বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বহুল কাঙ্ক্ষিত ছিটমহল বিনিময়ের পর ইতিমধ্যে ৫ বছর পার হয়েছে। ৫ বছরে ছিটমহলগুলোর চারিদিকে শোভা পাচ্ছে উন্নয়নের ছোঁয়া। ছিটমহলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ারছড়া। নীলকমল নদী বেষ্টিত ছিটমহলটির আয়তন ৬.৬৫ বর্গকিলোমিটার, যার অবস্থান কুড়িগ্রাম যেলার ফুলবাড়ী উপযেলার ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়ন, কাশিপুর ইউনিয়ন ও ভাঙ্গামোর ইউনিয়নের মাঝে বিদ্যমান। ২০১৫ সালের ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ হেট কাউটিং রিপোর্ট অনুসারে জনসংখ্যা ৬৫২৯ জন ও ১৩৬৪টি পরিবার রয়েছে।

৬৮ বছরে পিছিয়ে থাকা দাসিয়ারছড়ায় এখন শুধু উন্নয়ন চোখে পড়ে। অধুনালুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহল হস্তান্তরে পরবর্তীতে ২৭ কি.মি. সড়ক পাকাকরণ করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ব্রীজ, কালভার্ট। শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩টি, কলেজ ২টি, মাদ্রাসা ১টি, মসজিদ ৫টি, কমিউনিটি সেন্টার ২টি, কবরস্থান ১টি, মন্দির ১টি, টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে ৩৩৪টি। নির্মাণ করা হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং ও ভিডিও কনফারেন্সের মত আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ১টি আইসিটি ভবন।

অন্যদিকে ভূমি জটিলতার বিষয়টি সম্পূর্ণ নিরসন হয়ে গেছে। দাসিয়ারছড়াসহ বিলুপ্ত ছিটমহলে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তির ৭৫ দিনের মধ্যে প্রায় ২ হাযার ৫৬২ পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। ইউনিসেফের অর্থায়নে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী স্থাপন করেছে ১৫টি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে ১৪টি মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্র। উপযেলা কৃষি অফিসের অর্থায়নে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও কৃষি যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে। দাসিয়ারছড়ায় ঘরে ঘরে সুপেয় পানি আর স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বেকার যুব ও যুব মহিলাদের দেয়া হয়েছে নানা ট্রেডে প্রশিক্ষণ।

উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকে ছিটমহলবাসী নাগরিকত্বহীন হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে থাকে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে ভারত-বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহলের বিনিময় ঘটে। সমাপ্তি ঘটে ১৬২ ছিটমহলের মানুষের ৬৮ বছরের বন্দিদশার। ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব স্থলসীমান্ত চুক্তি      বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল স্ব-স্ব দেশের অভ্যন্তরে থাকা মূল ভূখন্ডের সাথে যুক্ত হয়। এতে বাংলাদেশের সাথে যুক্ত হয় ১১১টি ছিটমহল অপর দিকে ভারতের সাথে যুক্ত হয় ৫১টি ছিটমহল।






আরও
আরও
.