য সংখ্যক পথশিশু নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশুনা করেছে। প্রতি চার জনের মধ্যে তিনজন অর্থাৎ ৭১.৮% পড়তে বা লিখতে পারে না। এই জরিপে অংশ নেওয়া শিশুদের অর্ধেকের বেশী জানায়, জরিপের আগে তিন মাসের মধ্যে তারা অসুস্থ হয়েছিল। ঐ সময় তারা জ্বর, কাশি, মাথা ব্যথা ও পানিবাহিত রোগে ভোগে।[9] কিন্তু টাকার অভাবে ৩৩.৮% শিশুই চিকিৎসা করাতে পারে না। আবার সপ্তাহে ৪১.৫% শিশু এক রাত না খেয়ে ঘুমায়।[10]

সুতরাং এই প্রতিবেদন থেকে পথশিশুদের জীবন মান স্পষ্ট বোঝা যায়। যারা বাড়তি সুবিধা তো দূরের কথা মৌলিক চাহিদাটুকুও থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুযায়ী দেশে ৩ স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার কাঠামো বিদ্যমান। যেখানে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিভাগীয় শহরাঞ্চল পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে। দেশের তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ স্তরের সাধারণ জনগণ ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে কি-না সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সে সমস্ত জনপ্রতিনিধিদের উপরেই বর্তায়। কিন্তু আদৌ কি তারা সেদিকে খেয়াল রাখেন? এ দেশে আজও অনেক নিম্নবৃত্ত পরিবার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সেখানে পথশিশুদের মৌলিক অধিকার কি করে নিশ্চিত হবে? ইসলামের সোনালী যুগের শাসকরা শুধু তাদের নাগরিক নয় বরং রাষ্ট্রের প্রাণীদের প্রতিও নযর রাখতেন। সেকারণে ওমর (রাঃ) বলেছিলেন, ‘যদি ফোরাত নদীর তীরে একটি ভেড়ার বাচ্চাও হারানো অবস্থায় মারা যায়, তাতে আমি ভীত হই যে, সেজন্য আমাকে ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হ’তে হবে’।[11] এই তো সেদিনের কথা যখন লিবীয়ার ত্রিপোলীর রাস্তায় হাযার হাযার মানুষ ছিন্ন পোষাকে নগ্নপদে ঘুরত। যাদের কিছুই ছিল না তাদের ত্রাতা হিসাবে আবির্ভূত হয়ে মুয়াম্মার গাদ্দাফী শূন্য থেকে পূর্ণতায় পৌঁঁছেছিলেন। যারা যাযাবরের মত তাঁবুতে বসবাস করত তাদের জন্য তিনি গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। তিনি নিজে প্রেসিডেন্ট হয়েও অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন। এক সময় তার পিতা তাকে নিজের জন্য একটি বাড়ী নির্মাণ করতে বললে তিনি বলেছিলেন, একজন লিবীয়র গৃহনির্মাণ বাকী থাকতে আপনার ছেলে নিজের জন্য কোন বাড়ী বানাবে না।[12]

সুতরাং এ সমস্ত দৃষ্টান্ত থেকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের শিক্ষাগ্রহণ পূর্বক পথশিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা উচিত।

২. সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ : বাংলাদেশে পথশিশুদের অবস্থান মূলতঃ শহরাঞ্চলে। যাদের কেউ বস্তি এলাকায় পরিবারের সাথে বসবাস করে। কেউ বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করে। কেউ পরিবারসহ রাস্তায় থাকে আবার কেউ কর্মদাতার বাড়ীতে অথবা কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করে। তারা যেখানে যে পরিবেশেই অবস্থান করুক না কেন সামাজিকভাবে শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতায় তাদের জীবন জর্জরিত। প্রভাবশালীদের নির্যাতন, মালিকশ্রেণীর নিষ্পেষণ, এলিট শ্রেণীদের গালি, পথচারীদের চড়-থাপ্পড় তাদের নিত্যদিনের প্রাপ্তি। এক লোকমা খাবারের জন্য রাস্তায়, রেল স্টেশনে, বাস স্ট্যান্ডে, সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির কাছে কত শত শিশু ভিক্ষা করে, হকারী করে। দিনশেষে তারা খেয়ে না খেয়ে শরীরের ক্লান্তি নিবারণের জন্য যখন খোলা আকাশের নীচে স্যাঁতসেঁতে মাটিতে মাথার নিচে ইট-পাথর অথবা নিজের নোংরা ছেঁড়া পরিধেয় পোষাকের পুটলি রেখে চোখের দু’পাতা বন্ধ করে; তখনই গাড়ির হর্ন, শা শা শব্দ, তীব্র গরম, মশার কামড়, প্রচন্ড শীত কিংবা মুষলধারে বর্ষিত বৃষ্টি তাদের সেই ঘুমটুকুও কেড়ে নেয়। অন্ধকার রাতে কখনো পথচারী তাদের শরীরের সাথে হোঁচট খেয়ে রেগে-মেগে লাথি মারে, কখনো গায়ে পানি ঢেলে দেয় আবার কখনো উঁচু উঁচু ভবনের নিরাপত্তা প্রহরীর তাড়া খেয়ে নির্ঘুম রজনী পার করে। তাদের জীবনে নিরাপত্তা কোথায়? যারা বস্তি এলাকায় থাকে তাদেরই কি কোন নিরাপত্তা আছে? গ্রীষ্মে আগুন তাদের গ্রাস করে, খেলাঘরের ন্যায় পাতা বাসস্থান বৈশাখী ঝড়ে লন্ড-ভন্ড হয়ে যায়। বর্ষায় ছনের ছাউনি, পলিথিনের তাঁবু কিংবা ঝাঝরা টিনের চাল ভেদ করে পানি ঢুকে জীবনের যৎ সামান্য সম্বলটুকুও ভিজিয়ে চলে যায়। ভালো কোন পরিবেশ নেই, নেই জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় উপকরণ। শিক্ষা নেই, নেই চিকিৎসা। পথশিশু যেন বেওয়ারিশ জীবন্ত লাশ! এই লাশটাকে যে যার ইচ্ছা মত ব্যবহার করে। শহরের ছোট-বড় হোটেল, মোটর-বাইক গ্যারেজ, লেদ ম্যাশিন কারখানা থেকে শুরু করে গার্মেন্টস, ফ্যাক্টরিতে পর্যন্ত তারা কলুর বলদের মত পরিশ্রম করে। কিন্তু পারিশ্রমিকের নামে পায় শুভঙ্করের ফাঁকি। উপরন্তু চুন থেকে পান খসলেই বেতন কর্তন, চাকুরী থেকে বহিষ্কার, চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি, গালাগাল তো কিছুই নয়। নির্বিচারে নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যারও শিকার হ’তে হয়।

সুধী পাঠক! আমরা সব সময় রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি। অবশ্যই রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু আমরাও তো এই সমাজেরই একজন। আমরা আমাদের মনুষ্যত্ববোধ ও বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি, কী করেছি পথশিশুদের জন্য? আমরা তাদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে না পারি কিন্তু তাদেরকে কি মানুষ ভাবতে পেরেছি? তাদের দেখে ভ্রু কুচকানো অথবা বিরক্তি ভরে নযর দেয়া বন্ধ করতে পেরেছি? তাদের শ্রমকে মূল্যায়ন করেছি? তাদের নায্য হিস্যা দিয়েছি? তাদের প্রতি আমাদের হাত ও যবানের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন এবং পশুর ন্যায় যৌন লালসা বন্ধ করতে পেরেছি? অন্তত তাদের মাথায় হাত রেখে কী সহানুভূতির কোমল পরশ বুলিয়ে দিতে পেরেছি? সামাজিক জীব হিসাবে এগুলোই আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। আমরা যদি এই দায়িত্ব পালন করে পারতপক্ষে তাদের মানসিক সমর্থন দিতে পারতাম, তাহ’লে তারা আজ নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করত না।

৩. শিশুশ্রম বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ : ১৮ বছরের নীচে সকলকে শিশু হিসাবে গণ্য করা হয় বিধায় ৫-১৭ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের দ্বারা বেতনসহ অথবা বেতনবিহীন যে কাজ করানো হয় তাই শিশুশ্রমের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা (ILO)-এর ন্যূনতম বয়স কনভেনশন ১৩৮-এ বলা হয়েছে, ১২ বছর বয়সে একটি শিশুকে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে হালকা কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয় এবং ১৫ বছর বয়সে একটি শিশুকে কর্মশক্তিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ২০০৬ সালে একটি শ্রম আইন পাশ করে চাকুরীর জন্য ন্যূনতম আইনী বয়স ১৪ বছর করেছে।[13] তাহ’লে প্রশ্ন দাঁড়ায়, আন্তর্জাতিক শিশু আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের নীচে সকলে শিশু হ’লে ১২, ১৪ ও ১৫ বছর বয়সী শিশুদের কেন আইনী নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রেখে শ্রমের অনুমতি দেয়া হচ্ছে? তাদের শ্রমকে কেন শিশুশ্রম বলা হবে না? যদি তারা শিশুশ্রম পুরোপুরি বিলুপ্ত করতেই চান তবে ১৮ বছরের পূর্বে সকল শিশুশ্রম কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না? তাহ’লে কী আইন প্রণেতারাই শিশুশ্রম সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করতে আগ্রহী নন?

পথশিশুদের উৎপত্তি যেমন পাশ্চাত্য সমাজে তদ্রূপ শিশুশ্রমও তাদের কাছ থেকেই বিকশিত হয়ে আজ পৃথিবীবাসীর জন্য কোমলমতি শিশুরা বোঝায় পরিণত হয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে গ্রেট ব্রিটেনে কারখানা চালু হ’লে সর্বপ্রথম শিশুশ্রম একটি সামাজিক সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চল ও মধ্য পশ্চিমাঞ্চলে গৃহযুদ্ধের পর এবং দক্ষিণে ১৯১০ সালের পর শিশুশ্রম একটি স্বীকৃত সমস্যা হিসাবে দেখা দেয়। আগেকার দিনে শিশুরা কারখানায় শিক্ষানবিশ অথবা পরিবারের পরিচারক হিসাবে কাজ করত। কিন্তু কারখানাগুলোতে তাদের নিয়োগ করায় তারা দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে যায়। ব্রিটেনে ১৮০২ সালে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে সংসদে গৃহীত আইন দ্বারা এ সমস্যার নিরসন হয়। ইউরোপের অন্যান্য দেশে একই ধরনের আইন অনুসরণ করা হয়। যদিও ১৯৪০ সাল নাগাদ বেশীর ভাগ ইউরোপীয় দেশে শিশুশ্রম আইন প্রণীত হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উৎপাদন বৃদ্ধির আবশ্যকতা হেতু বহু শিশুকে আবার শ্রমবাজারে টেনে নিয়ে আসে।[14]

সুতরাং নিজেদের শ্রমবাজারের মুনাফা ধরে রাখার জন্যই যে শিশুশ্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ না করার পেছনে বড় একটা কারণ তা উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। কেননা সর্বশেষ ২০২০ সালে পরিচালিত আইএলও ও ইউনিসেফের যৌথ জরিপ অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে ১৬০ মিলিয়ন শিশু শ্রমিক রয়েছে।[15] যারা দু’বেলা খাবারের আশায় ধনীদের সুখের জন্য নিজের শৈশব, কৈশোর বিসর্জন দিয়ে রক্ত পানি করে অর্থনীতির চাকা সচল করে রেখেছে। হয়তবা এজন্যই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বড় আক্ষেপ করে ব্যথাতুর ভাষায় লিখেছিলেন,

ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দু’টো ভাত একটু নুন

বেলা বয়ে যায়, খায়নি কো বাছা, কচি পেটে তার জ্বলে আগুন।

কেঁদে ছুটে আসি পাগলের প্রায়

স্বরাজের নেশা কোথা ছুটে যায়!

কেঁদে বলি, ওগো ভগবান! তুমি আজিও আছ কি? কালি ও চুন

কেন ওঠে না কো তাহাদের গালে, যারা খায় এই শিশুর খুন?

বাংলাদেশে শিশুশ্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ নয়। ১৪ বছর বয়সী যেকোন শিশু কাজ করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে ১৪ বছর বয়সের কম শিশুকেও কাজ করতে দেখা যায়। জোরপূর্বক কেউ শিশুকে কাজে বাধ্য করলে দেশের প্রচলিত আইনে সে সাজা পাবে। কিন্তু জোর না করলে তার কোন সাজা নেই? এদিকে পরিসংখ্যান বলছে, জোরপূর্বক ৪.৭ মিলিয়ন শিশুকে শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়।[16] তাহ’লে এ সমস্ত আইনের প্রয়োজনীয়তা কোথায়? ২০১০ সালে শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালা করা হয়েছে। কিন্তু তার কি কোন বাস্তবায়ন আছে? দারিদ্রে্যর কষাঘাতে জর্জরিত ৯০.৭% শিশু কাজ করে এবং পরিবারের খরচ চালাতে ৭৪.৮% অর্থ ব্যয় করে দেয়।[17] অর্থাৎ সিংহভাগ শিশুই পরিবার কি জিনিস সেটা বুঝে উঠার আগেই পরিস্থিতি তাদের পরিবারের হাল ধরতে বাধ্য করে। যে বয়সে তাদের হাতে খাতা কলম থাকার কথা ছিল সে বয়সে তারা ভারী ভারী ম্যাশিন হাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে। যে বয়সে শিশুরা পুকুর দাপিয়ে গোসল করবে, খেলার মাঠ কাঁপিয়ে খেলবে, পিতা-মাতার স্নেহ ভাগাভাগি নিয়ে ভাইয়ে-ভাইয়ে খুনসুটি করবে সে বয়সে তাদের ঘাড়ে চাপে সংসার যন্ত্রের ভার। যে বয়সে কন্যা শিশু পাড়ার বান্ধবীদের সাথে পুতুল বিয়ে খেলবে, বাবার আদরের দুলালী হয়ে থাকবে, মায়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে কিন্তু সে বয়সে তারা দারিদ্রে্যর কাছে পরাজিত হয়ে অন্যের বাড়ীতে কাজের বুয়া হয়ে যায়।

আমরা বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি, দারিদ্রে্যর শৃঙ্খলে বন্দি এসমস্ত শিশুদের শৈশব কে ফিরিয়ে দেবে? নিজেদের স্বার্থ হাছিলের জন্য আমরা যারা ফুলের মত নিষ্পাপ শিশুদের শৈশব কেড়ে নিচ্ছি তারা মহান আল্লাহর কাছে কি জবাব দেব? তাই আমরা শিশুদের কখনো কাজে লাগাবো না। শিশুদের পরিবর্তে যতদূর সম্ভব প্রাপ্ত বয়স্ক বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেব। সরকারকে শিশুদের হাতে থাকা ভারী ম্যাশিন কিংবা রান্না ঘরের হাতা খুন্তির পরিবর্তে বই-খাতা তুলে দিতে হবে। শিশুশ্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে তাদের পরিবারকে পুনর্বাসন করতে হবে এবং অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৪. শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধকরণ : দেশে এমন কোন জনবহুল জায়গা নেই যেখানে ভিক্ষুক পাওয়া যাবে না। ভিক্ষা করা কারো পেশা, কারো নেশা, আবার কারো জীবন ধারণের জন্য সেটায় শেষ ভরসা। ২০২০ সালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্র বলছে, করোনা ভাইরাসের আগে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ ভিক্ষুক ছিল। তবে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) হিসাব মতে, দেশে ১২ লাখ মানুষ ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত। করোনা ভাইরাসের পরে ভিক্ষুকের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখে গিয়ে ঠেকেছে।[18] এর মধ্যে পথশিশু কত তার কোন তথ্য দেয়া হয়নি। ২০২৩ সালে প্রকাশিত জরিপ মতে, ২০% ছেলে ও ৪৪.৩% মেয়ে পথশিশু হয় নিজে ভিক্ষা করে অথবা ভিক্ষাবৃত্তিতে সহায়তা করে।[19] ২০২২ সালের একটি হিসাব মতে, শুধু ঢাকা শহরেই ভিক্ষুকের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। এর মধ্যে ২০ শতাংশই শিশু। সেখানে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকার ভিক্ষাবাণিজ্য হয়। সেই হিসাবে মাসে ৬০০ কোটি টাকা।[20]

এমন নগদ গণীমত কী পায়ে ঠেলা যায়? তাই একটা প্রতারক চক্র পথশিশুদের, কিডন্যাপ করে আনা শিশুদের, প্রতিবন্ধি শিশুদের হাতে ভিক্ষার ঝুলি ধরিয়ে দিয়ে জোরপূর্বক ভিক্ষা করায়। ভিক্ষার বুভুক্ষু লোভীরা কখনো অবুঝ দুগ্ধপোষ্য শিশুকে মায়ের কোলে তুলে দিয়ে ভিক্ষা করায়, কখনো ছোট্ট বালক-বালিকাকে অচেনা কোন মহিলার সাথে পাঠিয়ে ভিক্ষা করায়। এরপরেও যখন তাদের লোভাতুর খায়েশ অতৃপ্ত থাকে তখন ফুলের মত নিষ্পাপ সুস্থ শিশুদের দিনের পর দিন পাশবিক নির্যাতন করে বিকলাঙ্গ করে দিয়ে বেশী ভিক্ষা পাওয়ার উপযোগী (?) বানিয়ে ভিক্ষার ময়দানে ছেড়ে দেয়।

২০১০ সালে শিশুর অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা বিষয়ে অমানষিক অপরাধ জগতের পর্দা ফাঁস হয়ে গেলে পরের বছর তথা ২০১১ সালে উচ্চ আদালত রাজধানীসহ দেশের সব স্থানে শিশুভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে নির্দেশ দেয়। তার দু’বছর পর ২০১৩ সালে শিশু আইন পাশ হ’লে জোরপূর্বক ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করলে কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রাখা হয়। কিন্তু বাস্তবে সে আইন মানে কয়জন? ভিক্ষুকদের গডফাদাররা দেদারসে এখনো বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। কে তাদের খোঁজ রাখে? পথশিশুদের বৃহৎ একটা অংশ হয় কারো দ্বারা বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করে অথবা ক্ষুধা নিবারণের জন্য ভিক্ষাই তাদের একমাত্র উপায়। বর্তমানে নাকি মানুষের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ বাড়ছে, দেশ উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে। তাহ’লে স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেন জাতির ছোট্ট সোনামণিরা পথচারীদের পথ আটকে অশ্রু সজল চোখে দু’টাকা ভিক্ষার জন্য ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে? কী তাদের ভবিষ্যৎ? কোন দিকে যাচ্ছে এই প্রজন্ম?

সুতরাং শিশুদের ভিক্ষুক গডফাদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে এবং যে সমস্ত শিশুরা ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন ধারণ করে তাদের চিw‎হ্নত করে সামাজিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারীভাবে তাদের জন্য আবাসিক স্কুল ও মাদ্রাসা গড়ে তুলে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার মুখে তুলে দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষা, চিকিৎসা তথা মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর এ কাজে সরকারের পাশাপাশি দেশের ধনী ব্যক্তিদের অর্থনৈতিক সাহায্য দানের মাধ্যমে এগিয়ে আসতে হবে। 

৫. শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে হেফাযতকরণ : প্রায় প্রতিটি পথশিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হয়। পথে-ঘাটে, কর্মক্ষেত্রে, বাসা বাড়ীতে তারা এক বেলা খাবার না পেলেও মার-ধর, গালমন্দ, অসম্মানজনক নামে সম্বোধনের কোন কমতি হয় না। পথশিশুদের অনুকূলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিদ্যমান। তবুও এই সমাজ তাদের জন্য নিরাপদ নয়। সবচেয়ে ঘৃণিত ঘটনা হ’ল, মানবীয় আকৃতির কিছু পশুদের দ্বারা দুর্ভাগা এই পথশিশুরা হত্যা ও যৌন নির্যাতনেরও শিকার হয়। তাদের যৌন ক্ষুধার নোংরা মানসিকতা থেকে ছেলে-মেয়ে কোন শিশুই রক্ষা পায় না। বিবিএস শিশু জরিপ তথ্য বলছে, ৯৬% পথশিশু নির্যাতনের শিকার হয়। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় ৬১.৭% শিশু। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব মতে, ২০২০ সাল থেকে ২৫ নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত গত চার বছরে ৫,২০৯ জন শিশুনির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ২০২৩ সালের ১১ মাসে রয়েছে ৯৭১ জন শিশু। এছাড়াও ২১৫০ শিশু হত্যা এবং ২৬৪৫ শিশু ধর্ষিত হয়েছে।[21] অন্য একটি হিসাব মতে, চলতি বছরের গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তিন মাসে সারা দেশে ১২৫ জন শিশু হত্যা, ১০৭ শিশু ধর্ষণ এবং ২২৮ জন শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।[22] এ পরিসংখ্যান চূড়ান্ত নয় বরং প্রকৃত সংখ্যা এর থেকেও অনেক বেশী। মাঝে মাঝে এ সকল শিশুদের উপর চালানো পাশবিক নির্যাতনের খবর মিডিয়া পাড়ায় সমালোচিত হয়। তাতে মনে প্রশ্ন জাগে, আসলেই কী আমরা মনুষ্য সমাজে বসবাস করছি?

২০১৫ সালের ৮ই জুলাই সিলেটের সবজি বিক্রেতা ১৩ বছরের কিশোর সামিউল আলম ওরফে রাজন-কে চুরির অপবাদ দিয়ে খুঁটির সাথে বেঁধে দেড় ঘণ্টা যাবৎ নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ছেলেটি নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পানি খেতে চাইলে মানুষ নামক পশুটি বলেছিল, পানি নাই ঘাম খা! একই বছর ৩রা আগস্ট খুলনায় নির্যাতনের শিকার হওয়া সাতক্ষীরার রসূলপুর গ্রামের ১২ বছরের রাক্বিব গ্যারেজ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। এ কারণে আগের গ্যারেজ মালিক ও তার সহযোগীরা তাকে ধরে মোটর সাইকেলের চাকায় হাওয়া দেওয়ার কমপ্রেসার মেশিনের নল মলদ্বারে ঢুকিয়ে দিয়ে পেটে বাতাস ভরে। ফলে শিশুটির পেট ফুলে নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে যায় ও ফুসফুস ফেটে মারা যায়। সেদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে সুটকেসের ভিতরে থাকা ৯ বছরের একটি ছেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বুকে ও কপালে ইস্ত্রীর ছ্যাঁকার দাগ এবং পিঠে ছিল পাঁচ ইঞ্চির মত গভীর ক্ষত। সম্ভবতঃ সে কোন গৃহকর্মী ছিল।[23] এমন মর্মান্তিক বীভৎস ঘটনার বহু দৃষ্টান্ত দেয়া সম্ভব। কিন্তু রাক্বিব-রাজনের ঘটনায় আসামীদের মৃত্যুদন্ড দিয়ে যে বিচার করা হয়েছে অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে কী সেটা হয়েছে? হয়নি। ক’জনের ভাগ্যে এমন বিচার জোটে? তাদের জন্য দেশের প্রতিটি স্তরের মানুষ আন্দোলন করেছিল; বিধায় দ্রুত বিচার হয়েছিল। কিন্তু সকলের জন্য কী প্রতিদিন আন্দোলন করা সম্ভব? দেশের কোণে কোণে হাযারো রাক্বিব-রাজনকে নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ করা হচ্ছে। কয়টি ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে? এক ঘটনা অন্য ঘটনার নীচে চাপা পড়ছে। কোন ঘটনা ভুলক্রমে আদালত পর্যন্ত পৌঁছলেও বিচার আদালত পাড়াতেই মুখ থুবড়ে পড়ছে। সেখানে পথশিশুরা তো পথের কাঙ্গাল, তাদের উপর নির্যাতনের বিচার কে করবে?

৬. পথশিশুদের সামাজিক অপরাধ দমনে নমনীয় আচরণ : পথশিশুদের জীবন অত্যন্ত দুর্বিষহ। তাদের নেই কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা। সাধারণ শিশুই যদি পিতা-মাতার অবহেলায় আদর ও শাসন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় তবে তার বিগড়ে যেতে সময় লাগে না। সেখানে মায়ের স্নেহ, বাবার আদর পথশিশুদের ভাগ্যে কমই জোটে। হয়ত কেউ জন্মের পর বাবার চেহারা দেখেনি, কেউ মাকে দেখেনি, বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন অথবা মা অন্যের বাড়ীতে সংসার পেতেছেন। কারও সাংসারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেছে বিধায় সন্তান পথের সাথী হয়েছে, কেউ হয়ত কিছু বুঝে ওঠার আগেই মায়ের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছে জীবিকার খোঁজে। সামান্য একটু বড় হ’লেই পেটের দায়ে মা এক পথে, সন্তান অন্য পথে চলে গিয়েছে। এভাবেই পথশিশুদের জীবন তাদেরকে দাঁড় করিয়ে দেয় নির্মম বাস্তবতার মুখে। ক্ষুধার জ্বালায় বিশৃঙ্খল জীবন অপরাধ জগতের দিকে ঝুঁকে পড়ে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ছুরিকাঘাত, মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা ও পাচার এবং খুন করার মত ঘটনাও তারা ঘটাচ্ছে। পথশিশুদের অপরাধের মধ্যে মোবাইল ছিনতাই এবং ড্যান্ডি[24] সেবন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পথশিশুদের অপরাধের এই অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর জগতে ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য অপরাধ করলেই তাদের আর পাঁচটা অপরাধীদের সাথে তুলনা করা যাবে না। কেননা তারা আর পাঁচজনের মত স্বাভাবিক জীবন পেয়ে বেড়ে উঠেনি। তাদের সাথে অবশ্যই নমনীয় আচরণ করতে হবে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, পথশিশু সমস্যা সমাধান কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। পরিবার, পিতা-মাতা ও সমাজ বলয়ের স্নেহ বঞ্চিত এই শিশুদের জন্য মমতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তাদের জীবনমান উন্নয়ন করার জন্য আমাদেরকে তাদের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল হ’তে হবে। আল্লাহ যে মনুষ্যত্ব দিয়ে পৃথিবীতে আমাদের প্রেরণ করেছেন সে মনুষ্যত্বের পরাকাষ্ঠা দেখাতে হবে। নিজের সন্তানকে আমরা যেমন আদর, ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখি পথশিশুদের তদ্রূপ স্নেহ দিতে না পারলেও অন্তত তাদের দিকে সন্তানসূলভ দৃষ্টিতে তাকাব। নিজের সন্তান শত ভুল করলেও যেমন ক্ষমা করে কাছে টেনে নেই তদ্রূপ তারাও যেন আমাদের দ্বারা কোন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখব। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়বদ্দতা সবচেয়ে বেশী। সরকারই পারে এ বিষয়ে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন-আমীন!

মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ

শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।


[1].Convention on the Rights of the Child, New york, 20 November 1989(পিডিএফ : আরবী, চীনা, ইংরেজী, ফরাসী, রুশ এবং স্পেনীয় ভাষায়), পৃ. ৩২।

[2].মুহাম্মাদ মনোয়ার পারভেজ মুন্না, ইসলামে শিশুর মৌলিক অধিকার : বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট, পিএইচডি থিসিস (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ডিসেম্বর ২০১৪ খৃ.), পৃ. ২৪৯।

[3].https://ebrary.net/217596/education/definitions_classifications_street_children.

[4].www.ebrary.net/217597/education/history_street_children.

[5].Article title :A study on prevalence and pattern of substance abuse among street children and adolescents in the state of andhra pradesh; india, Indian journal of fundamental and applied life sciences ISSN: 2231-6345 (Online), Centre for info bio technology (CIBTech), Vol.4, Issue.3, July-September 2014, page.1

[6].Street children of Mumbai: Demographic profile and substance abuse, Biomedical Research 2011, Volume 22, Issue 4, page.499

[7].Bangladesh Bureau of Statistics, Survey on Street Children 2022, March 2023, Chapter 1, page. 11

[8].দৈনিক বণিক বার্তা, ১১ই এপ্রিল ২০২৩, পৃ. ২।

[9].দৈনিক ইনকিলাব, ১১ই এপ্রিল ২০২৩, পৃ. ১২।

[10].Survey on Street Children 2022, March 2023, page. 26, 51.

[11]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৪১৫; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৫৬২৭; সনদ হাসান, মাসিক আত-তাহরীক, ২৩তম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা, জানুয়ারী ২০২০, পৃ. ৪৯।

[12].সম্পাদকীয়, মাসিক আত-তাহরীক, ১৫তম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, নভেম্বর ২০১১, পৃ. ৪।

[13].শিশুদের সামাজিক নিরাপত্তা যরূরী, সম্পাদকীয়, প্রতিদিনের সংবাদ, ১৩ই জুন ২০২২, পৃ. ৪।

[14]. মুহাম্মাদ মনোয়ার পারভেজ মুন্না, ইসলামে শিশুর মৌলিক অধিকারঃ বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট, পৃ. ২৫৩।

[15].Report title: Child Labour : Global estimates 2020, trends and the road forward, page. 8

[16].সম্পাদকীয়, প্রতিদিনের সংবাদ, ১৩ই জুন ২০২২, পৃ. ৪।

[17].Survey on Street Children 2022, March 2023, page. 38, 44.

[18].https://www.ittefaq.com.bd/200634;দৈনিকইত্তেফাক, ২১ নভেম্বর ২০২০।

[19].Survey on Street Children 2022, page. 43.

[20]. দৈনিকযুগান্তর, ১৮ই জুন ২০২২, পৃ. ৫।

[21]. দেশ রূপান্তর, ৩০শে নভেম্বর ২০২৩, পৃ. ১২।

[22]. কালের কণ্ঠ, ৯ই অক্টোবর ২০২৩, https://www.kalerkantho. com/online/national/2023/10/09/1325356

[23].সম্পাদকীয়, মাসিক আত-তাহরীক, ১৮তম বর্ষ, ১২তম সংখ্যা, সেপ্টেম্বর ২০১৫, পৃ. ২।

[24].ড্যান্ডি মূলত এক ধরনের আঠা। ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ বা ড্যান্ড্রাইট নামের আঠাটিকেই পথশিশুরা ড্যান্ডি বলে চেনে। আঠায় থাকা কার্বন-ট্রাই-ক্লোরাইড, টলুইন, অ্যাসিটোন ও বেনজিন স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই বাষ্পে পরিণত হয়। এসব রাসায়নিক পলিথিনে ভরে নাকে শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে মাদকসেবি পথশিশুরা। এতে তারা এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক অবসাদে চলে যায়। এটি অন্য ধরনের এক অনুভূতির সৃষ্টি করে, যা আবেগকে ভিন্নভাবে পরিবর্তিত করে। ক্ষুধা নিবারণের জন্য পথশিশুরা এটি সেবন করে থাকে।






আক্বীদা ও আহকামে হাদীছের প্রামাণ্যতা (৮ম কিস্তি) - মীযানুর রহমান মাদানী
অভ্যাসগত বিশ্বাস থেকে চিন্তাশীল বিশ্বাসের পথে যাত্রা - মুহাম্মাদ আনওয়ারুল কারীম
পরকীয়া : কারণ ও প্রতিকার (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার কতিপয় ক্ষেত্র - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
যাকাত ও ছাদাক্বা - আত-তাহরীক ডেস্ক
ধন-সম্পদ : মানব জীবনে প্রয়োজন, সীমালংঘনে দহন (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
হাদীছ ও কুরআনের পারস্পরিক সম্পর্ক (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
তওবা (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
আল-কুরআনের আলোকে জাহান্নামের বিবরণ - বযলুর রশীদ
সুন্নাত আঁকড়ে ধরার ফযীলত (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান
ভুল সংশোধনে নববী পদ্ধতি (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার বৈষম্য - ড. মুহাম্মাদ কামরুয্যামান
আরও
আরও
.