মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানগণ বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যাহত জনগোষ্ঠী। যাদের রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি নেই। আদমশুমারীতে যাদের গণনা করা হয় না। যাদের নেই কোন নাগরিক অধিকার। জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, সন্তান ধারণ, শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বংশানুক্রমেই নির্যাতিত হয়ে আসছে। কখনো কখনো কোন শাসকের কৃপায় স্বাভাবিকভাবে চলতে-ফিরতে পারলেও অধিকাংশ সময়ই পরাধীনতার শৃঙ্খলে ওদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
বর্তমানে সেখানকার রাখাইন রাজ্যে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করলেও প্রায় সমান সংখ্যক রোহিঙ্গা আজ বিভিন্ন দেশে উদ্বাস্ত্ত হিসাবে বসবাস করছে। উইকিপিডিয়ার হিসাব অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশেই শরণার্থী হয়েছে ৫ লক্ষাধিক। এছাড়া সঊদী আরবে ৪ লাখ, পাকিস্তানে ২ লাখ, থাইল্যান্ডে ১ লাখ, মালয়েশিয়ায় ৪০ হাযার, ভারতে ৩৬ হাযার এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১২ হাযার।
এককালে যাদের ছিল স্বাধীন রাষ্ট্র, ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি, এখন তারাই রাষ্ট্রহারা। সন্ত্রাসী বৌদ্ধদের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার। তাদের উপর যুগ যুগ ধরে সে দেশের সরকার চরম নির্মম যুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। হত্যা করছে অসংখ্য নিষ্পাপ শিশু, যুবক ও বৃদ্ধদেরকে। ধর্ষণ করে কলঙ্কিত করছে অসংখ্য মা-বোনদের। তাদের গগণবিদারী আর্তনাদে পৃথিবীর আকাশ-বাতাস প্রতিনিয়ত প্রকম্পিত হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় পুনরায় নির্যাতনের অজুহাত সৃষ্টির জন্য গত ৯ই অক্টোবর’১৬ অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তদের হাতে মিয়ানমারের ৯ জন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর সেখানে নিরীহ মুসলমানদের ওপর ফের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের হামলা শুরু হয়েছে।
তাতে এ পর্যন্ত অন্তত আড়াইশ রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে সহস্রাধিক। ধর্ষণের শিকার হয়েছে হাযারো নারী ও কিশোরী। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩০ সহস্রাধিক ঘরবাড়ি। গ্রামের পর গ্রাম আজ ভস্মীভূত হয়ে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। বিবিসির গোপন ক্যামেরাতেও ধরা পড়েছে জনশুন্য আগুনে পোড়া গ্রাম আর বিরান হয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষেত।
রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না গণমাধ্যমে। কারণ সাংবাদিক বা মানবাধিকার কর্মীদের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কর্মকর্তা জন ম্যাককিসিক বলেন, তারা মিয়ানমারের সরকারের কাছে বারবার রাখাইন রাজ্যে যাওয়ার অনুমতি চাইলেও তাদেরকে সে অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে সেখানে আসলে কি ঘটছে, কতজনকে হত্যা করা হয়েছে, কতজন নির্যাতিত হয়েছে, কতজন এলাকা ছাড়া হয়েছে, সেই তথ্যটি নিশ্চিত করা যায়নি।
তারপরেও বিভিন্ন মাধ্যমে যে চিত্র উঠে আসছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। যেমন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদেরকে নির্বিচারে নিধন করছে মিয়ানমারের সেনারা। আর এ কারণে প্রাণে বাঁচতে তারা বন্যার পানির মতো ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে। সিএনএনের প্রতিবেদক জানান, ভুক্তভোগী নারীরা জানিয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যার পাশাপাশি বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা অহরহ ঘটছে সেখানে। ১০ বছরের বেশী বয়স্ক কোন ছেলেকে পাওয়া মাত্রই তারা তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কর্মকর্তা জন ম্যাককিসিক সিএনএনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত মানুষ। তাদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়’। তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এদেরকে নির্মূল করে দিতে চায়’।
জাতিসংঘের মুখপাত্র পিয়েরে পিরনের মতে, সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের দমন অভিযানের কারণে এ যাবৎ গৃহহারা হয়েছে প্রায় ৩০ হাযার মানুষ।
মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, তারা বেশ কিছু স্যাটেলাইট ছবি পেয়েছেন, যাতে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোর পরিস্থিতি সরকার যা বলছে, তার চেয়ে অনেক করুণ বলে প্রমাণ রয়েছে।
তবে রোহিঙ্গারা বহু কষ্টে বাংলাদেশের সীমান্তে আসা মানেই তাদের দুঃসহ ভোগান্তির অবসান নয়। কারণ বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে এবং যারাই সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করছে তাদেরকে ধরতে পারলেই মিয়ানমারে ফেরত পাঠাচ্ছে।
তারপরও বাংলাদেশে হাযার হাযার রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সরকারী কর্মকর্তারা। আরো কয়েক হাযার সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ১লা নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৬ সপ্তাহেরও কম সময়ে ২২ হাযার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
শরণার্থীদের যবানীতে নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র :
(১) কুতুপালং ক্যাম্পের শরণার্থী লাবু বেগম বলেন, ‘বাংলাদেশে আসতে আমার চারদিন লেগেছে। এই বিপজ্জনক যাত্রায় পরিবারের অনেক সদস্যকে চিরতরে হারাতে হয়েছে।
(২) লাবু বেগমের ননদ নাসীমা খাতুন বলেন, ‘আমরা যখন বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু করি, তখন আমরা ছিলাম ছয় জন। কিন্তু এদের মধ্যে তিনজনই মারা গেছে’। তিনি জানান, এই যাত্রায় তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে, আরো এক ছেলে নিখোঁজ হয়েছে।
(৩) ১৫ দিন আগে পরিবারের ছয়জন সদস্য নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে যুবায়দা, কেবল থাকার জন্য আশ্রয় পেলেও প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করা তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খাদ্যাভাবে জান বাঁচানোই দায় হয়ে পড়েছে এখন। চোখে পানি নিয়ে কম্পিত কণ্ঠে বলছিলেন তিনি।
(৪) কোন রকমে পালিয়ে ৪৫ মাইল দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পায়ে হেঁটে বাংলাদেশে এসেছেন ষাট বছরের সফুরা। বললেন, আমি মিয়ামারের সেনাসদস্যদের হাতে মরতে চাই না। বরং তার চেয়ে বাংলাদেশী মুসলমানদের হাতে মরতে চাই। তাহলে এদেশে কেউ হয়ত আমার মৃত্যুর পর জানাযা টুকু পড়বে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের আমলে নির্যাতন দেখেছি, কিন্তু ঐ নির্যাতন বর্তমান সময়ের মত বর্বর, ভয়ঙ্কর ও হত্যাযজ্ঞের মত ছিল না। বর্তমান সেনা সদস্যরা দল বেঁধে গ্রামে আসছে, বাড়ি ঘরে আগুন দিচ্ছে, মেয়েদের ধর্ষণ করছে এবং পুরুষদের হত্যা করছে।
(৫) টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন ধর্ষিতা রোহিঙ্গা তরুণী মংডু শহরের বাসিন্দা মুহসিনা। পিতা-মাতা, শ্বশুর-শাশুড়ী কেউ নেই। সবাই মিয়ানমার সেনার হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছে। নিজে ৭ জন সেনার হাতে পালাক্রমে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের বাড়ীঘর সহ গ্রামের দুই শতাধিক বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া সহোদর ভাইয়ের সাথে ‘আরকান’ নামে পাঁচ মাস বয়সী শিশু পুত্রকে নিয়ে বাংলাদেশে এসে লেদা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।
(৬) টেকনাফের হ্নীলা এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন নাফ নদীতে তিন সন্তান হারানো মংডুর বাসিন্দা হুমায়ূন কবীর। তার ভাষ্য অনুযায়ী, তাদের গ্রামে আর কোনও রোহিঙ্গা মুসলিম খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেউ মৃত, কেউ পলাতক, কেউ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে। তাদের সাথে আসা মোতায়রা বেগমও নাফ নদীতে তাঁর সন্তানকে হারিয়েছেন। তার ভাষ্য মতে, যে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে তা বলে বুঝানো যাবে না। সেনাবাহিনী এসে ঘরের দরজা আটকিয়ে আগুন দেয়। কোনভাবে কেউ পালাতে চাইলে তারা তাকে সেখানেই গুলী করে শেষ করে দেয়।
(৭) মিয়ানমারের মংডু থানার জাম্বনিয়া গ্রামে ছিল শাকিরদের বাড়ি। তার ৩ বোন, ৯ ভাই। এর মধ্যে বিয়ের উপযুক্ত দুই বোনকে ও পিতাকে ধরে নিয়ে গেছে সেনা পোশাকের অস্ত্রধারীরা। তিনি বলেন, তাদের গ্রামের আশপাশের ৩৩০টি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ১৪ জনকে একসঙ্গে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। আমার চাচাতো ভাইকে বাড়ির উঠানে সবার সামনে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে।
(৮) আমার চোখের সামনে যুবতী কন্যাকে ধর্ষণ করেছে। বাধা দিতে গিয়ে দুই ছেলেকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। কথা গুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মিয়ানমারের মংডু জাম্বুনিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিছ মাওলানা ছাবের আহমদ (৭০)। তিনি বলেন, তার গ্রামে প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি ছিল। এক রাতেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে নিঃশেষ করে ফেলা হয়েছে সবকটি পরিবারকে। হত্যা, ধর্ষণ, গুলীবিদ্ধ করে আহত করা হয়েছে গ্রামের যুবক-যুবতীদের। তাদের গ্রামের অনেকেই কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এখানে রাত কাটানোর জায়গা নেই, খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে শিশু কিশোর ও বয়োবৃদ্ধ নারী-পুরুষকে।
(৯) ছোট্ট মেয়েকে জোর করে অাঁকড়ে ধরে আছেন রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের কিয়েত ইয়ো পিন গ্রামের নূর আয়েশা (৪০)। মিয়ানমার আর্মি তার বাকী ৭ সন্তানকে হত্যা করেছে। মধ্য অক্টোবরের যে দিন শত শত সরকারী সেনা আয়েশাদের গ্রামে হানা দিয়েছিল সেদিনের স্মৃতিচারণ করলেন তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ির সামনে আনুমানিক ২০ জনের একটা দল এসে হাযির হ’ল। আমাদের সবাইকে বাইরে বের করে আমার ৫ ছেলে সন্তানকে বাড়ির একটা ঘরে ঢুকিয়ে দরজা আটকে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে। স্বামীকে গুলী করে এবং দুই মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে তারা। আমাকে ধর্ষণ করলেও পরে ছেড়ে দেয়। তারপর পালিয়ে থাকা ৫ বছরের মেয়ে দিল নেওয়াযকে নিয়ে পালিয়ে এসেছি বাংলাদেশে।
(১০) ৩ সন্তানের জননী নূর বেগম (২৪)। বর্ণনা দেন মিয়ানমার বাহিনীর অত্যাচারের লোমহর্ষক কাহিনী। স্বামীকে আগেই ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। চোখের সামনে মাঠে আগুন জ্বেলে দুই শিশুপুত্র হাশেম ও জাফর সহ মামা, খালু, চাচা, ভাই সহ ৩০ জন আত্মীয়-স্বজনকে হাত-পা বেঁধে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। মহিলাদের ধর্ষণসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়ে সাড়ে ৫ মাস বয়সী শিশু জানে আলম ও অবিবাহিত এক বোনকে নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে বনে-জঙ্গলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে সময় লেগেছে ১৫ দিন। পালিয়ে আসতে পারলেও বাঁচাতে পারেননি ছোট্ট শিশুটিকে।
‘বনে-জঙ্গলে দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বুকের দুধ শুকিয়ে গিয়েছিল। অনাহারে শিশুটি কঙ্কালসার হয়ে যায়। উপরন্তু ছিল তীব্র শীত। সাথে কোনো গরম কাপড় ছিল না। একাধারে ৩ দিন অনাহারে থাকার পর এখানে এসে ভাত খাওয়ার পর বুকে সামান্য দুধ এলে শিশুটি মৃত্যুর আগে যৎসামান্য দুধ পান করেছিল’। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন নূর বেগম...।
(১১) সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে বাঁচতে ১৫ জনের একটি দল বাংলাদেশের দিকে আসার চেষ্টা করছিল। এ সময় নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ। এতে নৌকা থাকা দু্ই শিশু সহ অধিকাংশই নিহত হয়। পরে নাফ নদীর মিয়ানমার অংশের তীরে মুখ থুবরে পড়ে থাকতে দেখা যায় হলুদ শার্ট পরিহিত ছোট্ট একটি শিশুর কাদামাখা নিথর দেহ...। যা মনে করিয়ে দেয় ভূমধ্যসাগরের উপকূলে পড়ে থাকা সেই শিশু আয়লানের নিথর দেহের কথা।
(১২) কুতুপালং বস্তি ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দীকসহ একাধিক বস্তিবাসী জানান, রাত নামলে বস্তিতে আশ্রয় নেয়া স্বজনহারা রোহিঙ্গাদের কান্নায় অন্যান্য বস্তিবাসীরা ঘুমাতে পারে না। তারা বলেন, বস্তিতে যেসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে তারা কেউ না কেউ আত্মীয় পরিজনকে হারিয়েছে। সহায় সম্বলহীন এসব রোহিঙ্গারা একদিকে যেমন স্বজন হারানোর ব্যাথা ভুলতে পারছে না, অন্যদিকে আশ্রয়হীন অবস্থায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। যে কারণে রাত নামলেই নারী শিশুর কান্নায় বস্তি এলাকায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
(১৩) ২৫ বছর বয়সী গর্ভবতী আরাফা ছয় সন্তানকে নিয়ে এসে একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের কঠোর শাস্তি দিচ্ছে। আর এই শাস্তির প্রদানের তাদের অন্যতম হাতিয়ার আগুন। তাদের পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। তার ৮ বছরের ছেলেকে তার হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় এক সেনাসদস্য। চোখের সামনে তাকে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনে নিক্ষেপ করে।
(১৪) বিভিন্ন ভিডিও চিত্রে উঠে আসা সেনা নির্যাতনের দৃশ্য আরও মর্মস্পর্শী। ছোট ছোট শিশুদের বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতনের মাধ্যমে তাদের আর্তচিৎকার শ্রবণ করে উল্লাস করার দৃশ্য। আর দলে দলে কিশোর-যুবকদের হাত পা বেঁধে রেখে, কাউকে ঝুলিয়ে রেখে অত্যাচার করতে করতে হত্যা করার নির্মম দৃশ্য ভিডিও করে নিজেরাই তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া মাধ্যমে পৈশাচিকতার জানান দেওয়া এককথায় অবিশবাস্য।
[হে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ! আর কত নির্যাতন হ’লে তোমরা কথা বলবে? ধিক তোমাদের মত কাপুরুষদের! আল্লাহ তুমি যালেমদের ধ্বংস কর ও মযলূমদের রক্ষা কর! (স.স.)]