গত ৭ই জানুয়ারী থেকে বিশ্বসেরা পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে দাবানল এবং দক্ষিণে চলছে তুষারপাত। ৯৫% দাবানল মানুষের কার্যক্রমের মাধ্যমে শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। তবে এবারের দাবানলের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও জানা যায়নি। অবশ্য আবহাওয়াবিদদের মতে, এবারের বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় অতিমাত্রায় শুষ্ক পরিবেশই এই দাবানলের অন্যতম কারণ। গোটা শহর যেন জাহান্নামে পরিণত হয়েছে। কয়েকটি স্থানে দাবানলের আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। ২১,৩১৭ একরজুড়ে জ্বলন্ত আগুন ১০ই জানুয়ারী শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত মাত্র ৮% নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। দাবানলে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। দাবানল আরো তীব্র হওয়ার শঙ্কা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এযাবৎ ধ্বংস হয়েছে ১২ হাযারের বেশি বিলাসবহুল বাড়ি ও অবকাঠামো। ১,৮০,০০০ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এপর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
ক্যালিফোর্নিয়ায় চলমান দাবানলের কারণে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞকে ফিলিস্তীনের গাযা ধ্বংসস্তূপের সঙ্গে তুলনা উঠেছে। যারা গাযা পোড়াতে চেয়েছিল, তারা আজ আল্লাহর গযবে নিজেরা পুড়ছে। আকাশজুড়ে কালো ধোঁয়ার স্তূপ, চারদিকে সাইরেনের শব্দ আর আতঙ্কিত মানুষের ছুটোছুটি। হাযার হাযার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অজানা গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছে। আগুনের লেলিহান শিখা সবকিছু গ্রাস করছে। ফায়ার সার্ভিসের হেলিকপ্টার ও দমকল বাহিনীর অবিরাম চেষ্টা সত্ত্বেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এ যেন গত এক বছরে গাযার ওপর ইস্রাঈলী বর্বরতার পরিণতি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের উপর আল্লাহর প্রেরিত নগদ শাস্তি। কেননা আল্লাহ বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই তাদেরকে (আখেরাতে) কঠিন শাস্তির পূর্বে (দুনিয়াতে) লঘু শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবো। যাতে তারা (আল্লাহর পথে) ফিরে আসে’ (সাজদাহ ৩২/২১)। গাযা আক্রমণে ইস্রাঈলকে সহযোগিতার জন্য গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্র ২২০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক পাঠিয়েছে সেখানে। আগামী ২০শে জানুয়ারী ক্ষমতা ছাড়ার পূর্বে গত ৩রা জানুয়ারী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইস্রাঈলকে আরও ৮০০ কোটি ডলারের সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
(২) পশ্চিমে স্মরণকালের ভয়াবহ দাবানল, দক্ষিণে একই সময়ে দেশের মোট ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ২৬টিতে তীব্র গতির তুষারঝড়ের তান্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্য-পশ্চিমের বিভিন্ন রাজ্যে ১৪ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষারপাত হচ্ছে। নিউইয়র্ক সিটিতে ১ ফুট পর্যন্ত পুরু বরফ জমেছে। আটকে গেছে শত শত গাড়ী। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় থমকে গেছে। বহু মানুষ গৃহবন্দী অবস্থায় দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে জাতীয় আবহাওয়া দফতর একাধিক রাজ্যে সতর্কতা জারি করেছে। টেক্সাস, ওকলাহোমা, নর্থ ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে স্কুলের কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে এবং লাখ লাখ শিশুকে ঘরে বসে অনলাইনে ক্লাস করতে হচ্ছে। বিভিন্ন অঞ্চলের অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হাযার হাযার ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। একদিকে দাবানল থেকে বাঁচার জন্য মানুষ দিক-বিদিক ছুটছে, অন্যদিকে তুষারপাত থেকে বাঁচার জন্য ঘরের মধ্যে আগুন জ্বালাচ্ছে। মানুষ কত অসহায়, এতেই তা প্রমাণিত হয়। এরপরেও কি মানুষের হুঁশ ফিরবে না?
(৩) একই সময়ে মক্কার দক্ষিণ-পূর্বে আল-আওয়ালী এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাতের পর বন্যা দেখা দিয়েছে। সউদী আরবের পরিবেশ, পানি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বদর প্রদেশের আল-শাফিয়াহতে সর্বোচ্চ ৪৯ মিলিমিটার, জেদ্দার আল-বাসাতীনে ৩৮ মিলিমিটার, মদীনায় মসজিদে নববীতে ৩৬.১ মিলিমিটার ও ক্বোবা মসজিদে ২৮.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত ৭ই জানুয়ারী আকস্মিক বন্যার কারণে জেদ্দা ও মদীনায় ‘হাই রেড অ্যালাট’র্ জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া রিয়াদসহ সঊদীর মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় দুই প্রদেশ আসীর ও জীজানে অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের বন্যার ঝুঁকি এড়াতে সরকারের নিরাপত্তা নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মক্কা-মদীনার রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে, গাড়ি ভেসে যাচ্ছে ও ভবন ডুবে যাচ্ছে। এ ছাড়া উপত্যকা ও নিচু এলাকাগুলোতে পানি জমে আছে।
বর্তমানে সঊদী আরবের বিভিন্ন স্থানে মাঝে মধ্যেই বিনোদনের নামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফ্যাশন শোর খবর পত্রিকায় আসছে। বিশেষত ২০৩৪ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের প্রেক্ষাপটে ইদানিং সেখানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। যা সঊদী আরবের মতো একটি আদর্শস্থানীয় মুসলিম রাষ্ট্রের ভাবমূর্তির সাথে মোটেও সামঞ্জস্যশীল নয়। বিশ্ব মুসলিমের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে এমন কার্যক্রম অতীব হতাশাজনক। আশা করি তারা অচিরেই এসকল পদক্ষেপ থেকে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ।
দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সকল গযব আসে আল্লাহর হুকুমে অবাধ্য বান্দাদের সতর্ক করার জন্য এবং তাদেরকে আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনার জন্য। যে পানির অপর নাম জীবন, সেই পানিই বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের হিংস্র রূপ নিয়ে মানব বসতি ধ্বংস করে আল্লাহর হুকুমে। যে মৃদুমন্দ বায়ু প্রাণীর জন্য অপরিহার্যভাবে কাম্য, সেই বায়ু হঠাৎ প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে সর্বত্র প্রলয়কান্ড ঘটিয়ে দেয় আল্লাহর হুকুমে। নিষ্প্রাণ এইসব বস্ত্তগুলি হঠাৎ কিভাবে প্রাণঘাতী হয়ে পড়ে, এর জবাব বস্ত্তবাদীদের কাছে নেই। কেবলমাত্র ঈমানদাররাই বলবেন যে, এগুলি স্রেফ আল্লাহর গযব। আল্লাহ বলেন, ‘বস্ত্তত তোমার প্রতিপালকের সেনাবাহিনী সম্পর্কে কেউ জানেনা তিনি ব্যতীত’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৩১)। আল্লাহ আমাদেরকে এসব গযব থেকে শিক্ষা গ্রহণের তাওফীক দিন।-আমীন! (স.স.)।
বর্তমানে সঊদী আরবের সাম্প্রতিক আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া এবং ভিশন ২০৩০-এর আওতায় কিছু সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম চলছে। দেশটির বিভিন্ন স্থানে মাঝে মধ্যেই বিনোদনের নামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফ্যাশন শো ও পশ্চিমা শিল্পীদের নিয়ে নাচ-গানের আসর বসছে। বিশেষত ২০৩৪ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজনের প্রেক্ষাপটে ইদানিং সেখানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত হচ্ছে। তীব্র সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড় বইছে নেট দুনিয়ায়। সঊদী আরবের মতো একটি আদর্শস্থানীয় মুসলিম রাষ্ট্রে এমন কার্যক্রম অতীব হতাশাজনক। বিশ্ব মুসলিমের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে যা আমাদের ধারণারও অতীত। আশা করি তারা অচিরেই এসকল পদক্ষেপ থেকে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ।