কলারোয়া
উপযেলা সম্মেলন শেষে পরদিন ২৪শে নভেম্বর বৃহস্পতিবার মুহতারাম আমীরে
জামা‘আত মহান আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি ও জাতিসংঘ ঘোষিত ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ (World
Heritage) পৃথিবীর একমাত্র ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের বিভিন্ন স্পট
এবং সাগরবক্ষের অনিন্দ্য সৌন্দর্য ও প্রসিদ্ধ চরাঞ্চল সমূহ পরিদর্শনের
উদ্দেশ্যে সফরসঙ্গীদের নিয়ে সাতক্ষীরা হ’তে তিনটি বাস যোগে বেলা ৩-১৫
মিনিটে খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ইতিমধ্যে সেখানে ঢাকা, চট্টগ্রাম,
কক্সবাজার সহ দেশের বিভিন্ন যেলা থেকে অনেকে নাইটকোচ ও ট্রেন যোগে খুলনা
এসে পৌঁছে যান। অতঃপর সন্ধ্যায় খুলনা পৌঁছে রেলস্টেশন সংলগ্ন আইডব্লিউটিএ
লঞ্চঘাট জামে মসজিদে সাথীদের নিয়ে মাগরিব ও এশার ছালাত জমা ও ক্বছর সহ আদায়
করেন ও শেষে এক রাক‘আত বিতর পড়ে নেন। ছালাত শেষে শিক্ষাসফরে যোগদানকারী
সাথীদের উদ্দেশ্যে তিনি সুন্দরবনের সৃষ্টি নৈপুণ্য ও আবশ্যকীয় তথ্য সমূহের
উপর নাতিদীর্ঘ বক্তব্য পেশ করেন এবং সফরের আদব ব্যাখ্যা করেন।
উল্লেখ্য যে, মোট ২০টি যেলার ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র সর্বমোট ১৩৮ জন দায়িত্বশীল ও সুধী এই শিক্ষা সফরে অংশগ্রহণ করেন। যেলাগুলি হলো- রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, শরীয়তপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, গাযীপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর ও জয়পুরহাট।
রাজশাহী সদর যেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুবীনুল ইসলামের নেতৃত্বে পুরা সফরের বিভিন্ন স্পটে ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিকট ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ ‘মীলাদ প্রসঙ্গ’ ‘আন্দোলন’-এর ‘পরিচিতি’ ‘জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে মাসিক আত-তাহরীকের ফৎওয়া সমূহ’ এবং ‘যাবতীয় চরমপন্থা হ’তে বিরত থাকুন!’ লিফলেট সমূহ বিতরণ করা হয়। এছাড়া ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন’ প্রকাশিত ‘জীবনের সফরসূচী’ এবং ‘ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আ সমূহ’ দেওয়ালপত্র খুলনা লঞ্চঘাট মসজিদ সহ কচিখালী স্পট, দুবলার চর আলোর কোল-১ ও ২ এবং অন্য মসজিদ সমূহে টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
অতঃপর ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা যেলার যাত্রীরা ‘এম.ভি. মুহ্য়ী নাফী’ লঞ্চে এবং আমীরে জামা‘আত সহ বাকী সকল যেলার যাত্রীরা ‘এম.ভি.ওয়াটার কিং-৮’ লঞ্চে উঠে নিজ নিজ কেবিনে সীট গ্রহণ করেন। কেবিন গুলো আকারে ছোট হ’লেও ওয়াল ফ্যান, বেড-বালিশ ও কম্বল সহ বেশ সাজানো-গুছানো ছিল। সেই সাথে তিন তলা লঞ্চের প্রতি ফ্লোরে ছিল হাই কমোড সহ প্রয়োজনীয় বাথরুম সমূহের ব্যবস্থা।
অতঃপর রাত ৯-৫৫ মিনিটে দু’টি লঞ্চ একসঙ্গে যাত্রা শুরু করে। প্রত্যেক লঞ্চের সাথে ছিল একটি করে ইঞ্জিন বোট। যা তীরে ওঠার জন্য এবং দুই লঞ্চের মধ্যে প্রয়োজনে যাতায়াত করার জন্য ব্যবহার করা হ’ত। সাথে নেওয়া হয় চার রাত ও তিন দিনের প্রয়োজনীয় খাদ্য-সামগ্রী ও খাবার পানি এবং রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা ইত্যাদি। এছাড়া কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে প্রত্যেক লঞ্চের যাত্রীদের জন্য দু’জন করে ‘গান ম্যান’ (বন্দুকধারী) ও একজন ‘গাইড’ (পথ নির্দেশক) দেওয়া হয়। গাইডের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন স্পটে অবতরণ ও নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অবস্থান করতে হয় এবং সামনে ও পিছনে বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষীদের সহযোগিতায় বনের ভিতরে চলাচল করতে হয়।
(১) কচিখালী স্পটে অবতরণ ও জুম‘আর ছালাত আদায়: খুলনা থেকে প্রায় ১৩৬ কি.মি. দূরে কচিখালী স্পটের উদ্দেশ্যে লঞ্চ চলল একটানা ভোর ৫-টা পর্যন্ত। ঘন কুয়াশায় হঠাৎ সুন্দরবনের তীরে গাছের সাথে ধাক্কা খেল। ফলে সেখানেই নোঙ্গর করা হ’ল। অতঃপর কুয়াশা কেটে গেলে ২৫শে নভেম্বর শুক্রবার সকাল ৮-টায় পুনরায় যাত্রা শুরু হ’ল এবং বেলা সাড়ে ১২টায় কচিখালী পর্যটন স্পটে লঞ্চ ভিড়ল। ইঞ্জিন বোটের সাহায্যে অবতরণ করা হ’ল ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সমুদ্রতীরের এই সুন্দর স্পটে। এখানে আছে ফরেস্ট অফিস, একটি মসজিদ, একটি মিঠাপানির পুকুর এবং আরসিসি কলাম দিয়ে উঁচু করে নির্মিত কয়েকটি টিনশেড কটেজ। কোস্টগার্ড, বনকর্মকর্তাসহ মোট ১২/১৪ জনের বসবাস এখানে। হরিণ, কুমির, বানর আর বাঘ এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। তবে বাঘ কেউ দেখতে পায় না। ২০০৭ সালের সিডরের ধ্বংস চিহ্ন লেগে আছে পুরানো ভৌত কাঠামোগুলিতে। বাজেট না পাওয়ায় আজও সেগুলি পুনর্নির্মিত হয়নি।
ইঞ্জিন বোটে কচিখালী স্পটে যাওয়ার পথে অনেকগুলি হরিণকে নদীর চরে একত্রে দেখা গেল। অতঃপর তীরে নেমে ছালাতের প্রস্ত্ততি নেওয়া হ’ল। ছোট মসজিদ। ঠাসাঠাসি হয়ে ভিতর ও বারান্দায় বসার পরও অর্ধেকের বেশী মুছল্লী বাইরে। মসজিদের ইমাম মুহাম্মাদ বেলাল হোসাইনের বাড়ী বরগুনা যেলার পাথরঘাটায়। আমীরে জামা‘আতের পরিচয় পেয়ে সম্মানের সাথে তাঁকে খুৎবা ও ইমামতির সুযোগ দিলেন। ১-১৫ মিনিটে আমীরে জামা‘আত মিম্বরে বসেছেন। আযান দিচ্ছেন বগুড়া যেলার সারিয়াকান্দি উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি ওয়ায়েস কুরনী। এরি মধ্যে বারান্দায় স্থানীয় একজন মুছল্লীর চিৎকার : ‘আপনারা কারা? জোর করে আমাদের মসজিদ দখল করে দেড়টার আগেই খুৎবা দিচ্ছেন? আবার ভিডিও করছেন, কেমন মুসলমান আপনারা? দ্রুত তাকে বুঝিয়ে থামানো হ’ল। পরে তিনি একমনে খুৎবা শুনে খুশী হন ও ভাল আচরণ করেন।
মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ‘মহান আল্লাহর সৃষ্টি নিদর্শন ও তা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ’ বিষয়ে নাতিদীর্ঘ খুৎবা পেশ করেন। হামদ ও ছানা পাঠের পর তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের ভাগ্যে এমন একটি দিন, যেদিন আমরা আল্লাহ পাকের সৃষ্টিজগতের এমন একটা স্থানে এসেছি যার কোন তুলনা নেই। নিকটাত্মীয় কেউ মারা গেলেও সেখানে যাবার সুযোগ নেই।
সর্ম্পূণ মহান আল্লাহর ইচ্ছার উপরেই আমাদের আজকের এ অবস্থান। এ বিষয়টি চিন্তা করার জন্যই আল্লাহ পাক সূরা আলে ইমরান ১৯০-৯১ আয়াতে আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিবসের আগমন-নির্গমনে জ্ঞানীদের জন্য (আল্লাহর) নিদর্শন সমূহ নিহিত রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি এগুলিকে অনর্থক সৃষ্টি করোনি। মহা পবিত্র তুমি। অতএব তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও!
অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক জীবকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে। তাদের কেউ বুকে ভর দিয়ে চলে। কেউ দু’পায়ে চলে এবং কেউ চারপায়ে চলে। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, তাই সৃষ্টি করেন (নূর ২৪/৪৫)।
মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পাকের এ বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিজগৎ নিজ চোখে অবলোকন করে সম্যক ধারণা লাভ করার জন্যই আল্লাহ তার পৃথিবীতে পরিভ্রমণের নির্দেশ দিয়েছেন।
এখানে উপস্থিত মুছল্লীদের মধ্যে কেউ জীবনের পড়ন্ত বেলায়, কেউ মধ্য বেলায়, কেউ উষাকালে সুন্দরবনের এই চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য অনুধাবনের সৌভাগ্য লাভ করেছি। সেজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।
এখানে যারা সর্বদা বসবাস করেন, তাদেরকে প্রকৃত অর্থেই প্রকৃতির বেড়ে ওঠা সন্তান বলা চলে। তারা সবসময় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে জীবন অতিবাহিত করছেন। কখন কোন প্রাণী আক্রমণ করে, কখন ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের করাল থাবায় প্রাণের স্পন্দন থেমে যায়, তার কোন ঠিক নেই। এখান থেকেও আমরা আমাদের অবস্থানগত পার্থক্য বিশ্লেষণ করে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।
এসব নিদর্শনাবলী দেখার মাধ্যমে মানুষ শিক্ষা নিবে যে নিশ্চয়ই তার একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, যিনি তাকে সহ পুরো জগতের স্রষ্টা। তার ইচ্ছায় আমরা বেঁচে থাকি। তাঁরই ইচ্ছায় আমরা মৃত্যুবরণ করি। যিনি আত্মা দান করেছেন, তিনিই পারেন তা নিজের আয়ত্বে নিতে। তারই হুকুমে একই স্থানে এতবেশী গাছ-পালা উদ্গত হয়ে সুন্দরবনের সৃষ্টি হয়েছে। তারই হুকুমে এখানে নদী সমূহ প্রবাহিত হচ্ছে। তাতে সৃষ্টি হচ্ছে নিয়মিত জোয়ার-ভাটা। উত্তাল তরঙ্গমালা তাঁরই হুকুমে গর্জন থামিয়ে নির্দিষ্ট সময়ানুপাতে নিঃশেষ হয়ে পুনরায় তরঙ্গায়িত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব বিষয় চিন্তা-ভাবনা করলে মহান আল্লাহর শুকরিয়া স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে।
আল্লাহ রববুল ‘আলামীন বৃক্ষরাজি, পশু-পাখি সহ সকল নে‘মতরাজি সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য। যেন তারা তা থেকে উপকার ভোগ করতে পারে। অথচ অনেক মানুষ সেবা গ্রহণের বদলে এসবের পূজায় লিপ্ত রয়েছে। ভাবখানা এমন যে, তাদের ভয় করলে, পূজা করলে, খাবার প্রদান করলে তারা আমাদের কোন ক্ষতি করবে না। অথচ এসব থেকে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বার বার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু এগুলি দেখার, পড়ার বা অনুধাবনের সময় আমাদের নেই। কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে আমরা জীবন অতিবাহিত করছি সাময়িক চাকচিক্যের মোহ জালে।
শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উম্মত হিসাবে আমরাই দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ উম্মত। এই শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে হবে আমাদের সার্বিক আচরণে ও কর্মে। আল্লাহর হুকুম ও রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসৃত পথে চললেই তা সম্ভব। এজন্য পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে যেসব নির্দেশনা এসেছে, তার পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) যা বলেছেন সেভাবে জীবন অতিবাহিত করতে হবে, যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদের সকল ভাইকে তাঁর সৃষ্টিজগৎ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার এবং আমৃত্যু পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন পরিচালনা করার তাওফীক দান করুন- আমীন!
অতঃপর জুম‘আর ছালাত শেষে বনের ভিতরে কিছুটা ঘোরাফিরা করা হ’ল। উন্মুক্ত কিছু হরিণের পাল ও শূকর দেখা গেল। অতঃপর সেখান থেকে ইঞ্জিন বোটে পুনরায় লঞ্চে ফিরে দুপুরের খাবার-দাবার সারা হ’ল। এরি মধ্যে ২.৩০ মিনিটে লঞ্চ পরবর্তী গন্তব্য ‘কটকা’র উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল।
(২) কটকা স্পট : অনিন্দ্য সুন্দর এই স্পটটি খুলনা থেকে ১৫০ কিলোমিটার এবং মংলা বন্দর থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে সমুদ্রতীরে অবস্থিত। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ হ’ল চিত্রা হরিণের পাল। তাদের দল বেঁধে চলার সেরা জায়গা হ’ল এটি। কচিখালী থেকে রওয়ানা হয়ে নদী পথে ১৪ কিলোমিটার পশ্চিমে কটকায় সন্ধ্যার কিছু পূর্বে পৌঁছি। ১৯৯৭ সালের ২০শে নভেম্বর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সংগঠনের সফরসঙ্গীদের নিয়ে প্রথম এখানে আসেন।
লঞ্চ থেকেই আমরা হরিণের বিচরণ দেখলাম। তারপর নেমে পশ্চিম দিকে প্রায় ১ কি.মি. হেঁটে আমরা হরিণ পালের দেখা পেলাম। অনেক লোকজন দেখে ওরা দ্রুত পালিয়ে যায়। তবে গাইড খলীলুর রহমান হরিণের প্রিয় খাবার কেওড়া গাছের ডাল-পাতা ভেঙ্গে বিছিয়ে দিলেন এবং সবাইকে কিছু দূরে গিয়ে চুপ থেকে অপেক্ষা করতে বললেন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই দল বেঁধে শতাধিক হরিণ আসলো পাতা খাওয়ার জন্য। আলো-অাঁধারীর মাঝে এই চমৎকার দৃশ্য সকলকে পরিতৃপ্ত করল। যদিও অনেকে তখন চলে গিয়েছিলেন।
এই স্পটে কোন মসজিদ নেই। ফলে উন্মুক্ত স্থানেই মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের ইমামতিতে মাগরিব ও এশার ছালাত জামা‘আতের সাথে জমা ও ক্বছর করা হয় এবং ব্যক্তিগতভাবে এক রাক‘আত বিতর পড়া হয়। এক পাশে সাগর আর এক পাশে গহীন বন মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিস্তব্ধ-নিঝুম পরিবেশে ছালাত শেষে আমীরে জামা‘আত সাথীদের উদ্দেশ্যে হৃদয় ছোঁয়া সংক্ষিপ্ত ভাষণ পেশ করেন। তিনি সকলকে মহান আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি দেখে তাঁর শুকরিয়া আদায় এবং সর্বাধিক তাক্বওয়া অর্জনের উপদেশ দেন। এ সময়ে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর পতেঙ্গায় নির্মীয়মান পাঁচতলা আহলেহাদীছ জামে মসজিদ কমপ্লেক্সের জন্য সকলকে দান করার আহবান জানান। যা ইতিমধ্যেই ‘ইসলামিক কমপ্লেক্স নওদাপাড়া’-র বিধি-বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে বলে রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে ৩০,৫০০ টাকা নগদ আদায় হয়। অনেকে পরে পাঠাবেন বলে ওয়াদা করেন। আমীরে জামা‘আত সকলের জন্য তাদের পরিবারে ও সম্পদে বরকত দানের দো‘আ করেন। অতঃপর লঞ্চে ফিরে সেখানেই রাত্রি যাপন করা হয়।
(৩) জামতলা সমুদ্র সৈকত : কটকার পার্শ্ববর্তী আর একটি আকর্ষণ হচ্ছে জামতলা সমুদ্র সৈকত। সেখানে রয়েছে প্রায় তিন কিলোমিটার ব্যাপী শিহরণ জাগানো ট্রেইল বা পায়ে হাঁটা পথ এবং ৪০ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ার।
২৬শে নভেম্বর শনিবার বাদ ফজর গাইডের নেতৃত্বে পৌনে ছয়টা জামতলা সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে দু’টি বোটে করে সেখানে পৌঁছেই আমরা শুনতে পেলাম বন মোরগের ডাক। পাশেই দেখলাম গাছে বসে থাকা বানর। আমাদের দেখে লম্ফ-ঝম্প করে আমাদের সাময়িক আনন্দ দিল। অতঃপর গাইডকে সাথে নিয়ে সামনে ও পিছনে ‘গানম্যান’ সহ কুয়াশার চাদরে ঢাকা ভোরে গহীন অরণ্যের মধ্য দিয়ে গা ছম ছম পরিবেশে হাঁটতে শুরু করলাম। সুনসান নীরবতায় এগিয়ে চলেছে কাফেলা। ওয়াচ টাওয়ার থেকে আমাদের আইটি সহকারীর তোলা সবুজ বনের মধ্যে সাদা পোষাকধারী মনুষ্য সারির ভিডিওচিত্র সত্যিই মনোহর। এসময় গাইড একটা ঘাস তুলে বললেন, এটি দু’আঙ্গুলে পিষলেই কচি আমের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। যা বমি রোধ করে। অনেকে গাছ তুলে সাথে নিলেন। তিনি বললেন, একবার জনৈক বিদেশী বৃক্ষ বিশেষজ্ঞ এই পথে হাঁটতে গিয়ে থেমে যান এবং বলেন, এখানে পা ফেলার জায়গা নেই। কারণ এর প্রতিটি ঘাসে ও গাছপালায় রয়েছে বিপুল ঔষধি গুণ। যা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। গাইডের শোনা মতে এই বনে ২৬৪ প্রকার উদ্ভিদ রয়েছে। হঠাৎ গাইড বললেন, চুপচাপ আসুন! সামনেই হরিণের পাল। কিন্তু ওরা দিল ছুট। উঁচু ঘাস ও কুয়াশার মধ্যে সে দৃশ্যটাই বরং সুন্দর। অবশেষে দেখা মিলল দৃষ্টিনন্দন জামতলা সী-বীচের। সমুদ্রের অথৈ পানিরাশির মধ্যে উদীয়মান সূর্যের নান্দনিক দৃশ্য সবাইকে মোহিত করল। যতদূর চোখ যায়, কেবল কিনারাহীন সমুদ্র। পাশেই দেখা গেল সিডরের আঘাতে উপড়ে যাওয়া পত্র-পল্লবহীন বৃক্ষসমূহ। কিন্তু দেখার কেউ নেই। ইতিমধ্যেই জোয়ারের পানি বাড়তে লাগলো। বৃদ্ধি পেতে লাগল সমুদ্রের গর্জন। এখানেই সম্ভবতঃ ২০১৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন ছাত্র জোয়ারে তলিয়ে যায়। পানিতে নামতে মানা। তবুও নাজীব সহ আরো দু’একজন নেমে গেল। অতঃপর আমীরে জামা‘আতের নির্দেশে শুরু হ’ল ফিরতি যাত্রা। এ সময় প্রভাত সূর্যের লালিমায় ট্রেইলটির রূপ যেন আরও মোহনীয় হ’ল।
(৪) দুবলার চর পরিদর্শন : জামতলা থেকে এসে লঞ্চে উঠে দুবলার চরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করা হয়। কটকা থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের তীরে দুবলার চর নামের এই প্রসিদ্ধ জেলে বা শুঁটকি দ্বীপটির অবস্থান। কটকা থেকে সরাসারি সাগর পথে এখানে পৌঁছতে তিন ঘন্টা সময় লাগার কথা। কিন্তু বনের ভিতর দিয়ে নদী পথে প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে এখানে পৌঁছতে দুপুর হয়ে গেল। পথে তিন কোণা আইল্যান্ড পাড়ি দেওয়ার সময় নদীর দু’ধারে অনেক হরিণ, বানর, শূকর ইত্যাদি বিচরণ করতে দেখা যায়। হাড়বাড়িয়া, কটকা, কচিখালী বা তিনকোণা আইল্যান্ড সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হ’লেও দূরত্বের কারণে পর্যটকরা অনেক সময় এসব স্থান দেখতে পারেন না বা দেখানো হয় না।
জামতলা থেকে দুবলার চর যাওয়ার পথে নদীসমূহের দু’ধারে বনাঞ্চলের শোভা বর্ণনাতীত। কিলোমিটার ব্যাপী মাটি থেকে ফুট চারেক উপরে একটানা সমান ও নিখুঁতভাবে সাজানো বৃক্ষের সারি। কিন্তু তার পাশেই আরেকটি বন এরূপ গোছালো নয়। অথচ উভয় বনের মাথাগুলি সমান। সেখানে দেখা যায় কখনো বন মোরগ, কখনো নীচ দিয়ে চলা হরিণ শাবকের পাল ও শূকর। অতঃপর দুপুর ১-টার দিকে দুবলার চরের অদূরে লঞ্চ নোঙ্গর করল।
দুবলার চর : সুন্দরবনের গহীন অরণ্যের পার্শ্বে সাগরের মাঝে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য অতীব চমৎকার। যা মানব মনকে রূপময় করে তুলে। এই সাগরস্নাত সুন্দরবনের মধ্যে অপূর্ব সৌন্দর্যমন্ডিত একটি স্থানের নাম দুবলার চর। ধু-ধু বালুকাময় এই চর সংলগ্ন বনে শত শত চিত্রা হরিণের অবাধ বিচরণ এবং অন্যদিকে সমুদ্রের তরঙ্গমালার হাতছানি যে কোন পর্যটককে বিমুগ্ধ ও আনমনা করে তোলে। বাগেরহাট যেলার সুন্দরবন-পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীনে দুবলার চর। মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে সুন্দবনের শেষ সীমানায় বঙ্গোপসাগর, কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মোহনায় দুবলার চর সুন্দরবনের ৪৫ এবং ৮ নম্বর কম্পার্টমেন্টে অবস্থিত। এই চরের মোট আয়তন ৮১ বর্গমাইল। ১৯৯৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর জাতিসংঘ দুবলার চরকে ৭৯৮তম ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসাবে ঘোষণা করে।
আলোরকোল, কোকিলমনি, হলদিখালি, কবরখালি, মাঝেরকিল্লা, অফিসকিল্লা, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, মেহের আলির চর এবং শেলার চর সহ মোটি ১০টি চর নিয়ে দুবলার চর গঠিত। বর্ষা মৌসুমে ইলিশ শিকারের পর বহু জেলে চার মাসের জন্য সুদূর কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে ডেরা বেঁধে সাময়িক বসতি গড়ে এখানে। এই চার মাস তারা মাছকে শুঁটকি বানাতে ব্যস্ত থাকেন। এখান থেকে আহরিত শুঁটকি চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের পাইকারী বাজারে মওজূদ ও বিক্রয় করা হয়। সুন্দরবন-পূর্ব বিভাগের সদর দফতর বাগেরহাট থেকে মাছ সংগ্রহের পূর্বানুমতিসাপেক্ষে বহরদার ও জেলেরা দুবলার চরে প্রবেশ করে থাকেন। এখান থেকে সরকার নিয়মিত হারে রাজস্ব পেয়ে থাকে।
দুবলার চর বিভিন্ন কারণে খ্যাতি লাভ করেছে। এটি প্রাকৃতিক মাছের খনি। তাই শীত মৌসুমের শুরুতে জেলেরা দলে দলে এই চরে মাছ ধরতে এসে অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলে। তারা দিনভর সাগরে মাছ ধরে সন্ধ্যায় ফিরে আসে। চরে মাছ শুঁকিয়ে তারা শুঁটকি মাছ তৈরী করে। এ দৃশ্যও অত্যন্ত উপভোগ্য।
ভয়াবহ হ’লেও সত্য যে, দুবলার চরে রয়েছে ভয়ঙ্কর সব পানিদস্যু। তাই এখানে গেলে যথাযথ নিরাপত্তা নিয়ে যাওয়া উচিত। যদিও পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টকার্ড বাহিনীর টহল দল পর্যটকদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে।
রাস মেলা : দুবলার চরের আলোর কোল-১ এলাকায় প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় রাস মেলা। হিন্দু পৌরাণিক মতে ‘রাস’ হচ্ছে রাধা-কৃষ্ণের মিলন। প্রতি বছর কার্তিক মাসের শেষে ও ইংরেজী নভেম্বর মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পুণ্যস্নানের উদ্দেশ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষ দুবলার চরে আসেন। তাদের ধারণা মতে রাস উৎসবে দেবতা শ্রীকৃষ্ণ ও তার স্ত্রী রাধা-র পুনর্মিলন হয়ে থাকে। নভেম্বর মাসে পূর্ণিমার সময় তিন দিনব্যাপী রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ‘রাস মেলা’ মণিপুরী হিন্দুদের প্রধান উৎসব। এটি রাসলীলা নামেও পরিচিত। এ অঞ্চলের রাস মেলার প্রধান দিক হলো মণিপুরী পোশাকে শিশুদের রাখাল নাচ ও তরুণীদের রাসনৃত্য। মণিপুরী সংগীত ও নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে কৃষ্ণ-অভিসার রাধা-গোপী অভিসার-রাগ আলাপন ইত্যাদি অভিনীত হয়। কেউ কেউ আবার এ মেলাকে মগদের মেলা বলে থাকেন। রাস মেলায় দূর-দূরান্ত থেকে এমনকি বিদেশী পর্যটকরাও অংশ নিয়ে থাকেন। হিন্দু শাস্ত্র মতে সারারাত স্রষ্টার নাম স্মরণ এবং নৃত্য-বাদ্য ও গানের আসর চলে। সকালে সবাই বের হন সমুদ্র স্নানে। অনেকে রাস মেলা উৎসবকে মৎস আহরণ উৎসব বলে মনে করেন। কারণ রাস মেলার পরপরই শুরু হয় পুরোদমে মৎস আহরণ মৌসুম।
একটি মতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ শত বছর আগে কোনও এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপ মোচন এবং পুণ্যলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। সেই থেকে শুরু হয় রাস মেলা। তবে এটিই প্রসিদ্ধ যে, ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে হরিচাঁদ ঠাকুরের এক বনবাসী ভক্ত হরিভজন (১৮২৯-১৯২৩) নামক এক হিন্দু সাধু এই মেলার প্রচলন করেন। এই সাধু চবিবশ বছরেরও বেশী সময় ধরে সুন্দরবনে গাছের ফলমূল খেয়ে অলৌকিক জীবনযাপন করতেন। নিকটবর্তী গ্রাম গুলোতে তার অনেক শিষ্য ছিল। গুরুর স্মৃতি ধরে রাখার জন্যই ভক্তরা প্রতিবছর ৫ দিন ব্যাপী এই রাস মেলার আয়োজন করে থাকেন। তবে পূর্ণিমার ৩ দিনই মেলা হয়ে থাকে। দেশের অন্যস্থানেও রাস মেলা হয়। যেমন পটুয়াখালী যেলার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে এবং দিনাজপুরের কাহারোল উপযেলার কান্তনগরে কান্তজিউ মন্দিরে।
২০০৪ সালের ২৫শে নভেম্বর তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, যিনি একই সাথে ‘হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্ট’-এর সহ সভাপতি, এখানে ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাস মন্দির’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মন্দিরে ৯টি নারী মূর্তি ও দু’পাশে দু’টি পুরুষের মূর্তি দেখা গেল। দাড়িওয়ালা দু’জন পুরুষকে সাদা পাঞ্জাবী-টুপী, চেকের লুঙ্গী ও চপ্পল পরিহিত অবস্থায় দারোয়ান বেশে দেখা গেল। যেন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, হে মুসলমানরা! ভুলে যেয়োনা যে, তোমরা একদিন আমাদের নওকর ছিলে।...
দুবলার চরের পূর্বতীরে বন ও পশ্চিমতীরে সমুদ্রের উপকূল। মাঝখানে জেলেদের বসতি। সর্বত্র শুঁটকি মাছের ছড়াছড়ি। সরাসরি রোদ পাওয়া নানা প্রজাতির শুঁটকি মাছ অনেকের অত্যন্ত প্রিয় খাদ্য। এখানকার শুঁটকি মাছে বিষ নেই, সেই ধারণায় সাধারণতঃ পর্যটকরা এখান থেকে শুঁটকি মাছ কিনে নিয়ে যান। আমাদের কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সাথীরা বহু টাকার মাছ কেনেন।
দুবলার চরে নানা প্রজাতির মাছ ও কাঁকড়া পাওয়া যায়। এখানে বছরে মাত্র ৪ মাস (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারী) জেলেদের অবস্থানের সরকারী অনুমতি থাকে। এ বছর প্রায় পাঁচ হাযার জেলে সেখানে অবস্থান করছেন। প্রচুর পরিমাণে শুঁটকি মাছ উৎপাদন হয় এই দ্বীপে। বলতে গেলে পুরো দ্বীপেই শুঁটকি মাছের কারবার। জেলেদের পরিবার বা সন্তান এখানে থাকে না। শুধু মাছ ধরার স্বার্থে জেলেরা থাকে।
ইঞ্জিন বোট থেকে আমরা আলোর কোল-২ শুঁটকি পল্লীতে অবতরণ করি। এখান থেকে প্রায় ৩ কি.মি. দূরত্বে রাস মন্দির পর্যন্ত গোলপাতার ছাউনীর ৪টি মসজিদ আছে। বাকী চরগুলি বিভিন্ন দূরত্বে আছে, যা আমরা দেখিনি। আমীরে জামা‘আত ‘আলোর কোল’-২ মসজিদে মাগরিব ও এশার ছালাত জমা ও ক্বছর করেন। অতঃপর তাঁর নির্দেশে ও ইমামের আবেদনক্রমে সাথীরা উক্ত মসজিদের উন্নয়নে সাধ্যমত আর্থিক সাহায্য করেন। ইমাম বলেন, সিডরের সময় আমি নিজে অন্ততঃ ৮০/৯০টি লাশ দাফন করেছি। পাশেই জেলেদের হাট-বাজারের জন্য টিন ও পাতার কয়েকটি দোকানঘর আছে। যাকে এদের ভাষায় ‘নিউমার্কেট’ বলে। আমীরে জামা‘আত নিউমার্কেটের দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের জমা করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহভীরুতার উপদেশ দিয়ে নছীহত করেন। তাদের মধ্যে বই ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। এখানে একটি মিঠা পানির পুকুরও আছে। যে পানি পান করা ব্যতীত অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। কেউ এতে গোসল বা কাপড় কাচতে পারে না।
ইঞ্জিন বোটে প্রায় আড়াই কি.মি. গিয়ে ফরেস্ট অফিসে নামি। অতঃপর নিকটবর্তী রাস মেলার স্থান হয়ে সরাসরি সী বীচে পৌঁছি। অতঃপর আকর্ষণীয় উপকূলের উপর দিয়ে প্রায় ৩ কি.মি. পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেন আমীরে জামা‘আতের নেতৃত্বাধীন দলটি। দ্রুতগতির এই পদযাত্রায় দলের বয়োবৃদ্ধ সদস্যগণ যেন নতুন জীবন ফিরে পান। সমস্বরে উচ্চকিত ‘আন্দোলন’-এর নানা শ্লোগানে বীচ এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। এভাবে তারা ‘নিউমার্কেট’ এলাকায় পৌঁছে যান এবং পার্শ্ববর্তী আলোর কোল-২ জামে মসজিদে পৌঁছে মাগরিব ও এশার ছালাত আদায় করেন। তারপর লঞ্চে ফিরে রাত ৮-টায় হিরণ পয়েন্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়। ঘণ্টাখানেক পর সেখানে পৌঁছে লঞ্চে রাত কাটানো হয়।
(৫) হিরণ পয়েণ্ট : খুলনা থেকে ১২০ কি.মি. ও মংলা থেকে ৮০ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল (Mangrove forest)। ম্যানগ্রোভ পর্তুগীজ শব্দ। যার অর্থ স্বতন্ত্র গাছ। যার শ্বাসমূল অর্থাৎ শিকড়ের উর্ধমূখী শাখা ভুমি অথবা পানিতলের উপরে জেগে থাকে এবং এর ডগায় শ্বাসছিদ্র থাকে। সুন্দরবনের সালফার ও নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ মাটি উচ্চতর ম্যানগ্রোভ প্রজাতির জন্য সহায়ক। ফলে এখানে সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, কেওড়া গাছ অধিকহারে জন্মে। কেওড়ার পাতা হরিণের সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য। এটি সুন্দরবনের দক্ষিণাংশের একটি সংরক্ষিত অভয়ারণ্য। এর আরেক নাম ‘নীলকমল’। প্রমত্তা কুঙ্গা নদীর পশ্চিম তীরে, খুলনা রেঞ্জে এর অবস্থান। এটি ইউনেস্কো ঘোষিত অন্যতম বিশ্ব ঐতিহ্য (World Heritage)। ১৯৯৫ সালের ২৪শে অক্টোবর এখান থেকে ১৯ শতকের সর্বশেষ পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল। সূর্যগ্রহণটি ২ মিনিট ১০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল।
২৭শে নভেম্বর রবিবার সকাল ৮-টায় এখানে নেমে ইঞ্জিন বোটের সাহায্যে ফরেস্ট অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়। পথে সাদা ধবধবে অনেকগুলি বক দীর্ঘক্ষণ যাবৎ বসে থাকতে দেখি। ইংরেজীতে Heron অর্থ বক। সম্ভবতঃ কোন ভীনদেশী পর্যটকের নযরে এটা পড়ায় তিনি এ স্থানের নাম রেখেছিলেন ‘হিরণ পয়েন্ট’। যদিও এখানকার নীলাভ পানির ‘নীলকমল’ নদীর নামানুসারে স্থানটির আরেকটি নাম ‘নীলকমল অভয়ারণ্য কেন্দ্র’। এখানে নৌবাহিনীর অফিস, হেলিপ্যাড, ফরেস্ট অফিস ইত্যাদি দ্বারা বেশ সাজানো গুছানো পরিবেশ। একপাশে দাঁড়িয়ে আছে বেশ উঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার। তিনজনের বেশী উঠলে নাকি দুর্বল টাওয়ারটি নড়তে শুরু করে। সেখানে আছে দু’টি মিঠা পানির পুকুর। একটি গোসল করার ও একটি পান করার জন্য নির্ধারিত। মহান আল্লাহর কী অপূর্ব নিদর্শন! চারিদিকে কটু লবণ পানি আর মাঝখানে সুন্দর মিঠাপানি। এখানে একটি নলকূপের পাইপ থেকে অনবরত গ্যাস বের হয়। গাইড তাতে ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেখালেন। ফলে সাগরের নীচে যে আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য অফুরন্ত জ্বালানীর ভান্ডার রেখেছেন তা বুঝা গেল।
হিরণ পয়েণ্ট পরিদর্শনের সময় আমীরে জামা‘আত এখানকার বনকর্মকর্তা এটিএম হেমায়েতুদ্দীনের সাথে তার অফিসে সাক্ষাৎ করেন। পরিচয়ে জানা গেল ইনি তেরখাদা উপযেলা সদরের ইখড়ী কাটেঙ্গা এলাকার মানুষ। আমীরে জামা‘আত সহ আমরা যেখানে গত ২০১২ ও ২০১৪ সালে দু’বার উপযেলা সম্মেলনে গিয়েছি ও সেখানে নতুন একটি ‘আহলেহাদীছ জামে মসজিদ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে পাঁচজন অসহায় মানুষ এসে আমীরে জামা‘আতের নিকট আবেদন করলেন লঞ্চে করে খুলনা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। তাদের বাড়ী পাইকগাছার বান্দীকাটি এলাকায়। বনে মাছ ধরতে এসেছিল। কিন্তু ফিরে যাওয়ার কোন বাহন নেই। আমীরে জামা‘আতের নির্দেশে তাদের লঞ্চে নেওয়া হ’ল। অতঃপর উক্ত বন কর্মকর্তার পরামর্শে ক্যানেলের অপর পাড়ে ‘কেওড়াশুটি’ নামে নতুন একটি স্পটে যাওয়া হ’ল। যা হিরণ পয়েণ্ট থেকে ৩ কি.মি. দূরে অবস্থিত। ‘নীলকমল’ নদী বেয়ে তার অপর পাড়ে ঘনজঙ্গলের মধ্য দিয়ে সোয়া কিলোমিটার দীর্ঘ কাঠের ব্রীজ আর উঁচু ওয়াচ টাওয়ার। হেঁটে হেঁটে সবাই দু’ধারে জঙ্গলের আভ্যন্তরীণ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করলেন। এসময় কয়েকটি হরিণের দেখা মেলে। এক স্থানে বাঘের পায়ের ছাপও দেখা যায়। যা ভিডিও করে নেওয়া হয়।
খুলনায় রওয়ানা : হিরণ পয়েণ্ট দেখার মধ্য দিয়ে তিনদিনের সুন্দরবন সফর শেষ করে ২৭শে নভেম্বর রবিবার বেলা ১১-টায় লঞ্চ খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। অতঃপর দিবাগত রাত ১২-টায় খুলনা লঞ্চ ঘাটে পৌঁছে। ফালিল্লা-হিল হাম্দ। অতঃপর সাতক্ষীরা-যশোর-খুলনার ভাইয়েরা নেমে যান ও আমীরে জামা‘আত সহ বাকীরা লঞ্চে রাত্রি যাপন করেন। ইতিপূর্বে চট্টগ্রামের ভাইয়েরা মংলায় নেমে মাওয়ার পথে চট্টগ্রাম চলে যান। অন্যেরা বিভিন্নভাবে স্ব স্ব গন্তব্যে যাত্রা করেন।
কুইজ ও স্মৃতিকথা অনুষ্ঠান : রাজশাহী হ’তে সফরে বের হওয়ার আগেই আমীরে জামা‘আত শিক্ষা সফরের সাথীদের উদ্দেশ্যে দু’টি কুইজ প্রস্ত্তত করে নেন। যাওয়ার পথে ২৬টি ও ফেরার পথে ২৫টি। আন্দোলন বিষয়ক, নবী-রাসূলদের জীবনী ও সুন্দরবন বিষয়ক প্রশ্নোত্তরে সমৃদ্ধ দু’টি কুইজ খুলনা থেকে রওয়ানা হওয়ার পরই উভয় লঞ্চের যাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
২৫শে নভেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাত ৯-টায় কটকায় অবস্থানকালে উভয় লঞ্চের যাত্রীদের নিয়ে ‘এমভি মুহ্য়ী নাফী’ লঞ্চের শামিয়ানা ঢাকা ছাদের উপর মাইক যোগে ১নং কুইজের প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয় এবং সাথে সাথে প্রশ্নোত্তরগুলি বিশ্লেষণ করে সকলকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
কুইজের ১ম ও ২য় প্রশ্নটি ছিল ‘ম্যানগ্রোভ বলতে কি বুঝায়?’ ও ‘সুন্দরবনের আয়তন কত?’ পরের দিন ২৬শে নভেম্বর শনিবার রাত ৮-টায় ‘ওয়াটার কিং-৮’ লঞ্চের ছাদের উপর ২নং কুইজ ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
এদিন কুইজের ১৬ নং প্রশ্ন ছিল আমীরে জামা‘আতের পিতা মাওলানা আহমাদ আলী (১৮৮৩-১৯৭৬ খৃ.) সম্পর্কে। ‘তাঁর নিঃস্বার্থ তাবলীগী সফরের কারণে আজ শিবসা নদীর তীরবর্তী সুন্দরবনের সর্বশেষ মুসলিম জনপদ নলিয়ান, সুতারখালী ও কালাবগীতে আহলেহাদীছ-এর সন্ধান পাওয়া যায়’ কথাগুলি কার লিখিত কোন বইয়ে রয়েছে?
তাঁর আলোচনা আসতেই স্মরণ হ’ল ২০০৯ সালে ঘুর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ‘আইলা’ দুর্গত নলিয়ান, সুতারখালী ও কালাবগী এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের কথা। সেদিন দক্ষিণ কালাবগীর মনছূর রহমান খান (৭৫), মিশকাত শেখ (৬৫), আহমাদ আলী শেখ (৭০) প্রমুখ বয়োবৃদ্ধ সমাজ নেতাগণ মাওলানার কনিষ্ঠ পুত্র ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, আপনার আববা আমাদেরকে প্রথম ‘মুসলমান’ বানিয়েছেন। মেশকাত শেখ বলেন, আমার ছোট দাদা নঈমুদ্দীন শেখ আপনার আববার হাতে বায়‘আত করে ‘আহলেহাদীছ’ হন। আশপাশের বিদ‘আতী মৌলবীরা তাঁর সঙ্গে বাহাছ করে সর্বদা পরাজিত হ’ত। যার ফলে আজ নলিয়ান, সুতারখালি ও কালাবগীর অধিকাংশ মানুষ আহলেহাদীছ হিসাবে জীবন যাপনের সৌভাগ্য লাভ করেছে’ (শেখ আখতার হোসেন, সাহিত্যিক মাওলানা আহমাদ আলী ১৯ পৃ.)। সেই সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে আজ আবারো আমরা যাচ্ছি। ভাবছি সেই বিগত মনীষীদের ত্যাগপূত খিদমতের কথা। সুদূর সাতক্ষীরা থেকে নদীপথে কত কষ্ট করে এসে তাঁরা এইসব অঞ্চলে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন! তাঁদের রেখে যাওয়া যমীন আজ আমরা চাষ করছি মাত্র। আল্লাহ তাঁদেরকে জান্নাতে উচ্চ সম্মানে ভূষিত করুন- আমীন!
কুইজ শেষ হ’লে শুরু হয় ‘স্মৃতিকথা’ অনুষ্ঠান। সাতক্ষীরার প্রবীণ শূরা সদস্য আলহাজ্জ আব্দুর রহমানের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে এটি শুরু হয়। অতঃপর নবীন-প্রবীণ বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলগণ তাদের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি তুলে ধরেন। আহলেহাদীছ হওয়ার অপরাধে কিভাবে তারা নির্যাতিত ও অপমানিত হয়েছেন এরূপ কিছু ঘটনাও উঠে আসে স্মৃতির পাতা থেকে। অতঃপর রাত ১১-টায় আমীরে জামা‘আতের সমাপনী ভাষণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
তৃতীয় দিন ২৭ নভেম্বর রাত ৮-টায় খুলনা ফেরার পথে ‘ওয়াটার কিং-৮’ লঞ্চের নীচতলায় ডাইনিং হলে ‘স্মৃতিকথা’র বাকী অনুষ্ঠান এবং শিক্ষা সফরের বিদায়ী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। গতদিনের মত বিভিন্ন যেলার কর্মীরা তাদের সাংগঠনিক জীবনের নানা বাধা-বিপত্তির কাহিনীসহ গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি সমূহ তুলে ধরেন।
বিদায় পর্বে খাদ্যবিভাগসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সাতক্ষীরা যেলা আন্দোলন ও যুবসংঘের বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল ভাইদের প্রতি সকলে প্রাণখোলা অভিনন্দন ও গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অতঃপর সবশেষে শিক্ষা সফরের বিদায় বেলায় আমীরে জামা‘আত আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন এবং সফরসঙ্গীদের উদ্দেশ্যে বিদায়ী নছীহতে বলেন, সংগঠন একটি পরিবারের মত। সমাজ সংস্কারের কঠিন লক্ষ্যে আমাদের সংগঠন পরিচালিত। আল্লাহর রহমত যাতে সর্বদা আমাদের সাথী হয়, সেজন্য নিজেদেরকে আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসাবে গড়ে তোলা আবশ্যক। বিশাল সমুদ্র, চোখ জুড়ানো বনাঞ্চল সবই আল্লাহর আনুগত্য করে। সবই তাঁর গুণগান করে। আল্লাহর এই অপূর্ব সৃষ্টি দেখে আমাদের সার্বিক জীবন আল্লাহর আনুগত্যে গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা গ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষা সফর সুসম্পন্ন হৌক, এটাই কামনা করি। পূর্ণ আনুগত্য, পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সুন্দর শৃংখলা বোধের পরিচয় দেওয়ার জন্য আমরা আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সাতক্ষীরা যেলা সংগঠন ও খাদ্য বিভাগের সকলের প্রতি আমাদের বিশেষ কৃতজ্ঞতা রইল। আল্লাহ তাদেরকে এমনিভাবে নেকীর কাজে পরস্পরে প্রতিযোগিতা করার তাওফীক দান করুন-আমীন!
এ সময় সাতক্ষীরা যেলার পক্ষ হ’তে সেক্রেটারী ও কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মাওলানা আলতাফ হোসেন সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বক্তব্য রাখেন। অতঃপর যেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান সবাইকে ধন্যবাদ দেন ও ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন।
শিক্ষা সফরে খাদ্যবিভাগের মূল দায়িত্ব পালন করেন সাতক্ষীরা যেলা ‘যুবসংঘে’র নেতৃবৃন্দ। তাদেরকে সহযোগিতা করেন বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ প্রভৃতি যেলার ‘যুবসংঘে’র দায়িত্বশীলগণ।
সফরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সাতক্ষীরা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন, সদর উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি আব্দুল খালেক, উপদেষ্টা এডভোকেট যিল্লুর রহমান ও যেলা ‘যুবসংঘে’র সহ-সভাপতি আসাদুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুর রহমান প্রমুখ। রান্না-বান্নার মূল দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল গফুর (৫৮)।
রাজশাহী প্রত্যাবর্তন : পাঁচ দিনের সুন্দরবন সফর শেষে আমীরে জামা‘আত তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে ২৮শে নভেম্বর সোমবার ভোর সাড়ে ৬-টায় আন্তঃনগর সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনে খুলনা থেকে রাজশাহী রওয়ানা হন। স্টেশনে আমীরে জামা‘আতকে বিদায় জানান ‘আন্দোলন’-এর সমাজকল্যাণ সম্পাদক জনাব গোলাম মুক্তাদির ও খুলনা যেলা ‘যুবসংঘে’র সভাপতি শু‘আয়েব আহমাদ। রাজশাহী হ’তে আমীরে জামা‘আতের সফরসঙ্গী ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, দফতর ও যুববিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আমীনুল ইসলাম, রাজশাহী-পূর্ব যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক মাষ্টার সিরাজুল ইসলাম, ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা সহকারী আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব, হাদীছ ফাউন্ডেশন বই বিক্রয় বিভাগের ম্যানেজার আব্দুল বারী ও আইটি সহকারী ওয়ালিউল্লাহ। এই সফরে ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম ও ‘যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশীদ আখতার সহযাত্রী ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা) ও মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (খুলনা)।