‘মুসনাদে আহমাদ’-এর খ্যাতিমান মুহাক্কিক, আলবেনীয় বংশোদ্ভূত বিশ্ববরেণ্য সিরীয় মুহাদ্দিছ শায়খ আবু উসামাহ শু‘আইব বিন মুহাররম আরনাঊত্ব (৯০) গত ১৪৩৮ হিজরীর ২৬শে মুহাররম মোতাবেক ২৭শে অক্টোবর’১৬ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জর্ডানের রাজধানী আম্মানে মৃত্যুবরণ করেন। ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেঊন। পরদিন শুক্রবার বাদ জুম‘আ আম্মানের শুমাইসানী এলাকার ফায়হা জামে মসজিদে তাঁর জানাযার ছালাত অনুষ্ঠিত হয়।
শু‘আইব বিন মুহাররাম আরনাঊত ১৩৪৬ হিজরী মোতাবেক ১৯২৮ সালে সিরিয়ার রাজধানী দামেশকে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৬ সালে তাঁর পিতা দামেশকে সপরিবারে হিজরত করেন। পিতা-মাতার তত্ত্বাবধানে তিনি খাঁটি ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে উঠেন। ছোটবেলায় তিনি কুরআন মাজীদের বৃহদাংশ মুখস্থ করেন। অতঃপর প্রায় ১০ বছর যাবৎ দামেশকের মসজিদ ও প্রাচীন মাদরাসা সমূহে নাহু, ছরফ, সাহিত্য, বালাগাত (অলংকার শাস্ত্র) প্রভৃতি অধ্যয়ন করেন। আরবী ভাষায় দক্ষতা অর্জনের পর তিনি ৭ বছর যাবৎ ইসলামী ফিক্বহ বা আইনশাস্ত্র অধ্যয়নে মনোনিবেশ করেন। এ সময় তিনি উছূলে ফিক্বহ, তাফসীর, মুছত্বলাহুল হাদীছ (হাদীছের মূলনীতি অভিজ্ঞান) প্রভৃতি শাস্ত্রেও ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।
ফিক্বহ শাস্ত্র অধ্যয়নকালে তাঁর শিক্ষকমন্ডলী ও সমকালীন আলেমদের মাঝে ছহীহ ও যঈফ হাদীছ যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দুর্বলতা লক্ষ্য করেন। এর ফলে ইলমে হাদীছে ব্যুৎপত্তি অর্জনের লক্ষ্যে তিনি আরবী ভাষা পাঠদানের পেশা ত্যাগ করে পুরাপুরি তাহকীকী কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি দামেশকের ‘আল-মাকতাবুল ইসলামী’ প্রকাশনা সংস্থার গবেষণা বিভাগের প্রধান হিসাবে ২০ বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ৭০ খন্ডের বেশী গ্রন্থ তাহকীক করেন বা তাহকীকী কর্মকান্ডের তত্ত্বাবধান করেন। এরপর ১৯৮২ সাল থেকে তিনি আম্মানের ‘মুআসসাসাতুর রিসালাহ’ নামক খ্যাতনামা প্রকাশনীর গবেষণা বিভাগের প্রধান হিসাবে গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। তাঁর নিজস্ব তাহকীককৃত এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে তাহকীককৃত গ্রন্থের সংখ্যা ২৪০ খন্ডের বেশী। এতে তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বহ, আক্বীদা, জীবনীগ্রন্থ, মুছত্বলাহুল হাদীছ, সাহিত্য প্রভৃতি শামিল রয়েছে। তাঁর তাহকীককৃত গ্রন্থের মধ্যে মুসনাদে আহমাদ (৫০ খন্ড), যাহাবীর সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (২৫ খন্ড), আল-ইহসান ফী তাকরীবে ছহীহ ইবনু হিববান (১৮ খন্ড), বাগাবীর শারহুস সুন্নাহ (১৬ খন্ড), নববীর রওযাতুত তালেবীন (১১ খন্ড), ইবনুল জাওযীর ‘যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর’ (৯ খন্ড), ইবনুল ক্বাইয়িমের যাদুল মা‘আদ (৫ খন্ড) প্রভৃতি অন্যতম। এগুলির মধ্যে মুসনাদে আহমাদের তাহকীক সবচেয়ে জনপ্রিয়।
আধুনিক বিশ্বে হাদীছ তাহকীকে যে তিনজন মুহাদ্দিছ খ্যাতি লাভ করেছেন তারা সবাই আলবেনীয় বংশোদ্ভূত। এরা হ’লেন শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (১৯১৪-১৯৯৯ খৃ.), শায়খ শু‘আইব আরনাঊত ও শায়খ আব্দুল কাদের আরনাঊত (১৯২৮-২০০৪ খৃ.)। তন্মধ্যে শায়খ আলবানীর তাহকীক সবচেয়ে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। এরপরে রয়েছেন শু‘আইব আরনাঊত।
[আমরা তাঁর রূহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকাহত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।- সম্পাদক]