ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত রোগ। এর নির্দিষ্ট কোন এন্টিবায়োটিক বা মেডিসিন আবিষ্কৃত হয়নি। তাই এ রোগে আক্রান্ত হ’লে লক্ষণ, জটিলতা অনুসারে সাপোর্টিভ কিছু চিকিৎসা নিতে হয়। তাতেই আল্লাহ চাইলে সুস্থ হওয়া সম্ভব। নিম্নে ডেঙ্গুর লক্ষণ, প্রতিরোধের উপায় ও প্রতিকারে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা পেশ করা হ’ল।-
ডেঙ্গুর সাধারণ কিছু লক্ষণ :
১. উচ্চ মাত্রার জ্বর একটানা ২-৭ দিন থাকা। একবার কমে গিয়ে আবার আসতে পারে। ২. সারা শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া। ৩. বমিভাব বা বমি হওয়া। ৪. পাতলা পায়খানা হওয়া। ৫. এছাড়াও গলাব্যথা, সর্দি, কাশি হওয়া। ৬. অরুচি এবং শরীর অত্যন্ত দুর্বল হওয়া। ৭. ত্বকে লাল লাল রাশ হওয়া।
ডেঙ্গু জ্বরের কিছু বিপদজনক উপসর্গ বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে :
১. প্রচন্ড পেটব্যথা হওয়া। ২. অনবরত বমি হ’তে থাকা। ৩. রক্তবমি বা কালো পায়খানা হওয়া। ৪. শরীরে যে কোন জায়গা থেকে অনবরত রক্ত ক্ষরণ হ’তে থাকা। ৫. পেট ফুলে বড় হয়ে যাওয়া/শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া। ৬. শরীর মারাত্মক অবসন্ন/খুব ঠান্ডা, অজ্ঞান, অস্থির হয়ে যাওয়া। ৭. রক্তের হেমাটোক্রিট (Hct) দ্রুত বেড়ে যাওয়া বা অনুচক্রিকা দ্রুত কমে যাওয়া। (অনুচক্রিকা/প্লাটিলেটের পরিমাণ ৩০ হাযারের নীচে নেমে গিয়ে কোথাও একটু রক্তক্ষরণ হওয়া)।
যেসব সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যরূরী :
১. উপরের ৭টির কোন ১টি লক্ষণ দেখা দিলে। ২. ব্লাডপ্রেশার ৯০/৬০-এর নীচে নেমে গেলে অথবা উপর ও নীচের প্রেসারের পার্থক্য ২০ বা এর কম হয়ে গেলে। (যেমন- ব্লাডপ্রেশার ৯৫/৮০ হওয়া)। ৩. ৫-৬ ঘণ্টা পেশাব না হ’লে। ৪. উঠতে বসতে মাথা ঘুরলে বা হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেলে। ৫. হাত-পা খুব ঠান্ডা হয়ে গেলে, যখন রোগী আর মাথা সোজা রেখে বসে থাকতে পারবে না। ৬. রোগীর মেজায অকারণে খিটখিটে হয়ে গেলে, ভুল কথা বলা বা অজ্ঞান হয়ে গেলে। ৭. বিঃদ্রঃ গর্ভবতী মা, নবজাতক শিশু, অধিক বয়স্ক রোগী, ডায়াবেটিক, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের রোগী, হার্ট, কিডনি, লিভার রোগ থাকলে বা আগেও একবার ডেঙ্গু হয়ে থাকলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। অন্যথা অভিজ্ঞ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে বাসায় চিকিৎসা করানো ভালো।
ডেঙ্গু জ্বর হ’লে করণীয় :
১. ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলে ১-৩ দিনের মধ্যেই দ্রুত ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে। এর চেয়ে বেশী দেরী করলে পরে
* মেডিকেল অফিসার (অনারারী), রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
রিপোর্টে শনাক্ত করা যাবে না। (টেস্টের নাম- NS1 for Dengeu)
২. ডেঙ্গু শনাক্ত হ’লে জ্বর ও ব্যথার জন্য কেবল প্যারাসিটামল এর ৬টি ট্যাবলেট দিনে ৩-৪ বারে খেতে পারেন।
৩. কোন ধরনের ব্যথার ওষুধ ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে ১ মাস পর্যন্ত খাওয়া যাবে না।
৪. দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৩ লিটার/১২ গ্লাস পানি বা তরল খাবার যেমন- স্যালাইন (ORSaline), শরবত, স্যুপ, দুধ, বিভিন্ন ফলের রস ইত্যাদি খেতে হবে।
৫. ডাবের পানি, পেপের পাতার রস বা টকজাতীয় ফলের রস এসব কিছু খাওয়ার বিশেষ প্রয়োজন নেই। বরং এতে কিছু ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা হ’তে পারে।
৬. মুখ তিতা/বিস্বাদ হয়ে থাকলে রাতে ঘুমানোর আগে, আর খাওয়ার পরে দাঁত, দাঁতের মাড়ি, জিহবাসহ মুখের ভেতর মিষ্টি জাতীয় পেস্ট দিয়ে ভালোমত ব্রাশ করতে হবে।
৭. খাওয়ার অরুচি, অনিচ্ছা থাকলেও অবশ্যই পুষ্টিকর তরল খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে।
৮. বমিভাব বা বমি হ’লে খাওয়ার ২৫-৩০ মিনিট আগে বমির ওষুধ খেয়ে নিয়ে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।
৯. ডেঙ্গু আক্রান্ত হ’লেই ভীত বা অস্থির হওয়া যাবে না।
১০. জ্বরে আক্রান্ত হ’লে রোগীকে আলাদাভাবে সবসময় মশারীর ভেতরে রাখতে হবে।
১১. অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই কোন এন্টিবায়োটিক এবং বিনা প্রয়োজনে অনেক ওষুধ খাওয়া যাবে না। আবার বিপদচিহ্ন ছাড়াই হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়ে থাকার দরকার নেই।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায় :
১. এডিস মশার বংশবিস্তারের উৎস ধ্বংস করা- বাগানের ফল, সবজি, ফুলের টব, বিভিন্ন পাত্র, ডাবের খোসা, ফাস্ট ফুডের কন্টেইনার, এসির পানি জমার পাত্রসহ কোথাও কোনভাবেই ৩ দিনের বেশী পানি জমতে দেওয়া যাবে না। অন্ততঃ দু’দিন পরপর চেক করে সব পানি ফেলে দিতে হবে।
২. দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই ভালো করে মশারী টানাতে হবে।
৩. মশা শরীরে বসা প্রতিরোধে ‘ভ্যাসলিন মসকিউটো ডিফেন্স লোশন/Odomos cream’ ২ ঘণ্টার জন্য শরীরের খোলা অংশে লাগানো যেতে পারে। তাতে মশা কামড়াবে না।
৪. বিকেলের পর থেকে সকাল পর্যন্ত পারতপক্ষে রুমের সব জানালা বন্ধ রাখা।
৫. জানালায় নেট লাগিয়ে মশা রুমে আসা প্রতিরোধ করা যায়।
৬. বাড়ীর ভেতর, আশ-পাশ ও আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখা।
৭. ডেঙ্গু আক্রান্ত হ’লে জ্বর থাকাবস্থায় রোগীকে অবশ্যই মশারীর ভেতরে রাখতে হবে। যাতে তার থেকে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়াতে না পারে।