আমরা কোন মুসলমানকে সে যত সৎকর্মই করুক না কেন তাকে যেমন জান্নাতী বলে ঘোষণা দিতে পারি না। অনুরূপভাবে কোন মুসলমান যত মনদ কাজই করুক না কেন তাকে জাহান্নামী বলেও ঘোষণা দিতে পারি না। কারণ কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী সাব্যস্ত করা একমাত্র আল্লাহরই কর্তৃত্বাধীন। কাউকে জাহান্নামী সাব্যস্ত করার শাস্তি কতটা ভয়াবহ হ’তে পারে নিম্নোক্ত হাদীছটি তার বাস্তব উদাহরণ।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, বনী ইসরাঈলের মধ্যে দু’জন ব্যক্তি ছিল। তাদের একজন পাপ কাজ করত এবং অন্যজন সর্বদা ইবাদতে লিপ্ত থাকত। যখনই ইবাদতরত ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে দেখত, তখনই তাকে খারাপ কাজ পরিহার করতে বলত। একদিন সে তাকে পাপ কাজে লিপ্ত দেখে বলল, তুমি এমন কাজ থেকে বিরত থাক। পাপী ব্যক্তি বলল, আমাকে আমার রবের উপর ছেড়ে দাও! তোমাকে কি আমার উপর পাহারাদার করে পাঠানো হয়েছে? সে বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না, অথবা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।
অতঃপর দু’জনকেই মৃত্যু দিয়ে আল্লাহর নিকট উপস্থিত করা হ’ল। আল্লাহ ইবাদতগুযার ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি আমার সম্পর্কে জানতে? অথবা তুমি কি আমার হাতে যা আছে তার উপর ক্ষমতাবান ছিলে? আর পাপীকে বললেন, তুমি চলে যাও এবং আমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ কর। আর অপর ব্যক্তির ব্যাপারে তিনি বললেন, তোমরা একে জাহান্নামে নিয়ে যাও। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, সেই মহান সত্তার কসম! যার হাতে আমার জীবন! সে (ইবাদতগুযার ব্যক্তি) এমন উক্তি করেছে, যার ফলে তার দুনিয়া ও আখেরাত উভয়েই বরবাদ হয়ে গেছে’ (আবূদাঊদ হা/৪৯০১; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৪৫৫; সনদ ছহীহ)।
শিক্ষা :
(১) অত্র হাদীছের মাধ্যমে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও পারস্পরিক কল্যাণকামিতার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
(২) মহান আল্লাহ মানবজাতিকে নানাবিধ মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ বেশী ইবাদতগুযার, কেউ কম ইবাদতকারী। কেউ অল্প পাপী, কেউ বেশী পাপী।
(৩) পাপিষ্ট ব্যক্তির উপর নছীহত অনেক ভারী হয়ে থাকে। এজন্য পাপী লোকটি উপদেশ দাতাকে বলেছিল, তোমাকে কি আমার উপর পাহারাদার করে পাঠানে হয়েছে?
(৪) যদি নছীহতকারী নিশ্চিত হন যে, তার উপদেশ অন্যকে একগুঁয়েমির দিকে পরিচালিত করবে, তবে সেই ক্ষেত্রে নছীহত প্রদান না করাই বাঞ্ছনীয়।
(৫) দাঈকে সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, তার দাওয়াত সবাই কবুল করবে না। আল্লাহ যাকে হেদায়াত দান করবেন,
কেবল তার হৃদয়েই দাঈর দাওয়াত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
(৬) দাঈকে অবশ্যই ধৈর্যশীল ও সনহশীল হ’তে হবে। রাগ নিয়ন্ত্রকারী হ’তে হবে। সে যেন কারো কথায় রাগ করে হাদীছে বর্ণিত ইবাদতগুযার ব্যক্তির ন্যায় বলে না ফেলেন, ‘আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না’।
(৭) কাউকে সরাসরি জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা যাবে না। কেননা কে জান্নাতে যাবে, আর কে জাহান্নামে যাবে, আল্লাহ কাকে ক্ষমা করবেন এবং কাকে ক্ষমা করবেন না- সেটা কেবল আল্লাহই জানেন।
(৮) ক্বিয়ামতের দিন প্রত্যেক ঝগড়-বিবাদকারীকে একত্রিত করা হবে এবং পারস্পরিক বিাবদ মীমাংসা করা হবে। যেমন হাদীছে বলা হয়েছে, অতঃপর দু’জনকেই মৃত্যু দিয়ে আল্লাহর নিকট উপস্থিত করা হ’ল।
(৯) আল্লাহ্ই কেবল অদৃশ্যের খবর রাখেন। তিনিই ‘আলিমুল গায়েব। সুতরাং ইলমুল গায়েবের দাবী করা সীমালংঘন ও কুফরী। এজন্য আল্লাহ সেই ইবাদতগুযার বান্দাকে বলেছেন, তুমি কি আমার হাতে যা আছে তার উপর ক্ষমতাবান ছিলে? আল্লাহ বলেন, ‘আর গায়েবের চাবিকাঠি তাঁর কাছেই রয়েছে। তিনি ব্যতীত কেউই তা জানে না। স্থলভাগে ও সমুদ্রভাগে যা কিছু আছে, সবই তিনি জানেন। গাছের একটি পাতা ঝরলেও সেটা তিনি জানেন। মাটিতে লুক্কায়িত এমন কোন শস্যদানা নেই বা সেখানে পতিত এমন কোন সরস বা শুষ্ক ফল নেই, যা (আল্লাহর) সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই’ (আন‘আম ৬/৫৯)।
(১) আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল। তিনি অনেক বড় পাপীকেও ক্ষমা করে জান্নাত প্রদান করতে পারেন। আবার তিনি শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর। ফলে ইবাদতগুযারকেও কঠিন শাস্তির সম্মুখীন করতে পারেন।