গত ১৫ই মার্চ শান্তির দেশ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দু’টি মসজিদে জুম‘আর ছালাতের সময় বর্ণবাদী খ্রিস্টানদের বন্দুক হামলায় আড়াইশর বেশী মানুষ নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা ৪ শতাধিক। নিহত ও আহতদের প্রায় সবাই মুসলমান। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৫ জন বাংলাদেশীও রয়েছেন। ঘটনাক্রমে নিউজিল্যান্ডে একটি সিরিজ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও সেই মসজিদে জুম‘আর ছালাত পড়তে গিয়েছিলেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে সময় বেশী নেয়ার কারণে তাদের মসজিদে যেতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল। তারা যখন মসজিদে গিয়ে পৌঁছে, ইতিমধ্যে নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটে গেছে। এরপরে ঘটনাবলীসহ নিউজিল্যান্ডে বন্দুক হামলার পুরো ঘটনা আমরা সবাই জানি। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেন যেভাবে মুসলমানদের সাথে সহমর্মিতা দেখিয়েছেন, যেভাবে ইসলামের শান্তির বাণী সে দেশের পার্লামেন্টে এবং প্রতিটা জনসমাবেশে উচ্চারণ করেছেন, তাতে তিনি এক দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। এরপর গত সপ্তাহে আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কায় ঘটে গেল আরো লোমহর্ষক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। কলম্বোর বেশ কয়েকটি গির্জা এবং পাঁচ তারকা হোটেলে একযোগে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে সাড়ে ৩ শতাধিক নিহত এবং ৫ শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার পর ঘটনার পূর্বাপর বাছ বিচার না করেই মুসলিম বিদ্বেষী একতরফা ব্লেইম গেম দেখা যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার সন্ত্রাসী হামলায়ও শিশু জায়ানসহ একাধিক বাংলাদেশী নাগরিক হতাহত হয়েছে। দেড় যুগ আগে নিউইয়র্কে বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে বিমান হামলার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ কোন তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার দায় আল-কায়েদার উপর চাপিয়ে ‘ওয়ার অন টেররিজম’র ঘোষণা দিয়ে প্রকারান্তরে মুসলমান বিদ্বেষী যুদ্ধে নেমে পড়েন। আল-কায়েদা গঠনের সাথে যেমন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশ ছিল, সেই সাথে নাইন-ইলেভেন বিমান হামলার সাথে ইহুদী জায়নবাদীদের যোগ সাজশের ঘটনাও শেষতক ধামাচাপা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে শ্রীলঙ্কা সরকার বা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাউকে দোষারোপ করে কোন বিবৃতি দেয়া না হ’লেও এই ঘটনার সাথে শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল তাওহীদ জামা‘আতের (এনটিজে) নাম উঠে আসে মূলতঃ ভারতীয় ও পশ্চিমা মিডিয়ায়। দুইদিন পর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ আসে। আমরা স্মরণ করতে পারি, ২০০৯ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা প্রায় ২৬ বছরব্যাপী গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে লন্ডভন্ড অবস্থায় গিয়ে পেঁŠছেছিল। সে সময় চীন ও পাকিস্তানের সামরিক সহায়তায় অনেকটা আকষ্মিকভাবেই শ্রীলঙ্কান গৃহযুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই এলটিটিই গেরিলাদের শক্তি নিঃশেষিত হয়ে সিকি শতাব্দীব্যাপী গৃহযুদ্ধের কার্যত পরিসমাপ্তি ঘটে। সুদীর্ঘ গৃহযুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন মুছে শ্রীলঙ্কা সবেমাত্র তার সম্ভাবনার সোপানে পা ফেলতে শুরু করেছিল। এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিকালে আত্মঘাতী বোমা হামলায় আবারো রক্তাক্ত হ’ল কলম্বোর মাটি। শ্রীলঙ্কান গৃহযুদ্ধের সময় যেসব পশ্চিমা মিডিয়া সরাসরি এলটিটিই গেরিলাদের পক্ষাবলম্বন করত, একুশে এপ্রিল আত্মঘাতি বোমা হামলার পর শ্রীলঙ্কান সরকার বা পুলিশ প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই সেসব গণমাধ্যম তাৎক্ষণিকভাবে ন্যাশনাল তাওহীদ জামা‘আতসহ (এনটি জে) মুসলিম জঙ্গিদের নাম ধরে সংবাদ প্রচার করতে শুরু করে। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে শ্রীলঙ্কার সরকার এবং রাজনৈতিক পক্ষগুলো হয়তো আন্দাজ করতে পারছে কারা, কেন এই হামলার সাথে জড়িত। তবে হয়তো কৌশলগত কারণে তারা এখনি তা প্রকাশ করছে না। ভারতের বিজেপি সমর্থক এক শ্রেণীর গণমাধ্যম এনটিজে, আইএস’র নাম করে মূলতঃ মুসলমান বিদ্বেষী উন্মাদনা ছড়িয়ে দেয়ার মতলব করেছিল। তবে শ্রীলঙ্কার সরকারের কৌশলী পদক্ষেপের কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর অপপ্রয়াস এখনো অব্যাহত আছে। বিশেষত ভারতের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এ থেকে ফায়দা লোটার চেষ্টার কমতি নেই।

২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানে কূটনৈতিক জোনে অবস্থিত হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে বন্দুক হামলায় ৯জন ইতালীয় ও ৭ জাপানী নাগরিকসহ মোট ২০জন নিহত হয়। বন্দুকধারীদের হাতে যিম্মী এক ডজনের বেশী মানুষকে মুক্ত করতে যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত ৪ সদস্য নিহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনার পরও তথাকথিত আইএস ঘটনার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল বলে খবর প্রকাশিত হয়। এই ঘটনার বছর খানেক পরে একজন ভারতীয় প্রবীণ রাজনীতিবিদ, কংগ্রেস নেতা ও মধ্য প্রদেশের সাবেক মূখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং দাবী করেছেন, ভারতের তেলেঙ্গানা পুলিশ আইএসর নামে এক ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে মুসলমান তরুণদের বিভ্রান্ত করছে। তেলেঙ্গানা পুলিশ এবং সরকারের পক্ষ থেকে এই দাবী অস্বীকার করা হ’লেও দিগ্বিজয় সিং তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেছেন বলে শোনা যায়নি। হলি আর্টিজানে বন্দুক হামলার ঘটনাটি ঢাকার মিডিয়ায় প্রচারের আগেই ভারতীয় মিডিয়াগুলোতে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছিল এবং আইএস এর দায় স্বীকার করেছিল। বাংলাদেশ সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জোরালোভাবে এই দাবী প্রত্যাখ্যান করে হলি আর্টিজান হামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেছে। গত তিন বছরে এ নিয়ে আর কোন বাদানুবাদ ঘটেনি। তবে শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার পর বাংলাদেশও সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে খোদ সরকারের পক্ষ থেকেই স্বীকার করা হয়েছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবী করছে, বাংলাদেশে এ ধরনের হামলার সামর্থ্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেই। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় যৌথ বাহিনীর সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য, বোমা বানানোর সরঞ্জাম, আইএস-এর ব্যানারসহ বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করেছে শ্রীলঙ্কান বাহিনী। আমরা স্মরণ করতে পারি, হলি আর্টিজান হামলার পরও ঢাকার কল্যাণপুর, হাজীক্যাম্প এবং নারায়ণগঞ্জে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে কিছু আলামত উদ্ধার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সে সময় সন্দেহভাজন সকলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার কারণে এসব অভিযান সম্পর্কে মানুষের সন্দেহ ও ধোঁয়াশা বিশ্বাসযোগ্যভাবে দূরীভূত করা সম্ভব হয়নি। তবে যারা আইএস’র পেছনে শত শত মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে, তারাই মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা ও গৃহযুদ্ধ থেকে শত শত কোটি ডলারের ফায়দা লুটছে। তেলসম্পদ, সোনা এবং মহামূল্য প্রত্নসম্পদ লুন্ঠনের দীর্ঘ তালিকা তুলে ধরা সম্ভব। গত মার্চ মাসে সিরিয়া থেকে মার্কিন বাহিনীর ৫০ টন সোনা চুরির খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। রাশি রাশি সোনার বারের উপর বসা কয়েকজন মার্কিন সেনা সদস্যের ছবিও ছাপা হয়েছে। ইসরাইলী ও পশ্চিমা অস্ত্র ও লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে গড়ে ওঠা আইএস এসব স্বর্ণ লুন্ঠন করে জমা করেছিল বলে জানা যায়। আইএস বিরোধী অভিযানের নামে বিপুল পরিমাণ সোনা দখল করে নিজদেশে পাচার করে দেয় মার্কিন বাহিনীর সদস্যরা। আর গত ৭-৮ বছরে আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো থেকে নামমাত্র মূল্যে ইসরাঈল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেল পাচারের আর্থিক মূল্য হাযার হাযার কোটি ডলার। একদিকে ইসলামোফোবিয়া ছড়িয়ে পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম ও মুসলমানদের অগ্রযাত্রা রুখে দেয়া, মধ্যপ্রাচ্যে আইএস ও ইরান জুজু ঝুলিয়ে হাযার হাযার কোটি পেট্টোডলার নিরাপত্তা চুক্তি ও অস্ত্র বিক্রির নামে লুটে নেয়ার অভিসন্ধি আইএস তথাকথিত ইসলামী জঙ্গিবাদের ফসল।

শ্রীলঙ্কায় আত্মঘাতী বোমা হামলার পর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে। গত ২৯শে এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে এক বাড়ি ঘেরাও করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, টিনশেড বস্তিঘর ভাড়া নিয়ে থাকতো দু’তিন জন নির্মাণ শ্রমিক। ওরাই সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে র‌্যাবের অভিযানের মুখে ওরা বোমা ফাটিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। র‌্যাবের অভিযানের সময় বিস্ফোরণে তাদের ছিন্নভিন্ন দেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রায় প্রতিটি জঙ্গি বিরোধী অভিযানের পরিসমাপ্তির চিত্র এমনই অভিন্ন। গোয়েন্দা রির্পোটের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, গোলাবারুদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেলেও কথিত জঙ্গিদের ধরে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে না পারার ব্যর্থতা অস্বীকার করা যায় না। বিশাল নিরাপত্তা বলয়ে থাকা ছাদ্দাম হোসেন ও গাদ্দাফীর মত নেতাদের জীবিত ধরতে পারলেও পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে অভিযান চালিয়ে মার্কিন মেরিন সেনারা ওসামা বিন লাদেনকে জীবিত ধরতে না পারার ঘটনাকে রহস্যময় বলে মনে করা যায়। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হ’লে এর পেছনের ঘটনা, নেটওয়ার্ক ও কুশীলবদের ঠিকুজি খুঁজে বের করতে হবে। অভিযান চালিয়ে তাদেরকে হত্যা বা আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়ার মধ্য দিয়ে পুরো বিষয়টিতে একটি রহস্যময়তার মোড়কে বন্দি করে রাখা হয়। নিউজিল্যান্ডের বন্দুক হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্ট অথবা শ্রীলঙ্কায় হামলার সন্দেহভাজন হিসাবে আটকদের কেউই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়নি। এ থেকেই তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা এবং রহস্য উদঘাটন ও নিরসনে সদিচ্ছার প্রতিফলন পাওয়া যায়। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে ইসলামী জঙ্গি নেটওয়ার্কের অস্তিত্ব প্রমাণ করা জায়নবাদী পশ্চিমাদের ইসলামোফোবিক এজেন্ডার অংশ। তা না হ’লে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, অস্ত্র বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থনীতির পতন ঠেকানো সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের দেশে জঙ্গিবাদের নামে যেসব তৎপরতা চলছে তা পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসা প্রয়োজন। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ এদের তৎপরতা সমর্থন করে না। আমাদের সমাজের কোন অংশের মানুষ তাদেরকে অর্থ সহায়তা দিয়ে বা মোটিভেট করে আত্মাঘাতী হ’তে উদ্বুদ্ধ করছে, নাকি আন্তর্জাতিক কুশীলবদের ক্রীড়নক হয়ে তারা দেশবিরোধী, জাতি বিরোধী ভুমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। এদেরকে অক্ষত অবস্থায় ধরে সেই রহস্য অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে।

আল-কায়েদা, আইএস বিরোধী পশ্চিমা সামরিক অভিযান থেকে বাংলাদেশে জঙ্গি বিরোধী অভিযান পর্যন্ত কোথাও এই স্বচ্ছতা দেখা যাচ্ছে না। মোহাম্মদপুরের বসিলায় কথিত জঙ্গি আস্তানায় সন্দেহভাজন জঙ্গিরা নিজেরাই বোমা ফাটিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে র‌্যাব দাবী করেছে। যে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে র‌্যাব সেখানে অভিযান পরিচালনা করেছিল, তাদের কাছে কি ধরনের অস্ত্র ও বিষ্ফোরক আছে, আক্রান্ত হ’লে তারা কিভাবে মোকাবেলা করতে পারে, অভিযান পরিচালনার আগে র‌্যাবের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সে সম্পর্কে কোন ধারণা নিয়ে সিদ্ধান্তে পেঁŠছেছিলেন কি-না আমরা তা জানি না। ইতিপূর্বে যেসব জঙ্গি আস্তানায় যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হয়েছিল তার প্রায় সবগুলোতেই একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। বিশেষ সূত্রে বা গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য পাওয়ার পর এদেরকে বিশেষ নজরদারিতে রেখে কৌশলে আটক করা কি অসম্ভব হ’ত? আমরা জানি, পশ্চিমারা আল-কায়েদা, আইএস নিয়ে এক প্রকার ইদুর বিড়াল খেলছে। ইসলামোফোবিক এজেন্ডা, তেলসম্পদ লুন্ঠন ও অস্ত্রবাণিজ্যের মত কৌশলগত অর্থনৈতিক স্বার্থ আছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিশ্চয়ই জঙ্গি বিরোধী অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোন কৌশলগত স্বার্থ নেই। অভিযান চালাতে গেলে সন্দেহভাজন জঙ্গি অথবা কথিত সন্ত্রাসী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর গুলি চালালে বাহিনী পাল্টা গুলি চালালে ওরা নিহত হয় অথবা আত্মঘাতি বোমায় তাদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এ ধরনের বক্তব্য কেমন যেন গৎবাঁধা মনে হয়। অভিযানকে বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জঙ্গি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য খুঁজে বের করা। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সাফল্য অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে অভিযানেই সব সাক্ষ্য ও চিহ্ন শেষ করে ফেলা আমাদের বাহিনীগুলোর জন্য জঙ্গিবাদ নির্মূলে বড় ধরনের ভ্রান্তি ও ব্যর্থতা।

জঙ্গিবাদ নিয়ে আমাদের সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্ত ও স্বচ্ছ অবস্থান গ্রহণের সাথে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ জড়িত। ওয়ার অন টেররিজম থেকে শুরু করে, আল-কায়েদা, আইএস, হুথি, বোকো হারাম নিয়ে যেসব রক্তাক্ত নাটকীয় ঘটনার জন্ম হয়েছে তার সবই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর অগ্রযাত্রা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে চরমভাবে ব্যাহত করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের পর কৌশলগত কারণে দক্ষিন এশিয়ার মুসলমান জহনসংখ্যা অধ্যুসিত দেশগুলো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের টার্গেট হওয়ার আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলা এবং বাংলাদেশে হলি আর্টিজানে বন্দুক হামলা, শোলাকিয়া মাঠে বোমা হামলা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সর্বশেষ গত সোমবার গুলিস্তানে পুলিশের উপর বোমা হামলার ঘটনা পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গ্রুপ আইএস-এর দায় স্বীকারের রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বরাবরই দাবী করছে, বাংলাদেশে আইএস এর কোন সক্রিয় নেটওয়ার্ক নেই। আইএস-এর ওয়েবসাইট নিয়েও বিভ্রান্তি আছে। আইএস-এর কথিত দাবী স্বীকার করলে বা প্রমাণিত হ’লে ওয়ার অন টেররিজমে জড়িত আন্তর্জাতিক বাহনী বাংলাদেশেও একটি ঘাঁটি গেড়ে অভিযান পরিচালনার সুযোগ খুঁজতে পারে। ইরাক, আফগানিস্তান ও সিরিয়া থেকে পশ্চিমা বাহিনী পাততাড়ি গুটানোর পর পেন্টাগনের সামরিক কমান্ডাররা হয়তো সামরিক বাহিনীর এসব সদস্যদের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তাদের নতুন এসাইনমেন্টে নিয়োজিত করার কথা ভাবছে। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে আইএস জুজু তৈরী করে তারই ক্ষেত্র প্রস্ত্তত করা হচ্ছে কি-না আমাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জনমনে তা এক নতুন আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডেতে গির্জা ও হোটেলে রক্তাক্ত সিরিজ বোমা হামলার পর বাংলাদেশে পুলিশের উপর বিস্ফোরক হামলার পর তথাকথিত ‘আইএস-এর দায় স্বীকার করেছে বলে জঙ্গি সংগঠন পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের তরফ থেকে আইএস পর্যবেক্ষক রিটা কাটজ এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন। এই রিটা কাটজ অতীতেও বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার সাথে আইএস সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ হাযির করার চেষ্টা করেছেন। আমাদের সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের এসব দাবী অস্বীকার করার পাশাপাশি বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার মধ্য দিয়ে সেসব দাবীর অসারতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, শাসকশ্রেণীর আভ্যন্তরীণ কোন্দল, সাম্প্রদায়িক বিভাজন, আঞ্চলিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে পুঁজি করেই আইএস-এর জঙ্গি হামলার প্লট তৈরী হয়ে থাকে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত তা প্রমাণিত হয়েছে। এ হিসাবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি উর্বর ক্ষেত্র। অস্বচ্ছ ও ভঙগুর হ’লেও, ইতিমধ্যে বাংলাদেশে এক ধরনের পরোক্ষ রাজনৈতিক সমঝোতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ এবং সংসদে যোগদানের মধ্য দিয়ে তা বোঝা যাচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে দেশের বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটি জাতীয় ঐক্যের পরিবেশ সৃষ্টি করা এখন সময়ের দাবী। অন্যথায় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ফায়দা হাছিলের কুশীলবরা দেশকে অশান্ত করার পথ খুঁজতে পারে।







মিয়ানমার ও ভারতের নাগরিকত্ব আইন বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি - জামালউদ্দীন বারী
বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে যুগে যুগে ষড়যন্ত্র - মুহাম্মাদ আব্দুল গফুর
নতুন শিক্ষা কারিকুলাম : মুসলিম জাতিসত্তা ধ্বংসের নীল নকশা - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
ফিলিস্তীনীদের কান্না কবে থামবে? - শামসুল আলমশিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণে মরণদশা
সিঙ্গাপুর যে কারণে উন্নত - আত-তাহরীক ডেস্ক
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক : একটি প্রাসঙ্গিক আলোচনা - লিলবর আল-বারাদী - যশপুর, তানোর, রাজশাহী
আত্মহত্যা ও সামাজিক দায় - মুহাম্মাদ ফেরদাঊস
রোহিঙ্গা ফেরৎ চুক্তি : তবে... - শামসুল আলম শিক্ষকআল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
মূর্তি, ভাস্কর্য ও সমকালীন প্রসঙ্গ - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
ভেজাল ঔষধে দেশ সয়লাব
অক্টোবর বিপ্ল­ব (গর্বাচেভ কি বিশ্বাসঘাতক?) - মশিউল আলম
আরও
আরও
.