মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ পাকিস্তানের সিনিয়র নায়েবে আমীর, ইসলামী নযরিয়াতী কাউন্সিল জম্মু-কাশ্মীরের সদস্য এবং চাঁদ দেখা কমিটির সদস্য মাওলানা আব্দুল আযীয হানীফ (৭৫) হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গত ৯ই সেপ্টেম্বর’১৬ মৃত্যুবরণ করেন। ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজে‘ঊন। ঈদুল আযহার পূর্বের জুম‘আর খুৎবায় যখন তিনি হামদ ও ছানার পর হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর অতুলনীয় ত্যাগ ও কুরবানীর ইতিহাস বর্ণনা করছিলেন, ঠিক সে অবস্থায় তিনি মিম্বরের উপর ঢলে পড়েন। পরদিন সকাল ১১-টায় ইসলামাবাদ কেন্দ্রীয় আহলেহাদীছ জামে মসজিদে (জি/৬, আবপারা মার্কেটের নিকটে) তাঁর প্রথম জানাযার ছালাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মারকাযী জমঈয়তের আমীর প্রফেসর সাজেদ মীর। এতে অংশগ্রহণ করেন পাকিস্তানের মন্ত্রী ড. তারেক ফযল চৌধুরী, জামাআতে ইসলামী আযাদ কাশ্মীরের নেতা আব্দুর রশীদ তুরাবী, ‘আনছারুল উম্মাহ’-এর আমীর ফযলুর রহমান খলীল, জমঈয়তে ওলামায়ে পাকিস্তানের মুফতী যমীর আহমাদ সাজিদ, জমঈয়তে ওলামায়ে ইসলাম-এর মাওলানা নাযীর আহমাদ ফারূকী, জামে‘আ সালাফিইয়াহ বেনারস থেকে শায়খুল হাদীছ মাওলানা আব্দুল আযীয আলাভী, মাওলানা মুহাম্মাদ ইউনুস, প্রফেসর মুহাম্মাদ ইয়াসীন যাফর প্রমুখ। মরহূম-এর পুত্র মাওলানা আবুবকর ছিদ্দীক সঊদী আরব থেকে এসে বিকাল ৩-টায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জানাযায় ইমামতি করেন। অতঃপর এইচ/১১ ইসলামাবাদ কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

মাওলানা আব্দুল আযীয হানীফ ১৯৪৪ সালে আযাদ কাশ্মীরের বাগ যেলার নেপালী নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ম্যাট্রিক পর্যন্ত স্কুলে পড়াশুনা করেন। অতঃপর দ্বীনী জ্ঞান হাছিলের জন্য ১৯৫৯ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে এসে মাওলানা হাফেয মুহাম্মাদ ইসমাঈল যাবীহ প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা তাদরীসুল কুরআন ওয়াল হাদীছে তিন বছর দরসে নিযামীর পাঠ গ্রহণ করেন। উক্ত মাদরাসাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি মাওলানা মুহাম্মাদ ইসমাঈল সালাফীর (১৮৯৭-১৯৬৮) জামে‘আ মুহাম্মাদিয়া, গুজরানওয়ালায় ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ফারেগ হন। এরপর তিনি করাচীতে গিয়ে আল্লামা মুহাম্মাদ ইউসুফ কলকাত্তাবীর (১৯০০-১৯৭০) নিকটে হাদীছে তাখাছ্ছুছ করেন। সাথে সাথে করাচী ইউনিভার্সিটি থেকে আরবী ফাযেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ফারেগ হওয়ার পর তিনি কলকাত্তাবীর মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৭২ সালের ২রা অক্টোবর তিনি মারকাযী জমঈয়তের তদানীন্তন সেক্রেটারী জেনারেল মিয়াঁ ফযলে হকের (১৯২০-১৯৯৬) পরামর্শে ইসলামাবাদে চলে যান। সেখানে তাঁর দাওয়াত ও তাবলীগের ফলশ্রুতিতে মারকাযী জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিই ছিল ইসলামাবাদের প্রথম আহলেহাদীছ জামে মসজিদ। সুদীর্ঘ ৪৪ বছর যাবৎ তিনি উক্ত মসজিদে খতীবের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ইসলামাবাদে আহলেহাদীছ মাসলাকের প্রচার-প্রসার বৃদ্ধি পায়। তিনি যখন ইসলামাবাদে এসেছিলেন তখন সেখানে আহলেহাদীছদের একটি মসজিদও ছিল না। অথচ এখন সেখানে চল্লিশের অধিক আহলেহাদীছ মসজিদ রয়েছে। ইসলামাবাদের মসজিদ ও মিহরাবগুলি চিরদিন তাঁকে স্মরণ করবে। ১৯৭৪ সালে তিনি তাহরীকে খতমে নবুঅতে সরব অংশগ্রহণ করেন এবং সপ্তাহখানেক কারাগারে বন্দী থাকেন।

২০০২ সালের ৪ঠা আগস্ট তাঁকে জমঈয়তের সভায় যথারীতি সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত করা হয়। পরে তিনি সিনিয়র নায়েবে আমীর নির্বাচিত হন এবং আমৃত্যু সুন্দরভাবে তাঁর সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বড় ছেলে ড. আযীযুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, ইসলামাবাদের শরী‘আহ এ্যান্ড ল ফ্যাকাল্টির প্রফেসর এবং ভাইস চ্যান্সেলরের উপদেষ্টা। আরেক পুত্র মাওলানা আবুবকর সঊদী আরবের মাকতাবুদ দাওয়ায় গবেষক হিসাবে কর্মরত আছেন।

[আমরা তাঁর রূহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকাহত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।- সম্পাদক]







আরও
আরও
.