মন্দের প্রতিকার মন্দ দিয়ে করা ইসলামের আদর্শ ও বিধান নয়। বরং সুন্দর ও উত্তম পন্থায় মন্দের প্রতিকার করাই ইসলামের নির্দেশ (মুমিনূন ২৩/৯৬; ফুচ্ছিলাত ৪১/৩৪)। তেমনি কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দিলে তার প্রতিকার উত্তমরূপে ও সুকৌশলে করা উচিত। এ সম্পর্কেই নিম্নের হাদীছ- আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ‘আমার এক প্রতিবেশী আমাকে কষ্ট দেয়। তিনি বললেন, যাও, তোমার গৃহ-সামগ্রী রাস্তায় বের করে রাখ। সে ব্যক্তি তখন ঘরে গিয়ে তার গৃহসামগ্রী রাস্তায় বের করে রাখল। এতে তার পাশে লোকজন জড়ো হয়ে গেল। তারা জিজ্ঞেস করল, তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমার প্রতিবেশী আমাকে কষ্ট দেয়। আমি তা নবী করীম (ছাঃ)-কে বললে তিনি বললেন, যাও, ঘরে গিয়ে তোমার গৃহসামগ্রী রাস্তায় বের করে রাখ। তখন তারা সেই প্রতিবেশীটিকে ধিক্কার দিতে দিতে বলতে লাগল, হে আল্লাহ! এ ব্যক্তির উপর তোমার অভিসম্পাত হোক। হে আল্লাহ! তাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত কর। এ কথা ঐ প্রতিবেশীর কানে গেল এবং সে সেখানে উপস্থিত হ’ল। সে তখন বলল, তুমি তোমার ঘরে ফিরে যাও। আল্লাহর কসম! আর কখনো আমি তোমাকে কষ্ট দেব না’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১২৪, সনদ হাসান-ছহীহ)

অন্য হাদীছে এসেছে, আবু জুহায়ফা (রাঃ) বলেন, ‘একদা এক ব্যক্তি এসে তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে নবী করীম (ছাঃ)-এর দরবারে অভিযোগ পেশ করল। তিনি তাকে বললেন, যাও তোমার দ্রব্য-সামগ্রী উঠিয়ে রাস্তায় রেখে দাও। তখন যে রাস্তা অতিক্রম করবে, সে তাকে অভিসম্পাত দিবে। (সে ব্যক্তি তা-ই করল)। ফলে রাস্তা অতিক্রমকারী প্রত্যেকেই সেই প্রতিবেশীকে অভিসম্পাত দিতে লাগল। তখন সে ব্যক্তি দৌড়ে গিয়ে নবী করীম (ছাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হ’ল। তখন তিনি বললেন, লোকদের নিকট থেকে তুমি কি পেলে? এরপর তিনি বললেন, লোকজনের অভিসম্পাতের পরও রয়েছে আল্লাহর অভিসম্পাত। অতঃপর অভিযোগকারীকে বললেন, তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছে। অথবা তিনি অনুরূপ বললেন’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১২৫, সনদ হাসান-ছহীহ)

প্রতিবেশীর প্রতি ধারণা করে কথা না বলা : কারো ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে ধারণা করে কথা বললে যে, তা মিথ্যা হয়ে থাকে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ নিম্নোক্ত হাদীছটি। আবুত তুফায়েল আমর বিন ওয়াছিলা হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে তাদের সালাম দিল। তারাও সালামের উত্তর দিল। লোকটা অতিক্রম করে চলে গেলে তাদের মধ্যকার একজন বলল, আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর জন্যই তার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করি। বৈঠকের লোকেরা বলল, আল্লাহর কসম! তুমি যা বললে, তা কতই না মন্দ! আমরা অবশ্যই এ বিষয়টি তাকে অবহিত করব। তাদের মধ্যকার একজনকে লক্ষ্য করে তারা বলল, হে অমুক! তুমি যাও, গিয়ে তাকে এ বিষয়ে অবহিত কর। তাদের প্রেরিত দূত তাকে পেয়ে বিষয়টা অবহিত করল, যা ঐ লোকটা বলেছিল। লোকটা তখন রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি মুসলমানদের একটি মজলিসের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের মাঝে অমুক লোকও ছিল। আমি তাদেরকে সালাম দিলাম। তারাও সালামের উত্তর দিল। আমি যখন তাদের নিকট থেকে চলে আসলাম, তখন তাদের মধ্যকার এক লোক এসে আমাকে সংবাদ দিল যে, অমুক ব্যক্তি বলছে, আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর জন্যই তার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করি। সুতরাং আপনি তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করুন যে, সে কেন আমার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে। তাকে রাসূল (ছাঃ) ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেন, কেন তুমি এ লোকের সাথে বিদ্বেষ পোষণ কর? সে বলল, আমি তার প্রতিবেশী তার (সকল বিষয়) সম্পর্কে আমি অবহিত। আল্লাহর কসম! আমি তাকে ফরয ছালাত- যা পুণ্যবান ও পাপী সকলেই আদায় করে থাকে তা ব্যতীত অন্য কোন (নফল-সুন্নাত) ছালাত আদায় করতে দেখিনি। লোকটি তখন বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তাকে জিজ্ঞেস করুন যে, সে কি আমাকে কখনো নির্দিষ্ট ওয়াক্ত ব্যতীত বিলম্বে ছালাত আদায় করতে দেখেছে? আমাকে কি মন্দভাবে ওযূ করতে এবং অপূর্ণাঙ্গভাবে রুকূ-সিজদা করতে দেখেছে? রাসূল (ছাঃ) তাকে ঐ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে বলল, না (এরূপ দেখিনি)। অতঃপর সে বলল, যে মাসে পুণ্যবান ও পাপী সকলেই ছিয়াম পালন করে থাকে সে মাসে ব্যতীত তাকে কখনো (নফল-সুন্নাত) ছিয়াম পালন করতে দেখিনি। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সে কি আমাকে কখনো ছিয়াম ভঙ্গ করতে কিংবা তার কোন হক নষ্ট করতে দেখেছে? রাসূল (ছাঃ) তাকে ঐ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে বলল, না। অতঃপর সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি তাকে কখনো কোন ভিক্ষুককে দান করতে দেখিনি। আর তাকে আল্লাহর রাস্তায় কোন কল্যাণকর কাজেও কখনো তার সম্পদ থেকে কিছু ব্যয় করতে দেখিনি। কেবল এই ছাদাকা (যাকাত) ব্যতীত যা পুণ্যবান ও পাপী সকলেই আদায় করে থাকে। লোকটি তখন বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তাকে জিজ্ঞেস করুন যে, আমি কি কখনো যাকাত থেকে কিছু গোপন করেছি অথবা যাকাত আদায়কারীকে কিছু কম দিয়েছি? রাসূল (ছাঃ) তাকে ঐ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে বলল, না। তখন রাসূল (ছাঃ) লোকটিকে বললেন, ‘তুমি যাও নিশ্চয়ই আমি জানি যে, সে তোমার চেয়ে উত্তম’ (মুসনাদে আহমাদ হা/২৩৮০৩, এর রাবীগণ নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত)

পরিশেষে বলব, প্রতিবেশীর প্রতি সুধারণা পোষণ করা অতি যরূরী। আর কোন বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে কারো প্রতি কু-ধারণা পোষণ করা উচিত নয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উক্ত হাদীছের প্রতি আমল করার তাওফীক দিন- আমীন!






দ্বীনের আসমানী প্রশিক্ষণ - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
রাসূল (ছাঃ)-এর ঈলার ঘটনা - আত-তাহরীক ডেস্ক
বিদ‘আত প্রতিরোধে ছাহাবীগণের ভূমিকা - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
মানুষের কতিপয় অনুপম বৈশিষ্ট্য - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
সৌন্দর্যই মর্যাদার মাপকাঠি নয় - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে মেহমান আপ্যায়ন আবশ্যিক হয় - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
মুসলিম ও মুশরিকদের একত্রিত মজলিসে সালাম দেয়ার পদ্ধতি - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
রাসূল (ছাঃ)-এর দাওয়াতী কৌশল - আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ
হাদীছের উপরে আবূ বকর (রাঃ)-এর দৃঢ়তা - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
আমর ইবনু আবাসা (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণ - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
প্রতিবেশীর অসদাচরণের প্রতিকার - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
সৎ লোকের দো‘আ - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
আরও
আরও
.