৬ ডিসেম্বর ভারতবর্ষ তথা গোটা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে একটি শোকের দিন। ১৯৯২ সালের এই দিনে উগ্র হিন্দুরা ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা রাজ্যের ফয়যাবাদে অবস্থিত বাবরী মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়। এ অনভিপ্রেত ঘটনার জের ধরে সমগ্র ভারতের ৩৫৬টি শহরে সৃষ্ট হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় নিহত হয় দুই হাযারের বেশী মানুষ, যাদের অধিকাংশ মুসলমান। আহত হয় ২০ হাযারের বেশী। কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুণ্ঠিত হয়। বাড়ীঘর হয় ভস্মীভূত। পৃথিবীর অন্যতম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের দাবীদার ভারতের ইতিহাসে রচিত হয় এক কালো অধ্যায়। এ ন্যক্কারজনক ঘটনার ১০ দিন পর (১৬ ডিসেম্বর ১৯৯২) সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মনমোহন সিং লিবারহানের নেতৃত্বে ‘লিবারহান কমিশন’ গঠন করা হয়। দীর্ঘ ১৭ বছর পর চলতি বছরের ৩০ জুন কমিশন তাদের ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে খরচ হয় ৮ কোটি রুপি। কমিশন গঠনের পর মোট ৪৮ বার রিপোর্ট জমা দেয়ার সময় বৃদ্ধি করা হয়। ভারতীয় পার্লামেন্টে উপস্থাপনের পূর্বেই গত ২৩ নভেম্বর কাকতালীয়ভাবে ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকা কমিশনের রিপোর্ট ফাঁস করে দেয়। ২৪ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরাম পার্লামেন্টে রিপোর্টটি পড়ে শোনালে তুমুল হৈচৈ শুরু হয়। এমনকি হাতাহাতির ঘটনা পর্যন্ত ঘটে।

লিবারহান কমিশনের এই রিপোর্টে মোট ৬৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী, বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা এল কে আদভানী, বিজেপির সাবেক সভাপতি মুরলি মনোহর যোশি, উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং যাদব, ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’ নেতা অশোক সিংঘাল ও প্রবীণ তোগাড়িয়া, ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ’ (আরএসএস) প্রধান কে এস সুদর্শন ও গোবিন্দাচার্য, সংঘ পরিবারের সাবেক নেত্রী উমা ভারতী, শিব সেনা প্রধান বাল ঠাকরে, বিনয় কাটিয়ার, গিরিরাজ কিশোর প্রমুখ। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজপেয়ী এবং লালকৃষ্ণ আদভানী বাবরী মসজিদ ধ্বংসের পরিকল্পনা জেনেও তা ঠেকানোর তেমন কোন পদক্ষেপ নেননি। রিপোর্টে আরো বলা হয়, মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত এবং এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে বিজেপি নেতারা এ ব্যাপারে জানতেন না বা তারা নিরপরাধ। রিপোর্টে বাজপেয়ী, আদভানী, যোশিসহ অনেক শীর্ষস্থানীয় হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতাকে ‘ভুয়া উদারনৈতিক’ (Pseudo-moderates) আখ্যায়িত করে বাবরী মসজিদ ধ্বংসে ইন্ধন যোগানোর জন্য সরাসরি দোষারোপ করা হয়। রিপোর্টে আরো বলা হয়, মসজিদ ধ্বংসের আগে করসেবকদের হাতে বিপুল অংকের তহবিল জমা হওয়ার ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয়, নেতারা তাদের শক্তিশালী হ’তে সহযোগিতা করেছেন। রিপোর্টে উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংয়ের কড়া সমালোচনা করা হয়। মসজিদ ধ্বংসের সময় যেসকল উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ও পুলিশ অফিসার নীরবতা পালন করেছিলেন তিনি তাদেরকে অন্যত্র বদলি করেছিলেন বলে রিপোর্টে উলে­­খ করা হয়েছে।

এ রিপোর্টের ফলে উগ্র হিন্দু দল বিজেপি ও তাদের দোসর করসেবক, সংঘ পরিবার, আরএসএস-এর মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। বিলম্বে হ’লেও সত্য তার স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে। বিধিবাম দেখে বাজপেয়ী, আদভানী, যোশি প্রমুখ সাফাই গাওয়া শুরু করেছেন। অবশ্য উমা ভারতী বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার নৈতিক দায়িত্ব স্বীকার করে বলেছেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার ক্ষেত্রে আমারও বড় ভূমিকা ছিল। সেদিন যা ঘটেছিল, তার জন্য আমিও দায়ী। বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার নৈতিক দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। কেননা আমিই সেখানে করসেবকদের জমায়েত করেছিলাম’।[1] তবে ‘আরএসএস’ প্রধান মোহন ভগবত ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে বলেছেন, ‘১৭ বছর আগে ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনায় সংঘের অনুতাপ করার প্রশ্নই আসে না। বরং ঐ মসজিদের স্থানে রামমন্দির স্থাপনের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে’। তিনি আরো বলেন, ‘সংঘ নিজস্ব নির্দেশনা অনুসারে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বা আদালতের আদেশে অথবা জনগণের মতৈক্যের ভিত্তিতে যেভাবেই হোক রামমন্দির নির্মাণ করার ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।[2] আদভানী বাবরী মসজিদ ধ্বংসের দিনকে তার জীবনের অন্যতম ‘দুঃখজনক ঘটনা’ বলে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন।[3] অথচ তিনিই ১৯৯০ সালে বাবরী মসজিদস্থলে রামমন্দির নির্মাণে হিন্দু জনতাকে উদ্বুদ্ধ করতে ভারতময় প্রচার-প্রপাগান্ডা চালিয়েছিলেন। বাজপেয়ী ১৯৯২ সালের ৫ ডিসেম্বর লক্ষ্ণৌতে বলেছিলেন, ‘বাবরী মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে ‘ইয়াঙ্গা’ (ধর্মীয় উৎসব) পালিত হবে’। বাবরী মসজিদ ধ্বংসের পরের দিন ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক ও প্রখ্যাত কলামিস্ট কুলদীপ নায়ার বাজপেয়ীর কাছে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, Let the temple come up.‘মন্দির নির্মাণ হ’তে দিন’।[4]

লিবারহান কমিশনের রিপোর্টের ভাষ্য মতে ঐ দিন (৬ ডিসেম্বর ’৯২) সকালে এল কে আদভানী ও অন্যরা বিনয় কাটিয়ার-এর বাসভবনে মিলিত হন। এরপর তারা (আদভানী, মুরলি মনোহর যোশি, বিনয় কাটিয়ার) বাবরী মসজিদস্থলে নির্মিত পূজা মন্ডপে উপস্থিত হয়ে ২০ মিনিটব্যাপী প্রস্ত্ততি পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর তারা মসজিদের মাত্র ২০০ মিটার দূরে অবস্থিত ‘রামকথা কুঞ্জ’ এ যান। সেখানে সিনিয়র নেতাদের জন্য মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল।[5] বিকালে একজন টিনএজ করসেবক মসজিদের গম্বুজে লাফ দিয়ে ওঠে। এটি ছিল বাইরে পুলিশের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভাঙ্গার সংকেত। সে সময় আদভানী যোশি গং করসেবকদের মসজিদে প্রবেশ করতে বাধা দেননি বা তা ভেঙ্গে ফেলতে নিষেধ করেননি। অথচ তারা চাইলে খুব সহজেই করসেবকদের বাধা দিতে পারতেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, তারা এর সাথে জড়িত ছিলেন। যেমনটি রিপোর্টে বলা হয়েছে- This selected act of the leaders itself speaks of the hidden intention of one and all being to accomplish demolition of the disputed structure. রিপোর্টে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও এর কোনরূপ সমালোচনা করা হয়নি। অথচ মসজিদ ধ্বংসের সংকটময় সময়ে তাঁর দফতরে বারবার ফোন আসতে থাকলে জানানো হয় যে, তিনি পূজায় ব্যস্ত আছেন। মসজিদ ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত তিনি পূজাতেই নিমগ্ন ছিলেন।[6]

কুলদীপ নায়ার বলেছেন, Even otherwise, the centre has an overall responsibility to protect the constitution. Rao could have easily acted before the demolition took place. The proclamation to impose president's rule was ready a fortnight earlier. It was awaiting the cabinet approval. The prime minister did not convene the meeting. This means his connivance, although in his book Rao mentions the pressure of his party men that did not allow him to react in time. ‘সংবিধানকে রক্ষা করার সার্বিক দায়িত্ব সরকারের। মসজিদ ধ্বংস করার আগে নরসিমা রাও সহজেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারতেন। পক্ষকাল আগে থেকেই সেখানে প্রেসিডেন্টের শাসন জারির ঘোষণা প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছিল। মন্ত্রীসভায় বিষয়টি অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীসভার বৈঠক ডাকেননি। এর অর্থ হচ্ছে, তিনি এ ব্যাপারে পরোক্ষ সম্মতি বা চোখ বুঁজে থেকে সহায়তা দিয়েছেন। অবশ্য নরসিমা রাও তার বইয়ে উলে­খ করেছেন, দলের লোকদের চাপের মুখে তিনি যথাসময়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারেননি’।[7]

প্রথম মোগল সম্রাট বাবর ১৫২৭ খৃষ্টাব্দে হিন্দু রাজা রানা সংগ্রাম সিংহকে সিক্রিতে পরাজিত করে তার প্রধান সেনাপতি মীর বাকীকে অযোধ্যার গভর্নর নিযুক্ত করেন। হিন্দুদের ভাষ্যমতে, মীর বাকী অযোধ্যার একটি মন্দির ধ্বংস করে ১৫২৮ খৃষ্টাব্দে তদস্থলে বাবরী মসজিদ নির্মাণ করেন। এ স্থানটি হিন্দুদের দেবতা রামের জন্মভূমি বলেও তারা দাবী করে। ১৮৫৩ সালে অযোধ্যার নবাব ওয়াজেদ আলী শাহ্-এর শাসনামলে এ নিয়ে প্রথম হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়। ১৮৮৫ সালে হিন্দুরা মন্দির নির্মাণের চেষ্টা করলে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় ৭৫ জন মুসলমান নিহত হন। ১৮৫৭ সালে হিন্দুরা বাবরী মসজিদের কিয়দংশ দখল করে রামপূজার জন্য একটি বেদী নির্মাণ করে। ১৯৩৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মসজিদের দেয়াল এবং একটি গম্বুজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৯ সালের ২২ ডিসেম্বর মধ্য রাতে হিন্দুরা মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করে রাম ও সীতার মূর্তি স্থাপন করে। ১৯৮৪ সালে ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’ মসজিদের তালা খুলে দেয়ার জন্য তীব্র আন্দোলন শুরু করে। ১৯৮৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারী ফয়যাবাদের যেলা জজ সেখানে হিন্দুদের পূজা করার অনুমতি প্রদান করেন এবং তালা খুলে দেয়ার নির্দেশ দেন। এ রায়ের ফলে মুসলমানরা ক্ষুব্ধ হয়ে ‘বাবরী মসজিদ এ্যাকশন কমিটি’ গঠন করে। ১৯৮৭ সালের ১৪ জানুয়ারী পালন করা হয় কালো দিবস। ১৯৮৯ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রভৃতি উগ্রপন্থী হিন্দু দল বাবরী মসজিদস্থলে রামমন্দির নির্মাণের ঘোষণা দেয়। ২ নভেম্বর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ পতাকা উড়িয়ে বাবরী মসজিদ দখল করে। ১৯৯০ সালে আদভানী বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে রামমন্দির নির্মাণের ঘোষণা দেয় এবং অযোধ্যা অভিমুখে রথযাত্রার আয়োজন করে। এরপর ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয়। মসজিদটির কোন ক্ষতি সাধন না করার ব্যাপারে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও প্রায় দেড় লাখ উগ্র হিন্দু সেদিন তা গুঁড়িয়ে দেয়।[8] সে সময় সেখানে ৫০ হাজার ভারতীয় পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।

বাবরী মসজিদস্থল রামের জন্মভূমি এবং একটি মন্দির ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে- এটি প্রমাণের জন্য উগ্রপন্থী হিন্দুরা নানা অপচেষ্টা চালায়। এমনকি তারা মসজিদগাত্রে ৩০টি চিত্র অংকন করে। এর মধ্যে একটি ছিল রামের প্রতিমূর্তি। শুধু তাই নয়, যে যেলা জজের রায়ে উগ্র হিন্দুরা বাবরী মসজিদ দখলে নিতে সমর্থ হয়েছিল তার একটি প্রতিমূর্তিও তারা ভক্তি গদগদচিত্তে মসজিদের প্রবেশপথে স্থাপন করেছিল। মসজিদগাত্রে অংকিত চিত্রগুলোর নীচে লিখিত নির্দেশনায় বলা ছিল যে, বাবরের সৈন্যদল অযোধ্যায় রামমন্দির আক্রমণকালে ৭৫ হাযার হিন্দুকে হত্যা করেছিল এবং তাদের রক্ত মসজিদ নির্মাণে মসলা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আর. এস. শর্মা তাঁর ‘কমিউনাল হিস্টরি এ্যান্ড রামস অযোধ্যা’ (Communal History and Rams Ajodhya) গ্রন্থে বলেছেন, ‘সাম্প্রদায়িক অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলতে এভাবে জ্বলন্ত মিথ্যাকে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। বাবর রামমন্দির ধ্বংস করেছিলেন এবং সে স্থানে তিনি বাবরী মসজিদ স্থাপন করেছিলেন, এ ধারণা যতখানি মিথ্যা ততখানি মিথ্যা তাদের এ দুরভিসন্ধিমূলক প্রচার’।

২০০২ সালের ৫ মার্চ এলাহাবাদ হাইকোর্ট ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’ (এএসআই) নামক ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্থাকে বাবরী মসজিদ এলাকায় খননকাজ চালানোর নির্দেশ দেয়। ২০০৩ সালে সংস্থাটি আদালতে ৫৭৪ পৃষ্ঠার জরিপ রিপোর্ট পেশ করে। বিজেপি সরকার তখন ক্ষমতায় থাকায় আদালত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেনি। যদি হিন্দুদের দাবী সত্য প্রমাণিত হ’ত তাহ’লে নিশ্চয়ই রিপোর্টটি প্রকাশ পেত। প্রখ্যাত ভারতীয় ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক সুরুজ বানের মতে, ‘এএসআই-এর জরিপ রিপোর্টে একথা নিশ্চিতরূপে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাবরী মসজিদের জায়গায় রামমন্দির ছিল না’। তাছাড়া বাবরী মসজিদের ধ্বংসস্তূপে ৫৫টি গর্ত খোঁড়া হলেও সেখানে কোন রামমন্দিরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এমনকি বাবরী মসজিদের চৌদ্দটি প্রস্তরস্তম্ভও প্রমাণ করে

যে, এখানে কোন মন্দির ছিল না। আবিষ্কৃত অধিকাংশ স্তম্ভের দৈর্ঘ্য সাড়ে পাঁচ ফুটের (১.৭৩ মিটার) সামান্য বেশী। গোড়ার দিকের ব্যাস সাত ইঞ্চি থেকে সাড়ে দশ ইঞ্চি। চৌদ্দটির মধ্যে একটির গোড়ার ব্যাস ১ মিটার। ড. আর. এস. শর্মা উলে­­খ করেছেন যে, এ প্রকার স্তম্ভ অধিক ভার বহনক্ষম হ’তে পারে না। এজন্য মধ্যযুগের মন্দিরের পক্ষে অন্তত ৭ ফুট উচ্চতার প্রয়োজন।১০

বাবরী মসজিদ ধ্বংসের মাধ্যমে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দলের রুই কাতলারা সেদিন যে সাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দিয়েছিল বিশ্ব ইতিহাসে তার তুলনা মেলা ভার। তাই সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে জর্জরিত ভারতীয় সমাজকে মুক্ত করার জন্য লিবারহান কমিশনের মাধ্যমে যারা অভিযুক্ত হয়েছে তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া সময়ের অনিবার্য দাবী। ভারতের প্রখ্যাত কলামিস্ট কুলদীপ নায়ার তাঁর এক প্রবন্ধে যথার্থই বলেছেন, It would be tragic if those who demolished the mosque went scot-free. They are also responsible for the killing of 2000 people in the wake of the masjids destruction. ‘যারা বাবরী মসজিদ ধ্বংস করেছে তারা নির্বিঘ্নে ছাড়া পেয়ে গেলে তা হবে দুঃখজনক। তারা মসজিদ ধ্বংসের সাথে সাথে দুই হাযার মানুষ নিহত হওয়ার জন্যও দায়ী’।১১

নূরুল ইসলাম

বড় বনগ্রাম (ভাড়ালীপাড়া), সপুরা, শাহমখদুম, রাজশাহী।


[1]. ভোরের কাগজ, ২৬ নভেম্বর ’০৯, পৃঃ ১ ও ২

[2]. প্রথম আলো, ৬ ডিসেম্বর ’০৯, পৃঃ ৭

[3]. আমার দেশ, ২৬ নভেম্বর ’০৯, পৃঃ ৫

[4]. kuldip Nayar, Politics of Babri Masjid, The Daily Star, 27th November, 2009, p.11.

[5]. সূত্র: উইকিপিডিয়া

[6]. The Daily Star, 27 th November, 2009, p.11.

[7]. Ibid.

[8]. নয়া দিগন্ত, ৬ ডিসেম্বর ’০৯, পৃঃ ১৬

১০. ঐ, পৃঃ ৬৪

১১. The Daily Star, 27th November, 2009, p.11.

৯. ড. শর্মার মূল ইংরেজী গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ: রামমন্দির না বাবরী মসজিদ (ঢাকা: মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল­াহ রিসার্চ একাডেমী, ২০০৭), পৃ. ৫৫






বিষয়সমূহ: মসজিদ
পার্বত্য শান্তিচুক্তির হাল-অবস্থা - মেহেদী হাসান পলাশ
মূর্তি, ভাস্কর্য ও সমকালীন প্রসঙ্গ - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
ফ্রান্স ও স্পেনে হিজাব নিষিদ্ধ
ইতিহাসের ভয়াবহ সব মহামারীগুলো - -আত-তাহরীক ডেস্ক
ইস্রাঈলের সঙ্গে অঘোষিত সম্পর্ক কেন অনুচিত - আত-তাহরীক ডেস্ক
বাংলা ভাষা ও বাংলা একাডেমী নিয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ​র অগ্রন্থিত বক্তৃতা
গণতন্ত্র নয়, চাই ইসলামী খেলাফত - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
শাহবাগ থেকে শাপলা : একটি পর্যালোচনা - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
রক্তের এই হোলি খেলা বন্ধ হোক
আফগানদের কাছে আরেকটি মার্কিন পরাজয় - ড. মারূফ মল্লিক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক : একটি প্রাসঙ্গিক আলোচনা - লিলবর আল-বারাদী - যশপুর, তানোর, রাজশাহী
নদী আটকে চীনের বাঁধ ও শত বছরের ধ্বংসযজ্ঞ - আত-তাহরীক ডেস্ক
আরও
আরও
.