তিন দিকে কুফরী শক্তি ও একদিকে বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ ‘বাংলাদেশ’। সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা এই দেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। মুসলিম অধ্যুষিত হওয়ার কারণেই ১৯৪৭ সালে পূর্ব-পাকিস্তান, অতঃপর ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ লাভ করি। বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে জায়গা করে নেয় ‘বাংলাদেশ’। সুতরাং বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল চেতনা হচ্ছে ইসলাম এবং ইনশাআল্লাহ ইসলামই হচ্ছে এদেশের স্বাধীনতার একমাত্র রক্ষাকবচ। কিন্তু দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার পর বিগত ৫৩ বছরে এই বাস্তব সত্যটি কোন সরকারই জাতির সামনে তুলে ধরেনি। বরং ইসলামের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বেশী। ইসলাম ও মুসলমানদের কোণঠাসা করার জন্য আন্তর্জাতিক ইহূদী-নাছারা ও ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তি এবং তাদের বশংবদরা হেন চেষ্টা নেই যা করেনি। মুসলমানদেরকে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, চরমপন্থী, প্রগতিবিরোধী ইত্যাকার নানা তকমা দিয়ে হেয় করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। মামলা-হামলা, গুম-খুন, যুলম-নির্যাতন তো মামুলি ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় গিয়েছেন, তারাই নিজেদের আখের গোছানোয় মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। দল ও দলনেতার বন্দনা জাতিকে শিক্ষা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন তারা।
৫ই আগস্টের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও ভারতীয় ফ্যাসিবাদ যেন নতুন মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতীয় মিডিয়াগুলো বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় মেতে উঠেছে। আওয়ামী সরকারের পতনকে তারা যেন কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। সেদেশের ‘রিপাবলিক টিভি’সহ বেশ কিছু টিভি চ্যানেল গোয়েবলসীয় কায়দায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা রিপোর্ট সম্প্রচার করে যাচ্ছে। সংবাদ পাঠকদের ভাব-ভঙ্গি, কথাবার্তা দেখে যে কেউ মনে করবেন যে, তারা হয়ত আওয়ামী রাজনীতির কোন সক্রিয় সদস্য। এতটাই রক্তক্ষরণের প্রকাশ তাদের চেহারায় ও অঙ্গভঙ্গিতে ফুটে ওঠে। চ্যানেলগুলো সাম্প্রদায়িক উসকানী দিয়ে সেদেশের জনগণকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে। ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫৩ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত নযীরবিহীন ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে গত ২রা ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে সেদেশের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা আক্রমণ চালায়। তারা বাংলাদেশের পতাকাকে টেনে নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে বাংলাদেশকে চরমভাবে অপদস্থ করে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো হ’লেও ভারতের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
বাস্তবে অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে কোন সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেনি। মনিদর, গির্জা বা প্যাগোডায় হামলা-ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগের ঘটনা কোন মুসলমানের দ্বারা সংঘটিত হয়নি। ‘নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গে’র ন্যায় দু’একটি ঘটনা এদেশে বসবাসকারী ভারতপন্থী হিন্দুত্ববাদীরাই ঘটিয়েছে। সুযোগসন্ধানীরা যেন ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে না পারে সেজন্য বরং এ দেশের সরকার ও প্রশাসনের পাশাপাশি কিছু ইসলামী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সংখ্যালঘুদেরকে এবং তাদের উপাসনালয়গুলোকে পাহারা দিয়েছে।
শুধু তাই নয় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবাপন্ন সংগঠন ‘ইসকন’ (International Society for Krishna Consciousness ‘ISKCON’)-এর এ দেশীয় নেতা ও ‘বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চে’র মুখপত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার দায়ে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার করার পরদিন ২৬শে নভেম্বর মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জনাকীর্ণ আদালত পাড়ায় তার উগ্র অনুসারীদের দ্বারা প্রকাশ্য দিবালোকে এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করার পরও এদেশে কোন মন্দিরে হামলা বা ভাঙচুর করা হয়নি। সম্প্রীতির এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কি হ’তে পারে। অথচ ভারত প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা বয়ান প্রচার করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে চলেছে। আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত করার অপপ্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। ঘটনাটি যদি ভারতে সেদেশের কোন মুসলিম সংগঠন কর্তৃক কোন হিুন্দু এডভোকেটের ক্ষেত্রে ঘটত, তাহ’লে সেদেশের কোন মসজিদ আর অবশিষ্ট থাকত কি-না সন্দেহ।
ইতিহাসের পাতা খুললে দেখা যাবে ভারতে কিভাবে সংখ্যালঘু (মুসলিম) নির্যাতন করা হয়েছে। সেদেশে মুসলিমদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ন্যাক্কারজনক ইতিহাসও রচনা করেছে তারা। ১৯৬৪ সালে কলকাতা দাঙ্গা, ১৯৮৩ সালে নেলী গণহত্যা, ১৯৮৭ সালে হাশিমপুর গণহত্যা, ১৯৯২ সালের মুম্বাই দাঙ্গা, ২০০২ সালে গুজরাট সহিংসতা, ২০১৩ সালে মুযাফফরনগর সহিংসতা ও ২০২০ সালে দিল্লীর দাঙ্গায় হাযার হাযার মুসলমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আর মসজিদ ভাঙ্গাতো তাদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। মন চাইলেই শত শত বছরের পুরনো মসজিদ মুহূর্তে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া তাদের কাছে কোন বিষয়ই না। ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত ৪৬৫ বছরের ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে দিয়ে রামের জন্মস্থান খোঁজার ন্যাক্কারজনক ইতিহাসের জন্ম দেয় ভারত। অথচ রাম কেবল ইতিহাসেই আছে তার কোন বাস্তবতা নেই। উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে ১৬৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানবাপী মসজিদের নীচে সম্প্রতি মন্দির খোঁজা শুরু হয়েছে এবং এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশও পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারীতে নয়াদিল্লির মেহরাউলিতে ৬০০ বছরের পুরনো ‘আকঞ্জ মসজিদ’ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ৮ই ফেব্রুয়ারীতে উত্তরাখন্ডের একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা ভেঙ্গে দেয়া হয়। এতে পুলিশের গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপে ৫ জন মুসলিম নিহত হয়। গত ১১ ডিসেম্বর থেকে উত্তর প্রদেশের ফতেহপুর যেলার ১৮৫ বছরের পুরনো ‘নূরী জামে মসজিদটি’রও একাংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়। তাছাড়া গত নভেম্বর মাসে ভারতের উত্তর প্রদেশের সামভালে মোগল আমলের একটি মসজিদকে ঘিরেও চলছে ব্যাপক উত্তেজনা। উগ্র হিন্দুত্ব বাদীরা মসজিদের স্থলে ইতিপূর্বে মন্দির ছিল বলে দাবী করে আদালতের দ্বারস্থ হয়। আদালত তদন্ত পাঠালে স্থানীয় মুসলমানদের সাথে বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে পুলিশ নাঈম, নো‘মান ও বেলাল নামের তিনজন মুসলিমকে গুলি করে হত্যা করে।
তবে মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ করার ব্যাপারে মুসলমানদের দায়ী করার এই মাতামাতি দেখে আর.এস.এস. প্রধান মোহন ভগবত বলেন, অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি হওয়ার পর কেউ কেউ মনে করছেন তারা নতুন নতুন জায়গায় একই ধরনের বিষয় সামনে এনে হিন্দুদের নেতা হয়ে উঠবেন, এটা মানা যায় না (দৈনিক ইনকিলাব, ২১.১২.২০২৪)।
এখানে ভারতের ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কিছু ছিটেফোঁটা তুলে ধরা হল। এরকম হাযারো ঘটনার লীলাভূমি হচ্ছে ভারত। এছাড়াও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের আগ্রাসনের ইতিহাস বহু পুরনো। ভারত কর্তৃক বহুমাত্রিক আগ্রাসনের কবলে এখন বাংলাদেশ। তার দু’একটি যেমন-
পানি আগ্রাসন : ভারত আন্তর্জাতিক পানি হিস্যার নীতিমালা সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে প্রবাহিত ৫৪টি নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। অর্থাৎ ফিডার ক্যানেল দিয়ে সেদেশের অভ্যন্তরে অন্য নদীতে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ দু’ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রথমত শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশ চাহিদা মত পানি পাচ্ছে না। আবার বন্যার মৌসুমে ভারত অন্যায়ভাবে বাঁধগুলো খুলে দিয়ে এদেশকে ডুবিয়ে দিচ্ছে। নদী ভাঙ্গন বেড়ে যাচ্ছে এবং গ্রামের পর গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। হাযার হাযার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ছে। হাযার হাযার হেক্টর কৃষি জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এককথায় শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে মারা ও বর্ষা মৌসুমে ডুবিয়ে মারার মরণফাঁদ হচ্ছে এই বাঁধগুলো।
ফারাক্কার পাশাপাশি অসংখ্য বাঁধ বা ব্যারেজ এবং জঙ্গিপুরের কাছে নির্মিত ৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ফিডার ক্যানেল দিয়ে পানি সরিয়ে নিচ্ছে ভারত। ফারাক্কা পয়েন্টের প্রায় ৪০ হাযার কিউসেক পানি চলে যাচ্ছে হুগলী ও ভাগীরথী নদীতে। একযোগে ফারাক্কার উজানে উত্তর প্রদেশ ও বিহারের প্রায় চারশ’ পয়েন্ট থেকে পানি সরিয়ে নিচ্ছে ভারত। এছাড়া ১৩ হাযার ছয়শ’ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের তিনটি বৃহদাকার ক্যানেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে দেশটি। এই ক্যানেল তিনটিতেও পানি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের আগে গঙ্গার তথা বাংলাদেশের পদ্মার ৯০ শতাংশ পানিই অবৈধভাবে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত। এভাবে চলতে থাকলে ন্যায্য হিস্যা দূরে থাকুক, বাংলাদেশ এক সময় পানিই পাবে না। পদ্মাও হারিয়ে যাবে ইতিহাসের অন্ধকারে।
সীমান্ত হত্যা : ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশের মানুষকে সীমান্তে গুলি বা নির্যাতন করে হত্যা করছে প্রতিনিয়ত। ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী একুশ শতকের প্রথম দশকে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছে সহস্রাধিক বাংলাদেশী। বেসরকারী মানবাধিকার সংস্থা ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ (আসক)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বিএসএফ-এর গুলিতে ও নির্যাতনে অন্তত ৬০৭ জন বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। অথচ নির্লজ্জের মত তারা বলছে আত্মরক্ষার জন্য তারা গুলি করছে। আত্মরক্ষার জন্য লেকে গোসল করতে থাকা ১৫ বছরের বালককে স্পিড বোটের প্রোপেলার দিয়ে হত্যা করতে হবে? গরু পাচারের অপরাধে ১৫ বছরের দুই ছেলেকে পাথর আর লাঠি ছুড়ে হত্যা করতে হবে? নিজ ক্ষেতে সরিষা তুলতে গেলে ধরে নিয়ে ২০ বছরের যুবককে নির্যাতন করে হত্যা করাও কি আত্মরক্ষা? তাছাড়া বাংলাদেশের চাষীদের নিজেদের জমিতে চাষ করতে না দেওয়া, ফসল কেটে নেওয়া, ফসল নষ্ট করা, ফসলে আগুন দেওয়া ইত্যাদির মত অত্যাচারগুলো তারা নিয়মিতই করে যাচ্ছে।
কাটাতারের বেড়া : ভারত একতরফাভাবে সীমান্তে কাটাতারের বেড়া নির্মাণ করে যাচ্ছে। এটি করতে তারা বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকানোর কথা তারা বেশী বলছে। অথচ তাদের দেশের মানুষও দেদারসে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। অনেক ক্ষেত্রে কাটাতারের বেড়া নোম্যান্সল্যান্ডের মধ্যে করা হচ্ছে। আবার বাংলাদেশ সীমান্তের ১০, ১৫, ৩০ ফুট ভিতরে ঢুকেও বেড়া নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাংস্কৃতিক আগ্রাসন : সাংস্কৃতিক আগ্রাসনও চরম থেকে চরমে পৌঁছেছে। ভারতীয় অপসংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের দেশের যুবচরিত্র আজ ধ্বংসের কিনারায় ঠেকেছে। আমাদের চ্যানেলগুলো সেদেশে অনেকাংশে নিষিদ্ধ হ’লেও ভারতীয় সকল চ্যানেল এ দেশে চলছে দেদারসে। ফলে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনায় দেশ ছেয়ে গেছে। এমনকি পোষাক-আশাকেও অশালীনতা চরম আকার ধারণ করেছে। তাদের চ্যানেলগুলো বাংলাদেশ থেকে হাযার হাযার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের দিয়ে যাচ্ছে কিছু বস্তাপচা অনুষ্ঠান।
সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন : বিগত সরকার ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র হিসাবে প্রচার-প্রচারণা চালালেও বাস্তবে ভারত কখনো বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র নয়। মূলত ভারত একটি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। কর্তৃত্ব ও দখলদারিত্ব তার মননে বদ্ধমূল। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে তার কর্তৃত্ববাদী আচরণ যার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। ইতিমধ্যেই ট্রানজিটের নামে ভারত করিডোর সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। পণ্য পরিবহনের নামে পাওয়া করিডোর সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলিতে রাজনৈতিক সংকট ও বিদ্রোহ দমনের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী যে বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করবে না তার কী নিশ্চয়তা আছে? বাংলাদেশ সরকার ভারতকে স্থলপথ ও রেলপথ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, আবার মংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অনুমতিও পেয়েছে তারা। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে ‘কোস্টাল সার্ভিল্যান্স’ বা উপকূলীয় নযরদারীর জন্য ভারত স্যাটেলাইট চালু করেছে, যা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য বিপদজনক। সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ সকল ক্ষেত্রে ভারতের অবাধ সুবিধা বাংলাদেশের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে।
শেষ কথা : ভারত যদি সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশর বন্ধু হ’তে চায় তাহ’লে প্রথমতঃ ভারতকে তার সাম্রাজ্যবাদী ও কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা পরিহার করতে হবে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সকল নদীর ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী বাংলাদেশকে পানি সরবরাহ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে সংখ্যালঘু নির্যাতন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সকল মিথ্যাচার বন্ধ করতে হবে। বিগত সরকারের আমলে করা সকল অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে। কথায় নয় কর্মে বন্ধুত্বের পরিচয় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বাংলাদেশের মুসলমানরা এক বিন্দুও ছাড় দিবে না।