পশ্চিমারাই আমাদের শিখিয়েছে ফ্রিডম বা স্বাধীনতার ললিত বাণী। বাক-স্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা, পোশাক-পরিচ্ছদ পরার স্বাধীনতা ইত্যাদি হরেক রকমের স্বাধীনতা বা ফ্রিডম। কে কোন্ ধরনের পোশাক পরবেন সে ব্যাপারেও দেয়া হয়েছে অবাধ স্বাধীনতা। এই বাংলাদেশেই আমরা কত জাতের পোশাক পরি। শিক্ষিত সমাজ সাধারণত প্যান্ট-শার্ট পরেন। এখন আবার অনেকে পাজামা-পাঞ্জাবীও পরেন। এই প্যান্ট-শার্টের আবার রকমফেরও রয়েছে। মুজিবপন্থীরা পাজামা-পাঞ্জাবির উপর কালো রঙের মুজিব কোট পরেন। জিয়াপন্থীদের কেউ কেউ সাফারি শার্ট পরেন। আমাদের ওলামা-মাশায়েখরা পাঞ্জাবি এবং লম্বা ঝুলওয়ালা ঢোলা পাঞ্জাবি পরেন। তারা মাথায় পরেন টুপি। তাদের মুখে শোভা পায় দাড়ি। অবশ্য আজকাল ক্যাস্ট্রোপন্থী সমাজতন্ত্রী অথবা উদাসী হাওয়ার চলতি পথের যুবকরা দাড়ি রাখেন। এক ধরনের ওলামা-মাশায়েখ পায়ের পাতা পর্যন্ত প্রলম্বিত আচকান টাইপের কাপড় পরেন। মেয়েরা সাধারণত শাড়ি পরেন। তবে এখন কিশোরী থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী অর্থাৎ ৪৫ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে সালোয়ার-কামিজ দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। একমাত্র বৃদ্ধা ছাড়া ঘরে সব বয়সী মহিলাই ম্যাক্সি পরেন। অনেক মহিলা শাড়ি পরেন, সেই সাথে মাথায় কাপড় দেন। আবার অনেকে মাথায় কাপড় দেন না। আগে দেখা যেত, মহিলারা মার্কেট বা শপিংমলে কেনাকাটা করছেন। এমন সময় মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে এলো। একমাত্র কিশোরীরা ছাড়া সকলেই আযানের ধ্বনি শোনার সাথে সাথে মাথায় কাপড় দিতেন। যারা সালোয়ার-কামিজ পরেন তারা তাদের দোপাট্টাকেই সেই মুহূর্তে মাথার কাপড় হিসাবে ব্যবহার করতেন। এখন অবশ্য আযান পড়লে সকলকে আর মাথায় কাপড় দিতে দেখা যায় না। ইদানীং কিছুসংখ্যক যুব মহিলাকে প্যান্ট-শার্ট পরতে দেখা যাচ্ছে। তবে প্যান্ট-শার্ট অথবা প্যান্ট ও ফতুয়া পরা মহিলার সংখ্যা ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে বেশী দেখা যায়। কয়েক বছর আগে স্লিভলেস ব্লাউজ পরা মহিলার সংখ্যা কিছু কিছু দেখা যেত। এখন অবশ্য স্লিভলেসের সংখ্যা কমে গেছে বলে মনে হচ্ছে। গ্রামগঞ্জে সাধারণ মানুষের সাধারণ পোশাক হ’ল লুঙ্গি। কৃষক-শ্রমিকরা লুঙ্গি পরেন এবং খালি গায়ে থাকেন। কেউ কেউ লুঙ্গির সাথে গেঞ্জি এবং কেউ কেউ লুঙ্গির সাথে হাফশার্ট বা ফতুয়া পরেন।

ওপরের এসব বর্ণনা থেকে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ বিভিন্ন ধরনের পোশাক-আশাক পরেন। এটি হ’ল রুচি অভিরুচির ব্যাপার। যার যেটা ভাল লাগে তিনি সেটাই পরেন।  এজন্য  কেউ কিছু  বলেন  না।  এগুলো  হ’ল একান্তভাবেই ব্যক্তিস্বাধীনতার ব্যাপার। লক্ষ্য করার বিষয় হ’ল এই যে, বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে একটি হোমোজেনাস (সমজাতীয়) দেশ। আমাদের ভাষা এক। আমাদের নৃতত্ত্ব এক। আমরা হ’লাম মাছে-ভাতে বাঙালী। ডাল-ভাত আমাদের সাধারণ খাবার। আমাদের খাবারের নাম শাকান্ন। কিছু কিছু উপজাতীয় আছেন। তবে তাদের সংখ্যা ০.৫ শতাংশও নয়। এমন হোমোজেনাস একটি দেশ, তা সত্ত্বেও পোশাক-আশাকে কত বৈচিত্র্য, কত ভিন্নতা! তারপরও পোশাক নিয়ে এদেশে কোন কথা নেই। যার যা ইচ্ছা তিনি তাই পরেন। কিন্তু যারা ব্যক্তিস্বাধীনতার ফেরিওয়ালা, যারা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত আচার-আচরণের বাধাহীন স্বাধীনতার মুখর প্রবক্তা, তাদের দেশেই এখন নিজ নিজ পছন্দমতো পোশাক-পরিচ্ছদ পরার ওপর আরোপ করা হচ্ছে অবাঞ্ছিত বিধিনিষেধ। শুনে আমাদের আক্কেল গুড়ম হয়ে যায় যে, ইউরোপের কোন কোন দেশে মহিলাদের বোরকা পরা অথবা হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে সভ্যতাগর্বী বলে যাহির করা ফ্রান্সে। এই নিন্দনীয় ঘটনাটি ঘটেছে বেলজিয়ামে। শুধু তাই নয়, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ডাঃ জাকির নায়েকের ইংল্যান্ডে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অবিশ্বাস্য হ’লেও সত্যি যে, ‘ফিফা’ নামক ফুটবল খেলার যে বিশ্ব স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে সেই সংস্থাটিও হিজাব পরে খেলায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে।

\ দুই \

ঘটনাগুলো খুলেই বলছি। গত মে মাসে ফরাসি মন্ত্রীসভা মুসলমান মহিলাদের বোরকা পরা নিষিদ্ধ করেছে। ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সার্কোজি এই পদক্ষেপকে সঠিক পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন। এ সম্পর্কিত যে আইন পাস হয়েছে সেই আইনে বলা হয়েছে যে, ফ্রান্সে কাউকে এমন পোশাক পরতে দেয়া হবে না যে পোশাক কারো মুখমন্ডলকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ঢেকে রাখে। যারা এই আইন ভঙ্গ করবে তাদের ১৮০ মার্কিন ডলার অথবা ১৫০ ইউরো জরিমানা করা হবে। এছাড়াও কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে ফরাসি মূল্যবোধ শেখানোর জন্য তাদের বিশেষ স্কুলে পাঠাতে পারবে। কেউ যদি কাউকে জোর করে বোরকা পরায় তাহ’লে তাকে ১ বছরের জেল দেয়া হবে এবং সেই সাথে জরিমানা করা হবে ১৫ হাযার ইউরো। খোদ ফ্রান্সেই একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী প্রশ্ন তুলেছেন যে, জোর করে বোরকা পরানোর অপরাধে যদি জেল-জরিমানা হয়, তাহ’লে জোর করে বোরকা পরা থেকে বিরত থাকার জন্য একই ধরনের জেল-জরিমানা হবে না কেন? এটি হ’ল আইনের প্রশ্ন। এটি হ’ল ইনছাফের প্রশ্ন। যেসব স্থানে বোরকা পরে হাজির হওয়া যাবে না, যেসব পাবলিক প্লেসে বোরকা পরে অথবা হিজাব পরে যাওয়া যাবে না সেগুলো হ’ল দোকানপাট, শপিংমল, সিনেমা হল, রেষ্টুরেন্ট ইত্যাদি। ফ্রান্সের সর্বোচ্চ আইনি সংস্থার নাম হ’ল ‘কাউন্সিল অব ষ্টেট’। তারা এ মর্মে সতর্ক করেছেন যে, মন্ত্রী সভায় অথবা পার্লামেন্টে বোরকা বা হিজাব নিষিদ্ধ করার আইন পাস করলে সেটি কতদূর কার্যকর করা যাবে সেটি নিয়ে গুরুতর সন্দেহ রয়েছে। সাধারণত একশ্রেণীর মুসলিম মহিলাই হিজাব বা বোরকা পরে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ফ্রান্সে রয়েছে ৫০ লাখ মুসলমান। আর ফ্রান্সের জনসংখ্যা সাড়ে ৬ কোটি। অর্থাৎ দেশটির সমগ্র জনসংখ্যার প্রায় ৭.৮ শতাংশই মুসলমান। পরবর্তী খবরে প্রকাশ, গত ১৩ জুলাই মঙ্গলবার ফরাসি পার্লামেন্টের নিম্ন পরিষদ বিপুল ভোটে ফ্রান্সে হিজাব বা বোরকা পরা নিষিদ্ধ করার একটি বিল পাস করেছে। ইউরোপের একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন যে, দেশটির রক্ষণশীল দক্ষিণপন্থী ভোটারদের সমর্থন লাভের জন্যই প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সার্কোজি এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ফ্রান্সে বিলটি পাস হ’লেও এখনও সেটি কার্যকর হয়নি। তবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বিলটি সিনেটে যাবে। সিনেট হ’ল পার্লামেন্টের উচ্চ পরিষদ। এখানে বিলটি যদি পাস হয় তাহ’লে সেটি আইনে পরিণত হওয়া এবং সেই আইন কার্যকর হওয়ার পথে আর কোন বাধা থাকবে না। তবে সেই বিলটি নিয়ে কেউ যদি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে যায়, তাহ’লে সেটি অবৈধ ঘোষিত হ’তেও পারে বলে ফ্রান্সের সংবিধান বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। কারণ যেসব রাজনৈতিক নীতিমালার উপরে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে এবং যেসব নীতিমালা ফ্রান্সের সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়েছে, সেগুলোর সাথে বোরকা নিষিদ্ধ করার বিলটি সাংঘর্ষিক বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এর আগে স্পেন এবং বেলজিয়ামে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফরাসি নিম্ন পরিষদের ভোটের ফলাফল দেখলে বোঝা যায়, ফরাসিরা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কতখানি বিদ্বিষ্ট। কারণ এই বিলটির পক্ষে ভোট পড়েছে ৩৩৫টি এবং বিপক্ষে মাত্র ১টি। সমাজতান্ত্রিক দলসহ বিরোধীদলীয় অধিকাংশ সদস্য হিজাব নিষিদ্ধ করার পক্ষে থাকলেও তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে এটি নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দেননি। তারা অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াকআউট করেন।

\ তিন \

অপর একটি ঘটনায় ইংল্যান্ডের নবনিযুক্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেরেসা মে ভারতের ইসলামী টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ডাঃ জাকির নায়েকের লন্ডনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। লন্ডন এবং শেফিল্ডে ইসলাম সম্পর্কে একাধিক সমাবেশে বক্তৃতা করার জন্য গত জুন মাসে ডাঃ জাকির নায়েকের ইংল্যান্ডে আসার কথা ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইংল্যান্ডের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে কোন ব্যক্তির ইংল্যান্ডে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারেন, যদি তিনি মনে করেন যে, সেই ব্যক্তির ইংল্যান্ডে উপস্থিতি ইংল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা, জনস্বার্থ এবং তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত হয়। তিনি আরো বলেন, ইংল্যান্ডের নাগরিক নন, এমন কোন ব্যক্তির ইংল্যান্ডে প্রবেশ তার জন্য একটি সুবিধা মাত্র, কোন অধিকার নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিস মে বলেন, ‘ডাঃ নায়েক যে মন্তব্য করেছেন তার অনেকগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। তার লন্ডনে আগমন ব্রিটিশ নাগরিকদের জনস্বার্থের পরিপন্থী বলে আমি মনে করি’। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ডাঃ জাকির নায়েক একজন ভারতীয়। তিনি মুম্বাই নগরীতে বসবাস করেন। তিনি মুম্বাইয়ের ‘পিস টিভি’ নামক প্রাইভেট চ্যানেলে ইসলাম সম্পর্কে বক্তৃতা করেন। বিবিসি থেকে বলা হয়েছে, সমকালীন বিশ্বে ইসলাম সম্পর্কে যে ক’জন অথরিটি রয়েছেন, ডাঃ জাকির নায়েক তাদের অন্যতম।

আরেকটি ঘটনা বর্ণনা করে আজকের লেখার উপসংহার টানব। সেটি হ’ল এই যে, ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল এসোসিয়েশন বা ফিফা তাদের বিভিন্ন ফুটবল প্রতিযোগিতায় হিজাব পরে ফুটবল খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এর ফলে ইরানী মেয়েরা আগামী অক্টোবর মাসে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিতব্য যুব অলিম্পিক গেমের ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। কারণ ইরানী মেয়েরা খোলা চুলে খেলবে না। তারা হিজাব পরে খেলবে। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হ’ল এই যে, একমাত্র মাথায় হিজাব পরা ছাড়া তারা আর কোন ধরনের নেকাব পরে খেলবে না বলে কথা দিয়েছিল। তারপরও তাদের শুধু হিজাব পরার অপরাধে এই প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করা হ’ল। অত্যন্ত নিন্দার বিষয় হ’ল এই যে, ফিফা যা করল তার সাথে খেলাধূলার কোন সম্পর্ক নেই। এটি হ’ল নিরেট রাজনীতি। এটি হ’ল পশ্চিমাদের ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী বিদ্বিষ্ট মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।

\ চার \

লন্ডন, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়া, সিডনি প্রভৃতি বিশ্ববিখ্যাত শহরগুলোতে সেখানকার মানুষজনকে আমি বিচিত্র বেশভূষা পরিধান করতে দেখেছি। নিউইয়র্ক একটি বহুজাতি ও বহুভাষী মানুষের শহর। এখানে এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও ইউরোপের শতাধিক দেশের শতাধিক জাতীয়তা সম্পন্ন মানুষ বসবাস করেন। কৃষ্ণ বর্ণ, হিসপ্যানিক, আরব, ভারতীয়, পাকিস্তানী, বাংলাদেশীসহ পৃথিবীর কোন্ দেশের মানুষ সেখানে নেই? পুরুষ বলুন, মহিলা বলুন, তাদের অনেকেরই বেশভূষা শুধু বিচিত্র নয়, রীতিমতো কিংভূতকিমাকার। দেখবেন, একশ্রেণীর মহিলা তাদের চুলকে দড়ির মতো করে ১৫/২০টি বেনি করেছে। যারা পাঙ্ক, সেই পুরুষ মানুষ মাথার দুই ধার নেড়ে করে মধ্যে কালো বর্ণের চুল সজারুর কাঁটার মতো খাড়া করে রেখেছেন। অনেক মহিলা গ্রীষ্মকালে যেসব প্যান্ট পরেন সেগুলো ফুলপ্যান্ট তো নয়ই, হাফপ্যান্টও নয়। সেগুলো প্যান্টির চেয়ে বড় জোর এক ইঞ্চি লম্বা। পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে অনেকে উলকি পরেন। এই উলকি মারা থাকে তাদের বাহুমূলে, উরুতে, তলপেটে এমনকি বক্ষাবরণীর ঠিক উপরে। ওরা স্কার্ট পরেন। কিন্তু সেগুলো এতো সংক্ষিপ্ত যে, আপনি সাবওয়েতে অর্থাৎ পাতাল রেলে ভ্রমণ করলে অতিসহজেই তাদের প্যান্টিতে আপনার চোখ আটকে যাবে। বাঙালী সংস্কৃতি এবং মুসলিম সংস্কৃতিতে এ ধরনের স্বল্প ও সংক্ষিপ্ত বস্ত্র নগ্নতার শামিল। কিন্তু সেটি নিয়ে তো কেউ আপত্তি তুলছে না। এই দৃশ্য আমি প্যারিসেও দেখেছি। মহিলারা সেখানে নামমাত্র কাপড়ের জন্য যেখানে নিন্দিত ও ধিকৃত হওয়ার কথা, সেখানে তারা সরকার ও রাষ্ট্রের সমর্থন পাচ্ছে। সমুদ্র সৈকতগুলোর দৃশ্য কি? সিডনী শহরের পূর্বপ্রান্তে রয়েছে অসংখ্য সী-বীচ। আমি এমনও দেখেছি যে, অসংখ্য মহিলা সমুদ্রের বালুকাবেলায় বক্ষ-বন্ধনী খুলে রেখেও রৌদ্র স্নান করেন।

কেউ যদি এসব দৃশ্য দেখে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কটাক্ষ করেন তাহ’লে তৎক্ষণাৎ তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হবে। নগ্নতা যদি এসব দেশে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পায়, তাহ’লে দেহকে আবৃত করলে জেলযুলুম হবে কেন? এটি কোন ধরনের সভ্যতা? এটি কোন ধরনের আইন? বোরকা, হিজাব বা নেকাব যা কিছুই পরা হোক না কেন, সেটি তো অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে না। তাহ’লে তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিবাদী পশ্চিমা শক্তিগুলো বেছে বেছে শুধু মুসলিম ও ইসলামী লেবাসের ওপর খড়গহস্ত হচ্ছে কেন? এটা করে কি তারা মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে না? এটা করে কি তারা মুসলমানদের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে না?

আজ যদি আমাদের সমুদ্র সৈকতে অর্থাৎ কক্সবাজারে বিদেশীদের বিকিনি পরা নিষিদ্ধ করা হয় তাহ’লে শুধু তারাই নয়, আমাদের বাংলাদেশী প্রগতিবাদী বন্ধুরাও ‘গেলো গেলো’ বলে তারস্বরে চিৎকার করবেন। কিন্তু ফ্রান্স, বেলজিয়াম, স্পেন এবং জার্মানির বিরাট অঞ্চলে যখন হিজাব, নেকাব বা বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়, তখন ওরা মুখে কলুপ এঁটে থাকেন কেন? এটিই কি প্রগতিবাদিতা? এটিই কি ধর্মনিরপেক্ষতা? এটিই কি অসাম্প্রদায়িকতা? ইসলামের বিরোধিতা করা এবং মুসলমানদের বিরোধিতা করা যদি হয় প্রগতিবাদ, মুসলিম উম্মাহর নিজস্ব চিন্তাধারা যদি হয় সেক্যুলারিজমের বিরোধী, মুসলিম সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য যদি হয় প্রগতিবিরোধী, তাহ’লে কারো কিছু বলার নেই। সেক্ষেত্রে বলতে হবে, তুমি যদি আমার অঙ্গাবরণ নিষিদ্ধ করো, তাহ’লে আমি তোমার নগ্নতা নিষিদ্ধ করব। কারণ তোমার নগ্নতা শুধু ইসলাম বিরোধীই নয়, তোমাদের ‘জুডাইজম’ অর্থাৎ ইহুদীবাদেরও পরিপন্থী। ‘ওল্ড টেস্টামেন্টে’ নগ্নতা এবং বহুগামিতা গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ইসলামেও এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ইসলামে এগুলো নিষিদ্ধ বলে যদি তোমরা এগুলোর সমালোচনা করো তাহ’লে বাইবেলের ‘ওল্ড টেষ্টামেন্টে’ এগুলো নিষিদ্ধ হওয়ার সমালোচনা করো না কেন?

\ সংকলিত \

 মোবায়েদুর রহমান







প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা : আমাদের করণীয় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রব
মিয়ানমার ও ভারতের নাগরিকত্ব আইন বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি - জামালউদ্দীন বারী
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা - সুকান্ত পার্থিব
ফ্রান্স ও স্পেনে হিজাব নিষিদ্ধ
করোনার চিকিৎসা ও টিকা বিনামূল্যে সবার জন্য চাই
সিঙ্গাপুর যে কারণে উন্নত - আত-তাহরীক ডেস্ক
শাহবাগ থেকে শাপলা : একটি পর্যালোচনা - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
জাপান : সততাই যার মূল শক্তি - \ সংকলিত \
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট - মেহেদী হাসান পলাশ
ট্রান্সজেন্ডারবাদ : এক জঘন্য মতবাদ - আব্দুল্লাহ আল-মুছাদ্দিক
রহস্যাবৃত নিখোঁজ মালয়েশিয়ান বিমান - শেখ আব্দুছ ছামাদ
উপকূলীয় এলাকা কি বিলীন হয়ে যাবে? - অনিমেষ গাইন, শিবলী সাদিক, মফিজুর রহমান
আরও
আরও
.