হিমালয়কেন্দ্রিক নদীগুলোর ওপর ৫৫২টি বাঁধ নির্মিত হচ্ছে। পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে এসব বাঁধ নির্মাণ করছে প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তান। পত্রিকান্তরে এ খবর প্রকাশের পর বিভিন্ন মহলে ব্যাপক উদ্বেগ ও বিচলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, ঐ চার দেশের এ বিশাল উদ্যোগ-পদক্ষেপ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না বাংলাদেশ সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান, এমনকি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোও। হিমালয়কেন্দ্রিক বহু নদীর অচ্ছেদ্য অংশীদারিত্ব রয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের অবস্থান সমুদ্র তীরবর্তী হওয়ায় এসব নদীর পানি বাংলাদেশের ওপর দিয়েই সমুদ্রে পতিত হয়। আন্তর্জাতিক আইন-বিধি অনুযায়ী, ভাটির দেশকে অবহিত না করে কিংবা তার সম্মতি না দিয়ে উজানের কোন দেশের অভিন্ন নদীতে বাঁধ বা প্রতিবন্ধক নির্মাণ করে পানিপ্রবাহ ব্যাহত করার এখতিয়ার নেই। বাংলাদেশের ৫৭টি নদীর উৎপত্তিস্থল সীমান্তের বাইরে। এর মধ্যে ৫৪টি উৎপন্ন হয়েছে হিমালয় পর্বত শ্রেণী ও অন্যান্য স্থান থেকে। হিমালয়বাহিত নদীগুলো নেপাল, ভুটান ও ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাকি তিনটি নদীর উৎপত্তিস্থল মায়ানমার। লক্ষ্যণীয় যে, ভারত, নেপাল ও ভুটান হিমালয়কেন্দ্রিক নদীগুলোতে বাঁধ নির্মাণের ব্যাপক উদ্যোগ-পদক্ষেপ ও তৎপরতা শুরু করলেও বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা ও মতামত বিনিময়ের ন্যূনতম গরজ অনুভব করেনি। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, বাঁধ নির্মাণের এ বিশাল কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারত। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুঃখজনক ব্যর্থতার পরিচয় এই যে, এ দু’টি মন্ত্রণালয় এ সম্পর্কে সম্ভবত কোন খবরই রাখে না। পানি নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হ’লেও ভারত যেমন এ বিষয়ে কিছু বলেনি, বাংলাদেশও তেমনি নীরবতা অবলম্বন করে গেছে। এ থেকেই প্রতীয়মান হয়, পররাষ্ট্র ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে হয় কিছুই জানে না অথবা কিছু জানলেও বিষয় হিসাবে তা আলোচনাযোগ্য বলে মনে করেনি।

ভারত একদিকে বিদ্যুৎ ঘাটতির দেশ, অন্যদিকে দিনকে দিন তার বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে সে নিজে যেমন পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় আকারের পরিকল্পনা নিয়েছে তেমনি নেপাল ও ভুটানে পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সম্ভাবনা রয়েছে তা কাজে লাগিয়ে লাভবান হওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। নেপাল ও ভুটান খুশি এই ভেবে যে, ভারতে বিদ্যুৎ রফতানি করে প্রতিবছর তারা মোটা অংকের অর্থ উপার্জন করতে পারবে। ইতিমধ্যে ভুটানের রাজস্ব আয়ের একটা প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে পানি বিদ্যুৎ। ২০০৬ সালে ভারত ভুটানের সঙ্গে ৬০ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তির আওতায় ২০২০ সালের মধ্যে ভারত ভুটান থেকে ৫ হাযার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে। পর্যায়ক্রমে এ আমদানি উন্নীত হবে ১০ হাযার মেগাওয়াটে। নেপালও তার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য ২২ হাযার মেগাওয়াট পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই রফতানি হবে ভারতে। বলাবাহুল্য, বিদ্যুৎ সংকট বাংলাদেশও প্রকট। আগামীতে বিদ্যুৎ চাহিদা আরও বাড়বে। হিমালয়কেন্দ্রিক নদীগুলোতে বাঁধ নির্মাণ করে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনে ভারত, নেপাল ও ভুটানের উদ্যোগ-পরিকল্পনার সঙ্গে বাংলাদেশকে যদি সংযুক্ত করা হ’ত অর্থাৎ পরিকল্পনা যদি চতুর্দেশীয় হ’ত তাহ’লে উৎপাদিত বিদ্যুতের একটা অংশ বাংলাদেশও পেতে পারতো।  বাংলাদেশকে সূক্ষ্ম কৌশলে এ উদ্যোগ-পরিকল্পনার বাইরে রাখা হয়েছে। ভারত হিমালয় কেন্দ্রিক নদীগুলোর ভারতীয় অংশে পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে চুক্তি করে আগামীর বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর বন্দোবস্ত বেশ ভালভাবেই করছে। অথচ এসব প্রকল্পের কারণে যে দেশটি সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে সেই বাংলাদেশকে বিন্দুমাত্র আমলে নেয়ার তাকীদ বোধ করছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, পানি ব্যবস্থাপনা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন আঞ্চলিক ভিত্তিতে হ’লে প্রতিটি দেশই কিছু কম বা বেশী লাভবান হ’তে পারতো। এক্ষেত্রে কারো একতরফাভাবে লাভবান এবং কারো একতরফাভাবে বঞ্চিত হওয়ার অবকাশ থাকতো না।

হিমালয় থেকে উৎসারিত নদীগুলোর ওপর বাঁধ নির্মাণ করে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণাপত্রের আলোকে আলোচ্য খবরে বলা হয়েছে, ভারত, নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তানে এ মুহূর্তে ১শ’টি পানি প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে ২৩ হাযার ৩১৮ মেগাওয়াট। নির্মাণাধীন প্রকল্পের সংখ্যা ৪৬টি। এসব প্রকল্পের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৯ হাযার ২৫৪ মেগাওয়াট। পরিকল্পনাধীন আছে ৪০৬টি প্রকল্প, যাদের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১ লাখ ৬৯ হাযার ৪০১ মেগাওয়াট। সর্বমোট ৫২২টি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে ২ লাখ ১২ হাযার ২৭৩ মেগাওয়াট।

এসব প্রকল্প থেকে সংশ্লিষ্ট সকল দেশই বিদ্যুৎ পাবে, কেবল পাবে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত কোন নদ-নদীর উৎসস্থলই পাকিস্তান নয়। ফলে পাকিস্তান যেসব নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন করছে বা করবে, তার প্রতিক্রিয়া সরাসরি বাংলাদেশে পতিত হওয়ার কথা নয়। ভারত, নেপাল ও ভুটানের নদীগুলোর সঙ্গেই বাংলাদেশের নদীগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংযোগ রয়েছে। এই তিন দেশে যেসব প্রকল্প গৃহীত হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে, তার অনিবার্য প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশে পড়বেই।

উজানে বাঁধ নির্মাণ করে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন করার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। যে উদ্দেশ্য নিয়েই হোক, নদীতে বাঁধ বা প্রতিবন্ধক নির্মাণ করলে ভাটির দেশ বা অঞ্চলে পানিপ্রবাহ হ্রাস পাবেই। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের তিক্ত বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। অভিন্ন নদী গঙ্গার উপর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের পদ্মা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। পদ্মার শাখা-প্রশাখার অবস্থা আরও শোচনীয়। শুকনো মৌসুমে অনেক নদীতেই পানি থাকে না। এসব নদীর প্রবাহ স্বল্পতা বা প্রবাহশূন্যতার বহুমাত্রিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। দ্রুতই নদীগুলো ভরাট হয়ে পড়ছে। উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় মরুময়তা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবণাক্ততার বিস্তার ঘটছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত ও ব্যাহত হচ্ছে। সেচে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পানিতে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির অভাবে বন ও গাছপালার বিকাশ-বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। মিঠা পানির সঙ্কটে শিল্প-উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মৎস্য উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের অপূরণীয় বিনাশ সাধিত হচ্ছে। এছাড়া আরও নানাবিধ বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে জীবন ও জীবিকায়।

গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না। গঙ্গায় পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় ফারাক্কা পয়েন্টে যে পানি আসছে তা খুবই অপ্রতুল। ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্পের অস্তিত্ব পানির অভাবে হুমকির মুখে। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে একটি ফায়ছালায় বা চুক্তিতে আসার কথা বহুদিন ধরে শোনা যাচ্ছে। আজও পর্যন্ত সেই চুক্তি সম্পাদন সম্ভব হয়নি।

উজানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাঁধ নির্মাণের কথিত কর্মযজ্ঞ শেষ হ’লে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কি হবে, তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা যে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তার সারকথা হ’ল: পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। নদ-নদীর পানিপ্রবাহ আরো কমে যাবে এবং এক সময় এগুলো মারা যাবে। নদ-নদীর পানিপ্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় দ্রুত লবণাক্ততার বিস্তার ঘটবে। পানিশূন্যতায় মরুময়তাও দ্রুতায়িত হবে। ধ্বংস হয়ে যাব ‘বাংলাদেশে ঢাল’ সুন্দরবন। ফসল জন্মানো কঠিন হয়ে পড়বে। সড়কসেতু, ভবন ও স্থাপনাগুলো মরীচা বা নোনা ধরে বিনষ্ট হয়ে যাবে। জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হয়ে পড়বে। বর্ষায় বন্যা ও ভাঙ্গনের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে। জীবিকা, সভ্যতা-সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের স্থানচ্যুতি ঘটবে ইত্যাদি।

যার এ রকম সর্বনাশের আশঙ্কা, সেই বাংলাদেশকে পাশ কাটিয়ে নদ-নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই পরিকল্পনা ও তৎপরতা কতটা উদ্বেগজনক, তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। আরও উল্লেখের বিষয়, বাংলাদেশ এখনো এ ব্যাপারে প্রায় অন্ধকারেই রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলো হঠাৎ করেই এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এটা মনে করার কোনই কারণ নেই। বহুদিন ধরেই এ তৎপরতা চলছে। বাংলাদেশের তা না জানার ব্যর্থতার মত বড় ব্যর্থতা আর কিছুই হ’তে পারে না।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কালবিলম্ব না করে সরকারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিতে হবে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ব্যাপক মূল্যায়ন ও সমীক্ষা করতে হবে। এ ব্যাপারে কি কি পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব তা নির্ণয় করতে হবে এবং নির্ণীত পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়নে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে। আলোচ্য খবরে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে জাতিসংঘের ওয়াটার কোর্স কনভেনশন এখনও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ কনভেনশনের পক্ষে ভোট দিলেও এখনও তা অনুস্বাক্ষর করেনি এবং সংসদে রেটিফাই করেনি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রয়োজনবোধে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে গিয়ে তার বক্তব্য ও দাবি জানাতে পারতো যদি ঐ কনভেনশনে অনুস্বাক্ষরসহ সংসদে তা রেটিফাই হ’ত। এতদিনেও কেন এদিকে নযর দেয়া হয়নি এটা একটা বড় প্রশ্ন। যা হোক, এখন সময়ক্ষেপণের কোন সুযোগ নেই। আমরা আশা করতে চাই, সরকার বিষয়টি যথোচিত গুরুত্ব সহকারে আমলে নেবে এবং প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এ অঞ্চলের পানি সঙ্কট দূর এবং পানির বহুমুখী ও সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য আঞ্চলিক পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। বিশেজ্ঞরা বহুদিন ধরে এ বিষয়ে তাকীদ দিয়ে আসছেন। কিন্তু বাস্তবে কোন উদ্যোগ এখনও গৃহীত হয়নি। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের বিশেষজ্ঞরা পুনরায় আঞ্চলিক পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তারা পানি নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন। বাংলাদেশ বহু আগে থেকেই পানি সঙ্কট নিরসনে আঞ্চলিক উদ্যোগ-ব্যবস্থার কথা বলে আসছে। বাংলাদেশই প্রথম নেপালকে  অন্তর্ভুক্ত করে ত্রিদেশীয় উদ্যোগে নেপালে রিজার্ভার নির্মাণ এবং পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছিল। ভারত রাজি না হওয়ায় যৌথ নদী কমিশনে নেপালের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি ভারত নেপালকে অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের প্রস্তাব মাফিক নেপালে রিজার্ভার নির্মাণ করা হ’লে, বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী অন্তত ১শ’ বছর এসব দেশে পানির কোন সঙ্কট হবে না। অন্যদিকে রিজার্ভারকে কেন্দ্র করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হ’লে হাযার হাযার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনও সম্ভব হবে যা প্রতিটি দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে বড় আকারে অবদান রাখতে পারবে। এ প্রসঙ্গে এই মর্মে একটি খবর পাওয়া গেছে যে, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল গঙ্গা অববাহিকাভিত্তিক একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে যার লক্ষ্য পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পানি সংরক্ষণ। প্রকল্পটি নেয়া হ’লে বলতে হবে, বাংলাদেশের প্রস্তাবটিই এতদিনে বিবেচনায় আনা হয়েছে।

বাংলাদেশের ওপর দিয়ে তিনটি প্রধান অববাহিকা এবং অন্যান্য অভিন্ন নদী দিয়ে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে যে পরিমাণ পানি সমুদ্রে পতিত হয়, বিশেষজ্ঞদের মতে, তা ধরে রাখলে বাংলাদেশ অন্তত ৩৫ ফুট পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে থাকতো। এ থেকে বুঝা যায়, পানির কোন সঙ্কট এ অঞ্চলে নেই। সঙ্কট যেটা আছে সেটা হ’ল, পানি ব্যবস্থাপনার বা পানির ব্যবহার পরিকল্পনার। আঞ্চলিক উদ্যোগে এ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হ’লে পানি নিয়ে কোন ভাবনায় পড়তে হবে না এ অঞ্চলের দেশ ও মানুষের। আঞ্চলিক পানি ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ-পদক্ষেপের সঙ্গে চীনকে যুক্ত করার কথাও বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন। ব্রহ্মপুত্র এ অঞ্চলের দীর্ঘতম নদ। এর অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হ’লে চীনের সংযুক্তি অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞরা আরও একটি কথা বরাবরই বলে আসছেন যে, আঞ্চলিক ও অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা সর্বাগ্রে প্রয়োজন, যার অভাব রয়েছে। কোন কোন দেশ এ ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক নয়। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সকল দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঐকমত্য না হ’লে আঞ্চলিক পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কথা শুধু কথার কথাই হয়ে থাকবে, বাস্তবে রূপ নেবে না। এ ব্যাপারে আমরা প্রতিটি দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সদিচ্ছাপ্রবণ হওয়ার আহবান জানাই।

\ সংকলিত \

মুনশী আব্দুল মান্নান







শার্লি এবদো, বিকৃত বাকস্বাধীনতা ও আমরা - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
ফারাক্কা-রামপাল : বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্কের বাধা - আনু মুহাম্মদ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ
ইতিহাসের ভয়াবহ সব মহামারীগুলো - -আত-তাহরীক ডেস্ক
বিশ্বময় ভাইরাস আতঙ্ক : প্রয়োজন সতর্কতা - মুহাম্মাদ আব্দুছ ছবূর মিয়া, ঝিনাইদহ
আবহাওয়া দূষণ রোধে সবুজ উদ্ভিদ
পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষায় মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক হালচাল - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
ঘূর্ণিঝড় ফণী - মুহাম্মাদ আব্দুছ ছবূর মিয়া, ঝিনাইদহ
ফ্রান্স ও স্পেনে হিজাব নিষিদ্ধ
পার্বত্য শান্তিচুক্তির হাল-অবস্থা - মেহেদী হাসান পলাশ
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা - সুকান্ত পার্থিব
বোরো ধানে লোকসান, বিপাকে কৃষক - * জুয়েল রানা, সহকারী শিক্ষক,আলহাজ্জ শাহ্ মাহ্তাব-রওশন ব্রাইট স্টার স্কুলউত্তর পলাশবাড়ী, চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।
গ্লোবাল টাইগার সামিট
আরও
আরও
.