
নবী করীম (ছাঃ) ৪ বার ওমরাহ ও একবার হজ্জ করেছেন। তাঁর হজ্জের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এসেছে ছাহাবীগণের মাধ্যমে। তাঁর হজ্জের খুঁটিনাটি সব উঠে এসেছে নিম্নের হাদীছে।
জা‘ফর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তিনি সকলের পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। অবশেষে আমার পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি বললাম, আমি মুহাম্মাদ ইবনু আলী ইবনে হুসায়ন। তিনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আমার মাথার উপর রাখলেন। তিনি আমার জামার উপর দিকের বোতাম খুললেন তারপর নীচের বোতাম খুললেন। অতঃপর তার হাত আমার বুকের মাঝে রাখলেন। আমি তখন যুবক ছিলাম।
তিনি বললেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তোমাকে স্বাগত জানাই। তুমি যা জানতে চাও, জিজ্ঞেস কর। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তখন তিনি (বার্ধক্যজনিত কারণে) দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ইতিমধ্যে ছালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেল। তিনি নিজেকে একটি চাঁদর আবৃত করে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি যখনই চাঁদরের প্রান্ত নিজ কাঁধের উপর রাখতেন- তা (আকারে) ছোট হবার কারণে নীচে পড়ে যেত। তার আরেকটি বড় চাঁদর তার পাশেই আলনায় রাখা ছিল। তিনি আমাদের নিয়ে ছালাতের ইমামতি করলেন।
অতঃপর আমি বললাম, আপনি আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর (বিদায়) হজ্জ সম্পর্কে অবহিত করুন। জাবের (রাঃ) স্বহস্তে ৯ সংখ্যার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নয় বছর (মদীনায়) অবস্থান করেন এবং এ সময়ের মধ্যে হজ্জ করেননি। অতঃপর ১০ম বর্ষে লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেয়া হ’ল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ বছর হজ্জে যাবেন। সুতরাং মদীনায় বহু লোকের আগমন হ’ল। তাদের প্রত্যেকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অনুসরণ করতে এবং তাঁর অনুরূপ আমল করতে আগ্রহী ছিল। আমরা তাঁর সঙ্গে রওয়ানা হ’লাম। আমরা যখন যুল হুলায়ফাহ নামক স্থানে পৌঁছলাম, তখন আসমা বিনতু উমায়স (রাঃ) মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকরকে প্রসব করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলেন, এখন আমি কী করব? তিনি বললেন, তুমি গোসল কর, একখন্ড কাপড় দিয়ে পট্টি বেঁধে নাও এবং ইহরামের পোষাক পরিধান কর।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে (দু’রাক‘আত) ছালাত আদায় করলেন। এরপর ‘ক্বাছওয়া’ নামক উষ্ট্রীতে আরোহণ করলেন। অতঃপর বায়দা নামক স্থানে তার উষ্ট্রী যখন তাকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল তখন আমি সামনের দিকে যতদূর দৃষ্টি যায়, তাকিয়ে দেখলাম লোকে লোকারণ্য। কতক সওয়ারীতে, কতক পদব্রজে অগ্রসর হচ্ছে। ডানদিকে, বামদিকে এবং পিছনেও একই দৃশ্য।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের মাঝখানে ছিলেন এবং তাঁর উপর কুরআন নাযিল হচ্ছিল। একমাত্র তিনিই এর আসল তাৎপর্য জানেন এবং তিনি যা করতেন, আমরাও তাই করতাম।
তিনি আল্লাহর একত্ব সম্বলিত এ তালবিয়াহ পাঠ করলেন, لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ، অর্থঃ ‘আমি তোমার দরবারে হাযির আছি, হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে হাযির, আমি তোমার দরবারে হাযির, তোমার কোন শরীক নেই, আমি তোমার দরবারে উপস্থিত। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা ও নে‘মত তোমারই এবং সমগ্র রাজত্ব তোমার, তোমার কোন শরীক নেই’।
লোকেরাও উপরোক্ত তালবিয়াহ পাঠ করল- যা (আজকাল) পাঠ করা হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এর থেকে বেশী কিছু বলেননি। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উপরোক্ত তালবিয়াহ পাঠ করতে থাকলেন। জাবের (রাঃ) বলেন, আমরা হজ্জ ছাড়া অন্য কিছুর নিয়ত করিনি, আমরা ওমরার কথা জানতাম না। অবশেষে আমরা যখন তার সঙ্গে বায়তুল্লাহয় পৌঁছলাম, তিনি রুকন (হাজারে আসওয়াদ) স্পর্শ করলেন, অতঃপর সাতবার কা‘বা ঘর তওয়াফ করলেন। তিনবার দ্রুতগতিতে এবং চারবার স্বাভাবিক গতিতে। এরপর তিনি মাক্বামে ইবরাহীমে পৌঁছে এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন,وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى، অর্থঃ ‘তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে ছালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর’ (বাক্বারাহ ২/১২৫)।
তিনি মাক্বামে ইবরাহীমকে তাঁর ও বায়তুল্লাহর মাঝখানে রেখে (দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করলেন)। (জা‘ফর বলেন) আমার পিতা (মুহাম্মাদ) বলতেন, আমি যতদূর জানি, তিনি (জাবের) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি দু’রাক‘আত ছালাতে সূরা কুল হুওআল্লা-হু আহাদ ও কুল্ ইয়া আইয়্যুহাল কা-ফিরূন পাঠ করেন।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাজারে আসওয়াদের কাছে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং তাতে চুমু খেলেন। অতঃপর তিনি দরজা দিয়ে ছাফা পাহাড়ের দিকে বের হ’লেন এবং ছাফার নিকটবর্তী হয়ে তেলাওয়াত করলেন,إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ، অর্থঃ ‘নিশ্চয়ই ছাফা-মারওয়াহ পাহাড়দ্বয় আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম’ (বাক্বারাহ ২/১৫৮) এবং আরো বললেন, আল্লাহ তা‘আলা যে পাহাড়ের উল্লেখ করে আরম্ভ করেছেন, আমিও তা দিয়ে আরম্ভ করব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাফা পাহাড় থেকে শুরু করলেন, অতঃপর এতটা উপরে আরোহণ করলেন যে, বায়তুল্লাহ দেখতে পেলেন। তিনি ক্বিলামুখী হ’লেন, আল্লাহর একত্ব ও মাহাত্ম্য ঘোষণা করলেন এবং বললেন,لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كَلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ অর্থঃ ‘আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর জন্য রাজত্ব এবং তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা, তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর শক্তিমান। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তিনি নিজের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন’।
তিনি এ দো‘আ পড়লেন এবং তিনি অনুরূপ তিনবার বলেছেন। অতঃপর সেখান থেকে নেমে মারওয়াহ পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হ’লেন, যতক্ষণ না তাঁর পা মুবারক উপত্যকার সমতল ভূমিতে গিয়ে ঠেকল। তিনি দ্রুত চললেন যতক্ষণ না উপত্যকা অতিক্রম করলেন। মারওয়াহ পাহাড়ে উঠার সময় হেঁটে উঠলেন, অতঃপর এখানেও তাই করলেন যা তিনি ছাফা পাহাড়ে করেছিলেন। সর্বশেষ সাঈতে যখন তিনি মারওয়াহ পাহাড়ে পৌঁছলেন, তখন (লোকদের সম্বোধন করে) বললেন, যদি আমি আগেই ব্যাপারটি বুঝতে পারতাম, তাহ’লে আমি সাথে করে কুরবানীর পশু আনতাম না এবং (হজ্জের) ইহরামকে ওমরায় পরিবর্তন করতাম। অতএব তোমাদের মধ্যে যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে যেন ইহরাম খুলে ফেলে এবং একে ওমরায় পরিণত করে। এ সময় সুরাকাহ ইবনু মালিক ইবনে জুশূম (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এ ব্যবস্থা কি আমাদের এ বছরের জন্য, না সর্বকালের জন্য? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন নিজ হাতের আঙগুলগুলো পরস্পরের ফাঁকে ঢুকালেন এবং দু’বার বললেন, ওমরাহ হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করেছে। আরও বললেন, না বরং সর্বকালের জন্য, সর্বকালের জন্য।
এ সময় আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে নবী করীম (ছাঃ)-এর জন্য কুরবানীর পশু নিয়ে আসলেন এবং যারা ইহরাম খুলে ফেলেছে, ফাতেমা (রাঃ)-কে তাদের অন্তর্ভুক্ত দেখতে পেলেন। তিনি রঙ্গীন কাপড় পরিহিতা ছিলেন এবং চোখে সুরমা দিয়েছিলেন। আলী (রাঃ) তা অপসন্দ করলেন। ফাতেমা (রাঃ) বললেন, আমার পিতা আমাকে এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাবী বলেন, আলী (রাঃ) ইরাকে থাকতেন। (তিনি বলেন) ফাতেমা (রাঃ) যা করেছেন তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে আমি তাকে জানালাম যে, আমি তার এ কাজ অপসন্দ করেছি। তিনি যা উল্লেখ করেছেন, সে বিষয়ে জানার জন্য আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে গেলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ফাতেমা সত্য বলেছে, সত্য বলেছে। তুমি হজ্জের ইহরাম বাঁধার সময় কী বলেছিলে? আলী (রাঃ) বললেন, আমি বলেছি, হে আল্লাহ! আমি ইহরাম বাঁধলাম, যেরূপ ইহরাম বেঁধেছেন আপনার রাসূল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমার সঙ্গে হাদী (কুরবানীর পশু) আছে, অতএব তুমি ইহরাম খুলবে না।
জাবের (রাঃ) বলেন, আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে যে পশুপাল নিয়ে এসেছেন এবং নবী করীম (ছাঃ) নিজের সঙ্গে করে যে সব পশু নিয়ে এসেছিলেন, সর্বসাকুল্যে এর সংখ্যা দাঁড়াল একশত। অতএব নবী করীম (ছাঃ) এবং যাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল, তারা ব্যতীত আর সকলেই ইহরাম খুলে ফেললেন এবং চুল কাটলেন। অতঃপর যখন তালবিয়ার দিন (৮ যিলহাজ্জ) আসলো, লোকেরা পুনরায় ইহরাম বাঁধল এবং মিনার দিকে রওয়ানা হ’ল। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সওয়ার হয়ে গেলেন এবং সেখানে যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজরের ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করলেন এবং নামিরাহ নামক স্থানে গিয়ে তার জন্য একটি তাবু খাটানোর নির্দেশ দিলেন এবং নিজেও রওয়ানা হয়ে গেলেন।
কুরায়েশরা নিশ্চিত ছিল যে, নবী করীম (ছাঃ) মাশ‘আরুল হারামের কাছে অবস্থান করবেন, যেমন জাহিলী যুগে কুরায়েশরা করত। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সামনে অগ্রসর হ’লেন এবং আরাফায় পৌঁছলেন। তিনি দেখতে পেলেন যে, নামিরায় তার জন্য তাবু খাটানো হয়েছে। তিনি এখানে অবতরণ করলেন। অতঃপর যখন সূর্য ঢলে পড়ল, তখন তার ক্বাছওয়া (উষ্ট্রী)-কে প্রস্ত্তত করার নির্দেশ দিলেন। তার পিঠে হাওদা লাগানো হ’ল। তখন তিনি বাতনে ওয়াদীতে এলেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, ‘তোমাদের রক্ত ও তোমাদের সম্পদ তোমাদের জন্য হারাম যেমন হারাম তোমাদের এ দিন, তোমাদের এ মাস এবং তোমাদের এ শহর’। সাবধান! জাহিলী যুগের সকল ব্যাপার (অপসংস্কৃতি) আমার উভয় পায়ের নীচে। জাহিলী যুগের রক্তের দাবীও বাতিল হ’ল। আমি সর্বপ্রথম যে রক্তপণ বাতিল করছি, তা হ’ল আমাদের বংশের রবী‘আহ ইবনু হারিছের পুত্রের রক্তপণ। সে শিশু অবস্থায় বনু সা‘দ এ দুগ্ধপোষ্য ছিল, তখন হুযায়ল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে। ‘জাহিলী যুগের সূদও বাতিল হ’ল। আমি প্রথম যে সূদ বাতিল করছি তা হ’ল আমাদের বংশের আববাস ইবনু আব্দুল মুত্ত্বালিবের সূদ। তার সমস্ত সূদ বাতিল হ’ল’। ‘তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসাবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছ। তাদের উপরে তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের শয্যায় এমন কোন লোককে আশ্রয় না দেয় যাকে তোমরা অপসন্দ কর। যদি তারা এরূপ করে, তবে হালকাভাবে প্রহার কর। আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণের ও পোষাক-পরিচ্ছদের হক রয়েছে’।
‘আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি- যা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব’।
‘আমার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হ’লে, তখন তোমরা কী বলবে?’ তারা বলল, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি (আল্লাহর বাণী) পেঁŠছিয়েছেন, আপনার হক আদায় করেছেন এবং সদুপদেশ দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তর্জনী আকাশের দিকে তুলে লোকদের ইশারা করে বললেন, ‘ইয়া আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। তিনি তিনবার এরূপ বললেন’।
অতঃপর (মুওয়াযযিন) আযান দিলেন ও ইক্বামাত দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোহরের ছালাত আদায় করলেন। এরপর ইক্বামাত দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আছরের ছালাত আদায় করলেন। তিনি এ দু’ছালাতের মাঝখানে অন্য কোন ছালাত আদায় করেননি।
এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সওয়ার হয়ে মাওকিফে (অবস্থানস্থলে) এলেন, তাঁর ক্বাছওয়া উটের পেট পাথরের স্তূপের দিকে করে দিলেন এবং লোকদের একত্র হবার জায়গা সামনে রেখে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনি এভাবে উকূফ করলেন। হলদে আভা কিছু দূরীভূত হ’ল, এমনকি সূর্য গোলক সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গেল। তিনি উসামাহ (রাঃ)-কে তার বাহনের পিছন দিকে বসালেন এবং ক্বাছওয়ার নাকের দড়ি সজোরে টান দিলেন, ফলে তার মাথা মাওরিক (সওয়ারী ক্লান্তি অবসাদের জন্য যাতে পা রাখে) স্পর্শ করল। তিনি ডান হাতের ইশারায় বললেন, হে জনমন্ডলী! ধীরে সুস্থে, ধীরে সুস্থে অগ্রসর হও। যখনই তিনি বালুর স্তূপের নিকট পেঁŠছতেন, ক্বাছওয়ার নাকের রশি কিছুটা ঢিল দিতেন যাতে সে উপরদিকে উঠতে পারে।
এভাবে তিনি মুযদালিফায় পেঁŠছলেন এবং এখানে একই আযানে ও দু’ইক্বামতে মাগরিব ও এশার ছালাত আদায় করলেন। এ ছালাতের মাঝখানে অন্য কোন নফল ছালাত আদায় করেননি। এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শুয়ে পড়লেন, যতক্ষণ না ফজরের ওয়াক্ত হ’ল। অতঃপর ভোর হয়ে গেলে তিনি আযান ও ইক্বামত সহ ফজরের ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর ক্বাছওয়ার পিঠে আরোহণ করে ‘মাশ‘আরুল হারাম’ নামক স্থানে আসলেন। এখানে তিনি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর নিকট দো‘আ করলেন, তাঁর মহত্তব বর্ণনা করলেন, কালেমা তাওহীদ পড়লেন এবং তাঁর একত্ব ঘোষণা করলেন। দিনের আলো যথেষ্ট উজ্জ্বল না হওয়া পর্যন্ত তিনি দাঁড়িয়ে এরূপ করতে থাকলেন।
সূর্যোদয়ের পূর্বে তিনি আবার রওয়ানা করলেন এবং ফাযল ইবনু আববাস (রাঃ) সওয়ারীতে তার পিছনে বসলেন। তিনি ছিলেন যুবক এবং তার মাথার চুল ছিল অত্যন্ত সুন্দর।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সওয়ার হয়ে বায়তুল্লাহর দিকে রওয়ানা হ’লেন। মক্কায় পেঁŠছে তিনি যোহরের ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর বনু আব্দুল মুত্ত্বলিব-এর লোকদের কাছে আসলেন, তারা লোকদেরকে যমযমের পানি পান করাচ্ছিল। তিনি বললেন, হে আব্দুল মুত্ত্বালিবের বংশধর! পানি তোল। আমি যদি আশংকা না করতাম যে, পানি পান করানোর ব্যাপারে লোকেরা তোমাদের পরাভূত করে দিবে, তবে আমি নিজেও তোমাদের সাথে পানি তুলতাম। তখন তারা তাকে এক বালতি পানি দিল এবং তিনি তা থেকে কিছু পান করলেন’ (মুসলিম হা/১২১৮)।
পরিশেষে বলব, রাসূল (ছাঃ) যে পদ্ধতিতে হজ্জ করেছেন, মুসলিম উম্মাহকে সেই পদ্ধতিতেই হজ্জ করতে হবে। অন্যথা তা কবুল হবে না। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পদ্ধতিতে হজ্জসহ সকল ইবাদত করার তাওফীক দিন- আমীন!