স্ট্রোক একটি যরূরী স্বাস্থ্যগত সমস্যা। স্ট্রোকের দ্রুত চিকিৎসা হওয়া অতি যরূরী। কারণ দ্রুত চিকিৎসা করা হ’লে মস্তিষ্কের ক্ষতি এবং স্ট্রোক সংক্রান্ত অন্যান্য জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

স্ট্রোক কি :

মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হ’লে বা বন্ধ হ’লে মস্তিষ্কের কলাগুলো অক্সিজেন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান পায় না ফলে স্ট্রোক হয়। স্ট্রোকের কিছুক্ষণের মধ্যেই মস্তিষ্কের কোষগুলো মরতে শুরু করে।

স্ট্রোক হওয়ার কারণ :

স্ট্রোক হওয়ার প্রধান কারণ হ’ল মস্তিষ্কের রক্তের সরবরাহে সমস্যা। যেমন- ক. ইসেকমিক স্ট্রোক (Ischemic Stroke) মস্তিষ্কে রক্তের সরবরাহ কম হ’লে। খ. হেমোরেজিক স্ট্রোক (Hemorrhagic Stroke) মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হ’লে।

স্ট্রোকের ধরন :

স্ট্রোক প্রধানত দুই ধরনের হয়। যেমন :

১. ইসেকমিক স্ট্রোক (Ischemic Stroke) ২. হেমোরেজিক স্ট্রোক (Hemorrhagic Stroke)। এছাড়া আরো এক ধরনের স্ট্রোক রয়েছে যাকে বলা হয়, ট্রানজিয়েন্ট ইসেকমিক আ্যাটাক (Transient Ischemic Attack)।

যাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশী :

যাদের পরিবারে স্ট্রোক, হার্ট এ্যাটাক অথবা টিআইএ (TIA) হওয়ার ইতিহাস আছে, ৫৫ বছর বা এর বেশী বয়সীদের, যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, যাদের বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস আছে, যারা অতিরিক্ত মোটা, যাদের হৃদপিন্ডের বিভিন্ন অসুখ যেমন- হৃদপিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া (Heart failure) হৃদপিন্ডের ত্রুটি (Heart defect) হৃদপিন্ডের সংক্রমণ (Heart Infection), হৃদপিন্ডের অস্বাভাবিক স্পন্দন ইত্যাদির সমস্যা আছে, যাদের আগে একবার স্ট্রোক অথবা টিআইএ হয়েছে, যারা জন্মনিয়ন্ত্রণ ঔষধ সেবন করেন অথবা অন্যান্য হরমোন থেরাপি নেন, যারা ধূমপান ও মাদক সেবন করেন।

স্ট্রোকে সৃষ্ট জটিলতা :

স্ট্রোকের কারণে নিম্নোক্ত জটিলতাগুলো দেখা দেয় : প্যারালাইসিস অথবা মাংসপেশী অবশ হয়ে যাওয়া, খাবার গিলতে এবং কথা বলতে সমস্যা বা কথা বলতে না পারা, স্মৃতি শক্তি লোপ পাওয়া এবং কোন কিছু বুঝতে পারার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়া ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা করা ইত্যাদি।

স্ট্রোক বোঝার উপায় :

স্ট্রোক হ’লে সাধারণতঃ যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যায় : হাঁটতে বা চলাফেরা করতে এবং ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে  সমস্যা হয় এবং মাথা ঝিমঝিম করে কথা জড়িয়ে যায় এবং অস্পষ্ট শোনায়। শরীরের একপাশ দুর্বল, অসাড় ও প্যারালাইজড হয়ে যায়। চোখে কোন কিছু অস্পষ্ট, অন্ধকার ও দুইটি দেখা যায়। অস্বাভাবিক মাথা ব্যথার সাথে ঘাড় ব্যথা, মুখ ব্যথা, দুই চোখের মধ্যখানে ব্যথা ও বমি হয়।

চিকিৎসা নেওয়ার সময় :

উপরোক্ত লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা দেয়ার সাথে সাথে ডাক্তার দেখাতে হবে। এছাড়া নিম্নের উপসর্গগুলো দেখা দিলে যরূরী অবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শ্বাস নেয়া বন্ধ হয়ে গেলে মুখ থেকে মুখে শ্বাস দিতে হবে। বমি হ’লে মাথা একদিকে কাত করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কিছু খাওয়ানো বা পান করানো যাবে না।

চিকিৎসার স্থান :

যেলা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,   বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষায়িত সরকারী/বেসরকারী হাসপাতাল।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা :

শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কারোটিড আল্ট্রাসাউন্ড (Carotid Ultrasound), কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফী (Computerized Tomography), ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমেজিং (Magnetic resonance imaging), ইকোকারডিওগ্রাফী (Echocardiograph).

চিকিৎসার ধরণ :

স্ট্রোকের ধরন, মাত্রা এবং রুগীর বয়সের উপর এর চিকিৎসা নির্ভর করে। ইসেকমিক স্ট্রোক (Ischemic Stroke)-এর ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে- রুগীকে রক্ত জমাট না হওয়ার ঔষধ সেবন করানো। স্ট্রোকের পরপরই রুগীকে এসপিরিন সেবন করানো। এটি পুনরায় স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমায়। শল্য চিকিৎসা প্রভৃতি।

স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় :

স্ট্রোক প্রতিরোধের সবচেয়ে ভাল উপায় হ’ল স্ট্রোকের ঝুঁকি সর্ম্পকে জানা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চলা। এই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি হ’ল:

(১) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা (২) কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা (৩) বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা (৪) দেহের সঠিক ওযন বজায় রাখা (৫) নিয়মিত ব্যায়াম করা (৬) মানসিক চাপমুক্ত থাকা (৭) ধূমপান থেকে বিরত থাকা (৮) মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকা (৯) সুষম খাদ্য গ্রহণ করা। বিশেষ করে শাকসব্জী, দুধ, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, ভূষি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ঢেকী ছাঁটা চালের ভাত, শুটকী মাছ ইত্যাদি খাওয়া।






আরও
আরও
.